মন তুমি ছুঁয়ে দেখো না পর্ব -০২+৩

#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০২
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন অথৈ।একটু আগেও ওর মা এসে ডাকাডাকি করে গেছেন একচোট।সেই সাথে ওর ভাই তো আছেই।এই শ’য়তানটা বাসায় থাকলে ওর একদন্ড শান্তি নেই।তবে যতই হোক।দু ভাই বোন একে অপরের প্রাণ।যতোই ঝগড়া করুক, দিনশেষে দুজন দুজনকে ছাড়া থাকতে পারে নাহ।রেজাউল হক আর ইয়াসমিন খাতুনের ছেলে মেয় হলেন জাফ্রিন অথৈ আর ইব্রাহিম ইহান।এই চারজন নিয়ে তাদের সুখী পরিবার।আর অথৈ হলো তাদের রাজকন্যা।একমাত্র মেয়ে তাদের।বাবা,মা আর ভাই তাকে তোলা তোলা করে বড়ো করেছেন।সেই রাজকন্যা এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ ঘুমের মাঝে অথৈর মনে হলো শয়নকক্ষে ভূমিকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে।হঠাৎ এমন প্রলয়ে ঘুম থেকে হুরমুর করে উঠে বসল অথৈ।ঘুম ঘুম চোখে পিটপিট করে তাকাতেই দেখে এই প্রলয়ঙ্কারী আর কেউ না ওর ফ্রেন্ড রিধি।সুন্দর একটা লাল শাড়ি পরেছে রিধি।এই লাল শাড়িতে মেয়েটাকে অনেক সুন্দর লাগছে।অথৈ’র ঘুমের রেশ কেটে গিয়েছে।ও দুম করে বিছানা থেকে লাফ দিয়ে দাঁড়াল।কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,’ এমন সুন্দরী সেজে ভাইয়ার রুমে না গিয়ে আমার রুমে এসে এমন তুফান চালাচ্ছিস কেন?’

রিধি উঠে অথৈ’র মুখ চেপে ধরল।রাগিভাব নিয়ে বলে,’ আস্তে বল।আন্টি শুনলে কি ভাববে?আর তোর ভাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে ভার্সিটিতে।’অথৈ রিধির হাত মুখ থেকে সরিয়ে ফেলল।জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে বলে,’ বিয়ের আগেই ননদের সাথে শত্রুতা শুরু করে দিয়েছিস?’
‘অথৈর বাচ্চা।’
‘ আমি সিংগেল মানুষ।আমার কোনো বাচ্চা নেই।’

বিরক্ত হয়ে রিধি বলে,’ আজেবাজে কথা বলিস না তো অথৈ।এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।তাড়াতাড়ি তৈরি হো।নবীনবরন অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যাবে।তোর ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছে।উনি যাওয়ার সময় আমাকে বলে গিয়েছে তোকে যেন সাথে নিয়েই ভার্সিটিতে যাই।নাহলে আমাদের দুজনেরই খবর করে ছাড়বে।’

অথৈ মুখ ভেংচি কেটে বলে,’ ও তো পারেই এটা করতে।আস্ত শয়’তান একটা।’
‘ হয়েছে যা পরে বকিস।এখন জলদি তৈরি হো।’
‘ উফ যাচ্ছি, যাচ্ছি।’

অথৈ জামা কাপড় নিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর ওয়াশরুম থেকে বের হওয়ার শব্দ শুনে রিধি তাকায় অথৈর দিকে।তাকাতেই চোখজোড়া ছানাবড়া রিধির।রিধিকে এইভাবে নিজের দিকে তাকাতে দেখে অথৈর ভ্রুজোড়া কুচকে আসে।আজব এই মেয়ে এমন রিয়েকশন দিচ্ছে কেন?ভাবছে অথৈ।কৌতুহল দমাতে না পেরে বলে,’ কিরে?কি হয়েছে তোর?এইভাবে বলদের মতো তাকিয়ে আছিস কেন?’

রিধি অথৈ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত স্ক্যান করে বলে,’ মানে আমি জাস্ট অবাক তোকে দেখে অথৈ।তুই অনুষ্ঠানে এইসব পড়ে যাবি?’

