#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৮
আনায়শার মন তবুও সায় দিচ্ছে না মাইশাদের বাসায় যাওয়ার জন্য। কি রকম ভয়ানক একটা পরিবেশ। এতে আনায়শার ভয়ও হচ্ছে কিছুটা।সেই সাথে নিশিতার এমন আচরণে আনায়শার সন্দেহ টা যেন আরও প্রখর হচ্ছে। খানিকটা বিরক্তি নিয়ে অন্য দিকে আনায়শা ঘুরতেই দেখতে পেল বেশ খানিকটা দূরে মেহরাব দাঁড়িয়ে আছে। মেহরাব আনায়শাকে ইশারায় বোঝাতে চাইছে মাইশাদের বাসায় যেন কোনোভাবেই আনায়শা না যায়।এদিকে আনায়শা কি করবে ভেবে পায় না। নিশিতা এখনও আনায়শার হাত ধরে আছে, কাদো কাদো চেহারায় তাকিয়ে আছে। আনায়শা দো টানায় পড়ে যায়।
এদিকে মাইশা অনেকটা পথ গিয়ে ওদেরকে আসতে না দেখে আবার চলো এলো ওদের কাছে।
– কি হলো, তোরা এখনো এখানে কেন দাঁড়িয়ে? ভিতরে চল। একবার যখন চলেই এসেছিস, তখন আমার বাসায় না নিয়ে ছাড়ছি না তোদের। এনিওয়েস, ভয় পাচ্ছিস নাকি তোরা?
বলেই বাঁকা হাসল মাইশা।
– আমি তো যেতে চাচ্ছি, এই আনু ই তো যেতে চাচ্ছে না।
আনায়শা কোনো কথা বললো না, চুপ করে রইল। আনায়শা বুঝতে পারছে যাওয়া ঠিক হবেনা, কিন্তু না যেয়েও তো কোনো উপায় নেই। মাইশা আনায়শাকে সন্দেহ করছে, এখন যদি আনায়শা এখান থেকে কোনোভাবে পালিয়ে যায় তাহলে মাইশা ওর আরও বেশি ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। যদিও অনেক বাহানা দিয়েছে কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। কোনো উপায় না পেয়ে মেহরাবের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আনায়শা।
শেষমেষ বাধ্য হয়েই মেহরাবের বারবার বারণ করা সত্ত্বেও যেতে হলো মাইশার বাসায় আনায়শার। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে নিশিতার হাত শক্ত করে চেপে ধরে রইল আনায়শা। পুরো বাড়িটাই কি ঘুটঘুটে অন্ধকার। নেই কোনো আলো। দিনের বেলাতেও অন্ধকার, কোনো লাইটও নেই।
মাইশা ওদের সামনে হাটছে তার আপন খেয়ালে, মুহুর্তেই ওর মুখটা লাল বর্ণ ধারণ করল। মুখে ফুটে উঠল পৈশাচিক হাসি।
বাসার মাঝ পথে প্রবেশ করতেই ভেতরে মৃদু আলোতে কিছুটা দেখা যাচ্ছে। এক পর্যায়ে আনায়শা খেয়াল করল একটা মেয়ের রক্তাক্ত লাশ ঝুলছে। লাশটা ২-৩ দিন আগের হবে হয়তো। অবস্থা খুবই খারাপ। চেনাই যাচ্ছে না এটা কার লাশ।
আনায়শা এসব দেখে আর নিজেকে সামলাতে পারল না, জোরে চিৎকার দিতে নিলেই কেউ তার মুখ শক্ত করে চেপে ধরল যাতে কোনো প্রকার শব্দ তার মুখ দিয়ে বের না হয়। মুহূর্তের মাঝেই জ্ঞান হারালো আনায়শা।
.
.
.
পিটপিট করে চোখ মেলতেই নিজেকে নিজের বেডরুমে আবিষ্কার করল আনায়শা। আস্তে আস্তে সব মনে করার চেষ্টা করতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে বসল। আনায়শা বুঝতে পারছে না, ও ওখান থেকে নিজের বাসায় আসলো কিভাবে। আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখল, এটা তো আনায়শার ই রুম।
আনায়শার চিৎকার শুনে দ্রুত ছুটে এলেন লাবিবা রহমান।
চিন্তিত সুরে লাবিবা রহমান বললেন
– আনায়শা, ঠিক আছো তুমি? চিৎকার কেন করলে তুমি?
