#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
অনেক খোজাখুজির পর অবশেষে বিষণ্ন একটা কাজ পেয়েছে।কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ,সেটা হলো ছাঁদ থেকে কাপড় তুলে আনা।কেননা আকাশ ঘন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।গুড়গুড় মেঘের ডাক ভেসে বেড়াচ্ছে।এত্তোবড় একটা গুরুভার দায়িত্ব পেয়ে বিষণ্ন মুখ ভোতা করে ছাঁদে চলে গেলো।
ছাঁদে এসে বিষণ্ন একটা সিগারেট ধরাতে চাইলো,কিন্তু বাতাসের ঝাপটায় সেটা সম্ভব হলো না।এই রাগকে কন্ট্রোল করতে হলে অন্তত একটা সিগারেট না খেলেই নয়।বিষণ্ন বিড়বিড় করে বললো ” বাড়ির লোকজন আমায় ভাবেকি ?আমি কি এখনো সেই ছোট্ট বিষণ্নই রয়ে গেছি নাকি?বৃষ্টি হলে ছাঁদ থেকে কাপড় আমাকেই তুলতে হবে কেন?গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে শেষমেশ কাপড় তুলবো?থাকবো না এই বাড়িতে ”
বৃষ্টির ফোঁটা ঝিরিঝিরি পড়তে আরম্ভ করেছে।যতোই মনে মনে রাগ করুক না কেন,তবুও একটা ভয় থেকেই যায়।অবশেষে চোখ মুখ কুঁচকে একের পর এক কাপড়,টি-শার্ট তুলে হাতে জমা করছে।দুইহাত কাপড় দিয়ে ভর্তি।হন্তদন্ত হয়ে সিঁড়ির কাছে যেতেই প্রচন্ড এক চিৎকার দিয়ে উঠলো সে।
সেই চিৎকার কারো কান অব্ধি পৌছালো না,কেননা সিঁড়িতে দাড়িয়ে থাকা নারীমূর্তি এতোক্ষণে বিষণ্নর মুখ চেপে ধরেছে।ভয়ে বিষণ্নর একদম নাজেহাল অবস্থা। ছোট থেকেই সে ভূত,আত্মা এসবে খুব ভয় পায়।তার একটা যৌক্তিক কারণ ও আছে।
তখন বিষন্নর বয়স ছয়।মামা তার পঞ্চম জন্মদিনে তাকে একটা প্যান্ট গিফট করেছিলো।প্যান্টটা সাধারণ কোনো প্যান্ট ছিলো না,সেখানে অশরীরী কোনো ছায়া ছিলো।বিষয়টা বিষন্ন তখনই বুঝতে পারলো,যখন সে একা ঘরে প্যান্টটা পড়েছিলো।ঘটনাটা ছিলো খুবই ভয়ঙ্কর।পাঁচ বছর বয়সী বিষন্ন যখন একা ঘরে পরনের প্যান্ট পাল্টে মামার দেওয়া প্যান্ট পড়লো তখনই ঘটলো সেই অস্বাভাবিক ঘটনা।বিষন্ন দেখলো যতবারই সে প্যান্টটা পড়ছে ততবারই প্যান্ট খুলে ফ্লোরে পড়ে যাচ্ছে। ছোট্ট বিষণ্ন ঘটনায় প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলো। চ্যাঁচামেচি করে সারা বাড়ির মানুষ জড়োসড়ো হয়ে গেলো বিষন্নর ঘরে।সবাই এসে দেখে বিষন্ন খাটের তলায় দিয়ে মুখ বেড় করে আছে,তার বাকি শরীর খাটের নিচে।বিষন্নর মা যখন তাকে বেড় করলো তখন বিষন্ন ভয় পেয়ে কাঁপাকাঁপা স্বরে বললো
” মা,প্যান্ট ভূত ”
তখন মা ভ্রু কুচকে বললো ” প্যান্ট ভূত আবার কি? আর তুই নেং’টু হয়ে খাটের তলে কি করছিস? ”