অথৈ নিজের দিকে তাকাল।সে একটা লং শার্ট পরেছে সাথে ব্লু জিন্স।নিজেকে দেখে নিয়ে অথৈ বলে,’ কেন এতে কি হয়েছে? ঠিকই তো আছে।’
‘ নাহ ঠিক নেই একদম ঠিক নেই।তুই এসব পরে মোটেও যেতে পারবি নাহ।’
‘ কেন পারব নাহ?’
‘ আরেহ আশ্চর্য! আমি শাড়ি পরেছি,পিহু শাড়ি পরবে আর তুই কিনা ব্যাটা সেঁজে যাবি।’

অথৈ বলে,’ তো তোরা শাড়ি পরেছিস ভালো কথা।আর কিসের ব্যাটা সেঁজে যাচ্ছি? এইগুলা কি বলিস হ্যা?এইটাকে ওয়েস্টার্ন ড্রেস বলে।এমন করে বলছিস মনে হয় নিজে কোনোদিন এসব ড্রেস পরিস নাহ।’

রিধি অথৈর কথা শুনে বলে,’ আমি পরি না সেটা বলিনি।আমিও পরি।বাট আজ একটা অনুষ্ঠানে যাচ্ছি আমরা।যেখানে আমি আর পিহু শাড়ি পরেছি।সেখানে তুই এসব পরে কিভাবে যাবি?’
‘ কেন হেটে হেটে।’
‘ ওহ বিরক্ত করিস না তো অথৈ।চুপচাপ এইগুলা চেঞ্জ করে আয়।তোকে শাড়িই পরতে হবে।’

অথৈ রিধির কথায় অসহায় গলায় বলে,’ বাট রিধি তুই জানিস আমার শাড়ি পরতে ভয় লাগে।এমন না যে আমি শাড়ি পরতে পছন্দ করি না বা জানি নাহ।কিন্তু দশম শ্রেনীর বিদায় অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে? কিভাবে আমার শাড়ি খুলে গিয়েছিল?ভাজ্ঞিস তুই আর পিহু আমার সাথে ছিলি।তোরা সামলে দিয়েছিলি।নাহলে সেদিন আমি কি করতাম।এই ভয়েই আমি শাড়ি পরি নাহ।’
‘ তখন ছোটো ছিলিস। সামলাতে পারিসনি।এখনও কি ছোটোই আছিস?বড়ো হয়েছিস।এখন ঠিক সামলে নিবি।তাছাড়া ভালোভাবে শাড়ি সিকিউর করে নিলেই হবে।আর সবচেয়ে বড়ো কথা আমি আর পিহু আছি তো।’

রিধির কথার যুক্তিতে হার মানতে হলো অথৈকে।ঠোঁট উলটে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিলো রিধির কথায়।তারপর চুপচাপ আলমারি থেকে ল্যাভেন্ডার রঙের একটা শাড়ি বের করল।রিধিকে শাড়িটা দেখিয়ে বলে,’ দেখ তো এটা ঠিক আছে কিনা?’

রিধি প্রসস্ত হেসে বলে,’ একদম ফাটাফাটি।জলদি পরে ফেল।’
———-
ভ্যাপসা গরমে সবাই অতীষ্ট।একটুখানি প্রকৃতির নির্মল বাতাস গায়ে মাখানোর জন্যে ছটফট করছে তারা।কিন্তু কি তা সম্ভব?
ভার্সিটির মাঠে শতো শতো ছাত্র ছাত্রীদের ভীড়। এতো মানুষদের ভীড়ে গরমটা যেন আরও বেশিই লাগছে।গিজগিজে মানুষদের মধ্যে প্রকৃতির স্নিগ্ধ হাওয়ার প্রত্যাশা করা বড্ডো বেমানান।

পিহু নিজের শাড়ির আঁচল দিয়ে ক্রমাগত বাতাস করছে ওর মুখোশ্রীতে।আর একটু পর পর প্রিয়ান আর আহিদকে উদ্দেশ্য করে বলছে,’ এই দেখ না আমার মেক-আপ ঠিকা আছে কিনা।যেই গরমের গরম পরেছে।ওয়াটার প্রুভ মেক-আপও মনে হয় ভেস্তে যাবে।’

এমনিতেই গরমে প্রিয়ান আর আহিদের অবস্থা খারাপ।তার উপর পিহুর বকবক শুনে আরও মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওদের।প্রিয়ান সহ্য করতে না পেরে আহিদকে ধাক্কা দিয়ে বলে,’ এই বা* টারে এনেছিস কেন?গরমের যন্ত্রনায় বাঁচি নাহ।আবার এই আটা ময়দার কারখানায় প্যানপ্যানানি সেই যে শুরু হইছে।বন্ধ করার নাম নাই।’

