পর্বঃ২৩
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
অডিটোরিয়ামে একা একা নাচের অনুশীলন করছিলো রাইদা। হাঁপাতে হাঁপাতে মিউজিক বন্ধ করে তাওয়াল দিয়ে ঘাম মুছে পানির বোতল খুলে মুখে দেয়।পানি খেতে খেতে জানালার দিকে নজর গেলে পানি মুখে নিয়ে রাইদার কাশি শুরু হয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে কাশি থামানোর চেষ্টা করে।মাথায় চাপড় দিয়ে কাশি থামিয়ে জানালার দিকে নজর গেলে কাউকে দেখতে পায় না,দৌড়ে অডিটোরিয়ামের দরজা থেকে বের হয়ে আশে পাশে তাকায় কিন্তু কেউ নেই।
‘জানালার সামনে মাত্র দেখলাম সায়নকে এই টুকু সময়ে গেলো কোথায়?’,বিরবির করে কথাটা বলে রাইদা।
মাথায় চুলকে চিন্তা করতে থাকে ঠিক দেখেছে নাকি ভুল। ভাবতে ভাবতে অডিটোরিয়ামে ঢুকে নিজের চশমাটা চোখে দিয়ে আবার জানালার দিকে তাকায়,রাইদার মনে আছে সে যখন পানি খাচ্ছিলো জানালার সামনে দাঁড়িয়ে সায়ন তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।
‘মেবি অন্য কেউ ছিলো আর আমি সায়নকে ভেবেছি এমনিতেও চশমা ছাড়া দূরের বস্তু অস্পষ্ট দেখি।’,নিজের মাথায় হাত দিয়ে আলতো চাপড় দিয়ে বলে রাইদা।
ব্যাগ নিয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বের হয়ে ক্যান্টিনের দিকে যেতে থাকে বাকিরা সেখানেই আছে। আজকে অনুশীলনে রাইদা দেরি করে এসেছে তাই ব্রেকও পরে নিয়েছে। ক্যান্টিনে গিয়ে দেখে পায়েল কিছু নিয়ে হাসাহাসি করছে। রাইদাকে দেখে চেয়ার থেকে পা নামিয়ে বসতে দেয় অর্ক।
ছোটুকে ডেকে রাইদা নিজের জন্য মিল্কশেক অর্ডার দেয়।
‘কিরে তোরা আমাকে রেখেই আড্ডা চালু করে দিলি?’,চেয়ারে বসে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘এই মাত্র কি হয়েছে তুই শুনলে হাসতে হাসতে কো*মা*য় যাবি।’,পায়েল হাসতে হাসতে বলে।
‘তুই আগে হাসি থামা তারপর বল।’,রাইদা বলে।
‘এইমাত্র একটা জুনিয়র মেয়ে এসে বাপ্পিকে ডাক দেয়।মেয়েটার চাহনি দেখে বাপ্পি ভেবেছিলো ওকে কিছু বলবে। বাপ্পি শার্ট ঠিক করে মেয়েটার কাছে হাসিমুখে গেছে আর ফিরে আসছে গোমড়া মুখে।’,হাসি আঁটকে বলে পায়েল।
‘কিরে কি এমন বললো যে তোর মুখ এখনো ভাড় হয়ে আছে?’,বাপ্পির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘ভাবলাম ফাইনালি মিঙ্গেল হবো কিন্তু মেয়েটা মিষ্টি সুরে ডাক দিয়ে ভাই বলে আমার ছোট্ট মনটা ভেঙে দিলো।’,দুঃখী মুখ করে বলে বাপ্পি।
