এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় পর্ব -০৪+৫

#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব : ৪

সকাল ৮ টা বেজে ৫৬ মিনিট….

পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল আনায়শা। গায়ে হালকা জ্বর, মাথাটা বেশ ঝিমঝিম করছে। গতরাতের কথা মনে করার চেষ্টা করলেই আবছা আবছা মনে পড়ল, তবে সব মনে করার চেষ্টা করলেও মনে পড়ল না। দু হাত দিয়ে মাথা চেপে বসে আছে, মাথাটা ভীষন ব্যথা করছে।

এমন সময় ফোনটা বেজে ওঠায় ধ্যান ভাঙল আনায়শার। মাইশা ফোন দিয়েছে। দ্রুত কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ হতে..

– কি রে আনু, কি খবর তোর? কাল বাসায় গিয়ে ফোন দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলি না।

– কাল বৃষ্টিতে ভেজার কারণে হালকা জ্বর আসছে, সাথে মাথাটাও ব্যাথা করছে। বাসায় এসে এতো ক্লান্ত লাগছিল যে তোকে ফোন দেওয়ার কথা মনে ছিল না, সরি মাইশু।

– বলিস কি? তোর জ্বর আসছে? তোর ফোন কালকে অফ ছিল বলে আন্টিকে ফোন দিয়েছিলাম তোর অবস্থা জানার জন্য, কই আন্টি তো বলেনি কিছু?

– মাম্মি কিভাবে বলবে? মাম্মি কি জানে নাকি।

– তোর জ্বর আসছে আর আন্টি জানে না।

– আমি বলিনি তাই জানে না। থাক তুই আবার বলতে যাস না তো মাম্মি শুধু শুধু টেনশন করবে। তাই কালকে রাগ করেছিল। আর শোন আমার এমন আহামরি কিছুই হয়নি। ঠিক হয়ে যাবে।

– তোকে রাগ করাই উচিত। কাল কি দরকার ছিল হেটে যাওয়ার। গাড়িতে গেলে কি হতো। গাড়িতে গেলে বৃষ্টিতেও ভিজতিস না জ্বর ও আসতো না।

– উফফ এই সেম কথা কাল থেকে শুনতে শুনতে এখন আর ভালো লাগছে না।

– ভালো লাগবে না তো এখন।ভালো কথা বললে কার ভালো লাগে। আচ্ছা শোন কলেজে কি যেতে পারবি?

– এই অবস্থায়, গায়ে জ্বর নিয়ে কলেজে যাবে কে?

– ওহ তার মানে যাবি না?

– না। কেন আজকে কি এমন যে কলেজ যেতে হবে?

– কিছুই না এমনি জিজ্ঞেস করলাম। কলেজ গেলে দেখা হতো। আচ্ছা সমস্যা নেই আমি আসছি তোকে দেখতে তোর বাসায়।

– আচ্ছা আয়।

– ওকে বাই।

ফোনটা বেড সাইড টেবিলের উপর রেখে আনায়শা চলে গেল ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে দ্রুত নাস্তা সেরে আবার নিজের রুমে চলে এলো আনায়শা।

এরই মধ্যে মাইশা চলে এলো আনায়শা দের বাসায়। কলিংবেল বাজতেই দরজা খুললেন লাবিবা রহমান।

– আসসালামু আলাইকুম আন্টি। ভালো আছেন?

– ওয়ালাইকুমাসালাম। এই তো ভালো। তুমি কেমন আছো মা?

– এই তো আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আন্টি, আনায়শা কোথায়?

– ওর রুমে আছে।

আনায়শার রুমের সামনে এসে দরজা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল, দেখতে পেল আনায়শা কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। মাইশা এগিয়ে গেল ওর কাছে। গায়ে এখনো জ্বর আনায়শার।

– আনু।

– আরে তুই এসে গেছিস?

– হুম। এখন কেমন লাগছে?

– আগের চেয়ে একটু ভালো। আচ্ছা শোন তোকে কিছু কথা বলার আছে আমার। মন দিয়ে শুনবি আমার কথা।

– কি কথা?

