বসন্ত কন্যা পর্ব – ১৫+১৬

#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৫
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

বাড়ি থেকে বের হতে হতেই আবসার কল লাগালো নিশাকে। মোবাইলের স্ক্রীনে ” ধমকরাজ ” না দেখেই ভ্রু কুঁচকে এলো নিশার। কিছু না ভেবেই কলটা রিসিভ করলো। কল রিভিস করতে দেরী হলে না আবার তার বিখ্যাত ধমক শুনতে হয়। কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভেসে এলো আবসারের নোবেলপ্রাপ্ত ধমক। নিশা চোখ মুখ খিচে কান থেকে মোবাইলটা দূরে সরালো। এই লোক তো মোবাইলেই নিশার কানের ইন্নানিল্লাহ পড়াবে।

– এই মেয়ে কোথায় তুমি? কার কাছে বলে তুমি বাড়ির বাইরে পা রেখেছো?

নিশা জিহ্বা দিয়ে নিজের শুষ্ক ঠোঁট দুটো ভিজিয়ে নিল। আবসারের ধমক শুনে কলিজা থেকে ঠোঁট সব শুকিয়ে গিয়েছিল। তারপর আমতা আমতা করে বলল – এই তো একটু আগেই বেড়িয়েছি , আপনি তখন বাড়িতে ছিলেন না তো তাই বলতে পারিনি।

আবসার আবার ধমক দিয়ে বলল – এত কথা জানতে চেয়েছি তোমার কাছে? কোথায় তুমি সেটা বলো।

নিশা ঢোক গিলে উত্তর দিল – আপনার বাড়ি থেকে ১০ মিনিট দূরে ঐ লেক টার পাশে।

আবসার বলল – যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকো আমি না আসা পর্যন্ত। ওখান থেকে এক পা সামনে বাড়ালে পা দুটো কেঁটে দেব বলেই ঠাস করে কলটা কেটে দিল।

আঁতকে উঠলো নিশা, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিজের পা দুটো দেখে নিল কয়েকবার। আবসার যদি সত্যি পা দুটো কেটে দেয়। ভয়ে ওখানেই দাঁড়িয়ে রইলো নিশা, এই লোককে কোনো বিশ্বাস নেই, কোনো দয়া মায়া মায়া নেই এই লোকের, বড্ড পাষান লোকটা। ওর এই সুন্দর পা দুটো কেটে দিতে তার একটুও মায়া হবে না। রিক্স না নিয়ে ওখানেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে নিশা।

একটু সময় পরই আবসার গাড়ি নিয়ে নিশার সামনে দাঁড়ালো। গাড়ি থেকে নেমেই নিশাকে ধমকে উঠলো – এক রত্তি মেয়ে তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে না বলে আমার বাড়ি থেকে বের হওয়ার?

নিশা ভয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে ভয়ে কিছু বলছে না। কিছু বললে না আবার চড় থাপ্পড় মেরে দেয়, এই নিষ্ঠুর লোককে কোনো বিশ্বাস নেই।

– এখন কথা বলছো না কেন?

একটু থেমে বড় বড় দুটো নিঃশ্বাস নিয়ে আবার নিশাকে বলল – গাড়িতে উঠে বসো।

নিশাও বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো। আবসার ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল। গাড়ির মধ্যে পীনপতন নীরবতা। কারো মুখে কথা নেই। দুজনেই যেন মৌন ব্রত রেখেছে। বেশ কিছুক্ষণ পর মৌনতা ভাঙলো আবসার। গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল –

– সকালে খেয়েছো?

নিশা মিনমিনে গলায় বলল – না তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়েছি তো খাওয়ার সময় পাইনি।

আবার ধমকে উঠলো আবসার।
– কোন রাজ কার্যের জন্য যাচ্ছো যে এত তাড়াহুড়া। না খেয়ে বেড়িয়েছো কেন? আর মা , সে তোমাকে না খাইয়ে বের হতে দিয়েছে কেন?

