এক বর্ষণমুখর সন্ধ্যায় পর্ব -০২+৩

#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব : ২

মাঝরাতে কানের কাছে হঠাৎ কোনো পুরুষালি কণ্ঠে ফিসফিসালো আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙে গেল আনায়শার।

আড়মোড়া ভেঙে চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে পুরো রুমে একবার চোখ বুলিয়ে নিল, কই না তো রুমে কেউ নেই। এটা ভেবে যখনই স্বস্তি নিয়ে আবার ঘুমাতে যাবে তখন মনে হলো রুমের মাঝে কোনো কিছু একটা দৌড়ে চলে গেল। ডিম লাইটের আলোতে অতোটাও স্পষ্ট বোঝা গেল না। এতে কিছুটা ভড়কে গেল আনায়শা। তাই ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করল হচ্ছে টা কি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারল না। সাত পাচ না ভেবে আবার ঘুমানোর জন্য চোখ বুজতে নিলেই হঠাৎ জোরে আওয়াজ হলো। ধরফরিয়ে উঠে শব্দের উৎস খুজতেই দেখতে পেল বাতাসের কারণে জানালায় জোড়ে জোড়ে বারি খাচ্ছে।

ইতোমধ্যেই প্রচণ্ড ঝোড়ো হওয়া বইতে লাগল। দূর থেকে ক্ষীণ গুড়গুড় মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। রুমের মাঝে ঠাণ্ডা হওয়া বইতে শুরু করল। সেইসাথে ফ্লোরে বালুকণারা এসেও জায়গা দখল করে নিয়েছে। বিছানা ছেড়ে জানালা বন্ধের জন্য উদ্যত হলো আনায়শা। হাত বাড়িয়ে জানালা বন্ধ করতে নিলেই বিদ্যুৎ চমকানো আলোতে দেখতে পেল কাচের জানালায় একটি অবয়বের প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট। তবে তার মুখ বোঝা গেল না। কিছুটা ভয় পেয়ে গেল আনায়শা। এতোরাতে এখানে কারও আসা সম্ভব নয়, তাও এই দুতলায়, ওখানে তো কোনো মই বা সানসেটও নেই, তবে এলো কিভাবে? বেশি কিছু ভাবতে পারল না ও, চোখ বন্ধ করে দোয়া দুরুদ পড়তে পড়তে হাত বাড়িয়ে দ্রুত জানালা বন্ধ করে দেয়।

বুকে হাত দিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আনায়শা। এখনো বুক কাপছে ওর। তেষ্টায় ওর গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গেছে।কি হচ্ছে এসব, কই এর আগে তো এসবের সম্মুখীন হতে হয়নি তাকে।

বেড সাইট টেবিল থেকে পানির গ্লাসে পানি ঢেলে নিয়ে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে পানি খেয়ে নিল সে। পরপর দু গ্লাস পানি খাওয়ার পর ওর তেষ্টা খানিকটা কমলো। সবকিছুকে মনের ভুল ভেবে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিতে গেল। কিন্তু এপাশ ওপাশ করেও আর সারারাত দুচোখের পাতা এক করতে পারল না আনায়শা।
.
.
.
পুরো শহর জুড়ে এখন আতঙ্কের ছায়া নেমে এসেছে। সেদিনের পর থেকে আরও অনেক মানুষ নিখোঁজ হয়েছে ঐ জঙ্গলটাতে। সেদিন তো মেয়েটার বিভৎস লাশটা পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু এ কদিনে যারা নিখোঁজ হয়েছে তাদেরকে আর পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের কোনো চিহ্ন টুকুও পাওয়া যায়নি। লোকমুখে অনেক কথা শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলছে এগুলো ভুতের কাজ। তবে পুলিশ তা ভিত্তিহীন মনে করছেন। তারা অনেক চেষ্টা করছেন রহস্য উদঘাটন করতে কিন্তু কোনোভাবেই সফল হচ্ছেননা। এমনকি মেয়েটার রহস্যজনক মৃত্যুর কারণটাও বের করতে পারল না। সব কেমন জেনো ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে তাদের কাছে।
.
.
.

