#ভালোবাসি_প্রিয় (০৬)
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-“দোয়া গাড়ি থেকে নেমে যেতেই বৃত্ত পিছনের সিটে কিছু একটা জ্বলজ্বল করতে দেখে অবাক হয়ে গেল। বৃত্ত কৌতুহল দমিয়ে রাখতে না পেরে পিছনের সিটে গিয়ে দেখলো লাইটের আলোয় একটা স্বর্ণের কানের দুল জ্বলজ্বল করছে।বৃত্ত দুল দেখে মনে মনে বললো,দুল টা অনেক পরিচিত মনে হচ্ছে, কোথায় যেন দেখেছি।ও হ্যাঁ এই রকম দুল তো মমের কানে দেখেছিলাম কিছু দিন আগে। কিন্তু মমের দুল আমার গাড়িতে কেন? পরক্ষণেই মনে হলো হয়তো মম আমার গাড়ি করে কোথাও বেড়াতে গিয়েছিল আর তখন ভুলবশত দুল খুলে পড়ে গেছে। বৃত্তের আকাশ কুসুম ভাবনার মাঝে ঝর্না আবরারের কল আসলো।বৃত্ত ফোন রিসিভ করতেই ঝর্না আবরার বললেন,
-“তুমি এখন কোথায় আছো বেটা?”
-“এই তো মম দশ মিনিটের মধ্যেই বাসায় পৌঁছে যাচ্ছি।”
-” এতো তাড়াহুড়ো করে আসার প্রয়োজন নেই বেটা। হসপিটাল থেকে কল আসছিল তোমার ফুফা হসপিটালের উদ্দেশ্য রওনা হয়েছেন। তুমি সাবধানে এসো বেটা।”
-“ঠিক আছে মম। রাখছি আমি ।বাই। ঝর্না আবরারের সাথে কথা বলা শেষ করে বৃত্ত ভাবলো, ইশ্ মম যদি আর একটু আগে বলতো ফুফা চলে গেছেন ,তাহলে মিস দেড় ফুট কে বাসস্ট্যান্ড অবধি পৌঁছে দিতে পারতাম।কি জানি এতোক্ষণে পৌঁছাতে পেরেছে কি না? পরক্ষণেই বৃত্ত নিজেকে ধিক্কার জানিয়ে বললো, দূর আমি ঐ দেড় ফুটের কথা ভাবছি কেন?ও ম”রে ম”রু”ক তাতেই বা আমার কি? মেয়ে তো নয় যেন একটা জ্ঞানের বস্তা।কথায় কথায় জ্ঞান দিতে আর অপমান করতে বেশ পারদর্শী। অকৃতজ্ঞ মেয়ে একটা। এজন্যই কারো উপকার করতে হয় না। খুব তো নিজের সর্বত্র হারাতে বসেছিলি,কই কেউ তো এলো না তোকে সাহায্য করতে, তোর সবচেয়ে বড় শত্রু,যাকে তুই ভার্সিটির সবার সামনে অপমান , অপদস্থ করেছিলি সেই বৃত্তই তোকে রতন পাশার মতো কিলারের হাত থেকে বাঁচালো। বিনিময়ে তাকে কি দিলি?কথার ছলে অপমান আর জ্ঞান দিয়ে চলে গেলি।আজ তোকে বাঁচিয়েছি বলেই তুই ভাবিস না আমি তোর সব অপমান ভুলে গিয়েছি।তোকে আমি আগেই বলেছিলাম তুই আমার শিকার দেড় ফুট। আমাকে করা প্রত্যেক টা অপমানের বদলা আমি নিবো।তিলে তিলে মা”র”বো তোকে। নামকরা ভার্সিটিতে পড়াশোনা করার খুব শখ তোর তাই না? আমি ও দেখবো তুই কিভাবে এই ভার্সিটি তে পড়াশোনা করতে পারিস বলেই পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো বৃত্ত।
___________________________________
-“দোয়া পায়ে ব্যথা নিয়ে কোনমতো হেঁটে বাসস্ট্যান্ড অবধি এসে দেখে তার বাবা বাসস্ট্যান্ডে চিন্তিত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। দোয়া কে দেখা মাত্রই জরিয়ে ধরে কান্না করে দিয়ে বললেন, তুই ঠিক আছিস তো মা?এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল এই বুঝি তোকে হারিয়ে ফেলেছি।”
-” আমি ঠিক আছি আব্বা। আপনি শুধু শুধু চিন্তা করছিলেন আব্বা। আমি আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছি ।অটো পাচ্ছিলাম না দেখে একটু দেরি হলো।”
-“ঠিক আছে।এখন বাসায় চল।তোর আম্মা , ছোঁয়া খুব চিন্তা করছে।”
-“জ্বি আব্বা , চলুন।”
