মনের উঠোন জুড়ে পর্ব -১৫+১৬

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৫

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” সাহিত্য কি প্রিয়া কে ভালোবাসে আবৃত্তি ম্যাম?”

-” আর ইউ ক্রেজি শিক্ষা? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া হোয়াট ডিড ইউ সে? তোর ভাগ্য ভালো যে তুই প্রশ্ন টা আমাকে করেছিস,ভাইয়া কে নয়। ভাইয়া যদি তোর এই কথা শুনতো এতোক্ষণে তোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দিতো।”

-” ভুল তো কিছু বলি নি আমি।প্রিয়া আপুর বাড়ি গিয়ে আমি সবটা নোটিশ করেছি। সাহিত্য বারবার প্রিয়ার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছিলো। এমনকি সাহিত্য যখন ব‌উয়ের কথা বললো তখন ও প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে বলেছিলো।”

-“ভাইয়া তো আমার দিকে ও তাকাচ্ছিলো ।তার মানে তো এটা নয় যে ভাইয়া যার যার দিকে তাকিয়েছিলো তাকে তাকে মিন করে কথাটা বলেছিলো।তোকে সবসময় আমি চালাক ভাবতাম কিন্তু তুই যে এতো বোকা এটা জানতাম না। অনেক সময় আমরা নিজেদের চোখে যা দেখি সেটা সঠিক হয় না শিক্ষা।তোর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। হ্যাঁ ভাইয়া প্রিয়ার দিকে তাকাচ্ছিলো এটা দেখার জন্য যে প্রিয়া পাখির দিকে গরম চোখে তাকিয়ে আছে কিনা?তাকে বকা দিচ্ছে কি না ?ভাইয়া আমাকে আর প্রিয়া কে কখনো আলাদা করে দেখে না।প্রিয়া কে নিজের আরো একটা বোন মনে করে। প্রিয়া নিজেও ভাইয়াকে সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে। তাছাড়া প্রিয়া আমাদের সাথে পড়ে এমন কোনো ছেলে কে ভালোবাসে।যার ব্যাপারে আমাকে কখনো কিছু বলে নি। কিন্তু আমি সেটা বুঝতে পেরেছি। প্রিয়া খুবই সহজ ,সরল ভালো একটা মেয়ে। আর তুই তাকে সন্দেহ করছিস। ছিঃ শিক্ষা তোর থেকে এটা আমি আশা করি নি। কিন্তু শিক্ষা একটা বিষয় আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।”( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” কি?”

-” বাই এনি চান্স ভাইয়া যদি প্রিয়া কে পছন্দ করেও তোর সমস্যা কোথায়? তুই কি প্রিয়ার প্রতি জেলাস ফিল করছিস?”

-” মোটেই না।”

-” ওহ্ এই ব্যাপার ? তাহলে সেদিন প্রিয়াদের বাড়িতে ভাইয়া যখন বিয়ের কথা বলছিলো তখন কে ভাইয়া কে মেসেজ দিয়েছিলো ?”

-“শিক্ষা আমতা আমতা করে বললো আমি জানি না।আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