– আচ্ছা, মিলি কে কি খুঁজে পাওয়া গেছে?

মাইশা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলল

– হুম। তবে ওর বাসার ব্যাক সাইডে যেখানে মানুষ জনের আনাগোনা কম সেখানে ওর রক্তাক্ত লাশ পাওয়া গেছে। মনে হচ্ছে শক্ত কিছু দিয়ে খুব জোড়ে আঘাত করা হয়েছে।

– কিহ্। এসব কি হচ্ছে?

– জানি না রে।

– আর নিশিতা?

– ও ওর বাসায় আছে। কিন্তু কয়েকদিন যাবত বেশ মন মরা হয়ে আছে। প্রথমে মোহনা আপু তারপর মিলি। সব মিলিয়ে নিশিতা অনেক ভেঙে পড়েছে।

– তোর সাথে কি এমন কিছু ঘটেছে? মানে, কোনো অবয়ব বা কারও ছায়া? এসব কিছু কি টের পেয়েছিস?

– কই না তো। আমি এসব কিছুই দেখিনি।

– সত্যি করে বল মাইশা। আমার এসব জানার দরকার। তা না হলে আমি কিছুই করতে পারব না।

– তুই কি করবি? আর আমি সত্যিই বলছি আমার সাথে এসব কোনো ঘটনা ঘটেনি। আর তুই কি উলোট পালোট বকছিস? তুই তো এমন ছিলি না আনু। কি হয়েছে বল তো? কাল একা আসতে যেয়ে কি তুই ভয় টয় পেয়েছিস নাকি?

আনায়শা কিছু বলতে যেয়েও বলল না। ও চাচ্ছিল ওর সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা বলে দিতে কিছু ভেতর থেকে কোনো কিছু যেন বাধা দিচ্ছে তাকে। বলতে যেয়েও বলতে পারছে না। হঠাৎই পেছনে কিছু একটা উপস্থিতি টের পেল। পিছন ঘুরে তাকতে কাওকে দেখতে পেলনা। আনায়শা কে এমন করতে দেখে মাইশা বলল

– কি রে কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?

এবারও কিছু বলতে পারল না আনায়শা। মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানার ব্যর্থ চেষ্টা করল।

– কি হলো কিছু বলছিস না কেন? তুই কিছু একটা বলেও বলতে চাইছিস না কেন?

– কই ক কিছু না তো।

– তোকে এভাবে দেখে আমার ভালো লাগছে না। চল বাইরে থেকে ঘুরে আসি।

– কোথায় যাব?

– চল পার্ক থেকে ঘুরে আসি। তোর মন, শরীর দুইটাই ভালো হয়ে যাবে।

– আচ্ছা তবে যাওয়া যাক।

রেডি হয়ে ওরা বেরিয়ে পড়ল বাইরে। গাড়ি এসে থামল একটা পার্কের সামনে। পার্কের পরিবেশটা ভালো তবে আনায়শার কিছুই ভালো লাগছে না। কেন জানিনা মনে হচ্ছে মাইশা ওর থেকে কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু সেটাই ধরতে পারছে না আনায়শা। আনায়শা কে অন্যমনষ্ক হয়ে থাকতে দেখে মাইশা বলল

– কি রে কি এতো ভাবছিস? সে তখন থেকে ভেবেই চলেছিস। আমার সাথে তেমন কোনো কথাও বলল না। ব্যাপার কি?

– কিছু না। এমনিই ভালো লাগছে না।

– বুঝচ্ছি। আচ্ছা তুই এখানে থাক, আমি তোর জন্য আইসক্রিম কিনে আনছি।

– আচ্ছা।

আনায়শা কোনো কথা না বাড়িয়ে ভাবতে থাকে। কিন্তু কিছুই কোনো কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।

এমন সময় পেছন থেকে খানিকাটা পরিচিত কণ্ঠের কেউ একজন ডেকে উঠল আনায়শার নাম ধরে। আনায়শা চমকে পিছনে তাকাল। চিনতে না পেরে আনায়শা বলল

– আপনি আমার নাম জানলেন কি করে? আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না?

