#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৮
#সুমাইয়া মনি
সকালে রাদ খাবার খাওয়ার সময় লক্ষ্য করে ইসানা বার বার কোনো অজুহাতে পেটে হাত রাখছে। রাদ বিষয়টি বুঝে ফেলে। নীবরে খাবার খেয়ে যাওয়ার সময় বলল,
‘আজ আপনাকে ফ্যাক্টরিতে আসতে হবে না। বাসায় থাকুন।’
এতটুকু বলে রাদ প্রস্থান করে। ইসানা অবাক হয় না। বরঞ্চ সে কিছুটা স্বস্থি পায়। সকাল থেকে পেট ব্যথায় ভুগছে। মেডিসিন নেই। কিনতে হলে বাহিরে যেতে হবে। রাদ পারমিশন ছাড়া বাহিরে যেতে নিষেধ করেছে। যদিও না বলে যেতে পারে। তবেই জরিমানা! এজন্য সে ব্যথাকে কাবু করে সকালের ব্রেকফাস্ট বানিয়েছে। কষ্ট হলেও কিছু করার ছিল না। সে আসার পরপরই সব সার্ভেন্টদের রাদ বরখাস্ত করেছে। এখন তাকেই সব কাজ করতে হচ্ছে একা। এত বড়ো অ্যাপার্টমেন্ট সামলানো চারটে খানে কথা নয়। তবুও সে যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। ইসানা ঠের বুঝতে পারে রাদ একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি। সব দিকে তার নজর আছে। কাল রাতের জন্য নিশ্চয় আজ তাকে ছুটি দিয়েছে। কিছুটা লজ্জা অনুভব করে ইসানা।
.
চেয়ার দুলিয়ে হাতে কলম নাড়াচাড়া করতে করতে রাদ ইসানাকে নিয়ে ভাবছে। অবশ্য তার ভাবনা এতটাও গুরুতর নয়। তাকে তাড়ানোর জন্য কম ব্যবস্থা করেনি সে। বাকি সার্ভেন্টদের অধিক টাকা দিয়ে বের করে দিয়েছে। টাইসনকে দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছে। এবং-কি ইচ্ছে করে প্রতিদিন নতুন কাপড়গুলো ধোঁয়ার জন্য রেখেছে। ফ্যাক্টরিতে নানাভাবে তাকে দিয়ে ফাইল আদান-প্রদান করিয়েছে।
এক দিক থেকেও তাকে টর্চার কম করেনি রাদ।
তবুও সে মুখ ফুটে কিছু বলার চেষ্টাও করেনি। রাগও দেখায়নি। কী এমন দুর্বলতা তার? যার কারণে সে মুখ বুঁজে সব সহ্য করছে। বড্ড ভাবনার বিষয়!
‘ভাবছিস কিছু?’ মুরাদ স্বচ্ছ কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে আসতে আসতে বলল কথাটা।
রাদ ঝুঁকে কলম রেখে বলল,
‘হুম।’
চেয়ার টেনে বসতে বসতে পুনরায় মুরাদ প্রশ্ন করল,
‘ভাবনা-টি বলার মতো কী?’
‘আমি ইসানাকে নিয়ে ভাবছি।’
মুরাদ এক ভ্রু উঁচু করে বলল,
‘প্রেমে পড়লি নাকি তার?’
রাদ ক্রুদ্ধ দৃষ্টি ফেলে কলম ছুঁড়ে দেয় মুরাদের উদ্দেশ্যে। মুরাদ হেসে কেস ধরে বলল,
‘ফান ছিল। বল কেন ভাবছিস তার কথা?’
রাদ ফের হেলান দিয়ে বসল। বলল,
‘তাকে এ ক’দিন প্রচুর টর্চার করেছি তাড়ানোর জন্য। কিন্তু…’
‘তুই হেরে গেছিস, তাই তো?’ রাদের অবশিষ্ট কথা কেড়ে নিয়ে বলল মুরাদ।
‘হ্যাঁ!’
‘আগেই বলেছি তিনি পরিশ্রমী মেয়ে। এবং যথেষ্ট ম্যাচিউর। আন্টি কিন্তু এমনিতেই তাকে নিয়োগ দেয় নি তাকে।’
‘মানলান। কিন্তু এক সঙ্গে থাকাটা আমার কাছে ইর্রিটেটেড!’
‘মানিয়ে নিলে ইর্রিটেটেড মনে হবে না। আর তোরা তো এক রুমে থাকছিস না। আলাদাভাবে থাকছিস।’
‘তবুও!’
