আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -১২+১৩+১৪

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১২
#Writer: Mishmi_muntaha_moon

উনার কথায় পিছে ফিরে তাকাতেই দেখলাম উনি সিগারেটের ছোট টুকরা টা নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে ফেলে এক কদম আমার দিকে বাড়ালেন। আমি কিছুটা ইতস্তত করে ডানে বামে তাকালাম।উনি পকেট থেকে একটা সেন্টার ফ্রেশ বের করে মুখে দিলেন।তারপর খেতে খেতে বললেন

” দেখতে তো খুবই ছোট লাগছে তোমাকে। এইজ কতো হবে তোমার বলতো।”

উনার কথার উত্তর না দিয়েই চলে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তাহলে তো বেয়াদবি মনে হবে আর আম্মু যদি জানে তাহলে তো শেষ আমি।
আমি চোখ দড়ির শুকাতে দেওয়া কাপড়ের দিকেই রেখে বললাম

” মেয়েদের এইজ বলতে নেই।”

সামনে থেকে অস্বাভাবিক হাসির আওয়াজে চোখ তুলে তাকালাম।উনি একদম হাসতে হাসতে যেনো এখনই বিদায় নিবে পৃথিবীর বুক থেকে।দাত শক্ত করে কঠোর দৃষ্টিতে তাকাতেই উনি চুল ঠিক করে হাসতে হাসতে বলল

” সরি!আমি আমার হাসি থামাতে পারছিলাম না।আচ্ছা আমাকে চিনেন তো?”

উনার কথা এক ভ্রু উচিয়ে অন্য দিক চোখ ফিরিয়ে বললাম

” অবশ্যই চিনবো না কেনো।যাদের বাড়িতে থাকি তাদের না চিনে উপায় আছে”

আমার কথা শুনে আবারও ঠোঁট চেপে হাসলো উনি।আমারও একদমই ভালো লাগছে না কিন্তু কিভাবে যাওয়া যায় কিছু বাহানা দিতে হবে নাহলে এই বজ্জাত ছেলে সামনে দাড় করিয়েই রাখবে।

” ওহ আচ্ছা আমি তাহলে আসি আম্মুর একটা কাজ করতে হবে দেরি হলে আমাকে কবর দিবে বুঝলেন।আসি তাহলে”

বলেই আমি দ্রুত পায়ে সিড়ির দিকে যেতেই উনি গলা উচিয়ে বললেন

” বায় ফর নাও”

