তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৪
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনির রাগ চরম পর্য়ায়ে পৌঁছে গেছে।রাগে মাথা ফেটে আসছে তার।বাপ্পি এতটা নিচু মন মানসিকতার সে কল্পনাতেও ভাবেনি।হনহনিয়ে হোটেলের রুমে এসে দরজা লাগাতে যেতেই বাপ্পি হাত দিয়ে আটকে ফেলে বললো,’আহা রাগ করছো কেন?’
‘আপনি তো কোনো কথাই বলবেন না আমার সাথে।আপনার ব্যবহার এরকম ছিঃ!চিন্তাধারা এতটা নিচু!থাকেন ঐ মেয়েকে নিয়ে অন্যরুমে।খবরদার যদি আমার সাথে থাকতে আসছেন তো’
বাপ্পি জোর করে রুমে ঢুকে বললো,’আমি তো আলাদা রুম বুক করিনি।’
তটিনি ওমনি মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,’তাহলে সব মজা ছিল?’
‘না সেটাও তো বলছিনা।আসলে যে মেয়েটার সাথে থাকার কথা সে এখানে এসে থাকবে।তুমি চেয়ে চেয়ে দেখবে শুধু’
তটিনি আরও রেগে গেলো।এরপর বাপ্পির গলা চেপে ধরে বললো,’চৌধুরী বংশের ছেলের ইজ্জত ধুই দিব আমি।যতই আদরের ছেলে হয়ে থাকেন না কেন আপনি।আমার মেজাজ গরম করলে আমি অপমান করতে ছাড় দিব না।’
বাপ্পি তটিনির কোমড়ে হাত দিয়ে টান দিয়ে কাছে নিয়ে এসে বললো,’দিও না ছাড়।আমি চাইনা তুমি আমায় ছাড়ো।’
তটিনি বাপ্পির গলা ছেড়ে দিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,’একসাথে দুই নৌকায় পা দিতে চান তাই না?মেরে ফেলবো দুটোকে।দাঁড়ান ফোন করছি আপনার মাকে।ওনার ও জানা উচিত ওনার কলিজার টুকরা ছেলে কত বড় লম্পট! ‘
এই বলে তটিনি নিজের ফোন খুঁজে বাপ্পির মাকে কল লাগায়।তিনি সেসময় ঘুমাচ্ছিলেন কারণ তখন ভোর সাড়ে চারটা বাজে।রিং হলো কিন্তু কেউই ধরলোনা।বাপ্পি মিটমিট করে হাসছে শুধু।
তটিনি ঠাসঠুস করতে করতে ব্যাগপত্র রেখে বিছানায় উঠে বসে।বাপ্পি ফোন নিয়ে এগিয়ে ধরে বলে,”আবার কল দিয়ে দেখতে পারো।বাবা হয়ত উঠে গেছে’
তটিনি ওর হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে বসে থাকে।বাপ্পির কি ভয়ভীতি বলে কিছু নেই? বেশরমের মতন নিজেই এগিয়ে দিচ্ছে বিচার দেয়ার জন্য।বিচারটা দিলে ওর কি হতে পারবে সে কি জানেনা!হয়ত ভাবছে তার মা বাবা এইসব শুনেও বলবে আমাদের ছেলে বেস্ট।কিন্তু চান্দু তুমি কি জানো এইসব কথা কোনো বাবা মাই সহ্য করেননা।
ভাবতে ভাবতে তটিনি দেখে বাপ্পির বাবা কল রিসিভ করেছেন।
‘আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল’
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।কি রে মা?এই সময় কল দিলে।তোমরা ওখানে ঠিকঠাক পৌঁছাইছো তো?’
‘হ্যাঁ।আসলে একটা কথা জানানোর জন্য ফোন দিলাম।আর সেটা হলো আপনার ছেলে কি করতেছে জানেন?সে হোটেলে একটা মেয়ের সাথে আলাদা সময় কাটাতে চাইছে। আমি থাকার পরেও।আপনি ওনাকে বুঝান নাহয় আমি কিন্তু এখান থেকে সোজা বাবার বাড়ি ফিরে যাব’
‘হাহাহা!বাপ্পি তোমার সাথে মশকরা করছে তাও কি বুঝছোনা?এতটাই অবুঝ তুমি?’
‘এটা মোটেও মশকরা নয় বাবা।উনি আমার চোখের সামনে ম্যানেজারকে একটা মেয়ের সন্ধান দিতে বলেছেন’
‘হতে পারে,তবে তার পুরোটাই হয়তবা নাটক ছেলে।বাপ্পি জীবনে এমন কাজ করার মতন ছেলে না।তোমার হয়ত কিছু ভুল হচ্ছে।’
তটিনি রাগ করে ফোন রেখে দিলো।বাপ্পি নিজের গায়ের শার্ট চেঞ্জ করে অন্য একটা পরে আয়নার কাছে ঘেঁষে মাথার চুল ঠিক করছে।
তটিনি গাল ফুলিয়ে রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ছিল।হলেও হোক মশকরা।মুখে কেন আনবে ওরকম কথা??এটা তো ভাল মানুষেরা বলেনা।
‘উনি কোন সাহসে এই কথা আমার সামনে আরেকজনকে বললেন!এতই যখন আমায় পছন্দ করে, তবে আমায় নিয়েই পড়ে থাকুক না।আবার অন্য মেয়ে আনছে কেন মাঝখানে!
