My First Crush পর্ব -১৫

#My_First_Crush
#পর্ব-১৫
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

‘আই অ্যাম সরি হৃদি! আমিই বোধহয় সবার থেকে লেট উইশ করলাম।’

আমি আলগোছে মাথা নেড়ে রাইয়ানকে বোঝালাম ব্যাপার না। আমার চোখ খুশিতে চিকচিক করতে লাগলো। রাইয়ান একটা চাকু এনে দিলো হাতে। আমি একটু ঝুঁকে কেকটির দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম। এরপর আস্তে করে হাতে থাকা চাকুটা দিয়ে কেকটি কাটলাম। একটা টুকরো অভ্যাসবশত ভাবে রাইয়ানের মুখের সামনে তুলেই ইতস্তত বোধ করতে লাগলাম। খাইয়ে দেবো নাকি দেবো না? আমার মুখের ভঙ্গি বুঝতে পেরে রাইয়ানই আমার হাতে ধরে রাখা কেকের এক কোণায় অল্প একটু কামড় বসিয়ে খেয়ে নিলো। তারপর ছোট্ট একটা টুকরো নিয়ে খাইয়ে দিলো আমাকে। আর সেটি ছিল আমার জীবনে খাওয়া সবথেকে টেস্টি কেক। আমি মনে মনে খুশি হয়ে রাইয়ানের মুখের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলাম রাইয়ানের মুখের কোণায় ক্রিম লেগে গেছে। আমি মুখ চেপে হেসে রাইয়ানকে বললাম সেটা। রাইয়ান হাত দিয়ে সেটা মুছতে গেলো। তার হাতেও আগে থেকেই ক্রিম লাগানো ছিল। ফলে আবারো মুছতে গিয়ে ক্রিম লাগলো তার নাকে। আমি এবার আর হাসি আটকে রাখতে পারলাম না। শব্দ করে হেসে উঠলাম। রাইয়ান আমার দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে কেক থেকে আরো একটু ক্রিম ভরে নিলো হাতে। লক্ষণ সুবিধার না দেখে হাসতে হাসতে দ্রুত পেছনে সরতে গেলাম আমি। কিন্তু রাইয়ান ধরে ফেললো আমাকে। তৎক্ষনাৎ আঙ্গুল দিয়ে আমার গালে ক্রিম লাগিয়ে দিলো। তারপর আবার লাগালো আমার নাকে। আর বলল, ‘ঠিক আছে এবার।’
আমি ঈষৎ মুখ ফুলিয়ে হেসে টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে নিলাম। হঠাৎ টেবিলে ভালো ভাবে নজর পরতেই রাইয়ান একটি স্পার্কিং ক্যান্ডেল হাতে তুলে নিলো। বলল, ‘দেখেছো এটা ধরাতে তো মনেই নই। ওয়েস্ট করার দরকার কি! এখন ধরিয়ে নেই।’
আমি কিছু বলার আগেই রাইয়ান তাড়াতাড়ি ম্যাচ দিয়ে ক্যান্ডেল ধরিয়ে দিলো। সঙ্গে সঙ্গেই উপরে উঠে ছড়াতে লাগলো আগুনের স্ফুলিঙ্গ। আমার শরীরে একটা কাঁপন সৃষ্টি হলো। একটি পুরনো বিভীষিকা ধাক্কা খেলো মাথায়। আমি তাড়াতাড়ি ঘুরে গিয়ে দু কানে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বললাম, ‘রাইয়ান, প্লিজ সরাও এটা, প্লিজ!’
আমার গলা ধরে এলো। চোখে মুখে অস্পষ্ট এক ভয়। মুহুর্তের মধ্যেই নিভে গেলো সেটা। রাইয়ান তাড়াতাড়ি সেটা হাত থেকে রেখে উদ্বিগ্ন স্বরে বলল,
‘কি হয়েছে হৃদি? তুমি এমন ভয় পেলে কেন?’
