সেদিন দেখা হয়েছিলো পর্ব -২৫

পর্বঃ২৫
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)

রাইদা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই রওশন আরা রাইদার বিছানায় বসে থাকে। মান্নান রাফায়েত এসে স্ত্রী এর পাশে বসে।

‘তোমার কি মনে হয় না শুধুমাত্র তোমার খামখেয়ালী আচরণের কারণে মেয়েটা এমন হয়ে গেছে? একবার চিন্তা করো মেয়েটা কি ছিলো আর কি হয়ে গেলো। যেই মেয়ে নিজের রুম থেকে তোমার আদেশ ছাড়া এক পা ও বাহিরে দিতো না সেই মেয়ে এখন ঘরেই থাকে না। তোমার অতিরিক্ত শাসন আর অবহেলায় মেয়েটা আজ একরেখা,জেদি।’

মান্নান রাফায়েতের কথা শুনে রওশন আরা ভাবনায় পড়ে যায়।

‘আমার মনে হয় না আমি ভুল কিছু করেছি।মেয়েকে শাসনে রাখতে হয় না হলে মেয়ে মানসম্মান খুইয়ে আসে।তারপর তুমি যেদিন থেকে বলেছো আমি ওর ব্যপারে নাক গলানো বন্ধ করে দিয়েছি এরপরই দেখো মেয়েটা কেমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।না তোমাকে সম্মান দেয় না আমাকে দেয়। আমি শুধু ছেলেরার বিষয়ে যা শুনেছি তাই জিজ্ঞেস করেছি এতে এতো রাগ করার কি আছে? আরেক ছেলের জন্য আমার সাথে তোমার মেয়ে ঝগড়া করলো সেটা কিছু না?’,রওশন আরা জবাব দেয়।

‘এখনো তুমি তোমার ভুলটা দেখবা না জানতাম আমি। মনে রেখো দড়ি বেশি টাইট দিলে ছিঁড়ে যায়।আর ঐ ছেলের ব্যপারে জানার আগ্রহ মোটেও নেই আমার তবে আমার মেয়ে যদি ওর সাথে সংসার করতে চায় আমি পূর্ণ সমর্থন দিবো তাতে ছেলে যেমনই হোক। মেয়েটা জীবনের এক অংশে ভালোবাসা পাক আমি চাই।’

কথাগুলো বলে মান্নান রাফায়েত উঠে দাঁড়ায়।

‘আমিও ঐ পাগল ছেলের কাছে আমার মেয়েকে দিবো না।ছেলের চারিত্রিক সমস্যা আছে মাইমুনা বলেছে।আমি তো ভাবতাম অর্কের সাথে প্রেম চলে তাও মেনে নিয়েছিলাম ছেলেটা চুপচাপ আর ভদ্র সেটা দেখে কিন্তু তোমার মেয়ে বেছে বেছে ঐ অভদ্র ছেলের সাথেই প্রেম ও করলো আবার বিয়েও করলো।’

রওশন আরার কথায় পাত্তা না দিয়ে মান্নান রাফায়েত নিজের রুমে চলে যায়। মান্নান রাফায়েত ভালো করেই জানেন তার স্ত্রী আর মেয়ে দুজনেই সমান জেদি মাঝখানে সে জাতাঁকলে পিষ্ট হচ্ছে। রাইদা যে এখন গিয়ে বন্ধুদের বাসায় উঠবে সেটা মান্নান রাফায়েত জানে তা ছাড়া অর্ক রাইদাকে একা ছাড়বে না সেটাও অজানা নয়।

বাসার পাশে একটা রিকশা ভাড়া করে সেটার উপর লাগেজ নিয়ে বসে আছে রাইদা। রাগের বশে লিফট রেখে সিঁড়ি দিয়ে নেমেছে যার কারণে হাত ব্যথা করছে। রিকশাওয়ালা মোবাইলে রেডিও ছেড়ে তাতে গান শুনছে। রাইদা মোবাইল বের করে সময় দেখে আর আশেপাশে তাকায়।