——–
আসিফ ভেরে নামাজ পড়তে উঠে দেখে রিনি ওর বালিশটা তুলে নিয়ে বুকের মধ্যে লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে।সে জোর গলায় রিনিকে বললো নামাজ পড়তে উঠতে।কিন্তু রিনির খবর নেই।সে কানে হাত দিয়ে আরও গভীর ঘুমের দিকে ধাবিত হলো।আসিফ এবার ওর হাত ধরে জোর করে উঠিয়ে বসিয়ে বললো,’নামাজ পড়তে বলছি তোকে,
পড়তেই হবে!আমার সাথে থাকতে হলে আমার কথামতন চলতে হবে।আমি কিছু শুনতে চাইনা আর।উঠে অজু করে নামাজ পড়বি আয়’
রিনি চোখ ডলতে ডলতে বললো,’মাইয়ারা কোন সময় নামাজ হড়ে না?’
‘কোন সময়?’
‘অসিব্বর মতন আবার জিগাইতেছেন!’
রিনি এটা বলে আবার শুয়ে পড়েছে।আসিফ বেকুবের মতন অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে থাকার পর তার বুঝে আসলো আসলে রিনি কেন নামাজ পড়ছেনা।তাই আর ডাকাডাকি না করে নিজেই নামাজ পড়তে চলে গেছে।
এরপর নামাজ পড়ে এসে রুমের লাইটটা নিভিয়ে জানালার পর্দা টেনে রুমটা আরও অন্ধকার করে দিলো সে।তারপর নিজেও রিনির একপাশে শুয়ে পড়ে।রিনি মাথায় কদুর তেল দেয় সবসময়।গন্ধটা খুব তীব্র। রিনির মাথার কাছে শুয়েছে বলে আসিফের সেই তেলের গন্ধে একেবারে মাথা ধরে গেছে।
রিনির মাথায় চাদর টেনে দিয়ে দূরে সরে গেছে আসিফ।রিনি মাথায় হাত দিয়ে চাদর পেয়ে বললো,’তটিনি বুবুর তেল মাতাত দিয়াম এলদরি’
[তটিনি বুবুর তেল মাথায় দিব এখন থেকে]
‘তটিনি কখনও মাথায় তেল দেয়না’
‘তেল না দিলে মরি যাইয়াম মাথা ব্যাথাত’
‘আমি তো মানা করিনি তোকে’
‘আন্নের যে অসুবিধা অয়তাছে আঁই বুঝতাম হারি।আইচ্ছা বিনাগন্ধ আলা তেল দিয়াম এলদরি’
‘এত সেক্রিফাইসের দরকার নাই।মাথায় চাদর দিয়ে ঘুমালেই হবে’
‘কোনোদিন তটিনি বুবুর মাথা হুংগী চাইছেন?’
[কখনও তটিনি বুবুর মাথা শুঁকে দেখেছেন?]
‘এইসব কথা কেন জিগাইতেছস?’
‘আঁর তো জানোন লাইগবো আঁর জামাই কিচ্চে কিচ্চে’
‘আমাকে সন্দেহ করে কিছুই পাবিনা।কারণ আমি কখনও তটিনিকে ছুঁয়েও দেখিনি’
‘ধরি না চাইলেও প্রেম অন্যভাবেও হয়’
‘তুই থামবি?নাকি গিয়ে আবার নোয়াখালী রেখে আসবো?
——
তটিনি বাপ্পির মা,এমন কি বকুল আপুকেও কল দিয়ে বাপ্পির নামে বিচার দিয়েছে কিন্তু তার ফলাফল শূন্য।
তার কথাটাকে কেউ কোনো লাত্তাই দিলো না।উল্টে বলে দিলো বাপ্পির কথামতো চলতে।এরা কি এই ছেলের জন্য এতটাই অন্ধ?এমন করে কেন কথা বলছে সবাই?তটিনি কি এতই তুচ্ছো?
বাপ্পি তটিনির পাশেই কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমাচ্ছে আর এদিকে তটিনির ঘুম গায়েব হয়ে গেছে এত চিন্তায়।শেষে সে দরজা খুলে বেরিয়েই গেলো।সোজা একেবারে ম্যানেজারের কেবিনের কাছে।সেখানে এসে ঠাস করে টেবিলে হাত রেখে বললো,’কোন মেয়েকে রেডি করেছেন মিঃ বাপ্পির জন্য?’
ম্যানেজার থতমত খেয়ে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।বাপ্পি টাকা দিয়ে গেছে রাতের সারপ্রাইজের জন্য।এখন সেটা বলে দিলে যদি বাপ্পি চড়াও হয়?সেই ভয়ে কিছু বলতেই পারছেনা।এদিকে তটিনি গলা চেপে ধরেছে কথা বের করার জন্য।
‘কি হলো বলুন!কোন মহারানীকে রেডি করেছেন?’
