#বিরহ_শ্রাবণ(দ্বিতীয় খণ্ড)
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_সারা মেহেক
রেস্টুরেন্টে ঢুকে অভ্র ভাই হাসিমুখে আমাকে ও প্রোজ্জ্বল ভাইকে পাশাপাশি বসিয়ে নিজে আমাদের সামনে বসে পড়লেন। ঠোঁটের কোনে বিস্তৃত এক হাসি বজায় রেখে বললেন,
” অনেকদিন পর একসাথে হলাম আমরা।
তোমাদের দুজনকে পাশাপাশি ভালোই মানাচ্ছে চন্দ্রিমা!”
অভ্র ভাইয়ের শেষোক্ত কথায় আমি ও প্রোজ্জ্বল ভাই দুজনেই ভীষণ অবাক হলাম। কেননা আমাদের তিনজনের মাঝে চলমান পরিস্থিতিতে অভ্র ভাইয়ের নিকট হতে এমন প্রশংসা মোটেও আশা করা যায় না। এ বিস্ময়ভাব হতেই প্রোজ্জ্বল ভাই জিজ্ঞেস করলেন,
” অভ্র? তুই ঠিক আছিস তো?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রশ্নে অভ্র ভাই এমন এক ভান ধরলেন যে এতোদিনে আমাদের মাঝে কোনো সমস্যাই তৈরী হয়নি। উনি স্বাভাবিক কণ্ঠে সামান্য হাসার চেষ্টা করে বললেন,
” হ্যাঁ ঠিক আছি। আমার আবার কি হবে? আচ্ছা, তোরা কি খাবি বল। ওর্ডার করে দেই। আমি তো এখন পেট ভরে এক প্লেট কাচ্চি খাবো। তোরা?”
অভ্র ভাইয়ের এহেন কথার বলার ঢঙে প্রোজ্জ্বল ভাই আমার দিকে বিভ্রান্ত চাহনিতে চাইলেন। এতো কিছু হওয়ার পর আমরা দু’জনেই অভ্র ভাইয়ের এমন আচরণ ঠিক হজম করে নিতে পারছি না।
” কি হলো? বল, কি খাবি।”
অভ্র ভাইয়ের প্রশ্নে ধ্যান ভাঙলো দুজনের। প্রোজ্জ্বল ভাই বললেন,
” আমাদের জন্যও কাচ্চি ওর্ডার দে। ”
অভ্র ভাই কাচ্চি ওর্ডার দিলেন। অতঃপর নড়েচড়ে ঠিকভাবে বসলেন উনি। আমায় জিজ্ঞেস করলেন,
” তোমার পড়ালেখার কি অবস্থা চন্দ্রিমা? কার্ড পরীক্ষা কবে?”
আমি সামান্য হাসার চেষ্টা করে বললাম,
” এই তো সামনের সপ্তাহে। ”
” ওহ আচ্ছা। কোন সাবজেক্টের?”
” তিনটাই একসাথে হবে এবার। ”
” গুড। এটা ভালো হবে।
আচ্ছা, প্রোজ্জ্বল, তোর অবস্থা কি?”
” আমার অবস্থা আগের মতোই। আচ্ছা অভ্র? তুই বলতো, তোর এমন বিহেভিয়ার এর পিছনে কারন কি? ”
অভ্র ভাই ভ্রুজোড়া কুঞ্চিত করে পরনের শার্টের কলার ঠিক করতে করতে বেশ সাবলীল কণ্ঠে বললেন,
” কি কারণ থাকবে! আজকাল দেখি ভালো ব্যবহারেরও দাম নেই। তোদের সাথে অনেকদিন ভালোভাবে কথা বলা হয় না দেখেই আজ রেস্টুরেন্টে বসলাম। এতে কি দোষের কিছু?”
” না, দোষের কিছু নেই। কিন্তু আমাদের তিনজনের মাঝে যা হয়েছে তাতে তোর এমন ব্যবহার করা ঠিক মানাচ্ছে না। তুই…..”