শুনলাম কিন্তু ফিরে তাকালাম না নিচে নেমে পড়লাম।

~~~~~~

সন্ধ্যা বেলায় আসলো জিয়ার কল। অনেকদিন পর ওর নাম্বার দেখে অবাক হয়ে তুললাম তারপর বললাম

” এতোদিন পর আমার নাম্বার ডায়াল করার কারণ?ভুলে কল দিলি নাকি”

” ধুর কি যে বলিস না।ভুলে দিবো কেনো।আমিতো বেরাতে গিয়েছিলাম তাই তোর খবর নেয়া হয় নি।তুইও তো আমাকে কল করিস নি”

” আচ্ছা সেই সব কথা বাদ দে।কল করার কোনো বিশেষ কারণ? ”

” অবশ্যই। আমার বার্থডে কাল ভুলে গিয়েছিস নিশ্চয়। আচ্ছা যাক কাল ছোট একটা অনুষ্ঠান করবো তুই আসবি প্লিজ হ্যা সকাল সকাল এসে পরবি”

ওর কথা শুনে মনে করার চেষ্টা করলাম ওর বার্থডে ডেট আমি জানতাম কিনা কিন্তু নাহ মনে হলো কখনো জিজ্ঞাসা করি নি ওর বার্থডের ব্যাপারে।ও আবারও আসার কথা বলতে আমি বললাম

” আচ্ছা আম্মু যদি পারমিশন দেয় তাহলে আসবো”

” নাহ আন্টি যদি না ও বলে তুই আমাকে কল দিবি আমি আন্টিকে বলবো না হলে এখুনি দে আমি আন্টিকে বলি”

” নাহ বোন থাক আমিই আম্মুকে বলবো আর ডোন্ট ওয়ারি আসবো ”

” আচ্ছা তাহলে বায় কাল দেখা হচ্ছে”

“বায়”

কল কেটে দিতেই বিছানায় বসলাম।অলরেডি এখন রাত আম্মুকে এখুনি বলতে হবে নাহলে যেতে দিবেনা।
বিছানা থেকে উঠে আম্মুকে খুজতে লাগলাম।কিন্তু কোনো রুমেই পেলাম মা।না পেয়ে রুমে আসতে নিতেই দেখলাম আম্মু বাহির থেকে এলো।এসে সোজা রান্নাঘরে চলে গেলো।আমিও আম্মুর পিছু পিছু রান্নাঘরে গিয়ে দাড়ালাম।
আমাকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আম্মু বলল

” ভনিতা না করে কিছু বলার থাকলে বলো শীগ্রই ”

আমি হাসির রেখা টেনে বললাম

” আম্মু কাল না জিয়ার বার্থডে তো ওরা ছোট একটা অনুষ্ঠান করবে।”

আমার কথা শুনে আম্মু চুলা নিভিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো।

” তো?তোমাকে যেতে বলেছে?”

আম্মুর কথা শুনে তারাতারি মাথা উপর নিচ দোলালাম সাথে মুখে বললাম

” হ্যা।যদি তুমি যেতে দিতে তাহলে যেতাম”

” না যেতে দিলে যাবে না?”

আম্মুর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। মুখটা গোমড়া করে বললাম

” জিয়া বলল আমি না গেলে নাকি ও কেক কাটবে না।”

” আহা অনেক ভালোবাসা দেখছি”

আম্মুর কথায় মাথা চুলকে চোখ নিচু করলাম।

” আচ্ছা যেও কিন্তু সন্ধ্যা হলেই বাড়ি ফিরতে হবে আমি নিশাদ কে বলবো তোমাকে নিয়ে আসতে”

আম্মু প্রথম কথায় অনেক খুশি হয়ে ছিলাম কিন্তু পরের কথাটা শুনে মুডটাই নষ্ট হয়ে গেলো।এখন থেকেই উনি নিশাদ নিশাদ করছে কি সাংঘাতিক ব্যাপার ।আমি আর কি বলবো বেশি নাখড়া দেখালে যাওয়াই হবে না তাই কিছু না বলে রুমে গেলাম।

তখনই আবারও ফোন বাজলো।ভেবেছিলাম জিয়া কল করেছে কিন্তু নাহ রুদ্ধ সাহেব কল করেছে। রিসিভ করে রিনরিন কন্ঠে বললাম

” আসসালামু আলাইকুম ”

সালামের উত্তর নিতেই আমি বললাম

” কাল আপনি কোথায় উধাও হয়ে গিয়েছিলেন বলুন তো?”

” একটা ইম্পর্ট্যান্ট কাজ এসে পরেছিলো তাই তারাতারি বেড়িয়ে পরেছিলাম।তুমি বলো কাল ফ্রি আছো।”

কথাটা শুনতেই আফসোস লাগলো নিশ্চয় উনি আমার সাথে দেখা করতেন।কিন্তু কাল তো ফ্রি না।

” আসলে কাল জিয়ার বার্থডে তো। জিয়া বললো বার্থডে তে ওর সাথেই থাকতে”

“ওহ আচ্ছা। আমার পক্ষ থেকে উইশ করে দিও তাহলে।”

” হুম আচ্ছা।”

~~~~~~~~

রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কিছুক্ষন হলো।সাদা গাউন পরিহিতা রমনী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে দেখতে বড়ই অদ্ভুত লাগছে হয়তো সবার কাছে।ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছে কিন্তু এই সামান্য বৃষ্টি মানুষদের ভেজাতে বড়ই অক্ষম। তবুও ঘোমটা দিয়ে ঢেকে নিলাম মাথা সহ শরীর টা।

হঠাৎ মেইন গেট থেকে আম্মুকে বেরিয়ে আসতে দেখে অবাক হয়ে তাকালাম।আম্মু বেরিয়ে আমার কাছে এসেই দাড়ালো।

” তুমি এলে কেনো।”

” কেনো তোমার সমস্যা হচ্ছে আমি আসায়?”

