#পর্ব_২২(রহস্য উদঘাটন৩)
#প্রহর_শেষে_আলোয়_রাঙা
লেখিকাঃ #নুুরুন্নাহার_তিথী
একটু আগে দারোয়ান এসে একটা খাম দিয়ে যায় প্রহরকে। খামের ভিতর একটা প্রিন্টেড মেসেজ। সেখানে লেখা,
“প্রহর শেহমাত, নিজের লুকানো শত্রু খুঁজছেন? নিজের আশেপাশেই খুঁজলে পাবেন। ডাঃ আরমান শেখেরও ক্লোজ কেউ। সতর্ক থাকবেন কারণ শত্রু আপনার সাথে সমব্যথীও হবে কিন্তু সহযাত্রী না।
ডার্ক বাটাফ্লাই।”
প্রহর বুঝতে পারছে না এখন আবার এই ডার্ক বাটারফ্লাইটা কে? প্রহর ভাবছে শিতলকেও দেখাবে কিনা? পরে ভাবল, শিতল তো সবসময় সাহায্য করে চলেছে। প্রহর শিতলকে ডাক দিলো। শিতলকে বলে,
“দেখ এই চিঠিটা? কাকে বুঝালো?”
চিঠিটা পড়ে শিতল মুচকি হাসে। সে বুঝে গেছে তাকে এখন কি করতে হবে। সে বলে,
“স্যারের ক্লোজ কেউ হবে মনে হচ্ছে। ক্লোজ কেউ না হলে স্যার যে ভা*ইরাসের অ্যান্টিডোট নিয়ে কাজ করছিল তা কিভাবে জানল? একসাথে থাকতে থাকতেই জেনেছে তাইনা?”
প্রহর চিন্তিত হয়ে বলে,
“প্রথমে আমিও এটাই ভাবতাম। কিন্তু পরে ভাবলাম, রাই*ভাল টিম যেকোনো উপায়ে খবরাখবর রাখতে পারে। এখন এই সতর্কবার্তা দেখে মনে হচ্ছে সত্যি ক্লোজ কেউ। কিন্তু কে?”
শিতল ভাবছে কিভাবে আরেকটু স্পেসিফিক ভাবে বুঝাবে? হুট করে উত্তেজিত হয়ে বলে ওঠে,
“স্যারের স্টুডেন্টদের মধ্যে কেউ হতে পারে। তোরও ক্লোজ এমন কেউ। হতে পারে সে তোকে সহ্য করতে পারে না।”
প্রহর অবাক হয়ে বলে,
“আমাকে সহ্য করতে পারে না? স্যারের সাথে পরিচয় হওয়ার পর আমার যাদের সাথে ঝামেলা হয়েছে তারা কেউ স্যারের স্টুডেন্ট ছিল না। ইটস টাফ ইয়ার।”
শিতলের ইচ্ছে করছে নিজের ক-পাল দেয়ালে ঠু*ক*তে। কিভাবে বুঝাবে ভাবতে ভাবতে বলে,
“অনেক সময় একাধিক প্রিয় ছাত্র থাকলে হিং*সে কাজ করে। এমন কেউ হতে পারে কি?”
প্রহর অবাক হয়ে বলে,
“প্রিয় ছাত্র? আমি আর রেদোয়ান ভাই স্যারের প্রিয় ছাত্র। রেদোয়ান ভাই এসব করবেন কেনো?”
“জানিনা। ওইদিন যখন আসলেন তখন তিনি খুব অস্থীর ছিলেন তাছাড়া পিকুও তাকে দেখে খারাপ ভাইব দিচ্ছিল। উনি আর পিকু আলোর ঘরে ছিলো তখনি পিকু ডেকে ওঠে।”
“তুই আমাকে এসব আগে বলিস নাই কেনো? আলোর ঘরে তো সিসিটিভিও নেই।”
শিতল বোকার মতো হাসে। প্রহর কিছু ভাবতে ভাবতে উঠে চলে যায়। যাওয়ার আগে বলে যায় ত্রিশালকে যেনো সবকিছু বুঝিয়ে দেয়।
_________
“এই মেয়ে এই। ত্রিশালও এসে পরছে। এখন আর ঘুমিয়ে থেকো না। প্রহর না থাকাকালীন তোমাকে কোমায় থাকার জন্য মেডিসিন দিতে হতো না কিন্তু এখন দৈনিক একটা করে দিতে হচ্ছে।”
ডার্ক বাটারফ্লাই নিজের হাতে সূপ খাচ্ছে আর শিতলের অস্থির হয়ে কথাগুলো শুনছে।
“তুমি তো জানো এটা কতো রিস্কি। কোনো কারণ ছাড়া এটা দীর্ঘসময় দিলে ব্রেইন ড্যামেজও করতে পারে। টানা চারদিন ধরে দিতে হচ্ছে।”
এবার ডার্ক বাটারফ্লাই মুখ খুলে,