– আন্টির কোনো দোষ নেই‌। আন্টি আমাকে অনেকবার খেতে বলেছিল আমিই না খেয়ে বেরিয়ে এসেছি।

– বাহ বাহ না খেয়ে বেড়িয়েছো না যেন বিশ্ব জয় করে ফেলেছো। শরীরের তো এই অবস্থা, গলার হাড্ডি কয়টা দেখা যায়, ফুঁ দিলে যাবে উড়ে তার মধ্যে খাওয়ার প্রতি এত অনীহা। তোমাকে দেখলে মশাও তো ভাববে একে রক্ত দেব নাকি খাবো।

তেতে উঠল নিশা, আবসারকে ভয় পাওয়ার কথা ভুলে গিয়ে রাগী কন্ঠে বলল – একদম বাজে কথা বলবেন না। জানেন আজকালকার মেয়েরা কত কষ্ট করে আমার মতো একটা ফিগার পেতে, সেখানে আমি কোনো কষ্ট ছাড়াই এমন একটা জিরো ফিগারের অধিকারী।

– এটাকে জিরো ফিগার না অপুষ্টি বলে। গলায় তো মনে হচ্ছে মাছ চাষ করা যাবে।

– আপনি বোঝেন কি? আপনার মতো বুড়োর কি করে চোখে পড়বে আমার মতো ফিগারের মেয়ে মানুষকে। আপনি জানেন এই গলা এই ফিগারই আজকালকার ছেলেদের দূর্বলতা।

ঠোঁট কামড়ে হাসলো আবসার। কিন্তু নিশা এই মুহূর্তে ভয়াবহ রেগে থাকায় আবসারের হাসি চোখে পড়লো না নিশার। ঈষৎ কাছে গিয়ে ফিসফিস করে আবসার বলল – তাই নাকি? তাহলে তো একবার দেখতে হচ্ছে তোমার ফিগারটা বলেই অদ্ভূত দৃষ্টিতে নিশার পা থেকে মাথা অবদি চোখ বুলানো শুরু করলো।

লজ্জায় কুঁকড়ে গেল নিশা। কেমন ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আবসার, ঐ চোখের দিকে তাকাতে পারছে না নিশা তাকালেই কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে। নিজেকে ধাতস্থ করে মুখে ভেংচি কেটে বলল – বুড়ো বয়সের ভিমরতী।

– তুমি কি আমাকে বুড়ো বললে?

– আপনি ছাড়া গাড়িতে আর কে আছে যে তাকে বলবো?

– আমি মোটেও বুড়ো নয়। আমার বয়স মাত্র ৩০।

– আর আমার বয়স ২০। আপনি আমার থেকে গুনে গুনে ১০ বছরের বড়‌ । তার মানে আপনি আমার অপেক্ষা অবশ্যই বুড়ো।

নিশার দিকে ঝুঁকে এলো আবসার। ভয়ে সিটের সাথে মিইয়ে গেল নিশা। ফিসফিস করে আবসার বলল – আমি বুড়ো নয় বরং আমার অপেক্ষা তুমি ক*চি। ইউ নো হোয়াট, বুড়োরা কিন্তু ক*চি বউ পেলে বুউকে একটু বেশিই ভালোবাসে।

হতভম্ব হয়ে গেল নিশা। ও কি ভুল শুনেছে? আবসার ওকে এই সব কথা বলছে? যে ধমক দেওয়া ছাড়া আর কিছু করতে পারে না সে এইসব অসভ্য মার্কা কথা বলছে? এটা কি সত্যিই আবসার নাকি কোন ভুত যে আবসারের রূপ ধরে এখানে এসেছে। আবসারের মুখে এইসব কথা তো অসম্ভব। সে তো এইসব ঠোঁট কথা বলা তো দূরের কথা পছন্দও করে না। গাড়ির হর্নে নিজের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো নিশা। সামনে তাকিয়ে দেখলো আবসার এখনও ওর দিকে ঝুঁকে আছে ‌। এক আঙ্গুল দিয়ে ঠেলে দিল তাকে, অতঃপর একটা ঢোক গিলে বলল –

