#চিত্তদাহ
লেখনীতে : শুভ্রতা আনজুম শিখা
পর্ব ৩০
🍂🍂🍂
~আমি কাল সন্ধ্যায় দেশের বাহিরে যাচ্ছি শুভ্রতা।
~ফিরবেন কবে?
~জানি না। ২ থেকে ৩ মাস লাগবে হয়তো।
~এত সময়?
~আমাকে মিস করবে?
শুভ্রতা চুপ রইলো। এই প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। সে তো এখনও বুঝতে পারেনি তার মন কি চায়। চন্দ্র দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। শীতল কণ্ঠে শুধালো,
~আমি তোমাকে খুব মিস করবো শুভ্রতা।
~মাথায় একটু হাত রাখবেন চন্দ্র?
চন্দ্রের কাছে এই প্রথম নিঃসঙ্কোচ আবদার। চন্দ্র বেশ খুশি হলো। বিলম্ব না করে শুভ্রতার মাথায় হাত রাখতেই শুভ্রতা তার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো। চন্দ্র অবাক হলেও সরলো না। চোখ বন্ধ করে মুহুর্তটা অনুভব করলো। এই সময় যদি আর ফিরে না আসে? কে জানে ভাগ্য কখন কোন দিকে মোড় নেয়।
~বাবা, ভাইয়ের পরে আপনি একমাত্র পুরুষ যার কাধে আমি মাথা রাখলাম। আমার ভয় বা অস্বস্তি হচ্ছে না কেনো চন্দ্র? একে কি ভালোবাসা বলে?
সদ্য প্রেমে পড়া রমণী তার প্রেমিক পুরুষের কাধে মাথা রেখে বসে আছে। কি এক মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত। দুর থেকে অনেকেই ওদেরকে লক্ষ্য করছে তবে তাদের সেদিকে মন নেই। চন্দ্র বিস্ময়ে কেপে উঠলো। ঘুরে শুভ্রতার দিকে তাকাতে চাইলে শুভ্রতা বাঁধা দিলো।
~এভাবেই একটু বসুন না চন্দ্র, ভালো লাগছে।
প্রেয়সীর ইচ্ছা অমান্য করলো না চন্দ্র। চুপটি করে আগের ন্যায় বসে রইলো।
~আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই না চন্দ্র। বাবার প্রতি মায়ের অগাধ বিশ্বাস। সে এমন করলো। আপনিও যদি সময়ের সাথে সাথে এমন হয়ে যান? আপনি কি কথা দিতে পারবেন আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপনি এমনটাই থাকবেন? আপনার ভালোবাসা বিন্দু মাত্র কমবে না।
~তোমাকে ছুঁয়ে বলছি শুভ্রতা। আমার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমার মন, মস্তিষ্কে শুধু তোমার বিচরণ থাকবে। তুমি ছাড়া আমি শূন্য শুভ্রতা। তোমাকে ছাড়া আমার জীবন আমি ভাবতেও পারি না।
শুভ্রতার মাথার ওপর নিজের মাথা রাখলো চন্দ্র। শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে বসে রইলো দীর্ঘক্ষণ। চোখের কোণ গড়িয়ে পড়লো এক বিন্দু অশ্রুকণা। চন্দ্র অনুভব করতে পারছে তার প্রেয়সী কাদঁছে। একটু কাদুক। তার কান্না করাটা জরুরী। সামনে যা হতে চলেছে তার জন্য নিজেকে শক্ত রাখতে হবে যে।
~আমি ফিরে এলেই বাবা, মা, আম্মুর সাথে কথা বলে আমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করবে। তুমি শুধু আমার হয়েই থেকো শুভ্রতা। তুমি আমার জীবনে না থাকলে আমার জীবন শূন্য।
একটু থেমে চন্দ্র ফের বললো,
~আমাকে চাঁদের সাথে তুলনা করে দাদিজান আমার নাম রেখেছিল “চন্দ্র”। সবসময় বলতো আমার বউ হবে আমার চন্দ্রাবতী। যে হবে শুভ্রতায় ঘেরা। যেদিন তোমায় প্রথম দেখলাম! দাদিকে জানিয়েছিলাম আমি আমার চন্দ্রাবতী পেয়ে গেছি। সে শুধু শুভ্রতায় ঘেরা নয়, সে নিজেই শুভ্রতা। তুমি আমার না হলে এই চিত্তদাহ আমি সহ্য করতে পারবো না শুভ্রতা। আমার অস্তিত্বে প্রখর ভাবে মিশে গেছো তুমি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না।
শুভ্রতা নিবিড় ভাবে শুনছে চন্দ্রের কথা। মানুষটা কি সুন্দর নিজের ভালোবাসার কথা বলে যাচ্ছে। এদিকে সে ভালোবাসার জন্য একটা লাইনও বলতে জানে না। বলতে ইচ্ছাও করছে না। চন্দ্রের কথা তার কাছে বেশ ভালো লাগছে।
~শুভ্রতা?
