আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -১৮+১৯+২০

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৮
#writer:Mishmi_muntaha_moon

লিয়াকত আংকেল অনেক সময় আম্মুর সাথে কথা বলল আম্মু আব্বুকেও কল করে ডেকে নিয়েছিলো তারপর সকলে সমালোচনা করেছে কি করবে না করবে।
উনি যাওয়ার পরে আমিও মন খারাপ নিয়ে বসে থাকতে থাকতে দুর্বল হয়ে ঘুমিয়ে পরি।রাতে আম্মু আমাকে খেতে ডাক দিলো না আর, কিন্তু বাবা এসে রুমে খাবার দিয়ে গেছে।না করেও আব্বু জোর করায় খেয়ে নেই।

উনি যে রেগে আছেন তা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু পাত্তা দেই নি কিন্তু তাই বলে উনি গত একদিন ধরে আমাকে কল করেন নি।যেহেতু আমার নিজের বাড়িতেই সমালোচনা হয়েছে বিভিন্ন কার্যকর রটছে তাই আমার কানে আসবেই কথাবার্তা স্বাভাবিক।
আর এই কথাটা আমাকে খুবই আনন্দ দিয়েছে।আম্মুরা একটু গাম্ভীর্যের সঙ্গেই সকল কাজ করছে কিন্তু ব্যাপার না ঠিক হয়ে যাবে ধীরে ধীরে।তাছাড়া আম্মু রুদ্ধ সাহেবকে সবসময় অনেক পছন্দ করতেন এখন একটু অভিমান করে আছে আই নো।
উনাদের কথা মতে আমার আর রুদ্ধ সাহেবের বিয়ে হতে চলেছে গত সপ্তাহে আর হলুদ, বিয়ে এক কথায় সব অনুষ্ঠান সহই করা হবে।লিয়াকত আংকেল খুবই সুন্দর ভাবে আম্মু আর আব্বুকে হ্যান্ডেল করেছে। অবশ্য একটা মাত্র ছেলে উনার।
এইসব কথা শুনার পরতো ইচ্ছে করছিলো দৌড়ে গিয়ে উনার সাথে শেয়ার করে আসি কিন্তু কোনো যোগাযোগ নেই।অতঃপর না থাকতে পেরে ফোন হাতে নিয়ে নিজেই কল করলাম তিনবার কল করার পরেও কল না ধরায় মন খারাপ করে বসে পড়তেই উনার কল আসে। উনার নাম দেখেই উত্তেজিত হয়ে রিসিভ করতেই উনার গম্ভীর কন্ঠ ভেসে আসে

” নদীর পারে ওয়েট করছে। তারাতারি দেখতে চাই।”

বলেই কল কেটে দিতেই চিন্তায় পড়ে যায় আম্মু কি এখন আমায় যেতে দিবে এভাবেই তো মুড বেশি ভালো না।কিন্তু উনাকেও না করতে পারবো না এভাবেই তো রেগে আছে তার উপর নাহ করলে একেবারে শেষ আমি।যেতেই হবে যেভাবেই হোক।
মাথায় ঘোমটা টেনে ধীর পায়ে আম্মুর কাছে যাই তখন আম্মু খাতা কলমে নিজের লিস্ট তৈরি কর‍্য ব্যস্ত।
ধীর পায়ে আম্মুর কাছে গিয়ে বললাম

” আম্মু একটু বাহিরে যাচ্ছি আমি”

আমার কথায় আম্মু একনজর আমার দিকে তাকিয়ে বলল

” যাও”

