#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_৪৮
(কপি করা নিষেধ)
….
বাইরে প্রভাতের আলো ফুটতে শুরু করেছে।জানালার কাঁচ গলে আলো এসে ঠিকরে পড়ছে চোখে মুখে।মোবাইলের বিপ বিপ আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় ছায়ার। চোখের উপর আঙুল দিয়ে মুখ ঢাকে। পিট পিট করে চোখ খুলে মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে রিয়ার নাম্বার ভাসছে।ছায়া চট করে উঠে বসে।রিসিভ করেই কানে ধরে।ঠিক তখনই কানে ভেসে উঠে হকচকিত কন্ঠস্বর।
-হ্যালো ছায়া কাউকে না জানিয়ে চলে এলি কেনো?কাল আমি তোদের বাড়ি গিয়েছিলাম জরুরি দরকারে।
ছায়া কন্ঠে উৎকণ্ঠা নিয়ে জিজ্ঞেস করে অস্থিরচিত্তে,
-জরুরি দরকার?
-হ্যাঁ।দাভাইয়ের কেইসটা রিওপেন হয়েছে।বাবা আর মা খুবই ভেঙে পড়েছে।জানিস ছায়া বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখিনি।কাল মাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদেছে। দাভাই ছিলো বাবার আদর্শ।সেই দাভাই যখন জাত কূল ত্যাগ করলো তখন বাবা মনে খুব আঘাত পেয়েছিলো।তাই রাগের মাথায় দাভাইকে মেরেছিলো।দাভাই মারা যাবার দিনও বাবা কারও সাথে কথা বলেনি।পাথরের ন্যায় নিজেকে শক্ত রাখার মিথ্যে চেষ্টা করছিলেন।কিন্তু কাল যেনো সব ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে গেলো।
ছায়া নিস্তব্ধ হয়ে বসে রয়।নিস্তেজভাবে বলে,
-আংকেল আন্টির ভরসা এখন শুধুমাত্র তুই।খেয়াল রাখিস ওদের।
রিয়া ফুঁপিয়ে উঠে।
-ছায়া কেইস কোর্টে তোলা হবে ৩ দিন পর।তদন্ত চলছে।
বৃষ্টির পর রোদ উঠেছে।এ যেনো বহু আকাঙ্ক্ষিত রৌদ্র।বাইরে এক অদ্ভুত ধরনের স্নিগ্ধতা।ভিজে গাছের পাতার পানিতে রোদ পড়ে যেনো ঝলঝল করছে।আবার মাটির পানিগুলোতে সূর্যের প্রতিচ্ছবি প্রতিফলিত হচ্ছে।জানালার কার্নিশ ঘেষে তীর্যক সেই আলোকরশ্মি ছায়ার চোখে এসে লাগছে।ছায়া চোখ বন্ধ করে ফেলে।কিয়ৎক্ষণ পর চোখ আবারও খোলে।সেই চোখ যেনো কুয়োর অতল জলের মতো শান্ত,স্থির।নেই কোন শীঘ্রতা।ছায়ার মনে বয় প্রশান্তির পবন।অরূপদা ন্যায্য বিচার পেতে চলেছে যে।ছায়া ফোনটা কেটে দেয়।তার এখন কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।সে যেনো সমুদ্রের অতল গহীনে ডুব দিলো।যেইখানে কোন মানুষ নেই,নেই কোন কোলাহল।আছে শুধু নিস্তব্ধতা, নির্জনতা,প্রশান্তি।ছায়া হাত মুখ ধুতে যায়।একবার হসপিটালে যেতে হবে।একটু চিকেন স্যুপ করে নিলে কেমন হয়?কিন্তু বাইরের খাবার এলাউড না আপাতত।
লোকটা তার জন্য হসপিটালে পড়ে আছে।তারও তো কিছু দায়বদ্ধতা আছে।তার মন তাকে যেনো পালটা প্রশ্ন পাঠায় শুধুই কি দায়বদ্ধতা? নাকি আরো কিছু আছে।ছায়া আর কিছু ভাবতে চায় না।সব যত তাড়াতাড়ি মিটে যাবে ততো তাড়াতাড়ি সে দায়মুক্ত। রেডি হয়ে যেতেই দেখে নীলা চোখ কচলাতে কচলাতে তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।ছায়া হাতে হাত ঘড়িটা পড়তে পড়তে বলে,
-এতোক্ষণে ঘুম ভাঙলো?আমি একটু হসপিটালে যাচ্ছি।
নীলা যেনো ভুল কিছু শুনেছে।তরান্বিত বেগে এসে ছায়ার হাত ধরে বলে,
-ক্লাস তো নেই।ছুটি চলছে আমাদের।তবে?
-অরন্য স্যারকে দেখতে যাচ্ছি।
নীলা যেনো এইবার আকাশসম বিস্মিত হলো।তবে বিস্ময় কাটিয়ে সাথে সাথেই বাথরুমে দৌঁড় দিলো।যেতে যেতে চিল্লিয়ে বললো,
-এই ছায়ু আমাকে নিয়ে যা প্লিজ।আমিও স্যারকে দেখতে যাবো।গিভ মি ফিফটিন মিনিটস প্লিজ।
ছায়া জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে।হাহ!
…..
-কেমন আছেন ছায়াকরী।
দূর্বল অরন্যের কণ্ঠস্বর। ঢুলু ঢুলু চোখ যেনো এখনো ঘুমের রেশ কাটেনি।বেশি পাওয়ারের ঘুমের ওষুধ খাওয়ার রিয়েকশন এটা।কিন্তু ছায়াকে সামনে দেখেই
যেনো তার দুই চোখ জুড়িয়ে যায়।
-আমি ভালো আছি।কিন্তু আপনাকে দেখে বেশ অসুস্থ লাগছে।চোখ মুখ হলুদ হয়ে আছে কেনো?
অরন্য প্রসন্ন হাসে।ক্ষীণকাল তাকিয়ে থাকলো নিনির্মেষ।
-একটু দূর্বলতার জন্য আর ওষুধের সাইড ইফেক্ট।দেখলেন ছায়াকরী ওষুধেরও সাইড ইফেক্ট আছে শুধু আমার ভালোবাসাই আপনার মনে আজও ইফেক্ট ফেলতে পারেনি।এখানে এসেছেন তা শুধুই দায়বদ্ধতা তাই না?
ছায়া নিজের চোখ লুকায় অরন্যের থেকে।কি বলবে সে।তার উত্তর কি আদৌ জানা আছে?
অরন্য স্মিত হাসলো।ভেতরের অবাধ্য অনুভূতিগুলো মাথা চারা দিয়ে উঠছে।ছায়ার নিস্তব্ধতা যেনো অরন্যের বক্ষপিঞ্জরায় সজোড়ে আঘাত করছে।
-আপনার এই চুপ থাকার অভ্যাস কবে যাবে বলেন তো?কিছু বললেই মুখে তালা দিয়ে বসে থাকেন।সেই তালা খোলার চাবি কিন্তু জানি আমি।কিন্তু সেইটা প্রয়োগ করছি না আপাতত। কিন্তু প্রয়োগ যে করবো না সেটাও কিন্তু না।আমি আবার এতো সাধু সন্ন্যাসী নই।এখন একটু একটু সহ্য করে নিচ্ছি কিন্তু বিয়ের পর প্রতিদিন প্রতিদিন প্রয়োগ করবো ।
ছায়া অদ্ভুত ভাবে চায়।দেখে মনে হচ্ছে গা জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।চোখ মুখ কেমন হয়ে আছে ঘোলাটে লাল।এতো অসুস্থতার মধ্যেও মুখ দিয়ে কথার খই ফুটছে।
-সেটা কি?