-” আমি স্পষ্ট দেখেছিলাম তুই ভাইয়া কে মেসেজ করে বলেছিলি যে ,কারো যদি ব‌উয়ের দরকার হয় আরো তিনটা বিয়ে করতে পারে। আমার তার প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট নেই।এর অর্থ দ্বারা কি বোঝানো হয় শিক্ষা? আবৃত্তি শিক্ষার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে বললো, জানি এই প্রশ্নের উত্তর তোর কাছে নেই।বিকজ তুই ভাইয়ার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছিস? ইনফ্যাক্ট দূর্বল হবারি কথা। কারণ তোরা যে একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ।যে বন্ধনে দুই পক্ষ না চায়লে ও এক পক্ষ অপর পক্ষের প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে।যাই হোক রাত প্রায় এগারোটা বাজতে চলেছে।আ’ম ফিলিং ভেরি স্লিপিং। আমি ঘুমোতে গেলাম। তুই ভাইয়ার জন্য একটু অপেক্ষা কর। ভাইয়া এক্ষুনি চলে আসবে।আর হ্যাঁ এখন থেকে আমাকে আবৃত্তি ম্যাম নয়, আবৃত্তি আপু বলে ডাকবি। আফটার অল আমি তোর দশটা না পাঁচটা না একটা মাত্র ননা .. আবৃত্তি বাকিটা বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো।বেলের আওয়াজ শুনে আবৃত্তি বললো, বোধহয় ভাইয়া এসেছে। আমি উপরে যাচ্ছি। তুই গিয়ে দরজা খোল। শিক্ষা এসে দরজা খুলে দেখে সাহিত্য বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কেমন যেন বিধ্বস্ত, রাগান্বিত মনে হচ্ছে।হয়তো কোনো কারণে রেগে আছে। সাহিত্যের এই অবস্থা দেখে শিক্ষা জিজ্ঞেস করলো, আপনার কি হয়েছে সাহিত্য? সবকিছু ঠিকঠাক আছে তো? শিক্ষার কথায় পাত্তা না দিয়ে সাহিত্যে হনহন করে নিজের রুমে চলে গেল। প্রায় দশ মিনিট পরে শিক্ষা সাহিত্যের রুমে খাবার নিয়ে এসে দেখে সাহিত্য ল্যাপটপে কাজ করছে। শিক্ষা বিছানার পাশে রাখা ছোট টেবিলের উপর খাবার রেখে দরজার বাইরে পা রাখার আগেই সাহিত্য এসে শিক্ষা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে বললো, বাবা তোকে ভার্সিটি তে কি জন্য পাঠিয়েছে‌ শিক্ষা?”

-” ভার্সিটি তে মানুষ কেন যায়? নিশ্চয় পড়াশোনা করার জন্য যায়। আমি ও তার ব্যতিক্রম ন‌ই।”

-” হ্যাঁ পড়াশোনা করার জন্য পাঠিয়েছে।তার মানে এটা নয় যে পড়াশোনার নাম করে তুই ছেলেদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াবি, তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলবি। তাদের সামনে নিজেকে প্রদর্শন করবি।তুই তো দেখছি অনেক ফাস্ট।মাত্র দুই দিন ভার্সিটি তে গিয়েছিস এর‌ই মধ্যে বয়ফ্রেন্ড জুটিয়ে ফেলেছিস?দ্যাটস গ্ৰেট।”

-“শিক্ষা চিৎকার করে বললো মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ। সত্যি টা না জেনে আপনি আমার উপর মিথ্যা অভিযোগ করতে পারেন না সাহিত্য।”

-” চিৎকার করবি না শিক্ষা। কোনটা মিথ্যা বলছি আমি? আমি নিজে চোখে দেখেছি তুই একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিলি।তার সাথে হেসে হেসে কথা বলছিলি।”

-“আমার যা ইচ্ছা হয় তাই করবো। আপনার সমস্যা কোথায়?”

-” তোর ইচ্ছা মতো তুই চলতে পারবি না শিক্ষা।”

-” আমি আপনার কথা শুনতে বাধ্য ন‌ই। আমার মন যা বলবে আমি তাই করবো।”

-” অবশ্যই তুই বাধ্য।বিকজ আ’ম ইউর হাজব্যান্ড ।”

-” হা হা হা ।হাসালেন মিস্টার সাহিত্য শিকদার। হাজব্যান্ড অর্থ জানেন তো? শুধু মাত্র তিন কবুল আর একটা কাগজে নিজের নাম লিখে দিলেই স্বামী হ‌ওয়া যায় না। স্বামী হচ্ছে একটা বিশ্বাস ভরসার জায়গা। কিন্তু আপনি কি করলেন?আমাকে বিশ্বাস করা তো দূরের কথা আমাকে ক্রি’মি’না’ল খু’নি মনে করেন।কোনো অপরাধ না করেও আপনার চোখে আমি অপরাধী। প্রতিনিয়ত আমাকে অপরাধীর কাঠগড়ায় দাঁড় করান।আর এখন আসছেন স্বামীর অধিকার ফলাতে। লজ্জা হওয়া উচিত আপনার।”

-“হ্যাঁ আমি তোকে ক্রি’মি’না’ল খু’নি মনে করি। এর পিছনে যথেষ্ট কারণ আছে।তাই বলে আমি যে তোর স্বামী এইটা তো তুই অস্বীকার করতে পারিস না।”

