আমি গোপনে ভালোবেসেছি পর্ব -১৫+১৬+১৭

#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৫
#writer:Mishmi_muntaha_moon

মাথায় ঘোমটা টেনে চোখ নিচু করে বসে আছি।সামনে নিশাদ ভাইয়ের চাচা চাচি আরও একজন পুরুষ, মহিলা বসে আছে হয়তো উনার আন্টি আংকেল।
আন্টি আংকেল টা খুবি ভালো কিন্তু উনার চাচা চাচি টা কেমন যেনো ভাবওয়ালা।
আমাকে দেখে উনার আংকেল আন্টির খুবি পছন্দ হয়েছে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।চাচা চাচির হয়েছে কিন্তু তবুও আরকি বেশি কিছু বলছে না।
আমার এইসবে কিছুই যায় আসে না।আমার তো হাসিবিলীন হয়ে গেছে আর কোথা থেকে নরমাল বিহেভ করবো।কিছুক্ষন আমাকে সামনে রেখেই কথাবার্তা বলল উনারা হয়তো বেশি সময় নিতে চাচ্ছে না। অনুষ্ঠান করেই হবে বিয়ে কিন্তু তারাতারি।

আমি রুমে এসে ঘোমটা ফেলে বসলাম।আম্মুর সাথে উনারা এখনো কথা বলছে আব্বু একটু কথা বলে চলে গিয়েছে।
কি বলে উনারা কবে না কবে বিয়ের ডেট ফেলে দেয় সেইসব জানতে হবে আমার।আর এইসব ক্ষেত্রে ফায়াজ ই কাজের ছেলে।কিন্তু নিশ্চয়ই ঘুষ চাইবে ছেলেটা।

সন্ধ্যার দিকে ফায়াজ বাহির থেকে ঘরে ফিরলেই ইশারা দিয়ে ডেকে আমার রুমে আসতে বলি।

” কি হয়েছে বলো তারাতারি আমার কাছে আবার বেশি টাইম নেই বুঝলে”

ওর ভাব দেখে মুখ বাকালাম। এখনি এতো ভাব কে জানে ওর থেকে তথ্য জানতে চাইলে আরও কতো ভাব দেখায়।তবুও আমার চেষ্টা চালয়ে যেতেই হবে।

” একটা তথ্য জানার ছিলো তোর থেকে। আমার কাছে উম,,, ৩০ টাকা আছে তোকে দিয়ে দিবো যদি বলতে পারিস”

আমার কথা শুনে এভাবে আমার দিকে তাকালো যেনো আমি কি অপরাধ মূলক কথা বললাম।ও ভ্রু দুটি কুচকে বলল

” তুমি আমাকে ঘুষ এর লোভ দেখাচ্ছো!আমার মতো একটা ভালো ছেলেকে খারাপ বানানোর চেষ্টা।”

ওর কথা চোখ ঘুরালাম।তারপর ভাব নিয়ে বললাম

” তোকে আবার আমি খারাপ বানাবো তুই তো আগে থেকেই বদের হাড্ডি”

” যাও আমি চলে গেলাম তোমার তথ্য তুমিই বের করে নেও। ”

ওর চলে যাওয়া দেখে তারাতারি সামনে গিয়ে পথ আটকে বললাম

” আচ্ছা ভাই মাফ কর।তোকে আর জীবনে ঘুষ দেবো না ওই ৩০ টাকা হবে তোর পুরষ্কার বুঝলি এইবার বল উনাদের সব কথা”

” আচ্ছা শোন তাহলে মন দিয়ে আমি একবারই বলবো।আমরা কাল উনাদের সাথে মানে নিশাদ ভাইদের ফেমিলির সাথে বাহিরে যাবো আন্ডারস্ট্যান্ড এর জন্য ইউ নো।সেইখানে নিশাদ ভাইয়ের সাথে তোমাকে একা ছেড়ে দিবে আর আমরা একটু শপিং ও করবো তোমার,,,,”

” স্টপ। আচ্ছা তুই যা আমি বুঝতে পেরেছি।”

