উপন্যাসের শেষ পাতায় তুমি পর্ব -৫১+৫২

#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_51

কপি নিষিদ্ধ ❌

তিশা আস্তে আস্তে চোখ মেলে দেখে,ওকে একটা গোডাউনে আনা হয়েছে,ওর হাত পা চেয়ারের সাথে বাঁধা,ও পাশে তাকিয়ে দেখে,ওমর,আয়েশা,ওয়াহিদ,
অবান্তিকাকেও চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে,
ওদের কারোই জ্ঞান ফেরেনি।তিশা এমনিতেই অসুস্থ তারপর এভাবে অজ্ঞান অবস্থায় পরে ছিল,তিশা খুব দূর্বল,কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে,এই মুহুর্তে একটু পানি পেলে ভালো হতো,কিন্তু ওকে পানি দিবে কে?
তিশা তবুও কষ্ট করে আয়েশা ডাকছে,
তিশার ডাকে আয়েশার সাথে সাথে বাকিরাও আস্তে আস্তে চোখ মেলছে,সবাই চোখ মেলে নিজেদের গোডাউনে আবিষ্কার করে,একে অপরের দিকে তাকিয়ে জিগ্যেস করে তারা কিভাবে এখানে আসলো।
ওয়াহিদ বলে,
আমি আমার কেবিনে বসে পেশেন্টদের রিপোর্ট চেক করছিলাম,তখন একজন নার্স এসে আমাকে শরবত দিয়ে চলে যায়,খুব তৃষ্ণা পেয়েছিলো তাই আর সাত পাঁচ না ভেবে শরবতটা খেয়ে ফেলি,শরবতটা খাওয়ার পরই আমার মাথা ঝিমঝিম করে,চোখ ভার হয়ে আসে আমি জ্ঞান হারাই তারপর আর কিছু মনে নেই।

আয়েশা বলে,
আমি তিশার কাছে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়ে মেইন রোডে যাই তখন আমার কাঁধে কারো স্পর্শ অনুভব করি কে স্পর্শ করেছে তা দেখার জন্য পেছনে ঘুরতেই কেউ মুখে কিছু স্প্রে করে আর আমি জ্ঞান হারাই তারপর আর কিছু মনে নেই।

অবান্তিকা বলে,
আমি রান্না শেষ করে,বের হবো তার আগেই কলিংবেলের আওয়াজ শুনতে পাই,আমি দ্রুত রান্নাঘর থেকে বের হই দরজা খুলতেই কেউ আমার মুখে কিছু স্প্রে করে আর আমি জ্ঞান হারাই।

ওমর বলে,
আমি আমার কেবিন থেকে বের হয়ে হেঁটে হেঁটে ১০২ নং রুমে যাচ্ছিলাম তখনই কেউ পেছন থেকে শক্ত কিছু দিয়ে স্ব জোরে আমার মাথা আ’ঘা’ত করে যার ফলে আমি জ্ঞান হারাই।

তিশা বলে,
আমি শুয়ে রেস্ট নিচ্ছিলাম তখন একজন নার্স আমার রুমে আসে,তাকে আমি আগে কখনো দেখি,যে আমার টেক কেয়ার করতো সে না কি অসুস্থ তার পরিবর্তে উনি আমাকে ইনজেকশন দিতে আসেন,আমিও এতে মানা করি না,উনি ইনজেকশন পুষ করে চলে যায়,
ইনজেকশন দেওয়ার পরই আমার মাথা ঝিমঝিম করে উঠে চোখ ভার হয়ে যায় আর আমি জ্ঞান হারাই।

ওমর ভ্রু কুচকে বলে,
কিন্তু প্রশ্ন হলো আমাদের এখানে কে এনেছে,সে কি চায়,আর এভাবে বেঁধে রেখেছেই বা কেন?