আম্মুর কথায় অবাকতার রেশ ধরে রেখেই ধীর পায়ে দরজা খুলে বাহিরে চলে গেলাম।

~~~~~~~~~~

নদীর পারে যেতেই অফ হোয়াইট রঙের শার্ট পরা রুদ্ধ নামক পুরুষ কে দেখতে পেয়ে পাশে গিয়ে বসতেই উনি আমার দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকিয়ে থাকে।আমি যে কি দিয়ে কথা শুরু করবো ভেবেই পাচ্ছিনা। আবার ভয়ও করছে।উনার রাগ কখনো দেখিনি কিন্তু এখন দেখে ভয় পাচ্ছি কি সাংঘাতিক ব্যাপার।
নিজেকে সামলে নিয়ে আগ থেকে কথা বাড়ালাম।

” আপনি কখন এসেছেন। অনেকক্ষণ ধরে বসে আছেন নাকি?”

আমার কথায় কোনো জবাব দিলেন না উনি।কিছুক্ষন চুপ থাকার পরেও কোনো জবাব না পেয়ে আর সামলে রাখতে পারলাম না নিজেকে।অসহায় ভাব মুখে এনে বলি

” আমিতো একটু বলদ টাইপের জানেনি আপনি।এভাবে রাগ করে আছেন কেনো।আম্মু নাহয় মিথ্যা বিলেছিলো কিন্তু আমি তো সত্যি ভেবেছিলাম তাই না।তবুও সরি”

আমার কথা শুনে উনি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে আমার দিকে তাকাতেই আমিও উঠে উনার মুখোমুখি হয়ে দাড়াই।উনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমার দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন

” ইটস ওকে মিস ফিয়ানা।এতে তোমার কোনো দোষ নেই আই নো।জাস্ট আমারই মুডটা স্পোয়েল হয়ে ছিলো।আর তোমআর তেমন উত্তেজিত ভয়মিশ্রিত আর কান্নামাখা কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম”

উনার কথা শুনে আমিও অসহায় ভাবে থেকে আবার মুখে হাসি টেনে বললাম

” কিন্তু একটা জিনিস তো ভালোই হয়েছে তাই না আর কিছু লুকানো না আর,,,, ”

আমি কিছু বলার আগেই উনি বাকা হেসে বললেন

” হুম ভালোই হয়েছে এখন আমি বউ তারাতারি ঘরে তুলতে পারবো”

উনার কথা শুনে ভ্রু কুচকে মুচকি হাসলাম।তার মাঝেই উনি আবারও ভ্রু কুচকে বললেন

” ও আরেকটা কি জেনো বলেছিলো ও ইয়াহ কনফেশন করি নি আর কোনো কমিটমেন্ট ও দেই নি।”

বলেই ঠোট দুটো চেপে দূরে কোথাও তাকিয়ে থাকলো।আমিও মন খারাপ করলাম। রাগের বশে বলে দিয়েছি এখন উনি এইটা বলে আমাকে অদ্ভুত ফিল করাবে।
আমি মাথা নিচু করে চুপ থাকার মাঝেই সামনে গোলাপি রঙের ফুল বাড়িয়ে দিতে মাথা তুলে তাকাই পর পরই মুখে এক বিশাল হাসি ফুটে উঠে।আমিও হাত বাড়িয়ে উনার হাত থেকে ফুল নেই।
ফুল টার নাম বলতে পারিনা কিন্তু আগেও দেখেছি।

উনার মন ভালো করতে পেরে একটা প্রশান্তির হাসি দিতেই কিছু মনে করে বললাম

” গত সপ্তাহে যে আমাদের বিয়ের কথা হচ্ছে জানেন?”

” আমি সবই জানি তাও তোমার আগে।”

উনার কথায় অবাক হলাম।উনি কি করে সবই আমার বলার আগে থেকেই জানা থাকে।

~~~~~~

বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলাম বাহিরে কিছুক্ষন পর পর থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ছিলো।সকাল থেকে ঘর থেকে বের হইনি। আম্মু কোথায় জেনো গিয়েছে আব্বু ফায়াজ সহ শুধু আমিই বাড়িতে।

সন্ধ্যার দিকে বেল বাজতেই গিয়ে দরজা খুলতেই অনেক গুলো শপিং ব্যাগ হাতে আম্মুকে নজরে পরে আব্বুর হাতেই কিছু ব্যাগ আছে।

” সরে দাড়াও”

আম্মুর কথায় তারাতারি সরে দারালাম।আম্মু ভিতরে ঢুকে সোজা সোফার রুমে গিয়ে সব ব্যাগ গুলো সোফায় রাখে আমিও উনাদের পিছে পিছে সোফার রুমে গিয়ে এক কর্নারে দাঁড়িয়ে আছি।
আব্বু তখনি আমার কাছে এসে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে

” দেখো সব খুলে পছন্দ হয়েছে কিনা।আমিতো তোমার আম্মুকে বলেছিলাম ও তোমাকে নিয়ে যেতে কিন্তু,, তা যাই হোক দেখে নিও ”

মাথায় হাত বুলিয়ে আব্বু উনার রুমে চলে যায়।তখনি আমি ভ্রু কুচকে আম্মুর সামনে গিয়ে বলি

” এগুলো কিসের শপিং আম্মু?”