– এভাবে গাড়ি চালাতে চালাতে বারবার আমার দিকে ঝুঁকে গেলে এক্সিডেন্ট করবে।

হঠাৎ ব্রেক কষলো আবসার, গাড়িটা থেমে গেল। আবসার আর একটু ঝুঁকে এলো নিশার দিকে, বলল – তুমি বললে না হয় গাড়ি থামিয়ে ঝুঁকবো তোমার দিকে।

কাশি উঠে গেল নিশার। এ কোন আবসারকে দেখছে। আবসার তো মোটেও এমন না। ও যে আবসারকে চিনে সে তো গম্ভীর, রাগী , কথা কম বলা মানুষ। হঠাৎ নিশার থেকে সরে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলল – গাড়ি থেকে নামো।

নিশা ভ্যাবলার মতো আবসারের দিকে তাকিয়ে আছে। এখানে নামবে কেন ও, এখনও তো ওর বাসা অনেকটা দূরে। তাহলে মাঝপথেই কি গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে যাবে নিশাকে? এখান থেকে গাড়ি পেতেও তো কষ্ট হবে নিশার। গাড়ি পেলেও দ্বিগুণ ভাড়া চাইবে। নিশার আকাশ পাতাল ভাবনার মধ্যে আবসার আবার ধমক দিয়ে উঠলো –

– কি বলেছি শোনোনি? নামো গাড়ি থেকে নাকি এখন কোলে করে নামাতে হবে?

নিশা দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো। আবসার গাড়ি থেকে নেমে নিশার পার্স ব্যাগের এক কোনা ধরে টেনে পাশের একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। নিশা আহম্মকের মতো চোখ বড় বড় করে চারদিকে দেখছে।

– কি খাবে?

নিশার কানে যেন আবসারের কন্ঠস্বর পৌঁছালো না। সে ড্যাবড্যাব করে চারদিক দেখতে ব্যস্ত। তার সামনে যে আবসার নামক প্রানী বসে আছে সে দিকেও খেয়াল নেই নিশার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নিশা। এই মেয়েকে ধমক ছাড়া কোনো কাজ করানো যায় না। কিন্তু এই মুহূর্তে ধমক দেওয়ার কোনো মুড নেই আবসারের। তাই ওয়েটারকে ডেকে নিজেই খাবারের অর্ডার করলো আবসার।

একটু পর ওয়েটার এসে টেবিলে খাবার রাখলো। গম্ভীর কন্ঠে আবসার বলল – এখন কি খাবে নাকি তাও আমাকে খাইয়ে দিতে হবে?

ধ্যান ভাঙলো নিশার। বোকা বোকা চোখে প্রশ্ন করলো – কি খাবো?

আবসার দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো – আমাকে খাও। নিশ্চই আমার মাংস অনেক টেস্টি।

থতমত খেয়ে গেল নিশা। সামনে তাকিয়েই দেখে বিরিয়ানি রাখা। চোখ দুটো চকচক করে উঠলো তার। বিরিয়ানি যে নিশার খুব পছন্দ। কিন্তু এই খাটাশ লোক জানলো কিভাবে?

খেতে খেতে আবসার উত্তর দিল – বিরিয়ানি আমারও খুব পছন্দের তাই অর্ডার করেছি। এত চিন্তা না করে খাওয়া শুরু করে না হয় মাইর একটাও নিচে পড়বে না।

হুড়মুড়িয়ে খাওয়া শুরু করলো নিশা, মুচকি হাসলো আবসার। না ধমকিয়ে, না বকে এই মেয়েকে দিয়ে কোনো কাজ করানো যায় না।
#বসন্ত_কন্যা
#পর্ব_১৬
#লেখিকা : সাদিয়া

( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )

পাশে চেয়ার টেনে কাউকে বসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিশা। ওর পাশেই বসে আছে ফয়সাল। ফয়সাল আবার এখানে এলো কোথা থেকে। মাথা ঘুরিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে আবসার ভাবলেশহীন ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। এখানে কে আসলো বা গেলো বিন্দু মাত্র খেয়াল নেই তার। তার সম্পূর্ণ মনোযোগ এখন বিরিয়ানির দিকে। মিনিট খানেক বাদে ফয়সালই প্রথম কথা শুরু করলো, বলল-

– কলেজে যাসনি আজকে? এখানে কি করছিস?