‘ভাই ডেকেছে তাই এই অবস্থা? ‘,রাইদা হাসি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘মেয়েটা আমাকে বলছে,আপনি আমার বড় ভাই আজ থেকে এখন আপনার ছোট বোন মানে আমার জন্য আপনার বন্ধু ফাহিমকে পটিয়ে দেন।সিরিয়াসলি আমাকে কোন দিক দিয়া জাতির ভাই লাগে?যে আসে ভাই ডাকে।ফাহিমকে নাকি ওর ক্রাশ কিন্তু ফাহিম পাত্তা দিচ্ছে না।ফেসবুকে ঝুলিয়ে রেখেছে তাই আমার কাছে সাহায্য চাইতে আসছে। ‘,বাপ্পি জবাব দেয়।
বাপ্পির কথা শুনে রাইদা শব্দ করে হেঁসে দেয়।
‘তোর চেহারাই ভাই টাইপ বাপি দা।’,জোরে হাসতে হাসতে বলে পায়েল।
‘আমাদের জাতির ভাই বাপ্পি।’,কথাটা বলে রাইদা হাসতে হাসতে অর্কের কাঁধে মাথা দিয়ে হেলান দেয়।
‘তারপর বাপ্পি কি বলছে শোন আগে।’,পায়েল হাসি থামিয়ে বলে।
‘বল শুনছি।’,সোজা হয়ে বসে বলে রাইদা।
বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বাপ্পির অভিনয় করে বলে পায়েল,’এই ফ্রেশার ফাহিমের গার্লফ্রেন্ড আছে, ওর গার্লফ্রেন্ড যদি তোমাকে দেখে তাহলে তোমার পা ভা*ঙ*বে জলদি ভাগো। আর শোনো আমি কিন্তু পিওর সিঙ্গেল। এরপর মেয়েটা বাপ্পিকে ভেংচি দিয়ে চলে গেছে।’
‘কিরে বাপ্পি কি শুনলাম?’,হাসি দিয়ে বাপ্পিকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘দূর তোদের সাথে থাকুম না আর।’,কথাটা বলে বাপ্পি উঠে চলে যায়।
‘আরে শোন তো কই যাস?এই বাপি দা। তোরা আয় আমি ওরে বিরক্ত করতে যাই।’,ব্যাগ নিয়ে বাপ্পির পিছনে দৌড় দেয় পায়েল।
পায়েল যেতেই রাইদা উঠে অর্ক আর ফাহিমের মাঝের চেয়ারে বসে।
‘কিরে ফাহিম কাজ কতদূর?’,রাইদা ফাহিমের ল্যাপটপে উঁকি দিয়ে জিজ্ঞেস করে।
‘এত ভিডিও করছিস যে এডিট করে শেষ করতে পারছি না।আমাকে এক্সট্রা পে করবি না হলে একটা ভিডিও ও আপলোড করবো না।’,ফাহিম ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয়।
‘আগে কাজ কর পরে টাকার চিন্তা করিস।আর তোর এই রোবট মার্কা এক্সপ্রেশন পাল্টা।আমি বুঝি না মেয়েরা এইসব এক্সপ্রেশন দেখে কীভাবে তোর উপর ক্রাশ খায়।’,রাইদা সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে।
‘তুই আগে নিজের এক্সপ্রেশন ঠিক কর। তুই হাসলে তো পুরা এলাকা কেঁপে যায়। ‘,ফাহিম জবাব দেয়।
রাইদা ফাহিমের পিঠে কিল দেয়।
‘তুই আমাকে মারলি দেখ তোর পিছনের মেয়েটা কীভাবে তাকিয়ে আছে।’,ফাহিম রাইদার পিছনে না তাকিয়ে বলে।
রাইদা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে তিনটা মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে একে অপরের কানে কানে কিছু বলছে।রাইদা গম্ভীর মুখে তাকাতেই মেয়েগুলো ভয়ে সেখান থেকে পালায়। মেয়েগুলোর অবস্থা দেখে রাইদা হেঁসে দেয়।
অর্ক চুপচাপ ফোনের দিকে তাকিয়ে বসে আছে। রাইদা অর্ককে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
