পর্বঃ২৬
গল্পঃ #সেদিন_দেখা_হয়েছিলো
লেখনীতেঃ #ঈশিতা_ইশা
(গল্প কপি পোস্ট করা সম্পূর্ণ নিষেধ।)
…
সায়ন দরজার লক খুলে ভেতরে প্রবেশ করে পিছন পিছন রাইদাও প্রবেশ করে। সুইচবোর্ড হাতরে সায়ন রুমের লাইটের সুইচ দেয়। চোখে হঠাৎ আলো পড়ায় রাইদা চোখ বন্ধ করে ফেলে। আলোর বিপরীতে ঘুরে চোখ খুলে রাইদা। সায়ন গিয়ে পুরো ফ্ল্যাটের আলো জ্বালিয়ে দেয়। মাগরিবের আজান দিয়েছে একটু আগে।
রাইদা ঘুরে ঘুরে ফ্ল্যাট দেখতে থাকে। বেডরুমে গিয়ে দেখে বিশাল একটা বেড, ছোট একটা আলমারি রয়েছে। বেডরুমে বারান্দা পেয়ে রাইদা চলে যায় বাহিরের দৃশ্য দেখতে। আট তলা থেকে শুধু আশেপাশের বিল্ডিং আর মেইন রোড দেখা যাচ্ছে। ব্যস্ত রোড দিয়ে বিভিন্ন গাড়ি চলেছে আপন গতিতে, রাইদার কাছে এ দৃশ্য মন্দ লাগেনি তবে বারান্দায় গ্রিল না দিয়ে খোলা রাখলে সে বেশি খুশি হতো।
বারান্দা থেকে বের হয়ে কিচেন দেখতে যায়। কিচেনে কিছু হাড়িপাতিল,গ্লাস,প্লেট ছাড়া একটা ফ্রিজ পায় যেটা চলমান রয়েছে। ফ্রিজ খুলে পানির বোতল ছাড়া কিছু পায় না তবে চলমান দেখে সন্দেহ হয়। ফ্রিজ বন্ধ করে পিছনে ঘুরলে দেখে সায়ন পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
রাইদা প্রশ্ন করার আগেই সায়ন বলে উঠে,’ফ্ল্যাটের চাবি আমার কাছে তাই মাঝেমধ্যে এসে থাকি। ফ্রিজ তো ইলেকট্রনিক ডিভাইস তাই চালু করে রেখেছি যাতে নষ্ট না হয়।’
রাইদা নিজের না করা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে রান্নাঘরের পাশের রুমটায় যায়। এই রুমটা বেডরুম থেকে ছোট তবে এই রুমে কোনো আসবাবপত্র নেই। রুম থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে চোখ বুলায় যেখানে শুধু দু’টি সিঙ্গেল সোফা আর টি-টেবিল রয়েছে। একটা সোফায় রাইদা বসে পরে। অপর সোফায় সায়ন বসে।
‘আপনার বন্ধু কি এখানে একা থাকতো?এখানে যা আসবাবপত্র আছে তা তো সিঙ্গেল মানুষের জন্য।’,রাইদা সায়নকে প্রশ্ন করে।
‘হ্যা ও এখানে মাঝেমধ্যে এসে একা থাকতো সেইজন্য শুধু যা প্রয়োজন তাই কিনেছে।’,সায়ন উত্তর দেয়।
‘আমার তো ফ্ল্যাটটা পছন্দ হয়েছে আমি থাকতে রাজি। আপনার বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছেন ভাড়ার বিষয়ে?’