আম্মুর কথায় আমতা করে বললাম

” নাহ!কিন্তু বৃষ্টি পড়ছে তো তাই বললাম

তখনই মেইন গেট থেকে আবারও নিশাদ ভাই বেড়িয়ে এলো।উনাকে দেখে যতটা অবাক হলাম আমাদের দিকে আসতে দেখে তার থেকে বেশি অবাক হলাম।
আম্মু উনাকে দেখে হাসিমুখ ফিরিয়ে দিলো আর গোমড়া মুখ।
কিন্তু উনি পাত্তা না দিয়ে আম্মুর পাশে এসে দারাতে আম্মু বলল

” যাক ভালো হলো বাবা তুমি এসেছো।এই বৃষ্টির মধ্যে কোনো গাড়িও পাওয়া যাচ্ছে না দেখেছো কি জ্বালা।”

” চিন্তা করবেন না আন্টি আমি আছিতো”

এতোদিন ভাবতাম উনার ছোট ভাই নেহাল হয়তো আমার সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করতো এখন দেখছি উনার বড় ভাই উড়ে এসে জুরেছে।উফ কি এক জ্বালাময় জীবন!

” আপনি এই বৃষ্টি তে দাঁড়িয়ে থাকবেন না প্লিজ। আমি ওকে সাবধানে পৌছে দিয়ে আসবো।”

উনার কথায় আম্মু ঠিকই রাজি হয়ে চলে গেলো।আম্মু যেতেই আমি উনাকে কাঠ কাঠ কন্ঠে বললাম

” দেখুন আমি চলে যেতে পারবো একা আপনার কষ্ট করার প্রয়োজন নেই”

উনি যেনো আমার কথাকে পাত্তাই দিলো না।মনে হলো আমি জেনো রাস্তার একটা খাম্বা। বিরক্ত হয়ে কিছু বলতে নিবো তার আগে উনি রিকশা থামিয়ে উঠে বসে বলল

” রিকশায় উঠে পরো”

আমি কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে বললাম

“নাহ আমি রিকশা দিয়ে যাবো না।অটো দিয়ে যাবো।”

আমার কথায় উনি আবারও পাত্তাহীন বসে থাকলো।তারপর জোর গলায় বলল

” উঠে বস নাহলে এমনভাবে আন্টির কাছে কমপ্লেইন করবো যে তোমার যাওয়া কেনসাল হয়ে যাবে”

উনার কথা শুনে অবাকের চোটে মুখ হা হয়ে গেলো।আমাকে থ্রেট দেয় সাহস কতো বড় ! রাগে ঠোট কামড়ে ধরলাম।কিন্তু কোনো উপায় না থাকায় রিকশায় উঠে গুটিশুটি হয়ে কিছুটা জায়গা নিয়ে চেপে বসলাম।যেনো টাচ না লাগে।

চলবে,,,,
{ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️❤️}#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৩
#Writer: Mishmi_muntaha_moon

আমাকে দেখে জিয়ার কি যে আনন্দ। দেখলাম আরও মেহোমান এসেছে।ওর বড় বোন জুই আপুর সাথেও পরিচিত হলাম।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া হলো।আর বিকেল দিকে জিয়া কেক কাটলো।তারপর আরও অনেক মজা হয়েছে। ওদের সবার সাথে বসে আড্ডা দিয়ে বিকেল দিকেই সবাইকে বিদায় দিয়ে বেড়িয়ে গেলাম।আম্মু বলেছিলো আসার সময় আবার নিশাদ ভাই কে কল করতে কিন্তু আমি একদমই কল করতে চাই না।দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছি কি করবো তার মাঝেই কল আসলো রুদ্ধ সাহেবের।

” হ্যালো!কোথায় তুমি মিস ফিয়ানা।বাড়িতে চলে গেছো?”

উনার আকস্মিক প্রশ্নে অবাক হয়ে বললাম

” নাহ মাত্র বেরুলাম যাওয়ার জন্য ”

” তুমি ওইখানেই থাকো আমি আসছি”

বলেই কল কেটে দিলেন।আমিই তাই আর কোনো যানবাহন না আটকে দাঁড়িয়ে রইলাম।
প্রায় ৫ মিনিটের মধ্যেই উনি হাজির।কিন্তু উনাকে বাইক নিয়ে আসতে দেখে অবাক হলাম।উনি বাইক থেকে নেমে আমার সামনে এসে দাড়াতেই আমি দ্রুত প্রশ্ন ছুড়লাম

” আপনি বাইক কোথা থেকে আনলেন?”

উনি চুল হাত দিয়ে ঠিক করে বললে

“আমারি ছিলো বাড়িতে ইউস করা হয়নি কারণ বাইকে চলাফেরা করতে আমার একদমই পছন্দ না ”

“ওহ”

উনি হেটে আবারও বাইকে গিয়ে বসে আমাকে উঠতে বললে আমিও ধীর পায়ে গিয়ে বাইকে উঠে বসতেই উনি বাইক স্টার্ট দেয়।
বাইক চলছিলো নিজ গতিতে।হঠাৎ উনি গম্ভীর কন্ঠের কিছু প্রশ্ন করলেন কিন্তু বাতাসের বেগে শুনতে না পেয়ে আবারও জিজ্ঞেস করলাম

” কিছু বললেন বুঝলাম না!”

