মনের উঠোন জুড়ে পর্ব -১৯+২০

#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_১৯

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” আই লাভ ইউ নির্জন ভাই। আপনি কেন বুঝেন না আমি আপনাকে কতোটা ভালোবাসি? আপনাকে ঠিক কতোটা নিজের করে চাই? শিক্ষার মধ্যে কি এমন আছে যা আমার মধ্যে নেই?আই রিয়েলি লাভ ইউ বলে আবৃত্তি নিজের ফোনে থাকা নির্জনের একটা ছবি বুকের মাঝে কিছুক্ষণের জন্য চেপে রেখে বললো,মনে হচ্ছে আপনি বাস্তবে আমার সাথে রয়েছেন।আপনাকে হয়তো সামনাসামনি এই কথাগুলো বলার সাহস কখনোই আমার হবে না।তাই তো রোজ রাতে আপনার ছবির সাথে আমি কথা বলি।ছবির সাথে কথা বলেই যেন আমি সুখ খুঁজে পাই। কিন্তু আপনি যে অন্য কারো মাঝে সুখ খুঁজতে ব্যস্ত থাকেন নির্জন ভাই।যা অন্যায়। শিক্ষা বিবাহিত।আর এই সত্যিটা আমি খুব শীঘ্রই আপনার সামনে নিয়ে আসবো।আপনার আর আমার মাঝে একটাই দেয়াল রয়েছে ।সেটা হলো শিক্ষা। কিন্তু একবার যদি ভাইয়া আর শিক্ষার মধ্যে মাখোমাখো প্রেম টা জাগিয়ে দিতে পারি ,তাহলে আমার রাস্তা ক্লিয়ার হয়ে যাবে।তখন আমার আর নির্জনের মাঝে কোনো বাধা থাকবে না। নির্জন ভাই আপনি শুধু আমার হবেন , একান্তই আমার। কিন্তু ওরা দুজন একজন তেল আর একজন পানি।তেল আর পানি কখনো এক হয় না এইটা আমি খুব ভালো করে জানি। কিন্তু যেভাবে হয় হোক ওদের দুজনকে আমার এক করতেই হবে। কিন্তু কিভাবে আমি এই তেল আর পানি কে এক করবো? উফ্ কিছু বুঝতে পারছি না বলে আবৃত্তি মাথা ধরে বিছানায় বসে পড়ে। তৎক্ষণাৎ আবৃত্তির ফোন বাজছে শুরু করে। ফোনের স্ক্রিনে বর্ণ নামটা জ্বলজ্বল করতে দেখে আবৃত্তি মুচকি হেসে বলে, ইয়েস আইডিয়া পেয়েছি।এই বর্ণ মির্জা আমাকে সাহায্য করবে তেল আর পানি কে এক করতে । আবৃত্তি ফোন রিসিভ করে বলে, আই নিড ইউর হেল্প বর্ণ।প্লিজ হেল্প মি।”

-” এইভাবে বলছো কেন আবৃত্তি? তোমার জন্য আমি নিজের জীবন টাও বিলিয়ে দিতে পারি। সেইখানে সামান্য সাহায্য করতে পারবো না এইটা তুমি ভাবলে কি করে? বলো না হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?”

__________________________________

-” রাতে সাহিত্য বাড়ি ফিরে কোথাও শিক্ষা কে দেখতে না পেয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে কাজ করছে এমন সময় আবৃত্তি খাবার নিয়ে সাহিত্যের রুমে আসে। আবৃত্তি কে দেখে সাহিত্য বললো, তুই খাবার এনেছিস কেন? শিক্ষা কোথায়?”