দূর থেকে বাইক আসতে দেখে রাইদা বুঝে যায় কে আসছে। বাইকটা এসে রাইদার বসা থামা রিকশার পাশে দাঁড়ায়। হেলমেট খুলে অর্ক হাই তুলে।

‘কিরে আবার ট্রিপে যাচ্ছিস নাকি আন্টির সাথে ঝগড়া করে?এইটা কততম বার রাগ করে বের হলি বল তো?’,বাইকে বসে গালে হাত দিয়ে প্রশ্ন করে অর্ক।

‘সম্ভবত এটা পঞ্চম বার।’,ভেবে রাইদা জবাব দেয়।

‘জি না এটা নিয়ে ষষ্ঠ বার তুই আন্টির সাথে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হইছিস।’

‘ওহ হো একবার কম বলছি আজকেরটা না গুনেই।’,রাইদা হেঁসে দেয় কথাটা বলে।

অর্কও রাইদার হাসি দেখে হাসে।

‘মামা আপনার প্রেমিকারে নিয়া বাইত যান আমিও বাইত যামু বউ অপেক্ষা করতাছে।’,দু’জনের কথার মাঝে রিকশাওয়ালা বলে।

‘এই তা*র ছিঁ*ড়া আমার প্রেমিকা না মামা শুধু বন্ধু। বাড়িতে যাবেন তার আগে ওরে পৌঁছে দিবেন।’

‘আপনে মোটরসাইকেল আনছেন তাতেই তো ওনারে নিতে পারেন আবার রিকশা লাগবে ক্যান?’,রিকশাওয়ালা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে।

‘এই মেয়ে বাইকে চড়তে পারে না তাই আপনার রিকশায় পৌঁছে দিবেন।কিন্তু এখন যাবি কই? ফাহিমের বাসায় দিয়া আসবো নাকি পায়েলের বাসায়?’,বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে অর্ক।

‘না এতো রাতে কারো বাসায় গিয়ে বিরক্ত করবো না।তুই কোনো হোটেলে আমার থাকার ব্যবস্থা করে দে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘বুঝছি আপামনি চলেন দেখি কি করা যায়। মামা আমাকে ফলো করে আসতে থাকেন পিছন পিছন। ‘

অর্কের বাইক চলতে শুরু করে পিছনে রিকশায় রাইদা বসা। মিনিট বিশেক পর অর্কের বাসার নিচে এসে রিকশা থামে। অর্ক বাইক পার্ক করে রিকশার ভাড়া মিটিয়ে রাইদার লাগেজ নামায়।

‘তুই কি আঙ্কেল আন্টির ডাউট সত্যি করতে চাচ্ছিস? এতো রাতে এভাবে লাগেজ সহ আমাকে দেখলে ভাববে তোর হাত ধরে বাসা থেকে পালিয়ে এসেছি।’,রাইদা অর্ককে থামিয়ে বলে।

রাইদার কথা শুনে অর্ক হাসতে থাকে।

‘পাগলের মতো হাসছিস কেনো? দূর তোর সাথে কথা বলা আর না বলা একই।’,বিরক্ত হয়ে রাইদা বলে।

‘এক আত্মীয়ের বিয়ে ভাইয়া,আপু,মা,বাবা সবাই সেখানে গেছে।তারা আগামীকাল ফিরবে।আজকের রাত তুই নিশ্চিন্তে থাকতে পারবি।’

অর্কের কথা শুনে রাইদা খুশি হয়।

‘যাক বাঁচলাম কিন্তু তোর আন্টিকে বলা উচিত আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।প্রতিবার আন্টি কল দিয়ে বলে, মা তুমি বললে তোমার মায়ের সাথে কথা বলে বিয়েটা আমি পাকা করি কোনো সমস্যা নেই। অর্কের মতো ছেলে তোমাকে পেলে ধন্য হয়ে যাবে তুমি শুধু আমাকে কনফার্ম করে বলো তোমাদের সম্পর্ক আছে।’,অর্কের মায়ের মতো অভিনয় করে রাইদা বলে।

অর্ক রাইদার অভিনয় দেখে একনাগাড়ে হাসতে থাকে। কথা বলতে বলতে সিঁড়ি বেয়ে দুইতলায় উঠে যায় দুইজনে। বাসার তালা খুলে অর্ক ভেতরে যায় পিছন পিছন রাইদাও যায়। রাইদা গিয়ে অর্কের রুম দখল করে আর অর্ক নিজের মায়ের রুমে ঘুমায়।
ফ্রেশ হয়ে রাইদা বিছানায় শুয়ে ঘুম দেয়।

…..

