আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -২১ ও শেষ

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ২১(সমাপ্তি পর্ব)
#writer:Mishmi_muntaha_moon

কাল আমার বিয়ে!কেমন যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না মনে হচ্ছে কারো বিয়ে এট্যান্ড করছি যেখানে খুবই জাকজকম পূর্ন পরিবেশ সকলের হৈ-হুল্লোড় শুনা যাচ্ছে কিন্তু সেই বিয়েটা যে আমার তা অবিশ্বাস্য।
তিশা চুলে প্লাস মুখে প্যাক লাগিয়ে বসে আছে।একটু যত্ন করা তো প্রয়োজন তাই না!আমাকেও বলেছিলো কিন্তু আমি লাগাবো না বলে জানালাম। ছাদে সুন্দর করে স্টেজ সাজানো হয়েছে আর টেবিল ও। আজকেই তো সময়।আর স্টেজের পিছনে খুব সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড তৈরি করা হয়েছে।
একটু আগেই একটা চক্কর লাগিয়ে এলাম।কেমন যেনো লজ্জা লজ্জা লাগলো আমার বিয়ের স্টেজ আমি দেখতে গিয়েছি।

বিকালের দিকে জিয়া এসে হাজির আমিই ওকে আজকে আসতে বলেছিলাম কিন্তু ও যে একবারেই রাজি হয়ে যাবে তা জানা ছিলো না।বাট ভালোই হয়েছে এসেছে।এসেই ওর খুশির কোনো সীমানা নেই।ছাদে স্টেজ দেখছে তো আবার আমার বিয়ের ড্রেস দেখছে ও কি পড়বে তাও দেখালো।রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেক হাসি ঠাট্টা করে আম্মু আর ফুপ্পির বকুনিতে সবাই ঘুমাতে গেলাম নাহলে না আবার ডার্ক সার্কেল পড়ে যায় হাহা।জিয়া,তিশা আর আমি আমার রুমে খাটে ঘুমাবো আর নিচে চাচিরা ঘুমাবে।আর তরু আপুর হাসবেন্ড ও যেহেতু আছে উনাদের একটা আস্ত রুম দিয়ে দেওয়া হয়েছে যার কারনে বাকি আমরা উপর নিচ মিলিয়ে ম্যানেজ করছি।

_
আমি সাধারণত এতো তারাতারি ঘুমাই না তাই আজ ১০ টায় ঘুমানোর কারণে খুব সকালে ঘুম ভেঙে যায়।এখন প্রায় ৬টা বাজে।বড়রা অনেকে ঘুম থেকে উঠে গিয়েছে আজকে বিয়ে বলে কথা কত কাজ আছে টুকটাক।বড় ফুপ্পি আমাকে এতো তারাতারি উঠায় গোসল সেরে নিতে বলল।
উনার কথা অনুযায়ী আমিও গোসল করে বারান্দায় গেলাম চুল গুলো শুকাতে।ভোর বেলার মিষ্টি বাতাস চারো দিকে ছড়িয়ে আছে।
আচমকা নিচে চোখ যেতেই চোখ বার কয়েকবার পলক ফেলে ভালোভাবে তাকালাম। আমি ঠিক দেখছি কিনা।
হ্যা ওইটা তো উনি।আমাকে দেখে হাত নাড়িয়ে নিচে আসতে বলতেই আমি দ্রুত হাত নাড়িয়ে চলে যাওয়ার ইশারা করলাম।আজ বিয়ে আর উনি এইখানে দেখে কিছুটা অবাক হলাম।
সাথে সাথে উনাকে কল লাগালাম। উনি ধরতেই আমি বললাম

” আপনি এইখানে কেনো এই সময়?”

” হুশ!তারাতারি নিচে আসো বেশি কথা না বলে নাহলে আমি এইখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো”

উনার কথা শুনে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললাম

” থাকুন দাঁড়িয়ে বিয়েটা ক্যান্সাল হয়ে যাক। ভালো হবে না?”