অরন্যের চোখ দুটো চকচক করে উঠে।একটা হাল্কা কাশি দিয়ে গলা সাফ করে গলার স্বর নিচু করে ছায়ার একটু কাছে এসে বলে,
-ঠোঁট কামড়ানো চুমু।
ছায়ার শরীর শিউরে উঠে।চোখ বড় বড় করে তাকায় অরন্যের পানে।নিচের ঠোঁটটা কামড়ে ধরে। অরন্য মিটিমিটি করে হাসছে।ছায়া ফুসলে উঠে।হনহন করে বেরিয়ে যায়।তখনই অরন্য স্বর কিছুটা উঁচু করে বলে,
-আপনি এতো হট হয়ে যাচ্ছেন কেনো?আমার কিন্তু স্পাইসি ফ্লেভার আরো বেশি পছন্দ।
ছায়া থামে কিছু মুহুর্তের জন্য।তার শরীর জ্বলছে রাগে।পিছনে ফিরে অরন্যকে শাসাতে ভুলে না।
….
-নীলা তুমি তো তোমার বান্ধবীর ভাসুর বা দেবরের বউ হবে রাইট?
নীলা চোখে মুখে উৎফুল্লতা ফুটিয়ে তুলে।হাঁ সুচক মাথা নাড়ায় তিন বার করে উপর নিচে।
আকাশ স্বশব্দে হেসে ফেলে নীলার কান্ড দেখে।
আকাশ এইবার শার্টের কলার ঠিক করতে করতে ভাব নিয়ে বলে,
-আমি ভাবীর একমাত্র দেবর।
নীলা কপালে সূক্ষ্ম ভাজ ফেলে তীক্ষ্ণভাবে চায় আকাশের দিকে।বুঝার চেষ্টা করে আকাশের কথা।কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে বলে উঠে,
-ভাবীর দেবর?
আকাশ ভ্রু দুটো উঁচু করে ঠোঁট টাকে বাকিয়ে মাথার চুলে হাত গলিয়ে ভরাট গলায় বলে,
-ছায়া ভাবীর একমাত্র দেবর আমি।আর অরণ্য চৌধুরীর একমাত্র ভাই আকাশ চৌধুরী । আমাকে ভাইয়ার কেবিনের বাইরে দেখেও বুঝতে পারলে না?
নীলা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো।সব মাথার উপর দিয়ে গেলো।হৃদপিন্ডের ধুকপুক আওয়াজ কানে এসে বারি খেলো।
-অ্যাাাাহ!
-অ্যাাাহ নয় হ্যাঁ।
নীলার অধরে যেনো হাসি ফুটে উঠে।বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই হাসি।তার স্বপ্ন বুঝি সত্য হয়েই যাচ্ছে।ভাবা যায়!
ছায়া কেবিনের বাইরে গিয়ে দেখে নীলা দাঁড়িয়ে আছে।একজনের বেশি ভিজিট করতে দেয় না তাই ছায়া আগে গিয়েছিলো।নীলা আকাশের সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে মুচকি মুচকি হাসছে।ছায়া কপাল কুচকায়।এই মেয়ে কি তবে প্রেম করছে কিছু দিন আগেই না সাপে নেউলের সম্পর্ক ছিলো।মেঘা আর এই নীলা এক জলের মাছ।হাহ!
ছায়া এগিয়ে গিয়ে নীলার সামনে দাঁড়ায়।নীলা যেনো হকচকিয়ে যায়।ছায়া একটা ভ্রু উঁচু করলেই নীলা একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দেয় আর উড়নার আঙুল পেচাতে থাকে।আকাশ ছায়াকে দেখেই সালাম দেয়।
-আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছেন?
ছায়া যেনো আরও বিরক্ত হলো।কপাল কুচকে আকাশকে দ্বিধান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করে,
-কে ভাবী?আমাকে ভাবী ডাকো কেনো তুমি?
আকাশ জিভে কামড় দেয়।চোখগুলো গোল গোল করে চোখে মুখে ভয় ফুটিয়ে তুলে হিসহিসিয়ে বলে,
-একি বলছেন ভাবী।ভাবী যে মা সমতুল্য। ভাবীকে ভাবী না ডাকলে যে পাপ হয়।তবা তবা এই পাপ কি আমি করতে পারি?
ছায়ার বিরক্তি তড়িৎ গতিতে তরতরিয়ে বাড়লো।মুখ দিয়ে বেরোলো বিরক্তিসূচক শব্দ।দুই ভাই এক।ছায়া আর কথাই বাড়ালো না।কথা বাড়ালেই বাড়বে।
নীলা ছায়ার কানের কাছে এসে ফিসফাস করে বলে,
-মাত্রই তো এলি এখনই চলে যাচ্ছিস?আমি তো স্যারের সাথে দেখা করিনি।তুই একটু দাঁড়া।
ছায়া সম্মতি জানায়।
আকাশ আবারও টেডি স্মাইল দিয়ে ছায়াকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-ভাবী ভাইয়া বলেছে আপনি নাস্তা করে যেতে।আপনি একটু বসুন আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।
ছায়া এইবার আকাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো,
-আজ না ভাই আরেকদিন।
আকাশ যেনো বেশ খুশি হলো।চোখে মুখে আনন্দের রেশ স্পষ্ট ছায়ার মুখে ভাই ডাক শুনে।
-ভাই ডাকলেন আবার মানাও করছেন?
ছায়া আকাশের অমায়িক আচরনের মুগ্ধ হলো।আজকালকার ছেলেরা বোন ভাবী কিছুই মানে না।সেই জায়গায় এই ছেলেটা তাকে কতো সম্মান করছে।ছায়া আর রাগলো না।
-আরেকদিন ভাই।আজ না।একদিন অবশই তোমার সাথে নাস্তা করবো বসে সময় বের করে।
ছায়া একগাল হেসে বিদায় নিয়ে যেই না সিড়ির দিকে যাচ্ছিলো তার চোখে পড়লো প্রাণ বসে আছে নিস্তেজ হয়ে।তার চাহনি শুণ্য।ছায়া সেইদিকে পা বাড়ায়।নিঃশব্দে গিয়ে বেঞ্চে বসে।কিন্তু প্রাণের যেনো কোন হেলদুল নেই।যেনো ঝিমিয়ে উঠছে মস্তিষ্ক।
মিনমিনে গলায় ডেকে উঠলো,
-প্রাণ ভাইয়া।
প্রাণ যেনো চকিত হলো ছায়াকে পাশে দেখে।নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করলো।নিজেকে সপ্রতিভ রাখলো।ভিতরে চেপে রাখা কষ্টগুলো গিলে নিয়ে মোলায়েম গলায় বললো,
-আরে ছায়া?কি ব্যাপার!তোমাকে আজকাল দেখাই যায় না।কেমন আছো?