” তোমার বিয়ের।”

আম্মুর কথায় আমি অবাক হয়ে যাই।আমার বিয়ের শপিং আমি নিজে পছন্দ করে করবো অনেক বছরে ইচ্ছে আমার।কতো কিছু ভেবেছিলাম এই শপিং নিয়ে।বিয়েতে কেমন লেহেঙ্গা পড়বো তারও কতো জল্পনা কল্পনা।
আমি দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললাম

” কিন্তু আমাকে নিয়ে গেলে না তুম তো জানতেই”

আমার কথা না শুনেই আম্মু যেতে যেতে বলল

” এইটা তোমার শাস্তি। এখন আমাদের আর তোমার শশুর শাশুড়ীর পছন্দ মতোই চলতে হবে তোমার।”

বলেই আম্মু চলে গেলো।কি করার এখন এইগুলা জরুরি না রুদ্ধ সাহেবের সাথে যে আমার বিয়ে হচ্ছে এইটাই বড় বিষয়। আর আম্মুও নরমাল বিহেভ করছে। বিয়ে তো আর বার বার মানুষের জীবনে আসে না তাই এনজয় করাটা মাস্ট।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। আর ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত আমি আজ ভাবছিলাম কোনো পর্ব ছাড়বো না কিন্তু তারপরে আবার লিখলাম সময় বের করে।আবারও দুঃখিত🥲🥲)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৯
#writer:Mishmi_muntaha_moon

বিয়ের সপ্তাহ এসে পড়লো।আজ সোমবার, বুধবার এ আমার গায়ে হলুদ আর শুক্রবার এ বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে।আমার আব্বুর সেই কবে থেকেই স্বপ্ন ধুমধাম করে বিয়ে হবে আমার।
সেই ইচ্ছের অনুযায়ী এখন থেকেই কাজ শুরু হয়ে গেছে।নিশাদ ভাইদের বিল্ডিং এর ছাদেই সব অনুষ্ঠান হবে নিশাদ ভাইয়ের বাবা নিজেই সব কিছুতে সাহায্য করছে অনেক।
উনার ভাবনা উনার ছেলে বিয়েতে অমত করেছে আমার তো কোনো হাত ছিলো না তাই আমার প্রতি উনার কোনো ক্ষোভ নেই।
এইটা শুনে অনেক ভালো লেগেছিলো আমার।
সব ফুপ্পি আর চাচারা আমাদের বাড়িতে এসে পৌছে গেছে। তিশা তুষার ভাই আলাদা আসছিলো তাই ওরা এখনো পৌছায় নি।জুবায়ের ভাই এসেছে উনার বাবা মার সাথেই।
ছোট ফুপ্পি সব জানতে পেরে বসেই উনার খোচা মারা কথা শুরু করলেন

” অনেক তো বড় গলায় বলছিলেন আপা নিজের মেয়েকে নিয়ে দেখলেন তো কি হলো।”

আমি জুনায়ের ভাইয়ের সাথেই বসে ছিলাম ফুপ্পির কথায় মুখ কালো করে নিচে তাকিয়ে রইলাম।আম্মুও কিছু বলল না আব্বু তখন মাত্র বাহির থেকে ঘরে ঢুকেই ফুপ্পির কথা শুনে আম্মু পাশে বসে বলল

” তরি কথা বলার আগে ভেবে বলবি। আমার মেয়ে কারো সাথে পালিয়ে যায় নি পরিবারের মত নিয়েই বিয়ে করছে।এইসব কথা বলতে নিশ্চয়ই আসিস নি আমাদের বাড়িতে।”

” ভাই আমিতো শুধু এমনিতেই,,”

” নাহ কোনো প্রয়োজন নেই এমনিতেই কিছু বলার”