আমি চোখ খুলে দেখলাম সেটা নিভে গেছে। আমার চোখে পানি দেখে এবার বেশ অবাক হলো রাইয়ান। চোখে মুখে তার প্রশ্নের ছাপ গাঢ় হলো। আমাকে সোফায় বসিয়ে একটা পানির গ্লাস হাতে দিলো সে। আমি অল্প একটু গলা ভিজিয়ে নিলাম। নাক টেনে স্বাভাবিক হয়ে সময় নিয়ে বললাম,
‘আমার বাবার বন্ধুর একটা ফাংশনে আমি, মা আর বাবা গিয়েছিলাম। ফাংশনটা ছিল একটা ফার্মহাউজে। সবকিছু খুব সুন্দরই চলছিল। আমি মা আর বাবা একসাথে হাসিমুখে ছবি তুলছিলাম, গল্প করছিলাম। হঠাৎ আমার ফোনে আমার ফ্রেন্ডের একটা কল আসে। সেখানে ঠিকভাবে নেটওয়ার্ক না আসায় আমি নেটওয়ার্কের খোঁজে একটু দূরে চলে যাই। ফিরে এসে দেখি ফার্মহাউজে দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুন। আমি ভেতরে যেতে চাই কিন্তু বাইরে থাকা লোকজন আমাকে আটকে রাখে। সিলিন্ডার বাস্ট হয়ে খুব ভয়াবহ ভাবে আগুন লেগেছিল। আর সেই আগুনে আমার বাবা মা…..’
আমি থেমে যাই। আমার গলায় শব্দগুলো আটকে যায়। চোখ থেকে গড়িয়ে পরে নোনাধারা। রাইয়ান আমার কাঁধে হাত রেখে স্বান্তনা দেয়। আমি নিজেকে সামলে বলি, ‘তারপর থেকে আগুন আমার খুব ভয় লাগে। আগুন দেখলেই শুধু মনে হয় সেখানে আমার বাবা মা জ্বলছে। মাঝে মাঝে অবস্থা গুরুতরও হয়ে যায়। শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। প্যানিক অ্যাটাক হয়। এটা ডিপেন্ড করে আগুনের তারতম্যের উপর। একারণেই আমি আগুন যতটুক সম্ভব এভোয়েড করে চলি। আর ব্যাগে সবসময় মেডেসিন রাখি।’
রাইয়ান বলল, ‘আমি শুনেছিলাম আমাদের নেইবার হুডের একটা পরিবারে এমন ঘটনা ঘটেছে। সরি হৃদি আমি তখন….
আমি রাইয়ানকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘ইটস ওকে রাইয়ান। আমি জানি তুমি তখন বাসায় ছিলে না। সামার ক্যাম্পে গিয়েছিলে।’

আমি আবারো গ্লাসের পানিতে চুমুক দিলাম। আর রাইয়ান সহানুভূতির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
___________________________________________________

সকালের বাতাসে এক অন্যরকম আমেজ লুকিয়ে থাকে। গায়ে লাগতেই শরীর ও মন দুটোই হয়ে যায় ভালো। পরিবেশটা নমনীয়। চারপাশে স্নিগ্ধতার ছোঁয়া। এমনই এক সকালে রাইয়ান আর হৃদি বেরিয়েছে জগিং করতে। দুজনেরই গায়ে জগিং স্যুট। পায়ে কেডস। হৃদির চুলগুলো ঝুটি করে রাখা। রাইয়ানের সাথে তাল মেলাতে মেলাতে সে ক্লান্ত। একটু পরপরই গতি থামিয়ে পিছিয়ে পরছে সে। রাইয়ান আরেকবার পেছনে ঘুরে হৃদিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
‘হৃদি এতো আস্তে আস্তে দৌড়ালে কিভাবে চলবে? আরো জোরে জোরে পা চালাও।’
হৃদি কোমরে হাত রেখে হাঁপিয়ে বলল,
‘আমি আর পারবো না। তুমি এতো জোরে জোরে দৌড়াও কিভাবে? তোমার নাগাল পাওয়া খুব কষ্ট রাইয়ান।’
‘কারণ তুমি নিয়মিত করো না তাই তোমার এমন লাগছে। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠছো।’
রাইয়ান হৃদির দিকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো৷ হৃদির সাথে সাথে পায়ের গতি কমিয়ে দিলো সে। হৃদি বোতল ধরে ভাব নিয়ে বলল,
‘এতোটাও কম ভেবো না। আমিও আগে রোজ জগিং করতাম। তোমার পিছনে দৌড়ানো আমার পুরনো অভ্যাস।’
শেষের কথাটা হৃদি খুবই আস্তে আস্তে বলল। রাইয়ান বুঝতে না পেরে বলল, ‘কি?’