-” হ্যাঁ হ্যাঁ আপনি আমার স্বামী।আজ থেকে তিন মাস বিশ দিন পঁয়তাল্লিশ মিনিট চব্বিশ সেকেন্ড আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সেই বিয়ে ছিলো শুধুমাত্র নামের বিয়ে।বিয়েতে না আপনি রাজি ছিলেন না আমি।বিয়েটা সম্পূর্ণ ঐ জাকিয়া বুড়ির প্ল্যান ছিলো।ঐ বুড়ি বিয়ের আগে বাংলা সিনেমার দাদীদের মতো এমন ভাব করলো যেন আ’জ’রা’ই’ল তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তার জান কবজ করে নিয়ে যাবে। আমাদের বিয়েটা দেখে সে শান্তি তে ম’র’তে চায়। কিন্তু যেই বিয়ে টা হলো তক্ষুনি বুড়ি আমার জীবন টা নষ্ট করে দিতে নিজে সুস্থ্য হয়ে গেল। তাছাড়া আপনি বাসর রাতে বলে দিয়েছিলেন ,এই সম্পর্কের কোনো মূল্যে নেই আপনার কাছে। আপনি সংসারের মায়ায় কখনো পড়তে চান না। সত্যি বলতে আমি নিজেও হাঁফিয়ে উঠেছি। আমি আর এই মিথ্যে সম্পর্ক বয়ে বেড়াতে পারছি না।আই জাস্ট কান্ট টেক ইট এনি মোর। আমি মুক্তি চাই এই মিথ্যে সম্পর্ক থেকে ।”

-” সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার গাল চেপে ধরে বললো, মুক্তি পাওয়ার এতো তাড়া কিসের? ওহ্ বুঝতে পেরেছি ভার্সিটি গিয়ে নতুন নতুন ছোঁয়া পেয়েছিস তাই তো এই সম্পর্ক থেকে মুক্তি পেতে চায়ছিস? তবে তুই ও কান খুলে শুনে রাখ আমি তোকে মুক্তি দিবো না। বিষ যখন পান করেছিস গলা তো জ্বলবেয়। এভাবেই জ্বলে পুড়ে ছারখার হতে থাকবি তুই।আমি বেঁচে থাকতে আমার থেকে মুক্তি পাবি না তুই। আমি কখনো মুক্তি দিবো না তোকে।মাইন্ড ইট।”

-“শিক্ষা তৎক্ষণাৎ সাহিত্যে কে কিক মে’রে নিচে ফেলে সাহিত্যের বুকের উপর চড়ে তার গলায় ছু’রি ধরে বললো,বিষ তো শুধু আমি একা পান করি নি, তুই ও করেছিস।তাই হিসাবমতে জ্বলতেও দুজনকেই হবে। তুই খুব ভালো করে জানিস মুখের সাথে সাথে সাথে আমার হাত ও খুব ভালো চলে। তুই আমাকে আঘাত করবি,আর আমি মুখ বুজে সহ্য করবো? নেভার।আমাকে করা প্রত্যেক টা আঘাত তোকে আমি ফিরিয়ে দিবো।একটু আগে তুই কি জানি বললি? ও হ্যাঁ তুই বেঁচে থাকতে আমি তোর থেকে কখনো মুক্তি পাবো না তাই তো? তাহলে এক্ষুনি ম’রা’র জন্য প্রস্তুত হ। আমি এখন এই মুহূর্তে তোর থেকে মুক্তি চাই।”

-“সাহিত্য কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো ,কি চায়ছিস তুই?”

-” তোর র’ক্ত দিয়ে গোসল করতে। তবেই আমার শান্তি মিলবে।”

-“কে তুই?”

-“তোর মৃ’ত্যুদূত অফিসার, তোর মৃ’ত্যুদূত বলে সাহিত্যের গলা বরাবর ছু’রি চালিয়ে দিলো শিক্ষা। মূহুর্তের মধ্যে তাজা র’ক্তে রঞ্জিত হলো সাদা সাদা টাইলস।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৬