তিশাও ভ্রু কুচকে বলে,
আমিও তো তাই ভাবছি।

কথার মাঝেই ওরা কারো পায়ের শব্দ শুনতে পায়,
আওয়াজটা ক্রমশ বেরেই চলছে,মানুষটা ওদের দিকেই আসছে,সে হাত তালি দিতে দিতে হেঁটে আসতে আসতে বলে,
ওয়েলকাম,ওয়েলকাম মিস্টার এন্ড মিসেস খান।

সবাই সামনে তাকিয়ে দেখে সিহাব ওদের দিকেই আসছে,সবাই সিহাবকে চিনতে পারলেও তিশা আয়েশা ওকে চিনতে পারে না।
সিহাব ওদের সামনে চেয়ার টেনে বসে বলে,
আয়েশা,তিশা তোমরা আমাকে চিনবে না,হয়তো নাম জানো,আমি সিহাব।

তিশা আয়েশা সিহাবকে চিনতে পেরেছে।

একটুপর কিছু গার্ড জেসমিন ওসমানকে নিয়ে আসে,
ওসমানকে চেয়ারে বসিয়ে ওর হাত পা বেঁধে দেয়।
জেসমিন সিহাবের পাশের চেয়ারে বসে।
সিহাব হাতে বল ঘুরাতে ঘুরাতে বাঁকা হেসে তিশার দিকে তিক্ষণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
তিশা আজ তোমাকে একটা গল্প শুনাবো।

তিশা ভ্রু কুচকে বলে,
গল্প!
কিসের গল্প?

সিহাব বাঁকা হেসে বলে,
তোমার সুখের সংসার ধং’ব্স হওয়ার গল্প।

তিশা সিহাবের কথায় ভ্রু কুচকায়।

সিহাব ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
কি ওসমান মনে আছে সেদিনের কথা।

ওসমান কিছু বলে না,ও চুপ করে আছে।

ঠিক আছে তুই যখন বলবি না তখন আমিই বলে দিচ্ছি,
সেদিন,

সেদিন,
ওসমান চেয়ারের সাথে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে,
একটুপর ওর ফোন বেজে উঠে,ও ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে,
ও কল রিসিভ করে,
হ্যালো কে বলছেন?

আমি সিহাব।

তুই কেন আমাকে কল দিয়েছিস?

একটা কথা জানানোর জন্য আজ তোর বউয়ের উপর আমি গু’লি চালিয়েছি।

তার মানের তুই ঐ কাজটা করেছিলি?

ইয়াপ ব্রো,তোকে আরেকটা কথা জানিয়ে রাখি,
তোর পুরো পরিবারের উপর আমার গার্ডদের নজর রয়েছে,তুই যদি আমার কথা না শুনিস তবে আমি তোর বাবা,মা,বউ,ভাই সবাইকে মে’রে ফেলবো।

শুন আমি তোর হাতের পুতুল না যে তোর কথা শুনবো।

তুই আমার হাতের পুতুল কি না তা তুই কিছুদিন পরেই বুঝতে পারবি,তোকে আমি যা বলছি তাই কর,এতেই তোর ভালো।

জাস্ট সাট আপ,আমি তোর কথা শুনতে বাধ্য নই।

দেখ আমি শুধু তোকে কষ্টে দেখতে চাই,আর আমি জানি তুই তোর বউকে খুব ভালোবাসিস,তোর বউ কষ্ট পেলে তুই কষ্ট পাবি,তুই যদি তোর বউকে কষ্ট না দিস তাহলে আমি তোর পুরো পরিবারকে মে’রে ফেলবো,
আর তুই একা একসাথে কয়জনকে বাঁচাবি,বাবা কে বাঁচাতে গেলে মা ম’রবে,মাকে বাঁচা গেলে বউ ম’রবে,
বউকে বাঁচাতে গেলে ভাই কিংবা ভাইয়ের বউ ম’রবে
আমি অবশ্য কাউকে মা’রতে চাইনা,আমি শুধু তোকে কষ্টে দেখতে চাই,তোকে তিলে তিলে ম’রতে দেখতে চাই
তাই তোকে আমার কথা মতো চলতে হবে,আমার কথা মতো না চললে তোর পুরো পরিবারকে মে’রে ফেলবো।

আমার ফেমেলি থেকে দূরে থাকবি।

তুই তোর আর তোর বউয়ের মাঝে অবহেলার দেয়াল তৈরি করবি,তোর বউকে অনেক কষ্ট দিবি,তিশার জীবন জা’হা’ন্না’ম বানিয়ে দিবি নাহলে তোর পুরো পরিবারকে আমি মে’রে ফেলবো।

