#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_53
কপি নিষিদ্ধ ❌
পু’লি’শ সিহাবকে নিয়ে যেতে নেয়,ওসমান পিছনে ঘুরে আর সেই সুযোগে সিহাব অফিসারের কােমড়ে গুজে থাকা পি’স্ত’ল নিয়ে ওসমানের দিকে তাক করে গু’লি ছোড়ে।
কিন্তু গু’লি যেয়ে লাগে জেসমিনের বুকে,গু’লির শব্দে সবাই জেসমিনের দিকে তাকায়,জেসমিন লুটিয়ে পড়তে নিলে ওসমান ওকে ধরে ফেলে আস্তে করে মাটিতে শুইয়ে দিয়ে জেসমিনের মাথা নিজের কোলে রাখে।
সিহাব ওসমানের দিকে পি’স্ত’ল তাক করার দৃশ্য জেসমিনের চোখে পড়ে ওসমানকে বাঁ’চাতে জেসমিন
ওসমানের সামনে যেয়ে দাঁড়ায় আর গু’লি ওর বুকে যেয়ে লাগে।
সিহাবকে পু’লি’শ নিয়ে যায়,সবাই জেসমিনকে ঘিরে বসে আছে।
তিশা জেসমিনকে বলে,
আপু আপনার কিছু হবেনা,আমরা আপনাকে হসপিটালে নিয়ে যাবো আপনি সুস্থ হয়ে যাবেন,
ওসমান আপুকে কোলে তোলো আমাদের
হসপিটালে যেতে হবে।
ওসমান জেসমিনকে কোলে তুলতে নিলে জেসমিন ওকে বাঁধা দেয়,আর কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
না তিশা আমি হসপিটালে যাবো না,এমনিতেও আমার হাতে বেশি সময় নেই,তোমাদের কিছু কথা বলতে চাই সেগুলো না বললে যে আমি ম’রেও শান্তি পাবোনা।
ওসমান ওমর,
জেসমিন র’ক্ত’মাখা হাত দিয়ে ওসমান ওমরের হাত ধরে,
ওসমান ওমর আমি ছোটবেলা থেকেই তোমাদের নিজের ভাই আর বন্ধু মনে করতাম,ছোট বেলায় যখন তোমাদের সাথে খেলতাম তখন তোমরা আমার শ্রেষ্ঠ সঙ্গী ছিলে,তোমাদের নিজের ভাইয়ের মতো ভালোবেসেছি,ওসমান আমি তোমার জীবন নষ্ট করতে চাইনি,তিশাকে তোমার কাছ থেকে দূরে সরাতে চাইনি,
তোমাদের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে চাইনি,আমি এতো দিন যা কিছুই করেছি তার জন্য আমাকে মাফ করে দাও,প্লিজ মাফ করে দাও।আন্টি আঙ্কেল,
জেসমিন এবার অবান্তিকা ওয়াহিদের হাত ধরে,
ছোট বেলা থেকেই তোমাদের বাবা মা মানতাম,তোমরা যেমন আমাকে ভালোবাসতে আমিও তেমন তোমাদের খুব ভালোবাসতাম।আন্টি তুমি তো আমাকে মেয়ের মতো ভালোবাসতে আদর করতে,আমিও তোমার আদর পাওয়ার জন্য সবসময় তোমার বাসায় আসতাম
ভালোই তো কাটছিলো সেইদিন গুলো,কিন্তু যখন আমরা মালেশিয়া চলে যাই তোমাদের সাথে যোগাযোগ কমতে থাকে আমি যখন আস্তে আস্তে বড় হই ম্যাচুউর হই তখন মালেশিয়ার ভার্সিটিতে আমার সিহাবের সাথে দেখা হয় আস্তে আস্তে ওকে ভালোবাসতে শুরু করি,
ও তোমাদের নাম বলে আমি বলি তোমরা আমার রিলেটিভ,এটা শুনে ও তোমাদের বর’বাদ করার জন্য প্ল্যান বানায় কিন্তু আমার মন তাতে সায় দিচ্ছিল না,