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” বুকের উপর ভারী কিছু অনুভব করার সাথে সাথে ঘুম ভেঙ্গে গেল সাহিত্যের। সাহিত্য দেখলো শিক্ষা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে বিড়াল ছানার মতো তার বুকে লেপ্টে রয়েছে। তৎক্ষণাৎ সাহিত্যের মনে পড়ে যায় রাতে দেখা স্বপ্নের কথা। সাহিত্য কোনো কিছু না ভেবে নিজের বুকের উপর থেকে শিক্ষা কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়। আকস্মিক ঘটনায় হতবাক হয়ে যায় শিক্ষা। ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে ছিটকে পড়ে। ফলস্বরূপ খাটের কোনায় মাথা লেগে বেশ খানিকটা কে’টে র’ক্ত বের হয়।যা দেখে সাহিত্যের মধ্যে কোনো অনুশোচনাবোধ জাগে না। উল্টো কর্কশ গলায় শিক্ষা কে বলে তুই একটা ক্রি’মি’না’ল ,খু’নি।তোর সাহস হলো কি করে আমার কাছে আসার? আমার সাথে এক‌ই বিছানায় আমার বুকে মাথা রেখে ঘুমোনোর?”

-” নিজের বিয়ে করা বরের কাছে এসেছি।কোনো পরপুরুষের কাছে তো যাই নি। আর নিজের বরের কাছে যেতে সাহসের কি আছে? তাছাড়া আজ প্রথম বার আমি আপনার কাছে আসি নি মিস্টার। বিয়ের পর থেকে আমি প্রায় প্রতিদিনই আপনার সাথে , আপনার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়েছি‌। কিন্তু আপনি সারাদিনের খাটুনিতে এতোটা ক্লান্ত থাকেন যে আপনি টের ও পান না আমি আপনার সাথে থাকি। আপনি ঘুমিয়ে যাওয়ার পর রোজ রাতে আমি আপনার কাছে আসি আর সকাল হবার আগেই আমার রুমে চলে যাই। ব্যাস আপনি কিচ্ছু টের ও পান না। কিন্তু আজ রাতে ঘুম হয় নি,তাই আমার ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেছে বিধায় আপনি জেনে গেলেন। কিন্তু সমস্যা নেই। বরং ভালোই হয়েছে। আপনার ও জানা উচিত আপনার ব‌উ আপনাকে ছাড়া ঘুমোতে পারে না।”( লেখিকা নূন মাহবুব )

-” দয়া করে তোর নাটক বন্ধ কর শিক্ষা।আমাকে মা’রা’র প্ল্যান করেছিস তুই তাই না?আমাকে মা’রা’র জন্য তোর এই নাটক সাজিয়েছিস?”

-” আশ্চর্য ! আমি আপনাকে মা’রতে যাবো কেন? বরং আমি আপনাকে বাঁচিয়েছি।না হলে এতোক্ষণে পটল ক্ষেতে গিয়ে পটল তুলতেন ।এজন্য আমাকে আপনার ভালোবেসে চুমা টুমা দেওয়া উচিত।”

-” আমাকে বাঁচিয়েছিস মানে কি বলতে চায়ছিস তুই?”

-” রাতে যখন আপনি বাড়ি ফিরলেন তখনি আপনাকে কেমন যেন বিধ্বস্ত লাগছিলো। আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো কাজের প্রেশারে এমন হয়েছে।দশ মিনিট বাদে আমি আপনার রুমে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখি আপনি চেঞ্জ না করে ঘুমিয়ে পড়েছেন। তৎক্ষণাৎ আপনার গায়ে হাত দিয়ে দেখি আপনার প্রচন্ড জ্বর। প্রচন্ড জ্বরে হুঁশে ছিলেন না আপনি।নিজে না ঘুমিয়ে সারারাত জেগে আপনার সেবা শুশ্রূষা করেছি। আপনার মাথায় জলপট্টি দিয়েছি, রাত বারোটার সময় স্যুপ করে খাইয়ে দিয়ে মেডিসিন দিয়ে যেই না একটু চোখ বুঁজেছি তখনই আপনার শিক্ষা শিক্ষা বলে চিৎকারের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে যাই।মনে হয় আপনি আমাকে নিয়ে কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছিলেন।হয়তো দেখেছিলেন আমি আপনাকে মে’রে দিয়েছি।তাই তো ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখা মাত্রই ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলেন। অবশ্য চাইলে আপনার করা প্রত্যেক টা আঘাত আমি আপনাকে ফিরিয়ে দিতে পারি। কিন্তু যেদিন তিন কবুল বলে আপনাকে বিয়ে করছি , সেদিন থেকেই আপনাকে মনে প্রাণে স্বামী বলে মেনে নিয়েছি। আমার #মনের_উঠোন_জুড়ে আপনার ছবি এঁকেছি।ভালো নাই বা বাসেন অন্তত পক্ষে যোগ্য সম্মান টুকু তো দিতে পারেন।”

-” মানে?”