‘রুহি নাকি আজকে কালকে আসবে না? একেবারে প্রোগ্রামের দিন আসবে? ‘,গলা ঝেরে বলে রাইদা।
রাইদার কথা শুনে অর্ক মাথা তুলে তাকায়।
‘তুই কি চাচ্ছিস আমি এখান থেকে উঠে চলে যাই?’,অর্ক রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘তোরে আমি কিছু বলছি? তোর গায়ে লাগে কেন? যা এখান থেকে ভাগ।’,ব্যাগ দিয়ে অর্ককে মেরে বলে রাইদা।
অর্ক রাগ করে উঠে চলে যেতে নিলে রাইদা উঠে গিয়ে অর্কের পথ আঁটকায়।
‘রুহিকে বলেছিলি কিছু?’,অর্ককে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘না বলছি না বলবো। ও শুধু আমার বন্ধু আর কিছু না।’,রাইদাকে পাশ কাটিয়ে অর্ক চলে যায়।
রাইদা হতাশ চোখে টেবিলে গিয়ে বসে ফাহিমের দিকে তাকায়। ফাহিম বুঝতে পারে রাইদা এখন তাকে বিরক্ত করবে তাই সে কাজের বাহানা দিয়ে উঠে চলে যায়।
গালে হাত দিয়ে রাইদা ভাবতে থাকে রুহি আর অর্ককে কীভাবে মিলিয়ে দিবে। রাইদার ভীষণ ইচ্ছে ওদের বিয়ে পড়িয়ে তারপর নাচানাচি করবে সেই বিয়েতে।
‘আপা আপনার মিল্ক শেক।’,রাইদার ভাবনার মাঝে টেবিলে একটা গ্লাস রেখে বলে ছোটু।
‘কিরে কি অবস্থা তোর ব্যবসার?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘এই তো আপা চলতেছে তয় সিনিয়ররা বাকি খায় প্রচুর।’,ছোটু জবাব দিয়ে চলে যায়।
‘আমাদের ডিপার্টমেন্টের যারা এখনো টাকা পরিশোধ করেনি লিস্ট টা আমাকে দিস, টাকা কীভাবে না দিয়ে খেতে আসে আমিও দেখবো।’
রাইদার কথায় ছোটু মাথা নাড়িয়ে চলে যায়।
মিল্ক শেকের ওয়ান টাইম গ্লাসটা হাতে নিয়ে রাইদা ক্যান্টিন থেকে বের হয়।পাইপ দিয়ে খাচ্ছিলো আর হাঁটছিলো।গুনগুন করে গান গেয়ে হাত পা নাড়িয়ে অডিটোরিয়ামের দিকে যাচ্ছিলো। মাথা ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকালে রাইদার চোখ আঁটকে যায় সাদা শার্ট পরিহিত সায়নের দিকে।সায়ন ফোনে কথা বলতে বলতে রাইদাকে হাই দেয়, এটা দিকে রাইদা সাথে সাথে পিছনে ঘুরে হাতের মিল্কশেকটা একটা বেঞ্চের উপর রেখে নিজের চশমা খুলে সেটা মুছে আবার চোখে দিয়ে ঘুরে তাকায়। চারিদিকে তাকিয়ে কোথাও সায়নকে দেখতে পায় না।
একদল মেয়ে রাইদার সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো রাইদা ওদের ডাক দেয়।
‘ঐখানে কাউকে দেখছো?’,ইশারায় যেখানে সায়ন দাঁড়িয়ে ছিলো সেই জায়গাটা দেখায় রাইদা।
‘না আপু কিছু সিনিয়র ছাড়া তো আর কাউকে দেখছিনা।’,মেয়ে গুলো জবাব দেয়।
‘আচ্ছা যাও তোমরা।’,রাইদার কথামতে মেয়েগুলো চলে যায়।
ফোন বের করে সায়নের নাম্বার ডায়াল করে রাইদা।