আব্বুর কথায় মুখের কালো ভাবটা চলে গেলো। ভালোভাবে জব্দ করেছে আব্বু ফুপ্পিকে।
তখনি তুষার আর তিশাও এসে পৌছালো।আমাকে দেখেই তিশা খুশিতে গদগদ করে এসে বসা থেকে তুলে রুমে নিয়ে গেলো।কতো কথা জমে আছে ওর মনে তাও বলল

আমার রুমে আসতেই বসে এক্সাইটেড হয়ে বলতে শুরু করলো

” আহা ফিয়ানা আপু! পর পর দুইটা বিয়ে খাওয়া হয়ে যাচ্ছে আর এখন যে তোমার বিয়ে এটেন্ড করতে এসেছে আমার জাস্ট বিলিভ হচ্ছে না।তাও আবার রুদ্ধ ভাইয়ের সাথে ইশ আমার পছন্দের ছেলেটার সাথে”

ওর কথা শুনে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বললাম

” এখন দুলাভাই হবে তোর বুঝলি। সো ভাইয়ার নজরেই দেখবি”

আমার কথা শুনে তিশা মুখ ভেংচি দিয়ে বলল

” আহা এখন থেকেই এতো ইনসিকিউর। পরে তো মনে হয় বাহিরের কোনো মেয়ে তাকালে তার চোখ তুলে চাবিয়ে ফেলবে”

” ছিঃ কি আবোল তাবোল অন্য মেয়ের চোখ তুলে চাবাতে যাবো কেনো আমি।”

আমার কথার মাঝেই তুষার আর জুবায়ের ভাইয়ের আগমন

” তুই তো আবার জল্লাতের মা বিশ্বাস করুম কেমনে চাবাইতেও পারোস”

তুষার ভাইয়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে বললাম

” আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড এর চুল ছিরেছিলাম নাকি যে জল্লাত বলছো। কি করেছি হ্যা?”

আমার কথা শুনে তুষার ভাই খাটে গা এলিয়ে পা টা তিশার কোলে রাখতেই তিশা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।তার পর তুষার ভাই ছোট চোখে তিশার দিকে তাকিয়ে বলল

” মাইয়ারা জল্লাতই হয়।একটা জল্লাত ওইসে আমার বইন আরেকটা তুই।দুই বইন রে এমনে জল্লাত পানা করতে দেইখা আর কোনো মাইয়ারে গার্লফ্রেন্ড বানাই কেমনে ক তোরাই।বেচারা রুদ্ধ ভাই তো কি ভালো তোরে যে লইয়া কেমনে সংসার করবো অইটা ভাববার বিষয়। ”

ভাইয়ার কথা গাল ফুলালাম তিশা আর আমি উভয় তারপর কিছু ভেবে হেসে বললাম

” তাহলে মেয়েদের গার্লফ্রেন্ড না বানিয়ে ছেলেদের বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিলেই তো পারো।”