তখন বিষন্ন ভ্যা ভ্যা করে কান্না করতে করতে বললো ” প্যান্ট ভূতটা বারবার আমার প্যান্ট খুলে দিচ্ছে।আমি ভয় পেয়ে খাটের তলে গেছি ”
তখন থেকেই ভূতের প্রতি বিশ্বাস বিষন্নর অধিক মাত্রায় বেড়ে গেলো।সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করে, সেই রাতে ভূত এসে তার প্যান্ট বারবার খুলে দিয়েছিলো।যদিও একসময় সবাই বলেছিলো যে প্যান্টের কোম’ড়ের সাইজ বড় ছিলো,তাই পড়ার সাথে সাথে খুলে পড়ছিলো।কিন্তু বিষন্ন তার প্যান্ট ভূত সিদ্ধান্ত থেকে এক চুল নড়লো না।উল্টে সে ভাবতে লাগলো, বাড়ির সবাই তাকে মিথ্যা বলছে।প্যান্ট ভূত আছে,সত্যিই আছে।
বিষণ্ন বেশ বুঝতে পারছে সে কোনো প্রেতাত্মার কবলে পড়েছে।ভয়ে বিষণ্নর মুখ ফ্যাকাশে ওয়ে গেলো।ক্রমশ হৃদস্পন্দন কমতে লাগলো।মুহুর্তেই সে নারীমূর্তিটির গায়ে টলে পড়লো।
বিষন্নর টলে পড়া দেখেও মিষ্টি ধরলো না। মিষ্টি মনে করেছিলো বিষন্ন ঢং করছে।কিন্তু তার ভাবনা ভূল প্রমাণ করে বিষন্ন প্রায় পাঁচ মিনিট ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে রইলো।মিষ্টি বুঝতে পারলো বিষন্ন ঢং করছে না।সে বিষন্নকে চিৎ করে কয়েকবার গা ঝাঁকুনি দিলো,কিন্তু বিষন্নর কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না।বিষন্নর বু’কে হাত দিয়ে হ্রদস্পন্দন চেক করতে গিয়ে মিষ্টি প্রচন্ড একটা শক খেলো। কেননা বিষন্নর স্পন্দন গতি খুব ধীরে চলছে,আর মুখটাও কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।ঝিমঝিমিয়ে বৃষ্টি পড়া আরম্ভ হলো।
_________________
সমুদ্রের অস্বস্তিবোধ ক্রমশ বাড়তে লাগলো।এই মুহুর্তে কি করা উচিত তার মাথায় আসছে না।একদিকে নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, আরেকদিকে নীলু।কোনটাকে বেছে নিবে সেটাই সমুদ্র এখনো ঠিক করতে পারছে না।তার সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে তার ভবিষ্যৎ।এডমিন প্যানেল থেকে তাকে একটা নোটিশ দেওয়া হয়েছে।যদি সে আমেরিকায় যেতে রাজি না হয় তাহলে তার চাকরি বরখাস্ত করা হবে।চাকরি না থাকার কষ্ট সমুদ্রর অজানা নয়।এতো ভালো একটা জব যদি হাতছাড়া হয়ে যায় তাহলে তার পুরো জীবনটা অভাবে অভাবে কাটাতে হবে।তখন অভাবের তাড়নায় হয়তো ভালোবাসাও থাকবে না।সমুদ্র একটা বিষয় বুঝতে পারছে যে এইসব চক্রান্ত করছে অফিস সি.ই.ওর ছেলে জুনায়েদ।কিন্তু সে কেনো এইসব করবে? তাকে তো সমুদ্র ঠিক মতো চিনেও না।এমনকি সেও সমুদ্রকে আগে কখনো দেখেছে বলে সমুদ্রর মনে হয় না।তাহলে এইসবের কারনটা কি?