” সকালে নিশাদ তোমায় পৌছে দিয়েছে?”

উনার প্রশ্নে অবাক হলাম।উনি কি করে জানলো!আমাকে চুপ থাকতে দেখে উনিই আবার বললেন

” দেখেছি আমি তোমাদের তাই জানলাম”

উনার কথা শুনে তারাতারি করে বললাম

” নাহ আসলে আমি যেতে চাই নি আম্মুর জন্য যেতে হলো নিশাদ ভাইয়ের সাথে।”

” ওহ”

হঠাৎ বাইকের স্পিড বেড়ে যেতেই ঘাবড়ে গিয়ে এক হাত দিয়ে চুল সামলিয়ে আরেক হাতত দিয়ে উনার কাধ শক্ত করে চেপে ধরলাম।বাতাসের তীব্র গতিতে চোখ দিয়ে পানি টলমল করতে লাগলো।
অনেক ক্ষন পর একটা শুনশান নীরবতায় ঘেরা নদীর পারের সামনে থামলেন।আশেপাশে কেউ নেই শুধু একটা নৌকা পাড়ে রাখা।
আমি লাফ দিয়ে নেমে উনার দিকে তাকালাম। উনি বাইক রেখে নেমে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে নদীর পানিতে নীরব দৃষ্টি ফেললো।
কেনো জানি মনে হলো আমি যে নিশাদ ভাইয়ের সাথে সকালে জিয়াদের বাড়িতে গিয়েছি সেই বিষয়টা নিয়েই উনার মুড অফ।

” তোমাকে কেনো এখানে নিয়ে আসলাম জানো মিস ফিয়ানা?”

উনার কথায় কিছুক্ষন চুপ থেকে ভেবে বললাম

” নৌকা ভ্রমণ করাতে?”

আমার কথা শুনে উনি ধীর পায়ে নৌকার দিকে বারতে লাগলেই ডানে থাকা ঘাস ফুলের দিকে নজর যেতেই মুখে হাসি ফুটলো।
” ফুল প্রেমিককে ফুল দিয়েই অভিমান ভাংচুর করা সম্ভব”

আমি দ্রুত পায়ে ওখানে গিয়ে কয়েকটা বেছে সুন্দর ফুল ছিড়ে নিলাম।ফুল তুলে নৌকার দিকে বাড়তেই দেখি উনি নৌকায় চড়ে বৈঠাটা পানিতে ছাড়লো।আমিও সাবধানে নৌকায় চড়ে উনার সামনে বসলাম।

” আপনি নৌকা চালাবেন নাকি!পারেন আপনি?”

আমার কথায় উনি বৈঠা দিয়ে নৌকা চালানোতে খেয়াল রেখেই বলল

” কোনো কিছুই আমার জন্য ইম্পসিবল না মিস ফিয়ানা।”

নৌকাটা ধীরে নদীর মাঝে এসে পৌছাতেই উনি বৈঠা ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকালেন।

” নিশাদ থেকে দুরত্ব বজায় রাখবে”

উনার বলার সাথে সাথেই আমি মৃদুস্বরে বললাম

” আম্মুর মাথায় আমাকে উনার সাথে বিয়ে দেয়ার ভাবনা চলছে জানেন কি?”

আমার কথায় উনি চোখ ছোট করে তাকালেন।পরমুহূর্তেই স্বাভাবিক হয়ে বললেন

” আই নো!”

আমার কথায় উনার অবাক হওয়ার কথা ছিলো তার বদলে আমিই উনার কথা অবাক হলাম।উনি জানে তবুও উনার এমন নরমাল বিহেভ। কিছু করবে না নাকি!
আমিও আর কিছু বললাম না।হঠাৎ আমার হাতে থাকা ফুলের কথা মনে পড়তেই উনার দিকে ফুলের হাত বাড়িয়ে দিলাম।
উনার দৃষ্টি তখন মোবাইলের জ্বলন্ত স্ক্রিনের উপর ছিলো।
আমাকে এভাবে হাত বাড়িয়ে থাকতে দেখে একবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বাড়ানো হাতের দিকে তাকালো।
হাতে ফুল থেকে হয়তো কিছুটা বিস্মিত হলো।
বিস্ময়ের পালা শেষ হতেই মুখে হাসি ফুটলো উনার যা দেখে আমিও কিঞ্চিৎ হাসলাম।

” তুমি বড়ই সাংঘাতিক মিস ফিয়ানা।এভাবে মাঝ নদীতে এসে আমাকে প্রপোজ করছো?”

