#ভালোবাসি_প্রিয় (১৪)
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
কে”টে গেছে কয়েক মাস। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়ে পর্যায়ক্রমে সকল বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।আজ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা। ইদানিং বৃত্ত অনেক ব্যস্ত সময় পার করছে। দোয়ার সাথে দূর্ঘটনা ঘটার পর থেকে সামিউল আবরার বৃত্তের সাথে তার কোন প্রকার যোগাযোগ করে নি।যা বৃত্তকে ব্যথিত করেছে। এরপর থেকে নিজেকে অনেক গুটিয়ে নিয়েছে বৃত্ত।বৃত্ত আর আগের মতো ভার্সিটি তে নিজের পাওয়ার প্রয়োগ করে না।অন্য স্টুডেন্টদের মতোই স্বাভাবিক ভাবে ভার্সিটি তে যাওয়া আসা করেছে বৃত্ত। বন্ধু বান্ধব ক্লাব আড্ডা বাদ দিয়ে সেই সময় টা নিজের পড়াশোনার পিছনে ব্যয় করেছে। মোটামুটি ভালো প্রিপারেশন হয়েছে বৃত্তের। আশা করা যাচ্ছে হয়তো ভালো কিছু হবে।বৃত্ত সকাল সকাল আরো একবার বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে এমন সময় জামিলা এসে বললো, ভাইজান খালাম্মা আপনারে খাওনের লাইগা ডাক পারছে। খালাম্মা খাওন লইয়া বসে আছে। তাড়াতাড়ি আহেন ভাইজান।”
-” মম কে গিয়ে বলো আমার ক্ষুধা নেই।খাবো না আমি।”
-“খাবো না বললেই তো হবে না বেটা। তোমার দেরি হচ্ছে দেখে আমি নিজেই তোমার জন্য খাবার নিয়ে আসছি। এখন ঝটপট খেয়ে নাও।”
-” আমার খেতে ইচ্ছে করছে না মম।”
-” পরীক্ষা দিতে যাচ্ছো, কিছু মুখে দিয়ে যাও বেটা।এই নাও হা করো। বৃত্তের গালে এক লোকমা খাবার তুলে দিয়ে বললেন ঝর্না আবরার।”
-” বৃত্তের খাবার শেষ হলে ঝর্না আবরার বৃত্তের কপালে চুমু দিয়ে বলল, আমার বিশ্বাস ছিল একদিন না একদিন তুমি ঠিকই তোমার ভুল বুঝতে পারবে। আমি হয়তো তোমাকে আঘাত করে কথা বলতে পারি নি।তোমাকে শাসন করতে পারি নি।গায়ে হাত তুলতে পারি নি। কিন্তু আল্লাহর দরবারে সবসময় চেয়েছি তিনি যেন তোমাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনেন। তোমাকে হেদায়েত দান করেন। আল্লাহ আমার ডাকে সাড়া দিয়েছেন। তুমি যখন যা চেয়েছো , আমি দিয়েছি। তোমার সামান্য চাওয়া টুকু ও অপূর্ণ রাখি নি। তোমার কাছে আমার একটাই অনুরোধ বেটা তুমি পরিপূর্ণ ভাবে নিজেকে শুধরে নাও। তখন আমি গর্ব করে তোমার ড্যাড কে বলতে পারবো আমি কোন জা”নো”য়া”র গর্ভে ধারণ করি নি বলতে বলতে চোখের পানি মুছলেন ঝর্না আবরার।”
-” বৃত্ত প্রতিউত্তরে কিছু না বলে বৃত্তের রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সবকিছু গুছিয়ে বাইক নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরে।”