সকাল সকাল সবাই এসে অর্কের বাসায় আড্ডা বসায়। রুহি রান্নাঘরে সকলের জন্য নাশতা আর চা বানায়।

‘রাই তোর ল্যাপটপটা দে একটা ভিডিও নিবো।’,ফাহিম বলে।

‘দিচ্ছি বের করে।’

ল্যাপটপ বের করে রাইদা দেখে চার্জ নেই। পুরো লাগেজ খুঁজেও চার্জার পায় না তখন মনে হয় হয়তো চার্জার আনতে ভুলে গেছে সে।

‘চার্জ নেই আর চার্জার আনতে ভুলে গেছি।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘আমার চার্জার দিয়ে চার্জ দে।’,অর্ক বলে।

‘না না আমি আমার চার্জার ছাড়া চার্জ দেই না এখনই গিয়ে চার্জার আনবো।’,রাইদা বলে।

রাইদার কথার পিঠে আর কেউ কিছু বলে না। নাশতা খেয়ে রাইদা নিজের বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়।

বাসায় গিয়ে কলিং বেল দিলে মর্জিনা খালা দরজা খুলে হাসিমুখে। রাইদাকে দেখে মর্জিনা খালার হসিমুখ মিলিয়ে যায়। মর্জিনা খালার আচরণে রাইদা বিরক্ত হলেও তাকে পাশ কাটিয়ে ঘরে ঢুকে। ড্রইং রুমের সোফায় তাকিয়ে রাইদা দেখে কেউ উল্টো দিকে ঘুরে বসে আছে। রাইদার বাবা মা বিপরীত পাশের সোফায় বসা ছিলো তারা রাইদাকে দেখে অবাক হয়। রাইদার বাবা মায়ের চেহারার অবস্থা দেখে সোফায় বসা মানুষটা ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকায়,রাইদাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা যায় না।

সোফায় বসা মানুষটাকে দেখে চোখ বড়বড় হয়ে যায় রাইদার।
রইদার হুঁশ আসলে দ্রুত পায়ে হেঁটে নিজের রুমে যায়।ল্যাপটপের চার্জার খুঁজে নিয়ে বের হতে গেলে রুমে মানুষটা প্রবেশ করে। দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাইদার দিকে ঘুরে দুই হাত ভাজ করে বুকের উপর রাখে। নেভি ব্লু রঙের ব্লেজারের ভেতর সাদা শার্টে মানুষটাকে অনেক আকর্ষণীয় লাগছে রাইদার কাছে। চোখ তুলে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।

‘কি করছিস রাই এভাবে কাউকে দেখা ঠিক না।’,বিরবির করে রাইদা বলে।

‘কোথায় ছিলা সারারাত? আমাকে কল দিতা এসে তোমার শ্বশুর বাড়ি নিয়ে যেতাম।’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘সরুন আমি বের হবো।’,রাইদা বলে।

‘হ্যা আমি তো সরেই আছি দরজা খুলে বের হও না করছে কে?’,সায়ন দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলে।

ঢোক গিলে রাইদা ধীর পায়ে গিয়ে দরজার সামনে দাঁড়ায়। পাশে দাঁড়িয়ে সায়ন রাইদার দিকে তাকিয়ে আছে।সায়নের দিকে না তাকিয়ে দরজার ছিটকিনিতে রাইদা হাত রাখে,রাইদার হাতের উপর সায়নও হাত রাখে। সায়নের স্পর্শে রাইদার শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল কিছু বেয়ে যায়। ঘাড় ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে নিলে দেখে সায়ন তার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। সায়ন নিজের অপর হাত দরজার উপর রেখে রাইদাকে বন্দী করে ফেলে। থুঁতনি এগিয়ে এনে রাইদার কাঁধে রাখে।

