#মন_বিনিময়
#পর্বঃ৪
#লেখনীতে- তাসফিয়া হাসান তুরফা
রাহিতাকে পাশে বসিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বপ্নিলের অতীত সম্পর্কে বলা শুরু করলেন দিলারা বেগম। শুরু করলেন ছেলের জীবনের বৃত্তান্ত।
—তোর হয়তো এখন এগুলো শুনতে খারাপ লাগবে কিন্তু সত্যিটা অস্বীকার করার উপায় নেই এ মুহুর্তে আমার কাছে তাই বলতে হচ্ছে। আসলে স্বপ্নিলের জীবনে তোর আসার আগে একজন ছিলো যাকে ও ভীষণ ভালোবাসতো। মেয়েটার নাম ছিলো আনিকা, সম্পর্কে আমার এক বোনের মেয়ে। স্বপ্নিলের কাজিন। ওদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। শুরুতে আত্মীয়দের মধ্যে আমরা এ বিয়ে মেনে নিতে না চাইলেও পরে স্বপ্নিলের জোরাজুরিতে দুই পরিবার মেনে নিতে একপ্রকার বাধ্য হয়৷ পাগল ছিলো আমার ছেলেটা ওর জন্য। আনিকা এত তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে চাইছিলোনা কিন্তু পরে স্বপ্নিলের জিদের কাছে হার মানে সে। এ মাসেই ওদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো এবং সেটাও শুধু স্বপ্নিলের ইচ্ছায়। কিন্তু এরই মাঝে হুট করে কি যেন হয়ে গেলো, চোখের পলকে সব উলোটপালোট হয়ে যায়। এ মাসের শুরু থেকেই আনিকা আচমকা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়ে, তারপর হুট করেই মেয়েটা মারা যায়।
ভাগ্নীর মৃত্যুর কথা বলতে যেয়ে এতক্ষণ ধরে রাখা অশ্রুকে আর চাপিয়ে রাখতে পারেননি দিলারা বেগম। আঁচলে মুখ ঢেকে অশ্রু লুকোতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। অপরদিকে রাহিতা এসব শুনে স্তব্ধ হয়ে শুনে গেলো শুধু। এ মুহুর্তে কি ধরনের রিয়েকশন দিবে ভেবে উঠতে পারছেনা সে! চুপচাপ বুকের বা-পাশের এক অদ্ভুত চিনচিনে ব্যথা উপলব্ধি করলো শুধু। সে তো কালকেই স্বপ্নিলের কাছে শুনেছে তার প্রাক্তন ছিলো। তবুও এ জানা বিষয় শুনে আবার কেন এত কস্ট হচ্ছে ওর? স্বপ্নিল অন্য একজনকে পাউত্তরটা সে জানেনা। হয়তো স্বপ্নিলকে মন থেকে নিজ স্বামী রুপে মেনে নেওয়ায় তার জীবনে অন্য কারও উপস্থিতির কথা শুনতেও কস্ট হচ্ছে ওর! একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবে রাহিতা। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে করুণ কণ্ঠে প্রশ্ন করে,
—আপনি যখন সব জানতেনই তখন কেন আমাকে উনার জীবনে নিয়ে এলেন, মা? যেখানে উনি নিজেই আমাকে চাননি তার জীবনে, সেখানে আপনার কারণে এভাবে আমার সাথে একটা অনিশ্চিত সম্পর্কে বেধে আছেন তিনি। আমার খুব কস্ট হয় যখন দেখি তিনি মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারেন না। মনের কস্টগুলো ভেতরেই চাপা রাখেন।