-” বৃত্ত ভার্সিটি তে এসে দেখে অভি বাদে বৃত্তের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই চলে এসেছে।অভি কে না দেখতে পেয়ে বৃত্তের মন খারাপ হয়ে যায়। এদিকে সবাই হলে চলে যাচ্ছে কিন্তু অভি লাপাত্তা। পরক্ষণেই বৃত্ত ভাবলো হয়তো অভি এখনো আমার উপর অভিমান করে আছে।আর সেই অভিমান থেকে অভি আমাকে ছাড়া হলে চলে গিয়েছে।বৃত্ত সাতপাঁচ ভেবে চেকিং সাইডে গিয়ে দাঁড়াতেই বৃত্তের স্বরণ হলো তার হাতে ফাইল নেই।বৃত্ত দৌড়ে বাইকের কাছে এসে সব জায়গায় দেখলো । কিন্তু কোথাও ফাইল নেই। বৃত্তের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। ফাইলের মধ্যে বৃত্তের রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট ছিল।বৃত্ত দিশেহারা হয়ে আবারো চেকিং সাইডে আসতেই একজন সিকিউরিটি জিজ্ঞেস করলো, তোমার রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড কোথায়?দেখাও সেগুলো।”
-” বৃত্ত আমতা আমতা করে বললো, আসলে আমার ফাইল টা হয়তো কোথাও পরে গিয়েছে।বাসা থেকে বের হওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু এখন দেখতে পারছি না। কোথায় যে পরেছে কার হাতে পরেছে কিছুই বুঝতে পারছি আমি। তাছাড়া এখন খুঁজতে গেলে অনেকটা সময় পার হয়ে যাবে। আমার আসতে আসতে হয়তো পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। তাছাড়া যে খুঁজে পাবো তার ও তো কোন গ্যারান্টি নেয়।”
-” তাহলে তো তুমি হলে প্রবেশ করতে পারবে না।”
-” মানে কি ? এইটা আমার বাবার ভার্সিটি।আর আমি সামন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ডের জন্য হলে প্রবেশ করতে পারবো না?”
-“দেখ রুলস সব ছাত্র-ছাত্রীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।রুলসে দেখা হয় না কোনটা তার নিজের ভার্সিটি আর কোনটা তার বাবার ভার্সিটি।তাছাড়া তোমার ড্যাড সামিউল আবরার স্পষ্ট বলে দিয়েছেন,এই ভার্সিটি তে অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতো তুমি ও সাধারণ একজন ছাত্র। তোমাকে যেন অন্য ছাত্র-ছাত্রীদের মতোই দেখা হয়।সো তুমি এখন আসতে পারো। রেজিস্ট্রেশন কার্ড এডমিট কার্ড ছাড়া তুমি হলে প্রবেশ করতে পারবে না।”
-” বৃত্তের অপমানে নিজের কাছেই নিজেকে অসহায় লাগছে।একে একে বৃত্তকে ছেড়ে বৃত্তের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই হলে প্রবেশ করছে। অথচ এসব ফ্রেন্ডদের পিছনে বৃত্ত হাজার হাজার টাকা উড়িয়েছে। তাদের সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা আড্ডায় কা”টিয়েছে ।আর আজ বৃত্তের দুঃসময়ে তার পাশে কেউ নেয়। কেউ তার কথা একটা বার ও ভাবলো না। এজন্যই হয়তো বলা হয়েছে “সুসময়ে বন্ধু বটে অনেকেই হয়, অসময়ে হায় হায় কেউ কারো নয়।”বৃত্ত তাড়াতাড়ি বাইক নিয়ে যে রাস্তা দিয়ে ভার্সিটি গিয়েছিল সেই রাস্তা দিয়ে এসে প্রত্যেক টা লোককে জিজ্ঞেস করে । কিন্তু কেউ ফাইলের ব্যাপারে কিছু বলতে পারে না। অবশেষে বৃত্ত নিরাশ হয়ে ভার্সিটি তে চলে আসে।