সকাল সকাল উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল আনায়শা। আজকে তার কলেজ যেতেই হবে ইম্পোর্ট্যান্ট ক্লাস আছে। সব উদ্ভট চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নিচে ডাইনিং রুমে চলে এলো নাস্তা করতে।

লাবিবা রহমান খাবারগুলো প্লেটে বাড়ছিলেন এমন সময় আনায়শাকে দেখে বললেন

-‘ এসেছো, এখন কেমন লাগছে?

-‘ এখন ভালো লাগছে। তাড়াতাড়ি খেতে দাও তো মাম্মি, আজ কলেজ যাব। দেরি হয়ে যাচ্ছে। ( চেয়ার টেনে বসে ঘড়ি দেখতে দেখতে বলল আনায়শা)

মেয়েকে সুস্থ ও শান্ত দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন তিনি। তার যে বড্ড চিন্তা হয় তার মেয়েকে নিয়ে। একমাত্র আদরের মেয়েকে তিনি হারাতে চাননা কোনোভাবেই।

ইতোমধ্যে চলে এলেন আশরাফ চৌধুরী। আশরাফ চৌধুরীকে দেখে আনায়শা বলল

-‘ গুড মর্নিং পাপা। কেমন আছো?

-‘ ওহ মাই লিটিল প্রিন্সেস। আ’ম ফাইন। তুমি এখন কেমনবোধ করছো?

-‘ ভালো।

দ্রুত খাওয়া শেষ করে বাবা মাকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল আনায়শা।

কলেজে গিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকতেই আনায়শাকে ঘিরে ধরল ওর বান্ধবীরা। আনায়শাকে দেখেই ওর বেষ্টফ্রেণ্ড মাইশা প্রশ্ন ছুড়ে দিল ওকে।

-‘ কি রে কই ছিলি? কালকে না তোর আসার কথা ছিল?

কালকের কথা মনে পড়তেই মুখটা গম্ভীর হয়ে এলো আনায়শার। অজানা ভয়ে গ্রাস করে ফেলেছে ওকে। চোখের সামনে বারবার ঐ মেয়েটার লাশটা ভেসে উঠছে।

আনায়শাকে চুপ থাকতে দেখে মাইশা বলল

-‘ কি রে চুপ করে আছিস যে কোনো কথা বলছিস না কেন?

মাইশার কথা শুনে ঘোর থেকে বেরিয়ে এলো আনায়শা। মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে আমতা আমতা করে বলল

-‘ কই কিছু না তো। এমনিই, মানে আমি একটু অসুস্থ ছিলাম তাই আসতে পারিনি।

-‘ কি হয়েছে বল তো? তোর চোখ মুখ এমন কেন দেখাচ্ছে? ভয় টয় পাসনি তো?

-‘ না আরে কিছু হয়নি।

কথা বলতে বলতে বেঞ্চে বসে পাশে দেখল নিশিতা মন খারাপ করে বসে আছে। সব সময় হাসিখুশি থাকা মেয়েটাকে আজ এমন গোমড়া মুখো করে থাকতে দেখে চিন্তিত সুরে বলল

-‘ তোর আবার কি হলো নিশু?

-‘ তুই কিছু জানিস না?

-‘ কই না তো।

স্পষ্ট নিশিতার চোখে পানি চিকচিক করছে। নিশিতা বলতে পারল না কিছু। কান্নায় ভেঙে পড়ল সে। ওকে এভাবে হাউমাউ করে কাদতে দেখে চিন্তার ভাজ পড়ল আনায়শার কপালে। মাইশার দিকে তাকিয়ে বলল

-‘ কি হয়েছে ওর? ও এভাবে কাদছে কেন?

-‘ আরে ওর চাচাতো বোন সেইদিন ওর বান্ধবীর বাসা থেকে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে ফিরছিল আর তারপরেই…

বাকিটুকু আর বলতে পারল না মাইশা। চোখে মুখে তার ভয় স্পষ্ট। এদিকে আনায়শা আবার উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে মাইশার দিকে।

-‘ কি রে কি হয়েছে তারপর?

