#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৭)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
সকলে হামিদ চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন।উনি কি বলতে পারেন সেইটা কারোরই আন্দাজ নেয়।
– ‘বড়ো আব্বু কি বলবে বলো।’
– ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি এখন থেকে এই বাড়িতেই থাকবে। এই সংসারটাকে ভেঙে যেতে আমি দেব না।’
আনন্দে রুহির চোখ দিয়ে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ে। ওর দাদু এইটাই তো চেয়েছিল, সকলে একসাথে থাকুক আর সেইটাই হচ্ছে।
– ‘থ্যাঙ্ক ইউ বড়ো আব্বু।’
**
সবকিছু স্বাভাবিক ধারাতে এগিয়ে যেতে থাকে। রুহি জয়ের বাড়িতে ফিরে গেছে। সম্পর্কটা স্বাভাবিক না হলেও অস্বাভাবিক নয়।
জয়ের ফোনটা ক্রমাগত বেজেই চলেছে, রুহি বিরক্ত হয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে চমকে উঠল। চিরচেনা নামটা ভেসে উঠেছে ‘নাসরিন।’ তারমানে কি জয় এখনো নাসরিনের সাথে যোগাযোগ রেখেছে?
রুহির ভাবনার মাঝে কলটা কেটে যায়। রুহি বিষন্ন মনে ফোনটা রেখে দিয়ে জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সবকিছু তিক্ত লাগছে, পুরানো কথাগুলো মনে পড়ে যাচ্ছে।
তখনি জয় রুমে আসল। রুহি জয়ের দিকে একবার তাকিয়ে বলল,
– ‘আপনার কল এসেছিল।’
– ‘কে করেছিল?’
– ‘জানি না।’
জয় ফোনটা হাতে নিয়ে নামটা দেখামাত্রই রুহির দিকে একপলক তাকিয়ে বের হয়ে গেল। রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, সম্পর্কটা স্বাভাবিক হবার বদলে আবারো এলোমেলো হয়ে যাবে না তো!!
জয় অনেক রাত করে বাড়ি ফিরে আসলো। রুহির অনেক প্রশ্ন থাকলেও করার ইচ্ছা জাগল না, চুপচাপ বসে রইল।
– ‘আমি খাবো না তুমি খেয়ে নাও।’
জয়ের কথা শুনে রুহির খাবার রুচি চলে গেল। যার জন্য এতটা সময় অপেক্ষা করে থাকল সেই যদি বলে খাবো না তখন কি আর খেতে মন চাই। রুহি খাবারগুলো ফ্রিজে রেখে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পড়ল। কিন্তু ঘুমাতে পারল না, ভালো লাগছে না কিছুই। হঠাৎ মনে হলো, নাসরিনের সাথে দেখা করে জানতে চাইবে সবকিছু। কিন্তু নাসরিনের খোঁজ পাবে কোথায়??
পরেরদিন সকালে জয় অফিস বেরিয়ে যাবার পর, রুহি ওর শাশুড়ি মা এর রুমে গিয়ে দেখলেন তিনি শুয়ে আছেন।
– ‘কি হয়েছে মামনি তুমি এইভাবে শুয়ে আছো কেন?’
– ‘শরীরটা ভালো লাগছে না।’
– ‘ডাক্তারকে আসতে বলবো, খুব খারাপ লাগছে?’
– ‘নারে ঠিক হয়ে যাবে। তুই বস তোর সাথে একটু কথা বলি।’
রুহি ওর শাশুড়ির পাশে বসতে উনি আধশোয়া হয়ে বসে বললেন,
– ‘জানিস রুহু জয় আমার নিজের ছেলে বলে বলছি না, কিন্তু ওর মতো ছেলে হয় না। ওহ কিন্তু তোকে খুব ভালোবাসে।’
রুহি কেঁপে উঠল। জয় ওকে ভালোবাসে!! কথাটা বুকে কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছে।
– ‘যখন জয় জানতে পেরেছিল তুই ওর বউ হবি তখন ওর মুখে অন্যরকম একটা খুশি দেখছিলাম। তারপর তুই যখন মামার বাড়িতে চলে গেলি তখন জয় নিজেকে একদম ঘরভর্তি করে রেখেছিল, কারোর সাথে কথা বলত না ঠিকমতো খেত না। পড়ালেখা করত না। তারপর তোর বড়ো আব্বু ওকে কি বোঝাতে আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে উঠে।’
রুহি একটার পর একটা চমক পাচ্ছে। জয়ের মায়ের কথাগুলো অন্যকিছু ইঙ্গিত করছে তাহলে কি …
রুহি ঠিক করল এইবার যেভাবেই হোক সবকিছুর মুখোমুখি হবে। কিন্তু কিভাবে!