বৃত্ত কি করবে বুঝতে না পেরে হাঁটু গেড়ে রাস্তায় বসে পড়ে। বৃত্তের তখনই দোয়ার সাথে করা প্রত্যেক টা অন্যায়ের কথা মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে যায় দোয়ার ভেজা কণ্ঠে বলা সেই কথাটা, আল্লাহ ছাড় দেন , কিন্তু ছেড়ে দেন না।বৃত্ত ভাবছে ড্যাড কে কল করে বলতে পারলে ড্যাড নিশ্চয় কোন না কোন ব্যবস্থা করে দিতো। কিন্তু বৃত্ত পকেট হাতড়ে দেখে ফোন টা ও তার সাথে নেই। বিধাতা যেন আজ তাকে সব দিক থেকেই কোনঠাসা করে রেখেছেন।বৃত্ত অসহায়ের মতো রাস্তার মাঝখানে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে । হঠাৎ তার পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে পিছনে ফিরে দেখে অভি দাঁড়িয়ে আছে।অভি কে দেখে বৃত্ত চোখের পানি মুছে বললো,অভি তুই এইখানে কেন? সবাই তো পরীক্ষার হলে চলে গিয়েছে। তুই ও চলে যা। আবার সিট খুঁজতে হবে তো।লেট হয়ে যাবে তোর। দাঁড়িয়ে না থেকে যা তুই।”
-” তুই যাবি না?”
-” আমার বোধহয় পরীক্ষা দেওয়া হবে না রে। আল্লাহ যে ছাড় দেন ,তবে ছেড়ে দেন না এই কথাটার মর্ম আমি আজ বুঝতে পারলাম।মিস দেড় ফুটের সাথে আমি এমনটাই করতে চেয়েছিলাম । কিন্তু দেখ প্রকৃতির বিচারের আমি আজ নিজেই তার ভুক্তাভোগি হয়ে গেলাম। তুই কথা না বাড়িয়ে যা অভি।”
-” তোর সাথে আমার বিপদে ছেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক না বৃত্ত। হ্যাঁ মাঝখানে একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বাস কর ,তোকে কষ্ট দিয়ে তোর থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আমি নিজে পেয়েছি।তোর আমার সম্পর্ক যে আত্মায় মিশে গেছে।যে পরীক্ষা তুই দিতে পারবি না,সেই পরীক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নেই আমার।প্রয়োজনে আমরা দুইজন একসাথে ইয়ার ড্রপ দিবো।তবু ও আমি তোকে ছেড়ে পরীক্ষার হলে যাবো না।”
-” পাগলামি করিস না অভি।এইটা ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা।ভাবতে পারছিস এই ইয়ার ড্রপ করা মানে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়া থেকে অনেকটা পিছিয়ে যাওয়া। তাছাড়া সামনে বিসিএস দেওয়ার সুযোগ আছে। সুযোগ টা হাত ছাড়া করিস না অভি।আমি ড্যাডের কাছে কখনো ভালো ছিলাম না।আর ভবিষ্যতেও হয়তো হতে পারবো না। কিন্তু তুই তো তোর বাবা মায়ের বাধ্য সন্তান।তোর বাবা মায়ের কথা ভেবে হলে ও তুই যা অভি।”
-” আমি মাঝপথে তোকে রেখে কিছুতেই যাবো না।যাক না একটা বছর কিছু যাবে আসবে না।”
-” তুই যাবি মানে যাবি ব্যাস।”
-” আমি যাবো না বলছি যাবো না।”
-” অভি, বৃত্ত দুজনের কথা কা”টা”কা”টির মাঝে পেছন থেকে মিষ্টি একটা কণ্ঠে ভেসে আসে, একটা ফাইল পাওয়া গিয়েছে।ফাইলটা আশিয়ান আবরার বৃত্ত নামের কারো।”
-” ফাইলের কথা শুনে বৃত্ত ,অভি দুজনেই পিছনে তাকিয়ে অবাকের সর্বোচ্চ সিমায় পৌঁছে যায়।কারণ তারা ফাইল দিতে আসা মেয়েটিকে কখনো এইখানে এইভাবে আশা করে নি।
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।