‘কিচ্ছু করার নেই। আমি এ বিষয়ে কোনো সাহায্য করতে পারব না। তবে আরেকটা আইডিয়া আছে।’
‘কী?’
‘বলি?’
‘ভঙ্গিমা না করে বলে ফেল।’
মুরাদ উঠে দাঁড়িয়ে গলার টাই ঠিকঠাক করতে করতে হাসিমুখে বলল,
‘লিসাকে বিয়ে করে নে। তাহলে তিনি চলে যাবে।’
রাদ রাগান্বিত হয়ে মুরাদকে মারতে উদ্যত হতেই সে হেসে পালিয়ে যায়৷ এটা মূলত রাদকে রাগাতেই বলেছে মুরাদ।
রাদ কপাল কুঁচকে শাহাদাত আঙুল দ্বারা নাক ঘষে পাশে ফিরতেই মুরাদ দরজার কাছে উঁকি দিয়ে হেসে হেসে বলে,
‘আজ তো ওনি নেই। কফি কী লিসার মাধ্যমে পাঠাবো রাদ?’
‘সেট-আপ!’ ধমকের গলায় বলল।
মুরাদ রাদের ধমকে মুচকি হাসি প্রধান করে দরজা ভিড়িয়ে চলে যায়৷ তার আজ কফি খাওয়া হবে না। কারণ ইসানার মতো পারফেক্ট কফি এখানের কেউ বানাতে পারে না।
__
রাতে মুরাদ রাদের সঙ্গে ওর বাড়িতে আসে। আজ তাদের একটি নতুন কাপড়ের বিষয়ে আলোচনা করবে। লিসাকেও আসতে বলা হয়েছে। ডিনার সেরে লিসা রাদের জন্য সুজির হালুয়া বানিয়ে এনেছে। রাদের হালুয়া পছন্দ। ওর মন জয় করার জন্য লিসার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা। কথা হচ্ছে গেস্টরুমে। সেখানে ইসানাও ছিল। কাজ শেষে লিসা হালুয়ার বাটিটা রাদকে দেয়। রাদ সন্দিহান দৃষ্টিতে হাতে নেয়। যে মেয়ে কি-না পেজায় কাটতে পারে না, সে করেছে হালুয়া রান্না। সাংঘাতিক ব্যাপার-স্যাপার!
লিসা ইসানাকে পানি আনতে পাঠায়। ইসানা পানির জগ নিয়ে ফিরার সময় টাইসন আচমকা পায়ের কাছে আসার ফলে হাত থেকে গ্লাস পড়ে ভেঙে যায়। লিসা গ্লাস ভাঙার আওয়াজ শুনে রুম থেকে বাহিরে আসে। ইতিমধ্যে রাদ হালুয়া চামচে তুলে মুখে দেবার আগে মুরাদ কেঁড়ে নিজের মুখে পুরে নেয়। তৎক্ষনাৎ থুঃথুঃ দিয়ে পাশের ছোট্ট ডাস্টবিনে ফেলে দেয়। চোখমুখ কুঁচকে বলে,
‘ছিঃ! এটা হালুয়া। লবন দিয়ে তেঁতো করে ফেলেছে।’
রাদ কপাল কুঁচকেই ফিক করে হেসে দেয়। হেসে হেসেই বলল,
‘ভাগ্যিস! কেঁড়ে নিয়েছিলি। থ্যাংক’স!’
‘থ্যাংক’স তাই না?’ মুরাদ রেগেমেগে এগিয়ে এসে চামচে হালুয়া তুলে রাদকে জোর করতে থাকে খাওয়ানোর জন্য। রাদ হাসি নিয়ন্ত্রণে এনে মুরাদের দু হাত ধরে ফেলে। মুরাদ জোর করে খাওয়াতে চাইছে। রাদ হাত ধরে সরাতে চাইছে। তাদের জোরাজোরির এক পর্যায় মুরাদ কার্পেটের দরুন পা পিচলে রাদের গায়ের ওপর পড়ে যায়। হালুয়া সহ চামিচ পড়ে যায় বিছানার ওপর। এরিমধ্য লিসা ও ইসানা রুমে উপস্থিত হয়। মুরাদ ছিল রাদের বুকের ওপর। দৃশ্যটি ছিল নায়ক-নায়িকাদের রোমান্টিক মুহূর্তের মতো। তারা হতবিহ্বল হয়ে তাকায়। ওদের দেখে সময় বিলম্ব না করে রাদ মুরাদকে ধাক্কা দিয়ে সরানোর আগেই নিজ থেকে সরে যায় সে৷ ইতস্তত বোধ করে নিজেদের স্বাভাবিক করছে তারা। লিসা চোখ পিটপিট করে ইসানার দিকে তাকায়। ইসানা লিসার দৃষ্টি দেখে চোখ নামিয়ে নেয়। লিসা কপাল কোঁচকায়। বলে,
‘কী চলছে তোমাদের মধ্যে?’