হৃদি তাড়াতাড়ি বলল, ‘কিছু না।’
হাঁটতে হাঁটতে একটা ব্রিজের উপর এসে পরলো তারা। পানির উপরে আকাশে প্রজ্বলিত সূর্যের দিকে হৃদির চোখ পরতেই রাইয়ানকে বলল,
‘কত সুন্দর লাগছে না সিনারিটা দেখতে? চলো রাইয়ান তোমার একটা ছবি তুলো দেই।’
রাইয়ান প্রথমে তুলতে চাইলো না। হৃদি বারবার বলায় রাজি হলো। ব্রিজের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবির জন্য পোজ দিলো। হৃদি তার ফোনটা নিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে একের পর এক ক্লিক করতে লাগলো। ছবি তোলা শেষ হলে রাইয়ান দেখতে চাইলো হৃদির ফোন। হৃদি দিয়ে দিলো। রাইয়ান ছবি স্লাইড করে করে দেখলো সবগুলোই হৃদির সেলফি। তার একটাও তুলেনি। রাইয়ান চোখ তুলে তাকালো হৃদির দিকে। হৃদি একটু দূরে সরে গিয়ে হাসতে লাগলো। রাইয়ান বলল,
‘দুষ্ট মেয়ে, আচ্ছা দাঁড়াও এবার আমি আরো তোমার উইয়ার্ড ছবি তুলে দিচ্ছি।’
হৃদি হাসতে হাসতে মুখে হাত রেখে ক্যামেরা থেকে যত দূরে সরতে চাইলো রাইয়ান ততোই ফোকাস করে তার ভিডিও করতে লাগলো। একসময় হাঁপিয়ে উঠে হৃদি এসে বসলো একটা কাঠের বেঞ্চিতে। রাইয়ানও এসে বসলো তার পাশে। হৃদি পানির বোতলের ছিপি খুললো। এক ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিলো একটু। তারপর রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘তুমি নিবে?’
রাইয়ান না করলো। হৃদির চোখ পরলো রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ভ্যানগাড়ির উপর। হৃদি উৎফুল্ল হয়ে বলল, ‘রাইয়ান, চলো আইসক্রিম খেয়ে আসি।’
রাইয়ান বলল, ‘এতো সকাল সকাল আইসক্রিম কোথা থেকে আসবে?’
‘ঐ যে ওখানেই দাঁড় করানো। চলো নিয়ে আসি।’
‘এতো সকালে আইসক্রিম খাওয়া ঠিক হবে না। গলা খারাপ হতে পারে।’
‘হলে হোক। আমি কোথায় সিঙ্গার হতে যাবো!’
হৃদি রাইয়ানকে এক প্রকার জোর করেই রাস্তার ওপাশে নিয়ে গেলো। ভ্যানের কাছে গিয়ে দেখলো ওটা আসলে আইসক্রিমের ভ্যান নয়। অন্য কিছুর। গাছের আড়ালের জন্য স্পষ্ট বোঝা যায়নি। হৃদির মনটাই খারাপ হয়ে গেলো।

এরপর বাসায় ফিরে যে যার মতো কর্মস্থলে চলে গেলো। রাইয়ান অফিসে যাবার কিছুক্ষণ পর কেবিনের দরজা ঠেলে বেন্থা এলো একটা কফি মগ হাতে। হাসি হাসি মুখ করে রাইয়ানকে বলল,
‘এসেই কাজ শুরু করে দিয়েছো?’
রাইয়ান স্মিত হেসে বলল, ‘তেমন কিছু না। গতকালের ফাইলগুলোই একটু দেখছিলাম। তুমি বলো তোমার কি খবর? গার্লফ্রেন্ডের সাথে সব ঠিকঠাক?’