ধাক্কা খেয়ে আহিদ পরে যেতে নিতেও নিজেকে সামলে নিলো।রেগে মেগে বলে,’ আমারে ধাক্কা মারোস ক্যান?এমনে কইতাছোস যেন পিহু দু বছরের বাচ্চা আর আমি ওরে কোলে কইরা নিয়া আসছি।’
‘ তুই তো চুপই যাহ।কি একটু আন্টির ভয় দেখায় এই তিন ফুইট্টা পিহু আর তুই সেই ভয়ে ওর সব কথা শোনোছ।’
‘ হো ভালো করছি।’
‘ সা*লা হারামি।’

এইদিকে পিহু প্রিয়ান আর আহিদের এসব কথা শুনে যেন ওর র’ক্ত মাথায় উঠে গিয়েছে।রাগ সামলাতে না পের প্রিয়ানের পিঠে দুম করে একটা কি’ল বসিয়ে দিলো।বেশ জোড়েই লেগেছে প্রিয়ানের পিঠে।ব্যথায় উহ শব্দ করে উঠল প্রিয়ান।পিহু দিকে তাকালেই পিহু রাগি স্বরে বলে,’ তোর সাহস কি করে হোলো আমাকে আটা ময়দার কারখানা বলার?আবার বলিস আমি তিন ফুইট্টা। তোর মাথা আমি ইট মে’রে ফুটিয়ে ফেলব।শয়তা’ন কোথাকার।’
‘ তুই মারবি আমি মনে হয় বসে থাকব?’
‘ প্রিয়ানের বাচ্চা তোকে তো আমি।’

পিহু তেড়েমেড়ে গেল প্রিয়ানের কাছে।প্রিয়ানের সবচেয়ে দূর্বলতা ওর চুল।বেচারা নিজের চুলগুলোর অনেক যত্ন করে।আজ সুন্দরভাবে জেল দিয়ে সেট করে এসেছে চুলগুলো।পিহু একলাফ দিয়ে প্রিয়ানের চুল ধরার আগেই প্রিয়ান কৌশলে সরে গেল।তারপর পিহুর দিকে আঙ্গুল তাক করে বলে,’ খবরদার পিহু আমার চুলে একদম হাত দিবি নাহ।’
‘ তোর চুলে হাত দিবো।সাথে তোর চুলগুলোও সব ছিড়ে ফেলব আমি রাম ছাগল কোথাকার।’
‘ তুই কি?শাক*চুন্নি একটা।’

আহিদ এদের ঝগড়া দেখে শেষে অতিষ্ঠ হয়ে ধমকে উঠল,’ উফ,চুপ কর তোরা দুইটাই।আল্লাহ্’র ওয়াস্তে আমার মাথাটা আর খাইস নাহ।’

পিহু দাঁতেদাঁত চিপে বলে,’ আমারে বলিস কেন?এই কু’ত্তার সব দোষ।’
‘ এই কু’ত্তির সব দোষ।’

আহিদ চিৎকার করল,’ চুউউউউউউপ।’
——
ইহান চারপাশ ভালোভাবে দেখছে।কোথায় কোনো কিছু বাদ পরল কিনা।সব ঠিকঠাক দেখে বন্ধু জিসানকে বলে,’ কিরে জিসান?ওদিকে সব ঠিকঠাক আছে?’

জিসান কপালের ঘামগুলো রুমাল দিয়ে মুছে বলল,’ হ্যা সব ঠিক আছে।’
‘ আরগুলো কই?আর রুদ্রিক কোথায় গিয়েছে?মাত্রই তো এখানে দেখলাম।’
‘ সাফাত,নীল,অনিক সাউন্ড সিস্টেম চেক করতে গিয়েছে।আর সিয়া,মারিয়া,জেনি কোথায় থাকতে পারে তা তো জানিসই।আটা ময়দা মেখে ভুত সেঁজে ওইযে সেল্ফি তুলছে। আর রুদ্রিকের কথা বলতে পারি নাহ।’

ইহান হেসে দিলো জিসানের কথায়।বলল,’ ওদের সামনে বলিস তোর সব চুল ছিড়ে ফেলবে।’
‘ তাই তো তোকে বললাম।’

‘ কি কথা হচ্ছে এখানে?কে কার চুল ছিড়ে ফেলবে?’
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ইহান আর জিসান পিছনে ফিরে তাকালো।রুদ্রিক,সাফাত,নীল,অনিক দাঁড়িয়ে আছে।ইহান রুদ্রিকের কথা শুনে বলে,’ আরে আমাদের সাথে তিনটা আটা ময়দার বস্তা আছে নাহ?ওদের কথাই বলছিলাম।’

রুদ্রিক প্যান্টের পকেটে হাত রেখে গম্ভীর গলায় বলে,’ এটা ওদের ইচ্ছা।যে যেটা করে সাচ্ছন্দ্যবোধ করে।তোরা কেন এসব বলে ক্ষেপাতে যাস?’