কেমন জানি অস্থির অস্থির লাগতো মন মানতো না,
কিন্তু ও আমাকে ভালোবাসার ক’স’ম দিয়ে সব কিছু করিয়ে নিতো,বিশ্বাস করো আমি যা করেছি সব ভালোবাসার খাতিরে করেছি সিহাবকে ভালোবেসে করেছি,আর দেখো আজ সেই ভালোবাসার মানুষের হাতেই ম’র’তে হচ্ছে,আমার বাবা মাও আমার জন্যই মা’রা গেল,তোমরা যেদিন আমাকে জে’লে পাঠিয়ে দিলে সেদিন থেকেই বাবা মা আমার টেনশনে অসুস্থ হয়ে পরে,আমাকে নিয়ে অনেক টেনশন করতো,তারা আমাকে খুব ভালোবাসতো বিশ্বাস করতো আমার করা অ’ন্যায় কাজটা তারা মানতে পারেনি,বাবা ব্রে’ন স্টো’ক করে মা’রা যান,মাও বাবা মা’রা যাওয়া দশ দিন পর মা’রা যান,আমি হয়ে যাই একা,সিহাবের ভালোবাসা পেতে গিয়ে আমি সব হারিয়েছি সব,আমি আমার পাপের শা’স্তি দুনিয়াতেই পেয়ে গেলাম।আন্টি তুমি আমাকে মায়ের মতো ভালোবেসে ছিলে আর দেখো আমি কি করলাম সিহাবের জন্য তোমাদের সবাইর বিশ্বাস ভা’ঙ্গলাম,তোমাদের কষ্ট দিলাম।কিন্তু তোমাদের কষ্ট দিয়ে আমি নিজেও ভালো থাকতে পারি নি,সব সময় অপ’রাধ বোধ আমাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।ভালো থাকতে পারি নি আমি,ভালো থাকতে পারিনি।
তিশা আমি জানি তুমি ওসমানকে খুব ভালোবাসো,
তুমি না খুব লাকি যে ওসমানও তোমাকে ভিষণ ভালোবাসে আর আমার বেলায় দেখো সিহাবকে এতো ভালোবেসে এতো কিছু করে শেষে কি না ওর ছ’লনা পেলাম,এ কেমন ভালোবাসা?
তিশা তোমাকে আমি ছোট বোনের মতো ভালোবেসেছি
তোমাকে পেয়ে মনে হয়েছিলো আমি যেন একটা ভালো বন্ধু পেয়ে গেছি,তোমাদের সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো সব সময় আমার মনে পরতো,সেইদিন সিলেটে আমি তোমাকে মা’রতে চাইনি,সিহাবকে অনেকবার রিকুয়েস্ট করে ছিলাম কিন্তু বরাবরের মতোই ও আমাকে ভালোবাসার ক’স’ম দেয়,আমি ছিলাম ভালোবাসার কা’ঙ্গা’ল এক মুঠো ভালোবাসার জন্য এতো খারাপ কাজ করেছি তোমাদের এতো কষ্ট দিয়েছি,কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তোমাদের মন থেকে ভালোবাসি,কখনো তোমাদের খারাপ চাইনি,কখনো না।আর দেখো না
এতো কিছু করেও সিহাবের ভালোবাসা পেলাম না,
তোমাদের ভালোবাসা পেয়েও হারিয়ে ফেলাম।
মানুষ যখন ভালোবাসার কা’ঙ্গা’ল থাকে তখন না তার কোনো হিতাহিত জ্ঞান থাকে না,সে ভালো মন্দ চিনতে পারে না,সে তার ভালোবাসার মানুষটাকে পাওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারে,সব কিছু করতে পারে।