আমার কথায় উনি অসহায় ভাবে বলল

” মিস ফিয়ানা আসো প্লিজ। ওয়েট করছি আমি”

বলে কল কেটে দিলে কি করার আর চুপিসারে যেতে হলো নিচে।
আম্মু দেখে ফেললে একদম রেগে যাবে।

নিচে যেতেই উনাকে খয়েরি রঙের শার্ট গায়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ব্যাগ।

” এই ব্যাগে কি নিশ্চয় ফুলের মালা তাই না?”

আমার কথায় উনি অবাক হয়ে বলল

” তুমি কিভাবে জানলে।”

উনার কথায় আমি মৃদু হেসে বললাম

” ওই সব কথা বাদ দিন।আপনি কেনো এসেছেন।আপনার যে আজকে বিয়ে দেখে তো মনেই হচ্ছে না।”

আমার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলল

” তাহলে আমি কি শেরওয়ানি পরে সব জায়গায় হাটাহাটি করবো।”

উনার কথা শুনে হেসে দিলাম।হাসতে হাসতেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম

” হ্যা একদম এইটাই করা উচিত আপনার”

আমার কথা শেষ হতেই উনিও হেসে দিয়ে উনার হাতে পড়া ঘড়ির দিকে তাকিয়ে টাইম দেখে নিয়ে হাতে ব্যাগটা ধরিয়ে বলল

” ৮ টা বেজে গেছে তোমাকে হয়তো খুজছে। যাও তুমি এখন একেবারে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো ”