‘কি ব্যপার আজকে সূর্য কোন দিকে উঠছে? আমার বউ যে আমাকে কল দিয়েছে আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না। বউ তোমার শরীর ঠিক আছে তো?’,কল রিসিভ করে সায়ন প্রশ্ন করতে থাকে।
‘আপনি কোথায় এখন?’,রাগ দমিয়ে রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘কেনো বউ মিস করছো? ঠিকানা দাও আমি এক্ষুণি চলে আসছি। ‘
‘ফালতু কথা রেখে যেটা জিজ্ঞেস করছি সরাসরি জবাব দেন।’
‘অফিসে আছি কাজে ব্যস্ত।তুমি তো জানোই না তোমার বর কিন্তু বেকার না কাজ করে।’
‘আপনার অফিস কোথায় ঠিকানা দেন।’
‘আমার অফিস তো বনানীতে।এই রি তোমার কি শরীর খারাপ সত্যি বলো তো,এভাবে তো নিজ থেকে আমার খবর নেওয়ার মেয়ে তুমি না।’
‘কিছু হয় নি এমনি জিজ্ঞেস করলাম,রাখছি এখন। ‘
কল কেটে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাইদা।
‘এখানে সায়ন আসবে কই থেকে উনি তো জানেনই না আমার বিষয়ে কিছু।ভার্সিটি খুঁজে পাওয়া তো অসম্ভব। বিগত কয়েকদিন তার সাথে অনেকবার দেখা হয়েছে তাই হয়তো বারবার তাকে এখানে সেখানে দেখছি।তুই ও না রাই কেনো এতো সায়নকে নিয়ে ভাবছিস দূর।’,বোকা হাসি দিয়ে নিজের মাথায় চাপড় দেয় রাইদা।
অডিটোরিয়ামের দিকে এগিয়ে যায় রাইদা । অডিটোরিয়ামে গিয়ে দেখে বাকিরা অনুশীলনে ব্যস্ত।সকল ভাবনা ফেলে রাইদা গিয়ে ওদের সাথে অনুশীলনে যোগ দেয়।
..
নাচের অনুশীলন শেষে দুপুরে সকলে চলে যায় খেতে।বাপ্পির মায়ের কল আসায় সে বাসায় ফিরে যায়। রাইদা,অর্ক,পায়েল,ফাহিম রেস্টুরেন্টে গিয়ে লাঞ্চ সেরে নেয়।
খাওয়া শেষ করে অর্ক নিজের বাইকে পায়েলকে বাসায় পৌঁছে দেয়। ফাহিমের কিছু কাজ থাকায় সে তখন বাসায় ফিরে না। রাইদা রিকশা নিয়ে বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় ফিরে রাইদা দেখে তার মা রান্নাঘরে রান্না করছে আর বাসার মর্জিনা খালা তাকে সাহায্য করছে। নিজের রুমে ঢুক দরজা লাগিয়ে দেয় রাইদা। গোসল করে বিশাল একটা ঘুম দেয়।
ফোনের রিংটোনের শব্দে রাইদার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমঘুম চোখে বালিশের পাশ থেকে হাতরে নিজের ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করে কানে দেয়।
‘হ্যালো রাই স্পিকিং। কাকে চাই?’,ঘুমে জড়ানো স্বরে বলে রাইদা।
‘আমার বউকে চাই তার কাছে একটু ফোনটা দেন প্লিজ।’,ফোনের অপরপাশ থেকে বলে সায়ন।
‘সরি রং নাম্বারে কল দিয়েছেন এখানে বউ নামের কেউ থাকে না।’
রাইদার ঘুমে জড়ানো কথা শুনে সায়ন হেঁসে দেয়।
‘বউ কি গভীর ঘুমে? আমার তো বউয়ের সাথে ডেট এ যেতে ইচ্ছে করছে। বউ কি একটু বের হতে পারবে?’