‘হ্যা এখানে আসার সময় কথা হয়েছে বললো এই মাসটা থেকে দেখতে যদি ভালো লাগে পরের মাস থেকে ভাড়া দিতে।’
‘না না ফ্রি তে আমি থাকবো না আপনি জিজ্ঞেস করবেন কত ভাড়া দিতে হবে।’
‘ঠিক আছে রাতে তোমাকে জানাবো এখন আমি উঠি আমার একটা জরুরি মিটিং আছে। অলরেডি মিটিং এর জন্য আমি লেট আরেকটু বসলে মিটিং ক্যান্সেল হয়ে যাবে। তোমার কোনো কিছু প্রয়োজন হলে ভণিতা না করে আমাকে কল দিও। আর দারোয়ানকে বলে যাবো আমাকে কলে না পেলে ল্যান্ডলাইন থেকে তাকে কল দিয়ে বলবা।’,রান্নাঘরের পাশে থাকা ল্যান্ডলাইন দেখিয়ে বলে সায়ন।
সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায় সায়ন,রাইদাও উঠে দাঁড়ায়। পকেট থেকে ফোন বের করে অফিসের ম্যানেজারকে কল দেয় সায়ন। কথা বলতে বলতে ফ্ল্যাটের মেইন দরজার কাছে গিয়ে লক খুলে।
‘শুনুন..।’, ইতস্তত করে পিছন থেকে রাইদা সায়নকে ডাকে।
ফোন কানে দিয়ে সায়ন ঘুরে ভ্রু উঁচিয়ে প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকায় রাইদার দিকে।
‘ধন্যবাদ আপনার সাহায্যে জন্য।’
রাইদার ধন্যবাদ বোধহয় সায়নের পছন্দ হয়নি।
ফোনটা কান থেকে নামিয়ে রাইদার কানের সামনে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে,’শুকনো মুখে এভাবে ধন্যবাদ নিবো না পরে এসে অন্যভাবে নিয়ে।’
সায়নের কথার পিঠে রাইদা কিছু বলতে নিলে সায়ন আবার ফোন কানে দিয়ে দরজার খুলে বের হয়ে যায় ফ্ল্যাট থেকে। দরজা লাগিয়ে সোফায় বসে পায়েলকে কল দেয় রাইদা।
‘কিরে কই তোরা?’,রাইদা জিজ্ঞেস করে।
‘আমরা তো আছি যেখানে থাকার কথা কিন্তু তুই কই?’,পায়েল জবাব দেয়।
‘আমি ঠিকানা দিচ্ছি তোরা সবাই চলে আয় আর সাথে করে আমার জন্য রাতের খাবার আর কিছু শুকনো খাবার আনিস।’
কথাগুলো বলে রাইদা কল কেটে দেয়।
চল্লিশ মিনিট পর দরজায় নক করার শব্দ হলে রাইদা উঠে দরজা খুলে। রুহি,পায়েল,বাপ্পি,ফাহিম, অর্ক একে একে বাসায় প্রবেশ করে। সকলে ফ্ল্যাটে ঢুকে ঘুরে সবকিছু দেখতে থাকে কেউ আর রাইদাকে পাত্তা দিচ্ছে না। দরজা লাগিয়ে রাইদা বেডরুমের বিছানায় গিয়ে বসে। বাকিরা পুরো ফ্ল্যাট ঘুরে এসে বিছনায় বসে।
‘কার বাসা এটা? দেখে মনে হচ্ছে কেউ থাকে এখানে।’,অর্ক জিজ্ঞেস করে রাইদাকে।
‘এটাতে যে থাকতো সে এখন নাকি অস্ট্রেলিয়াতে থাকে। এখন এটা আমি এক পরিচিত লোকের মাধ্যমে ভাড়া নিয়েছি আপাতত এখানেই থাকবো।’,রাইদা জবাব দেয়।
অর্ক হাতে থাকা রাইদার লাগেজটা আলমারির সামনে রাখে।
‘ভালো করে খোঁজ নিয়েছিস তো? তোর কে এমন পরিচিত যে এতো ভালো ফ্ল্যাটের খোঁজ দিলো?’,অর্ক রাইদার দিকে তাকিয়ে সন্দিহান দৃষ্টিতে প্রশ্ন করে।
‘তুই ও না সব কিছুতে কাহিনী খুঁজিস। রাই ভাড়া কত? দেখে মনে হইতাছে এই এড়িয়াতে ভাড়া অনেক।’,বাপ্পি বলে।
‘ভাড়া এখনো বলেনি বলেছে রাতে জানাবে।’,রাইদা আমতাআমতা করে জবাব দেয়।