রুহির মাথায় আসে সোহানের কথা। সোহান আর জয় অনেকটাই ক্লোজড ফ্রেন্ড আর এই সবকিছুর সত্যি যদি কেউ বলতে পারে সেইটা সোহান। তাই রুহি সোহানকে কল লাগল,
তখন সোহান আর প্রিয়া একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে, এই কয়েকটা দিনে প্রিয়া আর সোহান অনেকটা ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে, সোহান বুঝেছে প্রিয়াকে পছন্দ করে। কিন্তু প্রিয়া যেহেতু জয়কে পছন্দ করে তাই কথাটা বলে উঠতে পারল না।
ফোন বেজে উঠতে সোহান কানে ধরে বলল,
– ‘হ্যাঁ রুহু বল।’
– ‘আমার একটা হেল্প লাগবে করতে পারবি?’
– ‘কি হেল্প!’
– ‘বাড়িতে আয় সব বলছি।’
– ‘ওকে।’
**
– ‘সোহান একমাত্র তুই পারবি এই সবকিছুর উত্তর দিতে প্লিজ বল।’
– ‘হঠাৎ করে জানতে চাইছিস কিছু কি হয়েছে?’
– ‘কাল নাসরিন জয়কে কল করেছিল।’ (মলিন মুখে)
– ‘কি বলছিস তুই এইসব।’
– ‘হ্যাঁ। তুই যেটা জানিস সেটা বল, আমি চলে যাবার পর ঠিক কি হয়েছিল বল।’
– ‘কি আবার হবে কিছুই হয়নি।’ (বাঁকা চোখে)
– ‘দ্যাখ সোহান আমি কিন্তু ফাজলামী করার মুডে নেই বলবি কি হয়েছিল!’
– ‘আমি যতটুকু জানি, নাসরিনের সাথে জয়ের সম্পর্ক কোনোদিনও ছিল না। সবটা একটা গুজব ছড়ানো হয়েছিল তোদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরানোর জন্য। সেইদিন তুই চলে আসার পর কলেজ ক্যাম্পাসে নাকি খুব ঝামেলা হয়েছিল, জয় নাসরিনকে থাপ্পর মেরেছিল। এইটুকুই আমি জানি জয়কে জিজ্ঞেস করছিলাম সবটা কিন্তু ওহ কিছুই বলেনি। বাকি উত্তর জয় আর নাসরিন ছাড়া কেউ জানে না।’
রুহির মাথা ঘুরছে। কিসব শুনছে ওহ, নাসরিন আর জয়ের সম্পর্ক ছিল না! তাহলে যেগুলো দেখছিল সেইগুলো কি ছিল??
– ‘রুহু আমার কাছে একটা বুদ্ধি আছে সত্যি পর্যন্ত যাবার জন্য।’
– ‘কি বল?’
– ‘তুই জয়ের কাছ থেকে নাসরিনের নম্বরটা জোগাড় করতে পারবি?”
– ‘কেন?’
– ‘নাসরিনের সাথে দেখা করে কথা বললে আমার মনে হয় কিছুটা হলেও সমাধান পাওয়া যাবে।’
– ‘কিন্তু নাসরিন আমাদের সত্যি বলবে কেন?’
– ‘আগেই নেগেটিভ ভাবছিস কেন? পজেটিভ ভাব।’
– ‘জয়ের পার্সওয়াড জানি না।’ (মুখ গোমড়া করে)
সোহান রুহির মাথায় চাঁটি দিয়ে বলল,
– ‘জয়ের পার্সওয়াড রুহি পাগলি।’
– ‘কি!!’