“তো কি করব আমি? তোমার ব*ল-দ ভাইকে এখন মুখে তুলে খাওয়াতে হবে? আজকে এতো হিনটস দিলে, তাও সে চিন্তা করে! তার রেদোয়ান ভাইকে সন্দেহ করার জন্য বারবার ভাবছে। এখন যদি রেদোয়ান জেনে যায়, আমি সুস্থ। তবে সে প্রহরকে আবার ব্ল্যাকমেইল করবে। যেদিন রেদোয়ান এখানে এসেছিল তখন সে মনিটরে খেয়াল করেনি। আমি জেগেই ছিলাম আর ভয়ে ছিলাম যে যদি বুঝে যায়! কিন্তু দেখো, সেদিন রেদোয়ানের আসল চেহারা সামনে এলো। পিকু যদি ডেকে না উঠত তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই রেদোয়ান জেনে যেতো আমি কোমাতে নেই। আমি আমার পরিচয় এখনি রিভেল করতে চাই না। আমার বাবাও জানেন না আমি একজেক্টলি কোন বিষয়ের উপর পড়াশোনা করেছি। বাবা জানেন আমি কেমেস্ট্রি পড়েছি। যেহেতু উনি আমার রেজাল্ট এসবের খেয়াল রাখতেন না। প্রহর যখন সবকিছু বের করতে পারবে তখন আমি রেদোয়ানকে জানতে দিবো আমিই তাকে ও চয়নিকাকে আড়াল থেকে থ্রে*ট দিয়েছি। তাছাড়া চয়নিকা আমাকে বি*ষ দিয়েছিল ঠিক এমনকি আমি খেয়েছিও। কিন্তু তার আগে যে আমি আধাঘণ্টা সময় নিয়েছিলাম, সেই সময় আমি কফির মগ থেকে চয়নিকার আড়ালে সিরিঞ্জ দিয়ে কিছুটা স্যাম্পল নিয়ে নিয়েছিলাম। তারপর আর কি! টেস্ট করে এর অ্যান্টিডোট নিজে বানিয়েছি। তারজন্যই সময় নিয়েছিলাম নয়তো দুজনে একসাথে কফি খেতেই তো কফিটা বানিয়েছিলাম।”
শিতল বলে,
“জানি সব। প্রহরের থেকে যখন জানতে পারি তোমার বি*ষক্রিয়া হয়েছে তখন আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না। যে নিজের স্বামীর আড়ালে চার বছর যাবত বাড়ির এড়িয়ার বাহিরে একটা ল্যাব বানিয়ে রেখেছে ও সেখানে যাওয়ার জন্য একটা গুপ্ত রাস্তাও করে রেখেছে। সে আর যাইহোক, চয়নিকার কাছে হারবে না। আলো দ্যা ডার্ক বাটারফ্লাই! আমার কাছে সে প্রজাপতি।”
আলো হাসল অতঃপর বলল,
“কেউ ধরতে না পারলেও তুমি ঠিকই আমাকে ধরে ফেলেছিলে। আমেরিকায় আমার এক বেস্টফ্রেন্ড ছিল। যে আমাকে বাটারফ্লাই বলত। তার নাম ছিল রবার্ট। সে তার মৃ*ত্যুর আগ পর্যন্ত আমাকে মে*ন্টাল সাপোর্ট দিয়ে গেছে। আমার মাঝেমধ্যে প্যানিক অ্যা*টাক হতো। আমি কি করে ফেলতাম পরে নিজেরই মনে থাকত না। বাংলাদেশে এসে আমি বাবার ডায়েরিতে জানতে পারি, আমাকে আমেরিকায় পাঠানোর আরেকটা কারণ। আমি নিজ হাতে চয়নিকার মা পদ্মলিকাকে হ*ত্যা করেছি! অথচ আমার মনে নেই! পদ্মলিকা আমার মায়ের খু*নি। আমি নাকি কোমা থেকে ফিরে আসার পর নিজেকে ঘরবন্দি করে ফেলেছিলাম। পদ্মলিকা বাবাকে ভালোবাসত। কিন্তু বাবা তো মাকে ভালোবাসেন। পদ্মলিকা তাই বিয়ে করেন বাবার বেস্টফ্রেন্ডকে কিন্তু সে আমার বাবা ও মাকে আলাদা করার জন্য অনেক চেষ্টা করে শেষে মাকে খু*ন করেন। সেটা আমি দেখে ফেলেছিলাম। আমি পদ্মলিকার পেছোন সাইড দেখলেও তখন চিনতে পারিনি। কিন্তু যেদিন পদ্মলিকা আমাদের বাড়িতে আসলো তারপর বাবার সাথে জবরদস্তী করছিল তখন সে নিজের কুকির্তি গর্ব করে বলছিল। আমি সেসব শুনে মায়ের একটা ছোটো শা*ব*ল ছিল গার্ডেনের জন্য, তা দিয়ে মা-*থায় বা*ড়ি দিয়েছিলাম। একদম স্পট ডে*থ ছিল। চয়নিকার বাবা চয়ন আঙ্কেলকে বাবা সব জানিয়েছিলেন। পদ্মলিকার কর্মকাণ্ড সব শুনে চয়ন আঙ্কেল আর পুলিশ কেস করেননি। আর বাবা আমাকে আমেরিকা পাঠিয়ে দিলো। বাবা আর চয়ন আঙ্কেল ছাড়া এই সত্য আর কেউ জানত না।”