—আমি জানি রে মা সব দোষ এখানে আমার। আমি তোকে ও তোর পরিবারকে অন্ধকারে রেখেছি। নিজ ছেলের জীবনে নতুন করে আশার আলো দেখার জন্য তোর থেকে কথা লুকিয়ে তোর সাথে অন্যায় করেছি। স্বার্থপরের মতো এই কাজ করার জন্য আমি লজ্জিত কিন্তু বিশ্বাস কর আমার কাছে ওই মুহুর্তে আর কিছুই মাথায় আসেনি৷
কিছুটা থেমে আবার বললেন,
—তুই জানিস আনিকা মারা যাওয়ার পর স্বপ্নিল কতটা ভেঙে পড়েছিলো? বাবামরা ছেলেটা আমার কোনোদিন নিজের কোনো দায়িত্বকে অবহেলা করেনি, সবসময় আমার ও নিজের বোনের দিক তাকিয়ে হাসিমুখে সব দায়িত্বের বোঝা ঘাড়ে নিতে প্রস্তুত ছিলো সে। ওই প্রথম আমি স্বপ্নিলকে এতটা ডিপ্রেশনে দেখি। শুরুর দিকে তেমন খেয়াল না করলেও একদিন লক্ষ্য করি সে খামখেয়ালে ব্লে’ড দিয়ে হাত কাটার চেস্টা করছে। ওই দৃশ্য দেখে আমার মাথা ঘুরে উঠে। এরপর চুপিসারে আমাদের পরিচিত এক সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে এ ব্যাপারে কথা বলি। তখন তিনি বলেছিলেন যে হয়তো এ ধাক্কাটা স্বপ্নিল মেনে নিতে পারেনি। ও প্রচন্ড ডিপ্রেশনে পড়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে তাই এমন কিছু করতে যাচ্ছিলো। তখন ডক্টর নিজেই আমাকে পরামর্শ দেন ওকে সময় দিতে এবং সম্ভব হলে ওর জীবনে কাউকে নিয়ে আসতে যাতে সে পুরনো ক্ষত ভুলে নতুন করে ভালোবাসাকে আকড়ে ধরে পুনরায় বাঁচতে শিখে।
—তাই বলে আপনি উনাকে কোনো সময় না দিয়েই না এভাবে হুট করে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন, মা? জানেন আমার শুরু থেকেই সন্দেহ হচ্ছিলো যখন আপনি বিয়ের ব্যাপারে এত তাড়াহুড়ো করেন। কিন্তু আমার বাবা-মা খুব বিশ্বাস করেছিলো আপনার উপর, বাবা আমার শশুড়ের খুব বিশ্বস্ত বন্ধু ছিলেন কিনা? তাই তো বাবাও বেশ সাগ্রহে রাজি হয়ে যান এ বিয়েতে। কিন্তু আফসোস দিনশেষে আমার সন্দেহটাই সত্যি প্রমাণিত হলো। উনি আমায় মন থেকে বউ হিসেবে মানেন না! হয়তো কোনোদিন মানবেন কি না আমি তাও জানিনা …
ধরা গলায় কথাগুলো বলতে যেয়ে কেদে ফেলে রাহিতা। ভীষণ কস্ট হচ্ছে তার আজ! খুব জ্বালাপোড়া করছে মনে। সে ভেবেছিলো শুধু নাটক সিনেমায় এরকম হয় কিন্তু এটা তো বাস্তব। তার নিজের জীবনেও যে এরকম কিছু হবে তা যে কল্পনাতীত ছিলো তার কাছে! হুট করে সবকিছু জেনে নিজেকে সামলানো যেন দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে তার পক্ষে! রাহিতাকে কাদতে দেখে এতক্ষণের অনুতাপ যেন মুহুর্তেই বেড়ে গেলো দিলারা বেগমের। কাছে এগিয়ে দু হাতে চোখের পানি মুছে দিয়ে রাহিতার হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বললেন,