‘মিস্টেক! তার আগে বলো, এটা হালুয়া নাকি নলুয়া? বলি নুন দিনে কী পড়ে গিয়েছিলি?’ মুরাদ বলল।
‘কেন?’ রাগী কণ্ঠে জানতে চাইলো লিসা।
‘লবন দিয়ে তেঁতো করে ফেলেছো।’
‘মিথ্যে কথা বলবে মুরাদ।’
‘খেয়ে দেখো। মিথ্যা নাকি সত্যি বুঝে যাবে।’ বলতে বলতে বাটি হাতে এগিয়ে এলো মুরাদ।
রাগী ভঙ্গিমা নিয়ে লিসা এক চামচ মুখে তুলতেই চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যায়। মুখ চেপে গি’লে ইসানার হাত থেকে পানির জগ থেকে পানি পান করে নেয়। বড়ো নিশ্বাস ফেলে বলল,
‘মিস্টেক হয়েছে।’
‘নিশ্চয় চিনির বদলে লবন দিয়েছো?’ গম্ভীর কণ্ঠে বলতে বলতে এগিয়ে এলো রাদ।
অপরাধী দৃষ্টিতে ‘হ্যাঁ’ সূচক মাথা দুলায় লিসা। রাদ ফের বলল,
‘আমি টেস্ট করার আগে মুরাদ খেয়েছে। আমাকে জোর করে খাওয়াতে গিয়ে…’ বাকিটুকু বলে না রাদ।
তারা দু’জন বুঝে নেয়। রাদ আবার রাশভারী কণ্ঠে বলে,
‘তোমার দ্বারা রান্না সম্ভব না লিসা। নেক্সট টাইম ট্রাই কোরো না।’
‘এবার তো লবন দিয়েছে। পরের বার সুজির বদলে আটা দিবে।’
লিসা অপমান বোধ করে। মুখ মলিন করে রুম ত্যাগ করল। ফিরে আসে বাড়িতে। আপাতত রুমে রাদ, মুরা, ইসানা উপস্থিত ছিল। ইসানা নৈঃশব্দ বেরিয়ে যেতে নিলে থেমে গিয়ে বলল,
‘মিথ্যে তারিফ করলে ক্ষতি হতো না। অন্তত তার মুখশ্রী মলিনতাহীন থাকতো। কাউকে খুশি করতে না পারলেও, কষ্ট দিয়ে কথা বলা অনুচিত।’এতটুকু বাক্য পাঠ করে চলে গেল।
মুরাদের মনে অনুশোচনা বোধ কড়া নেড়ে উঠে। তার একদমই উচিত হয়নি এভাবে বলা। রাদের কাছেও বিষয়টি দুঃখজনক লাগে। তবে কেউ কাউকে প্রকাশিত করল না। চাপিয়ে রাখল বক্ষে।
.
.#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_৯
#সুমাইয়া মনি
‘কালকের জন্য স্যরি লিসা।’ মুরাদ কিছুটা অপরাধী স্বরে বলল।
‘হেই! স্যরি বলার প্রয়োজন নেই। আমি কিছু মনে করিনি। দেখো, আমার যদি কোনো বিষয় তোমাদের কাছে খারাপ লাগে সংকোচ বোধ ফেলে বলবে। আমি এতে রাগ করব না।’
‘রিয়েলি?’
‘পাক্কা রিয়েলি।’
‘ওয়েল, তুমি একটু কথা কম বলো। তাতেই হবে।’ বলে হেসে দেয় মুরাদ।
লিসা সরু চোখে তাকিয়ে রয়। মুরাদ উঠে চলে যায় রাদের কেবিনে। লিসাও বেরিয়ে আসে নিজের কেবিন থেকে।
আজ ইসানা ফ্যাক্টরিতে এসেছে। রাদকে কফি দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া ধরলে মুরাদ তাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘ইসানা আপু আপনার বান্ধবী কি আপনার বয়সি?’
‘হ্যাঁ!’
‘সেইম বয়স?’
‘সেইম বয়স বলতে এক বছরেই জন্ম, হয়তো মাসের পার্থক্য হতে পারে।’
‘ও আচ্ছা।’
‘কেন বলুন তো ভাইয়া?’