– ম মা মাম্মি, আমি এখানে কিভাবে এলাম? আমি তো…
– কি বলছো তুমি এসব? তুমি তো এখানেই ঘুমিয়ে ছিলে।
– না, আমি তো কলেজে গিয়েছিলাম তারপর মাইশার বাসায়, তারপর আমি আমার বাসায় কিভাবে আসলাম।
– তখন থেকে কি আবোল তাবোল বকছো তুমি। অসময়ে ঘুমালে এমনই হয়। আর আজ তো তুমি কলেজেই যাওনি। সারাদিনই তো বাসায় ছিলে, তোমার ভালো লাগছিলো না বলে তুমি বাসায় ছিলে, আজ সারাদিন তুমি ঘুমিয়েই কাটিয়েছো।
– কিহ্, তাহলে আমি যে কলেজে গিয়েছিলাম, সেইটা, এসব কি মিথ্যা তবে?
– ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখেছো তুমি। কথা না বাড়িয়ে, নাও ফ্রেশ হয়ে নিচে এসো। খাবার দিচ্ছি।
বলেই লাবিবা রহমান চলে গেলেন।
আনায়শা লাবিবা রহমানের কথা কিছুতেই বিশ্বাস করল না। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে লাবিবা রহমান যা বলছে সব মিথ্যা বলছে, ওকে ভোলানোর জন্য। আজকে এতোকিছু ঘটে যাওয়ার ঘটনা কিছুতেই স্বপ্ন হতে পারে না। যা হয়েছে সব বাস্তবেই হয়েছে। হঠাৎ গলার কাছে হাত যেতেই মনে পড়ে গেল গলায় দাগের কথা। দ্রুত উঠে আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালো, কিন্তু গলায় কোনো দাগের চিহ্ন টুকুও পেল না। তার মানে সব ই কি আনায়শার স্বপ্ন ছিল? বাস্তবে এমন কিছুই ঘটেনি?
আনায়শা এসব ভাবতে ভাবতেই ফ্রেশ হয়ে একরাশ মন খারাপ নিয়ে নিচে নেমে এলো।
ড্রয়িংরুমে আশরাফ চৌধুরীকে বসে থাকতে দেখে নিমেষে আনায়শার মন খারাপ হাওয়া হয়ে গেল। একপ্রকার নাচতে নাচতেই তার বাবার কাছে এগিয়ে গেল আনায়শা। কিন্তু পাশে যে কেউ বসে আছে এটা খেয়ালই করল না আনায়শা। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে আনায়শা বলে উঠল
– পাপা, তুমি এসেছো? জানো তোমাকে এই কয় দিন আমি কত্তো মিস করেছি।
( বাচ্চাদের মতো করে ঠোট উল্টিয়ে আনায়শা কথাটা বলল তার বাবার উদ্দেশ্যে)
গায়ে পায়ে বড় হলেও আনায়শার আর বাচ্চামো স্বভাবটা গেল না। আনায়নার এমন আচরণ দেখে আশরাফ চৌধুরী হেসে দিলেন।
– সরি, মামনি, তোমাকে বলে যেতে একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। একট কাজের জন্য আমাকে বেশ কয়দিন বাইরে থাকতে হয়েছিল।
আনায়শা তার বাবার সাথে কথা বলছিলো, তাই খেয়ালই করেনি, কেউ তার দিকে একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে৷
আনায়শার সাথে কথা বলা শেষ করে আশরাফ চৌধুরী সামনে থাকা ব্যক্তিটির উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন
– মেহরাব, এ হচ্ছে আমার মেয়ে আনায়শা।
মেহরাবের নামটা কানে প্রবেশ করতেই আনায়শা চমকে পেছন ফিরে তাকায়। আরে এটা তো মেহরাব। আনায়শা মেহরাবের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। মেহরাবকে আশরাফ চৌধুরী কিভাবে চিনল? আনায়শাকে এভাবে হা করে মেহরাবের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আশরাফ চৌধুরী বললেন
– আনায়শা, তুমি কি মেহরাবকে চিনো?
আশরাফ চৌধুরীর কথায় ধ্যান ভাঙে আনায়শার। আমতা আমতা করে বলে
– হ হ্য হ্যাঁ, পাপা।
– আর মেহরাব তুমি তো চেনোই আনায়শাকে তাই না?
– জ্বি আঙ্কেল।
– তাহলে তো ভালোই হলো। আচ্ছা আমি যাই, দেখি লাবিবা কি করছে। তোমরা কথা বলো তাহলে।
আশরাফ চৌধুরী চলে যেতেই আনায়শা মেহরাবের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়
– মেহরাব, আপনি এখানে? পাপা আপনাকে কিভাবে চেনে?