বেন্থা একটা নকল দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘আর ঠিকঠাক! গার্লফ্রেন্ড হলো এমন, তাদের কথা মেনে চললে সবই ঠিকঠাক থাকবে। শুধু নিজেদের পয়েন্ট অফ ভিউ রাখতে গেলেই যতো বিপত্তি।’
রাইয়ান আর বেন্থা দুজনেই একসাথে হেসে ফেললো। বেন্থা বলে উঠলো, ‘কথায় কথায় কফি ঠান্ডা হয়ে গেছে। আরেককাপ গরম নিয়ে আসি। তুমিও এক কাপ নিবে নাকি!’
রাইয়ান স্মিত হেসে বলল, ‘না ধন্যবাদ।’
বেন্থা চলে যাওয়ার সাথে সাথেই জিশান আর অ্যালেন এসে ঢুকলো রাইয়ানের কেবিনে। রাইয়ান কিঞ্চিৎ অবাক হাসি দিয়ে বলল, ‘তোরা?’
জিশান বলল, ‘পাশ দিয়েই দুই ব্রো যাচ্ছিলাম। ভাবলাম তোর সাথেও দেখা করে যাই। নয়তো আবার কান্নাকাটি করবি।’
অ্যালেন বলল, ‘নিজের স্বভাব তোর উপর চাপাচ্ছে।’
জিশান বিরক্তিসূচক একটা শব্দ করলো অ্যালেনের দিকে তাকিয়ে। রাইয়ান হাসতে লাগলো। জিশান বলল,
‘এমনই যদি আমাকে পিন্চ মেরে কথা বলিস তাহলে আমি আর তোর সাথে ক্রাফট ফেস্টিভ্যালে যাবো না।’
রাইয়ান মৃদু অবাক স্বরে অ্যালেনকে জিজ্ঞেস করলো, ‘তুই ক্রাফট ফেস্টিভ্যালে যাবি।’
অ্যালেন মুখের হাসি প্রসারিত করে বলল,
‘হুম। শুনেছি ওখানে অনেক ইউনিক জিনিস উঠেছে। আমি হৃদির জন্য কিছু কিনতে চাই। আমার মনে হয় হৃদি এরকম জিনিস পছন্দ করবে।’
রাইয়ান আস্তে করে ফাইল বন্ধ করে অ্যালেনকে বলল,
‘অ্যালেন, তুই কি হৃদিকে নিয়ে সত্যিই সিরিয়াস?’
অ্যালেন হেসে বলল, ‘আমাকে কখনো দেখেছিস কোন মেয়ের জন্য এমন বলতে?’
রাইয়ান ভ্রু ভাঁজ করে বলে ফেললো, ‘কিন্তু হৃদিই কেন?’
অ্যালেন ফিচেল হেসে বলল, ‘হৃদি হলে সমস্যা কি?’
‘তুই কি বুঝতে পারছিস না? ব্যাপারটা কতো উইয়ার্ড হয়ে যাবে না?’
‘কি উইয়ার্ড! হেই রাইয়ান, তুই এগুলো এতো গুরুত্ব দিচ্ছিস কেন? আজকাল কতো মানুষ বহুবছর একসাথে থেকেও আলাদা হবার পর নিজের এক্সের ফ্রেন্ডের সাথেই সম্পর্কে জড়ায়। তারপর আবার তিনজনে একসাথে হ্যাং আউটও করে। এখানে কত দেখলাম এমন! আর তোদের মধ্যে তো কিছু রিয়েলও না। তাহলে উইয়ার্ড লাগবে কেন? ব্রো সত্যি বলছি, হৃদিকে নিয়ে আমি খুবই সিরিয়াস। আমার ওঁকে খুবই ভালো লাগে! হৃদি এমন একটা মেয়ে যার সাথে থাকলে কখনো বোরিং ফিল হয় না। একটা জীবনে আর কি লাগে? খুবই কিউট একটা মেয়ে।’
অ্যালেনের কথাগুলো শুনতে কেন যেন ভালো লাগছিলো না রাইয়ানের। সে পাশ থেকে একটা ফাইল টেনে বলল, ‘তোরা এখন যা। আমার অনেক কাজ আছে।’
___________________________________________________

আজ হৃদির কফিশপে কাস্টমারের সংখ্যা একটু বেশি।
কাস্টমারদের ভালো লাগার কথা চিন্তা করে বাইরেও টেবিল বসিয়েছে তারা। কাস্টমারদের অর্ডার ঠিকমতো সার্ভ হচ্ছে কিনা তা দেখায় ব্যস্ত জেরিন। হৃদি এতক্ষণ বাকি কাজ গুলো সেরে একটা কাগজ নিয়ে হিসাব কষতে লাগলো। একটা হিসাব ঠিকমতো মিলছে না তার। এমন সময় পেছন থেকে ব্রাউন জ্যাকেট আর হোয়াইট জিন্স পরনে অ্যালেন এলো সেখানে। স্বভাবতই তার হাসিমাখা মুখে বলে উঠলো,
‘আসতে পারি?’