উনার কথায় অবাক হয়ে ভ্রু কুচকে তাকালাম।কি বলে উনাকে আমিই প্রপোজ করছি!আমি মুখে অবাকের রেশ ধরে রেখেই বললাম

” আমার তো বয়েই গেছে আপনাকে প্রপোজ করবো।একমাত্র আমার স্বামীকেই করবো প্রপোজ।বুঝলেন মিস্টার রুদ্ধা সাহেব”

আমার কথায় হেসে দিয়ে হাতের ফুল গুলো নিলো তারপর আমার কানের পিছে গুজে দিয়ে আমার দিকে ঠোঁট কামড়ে অপলকভাবে তাকিয়ে থাকতেই আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে হাত দিয়ে পানি ছুতে লাগলাম।
ছবি তুলার আওয়াজে তড়িৎ গতিতে সামনে তাকাতেই দেখি উনি মোবাইল হাতে স্বাভাবিক ভাবে বসে কিছু দেখছে।লকিয়ে লুকিয়ে ছবি তুলার ব্যাপারে ঠোট দুটো চেপে হাসি থামিয়ে আবার নদীর পানিতে তাকালাম।
সকল প্রেমিকের ভেতরি অভিমান লুকায়িত থাকে।তা ভালোবাসা ও সযত্নের সাথে দূর করা আমাদের দায়িত্ব এবং প্রয়োজন।

~~~~~~~~~~~~

বাড়িতে পৌছালাম ৭টা বাজে।আমাকে দেখে আম্মুর সেকি রাগ।নিশাদ ভাইয়াকে পাঠিয়েছিলো একটু আগে আমাকে পায় নি গিয়ে। আর আমাকে কল করতে বলেছিলো আমি কল কেনো করিনি সেইটা তো আছেই।উনার কথায় আমারও সুপ্ত রাগটা বের হতে চাইলো।

” আমি কলেজে সারাজীবন একাই গেলাম আসলাম একা। লাইব্রেরি তে একাই যেতাম।সব কাজ তো একাই করেছি এখন কেনো আমার পিছে নিশাদ ভাইকে বাজিয়ে দিতে হবে!”

“তুমি কবে কোথায় একা গিয়েছো এইটা বিষয় না।যাইহোক তোমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ে কোনো লাভ নেই।আর তুমি শিশুও না যে কিছু বুঝবে না।যেহেতু তোমার জীবন নিয়ে ডিসিশন নিচ্ছি তোমার জানার অধিকার আছে।কিন্তু তার আগে আমি তোমায় কিছু জিজ্ঞাসা করতে চাই।

আম্মুর কথা শুনে কি বলবো বুঝলাম না।আমি কিছু বলার আগেই আম্মু বলল

” দেখো নিশাদ কে আমার খুব ভালো লাগে। এখন প্রশ্ন হলো নিশাদ কে তোমার কেমন লাগে ”

আম্মুর কথায় অবাক হয়ে বললাম

” তুমি কি বলছো আম্মু।কথাতো এইটা ছিলো না।আমার রেজাল্ট ও এখনো দেয়নি আর তুমি কিভাবে পল্টি খাচ্ছো?তুমি বলেছিলে আমার রেজাল্ট ভালো আসলে এইসব বিষয় নিয়ে ফোর্স করবে না।”

আমার কথায় আম্মু মুখ ফিরিয়ে বললেন

” তোমার পড়া নিয়েই তো সমস্যা যদি উনারা পড়ায় তাহলে সমস্যা কোথায়?”

আম্মুর কথায় অনেক খারাপ লাগলো কিভাবে উনি আমাকে দেওয়া কথা রাখছেন না!আমি রাগ দেখিয়ে কিছু না বলে রুমে গিয়ে দরজা অফ করে দিলাম।উনার কথা একদমই মানবো না আমি।

চলবে,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই।ছোট পর্বের জন্য দুঃখিত। ❤️❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৪
#writer:Mishmi_muntaha_moon

একদিনে ভুলে গেলাম আম্মুর কথা। উনিও আমার সাথে আর নিশাদ ভাইয়ের সম্পর্কে কথা বলে নি।আজ ভাবলাম শাড়ি পড়বো।উনি কথার ভাজে জিজ্ঞেস করেছিলেন শাড়ি পরতে পারি কি না কিন্তু সরাসরি বলে নি যে শাড়ি পড়ে এসো অথবা এমন কিছু।
তবুও আমি ভাবলাম শাড়ি পড়ে আজ যাবো উনার সাথে দেখা করতে।
ওয়ারড্রব থেকে শাড়ি বের করে রেখেছি মাত্র তখনি রুদ্ধ সাহেবের কল আসায় ভাবলাম প্রথম রিসিভ করবো না একেবারে সারপ্রাইজ কিন্তু একবার কেটে যাওয়ার পর আবার কল দেওয়ায় আর ইগ্নোর করতে পারলাম না রিসিভ করলাম।

” হ্যালো!কোথায় তুমি মিস ফিয়ানা? ”

“কেনো আমি বাসায়।”

“আমি তোমাদের বাড়ির নিচে অপেক্ষা করছি দ্রুত পায়ে হেটে এসে পরো ওকে”

উনার কথা শেষ হওয়ার পর উনি যেই না কেটে দবো তখনি আমি দ্রুত বলি

” আরেহ এখন তো আমি শাড়ি পরছি সো নোট পসিবল।”

আমার কথা শুনে উনি কি বলবে বুঝতে পারলাম না চুপ করে উনার কথা শুনার অপেক্ষা করলাম।উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বললেন

” কেনো শাড়ি পড়ছো?শাড়ি পড়ার প্রয়োজন নেই এভাবেই নরমাল গেট আপ এ আসো। আমি কল কাটছি। ”