বলেই আমি হাসতে লাগলাম আমার কথা শুনে তিশাও হাসতে লাগলো।
আর জুবায়ের ভাই আজ চুপচাপ ই ছিলো জিজ্ঞেস করে তুষার ভাইয়ের থেকে জানতে পারলাম ওই লবন আই মিন লাবন্য নামে যেই মেয়েটার সাথে ভাইয়ার রিলেশন ছিলো তা ভেঙে গেছে অর্থাৎ ব্রেকআপ হয়ে গেছে তাই একটু সেড সেড।

~~~~~~~~~~

বিয়ের লেহেঙ্গা আগেই আম্মুদের সাথে নিয়ে উনার বাবা মা কিনে দিয়েছে।তাই আজ আবার গায়ে হলুদের শাড়ি পৌছে গেলো।কাচা হলুদ রঙের খুব সুন্দর একটা শাড়ি।
উনার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম সব উনার বাবা মার পছন্দেই হচ্ছে উনি কিছুই করছে না।
এতোসব মেহোমান আসার আগেই কথা হয়েছিলো তারপর আর কথা হয় নি।
কিন্তু আম্মুর থেকে শুনতে পেলাম উনি কোনো কাজে সামনেই কোথায় জেনো গিয়েছিলো কাল, আজকে আবার এসে পড়বে।কালকে যেনো সব সুন্দর ভাবে সম্পন্ন হয় তাই।
এই কথা শুনে কিছুটা খারাপ লাগলো নিজের বিয়ে রেখে উনি কেনো কাজে মনোযোগ হবে বেশি।আমার থেকে কি কাজ বেশি?

রাত্রে ছাদে গিয়ে সবাই আগুন জ্বালিয়ে বসলাম।বড়রা না করেছিলো কিন্তু তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাইয়ের জন্য আর কিছু বলে নি।
ছাদে বসে ইচ্ছে মতো আমাকে চেতালো।আমিও কি করবো আজ ওদের দিন।
তিশা তো তার থেকেও বেশি ভাইদের সামনেই বলে দিলো

” আপু শুক্রবার তোমার বিয়ে আর তারপর,,,?

“তারপর আবার কি!”

বলতেই আমি ও মুখ টিপে হেসে বলল

” বাসর,,,”

ওর কথা শুনে আমি পারি না ছাদ থেকে নেমে যাই কিন্তু কিভাবে যাই সবার সামনে। তিশার উপর অনেক রাগও হলো।

তারপর সকলে মিলে গল্প গুজোব করতে লাগলাম।কিছুক্ষন পর তুষার ভাই আর জুবায়ের ভাই আমাদের নিচে নামতে বলে উনারা চলে গেলো। আমিও যেতে নেবো তখনি প্রথম দিন যেইখানে নিশাদ ভাইকে দেখেছিলা।আজও ঠিক সেইখানে দাড়িয়েই সিগারেট টানছে।
আমি তিশা কে নিচে যেতে বলে ধীর পায়ে উনার পিছে গিয়ে দাঁড়াতেই নিশাদ ভাই পিছে ফিরে আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে মুখে জমিয়ে রাখা সিগারেটের ধোয়া গুলো আমার মুখের কাছে ছাড়তেই কাশতে কাশতে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে হাত দিয়ে ধোয়া গুলো সরানোর চেষ্টা করি।দম যেনো আটকে গেছে আবার মাথাটাও কেমনন কেমন করছে।কতোটা বাজে দুর্গন্ধ এই সিগারেটের।
ধোয়া একদম চলে যেতেই জোরে শ্বাস নিতে থাকি। উনার কন্ঠ ভেসে আসতেই চোখ তুলে তাকাই

” তুমি এইখানে কেনো।ঘরে বিয়ে আর বউ কিনা আমার সামনে”

উনার কথায় চোখ ঘুরিয়ে আকাশে তাকাই।তারপর কিছুক্ষন বাদেই বলি

” আপনি আমার আর রুদ্ধ সাহেবের কথা জানতেন তাই না?”

আমার কথায় উনি দুরের অন্ধকার গাছের ফাকে তাকিয়ে থেকে আনমনা হয়ে বললেন

” না জানার তো কথা না”

উনার কথায় কিছুক্ষন চুপ থেকে বললাম

” ধন্যবাদ। আমাদের বিয়ের পিছে কিন্তু আপনারও অনেক বড় হাত আছে”

কথাটা বলতে উনি আমার দিকে তাকালেন সাথে সাথে মিষ্টি করে হেসে ছাদ থেকে নিচে নেমে পড়লাম আমি।

~~~~~~~

পরের দিন দুপুর দিকেই আম্মু একটা জলপাই রঙের শাড়ি এনে হাতে দিলো।আজকে মেহেদী লাগানো হবে। বড়রা গাছের তাজা মেহেদি এনে বেটে রেখেছে সেই মেহেদি হাতে পড়ানো হবে।

শড়িটা দেখেই আমার তরু আপুর মেহেদির কথা মনে পড়লো কিছুদিন আগেই উনার বিয়ে থেকে আসলাম আর আজ আমার বিয়ে কতোটা আজব বিষয়।
তিশাও একটা সিম্পল কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়ে নিলো।আমার বিয়েতে ওরই তো বেশি সুন্দর করে থাকতে হবে এইটা ওর নিজেরি কথা