‘আম স্লিপিং। ‘
কথা বলতে বলতে রাইদা আবারো ঘুমিয়ে যায়।হাত থেকে ফোন পড়ে যায় বিছানায়। ফোনের অপর পাশ থেকে সায়ন রি বলে কয়েকবার ডাকে কিন্তু সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝে নেয় রাইদা ঘুমিয়ে গেছে। রাইদার এহেন কান্ডে কল কেটে সায়ন হাসতে থাকে।
ঘন্টা খানেক পর রাইদার ঘুম ভাঙে দরজায় নক করার শব্দ। ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে দরজা খুলে। মান্নান রাফায়েত অফিস থেকে মাত্রই ফিরে মেয়ের রুমে নক করে।
‘তুমি ঘুমিয়েছিলে? শুনলাম দুপুরে এসে দরজা বন্ধ করেছো এরপর আর সাড়াশব্দ নেই।অনেক রাত হয়েছে না খেয়ে ঘুমালে মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যাবে।হাত মুখ ধুয়ে আসো আমিও ফ্রেশ হয়ে আসি।’
মান্নান রাফায়েতের কথা মতো রাইদা বাথরুমে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে। ফোন হাতে নিয়ে ডাইনিং রুমে চলে যায়। রাত বাজে নয়টা, রাইদা মনে করার চেষ্টা করে সে ঠিক কতক্ষণ ঘুমিয়েছে।সায়ন যে কল দিয়েছিলো সেটাও রাইদার মনে নেই।মর্জিনা খালা সকল খাবার টেবিলে এনে রাখে। রওশন আরা রাইদার প্লেটে খাবার দিতে শুরু করে। মান্নান রাফায়েত এসে রাইদার বিপরীত চেয়ার টেনে বসে। রাইদা ফোনের দিকে তাকিয়ে খেতে শুরু করে আর কোনো দিকে তার ধ্যান নেই। রওশন আরা মান্নার রাফায়েতের পাশের চেয়ার টেনে খেতে বসে।
‘তা তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?’,মেয়ের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে মান্নান রাফায়েত।
‘আমার সেমিস্টার ব্রেক চলছে সেটা আপনার জানার কথা। সামনের সপ্তাহ থেকে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু।আপাতত বলতে পারি লাস্ট সেমিস্টারে পাশ ও করতে পারি আবার ফেল ও করতে পারি।’,আগের ন্যায় ফোনের দিকে তাকিয়ে জবাব দেয় রাইদা।
‘প্রতিবারই টেনেটুনে পাশ করো এতে তো কোনো লাভ নেই। কি এক কনসার্ট করে বেড়াও বুঝি না।এসব বাদ দিয়ে পড়াশোনাটা আগে করো।’
‘টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং পড়ার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না এটা আপনাদের ইচ্ছে যা আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছেন। সাথে বলেছেন এটার পাশাপাশি আমি আমার মন যেটা সেটা করতে পারবো। আমিও টেক্সটাইল পড়ছি আর নিজের স্বপ্নটাও আগলে রেখেছি এতে তো কারো সমস্যা হওয়ার কথা না।’
‘রাই ভুলে যাচ্ছিস উনি তোর বাবা? এভাবে কথা বলে কেউ?’,রওশন আরা ধমক দিয়ে বলে রাইদাকে।
‘আরে ওরে বলতে দাও।যতক্ষণ ভেতরে জমে থাকা ক্ষোভ বের না করবে ততক্ষণ আমাদের দূরত্ব কমবে না।’,মান্নান রাফায়েত স্ত্রী কে থামিয়ে বলেন।
রাইদা কোনো জবাব না দিয়ে খেতে থাকে। মান্নান রাফায়েত ও আর মেয়েকে প্রশ্ন করে না। খাওয়া শেষ করে রাইদা নিজের রুমে চলে যায়।
..