হৃদি স্মিত হেসে স্বাগত জানালো অ্যালেনকে। অ্যালেন এসে হৃদির পাশে দাঁড়ালো। হৃদি তার হাতে থাকা কাগজে মনোযোগ দিলো। অ্যালেন বলল,
‘মনে হচ্ছে আজকে তুমি একটু বেশিই ব্যস্ত?’ কাস্টমারও বেশি।’
হৃদি বলল, ‘মাঝে মাঝেই তো এমন ব্যস্ত হবার সুযোগ পাই। নয়তো প্রতিদিন কোথায় আসে এতো কাস্টমার!’
কাগজের দিকে তাকিয়ে হৃদি আবারো চিন্তিত মুখে কিছু ভাবছে দেখে অ্যালেন বলল,
‘কি হয়েছে?’
হৃদি মাথা তুলে বলল, ‘একটা হিসাব মিলছে না।’
অ্যালেন হৃদির হাত থেকে কাগজটা নিয়ে বলল, ‘দেখি।’
অ্যালেন গভীর মনোযোগের সাথে কিছুক্ষণ নিরীক্ষণ করে সব ক্লিয়ার করে ফেললো। হৃদি বলল,
‘তুমি তো দেখি ভালোই। আমি এতক্ষণ ধরে চেষ্টা করছিলাম আর তুমি কিছুক্ষণের মধ্যেই করে ফেললে!’
অ্যালেন মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘ম্যাডাম, তুমি বোধ হয় জানো না, আমি আর রাইয়ান একই ইউনিভার্সিটির হলেও আমাদের মেজর ছিল কিন্তু আলাদা। রাইয়ান সাইন্স মেজরের আর আমি ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট।’
হৃদি উৎসাহের সাথে বলে উঠলো, ‘তুমি ম্যানেজমেন্টের স্টুডেন্ট! তার মানে তো নিশ্চয়ই তুমি এর সম্পর্কে অনেক কিছু জানো? আমারও না এটা নিয়েই পড়া উচিত ছিল। তাহলে অনেক সুবিধা হতো।’
অ্যালেন বলল, ‘পড়োনি তো কি হয়েছে! আমি কিন্তু তোমাকে এ ব্যাপারে হেল্প করতে পারি।’
হৃদির মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। বলল,
‘সত্যি?’
পরক্ষণেই আশপাশের কাস্টমারের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিন্তু এখন তো…..
অ্যালেন বলে উঠলো, ‘সমস্যা নেই। আমি ওয়েট করতে পারি। আমার হাতে তেমন কোন কাজ নেই। তুমি নিশ্চিন্তে নিজের হাতের কাজ শেষ করে নাও।’
হৃদি ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ‘শিওর?’
অ্যালেন মৃদু হেসে বলল, ‘হুম।’
এরপর হৃদি কাউন্টারের ওখানে চলে গেলো। দরজার কাছের টেবিলে একটা চেয়ার টেনে বসলো অ্যালেন। সেদিকে ইশারা করে জেরিন হৃদিকে জিজ্ঞেস করলো,
‘কি হয়েছে রে?’