বলেই বাকা হেসে উনিও রিকশায় উঠে পরলেন।

~~~~~~~~

পার্লার থেকে নিয়ে আসা হয়েছে আমাকে।ভারি একটা লেহেঙ্গা গায়ে তার উপর ভারি ব্রাইডাল মেকাপ আমি তো অস্থির হয়ে বসে আছি।২টা বাজে সকলে বিয়ের খাবার খেয়ে দেয়ে চলে গেছে।পারিকবারিক লোকজন বাদে।তিশা আর জিয়া আমার পাশেই বসে আছে।

৩টা বাজতেই পাত্রপক্ষ হাজির হলো। আসতেই আমি উকিঝুক দিতে লাগলাম দেখার উদ্দেশ্যে কিন্তু মানুষ দিয়ে ভরে গেছে।তিশা আর জিয়া তো গেট ধরে দাড়িয়েছে। টাকা না নিয়ে একদমই রেহাই নেই।
টাকার কার্যকর শেষ করে উনি ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।
আমার লেহেঙ্গা টা ছিলো গাড় লাল রঙের। সাধারণত আমারই ইচ্ছে ছিলো বিয়েতে লাল রঙের লেহেঙ্গা পড়ার।আর উনি পরেছেন সাদা শেরওয়ানি দেখে একদফা ক্রাশ খেয়ে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম।
উনি আমার পাশে বসতেই ক্যামেরাম্যান ছবি তুলতে লাগলো।
তার ফাকেই উনি আমার কানের কাছে মুখ বাড়িয়ে বললেন

” মাশাল্লাহ।আমার বউটার কারো নজর না লেগে যায়”

উনার কথা শুনে লজ্জায় হেসে দিলাম।তারপর আমিও উনার কানের কিছুটা কাছে গিয়ে বললাম

” মাশাল্লাহ। আমার বরটার কারো না নজর লেগে যায়।”

আমার কথা শুনে উনিও হেসে দিলেন।

_
সুন্দর ভাবে বিয়ে সম্পন্ন হলো। বিদায় দিতে দিতে ৬ টা বাজলো।বিদায়ের সময় খুব কানলাম আব্বু আম্মু কে ধরে উনারাও কাদলো।
তারপরে তুলে দেওয়া হলো রুদ্ধ সাহেবের হাতে আমার হাত।আজ থেকে উনার থাকার জায়গাই হবে আমার থাকার জায়গা।সব কিছুতে দুজনের সমান ভাবে ভাগ হলো।তেমনি দুঃখ এবং সুখেও।

উনার আপন কোনো বোন না থাকলেও চাচাতো আর খালাতো বোন ছিলো তারা মিলেই আমাকে উনার রুমে দিয়ে আসলো তখন বাজে ৯ টা।রুমে এসেই আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলা।এই প্রথমই আমি আসলাম উনাদের বাড়িতে তার আগে আসা হয় নি।অবশ্য লিয়াকত আংকেল আমাকে খুবই আদর করেন অনেকবার নিয়ে আসতেও চেয়েছিলেন কিন্তু আমিই নিজ ইচ্ছায় আসি নি।

উনার রুম টা অনেক বড়।বেড, ওয়ারড্রব, ড্রেসিং টেবিল, আর দুইটা ছোট সাইজের সোফা। খুবই সুন্দর ভাবে ডেকোরেট করা আর একটা বড়সড় বারন্দাও আছে।

দেখতে দেখতে বিছানায় গিয়ে বসলাম। দেয়াল ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ১০ টা বাজে।তখনই দরজার খুলে প্রবেশ করলো কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তি।
রুমে এসে আমার সামনে বসে বললেন

” এখনো এই বোঝা পড়ে আছো কেনো। চেঞ্জ করে নাও।”

উনার আদেশ পেতেই আমি বিছানা থেকে উঠে সুটকেস খুলে দেখতে লাওলাম কি পড়া যায়।ততক্ষণে উনি উনার শার্ট প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
তখনি সুটকেসে উনার দেওয়া সাদা শাড়িটা দেখতে পেয়ে ওইটাই হাতে নিয়ে রুমেই পড়তে লাগলাম।
উনি যখন বের হলো তখন মাত্র কুচি সুন্দর করে গুছানো ছিলো হাতে বাথরুমের দরজা খোলার আওয়াজ শুনে উলটা পিঠ হয়ে তারাতারি কুচি গুজে ঝট করে আচল বুকে টেনে নিলাম।

তারপর উনার দিকে তাকিয়ে দেখি উনিও সাদা রঙের শার্ট গায়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।
আমি উনাকে দেখে মৃদু হাসলাম।সাথে সাথেই উনি আমার হাত ধরে বারান্দায় নিয়ে গেলো।বারান্দায় আগে থেকেই পাটি বিছানো ছিলো।আর উনার বারান্দা টাও রুমের মতোই সুন্দর করে ডেকোরেট করা।
গোল চাঁদ টা তার পূর্ন আলো দিয়ে চলেছে রাত তখন সাড়ে ১১ টা।উনি আমাকে এভাবে বারান্দায় নিয়ে আসায় প্রচুর অবাক হই আমি।
উনি নিজে বিছানো পাটিটাতে বসে আমাকেও টেনে বসালেন।
আমি প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি আমার পিঠ ঘেষে বসে কাধে থুতনি রেখে বললেন

” তোমার ডায়েরির উইশ তো শেষ হতেই চায় না।বলোতো কি করা যায়!”