—কস্ট হচ্ছেনা খুব? আমি জানি তোর খারাপ লাগবে এ ভয়েই এ কয়দিন তোকে কিছু বলিনি। আমি নিজেও স্বপ্নিলকে সময় দিতে চেয়েছিলাম রে মা। কিন্তু ওই যে পরিস্থিতি? সেটা নিজের হাতে থাকেনা সবসময়। তোদের বিয়ের দিনই বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো স্বপ্নিল ও আনিকার। আমি জানতাম ওইদিন স্বপ্নিল একা থাকলে নিশ্চয়ই আরও কিছু পাগলামি করতো তাইতো উপায় না পেয়ে তার সপ্তাহখানেক আগে তোদের বাড়ি গিয়ে সবকিছু বলে কথা পাকা করে আসি। তোর বাবা চেয়েছিলো বিয়ের আগে স্বপ্নিল ও তুই একজন আরেকজনের সাথে কথা বল কিন্তু আমি ইচ্ছে করে ও ব্যস্ত থাকার বাহানা দিয়ে বিয়ে পর্যন্ত বিষয়টাকে গড়াই। আমাকে তোর এ মুহুর্তে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে না, রাহি? হয়তো আমার জায়গায় থাকলে বুঝতি নিজের ছেলেকে প্রতিনিয়ত ধুকে ধুকে মরতে দেখার কস্ট কিরুপ! বেয়াইনদের কিছু বলিস না রে, মা। আমার তাদের সামনে দাড়াতেও ভীষণ লজ্জা লাগে। স্বপ্নিল আমায় বারবার বলেছিলো সবকিছু জানিয়ে তারপর বিয়ে ঠিক করতে কারণ ও জানতো এমন করলে হয়তো তোর বাবা-মা এ বিয়েতে রাজি হতেন না! কিন্তু আমি তা করিনি! সবার অগোচরে নিজের ছেলের অন্ধকার জীবন আলোকিত করতে আমি তাদের মেয়েকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছি এটা কোনো মা-বাবাই মানবেন না।
শাশুড়ির কথায় তাচ্ছিল্য ভর করে রাহিতার মনে। এজন্যই হয়তো স্বপ্নিল ভেবেছিলো সে সব জেনেশুনে তাকে বিয়ে করেছে আর এ কারণেই তাকে লোভী বলছিলো কাল! সাথে সাথেই বিষন্ন মনে চেপে ধরে আফসোস, তার ভাগ্যের উপর! হতাশ মনে সে প্রশ্ন করে নিজেকে,
কেন আমার সাথে এমন হলো? আমি তো সত্যিই তাকে ভালোবেসেছিলাম। যদি তাকে আমারই হতে হতো তবে নিয়তি কেন তার জীবনে আমার আগে অন্য কাউকে এনেছিলো?
মনের প্রশ্ন মনেই থেকে যায়, কোনো উত্তর মিলেনা তার। শাশুড়ির প্রশ্নে রাহিতা গমগমে গলায় প্রশ্ন তুলে,
—আর যদি উনি আমাকে কোনোদিনও ভালো না বাসেন? আমায় মন থেকে মেনে না নেন? তবে কি হবে, মা? আমার জীবনটা কি নস্ট হবেনা?
রাহিতার এমন কণ্ঠ শুনে অজানা ভয়ে ইষৎ কেপে উঠেন দিলারা বেগম। তাইতো? এ কথা তো তিনি ভেবে দেখেননি। আবেগের বশে ছেলের জীবনে মেয়েটাকে আনলেন তো ঠিকই কিন্তু এই সম্পর্কের শেষ পরিণতি কি হবে সে সম্পর্কে তো কেউ-ই নিশ্চিতভাবে বলতে পারবেনা! জিব দিয়ে শুষ্ক ঠোঁট ভিজিয়ে আচমকা রাহিতাকে প্রশ্ন করেন,
—কিন্তু তুই তো ভালোবাসিস স্বপ্নিলকে?
হঠাৎ শাশুড়ির মুখে এমন প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে রাহিতা। বড় বড় অক্ষিদ্বয় পিটপিটিয়ে কিছু বলার আগেই দিলারা বেগম পুনরায় বলেন,
—ভাবছিস আমি কিভাবে জানি তাইতো?
