তুমি আসবে বলে পর্ব -০২+৩

#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ২

-কি সুন্দরী কোথাই যাও? এদিকেও তাকাও একবার, তোমার ভালোবাসার অভাবে শু’কিয়ে যাচ্ছি তো

এ ধরনের গা জ্বা’লানো কথা আজ নতুন নয়,ভার্সিটি এসে থেকেই শুনতে হয়,ভার্সিটির বখাটে দলের নামকরা অসভ্য আদনান মাহবুব। বড়োলোক বাপের একমাত্র বিগড়ে যাওয়া ছেলে।ম’দ গা’জা সিগারেট কোনো কিছুই বাদ নেই অভ্যাসের।সবসময় দুইটা সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে ঘুরাফেরা আর মেয়েদের উত্য’ক্ত করাই এর কাজ।চোখের চাহনি আর বিশ্রী হাসি দেখলেই গা গুলিয়ে আসে। রোজ ভার্সিটি আসার সময়ই গেইটের সামনে দাড়িয়ে থাকা,আর তার তার কুরুচিপুর্ণ কথা বার্তা যেনো নিত্যদিনের নিয়ম। রাফাত ও আমায় রেখে বাইক পার্ক করতে গেলো,এই লোকটার সামনে পরতেও আমার অসস্তি হয়।

-আমারে না দেইখা কই যাও বেবি।তোমার জন্যই তো সাত সকালে দাড়িয়ে থাকি

আমার পথ আটকে দাড়িয়ে বললো আদনান

-দেখুন,আপনার দিকে তাকানোর বা কথা বলার নূন্যতম রুচি আমার নেই, আমাকে বিরক্ত করা বন্ধ করুন পথ ছাড়ুন

-কেনো নেই,আমাকে ভাল্লাগেনা? হ্যাঁ?পছন্দ হয়না আমায়? কি সমস্যা আমার?কই ওই রাফাত,নিবিড়,আদ্রিশ এদের সাথে মিশতে খুব ভাল্লাগে না?কেনো ওদের মাঝে কি আছে যা আমার নেই

-সাট আপ!আপনি আর আপনার বি শ্রী মন্তব্য দুটোই দূরে রাখুন।লাস্ট বারের মতো বলে দিচ্ছি আমায় বিরক্ত করা বন্ধ করুন,না তো আমি ভিসি কে কমপ্লেইন করতে বাধ্য হবো

-ভিসি আদনান মাহবুব এর টি’কি টাও নাড়াতে পারবে নাহ,তুমি আমায় চেনো নাহ,আদনান মাহবুব এর যা একবার পছন্দ হয় তা সে নিজের করেই ছাড়ে হয় এইভাবে নয় ওইভাবে

আদনান ও তার গা জ্বালানো কথা কোনো টাই আমার সহ্য হচ্ছিলো নাহ,তাই কোনো রকমে পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গেছে, তাই দ্রুতভাবে পা চালিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠছি।

-জানু বেবি দারা!

অতি পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে পা থামিয়ে দাড়ালাম, পেছনে ফির‍তেই দৃষ্টিগোচর হলো আমার নামকরা দলের আরেকজনের সুরত খানা, দৌড়ে এসে দাড়ালো আমার কাছে

-কিরে,বদমাইস! কু’ত্তার তিন নাম্বার শা’লি কখন থেইকা ডাকতাছি তোরে? তোর ম্যারাথনের স্পীড কি কোনো সময় কমে নাহ?

হাফাতে হাফাতে বললো আরশি।

-আমার স্পীড ম্যারাথনের নয়,তোরটা কচ্ছপের, জীবনে কখনও সময় মতো এসেছিস?

-হিহি। না মানে আসলে ওই একটু লেট হয়ে গেছে আরকি,তো তুই ক্যান দৌড়াচ্ছিস তোর তো দেরি হয়না

সবসময়ের মতো আবাল মার্কা হাসি দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো আরশি

-আর কেনো হতে পারে? আজ ও আমার পথ আটকেছিলো

নাক মুখ কুচকে বিরক্তির সহিত উত্তর দিলাম

-আজ ও? আজ ও ওই আদনাইন্না তোরে জালাই ছে? অনেক হয়ছে ব্যাস, আজ একটা হেস্তনেস্ত হবেই আমি আজই রাফাত আদ্রিশ দের বললো ওর ঠ্যাং ভে’ঙ্গে ল্যাং’ড়া করে দিতে।সাহস কত্তো বড়ো কি মনে করে নিজেকে ও