– ‘ইয়েস। ভাব তোর বর তোকে কথা ভালোবাসে।’
সোহানের কথাটা রুহি মজা হিসাবে উড়িয়ে দিলো।
– ‘এই সোহান বেশি বাজে বকিস না। ভাগ এখান থেকে।’
– ‘এখন তো আমার কথাগুলো তেঁতো লাগবে। গেলাম আমি।’
সোহান রাগ দেখিয়ে চলে যেতে রুহি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
জয় অফিস থেকে আসার পর রুহি চুপিচুপি জয়ের ফোনটা হাতে নিয়ে খোলার চেষ্টা করতে লাগল, কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারছে না। তখনি সোহানের কথাটা মনে পড়ল, রুহি পার্সওয়াড দিতেই ফোন খুলে গেল। রুহি অবাক!! জয় ওর নামে পার্সওয়াড দিয়ে রেখেছে। আপাতত এইসব না ভেবে তাড়াতাড়ি নাসরিনের নম্বরটা নিয়ে নিল, আশা করা যায় এইবার সবকিছুর উপর থেকে পর্দা সরবে।
– ‘হ্যালো সোহান কাজ হয়ে গেছে।’
– ‘গুড। এইবার ফোন করে দেখা করার কথা বল।’
– ‘কিন্তু আমার বড্ড ভয় লাগছে।’
– ‘কিছু হবে না। বেস্ট অফ লাক।’
সোহানের ফোনটা কেটে দিয়ে, রুহি নাসরিনের নম্বরে কল লাগল রিং হয়ে চলেছে কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করছে না। রুহি বিরক্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিলো, কিছুক্ষন পর নাসরিনের নম্বর থেকে কল আসলো,
– ‘হ্যালো কে?’
– ‘হ্যালো নাসরিন আমি রুহি বলছি।’
– ‘রুহি!!’
– ‘তোমার সাথে আমার কথা ছিল, প্লিজ একটু দেখা করতে পারবে।’
নাসরিন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
– ‘কাল বিকালে … আসতে পারবে?’
– ‘আচ্ছা।’
পরেরদিন বিকাল,
#চলবে….#আমার_ভাঙা_ক্যানভাসে (১৮)
#তানজিলা_খাতুন_তানু
নাসরিনের মুখোমুখি বসে আছে রুহি, পাশে সোহান একমনে কফি খেয়ে যাচ্ছে। রুহি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নাসরিনকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে, আগের মতো সৌন্দর্য, স্টাইল কোনটাই নেই। পরনে সাধারণ সালোয়ার কামিজ, মুখটা কিরকম একটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে, নাসরিনকে দেখে বোঝার উপায় নেই একসময়ে এই মেয়েটাই নিজের সৌন্দর্য নিয়ে ব্যস্ত থাকত। কিন্তু নাসরিনের এই পরিবর্তনের কারন কি??
নিরবতা ভেঙে নাসরিন বলল,
– ‘কেমন আছো রুহি?’
– ‘আছি ভালোই। তুমি?’
– ‘আর ভালো। নিজের কাজের শাস্তি পাচ্ছি প্রতিনিয়ত।’
– ‘মানে?’
– ‘ভালোবেসে একজনকে বিয়ে করেছি কিন্তু সে আমাকে আর ভালোবাসে না। পর নারীকে আসক্ত হয়েছে, আমার উপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার করে।’
– ‘ভালোবেসে বিয়ে করেছো মানে কি? তোমার না জয়ের সাথে সম্পর্ক ছিল?’
– ‘না রুহি। সবটাই মিথ্যা ছিল, জয় কখনোই আমাকে ভালোবাসেনি সেইখানে সম্পর্ক থাকার কথাও নয়।’
– ‘তাহলে চারবছর আগে!!’
– ‘সবটা আমার সাজানো প্ল্যান। জয়কে আমি পছন্দ করতাম, কিন্তু জয় পাত্তা দিত না। একটা সময় পরে বুঝেছিলাম জয় তোমাকে ভালোবাসে, সেইদিন তোমার উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সে করেই হোক তোমাদের দুজনকে আলাদা করব। আর এই জন্যই এতকিছু।’
রুহি কথাগুলো বিশ্বাস করল বলে মনে হলো না। একদৃষ্টিতে নাসরিনের দিকে তাকিয়ে আছে, আর নাসরিন মাথা নিচু করে বসে আছে।
– ‘আমি কিভাবে বুঝব তুমি সত্যি কথা বলছো?’
– ‘মানে!’