_
সুন্দর ভাবে মেহেদির কাজ শেষ হলো।প্রায় ৩ ঘন্টা রাখলাম হাতের মেহেদি তারপর ধুয়ে ফেলে শাড়ি টারি খুলে, সবাই বিশ্রাম এর জন্য রেডি হলো কাল আবার গায়ে হলুদের প্রস্তুতি ও তো নিতে হবে।
আমিও ঘুমাতে গেলাম তখন প্রায় ১০টা বাজে।তিশা ঘুমিয়ে গেছে আজ সকালে খুবই তারাতারি উঠতে হয়েছিলো বলল হয়তো তাই।

আমি ঘুমানোর পূর্বে বারান্দায় যেতেই কারো উপস্থিতি টের পেতেই ভয়ে নিয়ে বাম দিকে তাকাতেই রাস্তার হাল্কা আলোতে উনার উজ্জলিত মুখটা দেখে অবাক নিয়ে বললাম

” আপনি এইখানে কেনো?কিভাবে?”

বলেই নিচে তাকালাম কিন্তু নাহ ৩ তালায় উঠার মতো কোনো রাস্তা দেখলাম না আর না কোনো মই দেখতে পেলাম।তখনি উনি আমার কাছে এসে উনার লুকিয়ে রাখা পিছনের হাত সামনে বের করে বলল

” তোমার ভাইগনদের সাহায্যে।”

বলেই উনার হাতে থাকা মেহেদি দিয়ে আমার হাতে তালুতে গোটা গোটা অক্ষরে মাঝারি সাইজ করে লিখলো”রুদ্ধ সাহেব”

লেখাটা দেখে হাসলাম আমি যে রুদ্ধ সাহেব বলে উনাকে সম্বোধন করি উনি তা ভালো ভাবেই খেয়াল করেছন।
নাম লিখা শেষ হলে ডান হাতে একটা হলুদ রঙের গোলাপ ফুলে মালা ধরিয়ে দিয়ে বলে

” কালকের হলুদে তোমার খোপায় এই ফুল দেখতে চাই।”

উনার কথা শুনে বললাম

” কিভাবে দেখবেন আমাদের তো আলাদা আলাদা হলুদ দেওয়া হবে”

আমার কথার বিপরীতে উনি কানে কাছে এসে বলে

” যদি বলি একসাথেই হবে”
#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ২০
#writer:Mishmi_muntaha_moon

সকাল হতেই কাজের চাপে আব্বু আম্মু ভাইয়ারা হাসফাস করতে লাগলো।কেউ মার্কেটে যাচ্ছে ফুল আনতে তো কেউ খাবারের কাজে।আম্মুও বিভিন্ন মেহোমান দের খাতিরদারি করায় ব্যস্ত। তার মাঝেই তিশা আমার গায়ে হলুদের শাড়ি আম্মুর রুম থেকে এনে আমার দিকে তাকিয়ে বলল

” বাহ ফিয়ানা আপু তোমার গায়ে হলুদের শাড়ি টাতো খুবই সুন্দর।”

ওর কথায় মুচকি হেসে শাড়ির দিকে তাকালাম।ও আবারও শাড়ি হাতিয়ে হাতিয়ে দেখতে দেখতে বলল

” তোমার গায়ে হলুদ কি সুন্দর একদম টিভি সিরিয়ালের মতো হবে। ভাইয়া আর তোমার এক সাথে। আমিও এভাবেই হলুদ করবো আমার বিয়ের সময়”

ওর কথা শুনতেই অবাক হয়ে বললাম

” কি! একসাথে হবে গায়ে হলুদ।কে বলল তোকে?”

” চাচি বলল”

ওর কথায় আনমনে মাথা দুলালাম।উনি ব্যবস্থা করেছেন বলেই কাল রাত এতো কনফিডেন্টলি বললেন।আমার ভাবনার মাঝেই বড় ফুপ্পি আমার রুমে প্রবেশ করে তারাহুরা করে বলতে লাগলেন

” কি ব্যাপার ফিয়ানা তুম এখনো বসে আছো কেনো।তিশা আর তুমি মিলে পার্লারে যাও নাহলে আবার ফিরতে ফিরতে লেট হয়ে যাবে।৭টার দিকেই হলুদ শুরু করতে হবে তো।যাও তারাতারি।”

বলেই ফুপ্পি চলে গেলো।আমাদের সাথে তরু আপুও যাবে, আজকে সকালেই শশুর বাড়ি থেকে এসেছে ভাইয়াও উনার সাথেই এসেছে।