না তো আমি তোর কথা শুনবো,না তো তোর কথা মতো চলবো,আর কখনো আমাকে কল দিবি না।

সিহাব হাসতে হাসতে বলে,
দেখলে তিশা আমি কতো সুন্দর করে তোমার জীবনকে একদম বি’ষি’য়ে দিলাম,ঐদিন ওয়াশরুমের মিররের লেখাটাও আমি লিখেছিলাম,তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য না ওসমানকে ভয় দেখানোর জন্য,আর ও ভয় পেয়ে আমার সব কথা শুনতে লাগলো আমার কথা মতো কাজ করলো,হাহাহা ওসমান তুই কতো ভিতু।

সিহাব পৈ’শা’চিক আনন্দ পেলেও,আনন্দ নেই জেসমিনের মাঝে ও অপ’রা’ধীর মতো চুপ চাপ বসে আছে।

ওসমান মাথা উঠিয়ে সিহাব জিগ্যেস করে,
তুই কেন এসব করছিস,কেন আমাদের মা’রতে চাইছিস?

শুনতে চাস কেন এসব করছি কেন তোমাদের মা’রতে চাইছি,তাহলে শুন,
মি.ওয়াহিদ খান আপনাকে কেন মারবো জানেন?

সিহাবের কথায় ওয়াহিদের ভ্রু কুচকে আসে।

আপনার কারণে আমার বাবাকে জে’লে যেতে হয়েছে।

সিহাব তোমাকে আমি আগেও বলেছি তোমার বাবা অন্যা’য় করেছে তাই তাকে জে’লে পাঠিয়েছি।

বাবাকে জে’লে না পাঠিয়ে একটা সুযোগও তো দিতে পারতেন,আপনার জন্য আমার জীবনে কষ্টের কালো ছায়া নেমে এসেছে,বাবার আ’ত্ন’হ’ত্যা’র কথা শুনার পর মা পুরোপুরি ভে’ঙ্গে পরেছিলো,বাবার শো’কে মাও হার্ট এ্যা’টা’ক করে মৃ’ত্যু বরণ করে,মা ম’রার পর আমার জীবনে কষ্টের অন্ত থাকে না,আমি অনেক কষ্টে বড় হই,
এমনও অনেক রাত কেটেছে আমি না খেয়ে ঘুমিয়ে,
আমার শৈশবের সব খুশি আনন্দ আপনি ছি’নিয়ে নিয়েছেন,আমি আমার মায়ের লা’শ ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আপনাকে নিজ হাতে খু’ন করবো।

সিহাব আজ যদি তুমি আমায় মে’রেও ফেলে তবুও আমার কোনো আফসোস থাকবে না,কেনো না আমি কোনো নি’র্দো’ষকে শা’স্তি দেইনি,তোমার বাবা দো’ষী ছিল তাই শা’স্তি পেয়েছে।

হাহাহা আজ আমি আপনাকে শা’স্তি দিব,আপনাকে আমার হাতে ম’রতে হবে।
ওয়াহিদের থেকে চোখ সরিয়ে ওসমানের দিকে তাকিয়ে বলে,
ওসমান জানিস তোকে কেন মা’রবো?

সিহাবের কথায় ওসমান সিহাবের দিকে তাকায়,
জে’ল থেকে আসার পর আমি গোপনে ছদ্দবেশে ড্রা’গ’সের ব্যবসা করতাম,কিন্তু তুই তা জানতে পেরে আমার গোডাউনে আ’গুন জ্বা’লি’য়ে দিয়েছিলি।

ঐটা তোর গোডাউন ছিল!