‘না, এমনিতেই জেনে নিলাম আর কি।’
‘ওহ!’ বলে ইসানা চলে গেল।
রাদ সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
‘ভালোবাসার গ’ন্ধ পাচ্ছি নাকে।’
‘তেমন নয়। সোহানাকে আমার পছন্দ হয়েছে। বাট…’
‘বয়স! তাই তো?’
‘তিনি আমার বড়ো।’
‘ব্যাপার না।’
‘ক্যারি অন, মুভ অন কোনোটিই করতে পারছি না।’ সরু নিশ্বাস ফেলে বলল।
‘ট্রাই কর যেকোনো একটি।’
‘কী ট্রাই করবে রাদ?’ বলতে বলতে এগিয়ে এলো লিসা।
মুরাদ গমগম গলায় বলল,
‘অতিরিক্ত কথা বলা।’
‘কেন? আমার জন্য নাকি?’
‘হতে পারে তোমার জন্য।’ দু কাঁধ নাচিয়ে বলল রাদ।
‘ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না।’
‘খাবারের সঙ্গে বেশি করে লবন পরিবেশন করবে। দেখবে সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে।’ মুরাদ বলল।
রাদ মৃদু হাসলো। লিসা রাদের দিকে তাকিয়ে মুরাদের উদ্দেশ্যে তেজি কণ্ঠে বলল,
‘তোমরা আমাকে নিয়ে মজা করছো?’
‘নাহ!’
‘একদমই না।’ রাদ জবাবে বলে।
‘মজাই করছো। থাকব না আমি আর।’ রেগেমেগে বেরিয়ে গেল লিসা। পিছন থেকে রাদ, মুরাদ ডেকে সাড়া পায়নি।
দু’জনে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসে। পরপরই মুরাদ বিদায় বিয়ে ফ্যাক্টরি ত্যাগ করে। পথিমধ্যে সোহানাকে দেখতে পেয়ে গাড়ি পাশে পার্ক করে নেমে আসে। সোহানা ফুটপাত থেকে সবজি কিনছিল। ঠিক পাশে এসে দাঁড়ায় মুরাদ। হাত দু’টো পিছে নিয়ে সরস কণ্ঠে শুধালো,
‘আমি কী সাহায্য করব?’
সোহানা চকিতে তাকায়। মুরাদকে দেখে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
‘আমি কী বলেছি?’
‘মানবতার খাতিরে..।’
‘এক কাজ করুন। আপনি বরং মানব সংঘটনে নাম লিখান।এতে মানুষদের উপকার হবে কিছুটা।’
‘গুড আইডিয়া। আপাতত আপনাকে দিয়েই প্রথম শুরু করি, কী বলেন?’
‘লিভ মি!’ কাঠিন্য কণ্ঠে বলে অপর পাশে হাঁটতে লাগলো সোহানা।
‘আরে শুনুন।’ পিছু পিছু হাঁটছে তার।
‘সমস্যা কী? পিছু নিচ্ছেন কেন?’
‘সাহায্য করতে দিলেন না, এখন পিছু নিচ্ছি তাতেও সমস্যা।’
‘হ্যাঁ!’
‘বেচারা যাবে কোথায়?’
‘বাড়ি যেতে পারে। কেউ আঁটকায় নি তাকে।’
‘আপনি এত নিষ্ঠুর কেন?’
‘আপনার কী?’
‘অনেক কিছু!’
‘কী?’ বলে থেমে যায় সোহানা। চোখ রাঙিয়ে তাকায় মুরাদের দিকে।
‘হার্ট অ্যাটাক হবে! ঐভাবে তাকালে।’ বক্ষে হাত রেখে বলল মুরাদ।
‘রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে মজা করছেন? আপনি জানেন আমি আপনার বড়ো।’ লাস্টেরটুকু আঙুল তুলে বলল সোহানা।
‘আই নো! তাই তো যথেষ্ট রেসপেক্ট দিচ্ছি।’
‘বিরক্ত করছেন।’
‘আচ্ছা চলে যাচ্ছি। আবার পরে বিরক্ত করতে আসব।’
‘একদমই নাহ!’ গমগমে গলায় বলল।
মুরাদ মুচকি হাসি প্রধান করে চলে যায়। সোহানা কপাল কুঁচকে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। গাড়ি নিয়ে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সোহানার চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দেয়। সোহানার মুখ কিছুটা হা হয়ে যায়। চোখ পিটপিট করে দৃষ্টি নত রেখে বলে,
‘অভদ্র!’