প্রানের কন্ঠস্বর যেনো কাপছে।
ছায়া যেনো তার নিজের প্রতিচ্ছবি কারও চোখে দেখতে পেলো।দেখতে পেলো একাকীত্ব,ব্যর্থতা,ভালোবাসার আকুতি।ছায়া যেনো অনেক কিছু বুঝেও কিছু বললো না।প্রাণকে বলার সুযোগ দিলো।
-আমি ভালো আছি।আপনাকে ঠিক লাগছে না ভাইয়া।কি হয়েছে আমাকে বলবেন?
প্রাণ নিজের চাহনি এইবার মলিন করে ফেলে।কিন্তু মুখ থেকে হাসি সরায় না। এ যেনো তার নিজেকে লুকানোর একমাত্র হাতিয়ার।
-তেমন কিছু হয়নি।
-আসলেই হয় নি?
-আমার বুকের ভেতর একটা কুয়ো আছে জানো?
ছায়া অবাক হয়ে প্রশ্ন করে,
-কুয়ো?
প্রাণ মাথা নাড়ায়।
-হ্যাঁ কুয়া।ইটস দা ওয়েল অব সেডনেস।
-দুঃখের কুয়া?
ছায়া লম্বা একটা চঞ্চল শ্বাস টেনে নেয়।
প্রাণ যেনো চমৎকার হাসে। ছায়া চেয়ে রয় সেইদিকে।
-হ্যাঁ দুঃখের কুয়া।এই কুয়ো সাধারণ চোখ দিয়ে দেখা যায় না।এই কুয়ো দেখতে হলে দিব্য দৃষ্টির দরকার হয়।এই কুয়োর গভীরতা দিন দিন বাড়ছে।সেই চিন্তাই করছিলাম কিভাবে এর গভীরতা কমানো যায়।
ছায়া নিজের এলোমেলো চিন্তাগুলোকে এইবার আকার দেওয়ার চেষ্টা করে।হঠাৎ করেই যেনো ছায়া সপ্রতিভ হয়।প্রাণের বিরস মুখে চায়।ছায়া দৃঢ় হয়ে বসে হাত দিয়ে কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো কানের পাশে গুজে দ্বিধাহীন কন্ঠে বলে,
-দিব্য দৃষ্টি থাকতে হয় বুঝি?তবে কি আমার ও সেই ক্ষমতা আছে।আমি আপনার সেই দুঃখের কুয়োর পরিমাপ করতে পারছি।এক কাজ করুন অনেকগুলো বালি আর নুড়ি পাথর দিয়ে সেই কুয়োটা ফটাফট ভরাট করে ফেলুন তো।
প্রাণ ছায়ার দিকে বিমূঢ় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।প্রশ্নবিদ্ধ গলায় বলে,
-বালি আর নুড়িপাথর?
ছায়া মাথা দুলায়।
-ইয়েস।বালি আর নুড়িপাথর ধরে নিন ভালোবাসা আর ভালোরাখা।
প্রাণ বিরস মুখে হাসে।ঠোঁট চেপে মাথা ডানে বামে হেলায়।এরপর চট করে উঠে দাঁড়িয়ে যায়।মৃদুকন্ঠে বললো,
-সেই একই কথা কিন্তু তোমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ছায়া থমকায়।ক্ষীণ শ্বাস ফেলে।অনুভূতিশুণ্য হয়ে তাকিয়ে রয়।তার নাকে ঘাম এসে জমা হয়।ক্ষীণ রোদের আলোর যেনো জ্বলজ্বল করতে লাগলো তা।
প্রাণ এগিয়ে যায় অরন্যের কেবিনের দিকে।ছায়া সেইদিকে চেয়ে রয়।
#কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_৪৯(১ম খন্ডিতাংশ)
(কপি করা নিষেধ)
…..
প্রায় তিন দিন পর। সকাল ১১ টা।
আদালতে ছায়া,ছায়ার পরিবার,অরূপের পরিবারের সবাই উপস্থিত।আদালতে মানুষ গিজগিজ করছে।সেই সাথে ভ্যাপসা গরম।ফ্যানের বাতাসও যেমন আগুনের ন্যায় গরম হয়ে আছে।অসহ্যকর অবস্থা।কিন্তু অরূপের বাবা, মা, বোনের মুখজুড়ে শোকের ছায়া।শেষ জীবনে এসে ছেলের জন্য ন্যায়ের সাথে লড়াই করতে এসেছে।বাবা মা হয়ে ছেলের মৃত্যু স্বচক্ষে দেখা কি চারটিখানি কথা?খুব কঠিন।এই জগৎ সংসারে সবচাইতে নিষ্ঠুর বাস্তবতা হচ্ছে বাবা মা হয়ে ছেলের লাশ দেখা।যে ছেলেকে কোলে পিঠে করে বড় করেছে,পড়ালেখা করিয়েছে,মানুষের মতো মানুষ করে তুলেছে সেই ছেলে আজ নেই ভাবতেই কেমন জানি বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠে।বুকের ভেতর আগ্নেয়গিরির অগ্নোৎপাত হয়।শরীর হয়ে যায় অবশ।যেনো রক্ত চলাচল বন্ধ করে দেয়।যেই বয়সে ছেলেকে বিয়ে করানোর জন্য মেয়ে দেখতে যেতো,ধুমধাম করে ছেলের বিয়ে দিতো,নাতি নাতনির সাথে খেলতো সেই বয়সে ছেলেকে কবর দিয়েছে আর আজ ছেলের খুনের অপরাধের শাস্তি চাইতে এসেছে।আহ কি নিষ্ঠুর বাস্তবতা।এই বাস্তবতার বেড়াজালে পিষে মরছে প্রতিনিয়ত সন্তান হারানো এই বাবা মা।পুত্রশোকে কাতর।
ছায়ার মা মীরা বেগম সব জানতে পেরে যেনো মূর্ছা গেলো।তার দ্বারা এতো বড় বুঝার ভুল হয়ে গেলো?মেয়ে তার এতো বছর ধরে মৃত্যুসম যন্ত্রণা ভুগ করে আসছে শুধু তার জন্য।সে নিজে তার মেয়েকে অন্ধকার জীবনে ঠেলে দিয়েছে ধুকে ধুকে মরতে।মীরা বেগমের বুকটা খা খা করছে।তার মাতৃসত্তা হু হু করে উঠে। আত্মগ্লানি আর অনুশোচনায় দগ্ধ হতে লাগলো।অতি কষ্টে মরে যেতে ইচ্ছা করলো।দাঁতে দাঁত পিষে সব যন্ত্রণা সহ্য করে নিলো।সামনে যে এখনো অনেক কিছু বাকি।
ছায়া একবার শান্ত চোখে আশেপাশে সব চোখ বুলিয়ে নিলো।তখনই রিয়া তার হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত করে।ছায়া যেনো ভরসা পায়।ছায়ার তখনই নজর যায় অরন্যের দিকে।ছায়া যেনো হতচকিত হলো।বেশ বিচলিত হলো অরন্যকে এই অবস্থায় এইখানে দেখে।অরন্য এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি।ছায়া অরন্যকে দেখে অসুস্থতার কথা ভেবে বিচলিত হলেও পরে শান্তি পায়।আশ্বস্ত হয়।অতি গোপনে হাসে মনে মনে।যেনো এই মানুষটা পাশে থাকলে সে সব বিপদকে জয় করতে পারবে।কেউ তার ক্ষতি করতে পারবে না।অরূপদা যেমন তাকে আগলে রাখতো ঠিক তেমন অরন্যও যেনো তাকে ঠিক সেইভাবে আগলে রাখবে।অরন্যের মধ্যে যেনো অরূপের ছায়া দেখতে পেলো ছায়া।ছায়ার শ্বাসপ্রশ্বাস ঘন হয়।ছায়া সামনের দিকে ফিরে চট করেই।সে কি তবে ভালোবেসে ফেললো?ছায়ার শরীর ইষৎ কাঁপুনি দিয়ে উঠে।চোখ ভরে আসে। খামছে ধরে জামা।চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।এই পানি সে কপোল বেয়ে গড়াতে দেবে না।বৃথা চেষ্টায় ছায়া হাপিয়ে উঠে যেনো।
অরন্য ছায়াকে দেখে চোখে হাসে।ছায়ার প্রতিটা কার্যাকলাপ সে নিগুঢ় দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করছে।এটা ভেবে খুশি হয় যে ছায়ার মনেও তার জন্য কিছু আছে।এখন শুধু ছায়ার এগিয়ে আসার অপেক্ষায়।সে ইহজনম অপেক্ষা করতেও রাজি আছে।ছায়াকরী না আসলে যে এই দ্যুলোক সে শান্তিতে ছাড়তে পারবে না।অরন্য একটা তপ্ত স্বাস ফেলে।