জেসমিনের শ্বা’স নিতে কষ্ট হচ্ছে,
ও সবার হাত একএে করে ধরে,
তোমরা আমাকে ক্ষ’মা করে দিও,বিশ্বাস করো তোমাদের সাথে কোনো কিছু করার আগে সবসময় আমার হাত কাঁপতো তবুও ভালোবাসার খাতিরে সেই অ’ন্যা’য় কাজগুলো করেছি,জানি আমি যা করেছি সেগুলোর ক্ষমা হয়না,তবুও যদি পারো তাহলে আমাকে ক্ষমা করে দিও,আচ্ছা আমার একটা কথা রাখবে তোমরা,আমার মৃ’ত্যু’র পর আমাকে আমার বাবা মার ক’বরের পাশে ক’বর দিও।
জেসমিন খুব আস্তে আস্তে নি’শ্বাস নিচ্ছে,
তোমাদের শেষে শুধু একটা কথাই বলবো,
সবাই আমাকে ক্ষ’মা করে দাও,ক্ষ’মা করে দাও।
জেসমিন শেষ নি’শ্বাস ত্যা’গ করলো।
এতদিন জেসমিনের প্রতি সবার ঘৃ’ণা থাকলেও আজ জেসমিনের জন্য সবার চোখে পানি,সবাই জেসমিনের দিকটা বুঝতে পেরেছে,বুঝতে পেরেছে কেনো জেসমিন এমনটা করেছে,ও আসলেই ভালোবাসার কা’ঙ্গা’ল ছিল একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো কিছুই না করলো,কিন্তু শেষে কি পেল ছ’লনা!
ভালোবাসা!
হায় এ ভালোবাসা!
ভালোবাসার জন্য মানুষ কতো কিছুই না করে।
সবাই তো ভালোবাসে সেই ভালোবাসার বিনিময়ে তারা কি ভালোবাসা পায়?
হয়তো কেউ পায় আবার কেউ ছ’লনার শি’কার হয়।
কেউ ভালোবেসে সুখের ঠিকানা খুঁজে পায়,
আবার কেউ ভালোবেসে দুঃখের সাগরে ডু’বে যায়।
আচ্ছা কেন এমনটা হয়?
আচ্ছা ভালো তো তিশাও বেসেছিল,
ভালো তো জেসমিনও বেসেছিল,
শুধু তফাৎ ছিল একটাই তিশা সঠিক মানুষকে ভালোবেসে ছিল আর জেসমিন ভুল মানুষকে,
সঠিক মানুষকে ভালোবাসলে জীবন হয় পরিপূর্ণ আর ভুল মানুষকে ভালোবাসলে জীবন হয়ে উঠে জ’ঘ’ন্য।
সবার জীবনে কি সঠিক মানুষ আসে?
আচ্ছা জেসমিন তো ভালোবাসেই ভালোবাসার খাতিরেই তো এতো কিছু করেছিলো তবে কেন ওর সাথে এমনটা হল?
কেন ও ছ’লনার শি’কার হলো?
এটাই বুঝি নি’য়’তি’র খেলা?
ভালোবাসা সব পারে।
ভালোবাসা পারে তিশার মতো এতিম মেয়েকে বাবা মায়ের ভালোবাসা পাইয়ে দিতে জীবনে খুশির জোয়ার নিয়ে আসতে।
আবার ভালোবাসা পারে জেসমিনের মত হাসি খুশি মেয়েটার বাবা মা কে’রে নিতে তার জীবনকে ধ্বং’স করে দিতে।
তফাৎ তো শুধু একটাই সঠিক মানুষ নির্বাচণ করতে হবে।
কিন্তু এই সঠিক মানুষ পাবো কোথায়?
আদোও কি সঠিক মানুষ আছে?
হয়তো আছে নয়তো না।
আচ্ছা ভালোবাসা এমন কেন?
ভালোবাসা কেন এতো কাঁদায়?
কেন এত ম’রি’য়া করে তুলে?
ভালোবেসে সুখে থাকার তো সবারই অধিকার আছে তবে কেনো সবাই সুখে থাকতে পারে না?