-” দোয়া বাসায় ফিরতেই শাহিনা বেগম আরেক দফা কান্নাকাটি শুরু করে দিলেন।যা দেখে দোয়া বললো, আহ্ আম্মা আমি কি মা”রা গিয়েছি?সবাই মিলে কান্নাকাটি করছেন কেন? কান্নাকাটি বাদ দেন তো আম্মা। আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে ।সারাদিন কিছু খাই নি।আমি রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে কাযা নামাজ পড়ে নিচ্ছি। আপনি আমার জন্য খাবার নিয়ে আসুন আম্মা।”
-“ঠিক আছে, তুই যা। আমি খাবার বেড়ে আনছি।”
-” দোয়া ফ্রেশ হতে গিয়ে দেখলো পায়ে র”ক্ত জমাট বেঁধে গেছে,হাতের ছিলা জায়গায় জ্বালাপোড়া করছে। দোয়া ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিজেই নিজের কা”টা জায়গায় ড্রেসিং করে ফুল হাতার জামা পরিধান করলো ,যাতে কেউ কা”টা হাত দেখে সন্দেহ করতে না পারে। কিন্তু কথায় আছে পৃথিবীর সবার চোখ ফাঁকি দেওয়া গেলেও মায়ের চোখ ফাঁকি দেওয়া অসম্ভব। দোয়ার ব্যাপার টা অন্য কেউ ধরতে না পারলে ও বিষয় টা শাহিনা বেগমের চোখ এড়িয়ে যায় নি। তিনি দোয়ার জন্য খাবার নিয়ে এসে দোয়া কে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে জিজ্ঞেস করেন, হ্যাঁ রে দোয়া তোর পায়ে কি হয়েছে? খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছিস কেন মা?পায়ে কি হয়েছে?”
-” কিছু হয় নি আম্মা।”
-” বাহ্! শহরের নামকরা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে আমার মেয়ের বেশ পরিবর্তন হয়েছে দেখছি। আমার দোয়া মিথ্যা কথা বলাও শিখে গেছে ।”
-“দোয়া পুরো ঘটনা না বলে শুধু বললো, সেইরকম কিছু হয় নি আম্মা।অটো থেকে তাড়াহুড়ো করে নামতে গিয়ে একটু ব্যাথা পেয়েছি। আপনি চিন্তা করবেন না আম্মা। আমি মেডিসিন খেয়ে নিবো। আপনি এখন আমার মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিন তো।বড্ড ক্লান্ত লাগছে। একটু ঘুমোবো আমি।”
-” তাহলে খাবার খাবে কে? আমি যে তোর জন্য খাবার বেড়ে আনলাম। সারাদিন কিছু খাস নি , মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।তাড়াতাড়ি ওঠ মা। খাবার খেয়ে মেডিসিন খেয়ে নে।”
-” দোয়া শাহিনা বেগমের কোলে মাথা রেখে বললো,এখন খেতে ইচ্ছে করছে না আম্মা। আপনার কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে ইচ্ছা করছে।”
-“দিবো কানের নিচে ঠাঁটিয়ে এক চড়।আগে খেয়ে নে। তারপর যত খুশি ঘুমা।নে মা হা কর।”
-” দোয়া খাবার শেষ করে মেডিসিন খেয়ে শাহিনা বেগমের কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। দোয়া ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে শাহিনা বেগম দোয়াকে বালিশে শুইয়ে দিয়ে গায়ে কাথা দিয়ে দোয়ার রুম থেকে বেড়িয়ে আসলেন ।”
-” প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে ছোঁয়া দোয়া কে ডেকেই চলেছে,দোয়াপু ওঠো। সিমরান আপু কল করে কান্না করছেন ।তোমার সাথে একটু কথা বলবে।
-“ছোঁয়ার ডাকে দোয়া ধড়ফড়িয়ে ওঠে বললো,কি হয়েছে টিয়া পাখি? এইভাবে ডাকছিস কেন? তোকে কতো বার বলেছি ঘুমোলে ডাকবি না। কি হয়েছে তাই বল?”