বলেই কল কেটে দিলেন।যাহ আমার এতো শখ করে শাড়ি পড়া উনি মুহূর্তেই ভেঙে দিলেন।শাড়ি টা গোমড়া মুখে আবার জায়গা মতো রেখে দিয়ে নরমাল গেটআপ এ হেন্ডব্যাগ কাধে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম।

_

মেরুন রঙের শার্ট সাথে ট্রাউজার পড়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্ধ সাহেব।মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছিলো আমাকে দেখে কিছু একটা বলে কল কেটে পকেটে রেখে দিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসে।
উনি অলওয়েজ আমাদের গল্লির পরে যেই রাস্তা সেইখানে দাঁড়ায় আমার সেফটির জন্য আই নো।

আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে সাইকেল দিকে ইশারা করলো।আমিতো সাইকেল দেখে রীতিমতো অবাকের চরম পরম পর্যায়ে চলে গিয়েছি।উনি যে একেকদিন একেকটা অবাকময় যানবাহন নিয়ে আমার সামনে হাজির হচ্ছে যা দেখে আমি বিস্মিত হয়েই যাচ্ছি।
কিন্তু আজ সাইকেল আনলো তাহলে আমরা আজ সাইকেলে করে ঘুরবো। এভাবে আমার কোনো সমস্যা নেই উনি সাথে থাকলে সব কিছু দিয়েই ঘুরতে পারি।

” আপনি সাইকেলে করে এসেছেন আজ।”

আমাকে এভাবে অবাক হয়ে বলতে দেখে উনি হেসে দিয়ে বললেন।

” প্রেয়সীর ইচ্ছে পূরণ করা সকল প্রেমিকের দায়িত্ব মিস ফিয়ানা।”

উনার কথা গুলো আমাকে অবাক আর বিস্মিত দুটোই ঘিরে ধরে এতো সুন্দর সুন্দর কথা এতো বড় অর্থবোধক কথার ব্যাখ্যা কত ছোটভাবেই দিয়ে দেয় উনি।
মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেই উনি তাড়া দিয়ে বললেন

” তোমার মুগ্ধ আখিজোড়া দেখে না আমি মুগ্ধ হয়ে যাই তার আগে সাইকেলে উঠে বসো।”

বলেই উনি সাইকেলে উঠে বসতেই আমিও উনার দুই কাধে দুই হাত রেখে বসে পড়লাম।
অমনেই চলতে লাগলো সাইকেল তার ধীর গতির নির্ভরে।মৃদু বাতাসে ঝুটি করা চুল গুলো এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগলো।আশেপাশের কর্মরত মানুষ আর নিজ কাজে ব্যস্ত ব্যাক্তিরাও কাজ এবং চলাফেরার ফাকে ঠিকই আমাদের অবাক দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে।
একনজর উনার দিকে তাকাতেই দেখি মনোযোগ সহকারে সামনের রাস্তা পরোখ করছে, বাতাসের মৃদু ঝাপ্টায় উনার সামনের চুল গুলো দোল খাচ্ছে।শরীরে লাগানো পারফিউমের মিষ্টি সুগন্ধ নাকে যেতেই লম্বা নিঃশ্বাস নিলাম।

উনি মুখ দিয়ে না বললেও আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছি যে উনি আমার ডায়েরিতে লিখা সকল ছোট ছোট ইচ্ছে গুলো ধীরে ধীরে পূরণ করে যাচ্ছে আমার সেই স্বপ্নের সুপুরুষ হয়ে।
ভাগ্যে কি আছে তা বলা আমাদের পক্ষে সম্ভব না উপরওয়ালা ছাড়া কিন্তু এখন এই মুহূর্তে আমার মনে উনিই একমাত্র আমার পুরুষ আমার চোখে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনার পিঠে হাল্কাভাবে মাথা ঠেকিয়ে বললাম

” ধন্যবাদ আপনাকে আমার ডায়েরির সেই অবাস্তব লেখা গুলো বাস্তবে পরিণত করার জন্য।”

আমার কথায় উনি হয়তো হাসলেন তারপর বললেন

” এখনো কোথায় হলো সব শেষ তোমার লিস্টটা একটু বেশিই বড় নয় কি মিস ফিয়ানা!”

উনার কথায় হাসলাম আমি।তারপর আবারও ব্যস্ত শহরে নজর দিলাম।

_
প্রায় ১ ঘন্টা উনি আমায় সাইকেল দিয়েই শহরে অলি গলিতে ঘুরালো।অবশ্য আমি না করেছিলাম সাইকেলে পা চালিয়ে যাওয়া ততটাও তো সহজ না। পা ব্যাথা নিশ্চয়ই হয়েছে উনার।কিন্তু উনি শুনলেন না আমার কথা। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সন্ধ্যা হওয়ার কিছুক্ষন পূর্বে বাড়িতে নামিয়ে দিলেন।

” আপনার পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে নিশ্চিত।এখন আবার সাইকেল দিয়েই যাবেন?”

” তাহলে প্লেন দিয়ে যাবো নাকি!”

উনার কথা মুখ বাকিয়ে তাকালাম যত্তসব ত্যারা কথা উনার মুখেই।আমাকে বাড়িতে যেতে বলে উনিও সাইকেল চালিয়েই রাস্তা ধরে বাড়তে লাগলেন।আমিও কিছুক্ষ উনার যাওয়ার পানে চেয়ে থেকে মেইন গেটের ভিতরে পা রাখলাম।