‘কি যে করছিস কিছু বুঝতেছি না।তোর জন্য বিরিয়ানি আর কিছু চিপস,বিস্কুট এনে রান্নাঘরে রেখেছি। খিদে পেলে খেয়ে নিস।’,অর্ক বলে রাইদাকে।
‘বাজার আনলে তো আমি রান্না করে দিতাম।’,রুহি বলে উঠে।
‘রান্নাবান্না কালকে করিস। কি কি লাগবে বলিস এনে দিবো।রাই তো রান্না করতে পারে না ওরে একটু শিখিয়ে দিস না হলে শ্বশুড় বাড়ি গিয়ে শ্বাশুড়ির ঝারি খাবে।’,পায়েলের পাশে বসে বলে অর্ক।
‘আমার দ্বার সম্ভব না রান্না, বহুত ঝামেলার কাজ। দরকার হলে শ্বশুড়বাড়িতে যাবো না তাও আমি রান্না শিখতে পারবো না।’,রাইদা দুই হাত উপরে তুলে সারেন্ডার করার ভঙ্গিতে বলে।
রাইদার অবস্থা দেখে সবাই হেঁসে দেয়।
‘আমার আম্মুর কাছে থেকে যা রান্নাঘরে তোরে যেতে ও দিবে না।এমনিতেই তুই বলতে আম্মু অজ্ঞান।তোরে পেলে এমন ভান করে মনে হয় আমাকে কুড়িয়ে পেয়েছে আর তুই তার মেয়ে।’,ফাহিম বলে উঠে।
‘ফাহিমের আম্মুর মতে ভাই আম্মু হয় না।আন্টি পুরাই মাটির মানুষ। ‘,বাপ্পি বলে।
‘আমি তোর বাসা দখল করলে তুই কই থাকবি? বাসায় তো বেডরুম দুইটা।’,হেঁসে বলে রাইদা।
‘কই থাকবো আর বাথরুম খালি আছে না।’,বাপ্পি দাঁত কেলিয়ে বলে।
‘তুই তো বাথরুমে থাকিস তাই অন্যরে বুদ্ধি দ্যাস থাকার।’,পায়েল বাপ্পির কথায় ফোঁড়ন কেটে বলে।
‘আমি তোর মতো না জরিনা। তোর বিয়া হইলে তোর জামাই তোরে রুমেই ঢুকতে দিবে না দেখিস। তোর জায়গা হবে বাথরুমে।’,বাপ্পি পায়েলকে বলে।
‘তোর তো বিয়েই হবে না বাপি দা। যা বাপি বাড়ি যা।’,বাপ্পিকে চিমটি দিয়ে বলে পায়েল।
পায়েলের চিমটিতে বাপ্পি চিল্লানি দেয়।
‘রাক্ষসী রানী কটকটি চিমটি দিয়ে আমার হাতটা নষ্ট করলি।’,বাপ্পি পায়েলের চুল টেনে বলে।
‘তোরা থামবি নাকি দুইটারে আটতলা থেকে নিচে ফেলে দিবো?’,অর্ক ধমক দিয়ে বলে।
অর্কের ধমকে দুইজন চুপ হয়ে যায়। ঘন্টাখানেক আড্ডা দিয়ে রাইদাকে বিদায় জানিয়ে সবাই চলে যায়। ফোন বের করে রাইদা দেখে রাত নয়টা বাজে। লাগেজ খুলে নিজের জামা নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায় বাথরুমে।
..
ঘুমে রাইদার চোখ লেগে গিয়েছিলো ফোনের রিংটোনে ঘুম ভেঙে যায়। ফোন হাতে নিয়ে দেখে সায়ন কল দিয়েছে।
বিরক্তি নিয়ে কল রিসিভ করে ফোন কানে দেয়।
‘দরজা খুলো রি অনেকক্ষণ ধরে নক করছি।’,ক্লান্ত স্বরে ফোনের অপর পাশ থেকে বলে সায়ন।
ফোন কানে দিয়ে রাইদা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে। দরজা খুলে দেখে সায়নের দুই হাত ভর্তি ব্যাগ আর কাঁধে ফোনটা রেখে মাথা বেঁকিয়ে রেখেছে সায়ন। রাইদা হাত বাড়িয়ে সায়নের ফোনটা নেয়। সায়ন জুতা নিয়েই ঘরে প্রবেশ করে।ব্যাগ দুইটা টি-টেবিলে রেখে সোফায় বসে জুতা খুলতে থাকে।
‘এতো রাতে আপনি এখানে?’,রাইদা সায়নকে প্রশ্ন করে।
‘পানি খাওয়াও আগে তারপর বলছি।’
রাইদা রান্নাঘরে গিয়ে গ্লাস ধুয়ে পানির বোতল খুঁজে কিন্তু দেখে অর্ক পানির বোতল আনেনি। গ্লাস হাতে নিয়েই ড্রইং রুমে আসে।