-থাম,এতো হাইপার হোস নাহ,আর এসব কথা নিবি আদ্রিশ আর রাফাতের কানে দিস নাহ,জানিস তো সবগুলো কেমন? শেষে গুরুতর ঝামেলা করলে ব্যাপার টা অনেক দূর গড়াবে।
আজ আমায় রেখে বাইক পার্ক করতে গেছিলো বলেই আদনান কে ওর চোখে পরেনি,নাহলে সকাল সকাল ই অনেক বড়ো ঝামেলা হতো

-তুই ঝামেলার কথা বলছিস,আদনান যে তোকে রোজ এভাবে বির’ক্ত করছে এটা কিছু নাহ?

-আচ্ছা বাদ দে নাহ,পরের বার করলে দেখা যাবে,এখন চল তো এমনেই দেরি হয়ে গেছে, আজকে ফার্স্ট ক্লাস টা কার মনে আছে তো?

-আর থাকবে নাহ,এই জন্য তো সকাল বেলা সকালে উঠে দৌড়ানো লাগলো,আচ্ছা উনি রোজ এতো সকালে কি করে আসেন? উনার বউ কি নাই? কি করে উনার বউ? এতো সকালে স্বামিকে বাড়ি থেকে বের হতে দেওয়ার কোনো মানে হয়

-তো উনি কি সকাল বেলা বরের সাথে
ফটোসেশান করবে নাকি।

-তা না বলুক কিন্তু ওগো স্বামী, হ্যাঁ গো আজ তুমি একটু থেকে যাও না বলে একটু লেট করাই দিতেই পারে তাহলে তো আমার এতো সকালে আসা লাগে নাহ

বলেই হায় হুতাশ করা শুরু করলো, ইয়া মা’বুদ এ কোন জাতির বান্ধবী জুটাইলা আমার কপালে,স্যারের বউ কেনো তাকে আটকালো নাহ এ নিয়ে ওর দুঃখ

-মাফ কর বইন আমার,তোর এই বিশ্রী যাত্রাপালার অভিনয় বন্ধ করে হাটা ধর

-তা না হয় করলাম,কিন্তু আমাদের বলদ রানী কই,আজকে তার আবাল মার্কা চেহারা টা চোখে পরছে নাহ যে।

-আজ ওর নাকি কোনো ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস নেই,আর কতোগুলো অ্যাসাইনমেন্ট করাও বাকি আছে তাই বাড়ি বসে সেগুলোই করছে।

-এই ছেমড়ি কি হ্যাঁ? ওরে এখনো মানুষ করতে পারলাম নাহ,এতো পড়ে কি হবে ভাই,সবসময় পড়া আর পড়া দেখিস ও বাসর ঘরে বসেও ওর জামাই কে আইন্সটাইনের সূত্র জিজ্ঞাসা করবে

আরশীর অতি মাত্রার অহেতুক যুক্তি আর কথা শুনতে শুনতে ক্লাসের সামনে এসে গেলাম

-এই যাহহ,দেখলি যা বলেছিলাম।খ’বিশ টা আইয়া পরছে রে

-তাই তো দেখতাছি বইন,কি করবি? চুপি চুপি ঢুকবি?

-পাগলায় গেছোস?ভরা ক্লাসরুমের সামনে চুপি চুপি ঢুকবো আর হেতি আমাগোরে বরন করবে

“তোমাদের বিশেষ সমালোচনা শেষ হলে আমাদের ও জানাও আমরাও অংশগ্রহণ করে নিজেদের ধন্য করি”

আমাদের ফিসফাস চলাকালীন ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজে কথা টা কানে এলো।মুখ ঘুরাতেই দেখি মহাশয় পেন আর বইটা হাতে নিয়ে আমাদের দিকেই তাকিয়ে, সাথে পুরো ক্লাসরুম।যেনো চিড়িয়াখানায় আনা কোনো আজব প্রাণী দেখছে

-পালক?
-ইয়েস স্যার
-কয়টা বাজে?
-৮ঃ৪৫ স্যার
-ক্লাস শুরু হয় কয়টাই?
-৮ঃ৩০ স্যার
-তা এই পনেরো মিনিট দেরি হওয়ার কারণ?কোন দেশ স্বাধীনের কর্ম সম্পাদনে বেড়িয়েছিলে?
-এই দেশের,এই শহরের জ্যাম সম্পাদনে স্যার