আমার হ্যান্ডব্যাহ থেকে ৫০ টাকা বের করে ওর হাতে ধরিয়ে দিতেই ও হাসি দিয়ে নিয়ে রুম থেকে চলে গেলো আর আমি রুমের দরজা অফ করে দিলাম।
কি বলল ফায়াজ কাল আমার ওই নিশাদ এর সাথে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করতে হবে উফফফ এই মুহূর্তে আমার কঠিন জ্বর এসে বিছানায় পরে যেতাম তাহলে আর উনাদের সাথে যেতে হতো না।
মাথায় হাত দিয়ে খাটে বসলাম।আর এই রুদ্ধ সাহেব যে কোথায় উধাও হলো কোনো যোগা্যোগই করছে না দুই দিন ধরে।
আর উনারা কাল আমার বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছে নাকি উফফ কি করবো আমি।

উনারা যেতেই আম্মু বাহিরে গিয়েছে আমার জন্য ড্রেস কিনতে কালকে বাহিরে গেলে আমাকে তো সুন্দর ভাবে যেতে হবে।
বাহিরে জোরে বাতাস বইছে।রিনিঝিনি আওয়াজ হচ্ছে উইন্ডচাইম থেকে কিন্তু তা আমার হৃদয় ছুতে পারছে না।রঙ তুলি নিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে বারান্দার দরজা টা অফ করে চেয়ারে বসে বাহিরের মনোরম দৃশ্য টা আকার চেষ্টা করতে লাগলাম।অনেক দিন পর আকতে বসেছি, মন খারাপ টা যদি খাতায় তুলে ধরতে পারি।

~~~~~~~~~

সকাল হতেই আম্মু আমার হাতে একটা থ্রি-পিস ধরিয়ে দিতেই আমি অবাক হয়ে তাকালাম। কালো রঙের একটা খুব সুন্দর থ্রি পিস টা কিন্তু মন ভালো নেই বিধায় থ্রি পিস টাও দেখে ভাল্লাগলো না।
আম্মু বলল উনারা এখনি নিচে ওয়েট করছে
আম্মুর কথা শুনে রুমে টানানো দেয়াল ঘড়িতে তাকাতেই দেখি ১১ টা ২০ বাজে। এমন সময় যাবে!
বিরক্ত লাগার সত্ত্বেও কিছু বললাম না।ড্রেস পরে রেডি হয়ে চুল টা কাঠি দিয়ে খোপা বেধে নিলাম।তারপর ব্যাগ কাধে নিয়ে বাহিরে যেতেই আম্মুর কাহিনি শুরু আমাকে এভাবে যেতে দিবে না।চুল থেকে কাঠিটা খুলে চুল গুলো ছেড়ে দিলো আমার।
আমি অনেক বলার পরেও শুনলো না।
বিরক্ত হতে আর কিছু বললাম না।

আমাদের গন্তব্যে পৌছাতে পৌছাতে ১ টা বাজলো কারণ আমাদের বেরুতে বেরুতেই ১২ টা বেজে গেছে তাই অন্য কোথাও না গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলো লাঞ্চ এর জন্য নিশাদ ভাইয়ের ফেমিলারা।আমরা সবাই টেবিলে বসতেই আমার পাশে এসে বসলো নেহাল।

” হেই ফিয়ানা!ওহ সরি এখন তো ফিয়ানা বলা যাবে না ভাবি হতে যাচ্ছো আমার।”

কথাটা শুনে সাথে সাথে আমার মাথায় রাগটা চড়া দিয়ে উঠলো।আমি কিছু বললাম না কিন্তু উনার কেচির মতো জবান টা বন্ধই হলো না।

” কিন্তু ভাবি বলতে একদমই ইচ্ছে হচ্ছে আমার জানো কারণ জিজ্ঞাসা করবে না আচ্ছা তোমার জিজ্ঞেস করতে হবে না আমি বলছি বিকস এককালে তুমি আমার ক্রাশ ছিলে তো তাই হাহা!”

উনার কথায় আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না।কঠোর দৃষ্টি জোরা উনার দিকে ফেলে বললাম

” আপনার জবান টা একটু বন্ধ রাখবেন। যত্তসব ফাউল কথাবার্তা শুরু করেছে”

” তুমি রাগ দেখালা ফিয়ানা। আমিতো ভেবেছিলা তুমি শান্ত শিষ্ট একটা মেয়ে। যাক স্মার্ট হওয়া এখনকার দিনে খুবই ইম্পর্ট্যান্ট একটা ব্যাপার।”

উনার কথাকে জাস্ট পাত্তাই দিলাম না কারণ উনি একটা বাচাল ছেলে বলে মনে হলো আমার।এভাবেই মন মেজাজ ভালো না উনার সাথে কথা বলার ইচ্ছা নেই আমার।
হঠাৎ করে নেহাল ভাই উঠে যেতেই নিশাদ ভাই পাশের চেয়ারে বসে পড়লো।আমি তাকাতে একটা হাসি দিতেই চোখ ফিরিয়ে নেই।উফফ কোন ঝামেলায় এসে পড়লাম।

অর্ডার আসতেই সকলে আড্ডা দেওয়ার পাশাপাশি খাওয়া স্টার্ট দিলো কিন্তু আমার পেটে তো আর কিচ্ছুই যাচ্ছে না তাই খেলাম না।সবাই জোর করায় সুপ নিয়ে নারাচারা করতে লাগলাম।

_
সবাই গেছে শপিং করতে আর আমি আছি নিশাদ ভাইয়ের সাথে রাস্তার পাড়ে।আমাদের একলা রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে উনারা সবাই কেটে পড়েছে।ইচ্ছাতো করছে পাশের এই পুরুষ টাকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ির নিচে ফেলে দিতে।

” এমন চুপ করে আছো কেনো আমাকে জিজ্ঞাসা করতে চাও না কিছু?”

” নাহ”

আমার সোজাসাপটা জবাব । উনি কিছুক্ষন চুপ থেকে আবারও বলল

” আচ্ছা বলোতো তোমার কোনো শখ নেই আই মিন হোয়াট ইস ইউর হবি?

” কিছু না”

উনার সাথে আসলে আমার কথাই বলতে ইচ্ছে করছে না।উনি দেখলাম আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।আগ্রহ নিয়ে তাকাতেই দেখি হেসে রাস্তায় তাকিয়ে আছে।হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভাব নিয়ে বললেন

” ও আচ্ছা!আমিতো সিগারেট খাই তুমি দেখেছো। এইটাতে নিশ্চয় কোনো প্রব্লেম নেই তোমার তাই না!”

আমি উনার বিপরীত পাশে মুখ করে রাখলাম কিন্তু কোনো জবাব দিলাম না। উনি ভাবলেন কি করে সিগারেট খাবে আর আমার কোনো প্রব্লেম হবে না।আর উনি খেলেও আমার কোনো প্রব্লেম নেই কারণ আমাদের পথ তো এক নয়।উনিও আর কিছু জিজ্ঞেস করলেন না।