– এক দিনের ব্যবধানে ভুলে গেলেন। আমি মেহরাব। ঐ যে সেই দিন বৃষ্টিতে…

– ওহ বুঝতে পেরেছি। আপনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন বাসায় পৌঁছে দিয়েছিলেন।

– হ্যাঁ, না বললে তো চিনতে পারতেন না।

– আসলে ঐ দিন আপনাকে আমি ঠিক মতো দেখি নি। এই জন্য আজকে দেখে চিনতে পারিনি।

– ওহ তো কেমন আছেন?

– এই তো আছি, গায়ে হালকা জ্বর।

– বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর এসেছে। এরকম বৃষ্টিতে বের হবেন না।

– হুম। আপনার কি মন খারাপ নাকি?

– না কই না তো। কিছু হয়নি।

– মিথ্যা বলছেন আপনি।

মাত্র একদিনের পরিচয়ে একজন অপরিচিত ব্যক্তিকে কিভাবে কি বলবে ভেবে পায় না আনায়শা।

– চাইলে বলতে পারেন সমস্যা নেই। তবে সেটা সম্পূর্ণ আপনার ব্যাপার।

– আসলে..

আনায়শা কিছু বলতে যাবে তখনই আনায়শা কে থামিয়ে দিয়ে কোনো একটা কারণে মেহরাব একপ্রকার তাড়াহুড়া করে চলে যায়। আনায়শার কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি লাগল। আনায়শা মেহরাবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তের মধ্যেই যেন হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল মেহরাব….

#চলবে ~#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব ৫

আনায়শা কিছু বলতে যাবে তখনই আনায়শা কে থামিয়ে দিয়ে কোনো একটা কারণে মেহরাব একপ্রকার তাড়াহুড়া করে চলে যায়।আনায়শার কাছে ব্যাপারটা কেমন জানি খটকা লাগল। আনায়শা মেহরাবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। মুহূর্তের মধ্যেই যেন হাওয়ার সাথে মিলিয়ে গেল মেহরাব, আনায়শার কাছে এমনটাই মনে হলো।

– কি রে আনু? ঐ দিকে কি এতো গভীর ভাবে দেখছিস তুই? আর সেই তখন থেকে কি এতো ভাবছিস?

মাইশার কথায় ধ্যান ভাঙল আনায়শার। মাইশাকে কিছু না বুঝতে দিয়ে বলল

– কই কিছুই হয়নি। আইসক্রিম এনেছিস?

– হুম, এই নে।

আনায়শা কিছু বলল না, ও ওর মতো চুপচাপ বসে আইসক্রিম খেতে লাগল। আর কিছু একটা মন দিয়ে ভাবতে লাগল।

মাইশার কাছে আনায়শার এই ব্যবহার টা মোটেও ভালো লাগছে না। সবসময় কথা বলতে থাকা আর এমন চঞ্চল প্রকৃতির এই মেয়েটা হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে গেছে এটাই মানতে পারছে না মাইশা। তবে কি আনায়শা সব কিছু জেনে গেছে, ভাবতেই মাইশা চমকে ওঠে। না না আনু কিভাবে জানবে, মনে মনে নিজেকে নিজে বলে স্বান্তনা দিতে লাগল। আর আনায়শার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করল আনায়শার মনে চলছে টা কি। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না।

আর এই সবই পর্যবেক্ষণ করতে লাগল আনায়শা, কেন জানিনা আনায়শার ভীষণ ভাবে সন্দেহ হচ্ছে মাইশাকে।

– মাইশা, আমার ভালো লাগছে না, আমি বাসায় যাব।

মাইশাকে আর কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়িতে উঠার সাথে সাথেই স্টার্ট দিয়ে চলে গেল নিজ বাসায় আনায়শা। মাইশা হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইল আনায়শার যাওয়ার পানে। ও বুঝতে পারল না, হঠাৎ এভাবে ওকে ফেলে রেখে চলে যাওয়ার কারণ। তবে কি আনায়শা সব জেনে গেছে। আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে মাইশার চেহারায়। ও আর এক মুহূর্তও দেরি না করে রাগে ফুসতে ফুসতে নিজের বাসায় চলে যায় মাইশা।

.
.
.