– ‘কালকেও জয় তোমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, হতেই তো পারে তুমি ওর ভয়ে আমাকে এইগুলো বানিয়ে বলছ।’
– ‘এইসব কি বলছো রুহি? হ্যাঁ মানছি জয়ের সাথে বর্তমানে আমার যোগাযোগ আছে, কিন্তু বিশ্বাস করো আগে ছিল। তুমি যেদিন রাগ করে চলে গেলে সেইদিন জয় আমাকে সবার সামনে থাপ্পর মেরে অপমান করছিল যাতে ওর ধারে কাছে না যায় ওহ শুধু তোমাকেই ভালোবাসে আর তোমাকেই ভালোবাসবে। তখন আমার রাগটা আরো বেড়ে গিয়েছিল ঠিক করেছিলাম যে করেই হোক তোমাদের আলাদা করব কিন্তু তখন সোহান আমাকে বুঝিয়েছিল তোমাদের বিয়ে আগে থেকেই ঠিক করা আছে, আর সেটা তোমার সাথে।’
কথাগুলো বলে নাসরিন থামল, চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে। রুহি কিছুটা শান্ত হয়ে বসে সোহানকে প্রশ্ন করল,
– ‘ঘটনা কি সত্যি?’
– ‘হ্যাঁ। আমি চাইনি তোর আর জয়ের মাঝে কোনোরকমের ঝামেলা হোক তাই নাসরিনকে বুঝিয়ে ছিলাম আর ও বুঝেও ছিল কিন্তু তুই বুঝলি না। গাধার মতো সবকিছু ছেড়ে চলে গেলি।’
রুহি সোহানের দিকে কটমট করে তাকাল গাধা বলার কারনে।
– ‘সোহান আমাকে বলার পর আমি অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজ বদল করে চলে যায়। তারপর আর এইসব নিয়ে ভাবিনি। নতুন কলেজ নতুন পরিবেশ। এক সিনিয়র দাদার সাথে আমার সম্পর্ক গড়ে ওঠে, পরিবারের সম্মতি নিয়েই দেড়বছর আগে আমাদের বিয়ে হয়। প্রথম কিছু মাস ভালোই কাটছিল তারপর হঠাৎ করেই তার মধ্যে পরির্বতন লক্ষ্য করি, দিনকে দিন অত্যাচারের মাত্রা বাড়তে শুরু করে। একদিন বাজার থেকে আসার সময় মাথা ঘুরে পড়ে যায় আর সেখান থেকে জয় আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেই থেকেই ওর সাথে আমার যোগাযোগ। বিশ্বাস করে রুহি আমাদের মাঝে না আগে কিছু ছিল আর না এখন কিছু আছে।’
– ‘ওকে বিশ্বাস করলাম এখন কিছু প্রশ্নের উত্তর দাও। অনুষ্ঠানের দিন জয় তোমাকে জড়িয়ে ধরেছিলে কেন? কলেজে কিভাবে ছড়িয়ে গেল তুমি আর জয় রিলেশনে আছো?’
নাসরিন রুহির দিকে তাকিয়ে আছে সাথে সোহানও। এ কোন রুহিকে দেখছে, এত সত্যি বলার পরেও কিছুতেই মন গলছে না। কই আগে তো রুহি এইরকম ছিল না, আবেগপ্রবণ একটা মেয়ে ছিল কিন্তু এখন!! কন্ঠে নিষ্ঠুরতা, সত্যি জানার আগ্রহ। এই চারবছরে মেয়েটার মাঝে এত পরিবর্তন হবে সেটা ওদের ধারনার বাইরে ছিল। সোহানও এতদিনে বুঝতে পারেনি তার পাগলী বোনটা কঠিন হয়ে গেছে।
– ‘সেইদিন আমি ইচ্ছা করে নিজের বিপদের কথা বলে জয়কে ডেকে ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল তুমি জয়কে খোঁজ করতে করতে ঠিকই আসবে আর সেই সময়েই আমি জয়কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকি। সেই পরিস্থিতিতে জয় আমাকে সরিয়ে দিতে পারেনি। তুমি ওইটুকু দেখেই চলে গিয়েছিলে। আর জয় আর আমার জড়িয়ে ধরার ছবিটা কলেজ গ্রুপে শেয়ার করা হয় তাই সকলে জেনে যায় আমরা সম্পর্কে আছি।’