‘পানি তো নেই, ফ্রিজে যেই পানি আছে তা খাওয়ার যোগ্য কিনা জানি না।’,গ্লাস হাতে সায়নের সামনে দাঁড়িয়ে বলে রাইদা।
ব্যাগ খুলে সেখান থেকে পানির বোতল বের করে রাইদার দিকে বাড়িয়ে দেয় সায়ন। পানির বোতলটা নিয়ে গ্লাসে ঢেলে সায়নকে খেতে দেয় রাইদা। পানি খেয়ে সায়ন হাঁপাতে থাকে। গায়ের ব্লেজার খুলে পাশের সোফায় রাখে। গায়ের শার্টটার উপরের দু’টো বোতাম খুলে দেয় সাথে হাতা ফোল্ড করতে থাকে।
‘আপনি কিন্তু আমার প্রশ্নের উত্তর দেননি। এতো রাতে কেনো এসেছেন?’,রাইদা আবারো প্রশ্ন করে।
‘মাত্র এগারোটা বাজে বেশি রাত হয়নি তো।তুমি একা আছো আর খাবারও তো কিছু আনোনি তাই ভাবলাম কিছু জিনিস দিয়ে যাই।’,সোফায় মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে সায়ন।
‘আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে? চাইলে গোসল করতে পারেন এতে হয়তো কিছুটা ভালো লাগবে।’,রাইদা সায়নের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে।
রাইদার মুখে এমন কথা শুনে চোখ খুলে সায়ন তাকায়। চোখাচোখি হতেই রাইদা চোখ নামিয়ে ফেলে।
‘শরীর খারাপ না ক্লান্ত লাগছে অনেক।আজকে অনেক কাজ ছিলো কালকেও কাজ আছে ব্যস্ত থাকবো তাই এখন আসলাম।’,সায়ন জবাব দেয়।
সায়ন উঠে বেড রুমের বাথরুমে যায়। সায়ন যেতেই যেই সোফায় সায়ন বসে ছিলো রাইদা বসে। ব্যাগ গুলো খুলে দেখতে থাকে কি এনেছে।
খাবারগুলো নিয়ে রান্না ঘরে রাইদা রাখে।
‘রি আমাকে একটা টাওয়াল দাও তো।’,বাথরুম থেকে রাইদাকে ডেকে বলে সায়ন।
‘আমি এক্সট্রা টাওয়াল কই পাবো? আমার কাছে শুধু আমার টাওয়াল আছে।’,নিজের টাওয়াল হতে রাইদা বলে।
‘আরে বাবা তোমারটাই তো দিবা।জলদি দাও না হলে এমনিতেই বের হয়ে আসবো।’
‘এই না নেন।’
দরজায় নক করে রাইদা চোখ বন্ধ করে টাওয়াল বাড়িয়ে দেয়। দরজা খুলে টাওয়াল নিয়ে সায়ন বাথরুমের দরজা আঁটকে দেয়। একটু পর টাওয়াল পরে উন্মুক্ত শরীরে সায়ন গোসল সেরে বের হয়। আলমারি খুলে টি-শার্ট আর ট্রাউজার বের করে চেঞ্জ করে নেয়।
রাইদা ড্রইং রুমে বসে ফোনে ভিডিও দেখছিলো। সায়ন এসে রাইদার পাশের সোফায় বসে।
‘খিদে পেয়েছে খেতে দাও রি।’,সায়ন বলে।
রাইদা ফোন থেকে মুখ তুলে সায়নের দিকে তাকায়। সায়নের চুল তখনো ভেজা,চুলের পানিতে গায়ের টি-শার্ট অনেকটা ভিজে গেছে।
‘আপনি এগুলো কোথায় পেলেন? আপনি তো শার্ট, প্যান্ট পরে ছিলেন?’,সায়নের দিকে ভালো করে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
‘এক কথা কয়বার বলবো রি? আমার বন্ধুর ফ্ল্যাট যেখানে এসে আমি থাকি মাঝেমধ্যে তাই আমার দুই সেট কাপড় এখানে রেখেছি ইমারজেন্সি দরকার হলে যাতে চেঞ্জ করতে পারি। এখন খেতে দাও সারাদিন না খেয়ে এখন ক্ষুধায় আমার জান চলে যাচ্ছে।’,বিরক্ত হয়ে সায়ন জবাব দেয়।
‘খাবার দিতে পারি এক শর্তে।যদি খেয়েই আপনি ভদ্র ছেলের মতো চলে যান আর আমার অনুমতি ছাড়া এখানে আসবেন না,রাজি?’