-‘ তুই কোনো নিউজ দেখিসনি আনু? কি ভয়ংকরভাবেই না মৃত্যুটা হলো মোহনা আপুর।

নিউজের কথা শুনতেই মুখটা মেঘে ঢেকে গেল আনায়শার। ওর মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরোচ্ছে না। বিভৎস মৃত লাশটার চেহারা ভেসে উঠল। কিছু ভাবতে পারছেনা এখন, তাই চোখ বন্ধ করে দুহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরল আনায়শা। আনায়শাকে এমন করতে দেখে মাইশা বলল

-‘ কি হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন? কোনো সমস্যা হচ্ছে?

-‘ না, আমি ঠিক আছি। আর আমি ঐ নিউজটা দেখেও ছিলাম, কিন্তু ওটা যে মোহনা আপু ছিল তা আমি বুঝতে পারিনি।

-‘ কিভাবে বুঝবি বল যেভাবে মুখটা থেতলানো ছিল। আমিও তো চিনতে পারিনি। নিশু না বললে তো জানতামই না।

-‘ আচ্ছা মিলি কোথায় ওকে দেখছিনা কেন?

-‘ ও তো দু তিনদিন যাবৎ নিখোঁজ।

-‘ মানেহ্?

-‘ যা শুনছিস ঠিকই।

মাথায় হাত দিয়ে চিন্তা করতে লাগল আনায়শা। কি হচ্ছে তাদের সাথে এসব?
#এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়
#Nushaiba_Jannat_Arha
#পর্ব : ৩

পৃথিবীর বুকে নেমে এসেছে আধার। আজ যেন খুব তাড়াতাড়িই আধার ঘনিয়ে এসেছে। আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছে। যেন খানিক বাদেই টুপ করে বৃষ্টি ঝরবে পৃথিবীর বুকেতে। দূর অন্তরীক্ষ হতে মেঘেদের গর্জন শোনা যাচ্ছে।

প্রাইভেট পড়া শেষ করে মাইশার সাথে গল্প করতে করতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছে আনায়শা। আজকের পরিবেশটা বড্ড ভালো লাগছে আনায়শার। হাটতে হাটতেই উপভোগ করা যাবে, গাড়িতে গেলে এতোটা বোঝা যাবে না, তাই আজ আর গাড়িতে করে যাবে না বাসায়, ফোন করে বলে দিয়েছে গাড়ি যেন না আসে। মাইশার সাথে হাটতে হাটতেই বাড়ি ফিরবে সে। যদিও এতে আপত্তি জানান লাবিবা রহমান। তবে বারণ করা সত্ত্বেও তা শোনেনি আনায়শা।

তাদের গল্প করার এক পর্যায়ে মাইশা তার বাসার সামনে চলে এলো, মাইশা বিদায় নিল আনায়শা হতে, যদিও যাওয়ার আগে বলেছিল তার বাসায় থাকতে আজ রাতটা। কিন্তু আনায়শা মাইশার কথায় পাত্তা দিল না। মাইশার বাসা হতে আনায়শার বাসা মাত্র ১০ মিনিটের পথ, এটুকু পথ সে একাই যেতে পারবে।

মাইশা যাওয়ার পর সম্পূর্ণ একা হয়ে গেল আনায়শা। গা ছমছমে একটা পরিবেশ, তবে পাত্তা দিল না সে। একা একাই নিজের খেয়াল মতো হাটতে লাগল সে। হঠাৎ পিছনে কারও উপস্থিতি টের পেয়ে পিছন ঘুরে দেখল, কই আসেপাসে তো কেউ নেই। আনায়শা কিছুটা ভয় পেলও পায়ের গতি বাড়িয়ে দ্রুত হাটতে শুরু করল । এরই ভিতরে জোরে বৃষ্টি শুরু হলো। ছাতাটাও আনা হয়নি, যদিও মাইশা বারবার বলে ছিল ছাতা নিয়ে যেতে, কিন্তু গায়ে মাখায়নি আনায়শা। এখন সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না, কোথায় আশ্রয় নিবে বুঝতেও পারছে না।

এমন সময় পাশ হতে কেউ একজন ছাতা ধরে আনায়শার মাথায়। আনায়শা চমকে পিছনে তাকায়।কালো হুডি পরিহিত একটি ছেলে, অন্ধকারের জন্য তার মুখ স্পষ্ট নয়। আনায়শা কিছু বলার পূর্বেই ছেলেটি প্রশ্ন ছুরে দেয় আনায়শার উদ্দেশ্যে।

– এই যে ম্যাডাম, এই সন্ধ্যাবেলায় বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি? এখনকার দিনকাল তো ভালো নয়, এভাবে কেউ বাইরে বের হয়?