– আপনাদের মতো অতো ভালো স্টুডেন্ট না তো তাই রোজ ক্লাস করি না।

ফয়সাল স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে নিশা ওকে খোঁচা মেরেই কথাটা বলেছে। কিন্তু করার কিছুই নেই। কম অপমান তো ও নিশাকে করেনি সেই অপমানের জবাবই হয়তো এখন দিচ্ছে। সেদিন আবসারের সাথে শপিং মলে দেখার পর থেকে এই কয়দিন অনেক ভেবেছে , ফয়সালের আর এখন বুঝতে বাকি নেই যে নিশা ওর হৃদয়ের অনেকটা জুড়ে রয়েছে, বিশেষ করে বসন্তের সেদিনের পর থেকে খুব করে বুঝেছে ব্যাপারটা। নিশাকে পেতে হলে এখন দাঁতে দাঁত চেপে হলেও সবটা সহ্য করে নিতে হবে, ভুলটা ওরই। চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল –

– এখানে কি করছিহ তাও বান্ধবীর ভাইয়ের সাথে, ইদানিং সব জায়গাতেই তো দেখছি বান্ধবীর ভাইকে নিয়ে যাচ্ছিস।

দাঁতে দাঁত চেপে নিশা জবাব দিলো – কাল বান্ধবীর বাড়িতেই ছিলাম। ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় আর বাড়িতে যেতে পারিনি। আর আমার বান্ধবীর ভাই যথেষ্ট দায়িত্ব সম্পূর্ণ মানুষ কিনা তাই সাজ সকালে একটা মেয়েকে একা ছাড়তে পারেনি।

– তা তুই যেন কোন কলেজে পড়িস?

– আপনার মতো ভালো স্টুডেন্ট এত সহজে আমার কলেজের নাম ভুলে গেল,এটা কিন্তু মোটেও ঠিক হয়নি।

উঠে দাঁড়ালো নিশা। আবসারের দিকে তাকিয়ে দেখে এখনও ভাবলেশহীন ভাবে খেয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে এই ব্যক্তিকে নিশার কাছে পৃথিবীর সেরা খাদক মনে হচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেপে নিশা বলল – আবসার ভাই চলেন।

কাশি উঠে গেল আবসারের । অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেড়িয়ে এলো : ভাই?

হন্তদন্ত হয়ে পানি এগিয়ে দিল নিশা। আবসার পানিটা মুখে নেওয়ার সাথে সাথে আবার বলল – এখন ঠিক আছে ভাইয়া?

কাশি কমার বদলে আরও বেড়ে গেল। কাশতে কাশতে চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে এলো। নিশা আবার বলল –

– ভাইয়া আপনার কি খুব কষ্ট হচ্ছে?

উঠে দাঁড়ালো আবসার, শক্ত করে নিশার হাতটা চেপে ধরে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে বলল –

– ভাই কিসের ভাই? আর একবার ভাই বা ভাইয়া বললে থাপড়াতে থাপড়াতে গাল লাল করে দেব।

হতভম্ব হয়ে গেল নিশা। ভাইয়া বলাতে এত রেগে গেছে আবসার। কোনো রকম একটা ঢোক গিলে মিনমিনিয়ে বলল- আপনি আমার থেকে অনেক বড় । আপনাকে তো আর আমি নাম ধরে ডাকতে পারি না, আর ভাইয়া বলতেও বারন করলেন তাহলে কি বলবো?

– তোমার যা খুশি বলো শুধু ভাইয়া বলবে না।

নিশা লাফিয়ে উঠে বললো – আঙ্কেল।

– একটা ধাক্কা মেরে এখনই রাস্তার মাঝখানে ফেলে গাড়ি চাপা দিয়ে দেব।

চুপসে গেল নিশা। বিরবির করে বলল – ভাইয়া বলতে পারবো না , আঙ্কেল বলতে পারবো না তাহলে বলবোটা কি?