একটি রুমের মাঝে একজন মধ্য বয়স্কা মহিলা এবং তার মেয়ে দুজন মিলে কিছু একটা প্লান করছে। দুজনেই বেশ গভীর ভাবে চিন্তা করছে কিছু একটা বেশ মন দিয়েই ভাবছে। রুমের মাঝে মৃদু আলো বিরাজ করছে। দেয়ালে এক এক করে কিছু মানুষের ছবি, এক এক করে ক্রস চিহ্ন দিচ্ছে ছবি গুলোর উপর মেয়েটি। এবারে একটি হাস্যজ্জ্বল চেহারার মেয়েটির ছবির উপর ক্রস দিয়েই অট্ট হাসিতে মেতে উঠল মা মেয়ে।

– মা, ওকে মারতে পারলেই আমাদের পথের কাটা চিরতরে বিলীন হয়ে যাবে। আর কোনো শত্রু থাকবে না আমাদের। আজ রাতেই শেষ করবো ওকে। অনেক হয়েছে। আর এক মুহূর্তও বাঁচতে দিব না ওকে।

– এতো তাড়াহুড়ো করিস না। ধীরে সুস্থে ঠাণ্ডা মাথায় প্লান কর।

– প্লান সব করা হয়ে গেছে। আজ রাতেই ওর জীবনের শেষ রাত হবে।

– ভেবে বলছিস তো?

– হ্যাঁ মা, ওকে আমি কষ্ট দিয়ে ধুকে ধুকে মারব। ও কষ্ট পেয়েই মরবে। বাচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে, অনেক ছটফট করবে কিন্তু পারবে না। ওকে মরতেই হবে।

– কিভাবে মারবে কোনো প্ল্যান করেছিস?

– হ্যাঁ, শোনো তবে…

সব প্ল্যান বলে এবং শুনে আবারও অট্ট হাসিতে মেতে উঠল মা মেয়ে।

– আজ রাতই হবে তোর জীবনের শেষ রাত।
মেয়েটার মুখে বাঁকা হাসি বিদ্যমান।

.
.
.
বাসায় এসেই কারো সাথে কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে গেল আনায়শা। ওর কিছু ভালো লাগছে না। সব জানি কেমন ধোয়াশা লাগছে আনায়শার কাছে। আজকে আনায়শার আচরণ টা কেমন যেন লাগছে লাবিবা রহমানের কাছে। তিনি মেয়েকে একটু নজরে রাখছেন, তবে তেমন কিছু ধরতে পারলেন না। সব শেষে কেউ একজনকে ফোন করে সব টা বললেন।

আনায়শা আজকে কোনো কিছু না খেয়ে নিজের রুমের দরজা আটকিয়ে শুয়ে পড়ল। লাবিবা রহমান বারবার ডাকা সত্ত্বেও সে খেতে যায়নি, সাড়াও দেয়নি ডাকে। ফোন হাতে নিয়েই মাইশা কে ফোন দিল। বেশ কয়েক বার ফোন দেওয়ার পরও রিসিভ করল না ফোন। আনায়শা বুঝতে পারল মাইশা রাগ করেছে তার উপর। বেশ কিছুটা সময় কেটে যাওয়ার পর কল ব্যক করল মাইশা।

– ফোন দিয়েছিস কেন আমায়? কে হই আমি তোর?