আমার কথায় পুরো ক্লাসরুম হাহা করে হেসে উঠলো

-সাইলেন্স!
বলেই ধমকে পুরো ক্লাসরুম শান্ত করে আমার দিকে ঘুরে ভীষণ রাগী কণ্ঠে বললেন মাহফুজ স্যার

-এক তো দেরি করে আসলে, তার উপর আমার সাথে ফাইজলামি হচ্ছে?
-সরি স্যার
-সাট আপ, চুপচাপ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে বাহিরে,যতোক্ষণ না আমি ভেতরে আসতে বলবো।

-সরি স্যার আমাদের ভুল হয়ে গেছে আজকের মতো ক্ষমা করে দিন

মিনমিনিয়ে বললো আরশি

-ওহ তাই নাকি মিস আরশী,তোমার কোনদিন ভুল হয়না বলবে,আমি আজ অবদি তোমাকে সঠিক সময়ে উপস্থিত হতে দেখিনি

-আর হবে না স্যার

নো মোর ওয়ার্ডস,চুপচাপ কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকো নয়তো মাঠের মাঝখানে দাড় করাবো
স্যারের ধমকি শুনে চুপচাপ দুজন কান ধরে দাড়িয়ে থাকলাম পেচাঁর মতো মুখ করে,না জানি কোন জন্মের শত্রুতা আছে ইনার সাথে,উনার মা কি খেয়ে পেটে ধরেছিলো আল্লাহ জানে,সেই খাবারের নাম জানতে পারলে দেশ থেকে গায়েব করে দিতাম।বলে মনে মনে স্যারের গু’ষ্টির ষষ্ঠী করতে লাগলাম।আপাতত এছাড়া কোনো উপায় নেই দুজনার।

______________________

-স্যার,আসতে পারি?

-ইয়েস,কাম ইন

-ডেকেছিলেন স্যার?

-ইয়েস মি.রহমান, ডেকেছিলাম।প্লিজ বি সিটেড

-থ্যাংকিউ স্যার

-অফিসের সকল ইনভেস্টমেন্ট এ্যন্ড মানি রিলেটেড ব্যাপার সবটা আপনার দ্বায়িত্বে তাই তোহ আরমান রহমান?

-জ্বী স্যার

-তাহলে এই ফাইলটি দেখুন তো, আমি কিছুই বুঝতে পারছি নাহ,একটু বুঝিয়ে দিবেন আমায়?

ফাইলটা হাতে নিয়ে খুলে কিছুক্ষণ দেখতেই কপাল বেয়ে ঘাম ঝরতে শুরু হলো আরমান রহমানের,পকেট থেকে সফেদ রুমাল বের করে কাপা হাতে সযত্নে মুছে নিলেন

-কি হলো কিছু বুঝতে পারছেন?
-ম মানে,আ আসলে সস্যার!
-বুঝতে পারছেন নাহ,তাই তো? আচ্ছা আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি। ফাইলটার প্রথম পৃষ্ঠায় স্পষ্ট ভাষায় উল্লেখিত যে কোম্পানির একাউন্ট থেকে ৩৭ লক্ষ টাকার হিসেব মিলছে নাহ,আর দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় আরও স্পষ্ট ভাবে আপনার ব্যাং একাউন্ট এর নাম, যেখানে এই ৩৭ লক্ষ টাকা ট্রান্সফার হয়েছে, তা এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি আরমান সাহেব

-আম আসলে স্যার আমিও বুঝতে পারছি নাহ

-একি! আপনি ঘামছেন কেনো
-আসলে গরম করছে খুব আজকে

ডান হাতের তর্জনী উঠিয়ে সামনের দিকে ইশারা করে দেখালো
-ওই যে দেখুন এসির টেম্পারেচার ১৮° যা নরমাল এর চেয়েও ২-৪° কম তবুও ঘামছেন?

উত্তরের অপেক্ষা না করে আবারও বললো
-মানুষ গরম ছাড়াও দুটো কারণে ঘামে জানেন তো? প্রথমত হাই প্রেসার থাকলে দ্বিতীয়ত অন্যায় করে ধরা পরলে,তা আমি যতোদূর জানি হাই প্রেসার নামক রোগটা আপনার থেকে বারো হাত দূরে দিব্যি সুস্থ মানুষ ,তাহলে আপনার ঘামার কারণ টা কি আমি দ্বিতীয় টাই ধরবো?