‘দূর খাবোই না ঘুমাতে গেলাম আমি।’,বিরক্ত হয়ে সায়ন বসা থেকে উঠে বেডরুমে যায়।
রাইদা গিয়ে দুই হাত মেলে সায়নের পথ আঁটকায়।
‘বসেন দিচ্ছি খেতে।’,রাইদা গোমড়া মুখ করে বলে।
সায়ন গিয়ে সোফায় বসে। রাইদা রান্নাঘরে গিয়ে সায়নের আনা ফ্রাইড রাইস একটা প্লেটে নেয় আর অর্কের আনা বিরিয়ানি আরেকটা প্লেটে নেয়।
টি-টেবিলে সায়নের সামনে ফ্রাইড রাইসের প্লেটটা রাখে। আর বিরিয়ানির প্লেটটা নিজের নিয়ে খেতে শুরু করে। সায়ন নিজের প্লেটের দিকে তাকায় আবার রাইদার প্লেটের দিকে তাকায়।
‘তোমার বন্ধুরা এসেছিলো?’,রাইদাকে প্রশ্ন করে।
‘হ্যা কিন্তু আপনাকে বলবো কেনো?’,খেতে খেতে রাইদা জবাব দেয়।
সায়ন এগিয়ে এসে রাইদার প্লেট থেকে খেতে শুরু করে। রাইদা রাগী দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকায়।
‘আপনাকে তো খাবার দিলাম তাও আমাকে বিরক্ত করছেন কেনো?’,রাগী স্বরে সায়নকে বলে।
‘বিরিয়ানি খেতে ইচ্ছে করছে তাই খাচ্ছি।’,সায়ন জবাব দেয়।
‘রান্নাঘরে আরো আছে বসেন আমি এনে দিচ্ছি।’,কথাটা বলে রাইদা উঠতে নিলে সায়ন বাম হাত দিয়ে রাইদার বাম হাত চেপে ধরে।
‘কোথাও যেতে হবে না আমি এখান থেকেই খাবো আর তুমি ও এখান থেকে খাবা।’
সায়নের কথায় বিরক্ত হয়ে বসে থাকে রাইদা। বিরিয়ানি খাওয়া শেষ করে ফ্রাইড রাইসের প্লেটটা রাইদার দিকে এগিয়ে দেয় সায়ন।
‘এটা খাওয়া শেষ না করলে আমি যাবো না।’,গম্ভীর স্বরে রাইদাকে বলে সায়ন।
‘বললাম তো খাবো না।’
‘ঠিক আছে আমিও নড়ছি না এখানে থেকে।’
সায়নের হু*ম*কিতে রাইদা খেতে শুরু করে।সায়ন হাত ধুয়ে এসে বসে। রাইদার খাওয়া শেষ হলে প্লেট দু’টো নিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়। প্লেট না ধুয়েই হাত ধুয়ে ড্রইং রুমে আসে।
‘গেট লক করে দাও ভালো করে আর অপরিচিত কেউ নক করলে দরজা খুলবা না। আমি এখন যাচ্ছি কালকে সময় পাবো না পরশু সময় করে আবার আসবো।’,ফোনের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বলে সায়ন।
‘খালি বের হন আপনাকে আর ঢুকতেই দিবো না।’,বিরবির করে বলে রাইদা।
ফোনটা পকেটে ভরে রাইদার দিকে এগিয়ে আসে সায়ন। রাইদা মুখ তুলে সায়নের দিকে তাকায়। দু-হাত বাড়িয়ে রাইদাকে কাছে টেনে জড়িয়ে ধরে সায়ন। আচমকা জড়িয়ে ধরায় রাইদা প্রতিবাদ করতে পারে না।
‘আমাকে তুমি ঢুকতে না দিলে তালা ভেঙে ঢুকবো। রি তুমি পৃথিবীর যেখানেই থাকো আমি তোমায় একা ছাড়বো না আর এখন তো তুমি শুধু আমার ভালোবাসা না দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এই যে তুমি আমার সামনে আছো অনেক কষ্টে নিজেকে সংযত রেখেছি, উল্টাপাল্টা কথা বলে আমায় রাগানোর চেষ্টা করবা না একদম তাহলে পরিণাম খুব খারাপ হবে।’
রাইদা চুপ করে সায়নের কথাগুলো শুনে। তার কাছে মনে হয় এখন চিল্লাপাল্লা না করে চুপ থাকা শ্রেয়। রাইদাকে ছেড়ে দরজা খুলে সায়ন।
‘শুভ রাত্রি বউ। নিজের খেয়াল রেখো।’,কথাটা বলে বের হয়ে যায় সায়ন।
সয়ন যেতেই দরজা লাগিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে রাইদা। সায়নের বলা কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘুমাতে যায়।
….