~~~~~~~~~
সকাল হতেই কল আসতেই কাচা ঘুম টা ভেঙে গেলো।কেনো যেনো আজ প্রতিদিন এর মতো গভীর নিদ্রা আসে নি।
ঢুলে ঢুলে উঠে বসে মোবাইল হাতে নিতেই জ্বলজ্বল স্ক্রিনে রুদ্ধ সাহেব নামটা ভেসে উঠতে চোখ পুরোপুরি মেলে গেলো।তারাতারি মোবাইল টা কানে নিলাম কিন্তু কিছু বললাম না।

” মিস ফিয়ানা,,”

উনার মুখের এই শব্দ টা শোনার জন্যই মনে হয় এই জীবন।উনার মুখে ডাকের মতো এতো মধুর মনে হয় আর কারো মুখে শোনাবে না বড়ই বেমানান লাগবে।আমি রিনরিন কন্ঠে বললাম

” এতো দিনে মনে পড়লো এই অস্থির বালিকাকে?”

আমার কথা শুনে মৃদু হাসলো উনি তারপর বড়ই আবেগী কন্ঠে বলল

” সরি মিস ফিয়ানা।আমি ভাবিনি যে কাজের জন্য গিয়ে এভাবে ফেসে যাবো তার উপর মোবাইল টাও পড়ে ভেঙে গিয়েছিলো।”

উনার কথা কঠিন পাথর টা জেনো নিমিষেই ভেঙে গেলো।দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুচকি হাসলাম।

” ইটস ওকে মিস্টার রুদ্ধ সাহেব”

আমার কথা শুনে উনি জোরে হেসে দিয়ে বলল

” আহ তোমার মুখেই এই ডাকটা শুনতে কিন্তু বেশ ভালো লাগে মিস ফিয়ানা”

আরও অনেক কথাবার্তা চলল কিন্তু তার মাঝে আমার মাথা থেকে এতো বড় একটা বিষয় যে কিভাবে বেরিয়ে গেলো দুঃখজনক ব্যাপার তাই ভাবতে পারলাম না!#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৬
#writer:Mishmi_muntaha_moon