‘দরজা খুলো শ্বশুর শ্বাশুড়ি দেখুক আমাদের মাখোমাখো প্রেম। শ্বাশুড়ি জিজ্ঞেস করেছিলো আমাদের আগে প্রেম ছিলো কিনা আমি তো এক কথায় বলে দিয়েছি প্রথমদিন থেকে আমাদের প্রেম চলছে।’

‘আমার তাড়া আছে আপনি দয়াকরে আমাকে এখন বিরক্ত না করে যেতে দিন।’
রাইদার কথায় সায়ন পাত্তা দেয় না। মুখ তুলে রাইদার ডান গালে কয়েকটা চুমু খায়।

রাইদা ছিটকিনি থেকে হাত সরিয়ে ঘুরে দাঁড়ায়।

‘আপনি তো আসলেই অসভ্য কথা বললে শুনেন না।’,রাইদা ডান হাত দিয়ে সায়নের ওষ্ঠ চেপে ধরে বলে।

সায়ন দুষ্টু হেঁসে রাইদার হাতের তালুতে চুমু খায়। রেগে রাইদা হাত সরিয়ে ফেলে।

‘তুমি কি শুধু ল্যাপটপের চার্জার নিতে আসছো?’,রাইদার হাতের দিকে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে সায়ন।

‘আপনাকে জবাব দিবো কেনো? আপনাকে আমি বর মানি না তাই অধিকারও নেই আপনার।’

সায়ন নিজের দুই হাত তুলে রাইদার গালে রাখে। চোখ তুলে রাইদা সায়নের চোখের দিকে তাকায়।

‘মা-বাবার সাথে এতো রাগ ভালো না রি। তারা যতই ভুল করুক না কেনো তোমার উচিত মাফ করে দেওয়া। কোনো মানুষই ভুলের উর্ধে নয়। শ্বশুর মশাই বললো তুমি নাকি আমার বিষয়ে ঝগড়া করে বাসা থেকে বের হয়েছো? দেখো মুখে মুখে বলো বর মানি না কিন্তু আমার জন্য একটু হলেও তোমার ভেতর অনুভূতি রয়েছে।’,শেষের কথাগুলো জড়ানো স্বরে বলে সায়ন।

সায়নের কথাগুলো শুনে রাইদা কি জবাব দিবে ভেবে পায় না। একটু পর রাইদাকে ছেড়ে সায়ন সরে দাঁড়ায়। ছাড়া পেয়ে দ্রুত দরজার ছিটকিনি খুলে রাইদা রুম থেকে বের হয়। মান্নান রাফায়েত ড্রইংরুমের সোফায় বসা ছিলো রাইদাকে রুম থেকে বের হতে দেখে বসা থেকে উঠে মেয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়।

‘সকালে খেয়েছিস? না হলে খেয়ে যা।’,রাইদার সামনে গিয়ে বলে মান্নান রাফায়েত।

‘হ্যা খেয়েছি এখন একটু কাজ আছে সেটা শেষ করে তোমায় কল দিবো। তোমার সাথে আমার একান্ত কিছু কথা আছে।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘আচ্ছা সাবধানে যা তাহলে। জামাই বের হলেই আমিও অফিসের জন্য বের হবো।’,ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মান্নান রাফায়েত বলে।

সায়নকে জামাই বলায় রাইদা ভীষণ অবাক হয়।

‘এতো জলদি কীভাবে বাবাকে পটিয়ে ফেললো বুঝলাম না! লোকটা কি জাদু জানে নাকি?’,বিরবির করে নিজেকে জিজ্ঞেস করে রাইদা।

‘আমি তো এখনই বের হবো আপনার মেয়ের সাথে।’,পিছন থেকে সায়ন জবাব দেয়।

রওশন আরা মুখ গোমড়া করে বসে আছে আর সবার কথা শুনছে। সে যে এসব পছন্দ করছে না তাকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রওশন আরার গোমড়া মুখ রাইদার চোখ এড়ায় না সে বুঝে যায় মা কেনো গোমড়া মুখ করে রেখেছে। রওশন আরাকে জব্দ করতে রাইদা ফন্দি আঁটে।