~~~~~~~~~

সেইদিন সাইকেলে ঘুরার পর উনার সাথে আর কথা হলো না মাঝে একদিন পাড় হয়ে গেলো।সকাল সকাল ফোনের রিং বাজতেই মনে প্রথম উনার নাম ভেসে উঠলো নিশ্চিত উনিই ফোন করেছেন।
কিন্তু নাহ আবারও আমাকে ছ্যাকা দিলো এই জিয়া নামক মেয়েটা।
ফোন রিসিভ করতেই ওর নেতিয়ে পড়া আওয়াজ কানে যেতেই ভ্রু কুচকে শুয়া থেকে উঠে বসলাম।

” কিছু কি হয়েছে?”

” ফিয়ানা তুই তো দেখছি কোনো খবরই রাখিস না।কিছু হয়েছে মানে অনেক বড় কিছু হতে যাচ্ছে!”

ওর কথার আগা মাথা না বুঝে বিরক্ত হয়ে বললাম

” আসল কথা বলবি না বললে আমি কল কেটে দিবো”

” পরশু আমাদের রেজাল্ট দিবে আর তুই এখানে চিল মুডে আছিস”

আমার কথার উত্তরে ওর কথা শুনে আমিও কিছুটা টেনশন এ পড়ে গেলাম।কে জানে কি করেছি আমি! সত্যি বলতে পরীক্ষাটা ভালোই হয়েছিলো কিন্তু রেজাল্ট এর তো কোনো বিশ্বাস নেই আর আমার কনফিডেন্স টা একদম জিরোর ক্লাসে।কোনো কিছুই কনফিডেন্স নিয়ে শিউর হয়ে বলতে পারি না।