আজকে আমার রেজাল্ট দিবে। কালকে দেয়ার কথা ছিলো কিন্তু পরবর্তী তে জিয়া আবার কল করে আজকের কথা বলল।সকাল থেকেই নার্ভাস লাগছে।অস্থির লাগছে নিঃশ্বাসের গতিটাও যেনো কমে গেছে।
সাড়ে ১১ টায় কলেজে থাকতে হবে আর ১২ টায় রেজাল্ট দিবে। এখন ১১ টা বাজে।রেডি হয়ে বসে আছি কিন্তু যেতে ইচ্ছে করছে না।আব্বুও কাজে যাওয়ার আগে আমাকে কিছুটা সাহস জুগিয়েছে ভয় পেতে না করেছে কিন্তু কারো কথায় তো আর ভয় শেষ হবার না।

এতোটাই অস্থির ছিলাম যে ফোনের রিং শুনে কেপে উঠলাম।বুকে থু থু দিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই উনার কন্ঠস্বর শুনতে পাই

” মিস ফিয়ানা তুমি কি কলেজে চলে গেছো?”

” নাহ বাড়িতেই আছে”

” ওহ আচ্ছা তাহলে নিচে চলে আসো আমি ওয়েট করছি”

উনার কথা শুনে কল কেটে ওরনা নিয়ে নিচে গেলাম।আম্মুকে আগেই বলেছিলাম আজকে রেজাল্ট দিবে তার বিপরীতে আম্মু বলল হুম এইবার দেখার পালা কি করেছো এতোদিনে পড়ালেখা নাকি অন্যকিছু!

এমন কথা শুনলে সবাইরই ভয় লাগবে সেইখানে আমিতো একটা নিরিহ বালিকা।কিন্তু অন্যকিছু বলতে কি বোঝালো আম্মু?
সিড়ি দিয়ে নেমে মেইন গেট পাড় করতেই উনাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আজকে উনি আমাদের মেইন গেটের সামনে এসে দাড়িয়েছে। আমি আশেপাশে দেখে নিয়ে উনার পাশে রিকশায় বসে পড়তেই রিকশা চলতে শুরু করে।

নার্ভাসনেস এর কারণে কিছু বলতেই পারছি না।ঠোট কামড়ে খিচ লাগিয়ে বসে আছি।তখনই হাতে ছোয়া পেতেই চটজলদি হাতে তাকাতেই একটি শক্ত হাতের মুঠোয় নিজের হাত আবিষ্কার করলাম।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উনাকে মৃদু কন্ঠে বললাম

” আপনি জানতেন আজ আমার রেজাল্ট দিবে”

আমার কথায় উনি কোমল চাহনিতে তাকিয়ে বললেন

” তোমার ব্যাপার সব তো আমাকে দেখতে হবেই!”

উনার কথা চোখ বুজে থেকে আকাশে তাকালাম। আকাশটা পরিষ্কার ঠেকছে না।কখন বর্ষে পড়ে বলা যায় না।
আমাকে চুপচাপ দেখে উনিও কিছু বললেন না হয়তো আমাকে নিজের মধ্যেই থাকার টাইম দিচ্ছে।

কলেজে পৌছে রিকশা থেকে নেমে গিয়ে সামনে পা ফেলতেই আবার পিছিয়ে নিলাম। ঘুরে উনার দিকে তাকাতেই দেখি উনি রিকশাওয়ালা মামার সাথে কিছু কথা বলে আমার কাছে এসে দাড়ালো।তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে যেতে বলল।আমিও মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম

” দোয়া করুন মিস্টার রুদ্ধ সাহেব”

আমার কথা শুনে উনি আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন

” আমার প্রতিটা দোয়ায় থাকা মানুষটা কিনা আমার থেকে দোয়া চাচ্ছে!”

উনার কথা মেকি হেসে কলেজের ভিতরে চলে গেলাম।দেখি কি হয় আগে থেকে প্রস্তুত নেওয়া হয় নি রেজাল্ট এর জন্য কিন্তু যাই পাই মেনে নিতে হবে মনে মনে নিজেকে নিজে আশ্বাস দিলাম।

_

২টা বাজে কলেজের গেট পেরিয়ে বেরুলাম গম্ভীর মুখে। কঠিন বৃষ্টি পরছে বাহিরে এককথায় ঝুম বৃষ্টি। বেরিয়েই সামনে দেখলাম যেই রিকশা ধরে এসেছিলাম সেই রিকশার সাথেই উনি দাঁড়িয়ে আছে।ভিজে পুরোই টইটম্বুর কিন্তু হাতে একটা ছাতা আমাকে দেখেই মেলে ধরলো ছাতাটা।
আমি কিছুক্ষন অনুভূতি শুন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হেটে রিকশায় উঠে বসে পরলাম ।চোখ দুটো বুজে রিকশাওয়ালা চাচা কে বললাম