-” শিক্ষা দাদুর রুমে। দাদু আজ আবার বাথরুমে পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। শিক্ষা তেল গরম করে মালিশ করে দিতে গিয়েছে। তুমি কি এতো কাজ করো বলো তো? সারাদিন অফিসে পড়ে থাকো। আবার রাতে ফিরে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ো। শুধু কাজ কাজ করে বেড়ালে হবে? নিজের শরীর, নিজের আপনজনের ও খেয়াল রাখতে হবে। খাবার ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও।”

-” তুই টেবিলের উপর রেখে যা।আমি খেয়ে নিবো।”

-” আবৃত্তি খাবার টেবিলের উপর রেখে না গিয়ে ঠাঁয় সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলো।যা দেখে সাহিত্য বললো,কি ব্যাপার? যাচ্ছিস না কেন? তোকে তো বললাম আমি পরে খেয়ে নিবো।”

-” একচুয়ালি ভাইয়া তোমাকে কিছু বলার ছিলো।”

-” আমার কান খোলা আছে। তুই বলতে থাক।”

-” আমার ফ্রেন্ড বর্ণ কে কি তুমি চিনো? ঐ যে মন্ত্রীর ছেলে।ওর বোন নম্রতা তোমার সাথে কাজ করে।”

-” হ্যাঁ চিনি তো। কিন্তু কি হয়েছে?”

-” বর্ণ শিক্ষা কে পছন্দ করে। ইনফ্যাক্ট ভালোবাসে। শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়। তুমি তো আর শিক্ষা কে ভালোবাসো না।তাকে স্ত্রীর মর্যাদা ও দাও না। তুমি হয়তো শিক্ষা কে কিছুদিন পরে ডির্ভোস ও দিয়ে দিবে। তখন মেয়েটার কি হবে একবার ও ভেবে দেখেছো?বর্ণ শিক্ষার ব্যাপারে সবকিছু জানার পরেও শিক্ষা কে বিয়ে করতে চায়ছে।আমি ভাবলাম বিষয় টা তোমাকে জানানোর দরকার তাই বললাম।বর্ণ সত্যি অনেক ভালো ছেলে। পার্সোনাল ভাবে বর্ণ কে আমারো ভালো লাগে।”

-” তোর যখন এতোটা ভালো লাগে নিজে বিয়ে কর না। অন্যের ব‌উকে কেন এসবের মধ্যে টেনে আনছিস?পুরান পাগলের ভাত নেই, আবার নতুন পাগলের আমদানি ‌হয়েছে।”

-” কি বললে তুমি? অন্যের ব‌উ মানে? তুমি শিক্ষা কে নিজের ব‌উ বলে স্বীকার করছো ভাইয়া?”

-” মানে আমি বলতে চাইছি যেভাবেই হোক শিক্ষার সাথে আমার বিয়ে টা হয়েছে।এটা তো আমি অস্বীকার করছি না।তাকে ব‌উ বলে মানলে ও সে আমার স্ত্রী আর না মানলেও সে আমার স্ত্রী।আর র‌ইলো ডির্ভোসের কথা। তুই খুব ভালো করে জানিস আমাদের বংশে দ্বিতীয় বিয়ে করার কোনো নিয়ম নেই।তাই শিক্ষা কে ডিভোর্স দেওয়ার কোনো প্রশ্নেই আসে না।তবে শিক্ষা যদি না থাকতে চায় , আমি কখনো ওকে জোর করবো না।কারণ জোর করে আর যাই হোক ভালোবাসা,সংসার এসব কিছু হয় না। আমার মনে হয় শিক্ষা আমার সাথে থাকতে চায় না।তাই তো বর্ণ বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসার সাহস পেয়েছে।”

-” আবৃত্তি জিভ কে’টে বললো ,হায় আল্লাহ! এসেছিলাম তেল আর পানি কে এক করতে এখন দেখছি আমার জন্যই তাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হচ্ছে। আবৃত্তি আমতা আমতা করে বললো, শিক্ষা ভালো মেয়ে ভাইয়া। তুমি বরং শিক্ষার সাথে একবার কথা বলে সব ঠিকঠাক করে নাও।”

