প্রতিদিনের মতো আজও রুদ্ধ স্যারের অনুসরণে হাটছি।হাতে একগুচ্ছ কদম সাথে আকাশে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি।
প্রায় ৫ মাস আগে উনার কলেজের শিক্ষিকা হিসেবে নিযুক্ত হয়েছি। আমার বাবার বন্ধু আহসান আংকেল এর ছেলে হওয়ায় উনার আদেশে আমাকে তার কলেজে নিযুক্ত করা হয়েছিলো।তখন থেকেই উনাকে চিনি।এক গভীর অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে নিজের অজান্তেই।
প্রায় অনেকটা ধারণা হয়েছে উনার ব্যাপারে আমার। কিন্তু উনার বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমাকে নিয়ে।
আজ হঠাৎ উনি সামনে হাটতে গিয়ে থেমে পিছে তাকালেন। আমি যে উনার পিছে সেইটা হয়তো আগে থেকেই জানতেন উনি আমার মনে হলো।
আমাকে দেখে উনার তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বললেন।
-“মিস ফিয়ানা,,,”
উনার কথায় অস্বস্তি নিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিচে তাকাতেই উনি শান্ত কন্ঠে বলল
-“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড ইউ কেন জয়েন মি”
উনার কথা শুনে অবাক হলাম।এই প্রথম উনি আমার সাথে কাজের কথা বাদে অন্য কোনো বিষয়ে কথা বলল।
চিন্তাভাবনা বাদ দিয়ে উনার পাশে গিয়ে কিছুটা পথ হাটতেই উনি বিষন্ন কন্ঠে বলে উঠলো
“-কখনো কাউকে একগুচ্ছ অনুভূতি মিশ্রিত কদম দিয়ে ভালোবাসি বলেছেন?”
উনার কথা শুনে আমি ভীষণ অবাক হলাম।এমন কথা আমি একদমই আশা করি নি উনার কাছ থেকে।
রুদ্ধ স্যার আরও কিছুক্ষন নিরবতা পালন করে বললেন।
-“কখনো অনুভব করেছেন সেই ব্যাথা যখন আপনার ভালোবাসার মানুষ আপনার পরিবর্তে অন্য কাউকে ভীষণ বিষন্নতার সাথে মনে করে।খুবই কষ্টের হয়, না অনুভব করাই শ্রেয়। ”
আমি সম্ভবত সহজ মানুষ উনার জটিল কথা গুলো আমার বোধগম্য হবে না এইটাই স্বাভাবিক। ভীষণ মনোযোগ সহকারে উনার কথা শুনার মাঝেই উনি বলে উঠলো
-“নিন আপনার গন্তব্য এসে গেছে।আমাদের গন্তব্য বিপরীত তাই বাকি পথ একসাথে চলা সম্ভব না।”
বলেই উনি হাটা ধরলেন আমার পথের বিপরীতে রাস্তায়।
আজযের দিনটা ভয়ানক ভাবে অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো।কিন্তু উনার কোনো কথাই আমার বোধগম্য হলো না দুঃখজনক ভাবে।
~~(আমি ফিয়ানা ইসলাম।মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে।আমার ছোট একটা ভাই এইবার ক্লাস নাইনের ছাত্র।আর আহসান আংকেল আমার আব্বুর পুরনো বন্ধু।উচ্চবিত্ত পরিবার।খুবই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আব্বুর সাথে উনাদের।এবং উনার ছেলে রুদ্ধ আহমেদ। একটাই ছেলে উনার কিন্তু উনার ব্যবসা সামলাতে অমত করে আহসান আংকেলের প্রতিষ্ঠিত কলেজের প্রফেসর হিসেবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়।)
>>>>>
বাড়িতে ফিরতেই আম্মুর হাসিমাখা মুখ নজরে এলো।আজ উনি ভীষণ রকমখুশি দেখেই বুঝতে পারলাম।আমার হাতে একটা মিস্টি রঙের শাড়ি তুলে দিয়ে পড়নের সেলোয়ার-কামিজ পরিবর্তন করে পড়তে বলে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করলেন।
আমি ধীর পায়ে রুমে গিয়ে গোসল করে সুন্দর ভাবে শাড়িটা পড়ে নিলাম।
আম্মু না বলার সত্ত্বেও আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি আমাকে ছেলে দেখতে আসবে আজ।
প্রায় ১ বছর ধরে আম্মু আমাকে ছেলে দেখাচ্ছে উনার কথা
মেয়েদের বয়স কুড়ি পেরুলেই বুড়ি।
কিন্তু আমার অমতের জন্য ভীষণ রকম বিরক্ত উনি।
শাড়ি পড়ে চুলের তোয়ালে খুলে বারান্দায় ঝুলিয়ে দিয়ে দীর্ঘশ্বাস নিলাম।
প্রিয় বেলিগাছটায় আজ ফুলে ভুরে গেছে দেখেও কোনোরকম আনন্দ অনুভব হলো না।
চুল গুলো শুকাতেই হাত খোপা করে নিলাম।সন্ধ্যা হতেই বাড়িতে মেহোমানদের আগমন ঘটলো।
আম্মুর গলার স্বর মুহূর্তেই উচ্চতর হয়ে পড়লো।কন্ঠে ভীষণ উচ্ছাস পরিলক্ষিত।
কিছুক্ষন যেতেই আম্মু আমার রুমে প্রবেশ করে আমাকে ডাকতেই বারান্দা থেকে বেরিয়ে উনার সামনে দারালাম।
আমাকে দেখে মুচকি হেসে আমার মাথায় আচল টেনে বাহিরে নিয়ে যেতেই সামনে আহসান আংকেল কে চোখে পড়লো।খুশির ঝিলিক তার চোখে।
আমি উনাকে দেখে সালাম দিলাম।আম্মু কিছু না বলে আমাকে আহসান আংকেলের পাশে বসালেন।
আহসান আংকেল আমার মাথায় পরম যত্নে হাত বুলিয়ে দিয়ে আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললেন।
-“তোমার কথায় হচ্ছে না তমা ফিয়ানার মত জেনে তারপর আমাকে বলবে।”.