‘বাবা আমি বের হলাম আর আপনি তো গাড়ি নিয়ে এসেছেন রাইট? আমাকে নামিয়ে দেন তাহলে।’,সায়নের দিকে ঘুরে মিষ্টি সুরে বলে রাইদা।

রাইদার এমন কথায় সায়ন আশ্চর্য হয়। রওশন আরা চোখমুখ আরো কালো করে ফেলে।

‘হ্যা চলো।’,সায়ন জবাব দেয়।

মান্নান রাফায়েতের থেকে বিদায় নিয়ে সায়ন বের হয় পিছন পিছন রাইদার বের হয়ে লিফটে দু’জনে উঠে।

‘যাক মনে হচ্ছে জামাইটা ভালোই আর মেয়েও জামাইকে পছন্দ করে।’,দু’জনের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মান্নান রাফায়েত বলে উঠে।

‘আমার তো এই ছেলেকে একদম ভালো লাগেনি। তোমার মেয়ে কি দেখে যে প্রেম করেছে কে জানে।’,কথাগুলো বলে রওশন আরা।

‘শুনো প্রথমে দর্শনদারী তারপর গুণ বিচারি। ছেলেটাকে দেখে আমার কোনো দিক দিয়ে রাইদার অযোগ্য মনে হয়নি। এখন খোঁজ নিয়ে দেখি ছেলের পরিবার এবং চরিত্র কেমন।যদি সব ঠিকঠাক থাকে তাহলে আমার আপত্তি নেই।’,মান্নান রাফায়েত বলে।

মান্নান রাফায়েত চলে যান রুমে অফিসের জন্য তৈরি হতে।

লিফট থেকে নেমে রাইদা কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা হাঁটতে থাকে।সায়ন দৌড়ে গিয়ে রাইদার হাত ধরে।

‘কি হলো হাত ছাড়ুন।’,বিরক্ত হয়ে বলে সায়ন।

‘তুমি না বললে তোমায় ড্রপ করে দিতে তাহলে গাড়ি রেখে যাচ্ছো কোথায়?’,সায়ন জিজ্ঞেস করে।

‘ঐইটা বলেছি বাবার বউকে জব্দ করতে। উনি আপনাকে পছন্দ করেনি আর ওনার অপছন্দের জিনিসই আমি করি ওনাকে ক্ষেপাতে। এখন আমার হাত ছাড়ুন আমার তাড়া আছে।’,সায়নের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে রাইদা।

‘যেমন শ্বাশুড়ি তেমন হলো তার মেয়ে। মিথ্যা বলেছো যখন সেটা সত্যি করে দেই না হলে পাপ হবে আর আমার বউয়ের পাপ হোক সেটা আমি চাই না।’

‘আপনি গাড়ি বের করে এদিকে আনুন আমি দাঁড়িয়ে আছি। যান জলদি সময় কম।’

রাইদার কথা মতো হাত ছেড়ে সায়ন গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আনে। এসে দেখে যেখানে রাইদাকে রেখে গিয়েছিলো রাইদা নেই। ফোন বের করে রাইদাকে কল দিতে নিলে দেখে রাইদা মেসেজ পাঠিয়েছে।

‘আমি আপনার গাড়িতে উঠতে মোটেও ইচ্ছুক নই।’
রাইদার মেসেজ পড়ে সায়ন হাসতে থাকে। গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের রাস্তা ধরে।

রিকশা এসে থামে ভার্সিটির সামনে, ভাড়া মিটিয়ে রাইদা পায়েলকে কল দেয়। কল পেয়ে পায়েল, অর্ক,বাপ্পি ভার্সিটি থেকে বের হয়।

‘বাকি দুইজন কই?’,রাইদা প্রশ্ন করে।

‘রুহি তো অফিসে গেছে আর আন্টিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে ফাহিম।’,পায়েল জবাব দেয়।