” আমার আম্মুতো এখনই থ্রেট দিচ্ছেরে ফিয়ানা।যদি উলটা পালটা কিছু হয়রে আমাকে কুরবানি করবে”

” ওহ আচ্ছা।যাক টেনশন না করে আল্লাহর নাম নে”

আরও কিছু টুকটাক কথা বলে কল কাটলো জিয়া।আমি আর কি শান্তনার বাক্য বলবো আমার নিজেরই তো শান্তনার বাক্য প্রয়োজন।আর আম্মুই তো আমার গলায় ছুরি ধরে রেখেছে হেরফের হলেই শেষ আমি।

_
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠলাম ১১ টা বাজে রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছি।কাল রাতেও উনাকে ২বার কল করেছি আমি নিজেই কিন্তু কোনো কারণে হয়তো ধরতে পারে নি কোথায় আছে কে জানে।
সকালে উঠতে আম্মু এসে বকতে লাগলো কেনো আমি এতো দেরি করে উঠলাম তারতারি ফ্রেশ হতে একেবারে গোসল সেড়ে নিতে বলেছে তারপর ভালো একটা জামা পরে রেডি হতে।

মনে হলো আম্মুর মনে হয়তো কিছু চলছে কিন্তু কি চলছে কিভাবে বলবো!আম্মু একটা হাল্কা বেগুনি রঙের গাউন বের করে রেখে গিয়েছে।আমি গোসল করে সেইটাই পড়ে নিলাম।

অনেক বাতাস বইছে আজ বর্ষার বৃষ্টি শুরু হবে নাকি!ভেজা চুল্ গুলো বারান্দায় গিয়ে বাতাসে ঝেড়ে ঝেড়ে শুকাতে লাগলাম।
দুপুরের আজান এখনো দেয় নি।
বারান্দা থেকে নিচে কিছু মানুষ দেখতে পেলাম গাড়ি থেকে বেশ ভাব নিয়ে নামছে নিচে দেখলাম নেহাল ভাই এসে উনাদের সাথে সুন্দর ভাষায় সাক্ষাত করে ভিতরে নিয়ে যাচ্ছে।
সেইসবে খেয়াল দিলাম না এখন আপাতত এই নিশাদ নেহাল উনাদের ফেমিলিদের লোকদের দেখার কোনো ইচ্ছে নেই

” ফিয়ানা আপু তুমি কি রুমে আছো?”

ফায়াজের কন্ঠ শুনে বারান্দা থেকেই ডাক দিয়ে বললাম

” বারান্দায় আমি ফায়াজ”

আমার কথা শুনে ফায়াজ মৃদু পায়ে বারান্দায় এসে আমার পাশে দাড়ালো।আমি ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালাম। এতো দিন পর আমার রুমে আসা। কি জন্যে এসেছে তা জানার জন্য বললাম

” কি প্রয়োজন আমাকে খোজার?”

আমার কথার পরিবর্তে ও মুখ বাকিয়ে বলল

” কয়েকদিন পর তোমার বিয়ে হতে যাচ্ছে এখনো এমন করো আমার সাথে পরে দেখবে আমাকেই মিস করবে বেশি”

ওর কথা শুনে বাহির থেকে চোখ ফিরয়ে ফায়াজের দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললাম

” বেশি পাকনামি করছিস কেনো।কে বলেছে আমার বিয়ে হচ্ছে!”

” কে আবার বলবে আজকে তোমায় দেখতে আসছে নিশাদ ভাইদের চাচা চাচিরা এমনেতে নিশাদ ভাইদের পরিবাররা তো তোমাকে পছন্দ করেছেই শুধু উনার আত্নীয় দের দেখাবে।আর তারপর টাটা বায় বায়”

ওর কথা শুনে অবাক দৃষ্টিতে তাকালাম।আমি এতো বলার পরেও আম্মু শুনলো না তারউপর আজকে দেখতে আসবে এসবের মানে কি!
ফায়াজ ওর কথা বলে কিছুক্ষন আমার নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে মুখ গোমড়া করে চলে গেলো।তখনই ঝুম বৃষ্টি নামলো পরিবেশকে ঠান্ডা করে দিতে কিন্তু আমার এই অশান্ত মনকে কে ঠান্ডা করবে বৃষ্টির ও তো এই ক্ষমতা নেই যে আমার মন কে পরিবেশের মতো ঠান্ডা করে দিবে।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here