– জান বলো জান ( চেঁচিয়ে বলল আবসার )

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে আবসারের দিকে তাকালো নিশা। আবসার ধমক দিয়ে বলল-

– ভ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছো কেন? মাথা মোটা কোথাকার, গাড়িতে উঠে বসো ।

বাধ্য মেয়ের মতো গাড়িতে উঠে বসলো নিশা। এই মুহূর্তে আবসার যে পরিমাণ রেগে আছে তাই আর কথা না বাড়ানোই শ্রেয়‌।

______________________

কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে নিশা, আয়না, কাজল, নিলয় , রাকিব। গতকাল এরা কেউই কলেজে আসেনি। কাজল কেমন অন্য মনস্ক হয়ে বসে আছে। ওদের আড্ডার মধ্যেই দুটো ছেলে এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে, তাকিয়েই দেখে আবসার আর শাহরিয়ার। শাহরিয়ারকে দেখেই কাজল উঠে দৌড় দিতে নিলেই শাহরিয়ার খপ করে কাজলের হাতটা টেনে ধরলো। কাজল ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিল। কাজলের হঠাৎ কান্নায় আহম্মক বনে গেল সবাই। এই মেয়ের আবার কি হলো? এতক্ষন তো ঠিকই ছিল হঠাৎ কাঁদছে কেন?

নাক টেনে টেনে কাজল বলল – আমি বিয়ে করবো না, ছাড়ুন আমাকে আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবো না। কথা দিচ্ছি আমি জীবনেও আর কারোর কিছু দেখবো না তবুও এই বিয়ে আমি করবো না।

নিলয় লাফ দিয়ে উঠে খুশিতে গদগদ হয়ে বলল – তবে কি আমি আর একটা বিয়ে খেতে চলেছি?

রাকিব নিলয়ের পিঠে একটা থাপ্পর মেরে বলল – তোর তো সব সময় শুধু খাই খাই , বুঝতে দে আগে এখানে হয়েছেটা কি?

শাহরিয়ার বলল – চুপ বেয়াদব মেয়ে। আমার মতো একটা ভদ্র , মার্জিত, সুশীল ছেলের সব কিছু লুটে নিয়ে এখন বলছো বিয়ে করবে না? এখন এই মুহূর্তে আমাকে তোমার বাড়ি নিয়ে যাবে আজই বিয়ে করবো আমরা।

বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে সবাই কাজলের দিকে তাকালো। নিশা গোল গোল চোখ করে কাজলকে প্রশ্ন করলো – তুই উনার কি লুটে নিয়েছিস?

শাহরিয়ার কাঁদো কাঁদো কন্ঠে জবাব দিলো – আমার সব লুটে নিয়েছে। আমার প্যান্ট….. ছিঃ ছিঃ বলতেও লজ্জা করছে আমার। আর এখন আমাকে বিয়ে করতে চাইছে না কি অসভ্য মেয়ে বলুন।

হতভম্ব কাজল। বলে কি এই ছেলে, ও তো শুধু একটু দেখেছে, লুটে কখন নিল? রাগী কন্ঠে বলল – একদম মিথ্যা কথা বলবেন না, লুটে কখন নিলাম, শুধু একটু দেখেছিই তো।

শাহরিয়ার এবার কেঁদেই দিল। নাক টেনে টেনে বলল – দেখেছেন উনি স্বীকার করেছেন, উনি আমার সব দেখে নিয়েছেন যেগুলো এত বছর ধরে শুধুমাত্র আমার বউয়ের জন্য সযত্মে রেখে দিয়েছি। এখন আমার কি হবে ? আমার মতো এক অবলা ছেলের এত বড় একটা সর্বনাশ করে এখন বলছে বিয়ে করবে না।