-” মানে টা আমি বলছি ভাইয়া। শিক্ষা তোমার জীবনসঙ্গী, তোমার অর্ধাঙ্গিনী । এবার অন্তত শিক্ষা কে সন্দেহ করা বন্ধ করো। তুমি একবার ভেবে দেখো তো যে মানুষ টা নিজের জীবনের পরোয়া না করে অন্যের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে,সে কিভাবে একজন ক্রি’মি’না’ল,খু’নি হতে পারে? তাছাড়া শিক্ষার বিরুদ্ধে তোমার কাছে কোনো প্রমাণ নেই।যার জন্য তুমি শিক্ষা কে ক্রি’মি’না’ল,খু’নি বলতে পারো। তুমি একটা আইনের লোক হয়ে নিজে আইন ভঙ্গ করেছো।ব‌উয়ের গায়ে হাত তুলেছো তুমি। তুমি আসলে…

-” শিক্ষা আবৃত্তি কে থামিয়ে দিয়ে বললো, থাক না আপু।কথায় কথা বাড়ে।কি দরকার শুধু শুধু কথা বাড়ানোর? তুমি নিচে চলো তো।আজ আমি ব্রেকফাস্ট তৈরি করবো।আর তুমি আমাকে হেল্প করবে।কি করবে তো?”

-” অবশ্যই ‌। আমার দশ টা না পাঁচ টা একটা মাত্র কিউট ভাবী বলছে। আমি না করে থাকতে পারি বল?”

-” ঠিক আছে চলো। শিক্ষা আবৃত্তি দুজনে মিলে ব্রেকফাস্ট রেডি করেছে। শিক্ষা খাবার ডাইনিং টেবিলে রেখে সাহিত্য কে ডাকার জন্য তার রুমে এসে দেখে সাহিত্য রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়েছে।যা দেখে শিক্ষা কর্কশ গলায় বললো, ব্রেকফাস্ট না করে কোথায় যাচ্ছেন?”

-” এসিপি স্যার জরুরি তলব করেছেন। এক্ষুনি যেতে হবে।”

-” অল্প কিছু মুখে দিয়ে যান। আমি কষ্ট করে আপনার কথা ভেবে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট রেডি করেছি।”

-“আমার কথা ভাবতে তোকে কে বলেছে?।তোর ভাবার জন্য অনেক মানুষ রয়েছে। তাদের কে নিয়ে ভাব।আমাকে নিয়ে তোর না ভাবলে ও চলবে। আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো।”

-” সাহিত্যের যাওয়ার পানে তাকিয়ে শিক্ষা বললো, সাহেবের আবার হলো টা কি? আমি আবার কাকে নিয়ে ভাবলাম? এমন ভাব করছে যেন আমার আরো দশটা বর রয়েছে।আমি তাদেরকে নিয়ে ভেবেছি। আজব ক্যারেক্টার!”

__________________________________

-” দেখো সাহিত্য আমরা অনেক চেষ্টা করে ও খু’নি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছি না। কিন্তু আমাদের এইভাবে লেজ গুটিয়ে বসে থাকলে খু’নে’র সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। উপরমহল থেকে বার বার ওয়ানিং আসছে।এই খু’নি অনেক চালাক চতুর।তাকে ধরতে হলে আমাদের অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে।প্রথমত খু’নি কে আমাদের থামাতে হবে।আর খু’নি কে থামানোর জন্য আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।”

-” কি আইডিয়া স্যার?”

-” আমরা এই খু’নে’র পেছনে মূলত দুটো উদ্দেশ্য খুঁজে পেয়েছি।প্রথমত কেউ এসিপি স্যারের মেয়ে উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়ছে। উষ্ণতা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য এই খু’ন গুলো করছে।আর দ্বিতীয়ত উষ্ণতা নিজে এই খু’ন গুলো করছে তার বাবা মায়ের মৃ’ত্যু’র প্রতিশোধ নিতে। এখন প্রথমে আমরা প্রথম স্টেপ ফলো করবো। অর্থাৎ খু’নি যদি উষ্ণতা কে মা’র’তে চায়, তাহলে খু’নি নিশ্চয় উষ্ণতা পর্যন্ত পৌঁছাতে চায়বে। এখন আমাদের প্রেস , মিডিয়া , সংবাদপত্রে ছড়িয়ে দিতে হবে যে দশ বছর আগে এসিপি রায়হান মীরের নিখোঁজ হওয়া মেয়ে উষ্ণতা মীরের সন্ধান পাওয়া গেছে।সে এখন সিআইডির হেফাজতে আছে। ব্যাস তাহলে খু’নি তার খু’ন করা বন্ধ করে উষ্ণতা কে পেতে চায়বে।আর আমরা খুব সহজেই খু’নি অব্দি পৌঁছে যেতে পারবো।”