-তোমার বাবা আমাকে অনেক আগে থেকেই চেনে। তুমি যখন অনেক ছোট ছিলে তখন আমি এখানেই থাকতাম। তারপর পড়াশোনা করার জন্য এই শহরের বাইরে চলে যাই। তাই তুমি আমাকে চিনতে পারোনি। কিন্তু আমি তোমাকে আগেই চিনতে পেরেছিলাম।
– চিনতেন বলেই কি এই জন্য আমাকে ঐ বৃষ্টির রাতে বাসায় আসতে সাহায্য করেছিলেন?
– কিছুটা ওরকম, আবার না ও হয়তো। প্রথমে তোমাকে চিনতে পারিনি কিন্তু চেনা চেনাই লাগছিল, তারপর যখন তোমার বাসার সামনে আসলাম তখন আন্দাজ করতে পেরেছিলাম। তারপর তোমার বাসায় এসে পুরোপুরি শিওর হলাম।
– আপনি আমার বাসায় এসেছিলেন, কিন্তু কখন? আমি তো জানি না।
– যখন আসছিলাম তখন তুমি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলে। আমি আন্টির সাথে কথা বলেই চলে গিয়েছিলাম।
– ওহ আচ্ছা।
– আনায়শা, যাও তো রেডি হয়ে এসো।
– কিন্তু কেন, এই অসময়ে কেন রেডি হবো আমি?
– ও মা, তুমি কি কিচ্ছু জানো না, আনায়শা?
কথাটা বলার সাথে সাথে মেহরাবের মুখে ফুটে উঠে দুষ্টু হাসি। কিন্তু আনায়শা মেহরাবের কথা আর ওর এমন হাসির অর্থ বুঝতে পারল না।
পেছন থেকে আশরাফ চৌধুরী এবং লাবিবা রহমান ওদের সব কথাই শুনে মিটিমিটি হাসছেন দুজনে। এমন সময় আশরাফ চৌধুরী এমন একটা কথা বলে উঠল যা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল আনায়শার। ও নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। আনায়শার এমন হতভম্বের মতো চেহারা দেখে সবাই জোরে হেসে ওঠে। আর এদিকে আনায়শার যায় যায় অবস্থা। বারবার ওর কানে বাজতে থাকে আশরাফ চৌধুরীর বলা কথাটা……
#চলবে#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৯
নিজের রুমের বিছানার ওপর চুপচাপ করে শাড়ি পরে হালকা সাজে মুখটা গম্ভীর করে বসে আছে আনায়শা। কিছুক্ষণ আগেই আনায়শা এবং মেহরাবের বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। আনায়শার কাছে সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। এই তো কিছুক্ষণ আগেও সে জানতো না যে একটু পরেই তার বিয়ে হয়ে যাবে, তাও মেহরাবের সাথেই। কাওকে কিছু না জানিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই আনায়শার কোনো মতামত না নিয়ে মেহরাবের সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন লাবিবা রহমান এবং আশরাফ চৌধুরী। আনায়শা এবং মেহরাবের বিয়েটা দিয়েই যেন হাফ ছেড়ে বাচলেন তারা। যেন বড় কোনো বোঝা নামাতে পারলেন তাদের মাথার উপর দিয়ে।
আনায়শা কখনো ভাবতে পারেনি এসব। সবকিছুই যেন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আনায়শার। তার মা বাবাকেও আজ ভীষণ পর মনে হচ্ছে। এসব কিছু ভাবার কারণে আনায়শা বেমালুম ভুলে গেল মাইশাদের বাসায় যাওয়ার পর ওখান দিয়ে সে আসল কিভাবে।
চুপচাপ বসে ভাবছে আনায়শা, এমন সময় দরজায় খট করে শব্দ হতেই ধ্যান ভাঙে আনায়শার। মেহরাব চলে এসেছে তার রুমে। মেহরাব এসে আনায়শার পাশে বসতেই আনায়শা কিছুটা সরে গিয়ে দূরত্ব বজায় রেখে বসল। মেহরাব এটা দেখে মুচকি হেসে বলল
– আমি বুঝতে পেরেছি আনায়শা, হঠাৎ করে এমন হওয়াতে তুমি কিছুই মেনে নিতে পারছ না। এটাই স্বাভাবিক। তোমার মাথায় হয়তো অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, সময় আসলেই সব জানতে পারবে। শুধু একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
– আপনি ছলচাতুরী করে আমার মা বাবার মন গলিয়ে আপনি আমায় বিয়ে করেছেন, তাই না?