– মাইশু রাগ করিস না, আমি বেশ চিন্তায় আছি। ভালোও লাগছে না কিছু, এই জন্য তোকে রেখে চলে এসেছি। আমার তোর কথা মনে ছিল না।

– মনে থাকবে না তো আমার কথা। আদৌও আমি কি তোর বেস্টফ্রেণ্ড ছিলাম কখনো।

– এভাবে বলিস না রে, আমার খুব খারাপ লাগছে।

– সিম্প্যাথি গ্রাস করার চেষ্টা করিস না তো।

মাইশার এ কথা শুনে এবার আনায়শা কান্নাই করে দিল। কাদতে কাদতে বলল

– সরি মাইশু, আমার উচিত হয় নি তোর সাথে এমন করা।

আনায়শার কান্না শুনে মাইশার রাগ গলে জল হয়ে গেল। শান্তু গলায় বলল

-তোর ভালো লাগছে না বলেই তো তোকে বাইরে নিয়ে গিয়েছিলাম যাতে ভালো লাগে। উল্টে তোর মন তো ভালো হলোই না আমার সাথেও কথাও বললি না।

– সরি।

– আরেহ্ আমি কি রাগ করেছি না কি? কান্না করিস না তো। তোর কান্না দেখলে আমারও কান্না আসে।

– লাভ ইউ বান্ধুপীইইই।

– লাব ইউ টু।

এভাবেই দুই বান্ধবী বেশ কিছু ক্ষণ কথা বলে হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিল। মাইশা যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আনায়শাকে নিয়ে টেনশনে ছিল মাইশা, বড্ড টেনশন হয় মেয়েটাকে নিয়ে। আনায়শার মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটে উঠেছে। কেউ যেন খুব গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আনায়শার সম্পূর্ণ গতিবিধি। কিন্তু আনায়শা বুঝতেও পারল না সেটা। আনায়শার অজান্তেই তার উপরে নজর রাখছে কেউ একজন। ব্যক্তিটির মুখে রহস্যময় হাসি পরিলক্ষিত।

এভাবে শুয়ে শুয়ে ফোন চালাতে চালাতেই এক সময় ঘুমিয়ে গেল আনায়শা।

ঘড়িতে রাত ৩ টা বেজে ০৭ মিনিট…..

ঘুমের মাঝেই আনায়শা অনুভব করতে পারল কেউ যেন তার গলা জোরে চেপে ধরছে। আনায়শা ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা করল কিন্তু কোনো ভাবেই সেই শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। চোখ মেলে তাকানোর চেষ্টা করলেও সে চোখ মেলে তাকাতে পারল না। মনে হচ্ছে কেউ যেন খুব শক্ত করে তার চোখ বেধে দিয়েছে, তাই হাজার চেষ্টা করেও সে চোখ খুলতে পারল না। বাচার জন্য চিৎকার করতে গেলে মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হলো না আনায়শার। বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু কিছু পারছে না। এভাবে অনেকটা সময় পার হয়ে গেছে। এতোক্ষণ যাবৎ ঐ শক্তিটির সাথে ধস্তাধস্তি করে আর পারছে না, ক্লান্ত এবং দূর্বল হয়ে পড়েছে আনায়শা।

চোখ দিয়ে কয়েক ফোটা অশ্রু কণা তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল। আশা ছেড়েই দিল আনায়শা। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার সময় ঘনিয়ে আসছে তার। মৃত্যুর প্রহর গুনছে সে। একটু পরেই তার প্রাণ পাখিটা উড়ে যাবে ঐ দূর অন্তরীক্ষে। সে সবাই কে ছেড়ে, তার মা বাবা, ফ্রেণ্ডস্, এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে। এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে ঐ দূর আকাশে। আর হয়তো কয়েক মুহূর্তই আছে এই পৃথিবীতে, তারপর তার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। এসব ভেবেই আনায়শার চোখ দিয়ে অঝোরে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে। অথচ আনায়শাকে এমন অঝোরে কাদতে দেখেও মন গলল না, মায়াও হলো না ওর গলা চেপে ধরা ব্যক্তিটির। বরং সে আগের চেয়েও জোরে চেপে ধরল আনায়শার গলা। আনায়শা এবার ছটফট করতে লাগল। হায় আজকে আনায়শাকে বাচানোর মতো কেউ কি নেই। কে বাচাবে আজকে আনায়শাকে? এভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে নিষ্পাপ মেয়েটির জীবন? তবে হঠাৎই…..

#চলবে ~

আনায়শা কি তবে সত্যি সত্যিই মারা যাবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here