-” আমি শিক্ষার সাথে অনেক অন্যায় করেছি‌।ওর কাছে যাওয়ার কোনো মুখ নেই আমার। তবু ও আজ আমি শিক্ষা কে সরি বলতে চেয়েছিলাম । কিন্তু শিক্ষা ইগো দেখিয়ে নিজে না এসে তোকে পাঠিয়েছে।সব বুঝি আমি। দিন দিন আমার বয়স বাড়ছে, ভুঁড়ি বাড়ছে।তাই তো এখন আর আমাকে ওর ভালো লাগে না।সে এখন নতুন নতুন ভার্সিটি তে গিয়েছে নতুন নতুন ছেলেদের দেখা পেয়েছে, তাদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে, হাসি ঠাট্টা করছে। এখন আবার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব ও আসছে। ঠিক আছে আমি ও ওকে সরি বলবো না। আমি চাই শিক্ষা নিজে থেকে আমার কাছে আসুক।”

-” আবৃত্তি মনে মনে বললো, আমার মনে হয় না শিক্ষা কখনো নিজে থেকে তোমার কাছে আসবে। শিক্ষা কে তুমি কম অপমান অবহেলা করো নি। ভালোবাসার মানুষের দেওয়া অবহেলা কতো যন্ত্রণাদায়ক এটা তুই হাড়ে হাড়ে টের পাবে ভাইয়া।আর এভাবেই তোমাদের দুজনের ইগোর কাছে চাপা পড়ে যাবে তোমাদের ভালোবাসা।আমাকে তুমি ক্ষমা করে দিও। আমি পারলাম না তোমাদের এক করতে।”

__________________________________

-” শিক্ষা ভেবেছিলো সাহিত্য হয়তো তার সত্যি টা জানার পর তাকে সরি বলবে।তার সাথে করা অন্যায়ের জন্য ক্ষমা চায়বে ।এই আশায় শিক্ষা সাহিত্যের অফিসে ইচ্ছা করে একথা সেকথা বলে লেট করছিলো।যদি একবার সাহিত্য এসে সরি বলে। কিন্তু শিক্ষা যখন দেখলো সাহিত্য কিছু বলছে না ,তখন শিক্ষা আকাশ সমান অভিমান নিয়ে অফিস থেকে চলে আসে।বাড়ি ফিরে নিজের মনকে শান্তনা দিয়ে বলে, তুই শুধু শুধু মন খারাপ করছিস শিক্ষা।তখন সরি বলে নি তো কি হয়েছে? দেখবি তোকে ফোন করে ঠিকই সরি বলবে। কিন্তু না। শিক্ষার ধারণা মিথ্যা প্রমাণ করে দুপুর গড়িয়ে বিকাল , বিকাল গড়িয়ে রাত এসে যায়। কিন্তু সাহিত্যের ফোন আসে না।এতে শিক্ষার অভিমানের পাল্লা আরো ভারী হয়ে ওঠে। শিক্ষা ঠিক করে সে আর সাহিত্যের রুমে লুকিয়ে লুকিয়ে ঘুমোতে যাবে না। শিক্ষা জাকিয়া জেসমিনের পায়ে তেল মালিশ করে দিয়ে তার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়ে।যা দেখে জাকিয়া জেসমিন বলে ,কিরে সতীন এইখানে শুয়ে পড়লি ক্যান? আমার পায়ের ব্যথা এখন কমে গেছে। আমি একা একা পারবো সবটা সামলে নিতে। তুই দাদুভাইয়ের কাছে যা।”

-” না দাদী। আমি আর তার কাছে যাবো না।মেয়ে হয়ে আর কতো বেহায়া হবো বলো তো? অনেক বেহায়া হয়েছি ,আর না।মেয়ে বলে কি ফেলনা হয়ে গিয়েছি নাকি? এখন সে নিজে থেকে আমাকে না চায়লে আমি ও তাকে চাইবো না ব্যাস।”

-” বুঝেছি আদর সোহাগে কম পড়ছে বুঝি?”