হ্যাঁ আমার গোডাউন ছিল তোর জন্য আমার কোটি কোটি টাকার লস হয়েছে,আমি নারী পা’চা’র করতে শুরু করি সেই কাজও তুই নষ্ট করিস,লন্ডনে নারী পাচার হচ্ছে তা জানতে পেরে পু’লি’শের সাথে মিলে তদন্ত করে আমাদের লোকেশন খুঁজে পেয়েছিলি তোকে দেখে আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসি,তুই সে মেয়েগুলিকেও বাঁচিয়ে নিয়ে আসিস,তোর জন্য আমার কোটি কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে তোকে কি করে বাঁচিয়ে রাখি,তোকে আজ ম’রতে হবে,তোদের দুজনের জন্য ওদেরও ম’রতে হবে,ওদের শুধু একটাই দো’ষ ওরা খান পরিবারের সদস্য,আজ আমি সবাইকে মে’রে ফেলবো,
তো’দের মে’রে আমি আমার প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করবো।

সিহাব জেসমিনের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
জেসমিন ডার্লিং একটা ম্যাজিক দেখবে?

ম্যাজিক?

ইয়াহ ডার্লিং।
সিহাব বাঁকা হেসে শিস বাজায়,ও শিস বাজাতেই দুটো গার্ড জেসমিনের মাথার দুপাশে পি’স্ত’ল ধরে।
জেসমিন অবাক হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বলে,
“সিহাব”!

সিহাব একটু ইনোসেন্ট ফেস বানিয়ে বলে,
বেবি আমার কিছু করার নেই,তোমার কাজ শেষ তাই তোমাকে ম’রতে হবে।এমনিতেও যা করেছি আমিই করেছি,তোমাকে যে কাজ দিয়েছি সেই কাজ তুমি করতে পারোনি,প্রথমে বললাম ওসমানকে বিয়ে করতে কিন্তু তুমি তাও পারলে না,তিশাকে মে’রে ফেলতে বললাম তাও করতে পারলে,তোমার মনে অনেক মায়া তুমি কারো ক্ষ’তি করতে পারো না কাউকে কষ্ট দিতে পারো না,এতো মায়া দিয়ে আমি কি করবো,তুমি তো আমার কোনো কাজেই আসলে না,
হাহাহা তোমাকে বাঁচিয়ে রেখে কি লাভ।

জেসমিন কান্নাভেজা কন্ঠে বলে,
সিহাব তুমি আমার ভালোবাসার এই প্রতিদান দিলে।

হ্যাঁ বেবি এই প্রতিদান দিলাম,আর তোমাদের মতো মেয়েদের শুধু ইউস করা যায় ভালোবাসা যায় না।

সিহাব তোমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো কিছুই না করলাম,কতো অন্যা’য় কাজ করলাম,তোমাকে কতো বার বলেছি ওদের সাথে এমন করো না,তিশা ওসমানকে আলাদা করো না কিন্তু তুমি আমার কথা শুনোনি প্রতি’শো’ধের নে’শায় তুমি উ’ন্মা’দ হয়ে গেছো।

হ্যাঁ হয়েছি আমি উ’ন্মা’দ,নিয়েছি প্রতি প্রতি’শো’ধ,
খানদের মে’রে আমি আমার প্রতি’শো’ধের আ’গুনকে শান্ত করবো,আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি,ওসমান আর তিশাকে কষ্ট দিতে চেয়েছি তাতে আমি সক্ষম হয়েছি,ওদের ডিভোর্স দিতে বাধ্য করেছি,তোমার আর ওসমানের বিয়ে করিয়ে আমি আমার পথের কা’টা দুর করেছি,তোমাকে আমার লাইফ থেকে সরিয়েছি।
আজ ওদের সাথে সাথে তোমাকেও ম’রতে হবে,
হাহাহা আমি আমার প্রতি’শো’ধ নিয়েছি,আজ আমি জিতে গেছি,হাহাহা আজ আমি জিতে গেছি।

সিহাবের কথা শুনে ওসমান জোরে জোরে হাসে,
ওর হাসি দেখে সিহাব ভ’ড়কে যায়।

চলবে কি?

[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_52

কপি নিষিদ্ধ ❌

সিহাবের কথা শুনে ওসমান জোরে জোরে হাসে,
ওর হাসি দেখে সিহাব ভ’ড়কে যায়।
সিহাব ভ্রু কুচকে ওসমানকে জিগ্যেস করে,
তুই এভাবে হাসছিস কেনো?

তুই কতোটা বোকা রে…।

মানে?