আরমান রহমান বুঝে গেছেন তার আর কোনো পথ ফাকা নেই বাচার,তাই সে কোনো দিক না ভেবেই দু হাত জোর করে বলে উঠলো

-স্যার,স্যার আমার ভুল হয়ে গেছে, স্যার আমাকে ক্ষমা করে দিন।আমাকে পুলিশে দেবেন না স্যার, স্যার এমন ভুল আর কখনো হবে নাহ

-ভুল! ভুল? ৩৭ লক্ষ টাকা চু রি আপনার কাছে ভুল মনে হচ্ছে আরমান। বাবা আপনাকে বিশ্বাস করে সবচেয়ে বড়ো দ্বায়িত্ব দিয়েছেন আর আপনি তার এধরণের অপব্যবহার করলেন। সব ভুলের ক্ষমা হয়না,বিশ্বাস ভঙ্গকারীরা অ মানুষ,এদের জায়গা পাশে নয় পায়ের ত লে।

বলেই ‘সিকিউরিটি’ বলে হুংকার ছাড়লো যুবক
মুহুর্তেই দুজন ড্রেস আপ পরিহিত গার্ড এসে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায় কেবিন থেকে। রাগে যুবকের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসছে,কান দুটো রক্তিম আভায় বর্নিত, চেয়ার থেকে উঠে গিয়ে দাড়ালো পেছনের ছাদ থেকে ফ্লোর সমান থাই গ্লাসটার সামনে,চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশ্বাস টেনে প্রকৃতির বাতাস গ্রহণ করলো,আপাতত মাথা টা ঠান্ডা করা দরকার।

মেঘালয় চৌধুরী, রমজান চৌধুরী ও নিলাশা চৌধুরীর একমাত্র সন্তান। চৌধুরী গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিস এর একমাত্র উত্তরাধিকারী। সুদীর্ঘ ৬ বছর সুইজারল্যান্ড থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছে মাত্র। রমজান চৌধুরীর ইচ্ছায় বর্তমানে চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রির মধ্যমনি। মেঘের মতো শান্ত গভীর ইন্দ্রনীলের ন্যায় চোখ জোড়ার জন্য তার দাদা জনাব আলিফ চৌধুরী তার নাম দিয়েছেন মেঘ। মেঘ থেকে মেঘালয়।

দরজার ঠকঠক শব্দে চোখ খুললো।পেছনে না ফিরেই ছোট্ট দু শব্দের উত্তর ‘কাম’ইন’

-এহেম এহেম

কারো উপস্তিতির শব্দে পিছু ফিরে তাকায় মেঘ।

-আরে তুই!!

.
.
.
চলবে ইনশাআল্লাহ#তুমি_আসবে_বলে
#হুমাইরা_হাসান
পর্বঃ৩

-নি’র্দয়,নি’ষ্ঠুর! আস্ত পা’ষান লোকটা। পুরো বিশ মিনিট দাড় করিয়ে রেখেছে।কি এমন করে ফেলেছিলাম হ্যাঁ? একটি না হয় লেট ই হলো তা বলে এতোক্ষণ কান ধরিয়ে রাখবে,মান সম্মান বলে কিছু আছে তোহ,এখন এসব যদি আমার ফিউচার বর দেখে সে কি ভাব্বে,ভাববে তার বউ কান ধরে দাড়িয়ে থাকে,ছি ছি।

-তোর আবার বর কোত্থেকে এলো রে আরু

-আরে এলো নাহ,আসবে।এখন নাই বলে কি ভবিষ্যতে ও হবে না নাকি

-তো সে কি ভবিষ্যৎ থেকে টাইম ট্রাভেল করে এসে দেখে যাবে?