অপ্রস্তুতভাবে শাশুড়ির মুখের দিক তাকাতেই তার চাহনি দেখে দিলারা বেগম মৃদু হেসে বলেন,
—মনে আছেন একদিন আমি একাই তোদের বাড়িতে যাই? বরাবর স্বপ্নিল আমায় নিয়ে গেলেও ওইদিন আমি একা গিয়েছিলাম। সেদিন আমি তোকে লক্ষ্য করি, সবার মাঝে থাকলেও তোর চোখ বারবার দরজার দিকে যাচ্ছিলো। একমনে খুজে যাচ্ছিলি স্বপ্নিলকে। সেসময় তোকে দেখে মনে মনে আফসোস করেছিলাম যে কেন আমার ছেলে সিংগেল হলোনা। তোকে বরাবর ছেলের বউ করার ইচ্ছা ছিলো তোর শশুড়ের, কিন্তু আমার ছেলেটাই অন্য একজনকে মন দিয়ে বসেছিলো তাই আমাদের কিছু করার ছিলোনা। এজন্য তোর ব্যাপারটা আমি তখনি মাথায় থেকে বাদ দিই কিন্তু পরে আনিকার যাওয়ার পর যখন আমি ভাবছিলাম স্বপ্নিলের এ অবস্থায় কি করা যায় তখন হঠাৎ তোর কথা মাথায় আসে। হয়তো ওকে অন্য কারও সাথে বিয়ে দেওয়া যেতো, আমার যোগ্য ছেলের জন্য মেয়ে পাওয়া খুব একটা কঠিন হতোনা। কিন্তু ওরা সবকিছু জানার পর ওকে মন থেকে ভালোবাসতে পারতোনা তোর মতো। আমি জানতাম তুই ওকে আগে থেকেই পছন্দ করিস, ওর জন্য তোর ভালোবাসা তোর চোখে ভাসতো! আর ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে করতে কে না চাইবে? এজন্যই আমি জানতাম তুই এ বিয়েতে রাজি হবি। বাকি থাকলো স্বপ্নিলের কথা, ওকে আমি নিজের মতো করে বিয়ের জন্য মানিয়ে নিই। আমার মনে হয়েছিলো স্বপ্নিলের ছন্নছাড়া জীবনে পুনরায় ভালোবাসা আসলেই সে আবার আগেকার ন্যায় হয়ে যাবে। আমার বিশ্বাস একদিন তোদের সুখের সংসার হবে। আমি প্রতিটি মোনাজাতে এটাই প্রার্থনা করি যাতে আমার ছেলে তোকে ভালোবাসে, তোর সংস্পর্শে নতুন করে বাচতে শিখে।
উনার কথা চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে শুনলো রাহিতা। তবে কোনোরুপ অনুভূতি প্রকাশ করতে সক্ষম হলোনা তার স্থবির হয়ে যাওয়া মন-মস্তিষ্ক। রাহিতাকে নীরব দেখে মনের ভার হালকা হলোনা দিলারা বেগমের। কিছু একটা ভেবে জোরে এক শ্বাস ফেললেন তিনি। অতঃপর শীতল কণ্ঠে রাহিতার উদ্দেশ্যে বললেন,
—দেখ রাহি, স্বপ্নিল খারাপ ছেলে না এটা তুই নিজেও জানিস। ও কাল রাগের বশে তোকে কিছু বলে থাকলেও ওকে একটু ঠান্ডা হতে দে, দেখবি তোর সব দায়িত্ব ও স্বেচ্ছায় নিবে। তোর আদর-যত্নের কমতি হতে দিবেনা। শুধু দরকার একটুখানি সময়। আমি যে সময়টা না দিয়েই ওকে এ বিয়ে দিয়েছি সে সময়টা তুই ওকে দে! আমি জানি তুই নিরাশ হবিনা। আর একটা কথা, তোর পাশাপাশি আমিও লক্ষ্য রাখবো স্বপ্নিলের উপর। যদি আমার কখনো মনে হয় স্বপ্নিলের আচরণে পরিবর্তন আসেনি, সে তোকে মেনে নিতে চাইছেনা বা তোর সাথে খারাপ আচরণ করছে তবে তুই চাইলে আমি স্বেচ্ছায় তোকে ওর থেকে আলাদা হওয়ার সুযোগ দিবো। তোর বাবা-মার সব অভিযোগ মাথা পেতে মেনে নিবো তবুও তুই এখন অন্তত তাদের কিছু বলিস না, মা। আমার অনুরোধ!