১২ টা বাজে আমি তিশা আর তরু আপু পার্লারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লাম।

~~~~~~~~~~~~

সাড়ে সাতটার দিকে আমাদের সব বোনের সাজ শেষ হলো।ওদেরটা আরও আগেই শেষ হয়েছে আমারটা একটু দেরি হয়েছে বউ বলে কথা।একদম শাড়িটারি চুল সহ সব পার্ফেক্টলি শেষ। চুলে ফুল লাগাতে চাইলে আমি মানা করে দেই।

পার্লার থেকে আমরা তিনজন বাহির হতেই দেখি রুদ্ধ সাহেব গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এইটা সাধারণত উনার বাবারই গাড়ি উনাকে কখনো চালাতেও দেখি নি আমি।

উনাকে দেখেতে তো তিশা আর তরু আপু রীতিমতো মুখটিপে হাসছে আর একেক কথা বলছে।আমি চুপ করতে বললেও ওরা তো আর থামবার পাত্র না।
কিন্তু উনি ওদের কথায় পাত্তা না দয়ে গাড়িতে উঠতে বলল আমাদের।আমরা তিম বোন পিছে বসলাম।আর উনি গাড়ি চালাতে লাগলেন।
রাস্তায় আর কোনো কথা হলো না।বাড়িতে পৌছাতেই ওরা দুজোন আগেই চলে গেলো আমাকে একা রেখে।উনি ধীর পায়ে যেই না আমার কাছে আসতে লাগলো তখনি ছোট ফুপ্পির আগমন।
এসেই উনাকে দেখে ফুপ্পি হা হুতাশা করতে লাগলো।জামাই এখন কেনো এখানে।ক্রুর চোখে ফুপ্পি রুদ্ধ সাহেবের দিকে তাকিয়ে বলল

” তোমরা আজ কালকার ছেলে মেয়ে বলেই তো গায়ে হলুদ একসাথে করা হচ্ছে কিন্তু তবুও দেখছি তর সইছে না।একটু অপেক্ষা করা যেতো না।ফিয়ানা তুইও তো দেখছি কিছুই বুঝিস না দিন দুনিয়া।আমার মেয়ে এমন একদমি ছিলো না।আর আমিও তোর আম্মার মতো ছিলাম না।”

বলা শেষ করতেই ফুপ্পি, উনি গম্ভীর মুখে ক্রোধ নিয়ে বললেন

” ছোট ফুপ্পি একটু পরেই আমাদের হলুদ হবে তাও আবার একসাথে তো আমার দেখা করায় কোনো প্রব্লেম নেই আর ও তো আমার বউ হতে যাচ্ছে তাই কারো কাছ থেকে পারমিশন নেওয়ারও কোনো দরকার নেই আমার।আর আপনার মেয়ের সাথে তো ফিয়ানার সাথে কোনো তুলনাই দিবেন না আপনি দয়া করে।”

বলে এক মুহূর্তও না দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সামান্য হেসে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।আমি উনার গাড়ি থেকে মুখ ফিরয়ে সামনে তাকাতেই দেখি কিছুটা দূরেই আম্মু দাঁড়িয়ে ছিলো।আমি আম্মুর দিকে একনজর তাকিয়ে ছোট ফুপ্পির দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে কিছু বলতে নিবো তখনি আম্মু এসে আমাকে ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে যায়।

” কি বলতে নিচ্ছিলে তরি আপাকে?”

” উনি না বুঝে কতো কথা বলে দিলো তাই মাফ,,”

” কোনো দরকার নেই মাফ চাওয়ার রুদ্ধ ভুল কিছু বলে নি।আর তুমি বেশি বুঝতে যেও না বুঝলে”

আম্মুর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।

_

তারাতারি শুরু করবে বলতে বলতেও ৮ টা বেজে গেলো।রুদ্ধ সাহেব উনার ফেমিলি নিয়ে আসলো সাড়ে ৮ টায়।
আর ৯ টা বাজে শুরু হলো হলুদের কার্যকর। সবাই হলুদ লাগাচ্ছে মিডিয়াম ভলিউম এ গান চলছে।সবাই আমাকে হলুদ লাগাচ্ছে তার ফাকে ফাকে আমি উনার দিকে তাকাতেই দেখি আব্বু উনাকে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে আর কি যেন বলছে।