__
সুরভী খাতুন চেয়ারম্যানের কাছে টাকা ঋণ নিতে এসেছেন। সামনের মাসের এক তারিখে তার বড়ো মেয়ে সিমার বিয়ে। যৌতুক হিসাবে ঘর সাজিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করেন ছেলের পরিবার। বিয়ে দিতে এতটুকু যদি না দিতে পারে তবে সুখী হবে না মেয়ে। এদিকে তার স্বামী লিয়াকত আলী ইটের ভাটায় কাজ করে যা টাকা উপার্জন করে তাতে সংসারে খরচ সহ তিন ছেলে মেয়ের পড়াশোনায় খরচ হয়ে যায়। তিনি নিরুপায়। এজন্য চেয়ারম্যানের কাছে টাকা চাইতে এসেছে।
চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান হক টাকা দিতে পারবে না বলে বিদায় করে দেন তাকে। খালি হাতে মুখ কালো করে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। বিয়ে বুঝি হবে না ভেবে সিমার মুখের দিকে তাকিয়ে কেঁদে ওঠেন তিনি। আচমকা মুঠোফোনে ফোন আসায় নিজেকে স্বাভাবিক করেন তিনি। বাক্যবিনিময় শুরু করে।
.
.
রাতে…
রাদ ল্যাপটপ ঘাটছিল। তখন দরজায় ঠকঠক আওয়াজ শুনে এগিয়ে আসে। সঙ্গে টাইসন এলো। রাদ দরজা খুলে ইসানাকে দেখে। ইসানা কোমলভাবে বলল,
‘কিচেনে গরুর মাংস রেখেছিলাম রান্নার জন্য। টাইসন সব খেয়ে ফেলেছে।’
রাদ ক্রোধ নিয়ে টাইসনের দিকে দৃষ্টি ফেলতেই টাইসন কাচুমাচু ভঙ্গিতে নজর সরিয়ে নিলো। যেন সে রাদের ক্রোধের কারণ বুঝতে পেরেছে। রাদ নজর সরিয়ে নিয়ে ইসানার দিকে তাকিয়ে বলল,
‘কিচেনে কাপ নুডলস আছে সেটা তৈরী করে দিন আমাকে। আর আজ রাতে টাইসনকে কোনো খাবার দিবেন না।’
‘আচ্ছা।’ বলে চলে যেতে উদ্যত হতেই রাদ বলে,
‘দাঁড়ান!’ ইসানা দাঁড়িয়ে গিয়ে ঘুরে তাকাল। রাদ বলল,
‘আপনি আমার নাম ধরে ডাকবেন যেহেতু আমি আপনার ছোট। আপনিও খেয়ে নিবেন নুডলস।’ বলে রাদ রুমে ফিরে টাইসনকে বাহিরে বের করে দিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
ইসানা মুচকি হাসে। মুখ কালো হয়ে আছে টাইসনের। ইসানা ঝুঁকে খেঁক খেঁক করে হেসে বলল,
‘উচিত হইছে। এখনো সময় আছে আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করে নেও টুসু।’
টাইসন ইসানার পুরো কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। বন্ধুত্বের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসানার। রাগ হয় তার। আঙুল তুলে সোজা হয়ে বলল,
‘লাগবে না তোর বন্ধুত্ব সর!’ চলে গেল।
রুমের ভেতরে বসে রাদ মনিটরে ইসানা ও টাইসনকে দেখছে। মূলত সে টাইসনের ভাবভঙ্গি দেখার জন্য মনিটরে চোখ রাখে। কিন্তু ইসানার কথা আর টাইসনের প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি দেখে স্মিত হাসে। দু’জনকে দেখে তার কাছে কু’কু’র ও বি’ড়া’ল বলে মনে হচ্ছে। কেননা তারা তো কখনোই বন্ধু হতে পারে না। ইসানা সেখান থেকে চলে গেলেও টাইসন সেখানেই বসে থাকে মুখ ভার করে। দরজায় কয়েকবার নখ ঘষে। ইসানা রান্না ঘর থেকে ড্রইংরুমে এসে ব্যাঙ্গ করে অনেক কথা ছুঁড়ে দেয় টাইসনের নিকট। তাতে কী? টাইসন পাত্তা দেয় না। এতে করে ইসানার প্রচুর রাগ হয়। রেগেমেগে কথা বলাই বন্ধ করে দেয়। বেশ মজা পাচ্ছে রাদ। দু’জনের খুনসুটি বিনোদন দিচ্ছে তাকে।
.
.
.
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
.
#চলবে?
কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।