জিসান করুন স্বরে বলল,’ আর এদিকে যে আটা ময়দা মেখে আমাদের সাথে না-ইনসাফি কাজ করে।বিয়ের আগে তো আটা ময়দা মেখে নিজের সুন্দর রূপের জ্বালে ছেলেদের ফাসায়।আটা ময়দা ছাড়া একেকটার চেহারা দেখলে হার্ট এট্যা’ক করে ম’রে যাবে নিশ্চিত।’

রুদ্রিক বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিলো।এমনসময় হাজির হলো সিয়া,মারিয়া,জেনি।জেনি রুদ্রিককে দেখেই ওর কাছে গিয়ে দাঁড়াল।ন্যাকা সুরে বলে,’ ওহ রুদ্রিক তুমি এসেছ? আমি সেই কখন থেকে তোমার জন্যে ওয়েট করছিলাম।’

সাফাত ফিসফিস করে বাকিদের বলল,’ শুরু হয়ে গেছে এর ন্যাকামি।’

মারিয়া ফিক করে হেসে দিলো।নীল মুঁচকি হাসল মারিয়াকে হাসতে দেখে।মেয়েটার হাসিটা অনেক সুন্দর।নীল বিরবির করে বলে,’ এভাবে হেসো না গো সুন্দরী।তোমার ওই হাসিতে আমি খু’ন হয়ে যাই।’

এদিকে রুদ্রিক জেনির কথা শুনে বাঁকা হেসে বলে,’ তাই নাকি?বটগাছের নিচে ইংরেজি ডিপার্টমেন্টের রাকিবের কাধে মাথা রেখে বুঝি?’

জেনি থতমত খেয়ে গেল।আমতা আমতা করে কিছু বলবে তার আগেই রুদ্রিক সরে গেলো ওর কাছ থেকে। বাকিদের উদ্দেশ্যে বলে,’ কোনো কাজ বাকি নেই তো?সব ঠিক ঠাক? স্যার বিশ্বাস করে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন।আমি চাই না কোনো গাফিলতি হোক।’

অনিক বলল,’ তুই চিন্তা করিস না। সব ঠিক আছে।’
‘ হুম।’
‘ চিফ গেস্ট এসে পরবে বোধহয়।চল গেটের কাছে যাই।’ বলল নীল।
‘ হুম চল।’

ওরা সবাই মিলে চলে গেলো ভার্সিটির গেটের কাছে।
______
রিকশা থেকে নেমে পড়ল অথৈ আর রিধি।অথৈ ভাড়া মিটিয়ে এইবার রিধিকে বলে,’ যদি কিছু হয় নাহ আমার শাড়ির সাথে তাহলে তোর একদিন কি আমার একদিন।’
‘ আহ,তুই শুধু শুধু চিন্তা করছিস।কিছু হবে নাহ চল তো।’

এমন সময় অথৈর ফোনে কল আসল।অথৈ দেখে ইহান ফোন করেছে।নিশ্চয়ই ও এসেছে কিনা জানার জন্যে ফোন করেছে।অথৈ কলটা ধরে বলে,’ আমি ভার্সিটিতে এসেছি।গেটের কাছে আছি।’

ইহান অথৈর কথা শুনে গেটের আশেপাশে তাকাল।রাস্তার ওপারে দেখতে পেলো অথৈ আর রিধি দাঁড়িয়ে আছে।ইহান বলল,’ ওইখানেই দারা।আমি আসছি।রাস্তা পার করে নিয়ে আসব।’
‘ উফফো ভাই।তুই বেশি চিন্তা করছিস।আমি আর রিধি বাচ্চা নাহ আসতে পারব।’

অথৈর কথায় ইহান বলে,’ বাচ্চা থেকেও কম নাহ তোরা।’
‘ তুই ফোন রাখ তো।’

অথৈ ফোন কেটে দিলো।ইহান কান থেকে ফোন সরিয়ে নিলো।রুদ্রিক ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করল,’ কেউ আসছে না কি?যাকে তুই রিসিভ করতে যাবি?’