আনায়শা কি উত্তর দিবে ভেবে পাচ্ছে না। তাও নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বলল

– প্রাইভেট পড়ে বাসায় যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে যে এমন বৃষ্টির কবলে পড়বো বুঝতে পারিনি।

– ওহ, তো বাসা কোথায় আপনার?

– এই তো সামনেই। আপনার?

– ঐ কোথাও একটা হবে হয়তো যাক বাদ দিন।

ছেলেটা এই প্রশ্নের জবাবটা খুব সূক্ষ্ম ভাবে এড়িয়ে গেলে, আনায়শা বুঝতেই পারল না ব্যপারটা। আনায়শার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কথা ঘোরানোর জন্য অন্য প্রসঙ্গে নিয়ে গেল ছেলেটা।

– তো এই সন্ধ্যায় আবার কিসের প্রাইভেট?

– ম্যাথ টিচারের কাছে প্রাইভেট পড়তে গিয়েছিলাম।

– ওহ আচ্ছা।

আনায়শা আর কথা বাড়ায় না, ও ওর মতো হাটতে থাকে। কয়েক মুহূর্ত নিরব থাকার পর ছেলেটি নিজেই আবার বলে ওঠে

– আপনি মেইবি কম কথা বলেন। আমি কথা বলে কি আপনাকে বিরক্ত করছি?

– নাহ্ সমস্যা নেই।

– ওহ, যদি কিছু না মনে করেন তাহলে আপনার নাম টা কি জানতে পারি?

আনায়শা কিছুক্ষণ চুপ করে রইল, এভাবে অপরিচিত একটা ব্যক্তির সাথে কথা বলতে আনায়শার বেশ অস্বস্তি লাগছে। তবুও বুঝতে না দিয়ে বলল

– আনায়শা, আমার নাম। আপনার?

– ওহ নাইস নেম। আমার নাম মেহরাব।

আনায়শা মুচকি হাসল। পথিমধ্যে কেউ আর কারও সাথে কথা বলল না। হাটতে হাটতে এভাবে অনেকটা সময় যাওয়ার পর চলে এলো আনায়শার বাসার সামনে।

– আমি আমার বাসার সামনে চলে এসেছি। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার সাথে এভাবে এতোটা পথ আসার জন্য, আমায় হেল্প করার জন্য। অসংখ্য ধন্যবাদ।

– নাহ্ সমস্যা নেই, একজন বিপদে পড়লে তো তাকে সাহায্য করা উচিত,বলে আমি মনে করি। আমাদের হয়তো আবারও দেখা হবে। তবে এই শ্রাবণ সন্ধ্যার বৃষ্টিতে আর বের হবেন না। এ বৃষ্টিতে ভিজলে নির্ঘাত জ্বর আসবে।

বিনিময়ে আনায়শা মুচকি হাসে তবে প্রতিত্তর দেয়না। মেহরাব হতে বিদায় জানিয়ে আনায়শা তার বাড়িতে চলে আসে।

মেহরাব এক দৃষ্টিতে চেয়ে রয় আনায়শার যাওয়ার পানে। মুখে তার মুচকি হাসি। তবে কিছু একটা ভেবে সে আর এক মুহূর্তও অতিবাহিত না করে তাৎক্ষণাত সে স্থান ত্যাগ করে। যেন অন্ধকারে মিলিয়ে গেল মেহরাব।

বাসায় ফিরতেই আনায়শা কে একগাদা প্রশ্ন ছুড়ে দেয় লাবিবা রহমান। বোঝাই যাচ্ছে বেশ রেগে আছেন তিনি।

– এতোক্ষণ কোথায় ছিলে তুমি? এতো সময় লাগে আসতে? ফোন করে গাড়ি পাঠাতে নিষেধ করলে কেন তুমি? যদি পথে কোনো বিপদ হতো কে দেখতো তোমায়? তাও এই বৃষ্টির মধ্যে।