সেমিস্টার ব্রেক শেষে ক্লাস শুরু হয়েছে। ক্লাসে বসে বিরক্তিকর চাহনিতে ক্লাস করছে রাইদা, বাম পাশে বসা ফাহিম ঝিমাচ্ছে। স্যার যখনই এটেনশন বলছে রাইদা গুঁতা মেরে ফাহিমকে জাগাচ্ছে।
পিছনের সিটে বসেছে বাপ্পি, রাইদার ডান পাশে বসা অর্ক আর বাপ্পির পাশে বসা পায়েল। রুহির সকালে ডিউটি থাকায় ক্লাসে আসেনি।
ক্লাস শেষ হলে পনেরো মিনিটের ব্রেক পায় সকলে। আড়মোড়া ভেঙে ক্যান্টিনের দিকে যেতে থাকে চা খেতে।
মাঠের দিকে চোখ গেলে রাইদা দেখে মেয়েদের একটা জটলা পেকেছে। চোখ ছোট করে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে কি হয়েছে কিন্তু কিছুই বুঝতে পারে না। পায়েলের হাত টেনে মাঠে হাঁটা দেয় রাইদা। বাকি তিনজন ক্যান্টিনে চলে যায়।
‘কি সমস্যা এখানে জটলা পেকেছে কেনো?’,ভীড়ের দিকে এগিয়ে জিজ্ঞেস করে রাইদা।
রাইদাকে দেখে মেয়েরা সরে জায়গা দেয়। রাইদা দেখতে পায় সায়ন্তিকা দাঁড়িয়ে আছে আর ওর সামনে একজন ছেলে মাথা নিচু করে দাঁড়ানো।
‘এই ছেলেরা সায়ন্তিকাকে চিঠি দিয়েছিলো তাই সায়ন্তিকা চ*ড় দেয় ছেলেটাকে।’
পাশ থেকে এক মেয়ে বলে।
রাইদা ছেলেটার পা থেকে মাথা পর্যবেক্ষণ করে।
‘কোন সেমিস্টারের সিনিয়র বলেছে এটা করতে?’, ছেলেটাকে প্রশ্ন করে রাইদা।
ছেলেটা হাত দিয়ে দূরে বসে থাকা একদল ছেলেকে দেখায়। রাইদা ভালো করে দেখে বুঝে এটা মাসুম এবং তার গ্যাং।
‘সব মিথ্যা এই ছেলে নিজে ইচ্ছে করে এসব অশ্লীল কথাবার্তা লিখে আমাকে দিয়েছে এখন দোষ সিনিয়রদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে।কয়েকটা চ*ড় দিয়ে ডিপার্টমেন্ট হেডের কাছে বিচার দিলে সব সত্যি বলবে।’,সায়ন্তিকা ছেলেরার কলার ধরে বলে।
রাইদা সায়ন্তিকার হাত টেনে ছেলেটার থেকে দূরে সরায়।
‘কাগজটা দাও যেটা ও তোমাকে দিয়েছে।’,হাত বাড়িয়ে সায়ন্তিকাকে বলে রাইদা।
রাইদা কাগজটা পড়ে দেখে সেখানে সায়ন্তিকাকে নিয়ে অশ্লীল কথা লেখা।
‘কেউ একটা কলম আর কাগজ ওর হাতে দাও। তুমি কাগজে একটা লাইন লিখো।’,ছেলেটার হাতে একজন কাগজ কলম দিলে ছেলেটা লিখে রাইদার হাতে কাগজটা দেয়।
দুইটা কাগজের লেখা মিলিয়ে রাইদা কোনো মিল পায় না।
‘তুমি ক্লাসে যাও আর কোনো সিনিয়র কিছু করতে বললে বলবা আমি রাই আপুর ছোট ভাই।’,ছেলেটাকে বলে রাইদা।
‘আশ্চর্য আপনি ওর শাস্তির ব্যবস্থা না করে যেতে দিলেন কেনো? এভাবে অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলেন কাজটা ঠিক করেননি।’,চিল্লিয়ে বলে সায়ন্তিকা।
সায়ন্তিকার কথায় রাইদা বিরক্ত হয়। বিরক্তিকর চাহনিতে সায়ন্তিকার দিকে তাকায়।
‘আরেকটা কথা বললে চ*ড় দিয়ে দাঁত সব ফেলে দিবো।যেটা জানো না বুঝো না সেই বিষয়ে নাক গলাবা না। একবার শুধু সেমিস্টার সিনিয়দের হাতে পরো তখন বুঝবা কতো ধানে কত চাল।’,সায়ন্তিকার দিকে তাকিয়ে বলে রাইদা।
‘লাইটার আছে কার কাছে? কেউ একটা লাইটার বা দিয়াশলাইট দাও।’ঘুরে বলে রাইদা।