ভালোবাসায় যেটা সর্বপ্রথম থাকতেই হবে সেটা হলো সন্দেহ। সমুদ্রর একটা ভয়ঙ্কর সন্দেহ হচ্ছে। সে জানে, সন্দেহটা করা ঠিক হচ্ছে না,এতে নীলুর ভালোবাসাকে অপমান করা হবে,তবুও সন্দেহটা বারবার কেন জানি ঠিক মনে হচ্ছে।
নীলু ভরসা করার মতো কাউকে পাচ্ছে না,যার কাছে বিশ্বাস করে নিজের ফোনটা দিতে পারে।বন্ধু বান্ধবদের তো একদম’ই দেওয়া যাবে না,এরা একেকটা মহা ধূর্ত।যে করেই হোক লক খুলে মেসেজ চেক করা শুরু করবে।বিশ্বস্ত হাত খুঁজতে খুঁজতে নীলুর ফোন বেজে উঠলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে নীলুর মুখ লজ্জায় লাল হয়ে গেলো,ঠোঁ’টের কোণে মুচকি হাসির আভা ফুটে উঠলো।অবাক করার বিষয় হলো ফোন রিসিভ করে দু’জনই অনেকক্ষণ চুপচাপ।কেউ কোনো কথা বলছে না।মৌনতা কেটে সমুদ্র বললো
” কেমন আছো নীলু ”
” ভালো আছি,”
” কি করছো? ”
” একটু পরেই গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হবে,সেজেগুজে বসে আছি ”
” বউ সাজে তোমায় খুব সুন্দর লাগবে,”
” লাগবে বলছো কেনো?তোমায় পাঠিয়েছি তো,দেখোনি? ”
” আসলে চেক করা হয়নি ”
নীলুর একটু মন খারাপ হলো।তবুও এই তুচ্ছ মন খারাপ অগ্রাহ্য করে বললো ” তোমায় খুব দেখতে ইচ্ছে করছে ”
সমুদ্র কি বলবে ভেবে পেলো না।যে মেয়ে বিয়ে নিয়ে এতোটা আবেগপ্রবণ হয়ে আছে,এতো স্বপ্ন বুনেছে,এতো ইচ্ছে, আকাঙ্খা নিয়ে বসে আছে, তাকে কিভাবে বলা যায়, ” নীলু আমি বিয়েটা করতে পারবো না “।সমুদ্রর চোখ জলে ভিজে উঠলো।নীলু বললো
” ভিডিও কলে আসতে পারবে? ”
সমুদ্রর খুব ইচ্ছে করছে নীলুকে বউ সাজে কেমন লাগে সেটা দেখতে।কিন্তু চাইলেও এখন সেটা সম্ভব না।ভিডিও কলে আসলে নীলুর আনন্দ মাখা মুখটা দেখে হয়তো সমুদ্র নিজেকে সামলাতেই পারবে না,হু হু করে কেঁদে ফেলবে।সেটা মোটেই ঠিক হবে না।
আকষ্মিক ফোন কেটে দেওয়ায় নীলুর প্রচন্ড মন খারাপ হলো।সেই মন খারাপ বেশিক্ষণ থাকলো না।পুরে ঘর জুড়ে তার বান্ধবীরা গিজগিজ করছে,হাসাহাসি করছে।তাদের কথাবার্তার বেশিরভাগই অশ্লীল।মেয়েরা একসাথে থাকলে অশ্লীল কথাবার্তা বলতে পছন্দ করে।তারা সেইসব নীলুকে কেন্দ্র করেই বলছে।যেমন
” নীলু শোন,বাসর রাতে নিজে থেকে কিছুই করবি না।একদম আশকারা দিবি না “।” দুলাভাই যদি বাসর ঘরে ঢুকেই বিছানায় বসে,তাহলে বলবি ওয়াসরুম থেকে একটু ঘুরে আসতে “।” দোস্ত চিন্তা করিস না, যা যা লাগে সবকিছু আমরা বিছানার তোশকের নিচে রেখে দিছি”।
এইসব কথা নীলুর কানে বুলেটের মতো ঢুকছে আর বেড় হচ্ছে।ইচ্ছে করছে মাটির ভেতর ঢুকে পড়ে।আবার এইসব শুনতে একটু একটু ভালোও লাগছে।নীলু আশপাশ তাকালো,মিষ্টিকে দেখতে না পেয়ে কিছুটা মনমরা হয়ে বসে রইলো।
মিষ্টি ছাঁদের ওপর উঠে দুইহাতে কিছুটা বৃষ্টির জল নিয়ে বিষন্নর কাছে বসে বিষন্নর চোখেমুখে ছিটে দিলো।দিয়ে অপেক্ষা করছে ককণ বিষন্ন চোখ মেলবে।আশাহত হয়ে আবারো জলের ছিটে দিতে দিতে এক পর্যায়ে বিষন্ন…….