প্রোজ্জ্বল ভাইকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে অভ্র ভাই বললেন,
” এখন এসব নিয়ে কথা না বলি আমরা। আপাতত পেট ভরে খাওয়াদাওয়া কর। তারপরে কথা বলছি। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই আর কথা বাড়ালেন না। ততক্ষণে কাচ্চির প্লেটও এসে হাজির হয়েছে আমাদের টেবিলে। আমরা নিজেদের মতো খেয়েদেয়ে হাত ধুয়ে চুপচাপ টেবিলে বসলাম। খানিক বাদেই প্রোজ্জ্বল ভাই পুনরায় অভ্র ভাইকে জিজ্ঞেস করলেন,
” এবার বল, কি হয়েছে। এসবের কারণ কি অভ্র?”
অভ্র ভাই তৎক্ষনাৎ জবাব দিলেন না দু হাত দিয়ে আড়মোড়া ভেঙে টেবিলে হাত রাখলেন। অতঃপর প্রলম্বিত নিঃশ্বাস ছেড়ে ঠোঁটের কোনে আলতো হাসি এনে বললেন,
” এসবের কারণ, আমি সব মেনে নিয়েছি প্রোজ্জ্বল। ”
অভ্র ভাইয়ের হেন কথায় আমরা দুজনেই বেশ বিস্মিত হলাম। উনি হয়তো আমাদের এ বিস্মিত চাহনি খেয়াল করেছেন। তাই তো বললেন,
” এতো অবাক হওয়ার কি আছে! একসময় না একসময় তো মেনেই নিতে হতো আমাকে। তো আজ নয় কেনো?
যে কারণেই হোক, যেভাবেই হোক, তোর আর চন্দ্রিমা বিয়ে হয়েছে প্রোজ্জ্বল। এটা আমি চাইলেও বদলাতে পারবো না। কিন্তু হ্যাঁ, একটা জিনিস বদলাতে পারবো। তা হলো, চন্দ্রিমার প্রতি আমার অনুভূতি। আর এটা বদলানোর উদ্যোগও নিয়েছি আমি।”
এই বলে অভ্র ভাই বিস্তৃত হাসলেন। কিন্তু উনার এ হাসি এ মুহূর্তের সাথে মোটেও মানানসই হলো না। কারণ উনি এখন যে কথাগুলো বলছেন তাতে সাধারণ মানুষের ঠোঁটে হাসি ফোটার কথা নয়। বরং গোপন ও অদেখা অশ্রু ঝরার কথা। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে অভ্র ভাই হাসছেন। আচ্ছা, উনি কি এই হাসির আড়ালেই নিজের ব্যথিত হৃদয়ের অশ্রু লুকাতে চাইছেন? না কি উনি সপ্তাহখানেকের মাঝেই সব ভুলে মুভ অন করেছেন? আমি অভ্র ভাইকে যতটুকু চিনি তাতে দ্বিতীয়টি হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। তাহলে উনার মনে এ মুহূর্তে কি চলছে!
অভ্র ভাই পুনরায় বললেন,
” তোরা সেদিন যাওয়ার পর আম্মা আমাকে অনেক বুঝিয়েছিলো। আমি নিজেও পরে মাথা ঠাণ্ডা করে চিন্তা করেছি। আসলে এ ল’ড়া’ই ঝ’গ’ড়া করে কোনো ফায়দা নেই। যা হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে। এখন আমি চাইলেও আমার ভালোবাসাকে ফিরে পেতে পারবো না। এটা আমার কপালের দোষই বটে। সে যাই হোক, প্রোজ্জ্বল আর চন্দ্রিমা, তোরা দুজন একে অপরের জন্য পারফেক্ট। আল্লাহ তোদের দুজনের ভাগ্যে একে অপরকে লিখে রেখেছিলো। বোথ অফ ইউ আর পারফেক্টলি ম্যাচ ইচ আদার। ”
এই বলে উনি আমার উদ্দেশ্যে বললেন,