-“তোমার আজ হঠাৎ কি হয়েছে দোয়াপু। তুমি তো কখনো আমার সাথে এমন ব্যবহার করো না। তুমি ফেরার পর থেকেই নোটিশ করছি , তুমি কেমন যেন অস্বাভাবিক আচরণ করছো।কি হয়েছে আপু? তুমি কি কিছু লুকিয়ে যাচ্ছো আমাদের থেকে?”
-” কিছু হয় নি টিয়া পাখি। তুই ফোন দিয়ে বাইরে যা।”
-“হুম,এই নাও।কথা বলো। সিমরান আপু লাইনে আছে।”
-“আসসালামুয়ালাইকুম দোয়া।”
-” ওয়ালাইকুমুস সালাম।”
-” তোমার কি হয়েছিল?আমরা তো এক সাথেই বের হয়েছিলাম।তাহলে তোমার ফিরতে এতো লেট হলো কেন?
-” দোয়া দরজা লাগিয়ে দিয়ে এসে পুরো ঘটনা সিমরান কে খুলে বললো। আমি বুঝতে পারছি না সিমরান কে বা কারা আমার সাথে এমন করলো।”
-” এক মিনিট দোয়া। ভার্সিটি তে তোমার শত্রু দুই জন।বৃত্ত ভাইয়া আর ইংলিশ আপা। আমার জানা মতে ভার্সিটি তে তোমার তৃতীয় কোনো শত্রু নেই।আর তোমার কথা মতে তোমার প্রধান শত্রু বৃত্ত এসে তোমাকে ঐ লোকেদের হাত থেকে বাঁচিয়ে রতন পাশা কে পুলিশে দিয়েছে। তারমানে এইটা ক্লিয়ার যে বৃত্ত ভাইয়া এই কাজ করেনি।আর বাকি থাকলো ইংলিশ আপা।তাহলে কি ইংলিশ আপাই তার অপমানের প্রতিশোধ নিতে তোমার সাথে এই জঘন্য খেলাটা খেললো?
-“এইটা কিভাবে হতে পারে সিমরান? ইংলিশ আপা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিলেন।সে তো আমাকে তার বোনের মতো দেখতেন। ইংলিশ আপা কিছুতেই এই কাজ করতে পারে না সিমরান।অযথা কাউকে দোষারোপ করা উচিত নয় ।এই ব্যাপারে আল্লাহর ভালো জানেন।তিনি সবই দেখেছেন,শুনেছেন।আমরা শুধু মাত্র সন্দেহের বশে একজন কে অপরাধী বলতে পারি না।”
-” এইটা অবশ্য ঠিক বলেছো।তবে আমার মন বলছে আসল কালপ্রিট খুব শ্রীঘ্রই আমাদের সামনে আসবে।তবে তুমি ভালো আছো , সুস্থ্য আছো শুনে মনটা হালকা লাগছে আমার। বুকের উপর যেন ভারি পাথর জমা হয়ে ছিল। তোমার এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছিল। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি সবটা পরিকল্পনা ছিল।অনেক বড় বিপদ থেকে আজ আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করেছেন। তুমি এখন বিশ্রাম করো দোয়া।রাখছি আমি। আল্লাহ হাফেজ।”
-“দোয়া সিমরানের সাথে কথা বলতে বলতে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎ ড্রেসিং টেবিলের দিকে চোখ পড়তেই দোয়া হতভম্ব হয়ে গেল।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।
[আসসালামুয়ালাইকুম। আমার ফোনে সমস্যা হওয়ার কারনে গতকাল গল্প দিতে পারি নি। দুঃখিত]