অবাধ্য প্রেমের গল্প পর্ব -০৫

#অবাধ্য_প্রেমের_গল্প (পর্ব ৫)
#মেহেদী_হাসান_রিয়াদ

শেষ বিকেলে শীতল হয়ে উঠলো প্রকৃতি। সেই সাথে রিক্সা সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাথে কানের পাশের চুল গুলোও উড়ছে আরশির। রিদ তার গা ঘেসে বসে আছে। এক হাত আরশির পেছন দিয়ে ঘুরিয়ে তার বাহু হালকা শক্ত করে নিজের সাথে ধরে আছে। সেই সাথে তাকিয়ে আছে তার বাস্তব পরীর অবাধ্য হয়ে উড়ে বেড়ানো চুল ও কিছুটা লজ্জা মিশ্রিত মুখ খানার দিকে। এই জন্যই গাড়ি রেখে রিক্সায় উঠা। কারণ ড্রাইবিং করলে প্রিয় মানুষটার এমন সৌন্দর্য উপভোগ করার যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। রিদের এমন হাত দিয়ে আবদ্ধ করে রেখে আবদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকাটা, তাও আবার এমন রাস্তার মাঝে। আরশির কাছে বিষয়টা অবশ্যই লজ্জা জনক।
শীতল পরিবেশে চলন্ত রিক্সায় থাকায় অনেকটা শীতল করে তুলছে নিজেকেও। উড়না টা গায়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে নিল আরশি। রিদ তা লক্ষ করে হাতের ভাজে থাকা জেকেটটা আরশির পেথন থেকে মেলে ধরে বলে,
“এটা পরে নাও।”
আরশি তার দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে কিছুটা অসম্মতি জানিয়ে বলে,
“থাক লাগবে না, ঠিক আছি আমি।”
যদিও তার ঠান্ডা লাগছে। রিদ কিছু না বলে এবার নিজেই তার হাত গুলো ধরে পরিয়ে দিল। আরশি তার দিকে চেয়ে শান্ত ভাবে বলে,
“আপনার ঠান্ডা লাগবে না? তখন কি পরবেন?”
রিদ স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“এসব ভাবনা থেকে যেটা আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমি সেটাই করেছি। আর আমার কাজে প্রশ্ন করাটা আমার আমার পছন্দ না।”
অতঃপর সামনের দিকে চেয়ে বলে,
“মামা একটু আস্তে চালান। সুন্দর মুহুর্তটা আরো কিছু সময় থেকে যাক।”