উনার কথা শুনে মাথা উঠিয়ে সামনে তাকাতেই রুদ্ধ স্যারের মুখ চোখে ভেসে উঠে একরাশ গম্ভীরতা ও ঘন মেঘে ঢাকা বাদামি চোখ দুটো দেখে মুহুর্তেই আমার চোখদুটো চকচক করে উঠে।
উনার প্রতি আমার ভালোবাসা আমার কাছে অজানা নয়।আহসান আংকেল আর আম্মুর কথাবার্তা শুনে বুঝতে কষ্ট হলো না যে রুদ্ধ স্যার আর আমার বিয়ের কথা চলছে।
১৭,১৮ বছরে আবেগের স্রোত অনেক আগেই পাড় করার পড়েও কেমন একটা আবেগি অনুভুতি অনুভব হলো।কারণটা হয়তো উনিই আমার জীবনের প্রথম প্রেমিক পুরুষ।
রুদ্ধ স্যারের মা মারা গেছে উনি ছোট তখন।তাই বিয়ের যাবতীয় কথা আহসান আংকেলই সম্পূর্ণ করলো।রুদ্ধ স্যারের কোনো ভাবগতিক বুঝতে পারলাম না কিন্তু উনার অমতে কিছুই হচ্ছে না এইটা ধারণা করলাম।উনার অমতে জোর করে বিয়ে দেওয়ার মতো সাধ্য নিশ্চই উনার বাবার নেই।
উনাদের কথা শেষ হতেই আম্মু আমাকে ঘরে নিয়ে আসলো।
রুমে প্রবেশ করেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে আরাম করে বিছানায় বসতেই আম্মু আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টি মেলে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বলল
-” দেখো ফিয়ানা।আহসান ভাই এর সাথে আমাদের পুরনো পরিচয়। এইটা আমাদের সৌভাগ্য যে আহসান ভাই রুদ্ধের মতো একটা ছেলের ছেলের জন্য তোমাকে বাছাই করেছে।উনি বলেছে তোমার মতামত ছাড়া কোনো রকম কথা বাড়বে না।কিন্তু আমি এই কথায় একমত না।অনেক হয়েছে তোমার বাড়াবাড়ি আর না।এখন তোমার অমত করার কোনো কারণ নেই।আর আহসান ভাই এও বলেছে যে বিয়ের পর তোমার ব্যাক্তিগত জীবনে কেউ হস্তক্ষেপ করবে না”
আম্মুর কথায় ঠোঁট কামড়ে ধরে উনার দিকে তাকালাম।আম্মু আমার কথা শোনার জন্য কিছুটা হলেও ব্যস্ত।আমি জানি উনি আমার কথা বাইরে জোড় করে কিছু করবে না যতই হোক জোড় করে কোনো সিধান্ত চেপে দেওয়ার মতো মনোভাব উনার না।
-“তোমরা যা বলবে আমার কোনো অমত নেই।”
আমার কথা শুনে আম্মুর মুখের উজ্জ্বলতা দেখা দিলো।চোখ চিকচিক করে উঠলো। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে উনি রুম থেকে চলে যেতেই আমার মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো।যতই হোক আমার ভেতরে কি আছে তা আমি জানি এবং তা উপেক্ষা করে রুদ্ধ স্যারকে নিজের জীবনসঙ্গী হিসেবে দেখার এই সুবর্ন সুযোগ পা দিয়ে ঠেলে দেওয়ার সাধ্যও আমার নেই।
বারান্দায় থাকা উইন্ডচাইম এর মৃদু আওয়াজ ভেসে আসতেই ধীর পায়ে বারান্দায় গিয়ে দারালাম।আজকের দিনটা আমার জন্য খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। জীবনে যা পাওয়ার কথা ভাবি নি তা যে কখনো আমার দরজার কাড়া নাড়বে তা কখনই ভাবি নি।ঘরে কারো পায়ের শব্দ শুনে ফুরফুরে মনে পিছে তাকাতেই রুদ্ধ স্যারকে চোখে পড়লো। খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমার পাশে এসে দাঁড়িয়ে গায়ে দেওয়া ছাই রঙের পাঞ্জাবীর পকেটে হাত গুজে গভীর দৃষ্টিতে সামনে থাকা শিউলি ফুলের গাছে রেখে গম্ভীর্যতায় ঘেরা কন্ঠে বলল
-“আমার যে আরেকটা বিয়ে হয়েছিলো তা জেনে রাখা ভালো, যে কোনো সিধান্ত নেওয়ার আগে।আপনার অধিকার এইটা”
চলবে,,
#অনাকাঙ্ক্ষিত_সেই_বৃষ্টি
#পর্বঃ১
#লেখিকাঃMishmi_muntaha_moon
(অনেক মাস বাদে আবার গল্প লিখলাম।অবশ্য আমাকে হয়তো সবাই ভুলে গেছে প্রায়😅।তা যাই হোক গল্পটা আপনাদের পছন্দ হবে আশা করছি।
ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।🥰🥰)