~হু?
~আমার একটা ইচ্ছে পূরণ করবে? মানা করো না প্লীজ।
~কি ইচ্ছা?
~বিয়ের পর আম্মু আমাদের বাড়িতে থাকবে। তুমি, আমি, আম্মু, মা, বাবা, মাহতাব, তিলোত্তমা, রাত্রি সবাই এক সাথে থাকবো।
শুভ্রতা মাথা তুলে তাকালো। ঝাপসা চোখে দেখতে পেলো চন্দ্রের হাসি মাখা মুখ খানা। অস্ফুট স্বরে বলল,
~আর বাবা? সে থাকবে না?
চন্দ্রের হাসিটা মিলিয়ে গেলো। মানুষটা উমার জীবনে থাকে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। ওদের সাথে এক বাড়িতেই থাকবে তা বলে কিভাবে আশা দিবে সে? মিথ্যা আশা দেওয়ার পর যদি তা সম্ভব না হয়? শুভ্রতা প্রশ্নসূচক চাহনিতে চন্দ্রের দিকে স্থির। চন্দ্র তপ্ত শ্বাস ফেলে বললো,
~বাড়ি যাবে না শুভ্রতা? শাড়ি পড়ে সারাদিন ঘুরলে। ক্লান্ত লাগছে না?
শুভ্রতা চুপ রইলো। চন্দ্র উঠে তার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো,
~তবে চলো।
শুভ্রতা মাথা নুয়ে আড়ালে তাচ্ছিল্য হাসলো। চন্দ্র যে তার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করেছে তা সে দিব্যি বুঝেছে। ইদানিং তো সে নিজেও এমন কাজ করে। মা যখন বলে “বাবার সাথে ইদানিং দেখা করিস না, কথা বলিস না। তোদের মধ্যে কি কিছু নিয়ে ঝগড়া হয়েছে?” তখন তো শুভ্রতাও বিভিন্নভাবে কথা ঘুরিয়ে ফেলে। প্রকৃতি যেনো তার কাজের ফল তাকে ফেরত দিলো।
________________________________
বিছানায় বসতেই ঘরে প্রবেশ করলো রেনু। শুভ্রতা আলতো হেসে তার হাত থেকে কফি মগ নিলো। রেনু পাশেই দাড়িয়ে হাসফাস করছে। কিছু বলার আছে শুভ্রতাকে তবে বলার সাহস হয়ে উঠছে না। শুভ্রতার দৃষ্টি গোচর হয় না রেনুর অস্থিরতা। মগটা এক পাশে রেখে জিজ্ঞেস করলো,
~কিছু বলবে রেনু আপা?
রেনু মাথা ঝাঁকালো। শুভ্রতা বসে রইলো তার বলার আশায়। তবে রেনু বলছে না। কিছুক্ষণ পার হওয়ার পর রেনু ডাকলো,
~আপামনি?
~হুঁ?
~আপনে খালাম্মা রে খালুর কথা কবে কইবেন?
শুভ্রতা কপালে ভাঁজ ফেলে তাকালো তার দিকে।
~হটাৎ এমন প্রশ্নের কারণ?
~খালাম্মা আজকে খালুর লাইগা উপহার আনছে। কিযে খুশি লাগতাছিলো তারে। কিন্তু যারে নিয়ে এতো ভাবনা সে তো তারে নিয়া ভাবেই না।
~মা কোথায়?
~আপনের লাইগা ক্ষীর বানাইতাছে। অনেক খুশি সে আজকে।
শুভ্রতা দম ছাড়লো। খাটে গা এলিয়ে বললো,
~মা বাড়িতে থাকলে এইসব কথা তোমার না বললে হয় না? মা শুনলে কি এক পরিস্থিতি হবে জানো না?
~কিন্তু আপামনি!
~মায়ের কাছে যাও রেনু আপা। আমি এই ব্যাপারে কথা বলতে চাইছি না।
রেনু হতাশ হলো। তার করুন চাহনী শুভ্রতার মলিন মুখটাতে স্থির। শুভ্রতা চোখ বন্ধ করে ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। হয়তো চোখের পানি লুকাচ্ছে। কিন্তু কি লাভ? আর কয়েকমাস মাত্র। এরপর? সব শেষ….
___________________________________
২ মাস পর…
সময় কারো জন্য অপেক্ষা করে না। সে নিজের মতো বদলে যায় সাথে পাল্টায় কিছু মানুষকে। কেউ বা আগের জায়গায় মাটি শক্ত করে দাড়িয়ে থাকে। কেউ আবার নিজ ইচ্ছায় পাল্টানোর প্রয়াস চালায়। বিকেল হতেই বাড়ি ফিরে আসে শুভ্রতা। দরজায় রেনু দাড়িয়ে। ফিসফিস করে বললো,
~কি করবেন কইলেন না তো আপামনি? আমার কিছু করা লাগবে না?