‘আপনি ভুল ভাবছেন ম্যাডাম।ওটা তো স্যার মজা করে বলছিলেন?’
‘সত্য?’
‘হ্যাঁ।ম্যাম বসুন না। জুস খাবেন?’
‘করলার জুস আছে?পাঠিয়ে দেন।এত স্বাদের মশকরা করার জন্য আপনাদের স্যারকে ওটা খাওয়াবো।জলদি পাঠান!’
এই বলে তটিনি রুমে ফিরে আসে।কিন্তু বিছানায় বাপ্পি ছিল না।
তটিনি হন্য হয়ে ওকে খোঁজা ধরলো।এত কম সময়ে ঘুম ভাঙ্গলো আবার গায়েব ও হলো?আশ্চর্য!
তটিনি সবখানে বাপ্পিকেই খুঁজছিল ঠিক সেসময় বাপ্পি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়।
তটিনি ভ্রু কুঁচকে বলে,’কোথায় গেছিলেন?’
‘এত পছন্দ করো?’
‘কে?কাকে?’
‘তুমি,আমাকে’
‘মোটেও না’
‘মোটেও হ্যাঁ।
বেশ দেখছি থার্ড পারসন আসলেই গায়ে আগুন ধরে যায় তোমার।প্রেমে বিরাট রকমের পাগল হলে মানুষ এমনটা করে।আমি খুব গর্বিত এমন একটা বউ পেয়ে।শুরুতে জানতাম ও না তুমি আমাকে নিয়ে এতটা পসেসিভ’
‘থামেন।আর জ্ঞান দিতে হবেনা।আমি মোটেও আপনাকে পছন্দ করিনা ‘
‘তাহলে আমার অন্যদিকে নজর গেলে তোমার এত জ্বলে কেন?’
তটিনি আর কিছু না বলেই সরে যেতে চাইলো কিন্তু আজ আর বাপ্পি তাকে যেতে দেয়নি।পথ আটকে জবাবের উত্তর জানতে চাইলো।
তটিনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।জবাবটা তার নিজেরও জানা নাই।এদিকে বাপ্পি জেনেই তারপর ছাড়বে।
তটিনি মাথা নিচু করে আছে।বাপ্পি অনেকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে শেষে হাত ছেড়ে দেয়।উত্তর তটিনি বলেনি কিন্তু বাপ্পি তার উত্তর পেয়ে গেছে।
তটিনি ঠিক কাদা মাটির মতন।তাকে নিজের মতন করে গড়ে তোলা যায়।একেবারেই অসাধ্যের কিছু না।প্রথমদিন যেটা ভেবেছিল সে আসলে সেরকম না।তটিনি আজীবন অতীত নিয়ে পড়ে থাকার মতন মেয়ে না।তার মনে নতুন আশা,ভালবাসা জাগার স্থান এখনও বাকি আছে তাই ভেবে বাপ্পির খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে আসে।সে এটাই তো চেয়েছিল!তটিনিকে নিজের মতন করে তৈরি করে নিতে!তটিনির যে ওর প্রতি বিন্দু পরিমাণ ও অনুভূতি কাজ করে তার হরেক রকমের প্রমাণ সে পেয়েছে।আর প্রমাণ দরকার নেই।
চলবে♥
তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৫
লেখনীতে-আফনান লারা
.
আসিফ ভার্সিটিতে চলে গেছে রিনি ওঠার আগেই।বাড়িতে ছিল তটিনির বাবা,মা,ঐশী।আর কেউ ছিল না।তারা কেউই রিনিকে ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করেননি।পরের বাড়ির মেয়ে,পরে আবার কি না কি ভেবে বসবে সেই ভেবে তারা রিনির রুমের কাছেও আসেননি। এদিকে গড়াগড়ি করতে করতে রিনি সকাল দশটা বাজে ঘুম থেকে উঠলো।তাকে এ বাড়িতে কেবলই মেহমানের মতন দেখা হচ্ছে।কিন্তু এই বিষয়টা তার ভাল লাগছেনা।সে তো এখানে কদিনের জন্য আসে নাই।আর তাই তাকে মন খারাপ করে সোফার একটা কোণায় গাপটি মেরে বসে থাকতে দেখে তটিনির মা হাতের কাজ ফেলে এসে জানতে চাইলেন কেউ তাকে কিছু বলেছে কিনা।রিনি ওমনি তার হাতটা জোড় করে ধরে বলে উঠলো তাকে যেন ঐশীর মতন করে আদর করা হয়।মানে কাজের বেলায় কাজ করাবে,খাওয়ানোর বেলায় খাওয়া।তাকে যেন মেহমান হিসেবে না ধরা হয়।
রিনির এমন কথায় তটিনির মা বেজায় হাসলেন।হাসবারই কথা।রিনিকে তিনি মেহমান করে আদর করছিলেন যাতে করে সে নিজেকে ছোট না ভাবে।কিন্তু সে দেখি উল্টো ভেবে বসে আছে।