ইহান পকেটে ফোন রেখে বলে,’ আরেহ নাহ।আমার বোন এইবার এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।ওর সাথেই কথা বলছিলাম।এসেছি কি না জানার জন্যে।’

রুদ্রিক আর কিছু বলল নাহ।দৃষ্টি ঘুরিয়ে সামনে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলো ও।চারপাশ থমকে গেল কি?দমকা হাওয়া এসে ছুঁয়ে গেল রুদ্রিকের বিশাল শক্তপোক্ত দেহখান।চোখের পলক ফেলল নাহ আর।#মন_তুমি_ছুঁয়ে_দেখো_না
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ০৩
রুদ্রিককে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সাফাত ওকে হালকা ধাক্কা দিলো।এতে যেন হুশ ফিরে আসে ওর।সাফাত জিজ্ঞেস করল,’ কিরে কি হয়েছে?এমন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?’

রুদ্রিক এদিক ওদিক তাকালো।ঘাড়ের পিছনের চুলগুলো খামছে ধরল।ভীতরের অস্থিরতাকে দমিয়ে নিলো। শক্ত কণ্ঠে বলে,’ নাহ কিছু হয়নি।এমনি বিরক্ত লাগছে।দাঁড়িয়ে থাকতে।’

রুদ্রিক জোড়ে শ্বাস নিলো।হঠাৎ কি হয়েছিলো ওর?এমন কেন হলো ওর সাথে?ও তো এতো দূর্বল সত্তার মানুষ নাহ।যে একটা মেয়ের দিকে এইভাবে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে থাকবে।রুদ্রিক মাথা ঝাড়া দিয়ে চিন্তাটুক ফেলে দিলো।এটা হবার নয়।আরিহান রুদ্রিক মির্জা কখনই এতো দূর্বল না। কিন্তু আদৌ কি কখনও তা সম্ভব হয়?প্রেমের বসন্তের হাওয়া গিয়ে যার হৃদয়ে একবার দোলা দিয়ে যায়। তাহলে কি আর নিজেকে দমিয়ে রাখতে পারে কেউ?সেই প্রেমের বসন্তের বাতাসে নিজেকেও ভাসিয়ে দিতে হয়।
________
প্রিয়ান দূর থেকে অথৈ আর রিধিকে দেখেই বলে উঠল,’ ওই দেখ দুই শাকচু’ন্নি আসছে।’

অথৈ আর রিধি আসতেই আহিদ বলে,’ এতোক্ষণ লাগলো তোদের আসতে?সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছি।’

অথৈ রিধির দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তাক করে বল,’ আমার কি দোষ?আমি তো তাড়াতাড়িই রেডি হয়ে গিয়েছিলাম।এই রিধি কু’ত্তিটা আমায় ধরে বেধে শাড়ি পরিয়েছে।’

পিহু উড়ন্ত চুমু ছুড়ে মারল রিধির দিকে।বলল,’ জান তোকে তো একশ একটা চুমু দেওয়া দরকার।এই গাধিটাকে শাড়ি পরিয়ে এনেছিস।’

অথৈ রাগি গলায় বলে,’ তুই এর পেছনে আছিস তা আমি ভালোভাবেই জানি।’

পিহু দাঁত কেলিয়ে হাসল।প্রিয়ান হাত দিয়ে বাতাস করার অভিনয় করে বলে,’ উফ সুন্দরীদের রূপের আগুনে তো ঝলসে যাচ্ছি।এতো গরম কেন তুই বলছিস আহিদ?এইবার নিজেই কারনটা দেখে নেহ।’

আহিদ অথৈ,রিধি,পিহুর দিকে তাকিয়ে শয়তা’নি হাসি হেসে বলল,’ কে যেন একটু আগে বলছিল আটা ময়দা মেখে শাকচু’ন্নি সেজে এসেছে ওরা।’

তিন রমনীগণ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকাল প্রিয়ানের দিকে।প্রিয়ান থতমত খেয়ে গেল এমন দৃষ্টিতে। ভয়ার্ত কণ্ঠে বলে,’ এ..এভাবে তাকাচ্ছিস কেন আজব?’