” শোনো চন্দ্রিমা, অতীত কখনো ফিরে আসে না। আর অতীতকে নিয়ে কখনো বাঁচতে নেই। বাঁচতে হয় বর্তমানকে নিয়ে আর ভাবতে হয় ভবিষ্যতকে নিয়ে। এখন থেকে প্রোজ্জ্বলই তোমার বর্তমান আর ভবিষ্যত। আর আমি অতীত। আমি জানি না এই এক মাসে তোমার মনো আমার জন্য আদৌ কোনো অনুভূতির জন্ম হয়েছিলো কি না। যদি হয়েও থাকে তাহলে সেটা স্থায়ী হয়নি নিশ্চয়ই। তাই আমি বলবো, অতীতকে ভুলে সম্পূর্ণভাবে নিজের সংসার আর পড়ালেখায় মনোযোগী হও তুমি। আমি জানি তুমি পারবে।
আর প্রোজ্জ্বল। আমি জানি, তোর থেকে ভালো চন্দ্রিমাকে কেউ সুখী রাখতে পারবে না। তোরা দুজন একে অপরকে সবসময় দেখে রাখিস। সুখে থাকিস দুজন। আজই এসব কথা বলছি। পরবর্তীতে এসব আর বলার সুযোগ বা মানসিকতা কোনোটাই থাকবে না আমার। এজন্য আমি চাই, আজ থেকে আমরা তিনজন আবার সেই আগের মতো হয়ে যাই। যদিও তোদের দুজনের মধ্যে বিস্তার একটা পার্থক্য আসবে। ”
এই বলে অভ্র ভাই খানিক হাসলেন। পুনরায় বললেন,
” তবে আমার সাথে তোদের দুজনের সম্পর্কের কোনো পরিবর্তন আমি আনতে চাই না৷ প্রোজ্জ্বল, সব ভুলে তোর সাথে আমার সেই বন্ধুত্বটা আবারো গড়ে তুলতে চাই এবং আমি চাই এবার আমাদের বন্ধুত্বটা আরো পাকা হোক। যেনো কোনো অবিশ্বাস বা ঝড় তুফান আমাদের এ বন্ধুত্ব ভাঙতে না পারে। আমি কিন্তু এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবো এবার। আর আমি এটার গ্যারান্টি দিতে পারি যে আমার পক্ষ থেকে আর অবিশ্বাস্যের কোনো চান্স আসবে না৷ ”
এই বলে উনি বিস্তৃত হেসে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের দিকে করমর্দনে হাত বাড়িয়ে দিলেন। প্রোজ্জ্বল ভাইও উনার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন। দুজনে একত্রে হাত মিলিয়ে নির্ঝঞ্ঝাট একখানা হাসি দিলেন। অতঃপর অভ্র ভাই খানিক ঘুরে আমার দিকে চাইলেন। বললেন,
” চন্দ্রিমা, তোমার সাথেও আগের সেই দুষ্টুমিষ্টি হাসিখুশি সম্পর্কটা রাখতে চাই। তুমি আমাকে আগের মতোই ট্রিট করবে। আমিও তোমাকে সেই আগের চন্দ্রিমার মতো ট্রিট করবো।
হাহ, অনেক লম্বা লম্বা ভাষণ দিলাম।”
বলেই উনি সজোরে নিঃশ্বাস ছাড়লেন। বললেন,
” অলওয়েজ হ্যাপি কাপলের মতো থাকবি তোরা। আমি চাই, তোদের দুজনকে সবাই যেনো সুখী দম্পতি হিসেবে মার্ক করতে পারে। আর এটাও চাই তোদের দুজনের মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সেই গভীর বন্ডিং আর ভালোবাসা যেনো তৈরী হয়।
অনেক কথা বলে ফেলেছি। এখন আমি উঠি, পেশেন্টরা সব নিশ্চয়ই আমাকে মনে মনে গা”লি দিচ্ছে। ওকে, পরে দেখা হবে তাহলে। ”
এই বলেই অভ্র ভাই আর কথা না বাড়িয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলেন। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই উনি রেস্টুরেন্ট হতেও চলে গেলেন।
অভ্র ভাই চলে যেতেই প্রোজ্জ্বল ভাই আমার দিকে ঘুরে বসলেন। জিজ্ঞেস করলেন,
” চন্দ্রিমা? তুই ঠিক আছিস তো?”