– মাম্মি এই দেখো আমি একদম সুস্থ আছি। নো টেনশন ডু ফুরতি। তুমি শুধু শুধুই টেনশন করো। এতো টেনশনের কি আছে। এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি।

– যদি কিছু হতো তখন কে দেখতো তোমায়? বড্ড বেশি সাহস হয়ে গেছে না তোমার।

– আহ্ মাম্মি তুমি না সব সময়ই নেগেটিভ কথা বলো। আমার কিচ্ছু হয়নি তো।

মেয়ের কথা শুনে তিনি চোখ রাঙিয়ে চলে গেলেন। আনায়শা হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে আসল। আজ বড্ড বেশি ক্লান্ত লাগছে তার। ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো সে।

– মাম্মি, ক্ষুধা লেগেছে, খেতে দাও।

– এই নাও।

চেয়ার টেনে চুপচাপ খাবার খাওয়ায় মনোনিবেশ করল আনায়শা। দ্রুত খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। আজ বেশ ক্লান্ত লাগায় বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো আনায়শা।

ঘড়িতে রাত ২ টা বেজে ৩৮ মিনিট….

বাহিরে সোঁ সোঁ করে বাতাস বইছে। সাথে টিপটিপ বৃষ্টি ঝড়ছে। আজকেও তাড়াহুড়ো করে জানালাটা বন্ধ করতে ভুলে গেছে আনায়শা। এমন সময় আনায়শার রুমে প্রবেশ করল একটি অবয়ব। ডিম লাইটের আলোতে তার অবয়ব বোঝা গেলেও তার চেহারা সুস্পষ্ট নয়। চেয়ারটা টেনে আনায়শার মুখোমুখি বসল অবয়বটা। আনায়শার দিকে ব্যক্তিটা গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। যেন কিছু একটা পর্যবেক্ষণ করছে সে।

এভাবে বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর গালে কারও স্পর্শ অনুভব করার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙে ধরফরিয়ে উঠে বসে আনায়শা। কিন্তু রুমে কারও উপস্থিতি অনুভব করতে পারলেও আশেপাশে কাউকে দেখতে পায় না সে। গত রাতের মতো এবারও বেশ ঘাবড়ে গিয়েছে আনায়শা।

যখনই আনায়শা কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিতে যাবে তখনই রুমের মাঝে কিছু কথা শুনতে পায়।

– এভাবে চুল ছেড়ে দিয়ে সন্ধার পর আর বাইরে বের হবে না। বিশেষ করে এই শ্রাবণের সন্ধ্যার বৃষ্টিতে। কারণ আমি তোমার প্রেমে পরেছিলাম এই শ্রাবণের #এক_বর্ষণমুখর_সন্ধ্যায়, তোমার লম্বা ভেজা চুলে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে ভিজতে দেখে। আর আজকে আবারও দেখলাম যা আমার স্মৃতিতে গেথে থাকবে আজীবন।

আনায়শা এ কথা শুনে কিছুই বুঝতে পারল না। আশেপাশে খুজে দেখল কিন্তু ফলাফল শূন্য, সে কাউকেই দেখতে পেল না। আনায়শা বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছে। জোড়ে চিৎকার করতে যাবে কিন্তু মুখ দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছে না।
তখনই তার পিছনে কারও উপস্থিতি টের পেল। পিছনে ঘুরলে কাওকেই দেখতে পেল না। তখন আবারও সেই শব্দ গুলো বারবার প্রতিধ্বনি হতে লাগল। এতে অনেক বেশি ঘাবড়ে গেল। এবার আর সে নিজেকে সামলে রাখতে পারল না।

জ্ঞান হারাবার আগে শুধু অবয়বটির বলা শেষ কথা গুলো বারবার কানে বাজতে লাগল
আর সেইসাথে ঝাপসা ঝাপসা চোখে অবয়বটির মুখশ্রী দেখতে পেল আনায়শা। পড়ে যেতে নিলেই দ্রুত এসে ধরে ফেলল অবয়বটি, মুখে তার বিষন্নতার ছাপ। আনায়শা ওভাবেই অবয়বটির বুকে ঢলে পড়ল….

#চলবে ~
#চলবে ~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here