চলবে?
পর্ব ছোট হওয়ায় দুঃখিত।পর্বটা এখনি লিখলাম।দিনে গল্প লেখা যায় না,তাই রাতে গল্প লিখে কাল সকালে বড় করে দিবো।☺️#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪৬
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
এক হাত গালে চেপে ধরে সিঁড়ির রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে মিষ্টি।রাগে তার চোখ,মুখ কুঁচকে আছে।সামনেই অপরাধ অঙ্গিতে হাঁটু গুটিসুটি মেরে বসে আছে বিষন্ন। তার মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট।মিষ্টির গালে হাত রেখে বসে কারন হলো কিছুক্ষণ আগে বিষন্ন মিষ্টির গালে ক’ষিয়ে একটা চ’ড় মেরেছে।ইচ্ছে করে মে’রেছে তা না।আকষ্মিকভাবে ঘটনাটা ঘটে গেছে।মিষ্টি তীক্ষ্ণ চোখে বারবার তাকাচ্ছে বিষন্নর দিকে।বিষন্নও অপরাধ ভঙ্গিতে তাকিয়ে রশকশহীন মুচকি হাসছে।মিষ্টি কঠিন গলায় হাত নাচিয়ে নাচিয়ে বললো
” তুই আমায় চ’ড় মারলি কেন? ”
মিষ্টির কথায় বিষন্ন ভয় পেয়ে আরো গুটিশুটি হয়ে বসলো।কাঁপাকাঁপা স্বরে বললো
” ইচ্ছে করে মা’রিনি তো।চোখ মেলেই তোমাকে দেখে মনে করছিলাম ভূত ”
মিষ্টি মুখটা দেখতে বাংলার “ঙ” এর মতো হয়ে গেলো।মুখ বিকৃত করে বললো
” এ্যা? কি বললি? ”
বিষন্ন আড়ষ্ট হয়ে বললো ” হু,ভেবেছিলাম ভূত বোধহয়,তাই ভয়ের প্রকোপে হাত চা’লায় ফেলছি ”
” হাহ্,তুই ভূতে বিশ্বাস করিস? ”
” অবশ্যই করি।তুমি তো প্যান্ট ভূতকে চিনো না,চিনলে বুঝতা ”
মিষ্টির মুখ হা হয়ে গেলো।ছাঁদে পিছলে পড়ে কি ওর মাথা খারাপ হেয় গেলো নাকি? প্যান্ট ভূত আবার কি জিনিস। মিষ্টি ধমকের স্বরে বললো
” প্যান্ট ভূত? সে কে? ”
” ও একটা ভূত।লোকের প্যান্ট খুলে নেয়।নেং’টু করে ছেড়ে দেয় ”
” তোকেও করেছিলো নাকি? ”
” হু ”
মিষ্টি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে গেলো।এই ছেলে বলে কি?ভূত ওর প্যান্ট খুলে নিবে কিভাবে?। বিষন্নর মাথায় জোড়ে একটা গা’ট্টা দিয়ে বললো
” তুই আসলেই একটা গাঁধা।ছোটখাটো ফর্সা গাঁধা ”
বিষন্ন মুখ ভোতা করে বললো
” তুমি ওর ক্ষমতা বিষয়ে জানোনা ”
” প্যান্ট খুলে নেওয়া খুব বড় ক্ষমতা বুঝি?তা তোর প্যান্ট ভূত কবে প্যান্ট খুলে নিছে? ”
” ছোট থাকতে,বারবার খুলে দিচ্ছিলো।”
” আমার কাথা ঘুরছে তোর কথা শুনে।আজেবাজে যত্তসব কথা ”
বলেই মিষ্টি উঠে দাড়ালো। লেহেঙ্গা দুই হাতে উঁচু করে তুলে নিচে নেমে গেলো।কয়েকটা সিঁড়ি নেমে আবারো হন্তদন্ত হয়ে বিষন্নর কাছে গেলো।বিষন্নর শার্টের কলার চেপে ধরে বললো