হাসি শেষ করে তিনি রিনির থুতনি টেনে দিয়ে বললেন ‘শুরুতেই কি কেউ খুব আপন হয়ে যায়,যাকে ফরমায়েশ করা যায়?তুমিই বলো,আমি যদি বলি আমার পায়ে মালিশ করে দিতে। তোমার বিষয়টা কেমন লাগবেনা?কিন্তু ঐশী কিংবা তটিনির সেইটা কেমন কেমন লাগবেনা।আবার একই কাজ তারা তোমার মায়ের করবার সময় তাদের কেমন কেমন লাগবে।তাই আপন হতে হলে সময় নিতে হয়।শুরুতেই কেউ খুব কাছের হয়ে যায়না।বুঝলে বোকা মেয়ে?আর তুমি যে আমার বাসার সদস্য হতে চাও তাতে আমি বেশ খুশি হয়েছি।চেষ্টা করবো তোমার সাথে সেরকম করেই ব্যবহার করতে’
ঐশীর মায়ের কথায় রিনির কলিজাটা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।সে ঠিক করেছে আজ থেকেই উদ্যোগ শুরু করে দিবে।
——–
বাপ্পি তটিনিকে নিয়ে সকাল সকাল সমুদ্রে চলে এসেছে।এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।আর তা হলো ওর রুমটাকে সাজানোর দায়িত্ব সে ঐ ম্যানেজারের ঘাড়ে চাপিয়ে তারপর এসেছে।তটিনিকে ছোটখাটো একটা সারপ্রাইজ দিবে।সে হয়ত এরপরেও বাপ্পির প্রতি আকৃষ্ট হবেনা তার পরেও কিছুটা হলেও তার মন গলবে।কারণ এখানে আসার পর থেকেই তার মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।
তটিনি সমুদ্রে এসে মানুষের আনাগোনা কম দেখে খুশি হয়।খুশি হয়ে বলে এইসময়টাতে এসে ভালই হয়েছে।মানুষ বেশি থাকলে সমুদ্রের আসল স্বাদ নেয়া যায়না।
বাপ্পি তখন জানায় সে ওকে অন্য সাউড দিয়ে এনেছে। এই জায়গায় টুরিস্ট আসেনা বলে যেকোনো সময়তেই এটা ফাঁকা থাকে।
তটিনি ফ্রি বলে তার ফোন থেকে একবার মাকে কল দেয় বাবার খবর নিতে,বাপ্পি ওর জন্য কি যেন আনতে গেছে একটু দূরে।
মায়ের কাছ থেকে বাবার খোঁজ নিয়ে ফোন রাখতে যাবে ওমনি রিনি এসে বলে সে তটিনির সাথে কথা বলবে।রিনি ওখানে আছে শুনে তটিনির বুকের ভেতরটা যেন কেমন করে উঠলো।সবকিছুর শেষে সে এখনও আসিফকে ভুলতে পারেনি,আসিফের পাশে রিনি মেয়েটাকে মেনে নিতে পারেনি।এখন আবার তার নাম উঠে আসায় বুকের ভেতর কেমন যেন জ্বালা করছে।
‘তটিনি বুবু,ভালা আছেননি?’
‘হুম ভাল।তুমি?’
‘আঁইও ভালা।ফোন কইচ্চি এককান কামে।আর হেইডা অইলো আন্নে কি বাপ্পি ভাইয়ের লগে ভালা আছেননি?’
‘হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?’
‘হুইনতাম চাই’
‘ভাল না থাকলেও আমার তো কোথাও যাবার পথ বাকি নেই।দুজন মানুষকে সুখী করে রাখার জন্য আমি এই পথে এসেছি।এখন আর ভাল খারাপ জেনে লাভ আছে?’
‘তবে এককান কথা কই।বাপ্পি ভাইরে বিয়া না করে আন্নে যদি আসিফ ভাইরে করইতেন আন্নে সুখী হইতেন না।কারণ হেতেনে বড়ই আনরোমান্টিক।প্রেমভালবাসার কিছু জানেনা।অন্যদিকে বাপ্পি ভাই আন্নের যে কেয়ার করে!!আন্নে ভাগ্য করি এইন্না জামাই হাইছেন।আন্নের ভাগ্য ভালা বলেই আন্নে হেইদিন এই মানুষটারে নিজের করে হাই গেছেন।কজনে এমন মানুষ নিজের জীবনে হায়??আঁই তো হাই নো।আঁরে উনি এক্কানাও ভালবাসেনা।আঁর যে কষ্ট হয় সেটা??আন্নে হয়ত অন কইবেন কারণ আসিফ তোমায় ভালাবসেনা।এটা আসল কথানা,ভাল না বাসলেও আঁই তার বউ লাগি।ভেতর তন ভালবাসা দৌড়ায় দৌড়ায় আনের কথা, যতই প্রেম আগে থাকুক না ক্যান।কিন্তু তার কিছুই হইলোনা।বেক বেডা আসলে ভালবাসতে জানেনা!!’