‘ওকে সমস্যা নেই আমরাই দেখতে শুরু করি।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তোর কি মনে হয় এই মাসের মাঝে তোরে কেউ ফ্ল্যাট ভাড়া দিবে তার সিঙ্গেল মানুষ দেখে?’,বাপ্পি প্রশ্ন করে।

‘বলবো বিয়ে করছি কিন্তু স্বামী বিদেশ। শ্বাশুড়ি অ*ত্যা*চার করে তাই আলাদা বাসা নিতে বলছে স্বামী।’,রাইদা জবাব দেয়।

রাইদার কথা শুনে তিনজনই বিষম খায়।

‘তুই বললি আর মানুষ বিশ্বাস করবে?’,বাপ্পি বলে।

‘আরে চল না খুঁজে দেখি।’,বাপ্পির হাত টেনে রাইদা বলে।

‘রাগ করেছিস কয়েকদিন আমার বাসায় থাক পরে না হয় নিজের বাসায় ফিরে যাইস যেটা সব সময় করিস।’,পায়েল বলে।

‘ঐ বাসায় আর ফিরবো না বহুত কথা শোনায়।’,রাইদা বলে।

‘যদি বাসা পাই তোর জন্য তাহলে আমার আপত্তি নাই কিন্তু যদি না পাই তখন কিন্তু তোর বাসায় ফিরতে হবে।’,অর্ক বলে উঠে।

‘আচ্ছা দেখি আগে পরেরটা পরে দেখা যাবে সমস্যা নাই।’

রাইদার কথামতো সকলে ওর সাথে যায় বাসা খুঁজতে। যে কটা বাসা দেখে সবগুলোই খালি হবে সামনের মাসে। একটা খালি ফ্ল্যাট পেয়েছিলো কিন্তু তারা পরিবার ছাড়া বাসা ভাড়া দিতে নারাজ সরাসরি বলে দিয়েছে বরকে না আনলে ভাড়া দিবে না।
বাসা খুঁজতে খুঁজতে বিকাল হয়ে যায়। হয়রান হয়ে সকলে গিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে বসে।

‘এখন জামাই কই পাবি?’,বাপ্পি রাইদাকে জিজ্ঞেস করে।

‘আঙ্কেল আন্টি ফিরবে কখন?’,রাইদা অর্ককে জিজ্ঞেস করে।

‘রওনা দিয়েছে ফিরতে রাত হবে।’,অর্ক জবাব দেয়।

‘তুই এক কাজ কর আমার লাগেজটা নিয়ে আয়।আমি আরেকটু খোঁজাখুজি করি যদি বাসা না পাই আজকের রাতটা পায়েলের সাথে থাকবো তারপর কালকে আবার বাসা খুঁজতে বের হবো।’,রাইদা বলে।

রাইদার কথা মতো অর্ক বের হয়ে যায়। বাপ্পি আর পায়েলের সাথে রাইদা কথা বলছিলো তখন ফোন বেজে উঠে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মান্নান রাফায়েত কল দিয়েছে।

‘আমি একটু কথা বলে আসতেছি।’,কথাটা বলে ফোন হাতে নিয়ে এক সাইডে চলে যায় রাইদা কথা বলতে।

‘কল দিবি বলে আর খবর নেই তোর।কোনো সমস্যা হয়েছে?’,মান্নান রাফায়েত জিজ্ঞেস করে।

‘আরে বাসা খুঁজতেছি তাই ব্যস্ত আমি।’,রাইদা জবাব দেয়।

‘তুই কি বাসায় ফিরবি না বলে ঠিক করেছিস? নাকি জামাইকে নিয়ে এখনই আলাদা হয়ে যেতে চাচ্ছিস?’
মান্নান রাফায়েতের এমন প্রশ্নে রাইদা বিরক্ত হয়।

‘তোমার বউ আমাকে অনেক প্যারা দেয় এতো প্যারা তো মনে হয় শ্বাশুড়ি ও দিবে না আর সংসারের বিষয়ে কোনো আগ্রহ নেই আমার।’