” আসল কথাই তো এখনো বলা হয়নি,”
বিষন্ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো ” ক…কি কথা ”
মিষ্টি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” আমার বান্ধবীরা যখন শাড়ি পরছিলো তখন তুই রুমে কেন গেছিলি? ”
বিষন্ন আমতা আমতা করে বললো ” আমি ইচ্ছে করে যাইনি,বিশ্বাস করো ”
” তুই তো কোনোকিছুই ইচ্ছে করে করিস না।ইচ্ছে করে চ’ড় মারিস না,ইচ্ছে করে মেয়েদের ড্রেস চেঞ্জ করার সময় ঢুকিস না…”
মিষ্টির পুরো কথা শেষ হিয়ার আগেই কথা থামিয়ে বিষন্ন বললো ” এক্সাক্টলি,এটাই বলতে চাচ্ছিলাম।আমি ইচ্ছে করে কিছুই করিনি ”
মিষ্টি দাঁতে দাঁত চেপে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।কিন্তু সেটা কন্ট্রোল করা বেশিক্ষণ সম্ভব নয়।বিষন্নর আরো কাছে এসে বললো
” তুই ইচ্ছে করেই ওখানে ঢুকেছিস।মেয়েদের শ’রীর দেখতে খুব ভাল্লাগে তাই না? ”
বিষন্ন লাজুক ভঙ্গিতে বললো ” কি যে বলো তুমি,লজ্জা লাগে ”
মিষ্টির রাগ আরো বেড়ে গেলো।বিষন্নর গ’লা চেপে ধরে বললো
” হাসছিস কেন তুই? মেয়েদের শ’রীর দেখার খুব শখ তোর তাই না? দেখাচ্ছি তোকে দারা,তোর দেখা বেড় করছি ”
বিষন্ন মিষ্টির থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে হাফাতে হাফাতে বললো ” আরে সমস্যা কি তোমার,পাগলি টাগলি হয়ে গেছো নাকি?এখনি তো ম’রে যাচ্ছিলাম,এমনে কেউ ধরে ”
” তোর মতো মিচকে শয়তানরে এমনেই ধরে।এই তাকা আমার দিকে,বল কেন গেছিলি ওখানে,বল,না বললে তোর খবর আছে আজকে ”
বিষন্ন মাথা চুলকে বললো ” বিশ্বাস করো,আমি ইচ্ছে করে যাইনি।আনমনে ঘরে ঢুকে দেখি মেয়েরা শাড়ি পরতেছে ”
” আর সেটা দেখে তোর ইচ্ছে হলো ওদের শাড়ি পড়িয়ে দেওয়ার,,তাই তো? ”
” এই না না,আমি কেনো ওদের শাড়ি পড়াতে যাবো ”
” একদম মিথ্যা বলবি না বিষন্ন,এইবার কিন্তু চ’ড় খাবি আমার হাতে ”
” সত্যিই বলছি আমি,আমি ওদের দিকে তো ঠিক মতো তাকাইও নি ”
” আহারে, সত্যিই তো,আমার পিচ্চি বাবুটা কিচ্ছু দেখেনি।তখন দেখোনি তো কি হইছে,চলো এখন দেখিয়ে নিয়ে আসি,চলো ”
বিষন্ন দুই হাত গালে রাখলো।বেশ বুঝতে পারলো মিষ্টি যখন তখন তার ওপর ঝাপিয়ে পড়তে পারে।ওই বজ্জাত মেয়েটা নিশ্চিত উল্টাপাল্টা কিছু বলছে।এইসব ভাবতেই বিষন্নর চোখ পড়লো মিষ্টির মসৃণ পে’টের ওপর।লেহেঙ্গা পড়ায় পে’টের অনেকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে আছে।বিষন্নর খুব ইচ্ছে করতে লাগলো পে’টে একটু হাত বুলাতে।