” চলেন চাচা”

আমার কথা শুনে চোখ বুজেই বলতে পারবো উনি চিন্তিত হয়ে পড়েছে।আমার পাশে উনি বসতেই রিকশা ছাড়লো। রিকশাওয়ালা চাচা পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে চাইলো যাতে বৃষ্টি থেকে বেচে যাই কিন্তু আমি মানা করি।আমিও ভিজে গেছি দেখে উনি আর ছাতা ধরে রাখলেন না বন্ধ করে দিলেন।আমিও ইতিমধ্যে ভিজে গেছি।বৃষ্টির বড় বড় ফোটা গুলো তীব্র গতিতে পাকা রাস্তায় পড়ায় ঝুমঝাম আওয়াজ হচ্ছে।সাথে সাথে শীতল হাওয়া বইছে।আমাকে এভাবে চুপচাপ থাকতে দেখে উনি হাতটা চেপে ধরে বললেন

” ইটস ওকে মিস ফিয়ানা। নরমাল হও এইসব রেজাল্ট কোনো ব্যাপার না তুমি,,,,”

উনি আরও কিছু বলার আগেই উনার কাধে মাথা রাখলাম। কানের সামনে মুখটা এনে বললাম।

” ডোন্ট ওয়ারি মিস্টার রুদ্ধ সাহেব A গ্রেট এসেছে।জাস্ট কিছুর জন্য A+ আসে নি।”

আমার কথা শুনে উনি আটকে রাখা নিঃশ্বাস টা যেনো এতোক্ষনে ছাড়লো।এই প্রথম আমি উনার এতো কাছে, কাধে মাথা রাখলাম।উনিও আমার কথার বিপরীতে আমার চেপে রাখা হাতটা ছেড়ে দিয়ে গম্ভীর মুখে বললেন

” চিন্তিত ছিলাম আমি মিস ফিয়ানা ”

উনার কথায় বৃষ্টি গতিতে বুজে আসতে চাওয়া চোখকে টেনে খুলে রেখে উনার দিকে তাকালাম। সোজা সামনে তাকিয়ে আছে একদম হাল্কা বেগুনি রঙের শার্টা ভিজে পানি পানি হয়ে আছে।চুল গুলো কিছুদিন আগেই নতুন করে কাটিয়েছে একটু ছোট করেছে কপাল পর্যন্ত তাই সব চুল পিছে ফিরিয়ে রাখার পরেও কিছু চুল বাকা হয়ে কপালেও এসে আছে। ঠোঁট টা হাল্কা কামড়ে ধরে আছে। সেই ঠোঁট বেয়েই পানি গুলো নিচে পড়ছে।
আমি হাল্কা হেসে বললাম

” সরি আসলে আমি শকড ছিলাম।আমার এক্সামের প্রিপারেশন একদম ভালো ছিলো জানেন তো আপনি আপনার কারণে আজ আমি এতো ভালো একটা রেজাল্ট করতে পেরেছি।তাই আরকি মাফ করুন আর অনেল অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।”

আমার দিকে উনি আড়চোখে তাকিয়ে হেসে দিলেন।তারপর মাথায় একবার হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন

” যাক আমার নাক কাটাও নাই তাহলে।কি চাই গিফট হিসেবে বলে ফেলো অফারটা সীমিত সময়ের জন্য। ”

উনার কথা শুনে বাকা চোখে তাকিয়ে বললাম

” লিস্টটা কিন্তু অনেক বড় হয়ে যাবে আমাকে জিজ্ঞেস করলে।”

” আমি যতোটুকু দিতে পারবো তাতেই তোমার চাহিদা এনাফ বুঝলে মিস ফিয়ানা”