বাপ্পির গলা শুনে তটিনি কল কেটে দেয়।বাপ্পি হাতে প্যাশন ফ্রুট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একটা তটিনির দিকে বাড়িয়ে ধরে বললো,’এগুলা নাকি খুব মজা।তাই নিয়ে আসলাম।খেয়ে দেখো’
তটিনি বাপ্পির দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে,’আচ্ছা যদি আজ আমার জায়গায় অন্য একটা মেয়ে হতো আপনার বউ হয়ে, তখনও কি এমনই করতেন?’
‘তখনও এমন করতাম কিনা জানিনা।তবে তটিনির বেলায় নিশ্চয় করতাম’
‘সব ছেলেরা এমন করে?’
‘সেটা তো জানিনা।কেন বলতো?এমন প্রশ্ন কেন করছো?’
‘কিছুনা।আমি হোটেলে ফিরতে চাই’
‘এখন না।আমরা তো সারাদিন ঘুরবো ফিরবো। এখনও আরও কত জায়গায় যাব।কেন তোমার টায়ার্ড লাগছে?’
‘কোথায় যাব?’
তটিনিকে কেমন অন্যরকম লাগছে বাপ্পির নিজের কাছে।ও তো এত ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা কথা বলেনা!কি হলো হঠাৎ করে?
——-
আসিফ ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় এক ফুল বিক্রেতা তাকে জোর করে দুইটা গোলাপ ধরিয়ে দিয়েছিল যার কারণে সে ফুলগুলো নিয়েই বাড়ি ফেরে।রিনি দরজা খুলে ওর অপেক্ষায় বসে ছিল অনেকক্ষণ ধরে।আসিফ আসছে দেখে তার সাথে ওর হাতে গোলাপ ঝুলতে দেখে রিনি চোখে মুখে তারা দেখছিল।এক দৌড়ে কাছে গিয়ে সে আসিফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,’আন্নে আঁরে এত ভালবাসেন😇?’
আসিফ তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে উঠোনের মধ্যিখানে।পাড়া প্রতিবেশীরা সব জানালা খুলে ওদের দেখে মিটমিট করে হাসছে।
আসিফ ওদের সবাইকে হাসিঠাট্টা করতে দেখে রিনিকে বুক থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো,কিন্তু রিনি গোলাপ ফুল দেখে আসিফকে এত শক্ত করে ধরেছে যে তার ইচ্ছা ছাড়া কেউ ছুটাতে পারবেনা।
‘রিনি ছাড় আমাকে।মানুষ হাসছে”
‘আঁই কি হরা বেডারে দইচ্ছিনি।আঁই তো আর জামাইরে ধইচ্ছি’
‘মানুষ কত কি বলছে! ছাড় আমায়।নাহলে খুব মারবো”
রিনি আসিফকে ছেড়ে ওর হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে বললো,’আন্নে আঁরে এত ভালবালবাসেন যে আঁর লাই গোলাপ আইনছেন।আঁই আরও মাইনসেরে কই আন্নে ভালবাসতে জানেন না।আন্নে তো আরও ভালা করি ভালবাসতে জানেন।উম্মাহ জানু😘’
‘কিহহ!এইসব কে শেখায় তোকে?’
‘ঐশীকে ফোনে বলতে দেখেছি।কারে জানি বলছিল।কেন?এইডাতে খারাপের কি আছে?’
——-
সারাদিন এদিক সেদিক ঘোরাঘুরি করে দুপুরের খাবার খেয়ে বিকালে সানসেট দেখা শেষে করে অবশেষে তারা হোটেলে ফিরলো।বাপ্পি ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করছিলো সব ঠিক রেখেছে কিনা।ম্যানেজার জানায় সে সব করে ফেলেছে।তটিনি বাপ্পিকে রেখেই রুমের দিকে চলে গেছে।সে অনেক বেশি ক্লান্ত ছিল বলে আর অপেক্ষা করে নাই।
রুমে এসে আলো জ্বালাতেই তটিনির চোখ কপালে উঠে গেছে।সেখানে রুমটা পুরোপুরি সাজানো থাকলেও সেখানে একটি মেয়েও উপস্থিত ছিল।মেয়েটি তটিনিকে দেখে রোবটের মতন দাঁড়িয়ে আছে।নড়ছেনা,কোনো কথাও বলছেনা।তটিনি ওর দিকে তাকিয়ে আছে এল দৃষ্টিতে।সেসময় ম্যানেজার আর বাপ্পি আসলো রুমের সাজানো দেখতে।এসে এই অবস্থা দেখে বাপ্পির আগে ম্যানেজারই অজ্ঞান হয়ে নিচে পড়ে গেছে।তটিনি ঐ মেয়ের থেকে চোখ সরিয়ে ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’আমি তো জানি এই মেয়েটা এই হোটলেরই স্টাফ।উনি কি ভেবে অজ্ঞান হলেন?’