কিন্তু মিষ্টির এখন যা অবস্থা, তাতে রোমান্স দূরে থাক,মে’রে নাক,মুখ না ফাটিয়ে ফেলে।তবুও একটা রিক্স নেওয়া যেতেই পারে।বিষন্ন পা থেকে স্যান্ডেল খুললো,এতে দৌড়াতে সুবিধা হবে।বসা থেকে উঠে বুলেটের গতিতে মিষ্টির নরম ধবধবে পে’টে একটা গাঢ় চু’মু দিয়ে মার দৌড়।তাকে আর পায় কে! এক দৌড়ে চলে গেলো নিচে।মিষ্টি একদম হকচকিয়ে দাড়িয়ে রইলো বিষন্নর এরুপ কর্মকান্ডে।
________________
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।নীলুর বান্ধবীরা সবাই মিলে নাচছে। সে নাচের মধ্যেও একটা স্নিগ্ধতা আছে।তাদের দেখে মনে হচ্ছে খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে বাকি সময়টা তারা নীলুর বিয়েতে কিভাবে নাচবে সেটা প্রাকটিস করেছে।একদম নিখুঁত কম্বিনেশন।বিষন্ন চোখ বড়বড় করে তাঁদের নাচ দেখছে।বিষন্নর পাশে দাড়িয়ে আছে ইকবাল।বিষন্ন নাচের দিকে অপলক তাকিয়প ইকবালকে কি যেন বলছে।বলার ভঙ্গিটাও অন্যরকম।ইকবালের দিকে ঝুঁকে যাচ্ছে, তবুও নাচের দিক থেকে এক মুহুর্তের জন্যও চোখ সরাচ্ছে না।
সবাই জোর করার পরেও মিষ্টি নাচের পারফরম্যান্সে নামেনি।মিষ্টি নাচ তেমন পারে না,তাই তাকে তেমন জোড়ও করা হয়নি।বরং যারা মিষ্টিকে নাচার জন্য বলেছিলো তারা নিজেরাও চেয়েছিলো মিষ্টি যেন যোগ না দেয়।নইলে মিষ্টির সামান্য ভুল নাচের জন্য পুরো নাচটার বারোটা বেজে যাবে,এইটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া যায় না।মিষ্টির পাশেই ওর কয়েকজন বান্ধবী দাঁড়িয়ে আছে।তারা শুরু থেকেই যারা নাচছে তাদের নিয়ে ঘষামাজা করছে।একজন আরেকজনকে বলছে
” এই ইরার নাচটা দেখ,মনে হচ্ছে পেটমোটা বেগুন পে’টে বিচি নিয়ে লাফাচ্ছে”।” মিমের মুখের এক্সপ্রেশনটা দেখ একবার,হাহাহা,মুখটা দেখতে পুরাই ইঁদুরের মতো লাগছে “।” এই মোটা শ’রীরে লেহেঙ্গা কে পড়ে ভাই?পে’টের দিকে দেখ একবার,পাহাড়ের সাইজ ও তো ওর পে’টের কাছে হার মানবে “।” সামনের মেয়েটার চুলগুলো দেখ,ঘোড়ার চুলের মতো লাগছে “।” পেছনের মেয়েটা বু’কের ওপর ওড়না ফেলে দিলো কেন? এইসব ছেলেদের আকৃষ্ট করার বুদ্ধি “।
মিষ্টি শুধু কথাগুলো শুনছে,কিছু বললো না।মেয়েদের এই স্বভাবে তার বড়ই কষ্ট হয়,মেয়েরা কেন অন্য মেয়েদের সহ্য করতে পারে না?প্রত্যেকে খুব সুন্দর নাচছে,অথচ তাঁদের দেখে একদল মেয়ে হিংসায় জ্বলে যাচ্ছে।এমনটা কেন?এইদিক থেকে ছেলেরা পুরোপুরি ভিন্ন, তারা একে অপেরের খারাপ দিক কখনো উল্লেখ করেনা,আর কারো ভালো দেখে এতোটা জেলাস হয়না।নাচ শেষ।যারা নাচলো তারা এসে দাঁড়ালো মিষ্টির পাশে।মিষ্টি অবাক হয়ে লক্ষ্য করলো যারা এতোক্ষণ তাঁদের নামে ঢ়া তা বলছিলো তারাই এখন ওদের সিম্প্যাথি পাওয়ার জন্য বলছে