উনার কথায় হাসলাম।তারপর আকাশে তাকিয়ে বললাম।

” আইস্ক্রিম আর একগুচ্ছ ফুলরূপে ভালোবাসাই যথেষ্ট আমার গিফট হিসেবে।”

~~~~~~~~~~

বাসায় পৌছে কাপতে কাপতে সোজা রুমে গিয়ে জামা পালটিয়ে চুল মুছে নেই।তারপর হাসি মুখে আম্মুর কাছে যাই আব্বুও বাড়িতেই।দুজোন হয়তো একসাথেই রুমে।অনুমান করে উনাদের রুমে যেতেই দেখি আব্বু চা খাচ্ছে আর আম্মু কাপড় ভাজ করছে।
আমি যেতেই আম্মু আড়চোখে তাকিয়ে আবারও কাপড় ভাজ করতে করতে বললেন

” এইবার বলো কি করেছো?”

আম্মুর কথায় আমি হাসিমুখে আব্বুর পাশে বসে বললাম

” A গ্রেট, আর কিছুর জন্য A+টা আসে নি।”

আমার কথা শুনে আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে হাসি মুখে বললেন

” আলহামদুলিল্লাহ খুব ভালো করেছো তো”

আব্বুর কথায় আমিও হাসলাম।আম্মুও গম্ভীরতর মুখে বললেন

” যাক এইবার একটু ভালোই করেছো কিন্তু আরও ভালো করতে হবে।আর শুধু পড়ালেখায় ভালো হলেও তো চলে না স্বভাব ও ভালো হতে হয় ফেমিলির সাথে সবসময় সততার সাথে চলতে হয়।”

আম্মুর কথায় অবাক হলাম কিসে সততার কথা বলছেন আম্মু।
আম্মু আর কিছু না বলায় আমিও ভাবলাম না, আম্মুর রুম থেকে বেড়িয়ে পড়লাম।
আজ আমিতো বড্ডই খুশি তাই নিজের মুড খারাপ করা যাবে না।বি হেপি।

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই ❤️❤️)#আমি_গোপনে_ভালোবেসেছি
#পর্বঃ১৭
#writer:Mishmi_muntaha_moon

ভালোই চলছিলো সব কিছু এই নিশাদ ব্যাক্তিটাকে ছাড়া।রেজাল্ট ভালো হওয়ার কারণে আব্বু ঘরে ঘরে মিষ্টি বিলীন করলো।আমিও ভেজায় খুশি ছিলাম।এখন আবার নতুন বছরে এক ক্লাস পেরিয়ে নতুন ক্লাসে পড়বো আমার যোগ্যতাও টা যেনো কিছুটা বাড়লো?
সবই কল্পনায় চলতে থাকলো আমার।উনি সেই দিন ই আমার জন্য আস্ত একটা ফুলের তোরা দিয়ে গেলো চকলেট সহ সাথে ছিলো একটা সাদা সুন্দর সুতার কাজের শাড়ি।এইসব কিছুই সুন্দর করে যত্নসহকারে আলমারির সর্বগোপন স্তরে রেখে দিলাম।যখনই প্রথম উনি আমাকে শাড়িতে দেখার আবদার করবে এই শাড়িটা তখন গায়ে জরাবো।

_
তারপরে ১ দিন কাটলো।উনার সাথে দেখা হয় নি কিন্তু কলে কথা হয়েছিলো।
এর মাঝে আম্মু রুমে এসে আমার রুমের বিছানার চাদর তুলে নতুন চাদর বিছিয়ে দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললেন

” ফিয়ানা?শুনো আমার কথা”

আমিও আমার পড়ার টেবিল থেকে আগের বইগুলো নিচে সাজিয়ে রাখতে রাখতে বললাম

“হুম আম্মু বলো শুনছি।”

” আমরা তোমার ফেমিলি, আমি তোমার আব্বু তোমার গার্ডিয়ান। আর নিশাদের সাথে আমরা তোমার বিয়ে কথা ভাবছি তো তুমি যদি কিছু বলতে চাও এখনই বলতে পারো নাহলে বারবার একই সুযোগ দেওয়া হয় না বুঝলে”

আম্মুর কথায় ঢোক গিলে আম্মুর দিকে তাকালাম। আমার কি আম্মুকে উনার কথা বলে দেওয়া উচিত?বলা কি ঠিক হবে?
উনাকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া হয়তো উচিত আমার।আর উনিতো এখনো আমাকে তেমনভাবে আই মিন অফিসিয়াল প্রপোজ করে নি।আম্মুকে রিনিরিনি কন্ঠে বললাম

” আমি এখন বিয়ে করতে চাই না আম্মু”

আমার কথায় আম্মু ছ্যাত করে উঠলো চাদরটা অর্ধেক বিছানো রেখেই রেগে বললেন

” একই কথা আমি শুনতে চাই না ফিয়ানা।কেনো বিয়ে করতে চাও না সেই কারণ জিজ্ঞেস করেছি সেই কারণ যদি না বলো বিয়ে ভাঙার কথাও বলবে না বুঝলে?”

বলেই আম্মু চলে গেলো।আমি তো এখনো হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আম্মুতো একদম রেগেই গেলো।বিয়েটা কি সত্যি হয়ে যাবে নাকি। আর উনার সাথে আমার এতোদিন দেখা হলো কথা হলো আমি একটি দিনও উনাকে আমাদের বিয়ের কথাবার্তার কথা তো বললাম না।উনি কি জানে যে আম্মু অতি শীঘ্রই আমার আর নিশাদ ভাইয়ের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাচ্ছে।

উফ আমি যে কি করবো!