-” হোয়াট অ্যান আইডিয়া স্যার? কিন্তু স্যার একটা সমস্যা আছে?”

-” কি?”

-” মিডিয়ার লোকেরা যদি এসিপি স্যারের মেয়েকে দেখতে চায় , তখন আমরা কি করবো?”

-” আমি যতটুকু জেনেছি এসিপির মনে সন্দেহ ছিলো কেউ তার মেয়েকে মে’রে ফেলতে চায়। সেজন্য এসিপি কখনো তার মেয়ে কে মিডিয়ার সামনে নিয়ে আসে নি। ইনফ্যাক্ট তার মেয়েকে নিজেদের কাছের লোক ছাড়া কেউ কখনো দেখেও নি।তাই আমরা যদি অন্য কাউকে উষ্ণতা সাজিয়ে মিডিয়ার সামনে দাঁড় করিয়ে দেই,কেউ তাতে কোনো সন্দেহ করবে না।”

-” কিন্তু স্যার এই কাজে মেয়েটার নিজের জীবনের রিস্ক থাকবে।”

-” হ্যাঁ আমি জানি সেটা। এজন্যই আমাদের এমন কাউকে প্রয়োজন যে নিজের প্রোটেক্ট নিজে করতে পারবে।”

-” এসিপি সাইফুজ্জামানের কথা শুনে নির্জন ফান করে বলে উঠলো, স্যার তাহলে আমাদের অফিসার নম্রতা মির্জা কে আমরা কিছুদিনের জন্য উষ্ণতা বানিয়ে দেই?”

-” নির্জনের কথায় নম্রতা বললো, না না স্যার। আমি এই ধরনের রিস্ক নিতে পারবো।কখন কে এসে আমাকে শুট করে দিবে আর আমি অকালে মা’রা যাবো। আমি বিনা কারণে এতো তাড়াতাড়ি ম’র’তে চাই না। আমি সাহিত্য স্যারের সাথে ম’র’তে চাই।”

-” নম্রতার কথা শুনে সাইফুজ্জামান রাগান্বিত হয়ে বললো, এই না হলে তুমি সিআইডি অফিসার? যে মৃ’ত্যু কে ভয় পায় তার সিআইডি অফিসার হবার কোনো যোগ্যতা নেই। তোমার বাবা একজন মন্ত্রী । টাকার কোনো অভাব নেই তোমার। আমার মনে হয় না সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য তোমার সিআইডি তে থাকা উচিত।”

-” সরি স্যার।আপনি ভুল ভাবছেন।আমি আসলে এইভাবে বলতে চাই নি। আপনি যা করতে বলবেন আমি তাই করবো। আমি এই কাজের জন্য প্রস্তুত আছি।”

-” তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি অলরেডি এই কাজের জন্য একটা মেয়ে কে ডেকেছি।যে আইনের কোনো লোক না হয়েও আমাদের অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছে।বাচ্চু বিল্লার মতো একজন অপরাধী কে ধরতে সহযোগিতা করছে।”

-” আপনি কার কথা বলছেন স্যার?”

-” মেয়েটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ইন্সপেক্টর নিতুর মাধ্যমে মেয়েটার খোঁজ পেয়েছি আমি।মেয়াটার সাহসিকতার অনেক গল্প শুনেছি। হয়তো আগামীকাল বাস্তবে দেখতে পারবো।”

-“এর‌ই মধ্যে সাহিত্য বলে উঠলো , স্যার আমি বুঝতে পেরেছি আপনি কোন মেয়ের কথা বলছেন। মেয়েটা সত্যিই আমাদের অনেক উপকার করেছে।ও আগামীকাল আমাদের এইখানে আসলে আমি অবশ্যই তাকে স্পেশাল ভাবে থ্যাংকস জানাবো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here