প্রধান বিচারক আদালতে প্রবেশ করলে সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানায়।
-অর্ডার অর্ডার।
সবাই যার যার জায়গায় বসে যায়।তখনই অরূপের পক্ষের ব্যারিস্টার সুমেল মাহমুদ উঠে দাঁড়িয়ে বিচারকের কাছে দৃঢ় কন্ঠে বলে,
-মহামান্য আদালতের কাছে অরূপ হত্যামামলার কার্যক্রম শুরু করার অনুমতি চাইছি।
বিচারক অনুমতি দেয়।
-আপনাকে অনুমতি দেওয়া হলো।
সুমেল মাহমুদ একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে অরন্যের দিকে তাকায়।অরন্যকে আশ্বস্ত করে পরিবর্তে অরন্য কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হাসি ফিরিয়ে দেয় ব্যারিস্টার সুমেল মাহমুদকে।
-আশুগঞ্জের যুবক অরূপকে হত্যা করার অভিযোগে চেয়ারম্যান মোশারফ দেওয়ানের বড় ছেলে রাহুলকে প্রধান আসামী দায়ের করছি।তাই রাহুল দেওয়ানকে উপস্থিত করার জন্য অনুমতি চাইছি।
ঠিক তখনই উচ্চস্বরে ধ্বনিত হয় আসামি রাহুল দেওয়ানকে হাজির করা হোক।
পুরো আদালত জোড়ে গুনগুন শুরু হয়।
তখনই টানতে টানতে হাজির করা হয় রাহুলকে।শ্যাম বর্ণের এই তিরিশ বছর বয়সের যুবকের যেনো কি সেই তেজ।পুলিশ তাকে টানতে টানতে নিয়ে এলেও তার চোয়াল জোড়া শক্ত কঠোর।চোখে বিন্দুমাত্র ভয়ের লেশ নেই।
বিবাদী পক্ষের অর্থাৎ রাহুলের পক্ষের উকিল বেলাল হোসেন এইবার উঠে দাঁড়িয়ে বলেন,
-ইউর ওনার আমার আসামী রাহুল দেওয়ান এই মামলার প্রথম আসামী। আমার আসামী আইনের প্রতি যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল আর সম্পূর্ণ নির্দোষ।আপনি অবগত যে তিনি আশুগঞ্জ জেলার চেয়ারম্যান মোশারফ দেওয়ানের বড় ছেলে যিনি সবসময় সমাজের সেবায় নিয়োজিত। ওনার নামে মিথ্যে দুর্নাম ছড়ানোর জন্য ওনার বড় ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে মিথ্যে মামলায়।তাই আমি মহামান্য আদালতের কাছে আমার আসামীর জামিনের শুনানি করতে চাচ্ছি এবং তার জন্য অনুমতি প্রার্থনা করছি।
এইবার সুমেল মাহমুদ বলে,
-ইউর ওনার আমার প্রতিপক্ষ বেলাল হোসেন যা বলছেন তার সাথে আমি সহমত নই।অরূপ হত্যামামলার সাথে রাহুল দেওয়ান পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জড়িত।সেই প্রমাণ আমি অবশই মাননীয় আদালতের কাছে পেশ করবো তবে তার আগে আমি আমার বক্তব্য পেশ করার অনুমতি চাইছি।
-অনুমতি দেওয়া হলো।
-ধন্যবাদ ইউর ওনার অরূপ মূখার্জী একজন মেধাবী ছাত্র ছিলো।সেই সাথে একজন স্বেচ্ছাসেবক। সমাজের সেবায় সে সব সময় সবার আগে এগিয়ে আসতো।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্টে সে অধ্যয়নরত ছিলো।অরূপের ছোট বোন রিয়া মূখার্জী। রিয়া মূখার্জী আর তার বান্ধবী কমলীনি ছায়া দুই বান্ধবী।এই দুইজনকে অরূপ খুবই স্নেহ করতো।তাদের সমসাময়িক এস,সি,এসসি পরীক্ষার শেষ হবার দিন অরূপ ঢাকা থেকে আশুগঞ্জ এসেছিলো।রিয়া আর ছায়াকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্ট যায়।কিন্তু সেইখানে রাহুল দেওয়ানের ছোট দুইভাই রনি দেওয়ান আর রকি দেওয়ান তারা মিস ছায়াকে উত্ত্যক্ত করে।যার প্রতিবাদ করে অরূপ।সেইদিন কিঞ্চিৎ মারামারি হয়েছিলো অরূপের সাথে তাদের।রাহুল দেওয়ানের কানে এই কথাটা গেলে সেই রাগে তিনি ফেটে পড়েন যেনো।যেই মেয়ের জন্য তার আদরের ভাইয়েরা মার খেলো তার প্রতিশোধ নেশায় মত্ত হলো।আহান হককে টাকা খাইয়িয়ে ছায়াকে রেপ করতে বলে।আহান হক সফল না হলে আহান হককে শাসানো হয়।এরপর অরূপ ওদের কথা জেনে গেলে তাকে হত্যা করা হয়।অরূপকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় যাতে কেউ সন্দেহ না করে।
আহান হককে হাজির করার অনুমতি চাইছি।
ঠিক তখনই আহানকে পুলিশ ধরে নিয়ে এসে কাঠগোড়ায় দাঁড় করায়।
পুনরায় যেনো আদালতে গুঞ্জন শুরু হয়।সবার মধ্যে টানটান উত্তেজনা।
রাহুল দেওয়ানের উকিল এইবার একটা শয়তানি হাসি দিলো।সব প্ল্যান করেই এসেছে এইখানে।এতো সহজে ভেস্তে দিতে দেবে না তা।নিজের টাই টা ঠিক করে গলা খাকারি দিয়ে কিছু বলার জন্য প্রস্তুতি নিলেন।
-মহামান্য আদালতের কাছে আমি এই দাবি করছি যে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সুমেল মাহমুদ এই আদালতের মহামূল্যবান সময় নষ্ট করছে।মিস ছায়ার সাথে আহানের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো।আমি আদালতের কাছে কিছু ছবি পেশ করছি। ওদের ঘনিষ্ঠ মুহুর্তে অরূপ দেখে ফেলে।আর এইটা অরূপ সহ্য করতে পারেনি।মিস ছায়ার পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব দেয় নিজের ধর্ম পরির্তন করে সাথে সাথে।কিন্তু ছায়ার পরিবার সেইটা মেনে না নিলে সে নিজ গৃহে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহনন করে।আপনি অনুমতি দিলে আমি প্রমাণস্বরূপ অরূপ মূখার্জীর মা সুস্মিতা মূখার্জীকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।
-অরূপ মূখার্জীর মা সুস্মিতা মূখার্জীকে হাজির হবার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বয়সের ভার আর পুত্র হারিয়ে যেনো ভদ্রমহিলা একেবারে নুয়ে পড়েছে।গোলাপি শাড়ি পরিহিতা হাতে শাখা বালা মাথায় সিদুর পড়া এই প্রৌঢ়া দূর্বল পায়ে হেঁটে কাঠাগোড়ায় দাঁড়ালো আর পবিত্র ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে শপথ করলো যাহা বলিব সত্য বলিব,সত্য ছাড়া মিথ্যা বলিব না।
বেলাল হোসেন তার সামনে দাঁড়িয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
-আপনার ছেলে মিস ছায়াকে পছন্দ করতো।
অরূপের মা মাথা নাড়ায়।
-জ্বি
-অরূপ কি নিজের ধর্ম পরিবর্তন করেছিলো ছায়াকে বিয়ে করতে?