-তা না হোক তবুও, তবুও কেনো? কেনো বলতো এতো ক্ষন দাড় করিয়ে রাখলো।খোদা আমার পায়ের চুড়ুমুর হয়ে গেছে

-আসলেই..স্যার তো না পুরো হাহা’কার। পায়ের দফা রফা করে দিয়েছে ব্যাটা,তুই না হয় তালগাছ আমি এইটুখানি ছোটো পিচ্চি মানুষ,একটু দয়া মায়াও হলো নাহ তার আমায় দেখে।আল্লাহ করুক উনি দেরি করে বাসায় ফিরুক আর উনার বউ ও উনাকে এভাবেই দাড় করিয়ে রাখুক তখন উনি বুঝবে কেমনডা লাগে

-ঠিক বলেছিস,আমার কি মনে হয় জানিস,তার বউ মনে হয় তাকে দৌড়ের উপরেই রাখে, এই জন্যেই যতো গরম আমাদের উপর আসে উনার,যতো ফ্রাস্ট্রেশন আমাদের উপর দেয় ব’জ্জার লোক

-একদম ই তাই।

মাহফুজ স্যার পুরো বিশ মিনিট কান ধরে দাড় করিয়ে রেখে তারপর ক্লাসে ঢুকতে দিয়েছে,পুরো বিশ মিনিট দাড়িয়ে থেকে পায়ে ব্যাথা হওয়ার দরুন দুইটা ক্লাস করেই বেরিয়ে এসেছি আমি আর আরশী।আপাতত ক্যান্টিনে যাচ্ছি,স্যারের বদনাম করতে গলা শুকিয়ে গেছে

-আববে ছেমড়ি’স কই যাস।ব্রেক লাগা।

পেছন থেকে আসা ডাকে ঘুরে দাড়ালাম দুজন, আমাদের গ্যাঙের আরও দুজনের আগমন। নিবিড় ও আদ্রিশ।দৌড়ে এসে দুজন দাড়ালো।

-কখন থেকে ডাকছি দুইডারে,কানের মাথা কি
খাইছোস

-আর দোস্ত কানের মা’থা কি খাবো মাহফুইজ্জা আমাগো পা খাই’য়া দিছে

-কি কস। তার বাসায় কি ভাত রান্না হয়না,শেষ মেস তোদের বিশ্রী পা খেতে হলো

বলেই হাহা করে হেসে উঠলো নিবিড়

-আরে থাম পুরো করতে দে
নিবিড়ের হাসি থামিয়ে বললো আদ্রিশ।

-আরে ভাই পনেরো মিনিট ই তো লেট হইছে ঘন্টা তো পার হয়নি,এর জন্য বিশ মিনিট কান ধরে দাড় করিয়ে রাখলো ব্যাটা।

-আহারে আরু, তোর পা দুইডা তো বাকা হয়ে গেছে রে,শাকচুন্নি থেকে তোরে পা ব্যাকা ভুতনি লাগছে

-নিবিইইই!! বিড়ালের বাচ্চা,তোর মুখ সিলাই করে দিবো আমি।বলেই হাতের খাতা টা দিয়ে ধুপধাপ মারতে লাগলো

উফ থামবি তোরা,ক্ষুধা লেগেছে।আমি গেলাম। বলেই বড়ো বড়ো পা ফেলে ক্যানটিনে আসলাম।রাফাত অলরেডি খাবার অর্ডার দিয়ে বসে আছে।আমরা চারজন গিয়ে বসলাম।

_____________________

-আপু তুই,তুই কবে আসলি?

পুরো কথা শেষ হওয়ার আগেই ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলো রূচিতা।মেঘ ও সানন্দে বুকে আগলে নিলো নিজের বন্ধু সমতুল্য বড়ো বোনকে।দীর্ঘ ৬ বছর পর দেখা বোনের সাথে,খুশিতে আবেগে অশ্রুর মুক্তকণা এসে জমলো রূচিতার নেত্রকোণায়।মেঘ পরম আদরে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো যেনো সেই বড়ো ভাই।আসলে ভাই বোনের সম্পর্কটাই এমন,কাছে থাকলে মারামারি, ঝগড়া সবসময় লেগেই থাকবে,যেনো একে অপরের চচক্ষুশূল। কিন্ত একটু দূরে গেলেই যেনো আশপাশ টা ফাকা হয়ে যায় শূন্য হয়ে যায়। মা বাবার পরে সুমধুর সম্পর্কের আরেকটিই তো ভাই বোন।

-বিদেশ গিয়ে এভাবে পর করে দিলি ভাই? এসে থেকে আমার সাথে দেখাও করলি নাহ?
বুক থেকে মুখ তুলে বললো রূচিতা।

