কোনো এক পূর্ণিমায় পর্ব -১০+১১

#কোনো_এক_পূনিমায় (১০ম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~মাথাটা এখনো ধরে আছে, চারপাশ আবছা আবছা লাগছে। পিটপিট করে অক্ষিদ্বয় খুলার চেষ্টা করলাম। চোখ খুলে নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম। আমার সামনে চিন্তিত মুখশ্রী নিয়ে বসে আছেন অনিক ভাইয়ার মা। বিছানার পাশে খালামনি চোখ ঢেকে কপালে হাত ঠেকিয়ে রেখেছে। আমার পাশেই অনিক ভাইয়ার ছোট বোন অর্থিও বসে রয়েছে। কিছুটা দূরে ঋতু আপু কনের সাজে পায়চারি করছে। চোখ মেলে সামনে তাকাতেই আমাকে লক্ষ্য করলেন আন্টি। আমি উঠে বসতে নিলে কিছুটা বিচলিত হয়ে বললেন উনি,

–“একি অনু মা তুমি উঠছো কেন?”

–“আন্টি আমি ঠিক আছি এখন।”

–“সেসব তোমায় বলতে হবে না কেবল জ্ঞান ফিরেছে আর বলছো তুমি ঠিক আছো?”

আমাদের কথপোকথনে সকলে এদিকে দৃষ্টি তাক করলো। ঋতু আপু তাড়াতাড়ি করে বিছানার কাছে এলো, খালামনিও এগিয়ে এলো। আপু আমার পাশে এসে আমার মাথায় হাত রেখে জিজ্ঞেস করলো,

–“তুই ঠিক আছিস রে? কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম বলতো!”

–“আমি তো ঠিক আছি তোমরা সবাই এতো চিন্তা কেন করছো বলো তো।”

–“চিন্তা করবো না কেন সেটার উত্তর দেয় আমাকে? কতক্ষণ পরে তোর হুঁশ ফিরেছে জানিস তুই?”

–“সেসব কথা বাদ দাও। তোমাদের বিয়েটা? হয়ে গেছে না?”

আমার কথায় সবাই চুপ করে রইলো। তার মানে কি বিয়েটা আমার জন্য এখনো হয়নি। এটা কি করলাম আমি! আমার কারণে এতো ঝামেলা হলো। তাড়াতাড়ি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম।

–“অনেক হয়েছে তোমরা বিয়ের আয়োজন শুরু করো। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই যেন বিয়েটা হয় বলে দিলাম।”

–“অনু তুই এখনো অসুস্থ এভাবে হুট হাট বিছানা ছেড়ে উঠিস না।”

–“উফ খালামনি তোমার মেয়ের বিয়েতে দেরি হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পারছো না? আমার জন্য তোমরা বিয়ে সাদি রেখে বসে আছো এইটা ভেবেই তো খারাপ লাগছে। নাহ বলছি তো আমি এখন একদম ঠিক আছি তাই আমাকে নিয়ে টেনশন বাদ দিয়ে তোমরা আয়োজন শুরু করো যাও যাও।”

এক এক করে সবাই ছাদের উদ্দেশ্যে উপরে চলে গেল। তবে আন্টি এখনো এখানেই বসে রইলেন। ওনার দিকে তাকাতেই উনি মৃদু হাসলেন। আমাকে ওনার পাশে বসতে বললেন।

–“এখন আগের থেকে ভালো লাগছে তো?”

–“হ্যা আন্টি।”

–“যাক ভালো। ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, ভাগ্য ভালো অভ্র তোমাকে খুঁজে পেল। মনে আছে মা তোমাকে একবার বলেছিলাম না তোমায় খুব চেনা চেনা লাগে আমার।”

–“হ্যা মনে আছে আমার।”

–“ভুল বলিনি। তুমি আসলেই আমার কাছের এবং চেনা একজন মানুষ।”

–“মানে? ঠিক বুঝলাম না আন্টি। আমি আপনার পরিচিত কি করে?”