~~~~~~~~
তারপরের দিনই আম্মু এসে আমাকে যা বলল তা শুনে জেনো আমি সেন্সলেস হয়ে পরে যাবো যাবো অবস্থা।
আম্মুর কথামতে আজকে আমার কাবিন তাও আবার নিশাদ ভাইয়ের সাথে।আমি আম্মুর কথার বিপরীতে থেমে থেমে বললাম

” ক,,,,কি বলছো আম্মু।তোমারা তো বলেছিলে অনুষ্ঠান করেই বিয়ে হবে ত,,তাহলে এতো তাড়াতাড়ি কেনো?”

” তোমার দাবানো স্বভাব আমি আর নিতে পারছিনা ফিয়ানা।আমি যা বলেছি তাই হবে বার বার বলবো না।যেভাবে যা আছে সেভাবেই সব হবে কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন নেই।”

” মা,,,,,,”

আমার কথা শুনলো না আম্মু চলে গেলো। আমার চোখের পানিগুলো নিশ্চিত দেখেছে কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দিলো না

আমি নিশ্বাস আটকা অবস্থাতে দ্রুত ফোন নিয়ে উনার নাম্বার ডায়াল করলাম।কেনো যেনো হঠাৎ উনার উপরও রাগ লাগছে।
১ বার রিং হয়ে কেটে গেলো তারপর আবারও কল করলাম রিসিভ করতেই আমি রেগে বললাম

” আমি কি হই আপনার।হয়ে যাক আমার বিয়ে আপনার কি তাই না।আপনি তো এখনো আমাকে অফিসিয়ালি প্রপোজ ও করেন নি আর কোনো কমিটমেন্ট তো দূরের কথা।আমিই লাফিয়ে লাফিয়ে আপনার জন্য বিয়ে ভেঙে দেওয়ার কথা বলছি।আজ আমার বিয়ে বুঝলেন আম্মুরা ধরে আমাকে কাবিন দিয়ে দিচ্ছে আপনি থাকেন দেবদাস হয়ে আর নাহ আপনি দেবদাস হবেন কেনো দেখা যাবে আমার বিয়ে হয়ে গেছে আপনি ও বিয়ে করে সুখেই থাকবেন।”