প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের প্রশ্নে বোধ ফিরে এলো আমার। এতক্ষণ যাবত বোধহয় কোনো এক দেয়ালে ঘেরা মোহে আটকে ছিলাম আমি। কারণ অভ্র ভাইয়ের কথাগুলো আমায় অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিলো। যে জগতে আমি মনোযোগ দিয়ে শুধু উনার কথা শুনেছি। কোনো ধরণের প্রতিক্রিয়া, চিন্তা ভাবনা কিছুই করিনি৷ তবে ভাবনার মধ্যে আমার একটাই ভাবনা ছিলো। তা হলো, অভ্র ভাই এতোটা শক্ত হয়ে সব বললেন কি করে? মেনে নিলেন কি করে? উনি কি সত্যিই মন থেকে সব বলেছেন? তাহলে কি এবার আমারও সব মেনে নিয়ে অতীতকে পিছে ফেলে পুরোপুরিভাবে সংসারে মনোযোগী হওয়া উচিত? প্রোজ্জ্বল ভাইকে মন ও মস্তিষ্ক দিয়ে স্বামী হিসেবে মেনে নেওয়া উচিত?
———————-
বাড়ি ফিরে আমি আজ প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের রুমে না গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে বসলাম। দরজা আটকে হাতমুখ ধুয়ে খাবার না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়লাম।
লম্বা ঘুম শেষে উঠে দেখি রাত দশটা বাজে। এতো দীর্ঘ ঘুম শেষে ঘড়িতে সময় দেখে আমি ভীষণ অবাক হলাম। আমি যে এই অসময়ে এমন একটা ঘুম দিলাম বিশ্বাসই করতে পারলাম না।
বিছানা ছেড়ে উঠে আবারো হাতমুখ ধুয়ে জানালার ধারে দাঁড়ালাম। মধ্যম গতিতে এদিকটায় শীতল হাওয়া বয়ে চলছে। বাতাসের সাথে ভেসে আসছে মাটির সোঁদা ঘ্রাণ। যে ঘ্রাণ যেকোনো বৃষ্টিপ্রেমী মানুষের জন্য মাতাল করা এক ঘ্রাণ৷ এ ঘ্রাণ আভাস দেয় আগাম বৃষ্টির। বোধ করলাম, দূরে কোথাও বৃষ্টি হয়েছে। আমাদের এখানেও যে বৃষ্টি শুরু হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দূর হতে মেঘের মৃদু গর্জন শোনা যাচ্ছে যেহেতু।
খানিক সময়ের মাঝেই মেঘের শরীর চী’র্ণ করে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। এ বাঁধভাঙা বৃষ্টির উল্লাস দেখে বহুদিন পর বৃষ্টিতে ভিজার শখ জেগে উঠলো মনে। শ্রাবণের শেষের দিকের বৃষ্টি বলে কথা! এ বৃষ্টিতে ভেজার নিমন্ত্রণকে কি করে নাকচ করা যায়!
আমি দ্রুত দরজা খুলে ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। ছাদে এসেই দেখলাম বৃষ্টির বেগ পূর্বের তুলনায় খানিক বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ছোঁয়ার জন্য এক হাত বাড়িয়ে দিলাম। তৎক্ষনাৎ মনে হলো বৃষ্টির শীতল ঝিরিঝিরি স্পর্শ আমার সমস্ত শরীরে কম্পন ধরিয়ে দিলো। আর অপেক্ষার প্রহর না বাড়িয়ে আমি ছাদের দিকে পা বাড়ালাম। শ্রাবণের শেষ তবে আমার জন্য প্রথম বর্ষণে ভেজার এ অনুভূতি অবর্ণনীয় হলো আমার কাছে। বৃষ্টির এ ছোঁয়া আমার মনে শীতল অনুভূতির জাগান দিলো। আমি চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করার চেষ্টা করলাম৷ বন্ধ চোখে ধীরেধীরে আমার অতীতের স্মৃতি ভেসে এলো। বাবা মা’র স্মৃতি, ভাইয়ার স্মৃতি, সব হাস্যজ্জ্বল মুহূর্তের স্মৃতি। খানিক সময়ের মাঝেই আমার স্মৃতিতে ধরা দিলো অভ্র ভাইয়ের সাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত। তৎক্ষনাৎ আমি চোখ মেলে চাইলাম। উপলব্ধি করলাম, অভ্র ভাই আমার অতীত। উনার প্রতি এতোদিনে আমার যে অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছিলো, হোক তা গাঢ় বা অস্পষ্ট, তা চিরতরে মুছে ফেলতে হবে। উনাকে নিয়ে আর ভাবা চলবে না। কেননা অভ্র ভাইয়ের সকল ভালোবাসার স্মৃতি শ্রাবণের এ বারিধারার সাথে ধুয়ে মুছে ফেলা যাক। সম্ভবত এটা আমার জন্য বেশ সহজ হবে।
” চন্দ্রিমা? তুই এভাবে বৃষ্টিতে ভিজছিস কেনো?”