ওসমান সিহাবের থেকে চোখ সরিয়ে জোরে শিষ বাজায়,আর শিষ বাজানোর সাথে সাথেই গোডাইনের
দরজা ভে’ঙ্গে স্পর্শ আর বাকি গার্ডরা ভেতরে এসে সিহাবের লোকদের মাথায় ব’ন্ধু’ক ঠেকায়,সিহাবের মাথার দু দিকে দুজন গার্ড ব’ন্দু’ক ঠেকিয়ে রেখেছে,
সব কিছু এতো তাড়াতাড়ি হওয়াতে সিহাব আর সিহাবের গার্ডরা কিছু করতে পারেনি।
স্পর্শ এসে ওসমানের হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
বাকি গার্ডরা ওমর,ওয়াহিদ,আয়েশা,তিশা,অবান্তিকার হাতে পায়ের বাঁধন খুলে দেয়।
ওসমান সিহাবের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
কি কিছু বুঝতে পারছিস না তো,তুই কি মনে করেছিলি
তুই আমাকে এই ওসমান খানকে নিজের কথা মতো নাচাবি আর আমি ধেইধেই করে নাচবো?
উহুম কখনোই না,তুই কি মনে করেছিলি আমি তোর প্ল্যান অনুযায়ী চল ছিলাম,হাহাহা ভুল ভেবেছিস সিহাব, আমি তোর প্ল্যান মতো না তুই আমার প্ল্যান মতো চলেছিস।

কি!

হ্যাঁ,তোর কি একবারও স’ন্দে’হ হয় নি,কেনো আমি তোর কথা শুনছি আর কেনোই বা তোকে পু’লি’শে দেই নি,আমি জানি তোর মাথায় কখনো এই প্রশ্ন আসে নি।
একটা মজা কথা কি জানিস আমি তোর প্ল্যান সম্পর্কে আগে থেকেই জানতাম।

কি!

হ্যাঁ,তুই এখনই এতো অবাক হচ্ছিস কেন এখনো তো অবাক হওয়ার জন্য অনেক কথা রয়েছে।
তোর নাম্বার হ্যা’ক করা ছিল,তাই তুই যাকেই কল করতি সাথে সাথে ক’ল সে’ন্টা’রে তা রেকর্ড হয়ে থাকত।আর ক’ল সে’ন্টা’রের লোকদের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো থাকায়,তাই তারা তোর কলের সমস্ত ইনফরমেশন আমাকে দিতো,এভাবেই আমি তোর সব প্ল্যান সম্পর্কে জানতে পারি,কিন্তু তবুও আমি চুপ ছিলাম,আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তুই আর কি কি করতে পারিস,আমি এটাও জানতাম জেসমিন তোর প্ল্যানের পার্টনার না,ও কেবলমাত্র একটা মু’হু’রি মাএ,
আমি জানি জেসমিন আমাদের ক্ষ’তি করতে চাইনি কিন্তু তুই বার বারই ওকে ইমোশনাল ব্লা’ক’মে’ইল করে সব কাজ করিয়ে নিতি,জেসমিন তোকে নিজের জীবনের থেকেও খুব ভালোবাসে,মেয়েটা তোর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এই অ’ন্যায় কাজ গুলো করেছে,জেসমিন যখন আমাদের বাসায় আসে তখনই আমি বুঝতে পারি ও কিছু না কিছু করতে এসেছে আমি ওর উপর প্রতি পদে পদে নজর রেখেছি,সেদিন পাহারেও আমার নজর সারাক্ষণ জেসমিনের উপর ছিল,কিন্তু ওকে একটু নজরের আড়াল করাতে ও তিশাকে ধাক্কা দিতে পেরেছে।
আচ্ছা জেসমিন তুমি কি একটাবারো ভাবোনি তিশাকে ধাক্কা দেওয়ার পরও কেন তোমাকে শা’স্তি দেইনি বা কেনো পু’লি’শে দেই নি?