শিতল চুপচাপ সব শুনছে। এসব সে জানে। চার বছর আগে সে একদিন প্রহরদের বাড়িতে আসতেছিল তখন আলোকে একটা পুরানো বাড়িতে ঢোকতে দেখে পিছু নেয়। তখনি জানতে পারে ওখানে আলো নিজের ল্যাব বানিয়েছে।
আলো দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে,
“চয়ন আঙ্কেল চেয়েছিলেন চয়নিকা ওর মায়ের স্বভাব না পাক কিন্তু তাই পেয়েছে। আমিতো প্রথমে ভেবেছিলাম চয়নিকা আমাকে সহ্য করতে পারে না প্রহরকে ভালোবাসে তাই। কিন্তু ওই ইন্সিডেন্টের আগেরদিন ওর ফোনালাপ শুনে জানলাম সে প্রহরের ক্ষতি করতে কাউকে সাহায্য করছে এবং সে প্রেগনেন্ট। এখন প্রহর রেদোয়ানের সত্য জানলেই আমি প্রকাশ্যে আসব। জানি প্রহর হার্ট হবে বাট অ্যাই হ্যাভ নো চয়েজ। আমি সবকিছু ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। নিজের জব ছেড়ে দেশে এসেছি কেনো তবে? প্রহরের সাথে একজন গৃহিণী হয়ে সংসার করছি কেনো তবে? কারণ আমি একটু শান্তিতে বাঁচতে চাই। এসব কিছু আমারও ভালো লাগে না। আমি মেন্টালি খুব সেনসিটিভ। বাহিরের কারও কথা আমায় এফেক্ট না করলেও আপনজনদের কথা ও কাজ আমাকে এফেক্ট করে। আমি আড়ালে থেকেই প্রহরকে সাহায্য করতে চাই। সব শেষ হলে আমি প্রহরের সামনে আসব। খুব জলদি কিয়া তার স্বামীর আসল রূপ জানবে। ভদ্রতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত চেহারা বেরিয়ে আসবে। চয়নিকাকে যা করার কিয়া করবে। ধোঁকাটা তো সে কিয়াকে দিয়েছে। বান্ধবী হয়ে বান্ধবীর স্বামীকে! ছিহঃ।”
বলতে বলতে আলোর চোখ বেয়ে নোনাজল গড়ালো।শিতল বলে,
“এই প্রজাপতি আলো। একদম কাঁদবে না। দরকার পরলে আমি চো*রের মতো রেদোয়ান ভাইয়ের বাসায় যাব তারপর চুলের স্যাম্পল কালেক্ট করব। তিনি তো খুব সুন্দর করে চুলে ব্রাশ করে রাখেন। তাও না পারলে পিকুকে নিয়ে আগামীকাল হাঁটতে বের হবো আর রেদোয়ান ভাইকে দেখে পিকুকে বলব, যা কা*ম*ড়ে মাং*স নিয়ে আয়!”
শেষোক্ত কথা শিতল রম্যস্বরে বলেছে। আলো বালিশে মুখ চেপে হাসছে। রঞ্জনা খালা ঘুমাচ্ছেন বলে ওরা কথা বলতে পারছে। পিকু ও রিওকেও শিতল নিয়াজের সাথে গার্ডেনে পাঠিয়েছে।
“উফ শিতল আপু, তুমি স্যাড মোমেন্টেও ফান করতে পারো। চু*রি করা, পিকুর হেল্প! উফ! এখন নিজের বরের কাছে যাও। আমি একটু কাজ করি। আজকে প্রহর যাতে বাসায় না আসে সেই ব্যাবস্থা করতে হবে। তাকে এতো এতো ক্লু দিতে হবে যেনো সে আজ বাহিরেই চিন্তা করতে থাকে। আমি মেডিসিন নিবো না। ত্রিশালদাকে বলো যেনো বাবার ট্রিটমেন্ট আগে করতে আর চুপিসারে বাকিটা বুঝিয়ে বলবে। এখানকার ডাক্তারকে তো আমি টাকার বিনিময়ে চুপ করিয়েছি। ত্রিশাল যদি জেনে প্রহরকে এখনি বলে দেয়? আরও কিছুদিন যাক। মনে হচ্ছে খুব দ্রুত সব সামনে চলে আসবে।”
“হুম। চিন্তা করো না।”
আলো আবার চুপ করে শুয়ে পরে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
ডার্ক বাটারফ্লাই কে ছিল তাও জানলেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন গল্পটা প্রায় শেষের দিকে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।