বাপ্পি পানি এনে ম্যানেজারের মুখে ছিঁটাতে ছিঁটাতে বললো,’উনি ভেবেছেন হয়ত তুমি ভাবছো এই মেয়েটাকেই আমি রাতে থাকার জন্য বলেছি।তাই ভয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন”
তটিনি রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে বললো,’আমি এত নেগেটিভ মাইন্ডের না’
ম্যানেজারকে আরও দুজন এসে তুলে নিয়ে গেলো।এদিকে বাপ্পির মাথায় হাত চলে গেছে।সে চেয়েছিল সারপ্রাইজ দিবে তটিনিকে।এত এত পরিকল্পনা সব কিছুতে পানি ঢেলে দিবে ওরা তা ও ভাবতেই পারেনি তটিনির মন হয়ত আরও খারাপ হয়ে গেছে।
তটিনি মোমবাতি একটা নিভিয়ে বললো,”লাইট জ্বলার সময় মোমবাতি জ্বলানো আমার পছন্দ না।কারেন্ট না থাকলেই মোমবাতি জ্বালাতে আমার ভাল লাগে কেবল
যাই হোক,সাজানোটা খুব সুন্দর হয়েছে।আই লাইক ইট।আপনার কারণেই হয়ত ওরা এমন করে সাজিয়েছে।আপনাকেও থ্যাংকস’
বাপ্পি ঢোক গিললো তাও গলা ভিজলোনা।তটিনিকে এভাবে চুপচাপ হতে দেখে ওর কোনো কিছুই হজম হচ্ছেনা।আগের তটিনিই ভাল ছিল।
চলবে♥
(“” আছি বলে গল্প দিতে দেরি হয়)তোমাতে করিবো বাস💗
#পর্ব_২৬
লেখনীতে-আফনান লারা
.
তটিনি রুমের পাশের চিপা বারান্দাটায় এসে চেয়ারে বসে আছে,হাতে ফোন নিয়ে।বাপ্পি রাতের খাবার আনতে গেছে বাইরে।তটিনি সেই সময়ে আসিফকে কল করলো।
আসিফ সবেমাত্র ভাত খাওয়ার জন্য পাতে হাত ঢুবিয়েছিল।রিনি ভেতর থেকে ওর ফোন নিয়ে এসে বলে,’আন্নের ফোন আইছে’
আসিফ তটিনির এই নাম্বারটা চেনেনা।তাই হাত ধুয়ে ফোন কানে ধরলো।
‘হ্যালো,কে বলছেন?’
‘আমি’
তটিনির গলা শুনেই আসিফ রিনির মুখের দিকে তাকায়।রিনি স্বাভাবিক ভাবেই চেয়ে ছিল।আসিফ ওমনি ফোন কানে ধরে উঠানে চলে আসে।
‘হঠাৎ এখন ফোন করলি?কি হয়েছে?তুই ঠিক আছিস তো?’
‘একটা জিনিস চাইবো,দেবে?’
‘কি?’
‘রিনিকে আপন করে নাও।ওর কোনো দোষ নেই।তুমি ওর সাথে বাজে ব্যবহার করোনা’
‘কই করলাম!শুরুতেই তো একটা মেয়েকে নিজের স্ত্রীর সব অধিকার দিয়ে দিতে পারিনা।আমার সময় লাগবে।তুই কি পেরেছিস বাপ্পিকে আপন করতে?বলা যত সহজ করা ততটাই কঠিন।আমি নিজেকে সময় দিচ্ছি,একদিন না একদিন ওকে মেনে নিতেই হবে!তাই বলে তাড়াহুড়ার কিছু নাই’
‘আছে!রিনি এতগুলো বছর কষ্ট পেয়েছে।আমি চাই না তুমি আমার কারণে ওকে কষ্ট দাও!’
‘তোর কারণে নয়।আমার মন ও তো সাঁই দিতে হবে!’
আসিফ কথার মাঝে চেয়ে দেখে রিনি ওর একদম কাছে দাঁড়িয়ে লজ্জায় লাল হয়ে মিটমিট করে হেসে চলেছে।আসিফ চট করে ফোন কান থেকে সরিয়ে বললো,’কারোর কথা লুকিয়ে শোনা বাজে অভ্যাস’
‘আঁই তো ভালা না।এইডা কি নতুন নি?😏🐸😇’
‘থাপড়িয়ে এই সব বাঁদরামি বন্ধ করে দিবো।যা বাসায়!আমি জরুরি কথা বলতেছি’
‘আঁরে লই কইতাছেন।সব হুইনছি।তটিনি বুবু আরও বকো এই বেডারে।আঁরে এক্কানাও আদর করেনা,সোহাগ করেনা’
আসিফ দূরে চলে আসলো ওখান থেকে।তটিনি বললো,’বাচ্চা স্বভাবের মেয়েদের মন অনেক ভাল হয়।ওকে আর কষ্ট দিওও না।’
——–
বাপ্পি শুনছিল।তাও তটিনি যাতে না ভাবে সে ওর কথা শুনে ফেলেছে তাই সে কোনো আওয়াজ না করেই খাবারগুলো টেবিলে রেখে দূরে গিয়ে তারপর তটিনিকে ডাক দেয়।তটিনি ফোন রেখে চলে আসে সেখানে।বাপ্পির সামনে খেতে বসে মাথা নিচু করে ছিল সে।বাপ্পি খাচ্ছেনা,শুধু ভাত নাড়ছে।তটিনির চোখ ওর পাতেই ছিল।সে মাথা তুলে জানতে চাইলো বাপ্পি কেন খাচ্ছেনা।
‘খিধে নেই’
‘আমি খাইয়ে দেবো?’