রাইদার বাসার নিচে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে সায়ন। মাথা তুলে কয়েকবার রাইদাদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়েছে। ভার্সিটিতে রাইদার খোঁজ পেতেই ওর পিছনে লোক লাগিয়েছিলো যাতে রাইদার সকল ডিটেইলস পেয়ে যায়। আজকেই রাইদার বাসার ঠিকানা পেয়েছে তাই তো অফিসের কাজ শেষ করেই ছুটে এসেছে। সকালে রাইদাকে ভার্সিটিতে যেভাবে চমকে দিয়েছিলে এখন ইচ্ছে করছে ওর বাসায় গিয়ে ডাবল চমক দিতে। সকালের কথা মনে পড়তেই সায়নের মুখে হাসি ফুটে উঠে।রাইদাকে এতো সহজে বোকা বানাতে পারবে সে ভাবতে পারেনি।
‘মানুষ খোঁজ খবর নিয়ে বিয়ে করে আর আমি বিয়ের পর বউয়ের খোঁজ খবর নিচ্ছি কি কপাল আমার। শ্বশুড় শ্বাশুড়িকে আগে পটাতে হবে আপাতত বউটা পটবে না সেটা বেশ বুঝতে পারছি।’
বিরবির করে কথাগুলো বলে আবারো মাথা তুলে ফ্ল্যাটের দিকে তাকায়।হাতের সিগারেট ফেলে গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিতে নিলে পাশের সিটে থাকা হেয়ার ক্লিপের দিকে চোখ পড়ে যেটা রাইদা ফেলে গিয়েছিলো গাড়িতে আর সে রেখে দিয়েছে। হাত বাড়িয়ে ক্লিপটা নিয়ে পকেটে ভরে।
‘বউয়ের প্রেমে পাগল হতে আর বেশি দেরি নাইরে ইমতিয়াজ সায়ন। যা শুরু করছিস কয়দিন পর পাবনা পাঠানো লাগবে তোরে।’, কথাগুলো বলে হেঁসে দেয় সায়ন।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নিজের বাসার রাস্তা ধরে।
…
একদিন পেরিয়ে চলে আসে কনসার্টের দিন।
রাইদা,অর্ক,পায়েল,বাপ্পি,রুহি,ফাহিম সকলে মিলে সকাল সকাল মিটিং করে ডিসকাশন করেছে কীভাবে আজকের পারফরম্যান্সটা ঠিকঠাক করবে।
দুপুর বেলা রেডি হচ্ছে রাইদা আর তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে পায়েল।পাশে বসে নিজের সাজ ঠিক করছে রুহি।
‘দেখ তো ঠিক আছে কিনা।’,রাইদাকে জিজ্ঞেস করে পায়েল।
‘চুলটা সেট কর সাজ ঠিক আছে। আচ্ছা আমাদের পারফর্ম কয়টায়?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘বললো তো ছয়টার দিকে।’,রুহি জবাব দেয়।
‘কে বললো এই কথা? এতো দেরিতে আমাদের পারফরম্যান্স কেনো রেখেছে?’,বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘সময় তো ফাহিম ঠিক করেছে ওরে জিজ্ঞেস কর আমি জানিনা এ বিষয়ে।’,রুহি জবাব দেয়।
‘যাই হোক আমার সাজ হলে তোরা নিজেরাও রেডি হয়ে নে একটু পরই কল দিয়ে অর্ক চিল্লাবে।’,রাইদা বলে দু’জনকে।
রাইদার চুলগুলো কার্ল করে সাজটা সম্পূর্ণ করে দেয় পায়েল। রাইদার সাজ হয়ে গেলে পায়েল আর রুহিও রেডি হয়ে নেয়।
ঘন্টা খানেক পর অর্ক কল দিলে সকলে বেরিয়ে যায় পায়েলের বাসা থেকে। মাইক্রোতে চড়ে রওনা দেয় যেখানে প্রোগ্রাম সেখানের উদ্দেশ্যে।