-হ্যাঁ আমার ছেলে ছায়াকে ভালোবাসতো।আর তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিলো।
-আপনার ছেলেকে কি রোজ শুক্রবার সন্ধ্যায় আপনি নিজ চোখে দেখেছিলেন ফ্যানের সাথে ঝুলতে?
এইটা শুনেই অরূপের মা মুখে শাড়ির আঁচল চেপে কান্না শুরু করে।
-বিশ্বাস করুন আমার ছেলে আত্মহত্যা করার মতো ছেলে ছিলো না।আমার ছেলে আত্মহত্যা করেনি।এইসব ষড়যন্ত্র।
-সুস্মিতা মূখার্জী আপনাকে যা প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর দিন।ফ্যানের সাথে ঝুলা অবস্থায় পেয়েছিলেন কিনা হ্যাঁ অথবা না?আর দরজা কি ভিতর থেকে বন্ধ ছিলো?
অরূপের মা কিছুক্ষণ স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে।তাকে কথার জালে ফাঁসিয়ে ফেলছে সেইটা সে বুঝতে পারছে কিন্তু সে কিছু করতে পারছে না।আদ্র কন্ঠে তিনি জবাব দেয়,
-জ্বি আমি মন্দির থেকে এসে দেখেছিলাম দরজা বন্ধ।তাই বারবার মায়ের প্রাসাদ খাবার জন্য ডাকি অরূপকে।কোন সাড়া না পেয়ে ভয় পেয়ে যাই।অরূপ কখনোই দরজা বন্ধ করতো না তেমন।তার ঘুমও বেশ পাতলা ছিলো।দুই একবার ডাক দিলেই উঠে যেতো।আমার মন কু গাইছিলো তাই মানুষ এনে দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকেই দেখি আমার ছেলে ঝুলে আছে।
এইটা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়ে অরূপের মা।
আদালতে এক অসহায় মায়ের কান্না যেনো সবার বুকে আঘাত করছে আজ।
এইবার সুমেল মাহমুদ বললেন,
-মহামান্য আদালতের কাছে আহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছি আর সেইদিনের সেই রেস্টুরেন্টের ম্যানাজারকে সাক্ষীস্বরূপ হাজির করার অনুমতি চাইছি।
অনুমতি পেলেই সেই রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার হাজির হয়।আর আহানকেও কাঠগোড়ায় দাঁড় করানো হয়।
-আমি আপনার কাছে সেইদিনের ঘটনা জানতে চাইছি আপনি কি আমাদের বিস্তারিত বলবেন?
ম্যানাজার নম্রসুরে সবাইকে সালাম জানায় আর শপথ পাঠ করার পর বলে,
-সেইদিন আমাদের রেস্টুরেন্টে অরূপ মূখার্জী,কমলিনী ছায়া আর রিয়া মূখার্জী আসে।এমনকি রাহুল দেওয়ানের দুই ভাই রনি আর রকি দেওয়ান আর তার বন্ধুরা এসেছিলো।হঠাৎই তাদের মধ্যে ঝামেলা হয়।অরূপ রনি আর রকির গায়ে হাত তুলে আর তার উপযুক্ত কারণও ছিলো।আমরা মুখের কথায় বিশ্বাসী নই।সিসি ফুটেজ চেক করে সিউর হই এবং উপযুক্ত স্টেপ নেই। রনি, রকি ছায়াকে উত্ত্যক্ত করছিলো।তাই অরূপ হাইপার হয়ে গিয়ে হাত তুলে।
তখনই বেলাল হোসেন কথার মাঝে ফোঁড়ন কাটে।
-মহামান্য আদালত আমি বুঝিতে পারছি না আমার বিপক্ষ ভাই সুমেল মাহমুদ কি সব জিনিস টেনে আনছেন যা কেইসের সাথে রিলেটেড নয়।শুধু শুধু টেনে লম্বা করছেন।অরূপের আত্মহত্যার সাথে রেস্টুরেন্ট এর একটা ঘটনা কিভাবে যুক্ত হয়?আর ম্যানাজারদের টাকা খাইয়ে এমন হাজারটা সাক্ষী বানানো যায়।
সুমেল মাহমুদ হেসে ফেলে বেলাল হোসেনের কথায়।
-আপনি এতো উত্তেজিত হচ্ছেন কেনো বেলাল হোসেন।আমার কথার মাঝে না বাঁধা দিলেই খুশি হবো।আর কোনটা কিসের সাথে রিলেটেড আর কোনটা অহেতুক সেইটা আদালতকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।তো ইউর ওনার আমি যেইখানে ছিলাম।সেইদিনের রেস্টুরেন্টের ফুটেজ এইখানে দেওয়া হলো।দয়া করে গ্রহণ করুন
-গ্রহন করা হলো।
-ধন্যবাদ ইউর ওনার।এইবার আমি আহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাই।
আহান যেনো কাঁপতে লাগলো।শেষ অবধি যেয়ে সে এইভাবে ফেঁসে যাবে সে কল্পনা করেনি।মনে মনে কতোগুলা গালি দেয়।এতোদিন তাকে যেই অত্যাচার করা হয়েছে তা সে জীবনে ভুলবে না।খাবার না খাইয়ে রেখেছে,বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে,থার্ড ডিগ্রী টর্চারতো আছেই।সেইসব ভাবলেই তার রুহ কেপে উঠে।এইখান থেকে জেলখানাও ভালো।
-তা আপনার নাম কি আহান হক?