রিধি ধরাম করে একটা মুষ্ট্যাঘাত করল প্রিয়ানের পিঠে।প্রিয়ান ‘ও মা গো।’ বলে চেঁচিয়ে উঠল।আহিদ ফিকফিক করে হেসে উঠল।প্রিয়ান ব্যথাতুর কণ্ঠে বলে উঠল,’ ওই চুন্নি।আমারে মারলি ক্যান?’

অথৈ মুখ ভেংচি মেরে বলে,’ তো?তোকে মারবে না তো কি চুমু খাবে?সা’লা হারামি।আমাদের পিঠ পিছনে আমাদের বদনাম করে বেড়াস।তোরে তো পঁচা পানিতে চুবিয়ে মা’রা উচিত।’

প্রিয়ান পিঠের ব্যথাযুক্ত জায়গায় জাত ঢলতে ঢলতে বলে,’ তোর কপালে এমন জামাই জুটব দেখিস যার কথায় তোর উঠ বস করতে হইবো।হা*গু মু’তু ধরলেও তার পারমিশন ছাড়া যাইতে পারবি না দেখিস।আর তুই রিধির বাচ্চা কিধি।তুই যেমনে আমার কিলাইলি ঠিক এমনেই তোর জামাইও তোরে উঠতে বসতে কিলাইবো।আর তুই ফকিন্নি ছেমরি তোর রূপচর্চা আর মেক-আপ করার অনেক শখ তাই নাহ?বিয়ার পর জামাইয়ের পেদানির চোটে তুই চুল আঁচড়ানোর ও সময় পাবি নাহ দেখিস।হাতের নখের তো খুব যত্ন তোর।এই দুই হাত দিয়া তুই সারাদিন তোর বাচ্চার হা’গু মু’তু সাফ করতে থাকবি।তুই আহিদ্দার বাচ্চা তোর বউ তোর মুখ বাড়াইয়া এমন ঘুষি দিবো দেখিস।তুই আর তোর আর তোর এই বিশ্রি দাঁতগুলো দেখাইয়া ছাগলের মতো হাসতে পারবি না।এইটা আমার মতো নম্র,ভদ্র ইনোসেন্ট একটা পোলার অভি’শাপ তোগো উপর। প্রিয়ান কা স্রাপ হ্যে ইয়ে স্রাপ তুম লোগো কে উপার।’

প্রিয়ানের অভি’শাপ দেওয়ার ধরণ দেখে সবাই হেসে দিলো।ওদের খিলখিল করা হাসিতে চারপাশ মুখোরিত হলো।
_________
রুদ্রিকদের গ্রুপের খুব কাছেই ছিলো অথৈদের গ্রুপ।ওদের এমন হাসির শব্দে না চাইতেও রুদ্রিকের দৃষ্টি সেদিকে চলে গেল।বাকিদেরও একই অবস্থা।সাফাত অথৈ’র হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।মুগ্ধতা বিরাজমান সেই দৃষ্টিতে।অন্যমনস্ক হয়ে মুখ ফসকে ও বলে উঠল,’ ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়ি পরা মেয়েটা অনেক সুন্দর।তার হাসিটাও মারাত্মক।’

রুদ্রিকের কর্ণকুহরে কথাটা যেতেই সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো সাফাতের দিকে।বাকিদের দৃষ্টিও সাফাতের দিকে।সাফাত হকচকিয়ে গেল এভাবে সবাইকে ওর দিকে তাকাতে দেখে।মুখ ফসকে কথাটা বলে নিজেই বাজেভাবে ফেসে গিয়েছে বুঝতে পারলো ও।সাফাত আমতা আমতা করে বলে,’ ক…কি এ..ভাবে তাকানোর কি আছে আজব?মানুষ কি সুন্দর কে সুন্দর বলতে পারে নাহ?’

ইহান সাফাতের মাথায় থাপ্প’ড় দিয়ে বলে,’ তোর নজর সরিয়ে রাখ সালা।ও আমার বোন হয়।আমার বোনের দিকে তাকাবি নাহ।’

ইহানের এই বাক্যে যেন চারিদিকে বিস্ফো’রণ ঘটলো।অনিক অবাক কণ্ঠে বলে,’ কিহ?তোর বোন? কিন্তু ও এখানে কি করে?’

অনিকের এমন বোকা বোকা প্রশ্নে বিরক্ত হয়ে রুদ্রিক বলল,’ এমন বোকার মতো কথা বলছিস কেন অনিক?যেহেতু ইহানের বোন এখানে এসেছে।সেহেতু সে এখানকার স্টুডেন্টই হবে তাই নাহ?’