হাহ্,
“এ সম্পর্ক বুঝা বড় দায়,
কোনটা যে তার ভালোবাসা কোনটা যে অভিনয়”।
জেসমিনের ইচ্ছে অনুযায়ী ওর লা’শ মালেশিয়া নিয়ে যাওয়া হয়,ওর বাবা মায়ের ক’বরের পাশে ওর ক’বর দেওয়া হয়,ওসমান ওমর ওয়াহিদ নিজ হাতে জেসমিনের ক’বরে মাটি দেয়।
ওরা দুদিন মালেশিয়ায় থেকে বাংলাদেশে চলে আসে,
জেসমিনের মা’ডা’র করায় সিহাবের ফাঁ’সির রায় দেওয়া হয়,সময় মতো ফাঁ’সিও দেওয়া হয়।
কেটে যায় ছয়টি মাস,এই ছয় মাসে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে,তিশা ওসমানের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি
মিটে গেছে,তিশা এখন একদম সুস্থ শুধু মাঝে মাঝে মাথা ব্যাথা করে,ওয়াহিদ অবান্তিকা এখন ওসমান তিশা আয়েশা ওমরের সাথে লন্ডনে থাকে।
বাংলাদেশের হসপিটাল একজন সিনিয়র ডক্টরের কাছে বিক্রি করে দিয়ে এসেছে,ফার্ম হাউজ গুলোও বিক্রি করে দিয়েছে,বাংলাদেশে শুধু ওদের খান বাড়ি আছে,মাঝে মাঝে যখন দেশে যাবে তখন ওরা সেখানে থাকবে।ওসমান ওমরের হসপিটালের বেশ উন্নতি হয়েছে,তিন বাবা ছেলে মিলে ভালোভাবেই হসপিটালের হাল ধরেছে,বাড়িতে অবান্তিকা তিশা আয়েশার এটা সেটা করে দিন কেটে যায়,কিন্তু সবার মনে এখনো অব্দি কোথাও না কোথাও জেসমিন রয়ে গেছে,
তবুও ভালোই কেটেছে দিনগুলো।
আজ সাত মাস হলো ওরা লন্ডনে আছে।
সবাই একসাথে সুখে শান্তিতে আছে,হাসিখুশির মাঝে কখন যে সকাল হয় কখন যে রাত হয় বোঝাই যায় না।
ওসমান,ওমর,ওয়াহিদ হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেছে
ওরা সবাই মিলে ডিনার করতে বসে,হাসি মজার মধ্যে ডিনারটা সেরে ফেলে।
ওয়াহিদদের রুমে,
ওয়াহিদ অবান্তিকা বসে কথা বলছিলো তখনই কেউ রুমের দরজায় নক করে,
চলবে কি?
[কেমন লেগেছে কমেন্টে জানাবেন,কোনো প্রকার ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]#উপন্যাসের_শেষ_পাতায়_তুমি
#Writer_Tanisha_Akter_Tisha
#Part_54
কপি নিষিদ্ধ ❌
ওয়াহিদ অবান্তিকা বসে কথা বলছিলেন তখনই কেউ রুমের দরজায় নক করে,
ওয়াহিদ দরজা খুলে দেখে,
ওসমান,তিশা,ওমর,আয়েশা দাঁড়িয়ে আছে।
উনি ওদের ভিতরে আসতে বলেন।
ওসমান,ওমর,আয়েশা,তিশা,ওয়াহিদের রুমে আসে।
ওয়াহিদ বলে,
তোমরা সবাই একসাথে আসলে যে,
কিছু বলবে তোমরা?
ওসমান,ওমর একসাথে,
বাবা মামনি একটা গুড নিউজ আছে।
কি সেটা?
ওসমান বলে,
আগে আমি বলবো।
ওমর বলে,
না আমি বলবো।
না আমি আগে।
না আমি আগে।
আমি আগে বললাম তো।
আমিও আগেই বলবো।
আমি বলবো।
না আমি বলবো।
আমি।
না আমি।
না আমি।
ওয়াহিদ দুজনকে থামিয়ে বলে,
ওহহো বাচ্চাদের মতো ঝগড়া করোনা,
দুজনই একসাথে বলো।
ওসমান,ওমর একসাথে,
আমি বাবা হবো,আর তোমরা দাদা,দাদী হবে।
ওসমান,ওমর নিজেদের কথা শুনে অবাক হয়ে একসাথে বলে,
তারমানে আমি চাচ্চু হবো!