-” তুমি বুড়ি চুপ থাকো। তোমার জন্য এতো বেহায়া হয়েছি আমি। এখন কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করো না তো।নিজে ঘুমাও আর আমাকে ও ঘুমোতে দাও বলে শিক্ষা সাহিত্যের একটা শার্ট বুকের মাঝে চেপে ধরে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমালো।

চলবে ইনশাআল্লাহ।।#মনের_উঠোন_জুড়ে

#পর্ব_২০

#লেখনীতে_নূন_মাহবুব

-” ব্রেকিং নিউজ। আজকে সকালের টাটকা খবর।আজ থেকে দশ বছর আগে এসিপি রায়হান মীর সিআইডি ডিপার্টমেন্টের একজন নামকরা মুখ ছিলো।যে তার জ্ঞান বুদ্ধি বিচক্ষণতা দিয়ে শত্রুদের সাথে লড়েছে।যার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস ক্রি’মি’নালদের ছিলো না। কিন্তু হঠাৎ করে সে এবং তার পরিবার নিখোঁজ হয়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করে ও তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায় নি। তারা নিখোঁজ হওয়ায় দশ বছর পরে এসে এসিপি রায়হান মীরের মেয়ে উষ্ণতা মীরের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।সে এখন সিনিয়র সিআইডি অফিসার সাহিত্য শিকদারের বাড়িতে অবস্থান করছে।তাকে হয়তো অনেকেই চিনতে পারবেন।সে এতো দিন সাহিত্য শিকদারের কাজিনের পরিচয়ে ছিলো। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা শুধু মাত্র এসিপি স্যারের মেয়ের খোঁজ পেয়েছি। এসিপি আর তার ওয়াইফের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।জানি না আদৌ তারা বেঁচে আছে কিনা? অন্ধকার রুমের মধ্যে এটুকু নিউজ দেখে কেউ একজন রিমোট দিয়ে টিভি অফ করে দিয়ে বললো, ওদের খোঁজ পাবি কিভাবে বোকা জনগণ? এসিপি আর তার প্রেয়ারের ব‌উ যে আমার হাতে বন্দী।হা হা হা। আমি এতো দিন চাইলে ঐ‌ দুই টা মে’রে দিতে পারতাম। কিন্তু আমি মা’রি নি। আমি তাদের কে তিলে তিলে মা’র’বো। আমার সাথে করা প্রত্যেক টা অন্যায়ের শাস্তি দিবো ওদের কে।এই পাবলিক আমার কাজ টা আরো সহজ করে দিলো। আমার যা জানার আমি জেনে গিয়েছি।এই দিনটার জন্য আমি আজ দশ টা বছর অপেক্ষা করে ছিলাম। শুধু মাত্র এসিপির মেয়ের নাগাল পাওয়ার জন্য কতোগুলো নিষ্পাপ মেয়েদের প্রাণ নিয়েছি।এর জন্য আমি তোকে কঠিন থেকে কঠিনতর মৃ’ত্যু দিবো উষ্ণতা।এবারে তোকে একটু ভিন্ন স্টাইলে মা’র’বো। এর আগে প্রত্যেক টা মেয়ে কে মা’রা’র সময় তাদের কে আমি অজ্ঞান করে নিয়েছি।তোর ভয় নেই উষ্ণতা।আমি তোকে অজ্ঞান করবো না।তোকে সজ্ঞানে মা’র’বো আমি।তোর মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করা লাইভে দেখবে তোর বাবা মা। আজকে তোর কলিজা খেয়ে আমার কলিজা শান্ত করবো।তোর গোশত দিয়ে বিরিয়ানি রান্না করে খাবো। আর তোর র’ক্ত দিয়ে আমি গোসল করবো।আজকের রাত হবে তোর শেষ রাত। মৃ’ত্যু’র জন্য প্রস্তুত হ উষ্ণতা।তোর শুভাকাঙ্ক্ষী আসছে বলে পৌশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো কোনো এক অজানা ব্যক্তি।”

___________________________________

-” গতকাল থেকে শিক্ষা সাহিত্য দুজন দুজনকে ইগনোর করে চলেছে। যেন কেউ কাউকে চিনে না। ব্যাপার টা অন্তরা শিকদার গতরাত থেকে নোটিশ করেছেন। শিক্ষা কখনো রাতে সবার সাথে বসে ডিনার করে না। সাহিত্য অফিস থেকে ফিরলে সাহিত্যের খাওয়া শেষ হলে নিজে খায়। কিন্তু গতরাতে শিক্ষা কে ডাইনিং টেবিলে দেখে অন্তরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁ রে শিক্ষা তোর কি আজ খুব ক্ষুধা পেয়েছে? তুই তো সাহিত্য না ফেরা পর্যন্ত খাস না। হঠাৎ আজ আবার কি হলো?”