-হাঁ।
-জ্বি শুনে খুব ভালো লাগলো।তা আপনার সাথে মিস ছায়ার কতোদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো আপনি যদি একটু সবাইকে বলতেন।বেলাল হোসেন ভাই তো আপনার আর ছায়ার ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত সম্পর্কে অবগত।আপনি যদি একটু বলতেন।
আহান যেনো ঘাবড়ে গেলো।মাথার চুল বেয়ে চিকন করে ঘাম তার ঘাড় বেয়ে পড়তে লাগলো।সে সরু করে চাইলো একবার রাহুল দেওয়ানের দিকে।রাহুল দেওয়ানের রক্তচক্ষু দেখে তার আত্মা অবধি শুকিয়ে গেলো।সব সত্যি বললে তার বিপদ, মিথ্যে বললেও বিপদ।আহান তাই মৌনতা অবলম্বন করলো।কিছুক্ষণ পর ভীত কন্ঠে বললো,
-জ্বি ছিলো না।আমাকে টাকা দেওয়া হয়েছিলো।তাই আমি ছায়াকে আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে তাকে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি করিয়েছিলাম।কিন্তু ছায়া যখন শেষ অবধি না করে দেয় তখন তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করি।কিন্তু সফল হই না।অরূপ চলে আসে।
বেলাল হোসেন আবারও বাগড়া দিলো কথার মাঝে।
-মহামান্য আদালত পানির মতো পরিষ্কার কেইসটাকে কোথায় টেনে নেওয়া হচ্ছে তা দেখে আমি হতাশ।আহানের সাথে ছায়ার ঘনিষ্ঠ ছবি অলরেডি আদালতকে পেশ করা হয়েছে।আহানকে ভয় দেখিয়ে মিথ্যে বলানো হচ্ছে।আমরা সবাই জানি আহানের সাথে ছায়ার সম্পর্ক আছে।
সুমেল মাহমুদ এইবার বেশ রেগে যায় বারবার তার কথা বলার মাঝে বাঁধা সৃষ্টি হওয়ায়।ব্যগ্র কন্ঠে তিনি আদালতের কাছে এই নিয়ে নালিশ অবধি করেন।
-ইউর ওনার আমাকে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না।দুইপক্ষেরই সমান অধিকার আছে কথা বলার।আমার বিপক্ষের ভাই বেলাল হোসেনকে আমার কথায় বাঁধা দিতে নিষেধ করুন।
বেলাল হোসেনকে ওয়ার্নিং দেওয়া হলো আদালত থেকে।তিনি যেনো ক্ষীপ্ত হলেন।
সুমেল মাহমুদ এইবার পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদে ফিরে যান।
-ইউর ওনার আপনাকে আমি মিস ছায়ার কিছু কল রেকর্ডিং আর মেসেজ আদালতের কাছে পেশ করছি যা আহানের নম্বর থেকে ছায়াকে দেওয়া হয়েছিলো।তাহলেই বুঝতে পারবেন তাদের কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিলো না।উলটো ছায়ার প্রতি অন্যায় হয়েছে। তাকে হ্যারেস করা হয়েছে।আর তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করার সময়ই সেই ছবি গুলো তোলা।
-প্রমাণ গ্রহণ করা হলো।
-ধন্যবাদ ইউর ওনার।এইবার আমি রাহুল দেওয়ানের সাথে কথা বলতে চাই।
রাহুল দেওয়ান যেনো ফুসফাস করছে রাগে।তার রাগের বিষবাষ্পে যেনো আদালতের সবাইকে শেষ করে দিবে।
-আপনি রাহুল দেওয়ান?
-……..
-কিছু জানতে চাইছি আমি।এইভাবে চুপ থেকে আদালতের সবার সময় আপনি নষ্ট করতে পারেন না।
-কি জানতে চান তাড়াতাড়ি বলুন।
-এইটা আদালত।এইখানে আপনি এইভাবে কথা বলতে পারেন না।ঠিক ভাবে ভদ্রভাবে কথা বলুন।
রাহুল দেওয়ানের অভিব্যক্তি ভীষণ ভয়ংকর।বুঝা যাচ্ছে না তার মনে কি চলছে।
বেলাল হোসের এইবার হেরে যাবার আশংকায় বিচলিত হলেন।চুপ থাকা মানে বিপদ তাই তিনি এইবার উঠে দাঁড়ালেন।
#চলবে #কুঞ্জছায়া
#কুঞ্জা_কাবেরী
#পর্ব_৪৯(২য় খন্ডিতাংশ)
(কপি করা নিষেধ)
…
রাহুল দেওয়ান যেনো ফুসফাস করছে রাগে।তার রাগের বিষবাষ্পে যেনো আদালতের সবাইকে শেষ করে দিবে।
-আপনি রাহুল দেওয়ান?
-……..
-কিছু জানতে চাইছি আমি।এইভাবে চুপ থেকে আদালতের সবার সময় আপনি নষ্ট করতে পারেন না।
-কি জানতে চান তাড়াতাড়ি বলুন।
-এইটা আদালত।এইখানে আপনি এইভাবে কথা বলতে পারেন না।ঠিক ভাবে ভদ্রভাবে কথা বলুন।
রাহুল দেওয়ানের অভিব্যক্তি ভীষণ ভয়ংকর।বুঝা যাচ্ছে না তার মনে কি চলছে।
বেলাল হোসের এইবার হেরে যাবার আশংকায় বিচলিত হলেন।চুপ থাকা মানে বিপদ তাই তিনি এইবার উঠে দাঁড়ালেন।ব্যগ্র কন্ঠে বললেন,
-ইউর ওনার আমার মক্কেলকে হেনস্তা করা হচ্ছে।উনি এখনও কোন স্ট্রং এভিডেন্স আদালতে দিতে পারেননি এখনও।
সুমেল মাহমুদের দৃষ্টি সূচালো হলো।তিনি পুনরায় রাহুল দেওয়ানের কাছে গেলেন।
-আহানকে টাকা দিয়ে মিস ছায়াকে রেপ করতে বলেছিলেন।তাই না?আহানের নামে তো পুলিশে ইনর্ফম করা হয়েছিলো। পুলিশ তাকে জেলেও নিয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু তাকে একদিনের ব্যবধানে ছাড়িয়ে এনেছেন আপনি রাহুল দেওয়ান।অরূপ সব জেনে যায়।এরপর যখন অরূপের মৃত্যুর আগের দিন রোজ বৃহস্পতিবার সে আপনার কাছে যায় আপনাদের মধ্যে মারামারি হয়।ঠিক বলছি না?