-আমিতো এসেই তোকে খুজেছি,তুই তো ছিলি নাহ।মামনী বললো তুই ও বাড়িতে
-তা আর কোথায় থাকবো? দিয়েছিস তো আমায় পর করে,এখন কি আর এবাড়িতে পরে থাকতে পারি?
-তোর পাগলামি কথা আর গেলো নাহ আপু,কে বলেছে তুই পর,এবাড়ি যতখানি আমার, তার চেয়ে তোর কোনো অংশে কম নাহ।
-এখন তো বেশ বলছো,বউ এলে আর এসব বলবে নাহ,জানা আছে
-তুই আর তোর ভুলভাল জানা কখনো শুধরাবে নাহ,তা তুই একা কেনো?আমার এঞ্জেল টা কই

-মিষ্টি তো ঘুমিয়ে গেছে,তাই ওকে মায়ের কাছে দিয়েই এখানে চলে এসেছি।তুই এখানে আর কতোক্ষন থাকবি ভাই,মাত্র আসলি দেশে,এক্ষুনি তোর কাজ নিয়ে পরতে হলো।

-কই কাজ!আমিতো এক্ষুনি বাসায় যাবো। কান্ট ওয়েট টু হোল্ড মাই এঞ্জেল
বলেই এক হাতে জড়িয়ে নিলো রূচিতা কে

রূচিতা আর রাফাত মেঘের একমাত্র ফুপি আঞ্জুমান চৌধুরীর সন্তান। সম্পর্কে ফুফাতো মামাতো ভাইবোন হলেও ছোট থেকেই এক সাথে বড়ো হওয়ার দরুন তাদের সম্পর্ক টা একটু বেশিই ভালো।রূচিতা আর মেঘ কয়েক মাসের ছোট বড়ো, তাদের দীর্ঘ ৫ বছরের ছোট রাফাত। আঞ্জুমান চৌধুরীর স্বামী ইবনাত হোসেন একজন নামকরা সার্জন। মেঘের বাবা ও তার ফুফা সম্পর্কে বন্ধু হওয়ায় তাদের বসবাস একই বাড়িতে। একটি মাত্র বোনকে দূরে যেতে দেননি তিনি।

________________________

-হোয়াট!! এতোকিছু হয়ে গেলো আর আমি জানি নাহ,রাফাত তোর ভাই কি, না জেনে না বুঝে ধপাস বসিয়ে দিলো, আর পালক তুই কি রে চুপচাপ খেয়েও নিলি চ’ড়। আর তার চেয়ে বড়ো কথা এতো কিছু হয়ে গেলো আর আমি জানলাম ও নাহ?

আদ্রিশ বিরক্তিতে মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে বললো
-তোর ওভারেক্টিং টা একটু পস কর চুন্নি,রাফাত তুই কি করে জানতে পারলি,তুই তো ক্লাসে ছিলি?

-আমিও ওই সময় বের হয়ে ছিলাম তখন হঠাৎ কণা এসে বললো।আসলে ভাই ছোট থেকেই ভীষণ রাগী, ওই ধরনের অ শ্লীল কথা শুনে আরও হাইপার হয়ে গেছে, কাজটা ঠিক হয়নি আসলেই।ভাই নিজেও ভুল বুঝতে পেরেছে

-মেঘ ভাইয়া একটু রাগী হলেও তার মনটা অনেক ভালো, ছোট থেকেই চিনি আমাদের অনেক স্নেহ করে।উনি হয়তো ভুল বুঝে করেছেন,তুই ভুল বুঝিস নাহ পালক

নিবিড় চশমা টা চোখ থেকে খুলে সাবলীল ভাবে বললো।আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি প্রতিটি কথা,এমন নয় যে আমি ভীষণ রেগে আছি উনার ওপর, কিন্তু উনার ব্যাপারে কিছু শুনতেও আমার নূন্যতম আগ্রহ হচ্ছে নাহ,চুলগুলো হাত খোপা করে নিয়ে ব্যাগ টা কাধে ঝুলিয়ে বললাম

-এসব বিষয় থাক,যা হওয়ার হয়ে গেছে এ ব্যাপারে কথা আগানো টা আমি পছন্দ করবো নাহ আর।শিমু একা আছে বাসায়,আমারও সময় হয়েছে এখন উঠি।তোরা থাক
বলেই উঠে দাড়ালাম