সবাই দেওয়া হলে আসে নিশাদ ভাই আমাকে হলুদ দিতে।উনাকে দেখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টানলাম।কিন্তু নিশাদ ভাই তার পরিবর্তে হাসি ফেরত দিলো না।গম্ভীর মুখে আমার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়ে থেকে হলুদ নিয়ে দুই গালে মাখিয়ে দিয়ে আরও কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে উঠে চলে গেলো।
সাথে সাথেই রুদ্ধ সাহেবের দিকে তাকিয়ে দেখি বাকা চোখে দাত কিড়মিড় করে তাকিয়ে আছে।
আমি আর তাকিয়ে থাকলাম না চোখ ফিরয়ে নিলাম।

হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হলো ১ টা বাজে।লিয়াকত আংকেলরা এখন চলে যাবে। গায়ে হলুদে আসা মানুষ অলরেডি চলে গেছে।আমি তখন ছিলাম রুমে।
আয়না দেখে গালের কপালের হলুদ মুচছিলাম।কারো আসার শব্দে ফিরে তাকিয়ে দেখি সাদা পাঞ্জাবি গায়ে দাড়িয়ে।সাদা পাঞ্জাবি এখন আর সাদা নেই হলুদের দাগে অনেকটা হলুদ হয়ে আছে।

উনি আমার অনেকটা কাছে এসে দাঁড়িয়ে মলিন মুখে আক্ষেপ নিয়ে বলল

” আমার বউকে সবাই হলুদ দিলো আমিই দিতে পারলাম না।এমনকি ওই নিশাদ ও লাগিয়ে গেলো।”

উনার অভিমানী মুখটা দেখে মুচকি হাসি দিয়ে বললাম

” এইটা আপনার ব্যর্থতা। একই সাথে হলুদ হওয়ার পরেও আমাকে হলুদ লাগাতে পারলেন না মিস্টার।”

আমার কথায় উনি ভ্রু কুচকে বলল

” তুমিও তো আমাকে হলুদ লাগালে না।”

বলেই উনি উনার হলুদে মাথা হাতটা আমার গাল স্লাইড করে ঘাড়ে নিয়ে হলুদ মাখলো।গাল সহ ঘাড় মাখিয়ে গেলো হলুদে আমার।আমি মুখটা কিঞ্চিৎ হা করে ঘাড় থেকে হলুদ নিয়ে উনার মুখে মাখিয়ে দিলাম।
তখনি রুমে তরু আপু প্রবেশ করতেই উনি কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায়।

” বাব্বাহ! বউকে হলুদ মাখিয়ে দেওয়া হচ্ছে। হাও রোমেন্টিক”

উনার কথা আমি হাসলাম।তরু আপুও হেসে দিয়ে বলল

” ভাইয়া আপনাকে লিয়াকত আংকেল খুজছে।তারাতারি চলুন নাহলে না আপনাকে রেখেই চলে যায় তা অবশ্য আপনার জন্য মন্দ হবে না।”

তরু আপুর কথায় হাসি চেপে চাপা স্বরে বললাম

” আপু, তুমিও না কি আজাইরা কথাবার্তা বলছো”

” আচ্ছা আর বলবো না।ভাইয়া আপনি আসুন আমি যাচ্ছি তারাতারি আইসেন না হলে আবারও ডিস্টার্ব করতে এসে পরবো”

আপু যেতেই উনি বাকা হেসে আমার কাছে হেসে কানে ফিসফিসিয়ে বলল

” পরশু দেখা হচ্ছে বিয়েতে।বাই দা ওয়ে বি রেডি ফোর বাসর”

বলতেই আমি চোখ বড় বড় করে তাকাই উনার দিকে। কি যা তা বলছে।উনি চোখ টিপে চলে যেতেই আমি মুচকি হেসে আবারও হলুদ টিস্যু দিয়ে মুছতে থাকি।
কালকে পর্যন্ত সময় তারপর তো আমার জীবনের নতুন সেউ মানুষটির সাথে নতুন একটা অধ্যায় শুরু হবে।

চলবে,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)
চলবে,,,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here