এরপর হৃদি জেরিনকে তার সাথে হওয়া অ্যালেনের কথোপকথন খুলে বলল। জেরিন উৎফুল্ল হয়ে বলল,
‘তাহলে তো ভালোই। এই অ্যালেন ছেলেটাকে আমার প্রথম থেকেই খুবই পছন্দ হয়েছে। কি সুন্দর ভালো নমনীয় স্বভাবের একটা ছেলে। জেন্টেল অ্যান্ড কাইন্ড। সবসময় মুখে হাসি লেগেই থাকে। তোর ঐ রাইয়ানের মতো না, মুখটাকে সবসময় এমন সিরিয়াস করে রাখে দেখলে মনে হয় মাত্র যেন ঘুম থেকে উঠেছে।’
হৃদি একটা বিরক্তিসূচক শব্দ করলো জেরিনের দিকে তাকিয়ে। জেরিন পাত্তা না দিয়ে বলল,
‘আচ্ছা, অ্যালেন হঠাৎ আমাদের এতো হেল্প করতে চাইছে কেন? আমার মনে হয় ওঁ তোর উপর ক্রাশ খেয়েছে।’
হৃদি ভ্রু ভাঁজ করে বলল, ‘কি সব হাবিজাবি বলিস! তোর এই স্বভাব এখনো গেলো না। কোন ছেলেকে কথা বলতে দেখলেই তার সাথে আমার ক্যামিস্ট্রি বানিয়ে ফেলিস। অ্যালেন আমার হাজবেন্ডের বন্ধু। আর আমি ম্যারিড। এগুলো না বকে কাস্টমারদের দিকে খেয়াল রাখ।’

কাজের চাপ কমতে কমতে অনেক দেরি হয়ে গেলো। রাত সাড়ে নয়টা নাগাদ রেস্টুরেন্ট খালি হলো। এতক্ষণ বসে বসে হৃদির জন্য অপেক্ষা করলো অ্যালেন। সব কাস্টমার চলে গেলে হৃদি অ্যালেনের টেবিলে বসতে বসতে বলল, ‘সরি অ্যালেন, তোমাকে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো। তোমাকে বললাম আজ থাক তবুও তুমি গেলে না।’
অ্যালেন বলল, ‘সমস্যা নেই। আমার খারাপ লাগছিল না। সেই তো একা একা বোরিং-ই হতে হতো। এখানে থেকে সময়টা কাটলো। তোমার কাছে এখন ল্যাপটপ আছে?’
‘আমারটা তো নেই। জেরিনেরটা আছে।’
হৃদি জেরিনকে তার ল্যাপটপ দিতে বলল। জেরিন দিয়ে গেলে অ্যালেন সেটা অন করে বিজনেস আর ম্যানেজমেন্টের কিছু মেথড রিসার্চ করে বোঝাতে লাগলো হৃদিকে। স্টুডেন্ট সে বেশ ভালো ছিল। সহজ করে হৃদিকে অনেককিছুই ব্যাখা করে দিলো। সবকিছু ভালোভাবে বোধগম্য হওয়ায় হৃদিও খুশি। দুজনের মধ্যে কাজ নিয়ে অনেক কথাই হলো। একপর্যায়ে জেরিন এলো অ্যালেনের জন্য কফি নিয়ে। ট্রে সমেত রেখে দিলো সামনে। অ্যালেন ট্রে থেকে বেখেয়ালে কফির গ্লাস হাতে নিতে গেলে কিছু কফি ছিটকে পড়লো তার হাতে। কফি পড়তে দেখে কিছু উপলব্ধি করার আগেই অ্যালেন হাত জ্বলে উঠার মতো শব্দ করে উঠলো। পরক্ষণেই তার খেয়াল হলো কোন জ্বলছে না। হৃদি এতক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থেকে বলল, ‘এটা কোল্ড কফি ছিল।’
হৃদি হাসতে লাগলো। অ্যালেনও হেসে ফেললো তার সাথে। হাসতে হাসতেই হৃদি একটা টিস্যু এগিয়ে দিলো অ্যালেনের কাছে। অ্যালেনও হেসে কিছু বললো সাথে। কাঁচের গ্লাসের বাইরে থেকে রাস্তায় গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে সেদিকটায় একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো
রাইয়ান। এরপর দৃষ্টি সামনে নিয়ে উঠিয়ে দিলো জানালার কাঁচ। পাশের সিটে পরে থাকা দুটো কাপ আইসক্রিমের প্যাকেট জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করে চলে গেলো।

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here