” দোস্ত, কি পারফরম্যান্স করলি তোরা,পুরাই হিট।শেষে যখন তানহা ওড়না ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ফাইনাল টাচটা দিলো তখন তো আরো জমে গেছে “।
মিষ্টি মনে মনে মেয়ে জাতিকে ধিক্কার জানালো।এই কাজ শুধু মেয়েরাই পারে।তাদের সামনাসামনি এক রুপ,পেছনে আরেক রুপ।এইজন্যই হয়তো মেয়েদের বন্ধুত্ব বেশিদিন টিকে না।
কিছুক্ষণ পর তাদের আরেকটা পারফরম্যান্স শুরু হলো।এইবারেরটা একটু ভিন্ন।এই নাচের পুরো সময়টা একে অপরকে স্পর্শ করে থাকবে,কেউ আলাদা হবে না।খুব কঠিন একটা বিষয়।মিষ্টির পাশে দাড়িয়ে নওমি বললো
” দোস্ত, দেখ দুলাভাই তোর দিকে কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে,” (বিষন্নর দিকে ইশারা করে বললো)
মিষ্টি ভাবলেশহীন ভাবে বললো ” ও আমাকে না,নাচ দেখতেছে,”
” কি বলিস,আমি তো ভাবলাম তোকে দেখছে ”
” ওই বজ্জাত ছেলেরে আমার থেকে কেউ বেশি চিনে না,বুঝলি ”
*
বিষন্ন ইকবালের দিকে ঝুঁকে এসে কানে কানে বললো
” দোস্ত আমার এঙ্গেল ঠিকঠাক আছে তো? ”
ইকবাল এক চোখ বন্ধ করে নিজস্ব কিছু মাফজোক দিয়ে বললো ” হ্যা দোস্ত,একদম পারফেক্ট।তোকে দেখলে ভাবী বুঝবে তুই ভাবীর দিকে তাকায় আছিস ”
” গুড,ভেরি গুড।তবে মাঝে মাঝে ওর দিকেও দু একবার তাকাতে হবে।এতে করে কনফিডেন্স লেভেল আরো বড় হবে।কি বলিস? ”
” হ্যা,তা করা যায় ”
বিষন্নর হাতে কি যেন একটার প্যাকেট।সেখান থেকে একটা একটা করে মুখে দিচ্ছে আর ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে নাচ দেখছে।হঠাৎ হাতে কারো স্পর্শ পেলো। পেছন ফিরে দেখলো মিষ্টি।মিষ্টি শীতল চোখে তাকিয়ে বললো
” ওপরে চল একটু ”
বিষন্ন ইতস্তত করে বললো ” ওপরে কেন? ”
” নাচ দেখা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না বুঝি? ”
বিষন্ন হম্বিতম্বি করে বললো ” কি যে বলো তুমি,নাচ কে দেখে,আমি তো তোমায় দেখছিলাম,এতো সুন্দর লাগছে তোমায়।তোমায় ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে আমি কখনো তাকাই নাকি? ”
” হু,সে তো জানি বাবু, তুমি তো অন্য মেয়ের দিকে একদম তাকাও না।উপরে চলো একটু,তোমায় একটা গিফট দিবো ”
বিষন্ন শয়তানি হেসে বললো ” ওইসব দিবা তাই না?আমি ঠিকি ধরছি ”
মিষ্টি রাগ চেপে রেখে হাসি মুখে বললো ” হু বাবু,ওইসবই দিবো,যা আগে কখনো দেইনি ”
চলবে…?