তিশা আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমরা চাচি + খালামনি হবো।
আয়েশা মুচকি হেসে বলে,
হুম।
অবান্তিকা আয়েশা তিশাকে জড়িয়ে ধরে,
থ্যাঙ্ক ইউ মামনি আমাদের এত বড় খুশির সংবাদ দেওয়ার জন্য।
অবান্তিকা ওদের ছেড়ে আলমারি থেকে দুইটা চেইনের বক্স বের করে।ওদের কাছে এসে ওদের গলায় চেইন পরিয়ে দিয়ে বলে,
আমাদের এত বড় খুশির সংবাদ দেওয়ার জন্য আমার তরফ থেকে তোমাদের জন্য ছোট একটা উপহার।
মামনি এটার কি দরকার ছিল।
কোনোই দরকার ছিলো না আমি শুধু ভালোবেসে তোমাদের এটা দিলাম,আর মা কি মেয়েদের কিছু দিতে পারেনা না কি।
আয়েশা তিশা খুশি হয়ে অবান্তিকাকে জড়িয়ে ধরে।
ওয়াহিদ আয়েশা তিশার কাছে এসে ওদের মাথায় হাত রাখে,
আগে আমাদের বাড়ি মরুভূমির মতো ছিল,কেউ কখনো কোনো হাসি মজা করেনি,আমরা সবাই কেমন একটা জীবন যাপন করতাম,নিজেদের রোবট মনে হতো,না ছিল হাসি মজা,না ছিল আনন্দ উল্লাস,কিন্তু তোমরা আসার পর আমাদের বাড়িতে খুশির বাহার চলে এসেছে,তোমরা সব সময় এই বাড়িটাকে মাতিয়ে রেখেছো,তোমাদের বাচ্চামো,দুষ্টুমি দেখে কখন যে রাত হতো কখন যে দিন হতো বুঝতেই পারতাম না,আমার সব সময় মনে হতো আমার বাড়িতে দুটো বাচ্চা দুষ্টুমি করছে।হাহা দেখতে দেখতে আমার বাচ্চামি করা মামনিরাও মা হবে তাদের ছোট বাচ্চারা আমার সাথে ছোট ছোট হাত পা দিয়ে খেলা করবে,আমাকে দাদাভাই বলে ডাকবে,থ্যাঙ্ক ইউ মামনি থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।
আয়েশা তিশা মুচকি হেসে ওয়াহিদকে জড়িয়ে ধরে।
ওয়াহিদ ওসমান ওমরকে উদ্দেশ্যে করে বলে,
ওসমান,ওমর এখন থেকে মামনিদের অনেক কেয়ার করবে,আমি যেনো কখনোই আমার মামনিদের চোখে জল না দেখি,সবসময় ওদের মুখে হাসি দেখতে চাই।
এখন ওদের বেশি বেশি সময় দিবে হসপিটাল আমি সামলে নিবো,তোমরা জাস্ট আমার মামনিদের খেয়াল রাখবে।
ওসমান ওমর দুজনই বলে,
ওকে বাবা তুমি যেমনটা বললে ঠিক তেমনটাই হবে।
ওসমান অবান্তিকাকে বলে,
মামনি কাল থেকে আরো সার্ভেন্ট চলে আসবে তোমাদের তিন জনকে কোনো কাজ করতে হবে না,
রান্নাঘর থেকেও তোমরা দূরে থাকবে,হ্যাঁ তোমার শুধু একটামাত্র কাজই থাকবে তা হলো তোমার মেয়েদের যত্ন করা।
সেটা কি আর বলা লাগে,আমার মেয়েরা আমার দ্বায়িত্ব।
ওয়াহিদ বলে,
আচ্ছা রাত হয়েছে যাও তোমরা রুমে যেয়ে রেস্ট করো,