–“সবই বলবো আগে বিয়েটা শেষ হোক। চলো উপরে যাই।”

–“আপনি যান আমি একটু পরে আসছি।”

আন্টি আমার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে চলে গেলেন। আমি পড়ে গেলাম আরেক চিন্তায় ওনার কথাগুলো মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো।‌সেসব কথা ঝেড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে পরিপাটি হয়ে নিলাম। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম ছাদের উদ্দেশ্যে।

•••••••••••••••••••

ছাদে গিয়ে দেখলাম সবটা সুন্দর করে সাজানো রয়েছে। এতক্ষণে অনিক ভাইয়া আর ঋতু আপুকে তাদের কাঙ্ক্ষিত আসনে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজনের মুখেই প্রাপ্তির ফুটে রয়েছে তা দেখে আমারও বেশ ভালো লাগছে। একপাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লাম চুপচাপ। এখন অনুষ্ঠান উপভোগ করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।

–“আপনি ঠিক আছেন?”

কারো কন্ঠ পেয়ে পাশে তাকাতেই আবিদকে লক্ষ্য করলাম। কখন যে এসে দাঁড়িয়েছে টের পাইনি। ওর দৃষ্টি সামনের স্টেজে আমিও আবার সেদিকে দৃষ্টি তাক করে উত্তর দিলাম।

–“হ্যা ঠিক আছি।”

–“সবাই অনেক টেনশন করছিল আপনাকে নিয়ে।”

–“জানি। কাউকে টেনশন দেয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু কিভাবে কি হলো নিজেই বুঝে উঠতে পারিনি।”

–“ভাইয়া সময় মতো গিয়ে আপনাকে নিয়ে এলো কি বলেন?”

–“কার কথা বলছেন? অভ্র…..

–“হ্যা অভ্র ভাইয়ার কথাই বলছি। কিন্তু আপনি নিচে কেন গিয়েছিলেন?”

–“এমনি মানে একটু দরকারে গেছিলাম আর কি।”

–“ওহ্ না মানে……

আবিদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কেউ ডাক দেওয়ায় সেদিকে ছুটে গেল। আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম আরো কিছু জিজ্ঞেস করলে কি উত্তর দিতাম সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। এখানে দাঁড়িয়ে কাজ নেই ভেবে কিছুটা এগিয়ে যেতে নিলাম স্টেজের দিকে। যাওয়ার পথে হঠাৎ কেউ এসে যাওয়ায় কিছুটা চমকে উঠলাম। অভ্র সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।

–“দেখে চলতে পারো না? আরেকটু হলেই ধাক্কা লাগতো।”

–“লাগেনি তো? এখন সরে দাঁড়ান।”

–“বাবা রে কথাটা ভালো মতো বলা যেত না?”

–“খারাপ করে বললাম কখন? ভালো মতোই বলেছি।”

–“আসলেই কারো উপকার করতে নেই। উপকার করেই কেমন কড়া কড়া কথা শুনতে হয়।”

–“আপনি কি বলতে চাচ্ছেন হ্যা?”

–“না কিছু না।”

বলেই অভ্র চলে যেতে নিলেন। কিছুটা হেঁটেই আবার দাঁড়িয়ে পড়লেন। ওনার দিকে ঘুরে তাকালাম আমি, উনিও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,

–“খাওয়া দাওয়া কম করো। তুমি কিন্তু একটু বেশিই ভারী।”

কথাটা শেষ করা মাত্রই আর এক মূহুর্ত দেরি না করে স্থান ত্যাগ করলেন অভ্র। আমি এখনো সেদিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। উনি কি বলে গেলেন এগুলো? আমার ওজন বেশি? হলেও উনি কিভাবে জানলেন? আচ্ছা আমার যতদূর মনে আছে আমি লিফটে অজ্ঞান হয়ে গেছিলাম। তারপরে? তারপর আমি বাসায় গেলাম কিভাবে? এতক্ষণ এসব মাথায় না এলেও এখন এগুলো আমাকে ভাবাচ্ছে খুব। আন্টির কথাগুলোর আগা মাথাও কিছু বুঝিনি তখন। কি যে হচ্ছে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে আমার।

এরমধ্যেই সবার হইচই কানে এলো। সামনে তাকিয়ে বুঝলাম বিয়ের কাজ সম্পন্ন। মানে পুরো মূহুর্তটা মিস করলাম এতো ভাবতে গিয়ে? এগুলার কোনো মানে হয়! নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে এখন। আপু আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে স্টেজে আসতে বললো। আমিও উঠে গেলাম তারপর সকলে মিলে ফটোশুট চললো কতক্ষণ ধরে।

••••••••••••••••••••

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে সকলে বসে আছি। ছাদের অনুষ্ঠান শেষে সবাই বাসায় এসে পড়েছে। কিছুক্ষণ বাদে আপু আর ভাইয়ারা চলে যাবে ওই বাড়ির উদ্দেশ্যে। আমি ঘরে এসে চুলগুলো ছাড়াচ্ছিলাম বসে বসে এর মাঝেই আন্টি ঘরে এলেন। ওনাকে দেখে উঠতে যাবো তখনই উনি বলে উঠলেন,

–“আরেহ ব্যস্ত হয়ো না।”

–“আপনি বসুন।”

–“বসবো তো তবে তোমাকে যে আজকে সাথে করে নিয়ে যাবো।”

–“মানে??”