-” তেমন কিছু না বড় আম্মু।ঐ আমার একটু শরীর খারাপ লাগছে।তাই ভাবলাম সাহিত্যের ফিরতে তো অনেক দেরি হবে । আমি বরং খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়ি। শিক্ষার কথার পিঠে আর কোনো কথা বাড়ায় না অন্তরা।অন্তরা ভেবেছিলো হয়তো সত্যি সত্যি শিক্ষার শরীর খারাপ। কিন্তু সকালে ও যখন ব্রেকফাস্ট করার সময় দুজন দুজনের দিকে ভুলেও একবারের জন্যে ও তাকিয়ে দেখে নি, তখন অন্তরার মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। মায়ের মন সবসময় চায় তার সন্তানেরা সুখে থাকুক। সন্তানের সুখের মধ্যে যেন নিজেদের সুখ খুঁজে পায়। অন্তরা ব্যাপার টা সাদ্দাম শিকদারের সাথে শেয়ার করে। তারা দুজন নিজেদের মধ্যে কথা বলছে,এমন সময় দেখে শিক্ষা ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে বেরিয়েছে।আর শিক্ষার পেছন পেছন সাহিত্য ও বেরিয়েছে অফিস যাওয়ার জন্য। সাহিত্য শিক্ষা দুজনে নিচে আসলে সাদ্দাম শিকদার সাহিত্যের উদ্দেশ্য বললো, তুমি তো অফিসে যাচ্ছো মনি কেও নিয়ে যাও। ভার্সিটির সামনে ওকে ড্রপ করে দিও।”

-” আ’ম সরি বাবা। আমি ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে পারবো না। তাছাড়া ও তো লুলা না যে একা যেতে পারবে না।যে মেয়ে ভার্সিটি গিয়ে ছেলেদের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে পারে,তার কাছে একা একা ভার্সিটি পর্যন্ত যাওয়া কোনো ব্যাপার না।”

-” তুমি কি সকালের নিউজ দেখো নি? সবজায়গাতে শিক্ষা ওরফে উষ্ণতার বেঁচে থাকার নিউজ ছড়িয়ে গিয়েছে। যেকোনো সময় মনির উপর অ্যাটাক হতে পারে।তোমরা নিজেদের কাজে ওকে ব্যবহার করছো অথচ তার সেফটি নিয়ে তোমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।”

-” হ্যাঁ শিক্ষার উপর অ্যাটাক হবে।তবে সেটা দিনে নয়,রাতে।খু’নি এই সময় টা তে প্ল্যান করবে কখন কি করতে হবে? তাছাড়া শিক্ষা নিজে নিজেকে খুব ভালো প্রটেক্ট করতে পারে।আমাকে ওর প্রয়োজন নেই।”

-” তুমি বড্ড বেশি কথা বলা শিখে গেছো সাহিত্য।আমি মনি কে নিয়ে যেতে বলেছি তুমি নিয়ে যাবে। ব্যাস আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না।”

-“সাহিত্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো, দুই মিনিটের মধ্যে গাড়িতে গিয়ে বস। অন্যথায় আমি তোর মাইনে করা চাকর না যে তোর জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবো।”

-” এ কেমন ব্যবহার সাহিত্য ? রাগান্বিত হয়ে বললো , সাদ্দাম শিকদার।”

-” আমি আবার কি করলাম?”

-” মনি তোমার বিবাহিত স্ত্রী।স্ত্রীর সাথে এ কেমন ব্যবহার? তোমার মায়ের সাথে কখনো তুই তুকারি করতে ,তার নাম ধরে ডাকতে দেখেছো আমাকে?”

