দ্বাবিংশতি পর্ব -০৯

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_৯

১৬.

বসু সাহেব অনেক চেষ্টার পরও কল ধরতে পারলোনা।তার হাত মোবাইল পর্যন্ত পৌছালো না।রাই জানে সেক্রেটারি বসু অনেক বড় কিছু হলেই একমাত্র তার কল ধরে না।তাই সে ইন্দ্র আর শুদ্ধকে বসু সাহেবকে খুজেতে পাঠিয়ে দিলো।আর নিজে চৌধুরী বাড়ির দিকে রওনা হলো।

রাস্তায় সে তার বাবা-মা,ফাইজাকে অনেক কল দিলেও তারা কল ধরলোনা।আসলে বিয়ের আসরের গানের শব্দে রাইয়ের কলের শব্দই শোনা যাচ্ছিলো।এদিকে মাঝ রাস্তায় ঘটলো আরেক বিপত্তি।

সায়ান আগে থেকেই রাইকে আটকানোর জন্য রাস্তায় তার লোকজন ঠিক করে রেখেছিলো।তারাই রাইয়ের গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করতে করতে রাইয়ের সাথে মারামারি করলো।রাই নিজের গার্ডসদের এসব সামলাতে দিয়ে নিজে এগিয়ে গেল।

এতক্ষণে ফাইজা কবুল বলে ফেলেছে।এখন শুধু কাবিনামায় সাইন করার পালা।কিন্তু তার একটাই কথা সে সাইন রাই আসার পরে করবে।কিন্তু রাস্তার ট্রাফিকজ্যাম এর কারণে রাইয়ের আসতে কিছুটা দেরি হয়ে গেল।আর সবার বলাবলিতে ফাইজাও সাইন করতে শুরু করলো।ফাইজা নিজের নামে প্রথম দুই অক্ষর লিখতেই কেউ ব্লাইন্ড ফায়ার করলো।

বিয়ের আসরের সবাই গুলির আকস্মিক শব্দে ছোটাছোটি শুরু করে দিলো।সায়ান তার মানুষদের দিকে তাকাতেই সায়ানদের বাড়ির সবাই চৌধুরী বাড়ির সবাইকে ঘিরে দাঁড়িয়ে রইলো।রাই ভেতরে একপ্রকার দৌড়ে এসে দেখলো ফাইজার মাথায় সায়ান ক্যালিবার ধরে রেখেছে।

রাই সামনে এগিয়ে আসতেই সায়ান চিৎকার করে বললো,

”তুই আর এক পা এগিয়ে আসলে তোর মা-বোনসহ এখানকার সবাই মরবে।”

রিজভী সাহেব একথায় তার পেছনে তাকাতেই দেখলো আফজাল খান তার দিকে নিজের পারসোনাল বন্দুক ধরে রেখেছে।সে বুঝতে পারলোনা আসলে এখানে হচ্ছে কি?আর রাইকেই বাভেতরে আসতেই দেওয়া হচ্ছেনা কেন!

সায়ান একপ্রকার জোরপূর্বক ফাইজাকে দিয়ে কাবিনামায় সাইন করিয়ে তাকে তার বাসায় নিয়ে গেল।রাই জানে সে একা সবাইকে বাচাতে পারবেনা।তাই তার অনিচ্ছাসত্ত্বেও তাকে ফাইজা আর সায়ানকে যেতে দিতে হলো।

১৭.🐙

ফাইজাকে নিয়ে সায়ানের পরিবার চলে যেতেই রাইয়ের বাবা তার কাছে ছুটে এলো।

“এসব কি হচ্ছে রাই?” (মিসেস চৌধুরী)

“আসলেই,রাইমা!এগুলো কি হলো।ওরা ফাইজাকে গান পয়েন্টেই বা কেন রাখলো?”

“আমি সব বলছি বাবা আমাকে একটু সময় দাও।তোমরা ভেতরে চলো।”

রাই তার বাবা-মাকে নিয়ে বাড়ির ভেতরে গেল।এরপর বলতে সে তার বাবাকে প্রশ্ন করলো।

“কেন মে/রে ফেলেছ তুমি সায়ানের বাবা সামির খানকে?বাবাই।উত্তর দাও!”

দীর্ঘ সময় পরে হলেও নিজের মেয়ের মুখ থেকে সামিরের নাম শুনে চোখের কোণায় পানি জমলো রিজভী সাহেবের।সে তার মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“এসব কি বলছিস রাই?আমি সামিরকে কেন মারতে যাবো?সামির আমার প্রাণের বন্ধু ছিলো।ও আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের মৃত্যুকে আপন করে নিয়েছিলো।আর এসবের সাথে সায়ান আর ফাইজার বিয়ের কি সম্পর্ক?”

সায়ানের বদ্ধ ধারণা তুমি তার বাবার সম্পত্তি হরণের উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে মে/রে ফেলেছ।আর এই সম্পত্তির একমাত্র হকদার সে।তুমি তার বাবাকে ধোকা দিয়েছ।তাই সে ফাইজাকে দিয়ে এর প্রতিশোধ নিতেই এত কিছু করেছে।তোমাদের আমি কত বার কল দিয়েছি তোমরা একটা বারও আমার কল ধরতে পারলে না?