সাথে সাথে অনেকে লাইটার এবং দিয়াশলাইট দেয় রাইদাকে। একটা লাইটার নিয়ে রাইদা মাসুমদের বসা স্থানে হাঁটা দেয়। চা নিয়ে ক্যান্টিন থেকে বের হয়েছে বাপ্পি,ফাহিম, অর্ক। চা খেতে খেতে এতক্ষণ দূর থেকে রাইদার কান্ড দেখছিলো অর্ক। রাইদাকে মাসুমের গ্যাংয়ের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে অর্ক বুঝে যায় রাইদা এখন ঝামেলা পাকাবে, চা ফেলে অর্ক দৌড় দেয় রাইদার দিকে।
মাসুমের গ্যাংয়ের সামনে গিয়ে চিঠিটা উঁচিয়ে ধরে রাইদা প্রশ্ন করে চিঠিটা কে লিখেছে। কেউ জবাব দেয় না সবাই হাসতে থাকে। কাগটায় লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে সেটা পাশে থাকা খোলা নোট খাতার উপর ছুঁড়ে মারে,কাগজে আগুনের স্পর্শ পেতেই সাথে সাথে আগুন ছড়িয়ে যায় খাতার পৃষ্ঠায়।
‘এই কাজের জন্য আমি মোটেও দুঃখিত নই। আশা করি এরপরে কোনো মেয়েকে নিয়ে এসব লিখে নিজেদের বংশের পরিচয় দিবেন না।’,লাইটার হাতে ঘুরিয়ে বলে রাইদা।
মাসুম রাইদাকে কিছু বলতে নিলে অর্ক এসে রাইদাকে সরিয়ে নেয়। মাসুমের বন্ধুরা খাতার আগুন নেভায় কিন্তু ততক্ষণে অনেকটা পুড়ে গেছে।
পাশে দাঁড়িয়ে সায়ন্তিকা এসব দেখে আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারে না।
‘এই আপুর কিছু থাকুক আর না থাকুক এক গাদা রাগ রয়েছে। সকলের সাথে মা*স্তা*নী আচরণ করে। দোষ করলো একজন আর উনি গিয়ে সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করলো।’,সায়ন্তিকা বলে উঠে।
‘শুনেছি আপুটা বিনা কারণে কারো সাথে ঝামেলা করে না। হতে পারে ঐ ভাইয়ারা গুলো চিঠিটা ছেলেটাকে দিয়ে পাঠিয়ে মজা নিয়েছে।’,পাশ থেকে আরেকটা মেয়ে বলে।
মেয়েটার কথা সায়ন্তিকা পাত্তা না দিয়ে ক্লাসের দিকে যায়।
অর্ক রাইদাকে ধরে ক্লাসে নিয়ে এসেছে পিছন পিছন বাকিরাও এসেছে।
‘আরেকবার তোরে যদি দেখছি মাসুমের গ্যাং এর সাথে ঝামেলা করতে তাহলে তোর নামে আমি ডিপার্টমেন্টে নালিশ করবো। কতবার না করছি ওদের সাথে ঝামেলা করবি না।’,রাইদাকে ধমকে বলে অর্ক।
রাইদা চুপ করে অর্কের কথা শুনে কোনো জবাব দেয় না।
‘আরে রাইয়ের কি দোষ ও তো গেছিলো ঝামেলা মিটাতে।’,পায়েল বলে উঠে।
‘ভার্সিটিতে এতো ছাত্রছাত্রী থাকতে ওর কেনো সবসময় ঝামেলা মিটাতে যেতে হবে? আর ও তো ঝামেলা মিটায় না উল্টো সেই নিজের ঘাড়ে ঝামেলা বয়ে আনে।’,অর্ক বলে উঠে।
‘মাসুমের চেহারা দেখছিস? ও এখন সবাইকে বলে বেড়াচ্ছে রাইয়ের বয়ফ্রেন্ড নাকি ওরে মেরে এই অবস্থা করেছে তাও বিনা দোষে।’, বাপ্পি দৌড়ে ক্লাসে এসে বলে।
বাপ্পির কথা শুনে রাইদা মাথা তুলে তাকায়।এতক্ষণে তার মনে পড়ে মাসুমের মুখে আঘাতের চিহ্ন দেখেছে যা সেদিন সন্ধ্যায় সায়নের কাছ থেকে মার খেয়ে হয়েছে।
‘বয়ফ্রেন্ড মানে? রাইয়ের বয়ফ্রেন্ড আসলো কই থেকে?’,অবাক হয়ে অর্ক প্রশ্ন করে।
অর্ক,বাপ্পি, ফাহিম,পায়েল উত্তরের আশায় রাইদার দিকে তাকায়। রাইদা কি উত্তর দিবে ভাবতে ভাবতে কাশতে শুরু করে।
ক্লাসে শিক্ষক আসায় সবাই নিজ নিজ সিটে বসে।
‘খালি একবার ক্লাসটা শেষ হোক উত্তর নিয়েই রাইকে ছাড়বো।’
অর্কের বলা কথাটা রাইদার কানে এড়ায় না। ভাবনায় পড়ে যায় কীভাবে বন্ধুদের সত্যিটা বলবে।
..