মামনিদের এখন রাত জাগা ঠিক হবে না,তোমরা মামনিদের সাবধানে সিড়ি দিয়ে উপরে নিয়ে যাও।
ওয়াহিদের কথা মতো ওরা ওয়াহিদের রুম থেকে চলে আসে।
তিশা আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে,
তোকে একদিন বলেছিলাম না আমাদের জীবনেও সুখ আসবে আমাদেরও কেউ অনেক ভালোবাসবে দেখ মিললো তো আমার কথা,আজ আমরা দু বোনই কতো সুখে শান্তিতে সংসার করছি,মানুষ আল্লাহর কাছ থেকে যা চায় আল্লাহ তাকে তাই দান করেন শুধু একটু অপেক্ষা করতে হয়।
হ্যাঁ তুই ঠিক বলেছিস,দেখ আমাদের একসাথে বিয়ে হলো,আমাদের একসাথে বেবিও হবে,আমার ইচ্ছে ছিল সারাজীবন তোর সাথে থাকার দেখ আল্লাহ সে ইচ্ছেও পূরণ করেছে,আমরা আজীবন একসাথে থাকবো।
হুম মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত।
ওসমান ওমরকে জড়িয়ে ধরে,
কনগ্রাচুলেসন।
থ্যাঙ্ক ইউ এন্ড কনগ্রাচুলেসন।
সময়মতো ট্রিট টা দিয়ে দিস।
ভাইয়া ট্রিট তো তুমি দিবা।
উহুম তোকেও দিতে হবে।
ওকে ডান।
ওসমান তিশাকে বলে,
তিশা চলো রুমে যাই।
হুম।
ওমর আয়েশাকে বলে,
আয়েশা চলো।
হুম।
ওরা যার যার রুমে চলে যায়।
ওয়াহিদদের রুমে বেলকনিতে ওয়াহিদ অবান্তিকা বসে আছে,অবান্তিকা ওয়াহিদের কাঁধে মাথা রেখেছে।ওয়াহিদ আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,
অবান্তিকা আজ আমি খুব খুশি আমরা দাদা দাদী হবো
ছোট ছোট দুটো বেবি আমাদের সাথে তাদের ছোট ছোট হাত পা দিয়ে খেলবে,দাদা,দাদি বলে ডাকবে,
ভাবতেই কতো ভালো লাগছে,আমি তো আর অপেক্ষা করতে পারছিনা।
হাহা এখনো ১০ মাস অপেক্ষা করতে হবে।
হুম তাতো করতেই হবে।
জানো ওয়াহিদ তোমাকে পাওয়ার পর আমি কখনো একাকিত্ব বোধ করিনি,তুমি সব সময় আমার পাশে ছিলে,তুমি ঢাল হয়ে সব বি’প’দ থেকে আমাকে রক্ষা করেছো,তোমার সাথে ৪০ টি বছর পাড় করেছি,কতো দুঃখ কষ্ট এসেছে আমাদের জীবনে কিন্তু তুমি কখনো আমার হাত ছাড়নি সবসময় শক্ত করে হাত ধরে রেখেছো।
কি করে ছাড়ি বলো তোমাকে যে ভিষণ ভালোবাসি হ্যাঁ কাজের প্রেশারে সময় কম দিলেও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দু মাএও কমে নি,আর কখনো কমবেও না।
আমাদের দুজনের গড়া সংসারটা আজ কতো বড় তাইনা প্রথমে আমাদের সন্তান এলো তারপর পর তাদের স্ত্রী এলো কিছুদিনপর তাদেরও সন্তান আসবে।
সময় কতো দ্রুত চলে যায় তাই না।
হুম খু্ব দ্রুত চলে যায়।
এতোদিন যেভাবে আমাকে আগলে রেখেছা বাকিটা জীবনও কি এভাবে আগলে রাখবে?