‘ঠিক আছে যা ভালোলাগে কর তবে আমাকে জানিয়ে রাখিস যাতে বিপদে আপদে তোর পাশে থাকতে পারি।’

‘আচ্ছা রাখছি এখন পরে কল দিবো।’
কথাটা বলে রাইদা কল কেটে দেয়। কি করবে ভাবতে ভাবতে গিয়ে বন্ধুদের কাছে বসে।

মিনিট দশেক পর রাইদার ফোন বেজে উঠে। সায়ন কল দিয়েছে দেখে রাইদা কল রিসিভ করে না। কল রিসিভ না করায় সায়ন মেসেজ পাঠায়।

‘তোমাকে বাসা ভাড়া নিতে আমি সাহায্য করতে পারি যদি তুমি চাও।’

মেসেজটা পড়ে রাইদার বুঝতে বাকি থাকে না তার বাবা ইতিমধ্যে সায়নকে কল দিয়ে কথাগুলো বলে দিয়েছে।

ফোন হাতে রাইদা উঠে যায় আবারো,রাইদার কান্ড পায়েল আর বাপ্পি চুপ করে দেখছে। তারা বুঝতে পারচে না হয়েছে টা কি।
সায়নকে কল দিয়ে ফোন কানে এদিক ওদিক তাকিয়ে রাইদা দেখে আশেপাশে মানুষ আছে কিনা।

‘আপনি এতো জলদি বাবাকে পটিয়ে ফেললেন কীভাবে? ‘,সায়ন কল রিসিভ করতেই রাইদা প্রশ্ন করে।

‘শুনো হিরাই হিরাকে চিনে।তোমার বাবা ভালো মানুষ তাই আমাকে দেখেই সে বুঝে গেছে আমিও তার মতই ভালো।’,হেঁসে উত্তর দেয় সায়ন।

‘যত্তসব ফালতু কথা।’,রাইদা বিরক্ত হয়ে বলে।

‘শুনো আমার এক বন্ধুর ফ্ল্যাট খালি আছে যেটা ভাড়া দিতে চায় তুমি চাইলে আমি সেটা তোমাকে ভাড়া নিয়ে দিতে পারি। তোমার ভার্সিটি থেকে বেশি দূরে না কাছেই।’

‘মাসের মাঝখানে কীভাবে খালি বাসা পাবো?’

‘বন্ধুর পুরো পরিবার অস্ট্রেলিয়াতে থাকে মাঝেমধ্যে দেশে আসলে এই ফ্ল্যাটে থাকে ও। এখন ও দেশে নেই তাই ফ্ল্যাট অনেকদিন ধরে খালি পড়ে আছে। তুমি বললে আমি ওরে বলবো আমি ভাড়া নিতে চাই আর ফ্ল্যাটের চাবি আমার কাছেই আছে চাইলে দেখতে পারো।’

সায়নের কথা শুনে রাইদা গভীর ভাবনায় পড়ে যায়।

‘এতো কি ভাবছো রি? তুমি একবার দেখো ভালো লাগলে ভাড়া নিবা না হলে নিবা না তাছাড়া বন্ধুদের বাসায় সবসময় থাকা কেমন দেখায়। তোমার মানসম্মানের কথা ভেবেই বললাম। ‘

‘ঠিক আছে ঠিকানা দেন আমি আসছি।’

সায়নের সাথে কথা শেষ করে কল কেটে দেয় রাইদা।

‘একটা বাসার খোঁজ পেয়েছি যদি ভালো লাগে তাহলে তোদের কল দিয়ে জানাবো তোরা চলে আসবি।’,বাপ্পি আর পায়েলকে বলে রাইদা।

‘আমারও সাথে যাই দেখার জন্য। ‘,বাপ্পি বলে।

‘না না আমি আগে দেখে নেই কষ্ট করতে হবে না তোদের।’,কথাটা বলে রাইদা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে যায়।
সন্দিহান দৃষ্টিতে পায়েল রাইদার যাওয়ার পানে তাকায়। ফোন বের করে অর্ককে কল দিয়ে সব বলে।


চলবে..

(আজকের পর্ব কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। আগামী পর্ব আরো বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here