ওসমানের কথায় জেসমিন মাথা নিচু করে ফেলে,
অপ’রা’ধ বোধ ওকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।

জেসমিন তোমাকে কেন পু’লি’শে দেইনি জানো,আমি তোমার চোখে কখনো রাগ দেখিনি,বরাবরই তোমার চোখে অসহায়তা দেখেছি আমি সবসময় তোমার চালচলন লক্ষ্য করেছি,জেসমিন তোমাকে আমি ছোট থেকেই বোন ভেবে এসেছি,তুমি যদি ইচ্ছে করেও কিছু করতে তবুও তোমাকে আমি শা’স্তি দিতে পারতাম না।
তোমাকে ছোট বোন হিসেবে অনেক ভালোবাসি।
ওসমানের কথা শুনে জেসমিনের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে,ও ভাবতে পারেনি ওসমান ওকে এতোটা সাপোর্ট করবে ওর পরিস্থিতি বুঝবে,ওকে এতোটা ভালোবাসবে।

সিহাব আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুই আর কি কি করতে পারিস,তোর দৌড় কতো দূর,আমি কখনো কাঁঁচা কাজ করি না তোকে হাতের কাছে পাওয়ার জন্য আর কেনো এসব করছিস তা জানার জন্য আমি এই প্ল্যানটা করেছি,একটা কথা মনে রাখবি আমি হলাম ঠান্ডা মাথার খু’নি,আমি কখনো মাথা গরম করে কোনো কাজ করি না,কারণ মাথা গরম করে কাজ করলে কখনোই সে কাজে সফলতা আসে না,আমি আমার স্টুডেন্ট লাইফেও কখনো মাথা গরম করে কাজ করিনি
আমি কখনো অ’ন্যায়কে পোশ্রয় নেইনি,তুই বেআইনি কাজ করেছিস তাই বারবার তোর কাজে আমি বাঁধা দিয়েছি,তুই যদি ভালো কাজ করতি তবে আমি অবশ্যই তোকে সাপোর্ট করতাম,কিন্তু তুই ভালো রাস্তা ছেড়ে খারাপ রাস্তায় পা বারিয়েছিস।

সিহাব বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,
আমার প্ল্যান ফুল সাকসেসফুল না হলে কি হবে,
হাফ সাকসেসফুল হয়েছে,তোর আর তোর বউয়ের ডিভোর্স করাতে পেরেছি আর জেসমিনের সাথে বিয়েও করাতে পেরেছি।সেদিন কফি সপে আমার লোক তিশা আর ওমের কথা শুনতে পেয়েছিলো,আমি ওদের কথাটা জানতে পেরে বুঝতে পারি তিশাকে বড় কোন শক দিলে,ওর ব্রে’নে চাপ পরলে ও ব্রে’ন স্টো’ক করতে পারে,আর আমি এটাও জানতাম তিশার আগেও একবার এ’ক্সি’ডেন্ট হয়েছিল তাই এবার ব্রেন স্টো’ক করতে মৃ’ত্যু নিশ্চিত,তাই আমি একরাতের মধ্যে উকিলকে গা’ন পয়েন্টে রেখে ডির্ভোস পেপার রেডি করি আর তোদের সাইন করতেও বাধ্য করি,আমার প্ল্যান অনুযায়ী তিশা ব্রে’ন স্টো’কও করে,সেদিন হসপিটালে সবাইকে কাদঁতে দেখে আমি পৈ’শা’চিক আনন্দ পাই,কিন্তু তিশা তোমার তো দেখি কৈ মাছের প্রাণ ব্রে’ন স্টো’ক করেও ম’রলে না,না ম’রেছো তো কি হয়েছে তোমাদের বি’চ্ছে’দ তো হয়েছে।

সিহাবের কথা শুনে এবারও ওসমান জোরে জোরে হাসতে লাগলো,
হাহাহা,তোর কি মনে হয় তোর মতো একটা মানুষের কথা শুনে তোর প্ল্যান মতো চলে আমি আমার ওয়াইফকে ডিভোর্স দিব।

তার মানে!

হুম তার মানে আমাদের ডিভোর্স হয়নি।

কি!

ইয়েস আমাদের ডিভোর্স হয়নি,ডিভোর্স পেপারে তিশা সাইন করেনি,আমি ওর সাইন নকল করে ডিভোর্স পেপারে সাইন করি,তাই আমাদের ডিভোর্স হয়নি,আর হ্যাঁ তোকে ডিভোর্স পেপারের মেইন কপি দেখানোর পর আমি পেপারটা পু’ড়ি’য়ে ফেলেছি।

আর তোর আর জেসমিনের বিয়ে!