মাইক্রো থেকে নেমে সকলে ভার্সিটির ভেতরে প্রবেশ করে।আজকে এই ভার্সিটির পুরাতন স্টুডেন্টদের গেট টু গেদার অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানেই পারফর্ম করার জন্য ফ্রেন্ডস ব্যান্ডকে আনা হয়েছে।
শতশত নতুন পুরাতন স্টুডেন্টরা এসেছে ভার্সিটির গেট টু গেদারে। অনেকে ফ্রেন্ডস ব্যান্ডকে দেখে এগিয়ে আসে ছবি তুলতে। ফাহিম সকলকে সামলে নেয় জানায় পারফর্ম শেষ হলে সকলের সাথে ছবি তুলবে।
রাইদা,পায়েল আর রুহিকে একটা রুমে বসানো হয়েছে, পারফরম্যান্সের সময় তাদের ডাকা হবে। রাইদা নিজের মেকআপ ঠিক করায় ব্যস্ত আর রুহি ল্যাপটপ চেক করছে সব ঠিক আছে কিনা। অর্ক,বাপ্পি,ফাহিম স্টেজের ঐখানে আছে।
‘আমার লিপস্টিকটা পাচ্ছি না।এই রাই দেখতো তোর কাছে নাকি?’,পায়েল নিজের ব্যাগ হাতরে বলে।
‘আমার কাছে নাই।’,রাইদা জবাব দেয়।
‘তুই না গাড়িতে বসে লিপস্টিক লাগিয়েছিলি? গাড়িতে ফেলে আসছিস শিওর আমি।’,রুহি জবাব দেয়।
‘শিট এখন তাহলে আমাকে যেতে হবে লিপস্টিক আনতে।’,কথাগুলো বলে পায়েল রুম থেকে বের হয়।
রাইদা আর রুহি একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে পায়েলের কান্ড দেখে হেঁসে দেয়।
পায়েল বিরক্তি নিয়ে হাঁটছে আর অর্ককে কল দিচ্ছে কিন্তু অর্ক কল রিসিভ করছে না।এতো মানুষের ভীড়ে কীভাবে বের হবে বুঝতে পারছে না। ভীড় কাটিয়ে পায়েল যেতে নিলে কারো পায়ে পাড়া দেয়।
হাইহিলের পাড়ায় চোখ মুখ খিচে রাগী চোখে পায়েলের দিকে তাকায় একটা ছেলে। পায়েল অপরাধীর ন্যায় ছেলেটার দিকে তাকায়।
‘সরি আসলে দেখতে পাইনি ভাইয়া।আপনার কি বেশি লেগেছে?’,পায়েল বলে উঠে।
ছেলেটা পা টেনে একটা চেয়ারের বসে পরে। পায়েলও ছেলেটার পিছন পিছন যায়।
‘ভাইয়া আমি দেখিনি আসলে…।’
পায়েলকে থামিয়ে ছেলেটা বলে উঠে,’খুরুম পড়ে যখন হাঁটতে পারেননা তখন হাঁটতে যান ক্যান? যত্তসব কাহিনী। আপনি সরি বললে কি আমার ব্যথা কমবে?’
ছেলেটার এমন কথায় পায়েল রেগে যায়।
‘বললাম তো আমি ইচ্ছে করে করিনি ভীড়ে এমন হয়েছে। আর হিলকে খুরুম বললেন কেনো?’
‘একশত বার খুরুম বলুম কে আটঁকাবে আমারে?’
‘আশ্চর্য আপনি ঝগড়া করছেন কেনো? ‘
‘আপনি ব্যথা দিয়ে আবার সরি বলছেন তাতে কিছু না?’
‘সরি বলবো না তো কি করবো? অপরাধ করলে মানুষ সরি বলে।’
‘তাই নাকি?’,ভ্রু উঁচিয়ে ছেলেটা পায়েলকে প্রশ্ন করে।
পায়েলের উত্তরের অপেক্ষা না করে ছেলেটা বসা থেকে উঠে পাশে থাকা জুসের স্টল থেকে এক গ্লাস জুস নিয়ে পায়েলের পায়ে ফেলে দিয়ে বলে,’সরি আপু মিস্টেক।’
পায়েল হতভম্ব হয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটা পা ঝেরে হাঁটা দেয়।
…
(চলবে..)