বিস্ময়ের চরম শিখরে পৌঁছে গেলাম। আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে? আর আন্টি কি বলছেন কিছুই তো বুঝতে পারছি না।

–“তোমার মায়ের নাম কি?”

–“অধরা….

–“তুমি জানো তোমার মায়ের সাথে আমার অনেক পুরনো পরিচয়।”

–“কি?”

–“হ্যা তোমার মা আমার ছোটবেলার বান্ধবী। কত পুরনো আমাদের বন্ধুত্ব আর তোমার হয়তো আমার কথা সেইভাবে মনে নেই। তুমি তখন অনেক ছোট।আমার বিয়ের পর থেকে অধরা আর আমার দেখা সাক্ষাৎ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছিল। আমি সংসার নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে গেছিলাম যে অন্যদিকে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। সন্তানদের সামলাতে গিয়েই যোগাযোগ আলগা হয়ে যায়। তবে হঠাৎ একদিন তোমার মায়ের খবর জানতে পারি সেদিনটা আমার জন্য কেমন ছিল তা বলে বুঝাতে পারবো না। আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী ছিল একমাত্র অধরা। এই ঘটনার পর তোমাদের খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু জানতে পারলাম তোমরা সে জায়গা ছেড়ে দিয়েছ। তারপরেও চেষ্টা করেছি তবে লাভ হয়নি।”

–“আসলে সেই ঘটনার পর আব্বু আর ওইখানে থাকতে চায়নি। আমিও অনেক ছোট ছিলাম, আব্বু এতটাই ভেঙ্গে পড়েছিল যে ওইখান থেকে চলে আসাই ঠিক মনে করেছিল।

–“ওইদিন তোমার খালামনির সাথে কথা বলেই সিওর হয়েছি। আজকে তোমার আব্বুর সাথেও কথা হয়েছে। এখন তো তোমাকে আমি নিয়ে যাবো।”

–“হ্যা? কোথায়?

চলবে…………………..^_^#কোনো_এক_পূর্ণিমায় (১১তম পর্ব)

#লেখনীতে_ওয়াসেকা_তাবাসসুম

~আন্টির কথায় থতমত খেয়ে বসে আছি। উনি আমাকে ওনার সাথে বাসায় নিয়ে যেতে চাইছেন। আব্বুর সাথেও না কি কথা বলেছেন আর আব্বু? সে কি সম্মতি দিয়েছে না কি? এত শত ভাবনার মাঝে খালামনি ঘরে প্রবেশ করলো।

–“অনু? তোকে যে তোর আন্টি নিয়ে যেতে চাইছে? যাবি না?”

–“হ্যা? না মানে খালামনি আমি না কিছুই বুঝতে পারছি না।”

–“আমি কিন্তু আপত্তি জানায়নি। তোর ঋতু আপু যাচ্ছে তার সাথে তুইও যা। ঋতুরও সুবিধা হবে আর তোর আন্টি তোকে নিয়েই যাবে।”

খালামনির কথার সাথে তাল মিলিয়ে আন্টি বলতে লাগলেন,

–“নিয়ে তো যাবোই। অধরার মেয়ে মানে আমার মেয়ে। নিজের মেয়েকে নিয়ে যাচ্ছি এতো কথা কিসের? আমি জানি অনামিকার হয় তো একটু অস্বস্তি হচ্ছে তাই না? সেই ছোটবেলায় আমাকে দেখেছে এইজন্য চিনতেও পারেনি। কিন্তু আমি ঠিকই চিনে ফেলেছি আর ঋতু থাকবে তো ওই বাড়িতেই।”

–“চিনতে করবেন না বেয়াইন। অনু অবশ্যই যাবে আর দুলাভাইও তো আপত্তি করেননি।”

–“অনামিকা যাবে তো মা?”

আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে কথাটা বললেন আন্টি। ওনার দৃষ্টি উপেক্ষা করে ‘না’ শব্দটা উচ্চারণ করতে মন চাইছে না। আর ঠিকই তো ওই বাড়িতে ঋতু আপু থাকবে তাহলে সমস্যা হবে না।

–“আচ্ছা আমি যাবো।”

–“এই তো তাহলে তাড়াতাড়ি গোছগাছ করে ফেলো। ওহ্ হ্যা দুই এক দিনের কাপড় নিলে কিন্তু চলবে না বলে দিলাম। একেবারে কয়েকদিনের জামাকাপড় নিবে, নিয়ে যখন যাচ্ছি তাড়াতাড়ি ছাড়বো না।”

খালামনি এবং আন্টি দুজনেই প্রস্থান নিলেন। আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। পুরনো স্মৃতির পাতা খুলতেই মনে পড়লো কিছুটা। হ্যা আন্টির কথা মনে আছে আমার খুব বেশি না হলেও অনেকটা। আম্মু বলতো মাঝে মাঝে তাদের বন্ধুত্বের কথা। ছোট থেকে বড় হওয়ার স্মৃতিগুলো শুনাতো কতো। আম্মুর কথা মনে হতে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি ফুটিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। কষ্ট পেলে চলবে না, আম্মু
বলেছিল কষ্ট,মন খারাপ যতো কাছে আসতে চাইবে তাদের তত দূরে ঠেলে দিতে হবে।

ব্যাগ নিয়ে ড্রয়িং রুমে দাড়িয়ে আছি। ভাইয়া আর আপু সবার কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছে। খালামনি কান্নারত অবস্থায় আপুকে জড়িয়ে ধরে আছে, খালুর চোখের কোণে জল জমেছে বারবার তা মুছে ফেলেছেন। এইদিনটা একজন বাবাকেও কাঁদতে বাধ্য করে। ছোট নানিকে খেয়াল করলাম উনি কখনো কাঁদছেন আবার একটু করে হাসছেন। বাহ্! কি যে করছেন উনি এটাই বুঝলাম না।

সকলে মিলে নিচে গেলাম, মোট তিনটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একটাতে ভাইয়া আর আপু উঠবে জানা কথা। আর দুটো বাকিদের জন্য বরাদ্দ। এতক্ষণ পরে আমার মনে হলো আব্বুকে অনেকক্ষণ হলো দেখিনি। মানুষটা যে কোথায় গেল সেটাই মাথায় আসছে না। ফোন দেওয়ার জন্য মোবাইল খুঁজতে লাগলাম কিন্তু পেলাম না তারমানে নিশ্চয়ই উপরে ফেলে এসেছি। এখন কি করবো! খালামনিকে বলে উপরে গেলাম আবার।

উপরে উঠে রুমে খুঁজতে গিয়ে দেখলাম বিছানায় পড়ে রয়েছে। মোবাইল হাতে নিয়ে আব্বুকে ফোন দিলাম। কিছু সময় অতিক্রম হওয়ার পর অপর পাশে রিসিভ হলো।

–“হ্যালো তুমি কোথায়?”

–” মা রে আমি না চলে এসেছি।”

–“সে কি? চলে গিয়েছো মানে কি? আমাকে বলেও গেলে না?”

–“কি করবো বল? অফিস থেকে হঠাৎ ফোন দিল। জরুরী দরকার শুনেই চলে আসতে হলো। তোর খালামনিকে বলে এসেছি আর অনিকের মায়ের সাথেও কথা হয়েছে আমার। তুই ওই বাড়িতে যাচ্ছিস তো?”

–“হ্যা যাচ্ছি কিন্তু তুমি এভাবে আমাকে না বলে চলে গেলে?”

–“সরি মা। আমি ওই বাড়িতে যাবো খুব তাড়াতাড়ি তখন দেখা হবে।”

–“মনে থাকে যেন? আমি এখন আসছি।”

–“সাবধানে যাবে কিন্তু, রাখি তাহলে।”

ফোন কেটে দিয়ে আবার নিচে যেতে নিলাম। তখন দেখি খালামনিরা উপরে আসছে। দেখেই জিজ্ঞেস করলাম আমি,

–“চলে এলে যে? সবাই কি চলে গেছে না কি?”