– আনায়শা তুমি ভুল বুঝচ্ছ আমাকে। আমি কিছু করিনি, তোমার মা বাবাই আগে থেকে ঠিক করে রেখেছিলেন আমাদের বিয়ে।
– মিথ্যা, সব মিথ্যা। আপনি মিথ্যা বলছেন। আপনার একটা কথাও আমি বিশ্বাস করিনা।আপনি লোভে পড়ে এমন করেছেন, তাই না? এতো লোভ আপনার?
– আনায়শা তুমি আমাকে ভুল বুঝচ্ছ। আমাকে ভুল বুঝো না, আমি যা করছি তা তোমার ভালোর জন্যই করছি, এটা তোমাকে মানতে হবে আর যদি না মানো, আমাকে ভুল বুঝো, আমার কোনো কথা না শোনো তাহলে সেটাই তোমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে।
– আপনার মতো বড় বিপদ আমার সামনে থাকতে, আর কি বিপদ হবে আমার।
( কাদতে কাদতে কথাটা বলল আনায়শা)
মেহরাব ভেবে পায় না হঠাৎ আনায়শা তাকে এমন কথা কেন বলছে। ওর এভাবে রাগ করার কারণ কি। অনেক ভেবেও কোনো কিছু পেল না। একটু থেমে আনায়শা আবার বলতে শুরু করে।
– আপনি কে আগে সেটা বলুন। কি আপনার আসল পরিচয়? আপনি সেই ব্যক্তি যে আমাকে মারতে চেয়েছিলেন, আপনিই আমাকে ভয় দেখিয়েছিলেন। সত্যি করে বলুন তো কে আপনি?
মেহরাব শীতল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কিছুক্ষণ আনায়শার দিকে তাকিয়ে থাকে। মুখে কোনো কথা নেই তার। আর এদিকে আনায়শা কেদেই চলেছে।
মেহরাব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল
– তুমি এতোটা অকৃতজ্ঞ হলে কিভাবে, আমি তোমাকে ভালো ভেবেছিলাম, আনায়শা। আমি তোমার জন্য কি করিনি, আর তুমি আমাকে মিথ্যা ব্লেম দিচ্ছ। ( কথাটা মেহরাব কিছুটা রেগেই বলে আনায়শাকে)
– কি করেছেনটা কি আমার জন্য? বরং আপনি আমায় মেরে ফেলতে চেয়েছিলেন।
– সেদিন বৃষ্টির রাতে কে বাচিয়েছিল তোমায়? আমিই তো নাকি, অন্য কেউ তো আর না নিশ্চয়ই। আমি ঐদিন না থাকলে তোমার বেচে বাসায় ফেরা লাগতো না। ঐদিনই তোমার শেষ দিন হতো। আর একটা কথা না-ই বা বলি আমি। তারপর মাইশাদের বাসায় তোমাকে যেতে বারণ করেছিলাম আমি। তবুও ওদের বাসায় গিয়েছো তুমি। আমি তোমার পিছন পিছন না গেলে হয়তো ওখান থেকে তোমায় বাচিয়ে আনতে পারতাম না। আর না আজকে তুমি বেচে থাকতে পারতে। এখন বলছো আমি তোমার জন্য কিছু করিনি। আমি তোমায় মারতে চেয়েছি। বাহ্ কি সুন্দর কথা। তোমায় যদি আমি মারতেই চাইতাম, তাহলে আরও অনেক আগেই মেরে ফেলতাম, বাচিয়ে রাখতাম না এতোদিন।
মেহরাবের কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আনায়শা। ও বুঝতে পারে না, মেহরাব সত্যি বলছে নাকি মিথ্যা বলছে। স্পষ্ট আনায়শার মনে পড়েছে সেইদিনের সেই অবয়বটা হবুহু মেহরাবের চেহারার মতো। ঐ অবয়বটাই তো ওকে মারতে চেয়েছিল, ওই অবয়বটাই ভয় দেখিয়েছিল।তাহলে সেটা মেহরাব ছাড়া আর কে হবে। আবার মেহরাব যেটা এই কেবল বলল এটাও তো ঠিকই বলেছে। মেহরাব তো ওকে সেদিন বাচিয়েছে। তাহলে ঐ মেহরাবের চেহারার মতো ঐ অবয়বটা কে ছিল? এসব ভাবতে ভাবতে অনেকটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব নিয়ে মেহরাবকে আবার প্রশ্ন করে আনায়শা।
– কি বলছেন আপনি? আপনি আমায় বাচিয়েছেন? কিন্তু মাম্মি যে বললো আমি স্বপ্ন দেখেছি, এসব কোনো কোনোকিছু সত্যি নয়।
– আমি ওটা বলতে বলেছিলাম তোমাকে। আমি সত্যিটা জানাতে চাইনি তোমাকে। তাহলে তুমি আরও বেশি টেনসড হয়ে যেতে। আমি চাইনি অতিরিক্ত টেনশনের কারণে তোমার কোনো ক্ষতি হোক। তাই এমন কথা বলেছে তোমাকে তোমার মা।
– আপনি আমাকে কিভাবে বাচালেন ওখান থেকে?