শাশুড়ির মুখে এমন কথায় থম মেরে বসে থাকে রাহিতা। শুধু অদ্ভুত হাহাকার ও দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ে হৃদয়ে! কাল সকাল পর্যন্ত তার জীবনটা কত রঙিন ছিলো আর আজ এমন পরিণতি? জীবন নামক স্রোত হুট করেই মানুষকে কই থেকে কই ভাসিয়ে নিয়ে যায় কেউ বলতে পারেনা! শাশুড়ির কথায় মাথা নাড়িয়ে উনার থেকে অনুমতি নিয়ে রুম ত্যাগ করে সে। আপাতত তার প্রচন্ড মাথাব্যাথা করছে। অত্যাধিক চিন্তায় নিউরনে নিউরনে ঝড় উঠেছে যেন হঠাৎ করেই!
_______________
রাহিতার যখন ঘুম ভাংলো তখন বাজে ১১টা। এতক্ষণে হয়তো বাসার সবাই খেয়েদেয়ে ঘুমিয়েও গেছে। সবাই বলতে রাহিতার শাশুড়ি ও ননদ সামিরা। রাহিতা ডিনার করবেনা আগেভাগে বলে দেওয়ায় তাকে ঘুম থেকে ডাকতে আসেনি কেউ! রুমে আশেপাশে তাকিয়ে দেখে স্বপ্নিল নেই। এতরাতেও ফিরেনি কেন অবাক হয়ে ভাবে সে! বিছানা থেকে উঠেই এসব ভাবতে ভাবতেই পা বাড়ালো রুম থেকে বের হওয়ার জন্য। এমন সময় বারান্দা থেকে আসা উটকো গন্ধে সন্দেহান্বিত পায়ে সেদিক এগিয়ে যায় রাহিতা। আধা ভেজানো দরজা পুরোপুরি খুলে বারান্দায় প্রবেশ করতেই দৃষ্টিগোচর হয় সিগা’রেট খাওয়া স্বপ্নিলকে। চাঁদের দিকে মুখ করে একের পর এক ধোয়া উড়াচ্ছে সে। বিরক্তিতে মুখ কুচকে আসে রাহিতার! লোকটাকে বারণ করেছিলো এসব ছাইপাশ খেতে সে তবুও তার কথা শুনেনা। পরক্ষণেই ভাবলো হয়তো বউ বলে মন থেকে মানেনা দেখেই তার কথার গুরুত্ব দেয়না! এসব ভেবে তাচ্ছিল্যের সাথে স্বপ্নিলের পাশে গিয়ে চুপচাপ দাড়ালো রাহিতা।
—কখন এসেছেন?
—
—কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
—বলার প্রয়োজন মনে করছিনা।
—ওহ
আশাহতভাবে কথাটা বলে অভিমানি চোখে স্বপ্নিলের দিকে তাকালো সে। সে জানে পাশে দাঁড়ানো মানুষটা তার অভিমানের কদর দিবেনা তবুও কেন যে সে নিজে থেকে তার খোজখবর নিতে যায় রাহিতা নিজেও জানেনা! হয়তো ভালোবাসে বলে তাই। নির্বিকারভাবে সিগা’রেটে শেষ টান দিয়ে হাত থেকে তা ফেলে দেওয়ার আগে আনমনেই একবার পাশে দাঁড়ানো রাহিতার দিকে চোখ গেলো স্বপ্নিলের। চোখ সরিয়ে নিতে যেয়েও এক অদ্ভুত দৈববলে চোখ ফিরিয়ে নিতে সক্ষম হলোনা সে! অভিমানি চোখে আকাশের বুকের জেগে থাকা চাঁদের দিক তাকিয়ে আছে রাহিতা, অক্ষিকোটর খানিকটা টলমল করছে পানিতে! আচ্ছা, সেও কি তার মতো আকাশের সাথে নিজের দুঃখের কথা বলছে, চাঁদের কাছে অভিযোগ করছে? প্রশ্ন জাগে স্বপ্নিলের মনে এবং প্রশ্নটা জাগতেই এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগে তার মনে! হঠাৎ করেই স্বপ্নিলের খানিকটা অপরাধবোধ হয় রাহিতার সাথে এমন নির্লিপ্ত ব্যবহার করার জন্য! হাতে রাখা সিগারেটটা নিচে ফেলে সে-ও আকাশের দিকে তাকায়৷ গম্ভীর আকাশের দিক তাকিয়ে গম্ভীর মুখে সে নিজেও ভাবতে থাকে রাহিতার কথা! মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই এখানে!