সন্ধা পেড়িয়ে প্রায় রাত ঘনিয়ে এলো। আরিশা আপুদের বাড়ির সামনে এসে দাড়ায় গাড়ি। রিদ গাড়ি থেকে নেমে অপর পাশে এসে দাড়ায়।
“এই যে ম্যাম, আমি আপনার পারসোনাল ড্রাইভার নই যে সব সময় দরজাও খুলে দিব।”
গাড়ির দরজা খুলে মুখে কিছুটা হাস্যজ্জল ভাব রেখে কথাটা বলে রিদ। তা শুনে কিছুটা হাসলো আরশিও। চুপচাপ নেমে গিয়ে নিজের মাঝে বিড়বিড় করে বলে,
“ড্রাইভার তো শুধু গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করে। আপনি যে আমার জীবনটাই নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছেন।”
রিদ পেছনের সিট থেকে পার্সেল গুলো বের করে বলে,
“জীবন ভালোবেসে নিয়ন্ত্রণ করার মতো একজন মানুষ থাকাটাও ভাগ্যের ব্যাপার।”
কিছুটা চমকালো আরশি। বিড়বিড় করে কথা বললেও কি বিপরীত মানুষটা তা শুনতে পায়? নাকি মানুষটা সব সময় আমার সবকিছুতে গভির মনোযোগ রাখে? কিছু বলার আগেই আরশির হাতে পার্সেল গুলো দিয়ে বলে,
“আরিশা আপু নিশ্চই অপেক্ষায় আছে।”
আরশি তা হাতে নেওয়ার আগে বলে,
“একটু দাড়ান, আগে জ্যাকেট টা খুলে নিই। এগুলো হাতে নিয়ে আর খুলতে পারবে না।”.
“আমি কি বলেছি খুলতে?”
রিদের স্বাভাবিক প্রশ্ন। আরশি স্বাভাবিক ভাবে বলে,
“এটা তো আমার না।”
রিদ তার দিকে চেয়ে বলে,
“আমার আর তোমার মাঝে পার্থক্য খুঁজছো? এখনো আমায় মানিয়ে নিতে পারছো না?”
আরশি মাথা তুলে তার দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে মানুষটার কথায় কেমন জানি একটা অদ্ভুত আবেগ মিশে থাকে। যা শান্ত মনকেও অশান্ত করে তোলে। প্রতি উত্তরে কিছু বলতে পারলো না আরশি। রিদ পূনরায় বলে,
“ওকে ফাইন, পরে এসে নিয়ে যাব আমি। তবে এখন খুললে ঘরে অব্দি যাওয়ার সময়টা নিশ্চই তোমার ঠান্তা লাগবে। এখন থেকে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার অধিকার টা আমি তোমায় কখনো দিব না। কারণ এখন পুরো তুমিটাই আমার।”
আরশি নিশ্চুপ হয়ে আছে। রিদের বাড়িয়ে দেওয়া পার্সেল গুলো হাতে নিল চুপচাপ। আরশির দুই গালে হাত রেখে আলতো করে কপালে চুপু একে দিল সে। শারা শরির কেঁপে উঠল আরশির। কারণ এর আগে এমন কিছু কখনোই ঘটেনি। প্রথমবার এমন কোনো কাজ করেছে সে। বকেছে, ভালোবেসেছে, কখনো রেগে গিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেছে। তবে এমনটা কখনো করেনি।
যেন বলার মতো কিছুই তার শব্দভান্ডারে নেই। শুধু ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে রিদের দিকে। রিদ খুব শান্ত ভাবে বলে,
“এই শীতের সন্ধাটা আমাদের প্রথম চুমুর শাক্ষি হয়ে থাকুক।”

সন্ধার আগে থেকেই রিদের মা বারংবার কল দিচ্ছে বাসায় যাওয়ার জন্য। আসছি বলার পরও বারংবার কল দিচ্ছে একটু পর পর। মা কখনো এভাবে ঘন ঘন কল করে না। আজ কি হলো কিছুই বুঝতে পারছে না সে। তাই তো আরশিকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়েই চলে গেল সে। আরিশা আপুর সাথে দেখাও করেনি আর।
বাসায় ফিরেই দেখে বাবা সোফায় বসে আছে গম্ভির হয়ে। পাশে মাও বসে আছে অন্য সোফায়। দুজনই নিশ্চুপ হয়ে আছে। মা শুধু একবার বাবার দিকে তাকাচ্ছে একবার রিদের দিকে।
তাদের সামনে এগিয়ে যেতেই বাবা গম্ভির ভাবে বলে,
“কোথায় ছিলে?”
বাবার প্রশ্ন করার ধরণ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কিছু একটা নিশ্চই হয়েছে। রিদকে চুপ থাকতে দেখে বাবা পুনরায় বলে,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোমাকে।”
রিদ শান্ত ভাবে বলে,
“বিকেলে ফ্রি ছিলাম তাই একটু ঘুরতে বের হয়েছিলাম বাবা।”
“সাথে কে ছিল।”
রিদ এবার বুঝতে পারছে বাবার এমন গম্ভির হয়ে থাকার কারণ কি। তাই শান্ত ভাবে উত্তর দিল,
“আরশি।”
ছেলের সহজ স্বীকারোক্তি দেখে বাবা এবার কিছুটা শান্ত ভাবে বলে,
“তোমাদেরকে কি নিষেধ করা হয়নি? বলা হয়নি কোনো সম্পর্ক যেন অবশিষ্ট না থাকে?”
রিদ নিচের দিকে তাকিয়ে থেকে বলে,
“হার্ট-এর সাথে সম্পর্ক না থাকলে মানুষ বেচে থাকতে পারে না বাবা।”
রিদের বাবা আর কিছু বললো না। নিশ্চুপ হয়ে ছেলের দিকে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। একবার চোখ বুজে নিয়ে পরক্ষণে বলে,
“এখন তুমি কি করতে চাইছো?”
“আমি তাকে সারা জীবনের জন্য এখানে নিয়ে আসতে চাইছি। এখন শুধু একটা মানুষের সম্মতি দরকার। আর সেই মানুষটা হলো আমার বাবা।”
“পালিয়ে বিয়ে করার সময় তো বাবার সম্মতি নাও নি।”
রিদ চমকে উঠলো অনেকটা। এটা আরিশা আপু আর রিদের দুই বন্ধু ছাড়া আর কারো জানার কথা না। বাবার কান অব্দি পৌছালো কিভাবে? আরিশা আপুর সাথে ফোনে মায়ের মথা হয় মাঝে মাঝে। তাহলে কি আরিশা আপু,,,,। ভাবতেই মায়ের দিকে তাকালো রিদ। মা ইশারায় তাকে শান্ত থাকতে বললো।
রিদ শান্ত ভাবে বলে,
“আমি অন্যায় করেছি বাবা। আরশির বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে শুনে ঠিক থাকতে পারিনি। হয়তো জীবনে এই প্রথম বার তোমাদের সাথে খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি বাবা। আমি না তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবো, আর না আরশিকে ছাড়া অন্য কাউকে মেনে নিতে পারবো।”
বাবা এবার শান্ত ভাবে বলে,
“যদি তুমি তাকে পেয়ে সুখি হতে পারো, আর সে যদি তোমার সাথে আসতে চায় তাহলে নিয়ে আসো তাকে।”
চমকে বাবার দিকে তাকালো রিদ। এমনটা হয়তো তার ধারণাতেই ছিল না। হকচকিয়ে বাবার পাশে ফ্লোরে বসে পড়ে বলে,
“সত্যি বাবা?”
বলেই মায়ের দিকেও তাকালো। মাও কিছুটা মুচকি হেসে মাথা নাড়ালো।