– আগেই বলেছি, এখনও বলছি। এখন এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় নয়। সঠিক সময়ে সব জানতে পারবে।
আনায়শার এতে মন উঠল না। চুপচাপ গাল ফুলিয়ে বসে আছে সে। মেহরাব পাত্তা দিল না কোনো। বিরক্তি নিয়ে আনায়শাকে বলল
– সরে বসো, আমি ঘুমাব। আর তুমিও ঘুমাও। আমাকে এখন কোনো ডিস্টার্ব করবা না।
আনায়শাকে সরিয়ে দিয়ে মেহরাব তার আপন মনে ঘুমিয়ে গেল। আনায়শা হা করে মেহরাবের কার্যকলাপ দেখে চলেছে। এভাবে ভাবতে ভাবতে আনায়শাও শুয়ে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিল কিন্তু বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পরও এপাশ ওপাশ করেও আনায়শার কিছুতেই ঘুম আসছে না। বিরক্ত হয়ে মেহরাব উঠে আনায়শার মুখের সামনে কিছু একটা স্প্রে করল, কিছুক্ষণের মধ্যেই আনায়শা ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমাল।
.
.
.
নিশিতার নিথর দেহ পড়ে আছে। দেখলে বোঝাই যাচ্ছে কেউ খুব করুণ এবং নৃশংস ভাবে হত্যা করেছে নিশিতাকে। ধারালো নখ দিয়ে খুব জোড়ে জোড়ে আছড়িয়েছে ওর সারা শরীর। ফলে সারা শরীর রক্তাক্ত হয়ে আছে। জায়গায় জায়গায় রক্ত জমাট বেধে কালো হয়ে গিয়েছে। শরীর থেকে সব রক্ত বের হয়ে যাওয়ায় শরীর একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। চোখ দুটো এখনো খোলা। নিশিতা মারা যাওয়ার আগে অনেক আকুতি মিনতি করেছিল কিন্তু শেষ রক্ষাটাও হলো না। মৃত্যুকে তার আলিঙ্গন করতেই হলো।মোহনা এবং মিলির পর নিশিতাকেও এভাবে মরতে হলো।
নিশিতাকে মারতে পেরে যেন অট্ট হাসিতে মেতে উঠল মাইশা। মাইশাদের বাসার ছাদেই পড়ে আছে নিশিতার নিথর দেহ। নিশিতার দিকে একবার তাকাচ্ছে তার প্রতিবারই অট্ট হাসি হাসছে। মাইশার এমন হাসিতে যেন পুরো বাড়ি কেপে উঠল। নিশিতা ছাড়াও মোহনা এবং মিলিকেও ঠিক একই ভাবে মেরেছে মাইশা। কোনো এক বিশেষ কারণে মেরেছে ওদেরকে মাইশা। ওদেরকে মারতে পেরে যে কি আনন্দ হচ্ছে মাইশা। কিন্তু কিছু একটা ভেবে মুখটা গম্ভীর হয়ে গেল মাইশার। নেক্সট টার্গেট এখন আনায়শা। ওকে মারতে পারলেই মাইশার পথের কাটা দূর হবে চিরদিনের জন্য।
কিন্তু মাইশা একজন সাধারণ মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কিভাবে এতোগুলো মানুষকে নৃশংস ভাবে হত্যা করছে। কে আছে মাইশার পিছনে তবে? হয়তো কোনো অদেখা শক্তি, যা কেউ জানেনা। কি তার উদ্দেশ্য? কেন করছে এমন?
ঠিক রাত ৩ টা বেজে ৩৪ মিনিট…
এমন সময় হঠাৎ….
#চলবে ~