শুভ্রতা বিরক্ত হয়ে তাকালো। এমনিই মন ভালো নেই তার। শান্ত কণ্ঠে বললো,
~তোমার কিছুই করতে হবে না। যা হবে নিজেই দেখতে পাবে। মা কোথায়?
~গেস্ট রুমে মামী আর নানি খালাম্মারে রেডী হইতে সাহায্য করতাছে।
~বাবা কোথায়?
~ওনার ঘরে। আপামনি, নুর আপারা আইবো না?
শুভ্রতা বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
~ওদের আসতে বলিনি।
রেনু অবাক হলো। শুভ্রতার সব থেকে কাছের ওর বন্ধুরা। এমন দিনে ওদেরই আসতে বললো না। বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখলো ক্লান্ত ভঙ্গিতে সোফায় বসে আছে মাহতাব আর অরণ্য। শুভ্রতাকে দেখতেই কিছুটা রাগ নিয়ে বললো,
~কোথায় গিয়েছিলি রে? সব কাজ আমার করা মানে আমাদের করা লাগলো।
~একটা জরুরী কাজে গিয়েছিলাম। এত কষ্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
অরণ্যের প্রত্যুত্তরের আর সময় দিলো না শুভ্রতা। কাধের ব্যাগ চেপে শুভ্রতা সোজা তার বাবা মায়ের ঘরে গেলো। যাওয়ার আগে একবার সারাবাড়িতে চোখ বুলালো। কাচা ফুল দিয়ে সাজিয়েছে পুরো বাড়ি। লাল, নীল, হলুদ বিভিন্ন রঙের গোলাপ দিয়ে। কি সুন্দর! একদম চোখ ধাঁধানো। তবে এইসব আজ আর শুভ্রতাকে মুগ্ধ করলো না। বুকটা ধকধক করছে তার। যা করছে ঠিক করছে কিনা আরেকবার ভাবতে ইচ্ছে করলেও মন আর সায় দিলো না। কোনো মতে পা টেনে বাবার রুমে গেলো।
~আসবো?
মেয়ের গলার আওয়াজ পেতেই উঠে বসলো আবসার। গলা খানা শুকিয়ে আসছে। অকারনেই আজ বেশ অস্থির লাগছে। গলা খাঁকারি দিয়ে জবাব দিলো,
~হ্যা, আয় না মা।
শুভ্রতা এলো। কোনো কথা না বাড়িয়েই ব্যাগ থেকে একটা কাগজ বের করে আবসারের দিকে এগিয়ে দিলো। আবসারের চোখে কিঞ্চিৎ চিন্তাভাব ফুটে এলো। শুভ্রতার দিকে চেয়ে দেখলো তার অভিব্যক্তি একদম স্বাভাবিক। আবসার কাপা কাপা হাতে কাগজটা নিলো। তাতে খুব বড় বড় অক্ষরে লেখা “ডিভোর্স পেপার”।
~এসব কি শুভ্রতা! ফাইজলামি হচ্ছে?
শুভ্রতা হকচকালো না। চেহারার ভঙ্গিতেও পরিবর্তন দেখা গেলো না। একদম শান্ত। বাবার চেহারার দিকে চেয়ে দম ছাড়লো। শক্ত মনটা আরো কাঠিন্য রূপ নিলো।
~ওই মহিলার আর আপনার ডিভোর্স পেপারে সাইন হয়নি। আপনি তাকে ছাড়বেনও না। তবে আপনি কি মনে করেন আমি আমার মা কে সতীনের ঘর করতে দিবো?
~তোমার কথায় আমি ইতিকে ডিভোর্স কেনো দেবো? সে আমার বউ।
~উমা আফরোজ আমার মা। তাকে আপনি জোর করে রাখতে পারবেন না।
~আচ্ছা? সে কি রাজি হবে আমাকে ডিভোর্স দিতে? তোমার কথাতেই সে আমাকে ডিভোর্স দিবে? এতোই সোজা? ২৫ বছরের সংসার আমাদের। এই সংসার ভাঙলে তোমার মা এমনিই মরে যাবে। পারবে তোমার মৃত মাকে দেখতে?