ক্লাস শেষ হওয়ার পূর্বেই অর্কের জরুরি কল আসায় বের হয়ে যায় ভার্সিটি থেকে। এই সুযোগে রাইদা বাকিদের ফাঁকি দিয়ে বাসায় চলে আসে। বাসায় এসে বাথরুমে ঢুকে গোসল করতে। বাথরুমে সায়নের রেখে যাওয়া জামাকাপড় গুলো নজরে আসতেই রাইদা বিরক্ত হয়। জামাকাপড় গুলো নিয়ে একটা ব্যাগে ভরে। ব্যাগটা খাটের নিচে রেখে গোসলে চলে যায়।
গোসল থেকে বেরিয়ে রাইদা দরজায় নক করার শব্দ পায়। দরজা খুলে দেখে রুহি দাঁড়িয়ে আছে। রুহিকে দেখে রাইদা অনেক খুশি হয়। রুহির হাতে একটা ব্যাগ দেখতে পায়। কৌতুহল হয়ে ব্যাগটা নিয়ে রান্নাঘরে যায় রাইদা।
রুহি ঘরে ঢুকে দেখে ঘরে ময়লা। কাঁধের ব্যাগটা সোফায় রাখে তখন ওর নজর যায় পাশের সোফায় রাখা ব্লেজারের দিকে।
‘ব্যাগে সব তো কাঁচা বাজার তুই কি এখন এগুলো দিয়ে রান্না করবি?’,রান্নাঘর তেকে বেরিয়ে রাইদা রুহিকে জিজ্ঞেস করে।
‘সেটা পরে দেখা যাবে কিন্তু এইটা কার?’,ব্লেজারটা উঁচিয়ে রাইদাকে জিজ্ঞেস করে রুহি।
‘আরে এইটা এখানেই ছিলো ঐ ফ্ল্যাটের মালিকের হবে।’,জোর পূর্বক হেঁসে রুহির থেকে ব্লেজারটা কেঁড়ে নিয়ে বলে রাইদা।
রুহির মনে নানান প্রশ্ন উঁকি দেয়।
‘কিন্তু গতকালকে তো দেখলাম না এখনই দেখলাম।’ রুহি আবারো বলে।
‘আরে আলমারিতে ছিলো আমি বের করেছি।তুই রান্না বসা খিদে পেয়েছে আমার।’,রুহিকে তাড়া দিয়ে রাইদা বলে।
ঝাড়ু নিয়ে রুহি বেডরুমে গিয়ে রুম ঝাড়ু দিতে থাকে। ঝাড়ু দিতে গিয়ে বিছানার নিচে ব্যাগ পায় যেটা খুলে ছেলেদের শার্ট প্যান্ট পায়। এবার রুহির মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ব্যাগটা রেখে রুম ঝাড়ু দেওয়া শেষ করে রুহি। রাইদা রান্নাঘর জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখছিলো। পুরো ফ্ল্যাট ঝাড়ু দেওয়া হলে রান্নাঘরের বেসিনে হাত ধুতে আসলে রুহি দেখে দুটো এঁটো প্লেট রয়েছে।
‘তুই দুই প্লেটে খেয়েছিস?’,রুহি রাইদাকে আবারো প্রশ্ন করে।
‘হ্যা মানে তুই রান্না বসা জলদি।’,আমতাআমতা করে কথাটা বলে রান্নাঘর থেকে বের হয়ে যায় রাইদা।
রুহি প্লেট দু’টো ধুয়ে নিজের কাজে লেগে যায়। এক ঘন্টার মধ্যে ভাত,ডাল,আলু ভর্তা, আর টমেটোর চাটনি রান্না করে রুহি।
রুহি খাবার বেড়ে ড্রইং রুমের টি-টেবিলে রাখে। রাইদা এসে খেতে শুরু করে।রুহিও রাইদার পাশে বসে খেতে থাকে আর রাইদাকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।
অর্কই বাজার করে রুহিকে দিয়ে পাঠিয়েছে যাতে রুহি রাইদার সাথে কথা বলে কিছু কথা বের করতে পারে।অর্ক জানে রাইদাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলে সে জবাব দিবে না আর অর্ক সন্দেহ করেছে রাইদা বড়সড় একটা ঘটনা লুকাচ্ছে।
…
চলবে..