বাসায় আসার পর তার মা ডেকেছিলো রুমে। জানিয়েছেন তার অতীতের ব্যাপারে রাহিতার ও তার পরিবারের অজ্ঞতার কথা! মায়ের মুখে এসব শুনে বেশ অবাক হয়েছিলো সে। নিজের অজান্তেই মেয়েটাকে কিসব বলেছে কাল, কস্ট দিয়ে ফেলেছে! একবার ভেবেছিলো সরি বলবে কিন্তু পরক্ষণেই কিযেন ভেবে নিজের সদ ইচ্ছেকে সূক্ষ্মভাবে দমন করে সে! রাহিতা ঘুমিয়ে থাকায় সে বারান্দায় এসে একমনে এসব ভাবতে ভাবতেই সিগারেট ফুঁকছিলো। রাহিতার প্রতিও তার রাগ জন্মায়! মেয়েটাকে আগে থেকেই চিনে সে। মুখে কখনো না বললেও স্বপ্নিল জানে রাহিতা বেশ ভালো একটা মেয়ে। সে একটা সুন্দর লাইফ ডিজার্ভ করে। কিন্তু এসবের পরেও সে কেন রাজি হলো তাকে বিয়ে করতে? যদিও সে জানতোনা কিছু তবুও কোনো কারণে মানা করলেই তো পারতো। তবে অন্য কারও সাথে একটা সুখের জীবন পেতো সে! এসব ভাবার মাঝেই সেখানে প্রবেশ করে রাহিতা এবং তাকে দেখে মনের রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বিধায় তাকে ইগ্নোর করছিলো স্বপ্নিল।
কিন্তু এই যে এখন তার পাশে চাঁদের আলোর নিচে অশ্রুসিক্ত চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটা মেয়েটা এক অদ্ভুত বন্ধনে টানছে তাকে! স্বপ্নিলের হঠাৎ মন চাইছে তার চোখের পানি মুছে দিতে। শক্ত গলায় বলতে,
—এখন কাদছো কেন এভাবে? কেন আমায় বিয়ে করে নিজের জীবনকে কস্টে ঠেলে দিলে? আমার সাথে তোমাকেও কস্ট পেতে হবে ভাবলেই মনের ভার আরও গভীর হয়ে যায় আমার!
কিন্তু মুখফুটে সে এসবের কিছুই বলতে পারলোনা। পুনরায় আকাশের দিক তাকিয়ে গলা ঝেড়ে বললো,
—কথায় কথায় চোখ দিয়ে পানি বের করবেনা। তোমার চোখের পানি মুছে দেওয়ার জন্য কেউ বসে নেই এখানে। বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম তাই আসতে লেট হয়েছে। এসব বউদের মতো গোয়েন্দাগিরি স্বভাব বাদ দেও, বুঝেছো?
হঠাৎ স্বপ্নিলের কথায় পাশ ফিরে রাহিতা। মুহুর্তেই চোখাচোখি হয় স্বপ্নিলের সাথে, যে আপাতদৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো। রাহিতা তাকাতেই অপ্রস্তুতভাবে চোখ সরিয়ে নেয় স্বপ্নিল! কেন যেন এ মেয়ের চোখের দিক বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারেনা সে! কি আছে এই দুটো চোখে যা তার রাগী সত্ত্বাকে অদ্ভুতভাবে কোমল করে তোলে?
#চলবে
এখন কিছুটা ভালো আছি। রিচেক করা হয়নি, ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়। কেমন লেগেছে জানাবেন ❤️