রাহুল দেওয়ান যেনো হতচকিত হলো।চোখে মুখে আতংক এইবার যেনো প্রকাশ পেলো।শক্ত করে কাঠগোড়ার কাঠটা হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
সুমেল মাহমুদ এইবার আবারো বললেন,
-অরূপ সেইদিন মেরেছিলো আপনাকে।সেই শাস্তি দিতে আপনি শুক্রবারে প্লান করে যখন বাসায় কেউ ছিলো না তখন বারান্দা দিয়ে লোকসহ এসে অরূপকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন।হত্যা করার পর ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে সেইটা আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেন।সরি টু সে সব রেকর্ডিং আছে আমার কাছে।মহামান্য আদালতের কাছে আমি একটা অডিও প্রমাণ হিসেবে জমা দিচ্ছি।সেইটা গ্রহণ করা হোক।তাহলেই সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।আর অডিওতে মানুষটার গলার সাথে রাহুল দেওয়ানের গলার মিল আছে নাকি সেটাও বিবেচনা করবেন।
-প্রমাণ গ্রহণ করা হলো।
পুরো আদালতের পরিবেশ যেনো মুহুর্তেই ভারী হয়ে গেলো।একটা গুমোট আবহাওয়া যেনো বিরাজ করছে।
সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা।
এইবার বিচারক সবকিছু নিখুঁতভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভারীকন্ঠে রায় প্রকাশ করেন।
-সমস্ত সাক্ষী ও প্রমাণের ভিত্তিতে আদালত অরূপ হত্যামামলায় প্রধান আসামী রাহুল দেওয়ানকে ৩০২ ধারা অনুযায়ী অরূপ হত্যাকান্ডের জন্য করে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হলো।আর ছায়া ধর্ষণের চেষ্টা করার জন্য আহান হককে ধারা ৯ অনুযায়ী দশ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দন্ডিত করা হলো।অরূপহত্যা মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি সম্পন্ন হলো।দা কোর্ট ইজ অ্যাডজার্ন্ড নাও।
সমস্ত আদালতের সমীরণ যেনো চঞ্চল হলো।ছায়া ডুকরে কাঁদলো। তার অরূপদা যে ন্যায্য বিচার পেলো।অনিন্দ্যের কাধে মাথা চেপে সুস্মিতাও কাঁদলো।ছায়ার মায়ের হাতটা শক্ত করে ধরলো ছায়ার বাবা।রিয়াও আজ ভাইয়ের আত্মার শান্তি কামনা করলো।
…
ছায়া আদালত থেকে বের হতেই সুস্মিতা মূখার্জী এসে দাড়াঁয় সামনে।মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে বলে,
-আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।আমি বুঝতে পারিনি।মাথা ঠিক ছিলো না।যাকে আমার ছেলে এতো ভালোবাসতো তাকে কি আমি না ভালোবাসে থাকতে পারি?আমার ছেলে তোকে আজীবন সুখে দেখতে চেয়েছে।আমিও চাইবো আমার এই মেয়ে সুখে থাক।
ছায়ার চোখে অশ্রুরা ভীর করে।মন গহীন প্রশান্তি দ্বারা আদ্র হয়।অতঃপর সেই কাঙ্ক্ষিত সূর্য উঠেই গেলো ধরনীতে।ছায়া একগাল হেসে সুস্মিতা মূখার্জীকে জড়িয়ে ধরে।ছায়ার মা আর বাবা ছায়ার পাশে এসে দাঁড়ায়।তারাও আজ যেনো এক স্বার্থহীন ভালোবাসার সাক্ষী হলো।তাদেরও আজ এতো বছর পর ভালো লাগছে খুব।ছায়ার বাবা মাও চোখে হাসে।অরন্য দূর থেকেই তা পর্যবেক্ষণ করলো।
ছায়ার বাবা মা সুস্মিতার সাথে বহু বছর পর আবার সেই আগের মতো কথা বলে।ছায়া একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।অরন্যকে খুঁজার চেষ্টা করে।হঠাৎই অরন্য হাত উপরে তুলে ছায়াকে ইশারা দেয়।ছায়া মনে মনে হাসে অরন্যের কান্ড দেখে।
ছায়া একবার বাবা মায়ের দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে অরন্যের কাছে যায়।
-ধন্যবাদ ডাক্তারসাহেব।
অরন্য মুখটাকে হা বানিয়ে ফেলে।চোখ দুটো বড় বড় বানিয়ে তড়াক করে বলে,
-ধন্যবাদ বলছেন আমাকে?
ছায়া চোখদুটো ছোট ছোট বানিয়ে ফেলে।একবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলে,
-এইখানে তো আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না তার মানে আপনাকেই বলছি।
অরন্য যেনো লাজুক হাসার ভান করে।
-হেহেহে আজ এই প্রথম আপনার মুখের এতো মিষ্টি বুলি শুনলাম।আহা প্রাণ জুড়িয়ে গেলো।কবে যে ভালোবাসি বলবেন?আমি বেশ চিন্তায় আছি বুঝলেন।সেইদিন না আমার ডায়াবেটিস হয়ে যায়।
অরন্য গা দুলিয়ে হাসে।ছায়াও মুচকি মুচকি হাসে।আজ তার ভালো লাগছে।খুব ভালো লাগছে।ভেতরের মেঘগুলো যেনো বুক থেকে ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে।
অরন্য ছায়ার হাসি দেখে মজা করে বলে,
-একি ছায়াকরী আপনি আমার সাথে হাসছেনও? ভাবা যায়!প্রেমে টেমে পড়লেন নাকি এই হ্যান্ডসাম ছেলেটার?লারকি হাসি তো ফাসি।
ছায়া এইবার অধরে সেই হাসি বিস্তৃত করে।
-আজ আপনি না থাকলে অরূপদা ন্যায্য বিচার পেতো না।আজীবন ভুলের মধ্যে থাকতাম আমরা।
অরন্য এইবার মাথার চুলোগুলো হালকা এলোমেলো করে বলে,
-এইসব আপনার ক্রেডিট ছায়াকরী। আমি কিছুই করেনি।মেইন প্রমাণ আপনি জোগাড় করে দিয়েছেন।নয়তো আমি এগোতে পারতাম না।আমি মূলত আহানের খোঁজ নিতে গেছিলাম।কেচু খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়েছে।পরে আপনার সাথে আহানের বেশ কিছু রিউমারস শুনি যা আমার বিশ্বাস হয়নি।পরে অরূপ সম্পর্কে জানি।অরূপকে আমার যথেষ্ট ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ বলে মনে হয়েছে।এইখানে কিছু একটা প্যাচ আছে।তাই আমি আমার বন্ধু আশিক যে ডিবিতে আছে তার সাহায্য নেই।এরপর আপনাকে হিন্ট দেই যা আপনি ক্যাচ করতে পেরেছিলেন। এরপর যখন অডিওটা শুনি আহানের কথা সেইখানে উল্লেখ ছিলো।আহানকে গ্রেফতার করা হয়।আহানের মাধ্যমে জানতে পারি তাকে টাকা দেওয়া হয়।কিন্তু কিছুতেই মেইন কালপ্রিটের কথা বলছিলো না।শুধু বলেছিলো যে সে নাকি আমাকেও ছাড়বে না।আমি তখনই সাবধান হয়ে যাই। সেইদিন ঢাকা ফিরবার পথে আমাকে ফলো করছিলো একটা লোক।আমি নোটিস করি। আশিককে মেসেজ দিয়ে জানিয়েও দেই।আশিক যখন আমাদের কাছাকাছি পৌঁছায় তখন আমি একটা সিসি ক্যামেরার সামনে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াই। তখন সে লোকটাও গাড়ি থেকে বের হয়ে শ্যুট করে।বুকে করতে চেয়েছিলো।আমি সরে গিয়েছিলাম।এরপর আশিক এই লোকটাকে ধরে ফেলে।এরপরেই রাহুল দেওয়ানের কথা জানতে পারি।এরপর আপনি যখন দুইদিন আগে হসপিটাল এলেন খাবার নিয়ে তখন আপনাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এমন কিছু ঘটেছিলো নাকি আপনাদের সামনে অরূপের সাথে কারো মারামারি টাইপের।তখনই দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলি।আর সেই রেস্টুরেন্ট মালিকের সাহায্যে ম্যানেজারের খোঁজ নেই আর সিসি ফুটেজ কালেক্ট করি।আহানের সেই সিমটা আহানের থেকে নিয়ে নেই।আর সব কল আর মেসেজ রেকর্ডিং প্রিন্ট করিয়ে ফেলি।
ছায়া অরন্যের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে।এই লোকটা এতো কিছু করে ফেললো।ছায়া যেনো পলক ফেলতে ভুলে গেলো।অরন্য ছায়ার চোখের সামনে চুটকি বাজাতেই ছায়া হকচকিয়ে যায়।আমতাআমতা করতে থাকে।
অরন্য শব্দ করে হেসে দেয়।
-আমি এখন আসি।বাবা মা অপেক্ষা করছে।আমি বাড়ি যাবো আজ যেহেতু মেডিকেল কলেজে ছুটি চলছে।
অরন্যের মনটা একটু খারাপ হয়ে যায়।মনমরা হয়ে বলে,
-কবে আসবেন ছায়াকরী?