রিজভী সাহেব রাইয়ের কথা শুনে তার নিজের কথা বলার বা প্রতিবাদ করার ভাষা হারিয়ে ফেললেন।আর রাইয়ের মা রাইয়ের হাত ধরে বলতে লাগলো,

“আমার ফাইজাকে বাঁচা,রাই।কিছু কর মা!আমি তোর কাছে কখনো কিছু চাই নি।তোকে হারানোর পর ওই একমাত্র সম্বল ছিলো যাকে আঁকড়ে ধরে আমি এতকাল বেঁচে ছিলাম।”

রাই নিজের মাকে শান্ত হতে বলে শুদ্ধকে কল দিলো।

১৮.🐙

“হ্যালো,শুদ্ধ?”

“রাই?ফাইজা ঠিক আছে?তুমি ঠিক আছ?”

“কিছুই ঠিক নেই।সায়ান ফাইজাকে নিয়ে নিজের বাসায় চলে গেছে।তুমি কোথায়?সেক্রেটারি বসুকে পেয়েছ?”

“হুম,ওনাকেই হাসপাতালে ভর্তি করে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।ওনার অবস্থা অনেক খারাপ।প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে।”

“এখন?”

“সমস্যা নেই ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে ডাক্তাররা।তুমি চিন্তা করোনা।আমি আছি এখানে।তুমি ওইদিকটা সামলাও।”

রাই নিজের বাবা-মাকে কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিতে না করে।

”তোর কাছে কোনো প্ল্যান আছে,রাই?”

”হুম,তা তো আছেই।তার আগে তুমি আমায় তোমার আর সায়ানের বাবার সম্পূর্ণ কাহিনিটা আগে বলো।এরপর দেখি আমি কি করতে পারি।”

___রিজভী সাহেব বলতে শুরু করেন,

সামির আর আমি স্কুল থেকেই একসাথে ছিলাম।ওর বাবা অরুণ আঙ্কেল অনেক প্রভাবশালী আর ধনী ছিলেন।আর তোর দাদা রাজনীতিবিদ ছিলো।আমরা বন্ধু হওয়ার প্রায় অনেক সময় পর আমরা জানতে পারি আমাদের বাবারাও বন্ধু মানুষ।সেই থেকেই আমাদের বন্ধুত্বও বাড়তে থাকে।সামির এর বড় ভাই আফজাল ভাই অনেক টেলেন্টেড হওয়ায় সে তখনি বিদেশে পড়ালেখা করতে চলে যায়।

আর এদিকে হঠাৎই অরুণ আঙ্কেলের ব্যবসায় ধস নেমে আসে।আমি আর সামির অনেক ট্রাই করি সব কিছু সামলানোর।আমি বাবার থেকে টাকা নিয়ে ওদের কোম্পানিতে ইনভেস্ট করি।আমার নিজস্বও কিছু জমানো টাকা ছিলো সেই সব নিয়ে আমরা সব কিছু আবার শুরু করি।ততদিনে অরুণ আঙ্কেল আমাদের ছেড়ে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন।

আমাদের ব্যবসায় উন্নতি হতে শুরু করে ঠিক তখন সামিরের সায়ানের মার সাথে দেখা হয়।এরপর বিয়ে করে তারা।বছর ঘুরতেই সায়ানের জন্ম হয়।আমরা অনেক সেলিব্রেট করি।

সায়ানের যখন তিনবছর তখন বাবা আর সামিরের চাপে আমারও বিয়ে করতে হয়।এরপর তোদের জন্ম হয়।তোকে তো রামিশা আপু নিয়ে চলে যায়।আমি ভেঙে পড়তে থাকি দিনদিন।বাহিরে যেতাম না ঠিক মত; কারো সাথে কথা বলতাম না।

আমার এই অবস্থা প্রায় দুইবছর ছিলো।এরপর একদিন তোর মা আর সামির আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য একটা পাহাড়ে ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।সায়ান,সায়ানের আম্মু,ফাইজা আর তোর মা রা দূরে ক্যাম্প বানাচ্ছিলো।আর সামির আমাকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলো।হঠাৎ কোথা থেকে একটা কালো কাপড় পরিহিত মুখে মাস্ক পরণে লোক আসে।আর আমার দিকে বন্ধুক তাক করে ধরে।সামির এই দৃশ্য দেখে দ্রুত আমাকে জড়িয়ে ধরে।আর লোকটা সাথে সাথে গুলি চালায়।আমি তো বেঁচে যাই কিন্তু সামিরকে চিরজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলি।

“এরপর?”

এরপর কিছুইনা!সায়ানের মা সায়ানের বাবার শোকে পাগল হয়ে যায়।কিছুদিন পর সেও মারা যায়।আমি চেয়েছিলাম সামিরের মৃত্যুর জন্য কেস করতে কিন্তু সায়ানের মা সায়ানের বাবার শরীরটাকে আর ক্ষতবিক্ষত করতে চাননি।তাই সামিরের দেহটাকে ওইভাবেই কবর দেওয়া হয়।

সায়ানকে আমি বাসায় নিয়ে আসি।নিজের ছেলের মত বড় করতে থাকি।দুইমাস পর আফজাল ভাই দেশে আসেন।এরপর সায়ানকে নিয়ে যান।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here