–“নাহ সবাই যায়নি। তুই তাড়াতাড়ি নিচে যা আর সাবধানে যাবি। ওই বাড়িতে ভালো মতো থাকবি কিন্তু আর সমস্যা হলে ঋতুকে বলবি। আন্টির কথা শুনবি আর আমরাও যাবো কয়েক দিনের মধ্যে তাই বেশি ভাবিস না। এখন যা তাড়াতাড়ি।”

–“আচ্ছা।”

বলেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে নিচে চলে গেলাম। নিচে এসে অনেকটা অবাক হয়ে গেলাম কারণ মাত্র একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে এখানে। মানে আপুরা চলে গেছে আর আরেকটা গাড়ি? ওইটাও চলে গিয়েছে। তাহলে এই গাড়িতে কে আছে? সব ভাবনার মাঝে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন একজন। ওনাকে চক্ষুদ্বয় বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। অভ্র? উনি একা? না গাড়িতে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না তারমানে আসলেই উনি একাই আছেন?

–“ওভাবে তাকিয়ে কি দেখছো? অভ্র চৌধুরী যে হ্যান্ডসাম সে নিজেও জানে তাই ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকার কিছুই নেই। আম্মু আমাকে বলেছে তোমায় নিয়ে যেতে এজন্যই বসে আছি এখন গাড়ীতে উঠে পড়ো।”

নিজে এসে সামনের সিটের দরজা খুলে দিলেন অভ্র। আমিও চুপচাপ হেটে বসে পড়লাম। উনি দরজা লাগিয়ে ঘুরে এসে নিজের সিটে বসে পড়লেন। নিজে সিটবেল্ট লাগিয়ে আমাকেও বললেন। আমিও কথা মতো কাজ করলাম। তারপর উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন।

গাড়ি আপন গতিতে চলতে লাগল আর আমি বাইরে তাকিয়ে রাতের দৃশ্য দেখতে থাকলাম। চারদিকে নিরবতা বিরাজ করছে, রাস্তায় মানুষ নেই তেমন একটা। নিরবতা ভেঙ্গে আবার সেই কঠিন পুরুষালি কন্ঠ কানে এলো।

–“তো তুমি আম্মুর বেস্টফ্রেন্ডের মেয়ে।”

–“বিষয়টা আমিও আজকেই জানতে পেরেছি।”

–“কিন্তু আমি তো আরো আগে থেকে জানি।”

–“মানে?”

–“মানে আম্মু যেদিন জানতে পেরেছে সেদিনই আমাকেও জানিয়েছিল। তোমাকে না কি তার প্রথম দিন থেকেই ভীষণ পরিচিত, আপন কেউ মনে হচ্ছে। শেষমেষ তার বান্ধবীর মেয়েকে পেয়ে শান্ত হয়েছে। আম্মুর আমাদের উপর অনেক অভিমান, আমাদের কারণে সে তার বান্ধবীর সাথে শেষ দেখা করতে পারেনি আমাদের কারণে তোমাদের সাথে যোগাযোগ নষ্ট হয়েছে আরো কত কি!”

–“আম্মুর চলে যাওয়ার ঘটনার পর থেকে আব্বু ওইখানে থাকতে চায়নি। তার মনে হয়েছিল সেখানে থাকলে পুরনো স্মৃতি কাটিয়ে উঠতে পারবে না। আমার কথা ভেবে জীবনে নতুন কাউকে আনেনি পর্যন্ত।”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম আমি। চোখ দুটো ছলছল করছে। অভ্র হয়তো আমাকে খেয়াল করলেন সাথে সাথে গলা ছেড়ে বললেন,

–“টপিক চেঞ্জ! অন্য কিছু থাকলে বলো।”

–“আমি কি বলবো?”

–“তাহলে চুপ থাকো।”

–“আচ্ছা মানুষ তো আপনি! কথা কি আমি শুরু করেছিলাম?”

–“সে যেই শুরু করুক। একজন কে তো শেষ করতে হবে তাই না?”

–“যাইহোক আচ্ছা তখন যে আপনি বলেছিলেন আমি না কি ভারী? আপনি কিভাবে জানলেন এইটা?”

আমার কথায় ঠোঁট চেপে হাসলেন অভ্র যা আমার চোখের আড়াল হলো না। ওনার কর্মকান্ডে মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে একদম। অদ্ভুত লোক একটা!

–“বলছেন না কেন?”

–“তুমি অজ্ঞান হয়ে গেছিলে তারপর বিছানায় কীভাবে পৌঁছালে? এইটুকু মাথা না খাটালে পরীক্ষায় পাশ করবে কি করে?”

–“আমার পাশ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না আপনাকে। আচ্ছা তাহলে কি আপনি…..