এ কথা শুনে বাপ্পি চমকে যায়।তটিনি এ কথা বলেছে তা সে কল্পনাও করতে পারেনা।আসলেই কি এটা তটিনি বলেছে?
বাপ্পিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে তটিনি নিজেই ওর প্লেট টা টেনে লোকমা একটা ওর মুখে পুরে দেয়।
বাপ্পি আশ্চর্য হয়ে শুধু খেয়েই চলেছে।খাওয়ানো শেষ করে সে যখন হাত ধুতে গেলো,বাপ্পি টিস্যু দিয়ে মুখ মুছতে গিয়ে ফোন নিয়ে চুপিসারে বকুল আপুকে ফোন দেয়।
‘কিরে বল!হানিমুন কেমন কাটছে!’
‘আপু তুমি তো জানো তটিনি কেমন।কিন্তু আজ অন্য একটা ঘটনা ঘটলো।তটিনি আমায় নিজ হাতে খাইয়ে দিলো’
বকুল আপু হাসতে হাসতপ বললেন,’এ তো ভাল লক্ষণ। অনেকসময় জায়গা বদলালে মানুষের মন ও বদলে যায়’
বকুল আপুর কথায় বাপ্পির শান্তি লাগেনি।তটিনিকে অন্যরকম লাগে।সে তো এমন না।প্রতি কথায় ছ্যাঁত করে উঠতো।সে তো এত মিষ্টি ছিল না!’
তটিনি হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসে গোলাপের পাপড়ি গুলো সরিয়ে এক পাশে শুতেই দেখে বাপ্পি চোরের মতন এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে।
‘আসুন,ঘুমাবেন।আজ অনেক দখল গেছে’
‘কোথায়?’
‘কোথায় আবার?আমার পাশে।এই যে কত জায়গা’
বাপ্পি আরও অবাক হলো।এত চেঞ্জ!
তটিনি উঠে বসে বাপ্পির পাশের গোলাপের পাপড়ি গুলো ঝেড়ে ফেলে ওর জায়গাটা ঠিক করে নিলো।বাপ্পি ভয়ে ভয়ে বিছানয় বসে তটিনির কপালে হাত দিয়ে চেক করলো জ্বর- টর হলো কিনা।কিন্তু তাপমাত্রা তো ঠিকই আছে
তাহলে?
তটিনি হাসলো বাপ্পির এই কাজে।এরপর আবার আগের মতন শুয়েও পড়ে।
বাপ্পির চোখে ঘুম নেই। সারা রুমের গোলাপের গন্ধ আর তার সঙ্গে তটিনির উদ্ভট আচরণ ওকে ভাবাচ্ছে।কোনো কিছু ভাবতে গেলে আবার চোখে ঘুম আসেনা।কি একটা অবস্থা।
তটিনি চুপচাপ,মনে হয় ঘুমিয়ে গেছে।বাপ্পি চট করে উঠে বসলো।তটিনির পিঠে আলতো করে আঙুল রেখে চেক করে নিলো সে জেগে আছে কিনা।আঙুলের স্পর্শ পেয়েও তটিনি টু শব্দ ও করেনি বলে সে বুঝে যায় তটিনি ঘুমিয়ে আছে।তাই ওর ফোন নিয়ে বাপ্পি কেটে পড়ে।সে এখন আসিফকে ফোন করবে।তটিনির এমন বদলে যাবার কারণ তার জানার প্রয়োজন আছে।
সে তো লুকিয়ে তখন ওদের পুরো কথা শেনেনি।তাছাড়া তটিনি আজ সকাল থেকেই বদলে গেছে।তখন আসিফের সাথে কথা বলে বদলায়নি।
আসিফ টিভিতে খবর দেখছিল।রিনি তেল গরম করে আসিফের পেছনে দাঁড়িয়ে ওর মাথার চুলে মালিশ করছে,আসিফ কিছু বলছেনা কারণ তটিনি তাকে রিনির প্রতি নরম হতে বলেছে।এদিকে রিনি পেয়ে গেলো মোক্ষম সুযোগ।আম্মা বলতো স্বামীকে আদর করলে স্বামী দিগুণ আদর করে।তাই এই শীতের রাতে,মশার কামড় উপেক্ষা করে সে আসিফের চুলে তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
‘হ্যালো,কে বলছেন?’
‘আমি বাপ্পি’
আসিফ আবারও উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।রিনি হাতে তেল নিয়ে হা করে চেয়ে থেকে বলে,’আবারও তটিনি বুবু ফোন কইচ্ছে?’