রুহির মাথা ঘোরাচ্ছে, সেইদিন যদি শুধু চোখের দেখা দেখে সবটা না বিশ্বাস করত তাহলে হয়তো আজকে জীবনটা অন্যরকম হতো। আবেগ, জেদের বর্শীভূত হয়ে রুহি ভুলভাল কাজ করে চলেছিল এখন রুহির ঠিক কি করা উচিত সেটা বুঝতে পারল না।
নাসরিন কান্না আটকে রেখে কোনোরকমে বলল,
– ‘তোমাদের ভালোবাসা নষ্ট করেছিলাম তাই হয়তো উপরওয়ালা আমার কপালে ভালোবাসা রাখেননি। পারলে মাফ করে দিও রুহি।’
রুহি নাসরিনের হাতে হাত রেখে শান্ত কন্ঠে বলল,
– ‘অতীতে যা হয়েছে ভুলে যাও নাসরিন। তোমার করা ভুলের জন্য আমি,জয় আমার পরিবার এমনকি তুমিও কম কষ্ট পাওনি। কি লাভ হলো এতকিছু করে সেই জয় আমার ছিল আর আমারই থাকল। মাঝখান থেকে শুধু চার চারটে বছর নষ্ট হয়ে গেল। তাই সবকিছু ভেবে করতে হয়, তুমিও ভুল করেছিলে আর আমিও। সেইদিন না যদি চোখের দেখাটা বিশ্বাস করতাম, সত্য মিথ্যা যাচাই করতাম তাহলে হয়তো আমাদের আলাদা হতে হত না। এতটা কষ্টও পেতে হত না।’
নাসরিন মাথা নীচু করে কেঁদেই চলেছে, তার ভুলের শাস্তি এখন প্রতিনিয়ত পাচ্ছে। না জানি আর কতটা কষ্ট আছে ভাগ্যে।
– ‘নাসরিন ছোট বোন হিসাবে একটা পরামর্শ দিচ্ছি, অতীত ভুলে নিয়ে বর্তমানকে সময় দাও। স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করো, আর যদি পারো একটা বেবি নিয়ে নাও। আমার মনে হয় একটা বাচ্চা আসলে হয়তো সে পরির্বতন হয়ে যাবে।’
নাসরিন মাথা নাড়ল। আরো কিছু কথাবার্তা শেষে নাসরিন চলে গেলে সোহান বলল,
– ‘সবকিছু ক্লিয়ার হয়েছে?’
– ‘হুমম। নিজের বোকামীর জন্য বড্ড খারাপ লাগছে।’
– ‘মনখারাপ করিস না। যেটা হয় সেটা ভালোর জন্যই হয়, হয়তো তুই চলে যাবার পর আমরা সবাই কিরকম একটা আলাদা হয়ে গিয়েছিলাম। তুই, জয় সহ বাড়ির বাকিরা কষ্ট পেয়েছে কিন্তু এই সবকিছুর মাঝে একটা ভালো জিনিসও আছে।’
– ‘কি?’
– ‘দূরত্ব কিন্তু ভালোবাসা বাড়ায়। সত্যি করে বলত, এই চারবছরে কি একবারের জন্যও জয়কে ভুলতে পেরেছিস?’
রুহি উত্তর না দিয়ে চুপ করে আছে। সোহান মুচকি হেসে বলল,
– ‘পারিস নি, উল্টে আরো বেশি ভালোবেসে ফেলেছিস। আর একটাও ভালো হয়েছে।’
– ‘কি?’
– ‘তুই আগের মতো আবেগপ্রবণ নেই। শক্ত হয়ে উঠেছিস , সমস্ত পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা করার মনোবল তৈরি হয়েছে। আর হয়তো এই পরিস্থিতির শিকার হয়ে ছিলিস বলেই নিজের স্বপ্ন আঁকা’কে নিজের পেশা হিসাবে নিতে পেরেছিস।’
রুহি চুপ করে থাকল। কিছু ঘটনা খারাপের পাশাপাশি আমাদের জীবনে ভালোও নিয়ে আসে আর সেইটাই রুহির সাথে হয়েছে। হয়তো অনেকগুলো মানুষ কষ্ট পেয়েছে,রুহি নিজেও কষ্ট পেয়েছে তবুও এই সবকিছুর জন্যই রুহি নিজের শখকে পেশা হিসাবে নিতে পেরেছে। এইবার জয়ের সাথে সবকিছু মিটিয়ে ফেলার পালা।
#চলবে…