আবার বিষ্ফোরিত দৃষ্টিতে সবাই তাকালো কাজলের দিকে। নিশা গোল গোল চোখ করে ভাবছে তাহলে সেদিন রাতে এই দেখার কথাই বলছিল শাহরিয়ার। মস্তিষ্কের নিউরনগুলো জানান দিচ্ছে সেদিনের আবসারের কথাটা ” তোমার শুধু আমারটা দেখার অধিকার আছে আর কারোর টা না, তাও বিয়ের পর । ” হতভম্ব নিশা, আবসার সেদিন এই দেখার কথা বলেছিল। গোল গোল চোখে আবসারের দিকে তাকালো নিশা। আবসার ভাবলেশহীনভাবে দাঁড়িয়ে আছে, চোখে আবার একটা কালো সানগ্লাস হাঁকিয়েছে। আয়না চুপচাপ এক কোনে বসে আছে। কোনো কথা বলছে না, কথা বললেই বিপদ। কোনোভাবে শাহরিয়ার যদি টের পায় সেও এক ঝলক সেদিন দেখেছিল তাহলে না তাকেও বিয়ে জন্য টানাটানি লাগায়‌। ওর কোনো ইচ্ছে নেই এই শাহরিয়ার নামক অবলা, ছিঁচকাদুনে ছেলে কম মেয়ে বেশীকে বিয়ে করার। তাছাড়া ওর ক্রাশ আছে।

__________________________

রাতে নিজের রুমে শুয়ে শুয়ে মেসেঞ্জারে গ্রুপে কথা বলছিল , হঠাৎ চোখে পড়লো কেউ একজন মেসেজ রিকোয়েস্ট দিয়েছে। ঢুকে দেখে ফয়সাল, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টও পাঠিয়েছে। তাচ্ছিল্যের একটা হাসি হাসলো নিশা। মনে পড়ে গেল অতীতের কথা।

তখন নিশা কেবল কলেজের গন্ডিতে পা রেখেছিল। বন্ধু বান্ধবীদের সকলের মোবাইল আছে শুধু ওরই ছিল না। পুরো একটা সপ্তাহ বাবার পিছু পিছু ঘুরে, খাওয়া নাওয়া বাদ দিয়ে, নির্জলা অনাহার করে একটা মোবাইল পেয়েছিল নিশা। সেটাই ওর জীবনের প্রথম মোবাইল, symphony V75, তখনকার দাম ছিল ৪৪৯৯। মোবাইলটা পেয়ে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছিল নিশা। সেদিন খুব খুশি ছিল সে। মোবাইলটা হাতে পেয়েই পাশের বাসার মেয়েটার কাছে ছুটেছিল নিশা, মেয়েটা ওর থেকে ৩ বছরের বড়। তাকে দিয়ে একটা ফেসবুক একাউন্ট খুলিয়ে এনেছিল। ফেসবুক একাউন্টটা খুলেই প্রথম ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিল ফয়সালকে। কিন্তু ফয়সাল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেনি। রাত দিন শধু অপেক্ষা করত, বারবার ফেসবুকে ঢুকে চেক করতো ফয়সাল ওর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে কিনা, না করেনি। ফয়সালকে বলারও সাহস হচ্ছিল না। অনেকবার ফয়সালকে মেসেজ দিতে গিয়ে, মেসেজ টাইপ করে আবার ডিলেটও করেছে। অবশেষে একদিন সাহস করে ফয়সালকে মেসেজ দিয়েই ফেলল ফ্রেন্ড রিকোয়েস্টটা একসেপ্ট করতে বলল। সাথে সাথেই মেসেঞ্জারে ফয়সালের কল এলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল নিশা। ফয়সাল কেন ওকে কল দিল? নিশ্চই ওর সাথে কথা বলতে, ইস কতদিন ফয়সালের কন্ঠস্বরটা শোনে না, আজ এত দিন পর ফয়সালের মিষ্টি কন্ঠস্বরটা শুনতে পাবে। কাঁপা কাঁপা হাতে কলটা রিসিভ করতেই শুরু করলো ফয়সাল অপমান করা, ছাড়েনি ওর মাকেও, বলেছিল ও নাকি ওর মায়ের মতো ছেলে পটানোর ধান্দা করছে। খুব কেঁদেছিল নিশা, কিন্তু তবুও কেন যেন বেহায়া মনটা তখন ফয়সালকেই চাইতো‌, ভুলতে পারতো না তাকে। সেদিনই ফয়সাল ওকে ফেসবুক থেকে ব্লক করে দেয়‌। আজ সেই ফয়সাল কিনা নিজে থেকে ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিচ্ছে, মেসেজ রিকোয়েস্ট দিচ্ছে। সময় কি না পারে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here