-পালক দাড়া আমিও যাবো চল
বলেই বাইকের চাবি টা হাতে নিয়ে উঠে দাড়ালো রাফাত

দুজন নানা রকম গল্প গুজব করতেই আসলাম। রাফাতের বাইকটা এসে থামলো বহুতল বিশিষ্ট পাচঁতালা আলিসান বাড়িটার সামনে, আমি আর রাফাত এক বাড়িতেই থাকি,এক বাড়ি বলতে রাফাত ও তার মামা দের একসঙ্গে থাকা,তাদের,এখানেই ৪ তালার একটি ফ্লাটে আমি আর শিমু সাবলেট থাকি। মূলত পড়াশোনার জন্য ঢাকাতে থাকা,গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মনোহরগঞ্জেই এক কিলোমিটার ব্যবধানে আমার আর শিমুর বাড়ি। শুরুতে উত্তরায় থাকলেও তা ভার্সিটি হতে দূর হওয়ায় সাভারে আসা।এখানে আসতেই রাফাতের জিদ তার বাসায় থাকতে হবে, এক প্রকার তার জিদের কাছে হার মেনেই তাদের বাড়িতে থাকা।বাড়িটা আমাকে থাপ্পড় মারা ব্যক্তিটির ও হলেও পড়াশোনার সুবাদে তার প্রবাসে থাকার খবর টা আমার জানা।তার দুয়েকটা ছবি ছাড়া কোনো কিছুই আমার জানা ছিলোনা। পরিবার কে সারপ্রাইজ দিতে হুট করে এসে আমাকে এতো বড়ো ঝটকা দিবেন তা ছিলো আমার কল্পনাতীত।

আমায় রেখে রাফাত বাইকটা পার্ক করতে গেলে,আমিও সিড়ির দিকে পা বাড়ালাম,পেছন থেকে আসা মেয়েলী কণ্ঠস্বরে ঘুরে দাড়ালাম। মুহুর্তেই একটা হাস্যজ্বল চেহারা আসলো আমার সামনে,মানুষ টা আমার অনেক পছন্দের একজন কখনো মনেই হয়নি এ আমার নিজের বোন নাহ

-পালক দাড়া,কতোবার ডাকছি পেছন থেকে,দুটো মিলে গল্প শুরু করলে দিন দুনিয়ায় তোর খবর থাকে নাহ

এসে আমাকে জড়িয়ে ধরেই কথা গুলো বললো রূচিতা আপু।আমিও তাকে দু’হাতে আগলে বললাম
-শুনতে পাইনি গো আপু,এত্তোগুলা সরি
বলেই কান ধরলাম

আমার কথা হেসে দিয়ে বললো আপু

-থাক হইছে,দুটোই এক জাতেন,ঢঙের বেলাই জুড়ি নাই।

-তুমি কখন আসলে আপু সকালে তো দেখলাম নাহ তোমায়
আরে একটু আগেই এসেছি,এসেই আবার মামুর অফিসে ছুটে গেছি আমার ছোটু কে আনতে

আপুর কথার মর্ম বুঝতে না পারায় কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে তাকালাম। তখন আপু হাসিটা আরও প্রসারিত করে দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে বললো

-তোরে তো বলাই হয়নি আফু আমার ভাই এসেছে,তোকে বলেছিলাম নাহ মেঘের কথা,আমার ছোটু ও এসেছে।পরশু রাতে।ওর জন্যই তো ছুটে এসেছি আমি,ওকে বাড়ি না পেয়ে অফিসে চলে গেছি
মেঘ নামটা শুনতেই অদ্ভুত একটা অনুভূতি কাজ করলো মস্তিষ্ক জুড়ে।বিরক্তি, রাগ না অপমান তা ঠিক ঠাহর করতে পারলাম নাহ।

-ওইতো এসেছে
আপুর কথা ঘার ঘুরিয়ে তাকাতেই দৃষ্টিগোচর হলো ডিপ অ্যাশ কালা শার্টের সাথে কালো প্যান্ট,ব্লেজার আর জুতো পরা ফরমান ড্রেসের লম্বা চওড়া অতিমাত্রার সুদর্শন ব্যক্তির চেহারা টা

দ্রুতপদে হেটে এদিকেই আসছে,রূচিতা আপুর ডাকে চোখ তুলে এদিকে তাকাতেই
.
.
.
.চলবে ইনশাআল্লাহ

হীডিংঃ রাফাত মেঘের ভাই হলে মেঘ তার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান কি করে হয়,এ নিয়ে হয়তো অনেকের কনফিউশন ছিলো, আশা করি এবার সবটা ক্লিয়ার। হ্যাপি রিডিং

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here