তাও হয়নি।

কি! কিন্তু সেখানে তো আমার লোকেরাও ছিলো আর আমিও তো সিসি টিভিতে তোদের বিয়ের দৃশ্য দেখেছি তবে তুই কিভাবে কথাটা বলতে পারিস।

হাহা সিহাব তোর হয়তো বুঝতে অসুবিধা হয়েছে,
শুন তুই সিসি টিভিতে কি দেখেছিস?

তোদের বিয়ে হতে দেখেছি।

তুই কি দেখেছিলি পেপারে কি লেখা ছিলো?

না।

আমি প্রথমে তোর লোকদের স্বাক্ষীর জায়গায় সাইন করতে বলেছি তারা তাই করেছে,জেসমিনকে ব্রাইডের জায়গায় সাইন করতে বলি জেসমিনও তাই করেছে,
কিন্তু আমি আর স্পর্শ করেছি উল্টোটা গ্রুমের জায়গায় স্পর্শ সাইন করেছে আর আমি করেছি স্বাক্ষীর জায়গায়,তো এইবার তুই বল বিয়েটা কার সাথে হয়েছে।

কিন্তু তোদের তো ইসলাম অনুসারে কালেমা পড়ে বিয়ে হয়েছে।

সিহাব কাজি বা উকিল কেউই তোর লোক ছিল না।

কি!কিন্তু লোক তো আমারই ছিল।

তুই কি তাদের মুখ দেখেছিলি?

না,ওরা উল্টো দিকে বসেছিলো,তার মানে!

এই তো বুঝতে পেরেছিস,হ্যাঁ তোর লোকের জায়গায় সেখানে আমার লোক ছিল,আর সেম কাজটা আমি আবারও করেছি,জেসমিনের কবুল বলার পরপরই আমি পুরো বাড়ির লাইট অফ করে দেই,আর অন্ধকারের মাঝেই স্পর্শ কবুল বলে,ওর গলার স্বর কিছুটা আমার মতো হওয়ায় তোরা কেউ বুঝতে পারিস
নি,বিয়ে আমার নয়,বিয়ে হয়েছে স্পর্শ জেসমিনের।
সরি ইয়ার তোর একটা প্ল্যানও সাকসেসফুল হয়নি।
তুই হচ্ছিস এই গল্পের ভিলেন আর আমি হলাম হিরো,
ভিলেন যতই পাওয়ার ফুল হোক না কেন,শেষে জিত কিন্তু হিরোরই হয়।
ওসমানেরর কথা শুনে সিহাব রাগে ফুসছে,ওর মুখ বন্ধ হয়ে গেছে বলার মতো আর কিছু নেই,ও ওর প্রতিজ্ঞা পূর্ণ করতে পারলো না,পারলো না ওদের মা’রতে,
রাগে সিহাব থরথর করে কাঁপচ্ছে।

ওসমান গভীর স্বরে স্পর্শকে আদেশ করে,
স্পর্শ অফিসারদের ভেতরে নিয়ে এসো।

স্পর্শ যেয়ে অফিসারদের নিয়ে ভেতরে আসে।
ওসমান অফিসারের হাতে একটা ফোন দিয়ে বলে,
অফিসার এতে সিহাবের কথা গুলো রেকর্ড করা আছে,
লন্ডনের নারী পা’চা’রের কাজে ও জড়িত ছিল,ঐ গোডাউনটাও ওর ছিল,ও একজন ড্রা’গ’স ডি’লার,
ওকে সর্বোচ্চ শা’স্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন।

অফিসার বলে,
জ্বী মি.খান আমরা ওনাকে সর্বোচ্চ শা’স্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।
ওনার হাতে হ্যান্ড কাফ পরাও।
সিহাবের হাতে হ্যান্ড কাফ পরানো হয়।
পু’লি’শ সিহাবকে নিয়ে যেতে নেয়,ওসমান পিছনে ঘুরে আর সেই সুযোগে সিহাব অফিসারের কােমড়ে গুজে থাকা পি’স্ত’ল নিয়ে ওসমানের দিকে তাক করে গু’লি ছোড়ে,

চলবে কি?

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here