হিচকি দিয়ে উলোট পালোট কথা বলে রেখে দিলাম উনার আর কথা শুনলাম।কি যে বললাম নিজেও জানি না যা মুখে এসেছি তাই উগলে দিয়েছি।তারপর মোবাইলটা বিছানায় ফেলে দিলাম তারপরে যে একের পর এক উনি কল দিলেন আর রিসিভ করলাম না।বালিশে মুখ গুজে কাদতে থাকলাম

~~~~~~~~~~

দুপুর পেরিয়ে বিকেল হলো বিকেল পেড়িয়ে সন্ধ্যার অন্ধকার চারদিকে ছেয়ে যাওয়ার পরেও যখন নিশাদ ভাইয়ের কোনো ফেমিলির ছিটেফোঁটাও দেখলাম না তখন কিছুটা খটকা লাগলো।উঠে খবরাখবর নিতে যাবো তখনই বেল বেজে উঠতেই নিঃশ্বাস আটকে দরজা ফাকা দিয়ে উকি দেই দেখার জন্য কে এসেছে। নিশ্চয় নিশাদ ভাইয়ের ফেমিলি।এখনি আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হবে।

কিন্তু রুদ্ধ সাহেবকে দেখে জেনো আকাশ থেকে পড়লাম চোখ বড় বড় দরজা মেলে উনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম।আম্মু দরজা খুলেছে।উনাকে দেখে স্বাভাবিক ভাবেই এসে সোফায় বসতে বলে আম্মুও বসে পড়লো।উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থেকে মুখটাকে শক্ত করে সোফায় আম্মুর বরাবর বসে পড়লেন।

উনাকে তো বললাম কতো কিছুই কিন্তু এখন আমারই ভয় লাগছে বুক ধুকপুক ধুকপুক করেই যাচ্ছে চিনচিন ব্যাথাও করছে যেনো।উনি বসতেই উনার বাবা অর্থাৎ লিয়াকত আংকেল এসে গেট পেরিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েছে।আম্মু উনাকে ও বসতে বললে উনি দাঁড়িয়ে মাথাটা ঝুকিয়ে বললেন

” মাফ করো তুমি যা ভাবছো,,,”

উনার কথায় উনি একই তেজে বলল

” আমি এখনো উনাকে কিছু বলিনি বাবা।তো তোমার এমন বিহেভ করার প্রয়োজন নেই।আর তুমি কথা যদি না বলো আমি বলতে বাদ্ধ হবো।”

উনার কথায় লিয়াকত আংকেল অসহায় মুখ করে উনার দিকে তাকাতেই আম্মু বলল

” আপনাদের কিছুই বলতে হবে আমি সব জানি আর তাই আমি ইচ্ছে করে ফিয়ানাকে মিথ্যা বলি যে আজ ওর কাবিন।নিশাদ তো আগেই বিয়ের জন্য না দিয়েছে তোমার মুখ থেকে সব শুনতে চাচ্ছিলাম তাই এইসব করা।”

আম্মুর কথায় আমি হতভম্ব কি বিলে আম্মু উনি এইসব মিথ্যা বলেছে আমাকে!আমার আর রুদ্ধ সাহেবের ব্যাপারে আগে থেকেই জানতেন?আর নিশাদ ভাই কেনো না করে দিলো উনিও কি জানে রুদ্ধ সাহেব আর আমার ব্যাপারে?
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকতেই দেখি উনি ঘার বাকা করে বাকা চোখে কঠিন চাহনি দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি ঢোক গিলে তারাতারি রুমের ভিতরে ঢুকে পড়লাম। উনার চাহনি দেখে ভয় লাগলো। কতোটা ইমবেরেসিং সিচুয়েশন।

আমি দরজায় কান পেতে উনাদের কথোপকথন শুনতে চাইলাম।

” আমি খুবই ইমবেরেসিং এই মুহূর্তে আন্টি কিন্তু সত্যিটা হলো আমি ফিয়ানাকে পছন্দ করি এবং ওকেই বিয়ে করতে চাই আগে বলা হয় নি তার জন্য খুবই দুঃখিত ”

উনার কথা শেষ হতে লিয়াকত আংকেল বললেন

” হুম আগের কথা ভুলে যাও যেহেতু নিশাদ বিয়েতে অমত করেই দিয়েছে তাহলে তোমার মেয়েকে আমাদের হাতেই তুলে দাও”

” দেখুন ভাই আমার কথা এইটা না কথা হলো ওরা দুজন আমাদের পিঠ পিছে যা করলো তা একদমই ঠিক করে নি। আপনি বলেন ওরা দুজন যা করেছে তা কি ঠিক? মানুষের চোখে পড়ে নি”

” আন্টি প্লিজ আপনি এভাবে বলবেন না। আমাদের মধ্যে কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিলো না।আমি আপনাকে যথেষ্ট রেসপেক্ট করি। আর আপনি কি মনে করেন আমি কি ইমমেচুয়ার একটা ছেলে যে রাস্তা ঘাটে প্রেম করে বেরাবো। আপনার চোখে কি উল্টাপাল্টা কিছু পড়েছে সত্যি করে বলুন তো”

উনি তীক্ষ কন্ঠে বলায় আম্মু ঠিকই চুপ হয়।তারপরই লিয়াকত আংকেল এর কন্ঠ আবার ও শুনতে পাই

” রুদ্ধ তুমি এখন যাও আমি তোমার আন্টির সাথে কথা বলছি।”

আংকেলের কথায় উনি উঠে চলে গেলেন ধপাধপ পায়ে।আর আমিও দ্রুত পায়ে বারান্দায় গিয়ে উনার চলে যাওয়া দেখলাম।একদিনে কি থেকে কি হয়ে গেলো!উনি একটি বারও আমার বারান্দায় ফিরে তাকালো না।হাটার গতিটাও উনার বড্ডই দ্রুত।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here