অনিক ইহানের উদ্দেশ্যে বলে,’ কিরে এটা সত্যি?’
‘ হ্যা আমার বোন।এমনকি ওদের ফ্রেন্ডসরাও এই ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে।আর আল্লাহ্’র রহমতে সবাই একই ডিপার্টমেন্টেই আছে।আমার বোনটা যেই বন্ধু পাগল।একটা বন্ধুর থেকে আলাদা হয়ে গেলেই ওর আহাজারিতে আর টিকে থাকা যেতো নাহ।’

সবারই বেশ ভালো লাগল কথাটা শুনে।নীল বলল,’ তা যা বলেছিস।আমাদের অবস্থাই দেখ।রুদ্রিক আর তুই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েও আমাদের কারনে ও সেখানে গেলি নাহ।’

ইহান লাফ দিয়ে রুদ্রিক আর নীলের কাধ জড়িয়ে ধরে বলে,’ কারন তোদের এক একটাকে ছাড়া আমরা সবাই অচঁল।’

ইহানের এমন কান্ডে রুদ্রিক বিরক্ত হয়ে ওকে ছাড়াতে চেষ্টা করতে লাগলো।আর বলছে,’ হোয়াট ইছ দিছ ইহান?কি শুরু করলি?তুই কি এখনও বাচ্চা?’

নীল ইহানের কাছ থেকে ছাড়া পাবার জন্যে ছোটুছুটি করতে করতে বলে,’ ওই সা’লা নাম আমার উপর থাইক্কা।হাতির মতো শরীর নিয়া আমার উপরে উঠলে কি আমি বাঁচমু?নাম,নাম বলছি।’

সাফাত আর অনিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসল।তারপর হৈ হৈ করে উঠল,’ আমরা বাদ যাবো কেন?আমরাও বাদ যাবো নাহ।’

তারপর তারাও ঝাপিয়ে পরল রুদ্রিক,ইহান আর নীলের উপর।পাঁচজন মিলে ধস্তাধস্তি শুরু করে দিল।
———
অথৈ নিজেদের থেকে কিছুটা দূরে নিজের ভাইকে তার বন্ধুদের সাথে হুরোহুরি করতে দেখে নাক মুখ কুচকে ফেলল।অসহ্য কণ্ঠে বলে,’ আম্মুর দাম’ড়া ছেলেটা আর ভালো হলো না।কেমন গরুর নতো করছে।’

রিধি অথৈকে বিরবির করতে দেখে বলে,’ কিরে কি এতো ফুসফুস করছিস?তোর আবার কি হলো?’

অথৈ রিধিকে ইশারায় ইহানকে দেখিয়ে বলল,’ তোর রাম ছাগলের কথা বলছি।’
রিধি ইহানকে দেখছিল।অথৈর কথা শুনে ভ্রু-কুচকে বলে,’ কিসের ছাগল মাগল বলছিস?সে তোর ভাই এটা ভুলে যাস কেন?সে ছাগল হলে তুইও ছাগলনি মনে রাখিস।’

অথৈ রেগে গেলো রিধির কথায়।ফুঁসে উঠে বলে,’ এই তুই কি বললি?আমি ছাগলনি?তুই আগে বল তুই কি আগে আমার বেস্টফ্রেন্ড না কি ওই হনুমানের বউ?’

পিহু নিজের চুল ঠিক করতে করতে অথৈ আর রিধির ঝগড়ার মাঝে ঢুকে গেল।দুজনের উদ্দেশ্যে বলল,’ ওই দেখ তো আমার চুল ঠিক আছে কিনা?’

অথৈ আর রিধি এইবার নিজেদের রাগ ঢাললো পিহুর উপর।অথৈ চেঁচিয়ে বলে,’ এই তুই থামবি?খালি এটা ঠিক আছে কিনা?ওটা ঠিক আছে কিনা শুরু করেছিস।সর সামনে দেখে। ‘
রিধিও একই সুরে বলে,’ হ্যা আর একবার এইগুলো জিজ্ঞেস করলে লাত্থি মেরে তোরে ড্রেনে ফেলে দিবো।’

প্রিয়ান আর আহিদ ওদের ঝগড়া দেখছে।কিছুই বলছে না ওদের।কারন এখন ওরা কিছু বলাই মানে যেচে বাঘের গুহায় যাওয়া।প্রিয়ান আহিদের কাধে হাত রেখে বলে,’ দেখেছিস?আমি বললেই দোষ?এখন তো নিজেরেই চুলোচুলি করছে।’