হঠাৎ পিছন হতে প্রোজ্জ্বল ভাইয়ের কণ্ঠস্বর কর্ণপাত হতেই চমকে পিছনে তাকালাম। দেখলাম ছাতা হাতে উনি এগিয়ে আসছেন আমার দিকে। আমার কাছে এসে উনি খানিকটা বড়মানুষি কণ্ঠে বললেন,
” বৃষ্টির পানি কি ঠাণ্ডা দেখছিস! সেই কখন থেকে বৃষ্টিতে ভিজছিস তুই? ঠাণ্ডা লাগবে না? আর কয়দিন পর যে পরীক্ষা সে চিন্তা আছে? এখন জ্বর বাঁধিয়ে বসে থাকলে চলবে নাকি? চল এক্ষুণি। ”
এই বলে প্রোজ্জ্বল ভাই আমার হাত চেপে ধরলেন। আমি তৎক্ষনাৎ আলতো হাতে উনার হাত থেকে হাত হটিয়ে মৃদু হাসলাম। ধীর লয়ে বললাম,
” আজ একটু বৃষ্টিতে ভিজতে দিন না। ভালো লাগছে খুব৷ এ বৃষ্টিতে আমি আমার অতীতের সবকিছু ধুয়েমুছে ফেলতে চাই প্রোজ্জ্বল ভাই । আমার বর্তমানকে নিয়ে ভবিষ্যত কাটাতে চাই। একটু থাকতে দিন। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই নীরব রইলেন। ফের আমার হাত ধরলেন না। তবে ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন। আমি বললাম,
” আমি চলে যেতে পারেন প্রোজ্জ্বল ভাই। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। বৃষ্টি শেষ হলেই চলে আসবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই হয়তো থেমে যাবে। আপনি চলে যান। ”
প্রোজ্জ্বল ভাই এবারও আর কথা বললেন না। নীরব চাহনিতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য আমার পানে চেয়ে রইলেন। অতঃপর ছাতা হাতেই ফিরতি পথ ধরলেন। উনি ছাদ হতে গিয়েছেন কি না জানি না। তবে উনি যাওয়ার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবারো ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। অনাকাঙ্ক্ষিত এ বৃষ্টির পরশে আমি ভীষণ খুশি হলাম। হৃদয়ে প্রশান্তি ছেঁয়ে গেলো। যাক, আরো কিছুক্ষণ সময় বৃষ্টির সাথে কাটানো যাবে। তাদের সাথে মনের গহীনে অদৃশ্য বর্ণমালার মাধ্যমে ভাষা তৈরী করা যাবে, কথা বলা যাবে। ইশ কি দারুণ এক অনুভূতি!
এতোক্ষণ যাবত দাঁড়িয়ে রয়ে পা দুটো খানিক ব্যাথা করছে বলে আমি ছাদের সিমেন্টের মেঝেতেই বসে পরলাম। তৎক্ষণাৎ লক্ষ্য করলাম প্রোজ্জ্বল ভাইও আমার পাশে এসে বসে পড়েছেন
তবে এবার আর পূর্বের ন্যায় হাতে ছাতা নেই। খালি হাতে আমার পাশে এসে বসেছেন উনি।
®সারা মেহেক
#চলবে