হুম আগলে রাখবো,মৃ’ত্যু’র আগ পর্যন্ত এভাবেই ভালোবেসে আগলে রাখবো।
ওয়াহিদ অবান্তিকাকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে।
ওমরদের বেলকনিতে,
“আমারও পরান যাহা চায়
তুমি তাই
তুমি তাই গো
আমারও পরান যাহা চায়
তোমা ছাড়া আর এ জগতে
মোর কেহ নাই
কিছু নাই গো
আমারও পরান যাহা চায়।”
ওমর ডিভানে বসে আছে,আয়েশা ওমরের বুকে মাথা রেখে বসে আছে,ওমর ওকে রবীন্দ্রনাথ সঙ্গীত গেয়ে শুনাচ্ছে,গান গাওয়া শেষে ওমর আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে রয়,আয়েশা এক আঙ্গুল দিয়ে ওমরের বুকে আঁকিবুঁকি করতে করতে বলে,
ওমর তুমি খুশি তো?
মায়াবতী আমি যে কতো খুশি তা তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না,আর মাএ কয়েকটা মাস তারপর আমাদের কোল আলো করে একটা ফুটেফুটে বেবি আসবে,সে আমাকে আধোআধো গলায় বাবা বলবে,
আমি ওকে কোলে নিবো,ওকে নিয়ে ঘুরবো,ওর সাথে খেলবো,ও আমার বুকের মাঝে ঘুমাবে,মায়াবতী এগুলো ভাবতেই তো কতো ভালো লাগছে,
ও কবে যে আমাদের কাছে আসবে।
ইনশাল্লাহ আর ১০ মাস পর আসবে,আমাদের শুধু একটু অপেক্ষা করতে হবে।
হুম তা তো করতেই হবে,অাজ আমাদের পরিবার পূর্ণ হলো,কতো বাঁধা পেরিয়ে আমরা সবাই আজ একসাথে তাই না।
হুম তুমি ঠিক বলেছো,কতো ঝা’মেলা হল,কতো বাঁধা আসলো তবুও আজ আমরা একসাথে,সবই আল্লাহর মেহেরবানি,জানো সব কিছুর মাঝেও আমি জেসমিন আপুকে মিস করছি,মানুষ চলে গেলেও তার স্মৃতি গুলো রয়ে যায়।
হুম ঠিক বলেছো,জেসমিন সিহাবকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু সিহাব কখনোই সে ভালোবাসার মূল্য দেয়নি,
মেয়েটাকে ইউস করেছে,জেসমিন এক মুঠো ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতো কিছুই না
করেছে কিন্তু,
ওমর একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
আয়েশাও দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলে,
আল্লাহ ওনার করা গু’না’হ গুলো মাফ করে দিন,তাকে বেহেশত নসিব করুন,আমিন।
আমিন।
আয়েশা উঠে দাঁড়িয়ে রেলিং উপর হাত রাখে,ওমরও উঠে এসে আয়েশাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ গুঁজে,আয়েশা আবেশে চোখ বন্ধ করে পেঁটে হাত রেখে বলে,
ওমর আমার গর্ভে আস্তে আস্তে আমাদের বেবিটা বেড়ে উঠছে,আমার খুব ভালো লাগছে,মা হওয়ার অনুভূতিটা অন্যরকম,আমাদের বেবিটাকে আমি কোলে নিতে পারবো,ওকে আদর করতে পারবো,ওর মুখ থেকে মা ডাক শুনতে পারবো,ওমর আমি যে আজ কতোটা খুশি তা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।
আমিও খুব খুশি মায়াবতী।
ওমর সারাজীবন এভাবেই ভালোবাসবে তো?
অবশ্যই বাসবো,জীবনের শেষ নি’শ্বা’স অব্দি ভালোবেসে যাবো।
আয়েশা ওমরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
ভালোবাসি ওমর,তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
ওমরও আয়েশাকে জড়িয়ে ধরে বলে,
আমিও আমার মায়াবতীটাকে খু্ব ভালোবাসি।
চলবে কি?
[