-” সাদ্দামের শিকদারের কথায় সাহিত্য শিক্ষার কাছে এসে তার হাত দুটো নিজের মুঠোয় নিয়ে বললো, আমার মিষ্টি অঙ্গনা। তুমি কি নিজে হেঁটে যাবে,নাকি আমি কোলে করে নিয়ে যাবো?”

-“শিক্ষা কটমটে চোখে সাহিত্যের দিকে তাকিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে গাড়িতে গিয়ে পেছনের সিটে বসে পড়লো।যা দেখে সাহিত্য এসে বললো, আমার মিষ্টি অঙ্গনা! আমাকে কি তোমার মাইনে দেওয়া ড্রাইভার মনে হয়? আমার হাতে বেশি সময় নেই। তাড়াতাড়ি সামনে এসে বস নাহলে আমি কিন্তু তোকে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবো।”

-” শিক্ষা সামনের সিটে এসে বললো, ওমা!আপনি আমাকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিবেন ,আর আমি মনে হয় আপনাকে ধুয়ে পানি খাবো তাই না?আপনাকে ও আমি গাড়ির তলায় পিষে দিবো।”

-” তুই আসলে একটা ফাউল অ’স’ভ্য মহিলা। স্বামীর সাথে কিভাবে কথা বলতে সেটা ও জানিস না? স্বামী কে নিজে হাতে মা’র’তে চায়ছিস? তোর বাপে মনে হয় গরীব ছিলো।মধু কেনার মতো সামর্থ্য ছিলো না তার।তার জন্য জন্মের সময় তোর মুখে মধু দিতে পারে নি।যার ফলস্বরূপ তোর মুখ থেকে তেতো তেতো কথা বের হয়।”

-” আপনার বাপ তো অনেক বড়লোক।আপনার জন্মের সময় আপনাকে নিশ্চয় মধুর মধ্যে চুবিয়ে রেখেছিলো। তাহলে আপনার মুখ থেকে মধু কেন বের হয় না অফিসার?”

-” তোর মতো অ’স’ভ্য মহিলার সাথে কথা বলাটাই বেকার।”

-” তাহলে কথা বলেন না।চুপ করে থাকুন। ব্যাস প্রবলেম সলভ।”

-” আমাকে মাপ কর ব‌ইন। আমার ঐ খু’নি টা জন্য চিন্তা হচ্ছে।না জানি সে তোর মতো ডাকাত কে খু’ন করতে এসে নিজে না তোর সাথে খু’ন হয়ে যায়।”

-” আপনার যখন এতোটা দরদ লাগছে ছেড়ে দিন খু’নি কে।”

-” তাহলে উপরমহল আমাকে সিআইডি ছাড়া করবে।আর হ্যাঁ শোন! যেহেতু উষ্ণতার জীবিত থাকার খবর সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে।তাই তোর ইন্টারভিউ নিতে মিডিয়ার লোক আসতে পারে। তাদের সামনে একটু সাবধানে কথা বলবি।”

-” শিক্ষা ফোন টিপতে টিপতে বললো ঠিক আছে। শিক্ষা ফোনে এতোটা মগ্ন হয়ে ছিলো যে সাহিত্য ভার্সিটির সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে শিক্ষা কে কয়েকবার গাড়ি থেকে নামার কথা বলেছে। কিন্তু শিক্ষা শুনতে পায় নি।এক পর্যায়ে সাহিত্য রেগে গিয়ে শিক্ষার হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো, ভার্সিটি তে এসে গিয়েছি। তুই কি গাড়ি থেকে নেমে যাবি নাকি কোলে করে নামাতে হবে?”

-” আমি লুলা না যে আমাকে কোলে করে নামাতে হবে। আমার সাথে পা আছে আমি নিজেই নেমে যাচ্ছি বলে শিক্ষা গাড়ি থেকে নেমে ক্যাম্পাসের দিকে হাঁটা শুরু করলো।আর ঠিক তখনি কেউ একজন এসে শিক্ষা কে জড়িয়ে ধরলো।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here