আরশির বিষয়ে রিদ মায়ের কাছেই সব শেয়ার করতো। কখনো কঠিন কঠিন কথা বলতো। যা নিয়ে স্বামীকে একটু একটু করে বুঝিয়েছে রিদের মা। তাছাড়া আজ বিকেলে যখন সে নিজেই ফুল দোকানে দুজনকে একসাথে দেখেছিল, তখন মনে হয়েছে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি মানুষ তারা। যেন দুজন দুজনের কাছে পরিপূর্ণ সুখে থাকার কারণ। কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে থেকে চুপচাপ সেখান থেকে চলে গিয়েছিল সে। জোর করেই সুখি হওয়া যায় না। মনেরও একটা বিষয় আছে।

রাতের বেলায় হটাৎ কলিং বেল এর শব্দে চমকে উঠে আরশি ও আরিশা দুজনই। রাতের খাবার শেষ করে সবে মাত্র গল্প করতে বসেছিল তারা। আরিশা উঠে বলে,
“তুই বস, আমি দেখছি।”
বলেই দরজার দিকে এগিয়ে যায় সে। দরজা খুলে দেখে বাইরে বাবা দাড়য়ে আছে। কিছুটা বিমুঢ় হয়ে যায় আরিশা। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,
“বাবা তুমি, হটাৎ? আসো ভেতরে আসো।”

আরিশার কথায় পাত্তা না দিয়ে হনহন করে ভেতরে ঢুকে বাবা। বাবাকে দেখেই বসা থেকে উঠে দাড়ায় আরশি। কিছু বুঝার আগেই ঠাস করে একটা চ’র পড়ে যায় তার গালে। ছিটকে কিছুটা দুড়ে গিয়ে পড়ে সে। বাবাকে দেখে খুব বেশিই রাগি মনে হচ্ছে। পাশে গালে হাত দিয়ে ভয়ার্ত চেহারায় দেওয়ালের সাথে মিশে দাড়িয়ে আছে আরিশা। কারণ বাবাকে শেষ কবে এভাবে দেখছে ঠিক মনে পড়ছে না তার।

To be continue………………

~ এবার থেকে কন্টিনিউ পাবেন ইন’শা আল্লাহ্।

  • LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here