আহিদ চট করে সরে গেল।প্রিয়ান পরতে পরতে নিজেকে সামলে নিল।আহিদ বলল,’ ছেলেদের দোষ একটু বেশিই থাকে মেয়েদের কাছে।জেনেও কেন যাস ওদের সাথে লাগতে?
প্রিয়ান হাসতে হাসতে বলে,’ আরে বুঝিস নাহ?এরা ক্ষেপে যায় দেখেই তো ওদের ক্ষ্যাপাতে ভালো লাগে।’

এদিকে অথৈ,রিধি আর পিহু কথা কাটাকাটির মাঝে ব্যাঘাত ঘটে যায়।কারন ওদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে অনার্স তৃতীয় বর্ষের কিছু ছাত্ররা।অথৈ কপাল কুচকে তাকালো।কতোগুলো ছেলেকে এইভাবে ওদের সামনে সং সেঁজে দাঁড়িয়ে থাকতে ওর মেজাজ খারাপ হচ্ছে।অথৈ এমনিতেই ক্ষিপ্ত মেজাজের মানুষ।অল্পতেই রেগে মেগে ফায়ার হয়ে যায়।অথৈ শক্ত কণ্ঠে বলল,’ কি চাই?এইভাবে সামনে এসে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?’

অথৈ সামনে দাঁড়ানো লম্বা চওড়া ফর্সা করে ছেলেটা দাঁড়িয়ে আছে।অথৈর কথায় বাঁকা হেসে বলে,’ বাহ?প্রথম কথাতেই এতো তেজ?আই লাইক ইট!’
‘ কিন্তু আপনাদের আমাদের সামনে এইভাবে সং সেজে দাঁড়িয়ে থাকাটা আমার মোটেও পছন্দ হলো নাহ।আই ডোন্ট লাইক ইট এট ওল।’
‘ রূপের সাথে সাথে তোমার সাহসেরও প্রশংসা করতে হয় লাভলি লেইডি।’

অথৈ সারা শরীর রাগে কাঁপছে।ইচ্ছে করছে কষিয়ে থাপ্প’ড় মারতে এই বেয়াদপকে।অথৈ কিছু বলবে তার আগে আহিদ আর প্রিয়ান এসে দাঁড়ায় ওদের মাঝে।আহিদের রাগ লাগলেও নিজেকে যথাসম্ভব দমিয়ে রাখল।ভার্সিটির সিনিয়র এরা।কথাতে বুঝিয়ে শুনিয়ে দিতে পারলে অযথা ঝামেলা করে লাভ নেই।প্রিয়ান তেড়েমেড়ে কিছু বলবে তার আগে আহিদ ওকে থামিয়ে দিল।যথাসম্ভব ভদ্রতা বজায় রেখে বলল,’ কিছু কি হয়েছে ভাই? ‘

আহিদ আর প্রিয়ান এইভাবে সামনে আসায় ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলে,’ কিছু হয়নি।তোমরা সামনে থেকে সরে দাঁড়াও।’

আহিদ আর প্রিয়ান আরও আটশাট হয়ে দাঁড়ালো।অথৈদের আড়াল করে রাখল। তারপর আহিদ বলল,’ কিছু হয়নি তাহলে এখানে কেন এসেছেন?আর আমার ফ্রেন্ডসদের ডিস্টার্ব করছেন কেন?’
‘ ডিস্টার্ব করছি না কি করছি সেটা তোমাদের বলতে যাব কেন? দেখো ভালোই ভালোই বলছি আমার কাজ আমাকে করতে দেও।নাহলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।’

আঙুল তুলে শাসালো ছেলেটা।প্রিয়ান এতোক্ষন আহিদের কারনে চুপ ছিলো।এখন তার নিজেকে সামলে রাখতে পারল নাহ।ক্রোধে লাল হয়ে বলল,’ কি খারাপ করবেন হ্যা?আমি বলছি জাস্ট পাঁচ মিনিট দিলাম এখান থেকে চলে যান।নয়তো আপনাদের জন্যে ভালো হবে নাহ।’

ছেলেটা প্রিয়ানের হুমকিতে রেগে গেল।হাত উঠিয়ে প্রিয়ানকে মারতে নিতেই ওর হাতটা কেউ ধরে ফেলল।সাথে সাথে কানে এসে বারি খেলো কারো পুরুষালি গম্ভীর কণ্ঠস্বর,’ এখানে কি হচ্ছে এসব?’

#চলবে________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here