উনার কথায় হাসলাম।আমার ইচ্ছে ছিলো ফার্স্ট নাইট টা কাটবে আমার হাসবেন্ড এর সাথে গল্প করে।সেই গুলি যে পূরন করছে উনি, তা আগেই বুঝতে পেরেছিলাম।

” শাড়িতেই নারীর সৌন্দর্য্য কথাটা তো দেখছি একদমই সত্যি”

উনার কথা মুচকি হাসলাম।উনার এতো কাছে বসাটা কেমন যেনো লাগছে।বুক ধুকধুক করছে প্রবল হাড়ে।উনার নিঃশ্বাসের গতিটাও আজ খুবই ভারী যা আমার কাধে এসে বারি খাচ্ছে।
আমি নড়াচড়া করতে যেনো ভুলে গেলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বললাম

” আজকের দিনটা বড়ই অনাকাঙ্ক্ষিত আমার জীবনে।আমি প্রায়ই ভাবতাম আমার জীবনে যে পুরুষ আসবে সে আদৌ আমার মনের মতো হবে কিনা আমাকে ভালোবাসবে কিনা।কারণ আমিতো ভেবেছিলা আমার এরেঞ্জ ম্যারিজ হবে।কিন্তু আপনি যে সেই পুরুষ হবে তা আমার কল্পনার বাহিরে ছিলো।”

” তো আমিকি তোমার মনের মতো আছি নাকি প্রয়াস চালাতে হবে”

উনার কথা শুনে হেসে ঘার ঘুরিয়ে তাকালাম উনার দিকে তারপর আবার সামনে তাকিয়ে বললাম

” আপনি যেমন আছেন তেমনটা দেখেই ভালোবেসেছি বুঝলেন। কিন্তু একটা জিনিস জানার ইচ্ছে আছে যে আমার জন্য আপনার মনে যেই ফিলিংস টা সৃষ্টি হয়ে তা কখন থেকে”

আমার কথা শুনে উনি আমাকে আরও গভীর ভাবে জরিয়ে ধরলো উনার দু হাতটা দিয়ে আমার পেট জরিয়ে ধরতেই শরীরে পশম দাঁড়িয়ে যায়।
উনি একহাত দিয়ে আমার চুল গুলো ডানপাশে সাইড করে রেখে বললেন

“তোমাকে কেনো বলবো।এইটা সিক্রেট কথা ”

উনার কথা শুনে মুখ ফুলিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি আমার ঠোটে ছোট করে চুমু দিতেই আমি অবাক হয়ে তাকাই।একমুহূর্তে এই কাজ একদমই ভাবনার বাহিরে ছিলো আমার।
আমি অবাকতা নিয়েই বলি

” আপনি কি করলেন এইটা।আমার ইচ্ছে ছিল আমি ফাস্ট কিস করবো আমার হাসবেন্ড কে”

আমার কথা শুনে উনি কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে শব্দ করে হাসতে লাগলো।উনার হাসি দেখে ভ্রু কুচকে তাকাতেই উনি স্বাভাবিক হয়ে বললেন

” আচ্ছা বুঝো আমি কিছুই করি নি।তুমি আবার কিস করে দাও আমার কোনো প্রব্লেম নেই।”

উনার কথা শুনে হেসে দিলাম।বাহিরে প্রবল বাতাস বইছে কাল হয়তো বৃষ্টি হবে। ভাবনার মাঝেই বাহিরে বৃষ্টি নামলো।ফোটা ফোটা বৃষ্টি খুবই তীব্র না।
আজকের রাত,রাতের অন্ধকার এই বৃষ্টি সবই আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী।আমি কিছুক্ষন বৃষ্টির দিকেই তাকিয়ে থেকে বললাম

” আপনি এখনো আমালে অফিসিয়ালি প্রপোজ করলেন না কিন্তু।”

” সব ভালোবাসার সম্পর্কে কি কনফেশন প্রয়োজন হয়?”

উনার কথা অনুযায়ী ভাবলাম। নাহ সব সময় ভালোবাসার কনফেশন প্রয়োজন হয় না মুখে ভালোবাসি ভালোনাসি বলার থেকে কিছু ভালোবাসা অপ্রকাশিত ভাবেই প্রকাশিত হয়।আমি আবারও উনার বুকে নিজের শরীর এলিয়ে দিয়ে বললাম

” আচ্ছা সবসময় চিরকুটে যেভাবে গানের মাধ্যমে অব্যক্ত কথা প্রকাশ করতেন আজ তা নিজে গেয়ে শোনান।”

আমার কথায় উনি হেসে বলল

” আমার কন্ঠ সুন্দর না মিস ফিয়ানা তাই তো গাইতাম না লিখে দিতাম।আমি একদমই আমার মান সম্মানের হানি করতে চাচ্ছি না”

” নাহ প্লিজ আমার জন্য গেয়ে দিন।রিকুয়েষ্ট করছি।”

আমার কথা শুনে উনি আমার ঘাড়ে কিছুক্ষন মুখ ডুবিয়ে রেখে গাড়ো চুমু খেয়ে আমার গালের সাথে উনার গাল ঠেকালেন।তারপর ধীড় কন্ঠে গাইতে লাগলেন।

❝ আমি গোপনে ভালোবেসেছি
বাড়ি ফেরা পিছিয়েছি
তোমায় নিয়ে যাব বলে
একবার এসে দেখ
এসে বুকে মাথা রেখ
বুলে দেব চুলে রেখে হাত

দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরোনো

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
মিস ফিয়ানা❞

বলেই মাথাই ঠোট ছোয়াতেই আমিও আবেশে চোখ দুটো বুজে বললাম
” আপনি ভালোবাসেন আপনার মিস ফিয়ায়ানকে তাই আমিও ভালোবাসি খুব আমার রুদ্ধ সাহেবকে”

সমাপ্ত,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here