‘না।’
এই বলে আসিফ বেরিয়ে গেলো বাইরে।
‘বলো কি বলবে’
‘তটিনির সাথে কি কথা হয়েছিল তোমার?আসলে তটিনি কেমন যেন করছে।ওর এমন ব্যবহারের সাথে আমি পরিচিত না’
‘ভাল ব্যবহার করছে, তাই তো?’
‘তুমি কিভাবে জানলে?সে আমাকেও একই উপদেশ দিয়েছে।রিনির সাথে যেন ভাল ব্যবহার করি’
‘কিন্তু কেন?’
‘সেটাই তো আমিও জানিনা।’
‘তুমি কি করছো?’
‘আমি ও রিনিকে প্রশ্রয় দেয়া শুরু করেছি’
‘আর রিনি সেটাতে কেমন রিয়েকশান দেখাচ্ছে?’
রিনি এবারও এসে আসিফের ফোনের সাথে কান লাগিয়ে শোনার চেষ্টা করছিল বাপ্পি কি বলে।এখন বাপ্পির এ কথা শুনে সে বলে উঠলো,’আঁর হেব্বি লাগতাছে বাপ্পি ভাই।আঁর জামাই আঁর আতে মাতাত তেল লাগায়, এইডার তন ভালা আর কিছু আছেনি!’
আসিফ রিনির মুখ চেপে ধরে বাপ্পিকে বললো কিছু যাতে মনে না করে।
‘আরেহ সমস্যা নাই।আমি তো আরও একটু সাপোর্ট পেলাম।
যাক, তার মানে তটিনির এই ব্যবহারে আমায় পজিটিভ থাকতে হবে।থ্যাংকস রিনি’
——-
বাপ্পি ফোন রেখে পেছনে ফিরে তটিনির দিকে তাকায়।তটিনি যেভাবে শুয়েছিল,এখনও ঐভাবেই শুয়ে আছে।
সে পা টিপে টিপে কাছে এসে ওর পাশে শুয়ে পড়ে আগেরমতন।
পরেরদিন সকাল হয়,বাপ্পির ঘুম দেরিতে ভাঙ্গবে সেটাই স্বাভাবিক। তটিনি ফ্রেশ হয়ে রুমে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেও সময় কাটছেনা দেখে দরজা খুলে বাহিরের দিকে গেলো।হোটেলের সামনেই সমুদ্র।অল্প কিছু হাঁটলেই সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়।তটিনি হাঁটতে হাঁটতে সমুদ্রের কাছে চলেআসে।
একটা মানুষকে ভালবেসে,তার সাথে সারাটাজীবন কাটানোর স্বপ্ন দেখে শেষ মূহুর্তে এসে অন্য একটা ছেলের ঘরণী হয়ে গেলে কি এতই সোজা তাকে আবার ঐ মানুষটার মতন করে ভালবাসা?
রীতি এরকম কেন!যার সাথে যার মিলবেনা সবসময় তার সাথে তার মনের মিল এতটা হয় কেন?মনের মিল যদি হয়েই থাকে তবে তার সাথে নিয়তি যোগ হলোনা কেন!
তটিনির চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হয়ত সে আসিফকে বলে দিয়েছে রিনিকে ভালবাসতে,সেও ঠিক করেছে বাপ্পিকে ভালবাসবে,কিন্তু আদৌ কি এটা এতটাই সহজ!
তটিনি জানে কাজটা কত কঠিন।অপরিচিত মানুষটাকে ভালবাসতে অনেক কষ্ট হয়!
হঠাৎ ওর মাথায় সবুজ লতার ক্রাউন পরিয়ে দেয় বাপ্পি।তার চোখে তখনও ঘুম।তাও সে ওর পিছু নিয়ে এখানে চলে এসেছিল।তটিনি মাথায় হাত রেখে ক্রাউনটা ছুঁয়ে দেখছিল।বাপ্পি বললো,’এত কষ্টের প্রয়োজন নেই তটিনি।আমি কোথাও চলে যাচ্ছিনা কিংবা তুমিও যাচ্ছো না।তাহলে এত তাড়াহুড়োর কি আছে?আমরা আগে একজন আরেকজনকে বুঝি তারপর নাহয়!!’
এই বলে বাপ্পি পানির দিকে যেতে যেতে বলে,’চলো পানিতে নামি’
তটিনির সামনে বাপ্পি পানিতে ঝাঁপ দিলো।সাঁতরাচ্ছে সে এবার।তটিনি মূর্তির মতন দাঁড়িয়ে ওকে আনন্দ করতে দেখছে কেবল।
এরপর কি যেন ভেবে সেও পানির দিকে গেলো।পানিতে নেমে চিৎকার করে বললো’সাঁতার জানিনা’
ওমনি বাপ্পির সব আনন্দ পানি হয়ে গেলো।সে নিজের সাঁতরানো বাদ দিয়ে কাছে এসে তটিনিকে শক্ত করে ধরে রাখলো।তটিনি জানতো এটাই ঘটবে।তাই সে খিলখিল করে হেসে ওঠে।ওর হাসি দেখে বাপ্পির ভয়টা কেটে যায় মূহুর্তেই।
চলবে♥