–“টেনশন করার কিছু নেই। তোমাকে সবার সামনে কোলে উঠায় নাই আমি। লিফট খুলার পর বাইরে সবাই ছিল অলরেডি। আমি শুধুমাত্র লিফটের বাইরে এনেছি আর কিছু না।”

–“ওহ্ তাহলে ঠিক আছে।”

–“স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লে মনে হয়?”

–“না তেমন কিছু না।”

–“এখনো অনেকটা পথ বাকি আছে। চাইলে ঘুমিয়ে নিতে পারো।”

–“না সমস্যা নেই।”

–“তোমার কি একটাই প্রেমিক না কি আরো আছে?”

অভ্রর কথায় ওনার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। অভ্রর সম্পূর্ণ মনোযোগ ড্রাইভিং এর দিকে। আমি নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে উত্তর দিলাম।

–“একটাও নেই। রাফি আমার প্রেমিক না আপনিও জানেন আমিও জানি। এক কথা দশবার বলবেন না।”

–“ওই ছেলেই তো বলেছিল তোমরা না কি প্রেমিক প্রেমিকা তাই তো বলছিলাম যে…..

–“এতো বলতে হবে না। চুপচাপ গাড়ি চালান।

–“এসব কথা বাদ দাও। এখনো অনেকটা রাস্তা বাকি আছে তুমি ঘুমিয়ে পারো।”

–“না ঘুম আসলে ঘুমাবো। জানালার কাচ খুলে দিন।”

–“কোন সুখে? ঠান্ডা লাগবে তোমার আর বকা খাবো আমি? না ওইসব হবে না।”

–“ঠান্ডা লাগবে না।”

–“না মানে না।”

–“আরেহ কিন্তু……

–“নাহহহহ।”

আর কিছু বললাম না কারণ বলে লাভ নেই বুঝা হয়ে গেছে আমার। গোমড়া মুখ নিয়ে দৃষ্টি বাইরে স্থির করে রাখলাম শুধু।

••••••••••••••••••••••

হাই তুলতে তুলতে ঘুম থেকে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি একটা বড় বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। পাশে চোখ রাখতেই দেখলাম অভ্র এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন চালাচ্ছেন। মোবাইলের দিকেই দৃষ্টি স্থির রেখে বলতে লাগলেন,

–“তোমার ঘুম হয়ে থাকলে আমাদের যাওয়া উচিত।”

–“আপনি আমাকে ডাকলেন না কেন?”

–“খুব বেশিক্ষণ হয়নি তাই। এখন উঠে চলো নাহলে আম্মু আমাকে ঝাড়বে।”

বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলাম দুজনেই। আমাদের দেখে আন্টি তাড়াতাড়ি করে এলেন।

–“যাক এসেছিস তোরা। সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি আমি। আয় ভিতরে এসে বস। না এক কাজ কর অনামিকা আগে ফ্রেশ হয়ে আয় মা। আজকে রাতে একটাও ঘুমাবে বলে মনে হয় না তুই ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নে কিছু।”

–“উনি এমনিতেও ঘুমাবে না আম্মু।”

অভ্রর কথায় ওনার দিকে আড়চোখে তাকালাম। এই লোকটাকে এতো কেউ বলতে বলেছে? অতিরিক্ত কথা খালি। আন্টি আমাকে একটা রুম দেখিয়ে দিলেন আমিও সেখানে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ওয়াশরুম থেকে বের হতেই ঘরে প্রবেশ করলো অর্থি।

–“হ্যালো হ্যালো।”

–“ওহ্ হাই। কেমন আছো?”

–“আমি দারুণ আছি। তোমার খবর বলো, তোমার সাথে তো এই পর্যন্ত কথাই হলো না একবারো।”

–“হ্যা আসলেই হয়নি।”

–“আম্মু আমাকে বলেছে তুমিই অনু আপু। জানো আম্মু তোমাদের কত কথা বলতো শেষমেষ দেখা তাও হয়ে গেল।”

আমি কিছু বললাম না খালি মৃদু হাসলাম। সবাইকে এখন কেমন পরিচিত লাগছে। অর্থি আমাকে নিচে খাওয়ার জন্য যেতে বললো। আমি ওর কাছ থেকে খানিক সময় নিয়ে আসছি বললাম। অর্থিও চলে গেল নিচে, রুমের দরজা বন্ধ করতে সেদিকে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ কেউ সামনে আসায় লাফিয়ে উঠলাম!

চলবে………………..^_^

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here