-এক সপ্তাহ পর।
-এতোদিন?
ছায়া হেসে দেয়।
-হু।নিজের খেয়াল রাখবেন।ক্ষত এখনো শুকায়নি।এখনই আপনি দৌঁড় ঝাপ শুরু করে দিয়েছেন।হসপিটাল থেকে যেহেতু ডিসচার্জ করে দিয়েছে সেহেতু বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন।খাবার দাবার ঠিক করে খাবেন কেমন?আর ওষুধ গুলো টাইমলি খাবেন।অনিয়ম চলবে না।
অরন্যের মনে যেনো বসন্তের মাতাল হাওয়া লাগে।ছায়ার প্রতিটা কথা তার হৃদয়ে ভালোলাগার অনুভূতি সৃষ্টি করছে।ছায়ার চোখে আজ নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে।
অরন্য স্নিগ্ধ হেসে ছায়াকে জবাব দেয়,
-জো হুকুম মেরি রানী।জানেন ছায়াকরী আপনাকে না বউ বউ লাগছে।আমার বউ।
ছায়া কিছুমুহুর্তের জন্য যেনো স্তব্ধ হয়ে যায়।মনে মনে কয়েকবার আওড়ালো “বউ,বউ”।ছায়ার অন্তরে শীতলতা অনুভব করে।কিন্তু তা প্রকাশ করে না।
মুখটাকে রাগি রাগি বানিয়ে ফেলে।একবার আড়চোখে অরন্যকে পরোখ করে নেয়।এখনও অসুস্থ। হাতের ব্যান্ডেজ খুলা হয়নি।এরপরেও তার জন্য ছুটে এলো আদালতে।ছায়া পিছু ফিরে হেসে দেয়।
এরপর চলে যায় তার গন্তব্যে।অরন্য ছায়ার যাওয়ার পানে তাকিয়ে একহাতে মাথা চুলকায়।আজ চোখে মুখে খুশির পায়রা ঝলঝল করছে যেনো।
….
জানালার ফাঁক দিয়ে প্রভাকরের মলিন রশ্মি আসছে।পর্দাটাও যেনো প্রভাকরের আলোয় হালকা আলোকিত। ফ্লোরে প্রভাকরের এই মলিন রশ্মিটাই যেনো লুটোপুটি খাচ্ছে।
অরন্যের নিজের রুমে অরন্য বেডে হেলান দিয়ে আঙুল দিয়ে কপাল চেপে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।প্রাণ তার সামনের সোফায় বসে আছে নিশ্চল হয়ে।সে যেনো আজ পাথরের মূর্তিতে পরিণত হয়েছে।যে বন্ধুত্ব রক্ষার জন্য নিজের ভালোবাসা গলা টিপে হত্যা করেছিলো সেই বন্ধুত্ব আজ যেনো হারানোর ক্ষণ গুনছে।প্রতিটা মুহুর্ত যেনো বিষের কাটার ন্যায় তার গায়ে ফুটাচ্ছে।অরন্য নিজের চোখ খুলে প্রাণের দিকে তাকায়।অতি শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
-ভালোবাসিস অনুকে?
প্রাণের বুকটা ধক করে উঠে।প্রাণের শ্বাস যেনো বুকের মধ্যে আটকে যায়।স্বরনালী দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।
অরন্য এইবার কাতর স্বরে বললো,
-প্রাণ আমি তোকে শুধু বন্ধু না নিজের ভাই মনে করতাম।কেনো তুই আমাকে সব বললি না?কেনো নিজের মধ্যে সব আটকে রাখলি?আমার জানটা চাইলে সেইটাও তোকে দিয়ে দিতাম।আমার বোনটা এখনও ছোট কিন্তু তোকে সে ভালোবাসে পাগলের মতো।সেই দিন অজ্ঞান হবার পর থেকে আমার বোনটা তেমন কথা বলে না,খায় না ।কেমন মনমরা করে থাকে।মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে একদম ।
প্রাণের চোখে জল ছলছল করছে।তার বক্ষের পাজর যেনো ভেঙে গুঁড়িয়ে যাচ্ছে।আহ কি ব্যথা!
প্রিয়তমার সুখ সে সবসময় চায়।তাই বলে সে অমানুষের মতো তার ভালোবাসা কে কষ্ট দিচ্ছে।তার বাবা মায়ের সাথে তার কেন মরণ হলো না।প্রাণের বুকটা হুহু করে উঠে।
অরন্য বিছানা থেকে উঠে এসে প্রানের সাথে বসে।প্রাণকে হঠাৎ করেই জড়িয়ে ধরে।
-আমার বোন ছাদে অপেক্ষা করছে।যাহ!
প্রাণ চকিতে চায় অরন্যের দিকে।তার হাত পা কাঁপছে থর থর করে।বুকের ভেতর প্রবল উত্তেজনা।ঘন ঘন শ্বাস নিলো নাসিকা দিয়ে।অক্সিজেনের বড্ড অভাব পড়েছে যেনো।
অরন্য প্রাণের হাতটা শক্ত করে আশ্বস্ত করে।চোখ দিয়ে জানায় সে যা শুনেছে সব সত্যি।একহাত দিয়ে প্রাণের চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
-ব্যাটা তুই আমার ছায়াকরীর মতো ছিঁচকাঁদুনে কেমনে হইলি?যাহ সর ব্যাটা বোন দিমু না তোরে।তোর জেন্ডারে প্রবলেম আছে।
প্রাণ ঝাপটে ধরে অরন্যকে।দুইজনেই স্বশব্দে হেসে ফেলে।প্রাণের উতলা কণ্ঠস্বর,
-অরন্য তুই?
-হুশ ব্যাটা আমি জানি সব।তোর কাছে বোন দিয়ে আমি নিশ্চিন্তে থাকবো।
#চলবে
(