~আমি ডিভোর্স দিতে রাজি।
উমার কণ্ঠে শুভ্রতা আর আবসার দুজনেই আঁতকে উঠলো। চোখে মুখে ফুটে উঠলো ভয়। উমা এগিয়ে এলো ওদের কাছে। দরজার কাছে চিত্রা দাড়িয়ে। উমার হাতে সেই ফাইল যেটা মাহতাব শুভ্রতাকে দিয়েছিল। এই ফাইল তো সে আলমারিতে কাপড়ের ভাঁজে রেখেছিল। উমার হাতে এটা এলো কি করে! উমা অশ্রুসিক্ত চোখে মেয়ে আর স্বামীর কাছে এগিয়ে এলো। বুকের বাম পাশটায় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। তবে সে সেদিকে পাত্তা দিলো না। চোখের সামনে যে নিজের সাজানো গুছানো সংসার ভেঙে গেলো তার সামনে এই ব্যাথা নিতান্তই তুচ্ছ।
~মা…
উমা মেয়ের দিকে অভিমানী চোখে তাকাতেই শুভ্রতা চুপ হয়ে গেলো। আবসারের হাত থেকে ডিভোর্স পেপার নিয়ে তাতে একবার চোখ বুলালো। ঠোঁটে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্য হাসি। মেয়ের দিকে একবার চেয়ে বললো,
~চিত্রা রে, আমার মেয়ে যে চোখের পলকে এত বড় হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। সে আমার জন্য ডিভোর্স পেপার রেডী করিয়েছে। আমার পক্ষ নিয়ে দাড়াতে শিখেছে, সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে।
শুভ্রতা নিশ্চুপ। মাথা নুয়ে দাড়িয়ে রইলো আগের ন্যায়।
~দিনে দিনে মেয়েটার অধঃপতন হচ্ছে উমা। আমার সাথে তর্ক করছিলো। তোমার আর আমার ডিভোর্স পেপার রেডী…
কথার মাঝেই আবসারের গালে গায়ের সমস্ত জোর দিয়ে চর লাগালো উমা। আবসার ব্যথার থেকে বেশি অবাকই হলো। চিত্রার ঠোঁটে ফুটে উঠলো হাসির রেখা। মনে মনে খুশি হলো। তার বান্ধবি কলেজ জীবনের সেই চঞ্চল, তেজী রূপে ফিরে এসেছে। উমার দিকে চেয়ে আবসারের চোখে নেমে এলো ঘোর বিস্ময়। এত বছরের সংসার জীবনে কখনোই তার সামনে রাগ প্রকাশ করেনি উমা। যা বলেছে মাথা নুয়ে মেনে নিয়েছে। সংসারের শান্তি ছিল সবকিছুর উর্ধ্বে। কিন্তু আজ! এ যেনো এক হিংস্র বাঘিনীকে ঘুম থেকে জাগিয়েছে।
~তুমি আমার গালে!!!
~একদম চুপ! নয়তো আরো মারবো। ধোঁকা দিচ্ছিলেন আমাকে! আমি থাকতে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। ২৫ বছরের সংসারে যদি আপনি আমায় ধোঁকা দিতে পারেন তবে আমি তালাক দিতে পারবো না কেনো আবসার? শুভ্রতা কলম দে।
শুভ্রতা কাল বিলম্ব না করে ব্যাগ থেকে কলম বের করে দিলো। উমা কলমটা নিয়ে তৎক্ষণাৎ পেপারে সাইন করলো। এক মুহুর্ত লাগালো না। এত দ্রুতই সব কিছু হলো যে বাঁধা দেওয়ার সময়টুকুও পেলো না আবসার। সাইন করে কাগজ টা আবসারের হাতে ধরিয়ে বলল,
~গেট আউট অফ মাই হাউস এন্ড আওয়ার লাইফ।
আবসার পাথরের মত দাড়িয়েই রইলো। বিস্ময়ে তার চিন্তা শক্তি যেনো হারিয়ে গেছে। উমার রাগে হাত কাপছে। পারলে আরো কয়েকটা চর বসিয়ে দেয় আবসারের গালে। উমা আবসারের কলার চেপে টেনে ঘর থেকে বের হলো। সবাই ড্রয়িং রুমেই বসে ছিল। আবসারকে উমা এভাবে টেনে আনছে দেখে সবাই যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সবাই কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও কেউ কোনো জবাব দিচ্ছে না। উমাদের পেছন পেছন চিত্রা আর শুভ্রতাও এলো। আবসার একদম রোবট হয়ে গেছে যেনো। উমার সাথে সাথে নিশ্চুপ, অনুভূতি শূন্য হয়ে হেঁটে চলেছে। উমা সোজা সদর দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। ধাক্কা দিয়ে আবসারকে বাড়ির বাহিরে বের করতেই আবসার যেনো তার সম্বিৎ ফিরে পেলো। চোখে মুখে বিরাজ করছে চরম বিস্ময়। উমা দরজা লাগিয়ে দিতেই এক ফোঁটা অশ্রু আবসারের গাল বেয়ে পড়লো। অনুভব করলো, এবার বুঝতে পারলো সে জীবনে কি ভুলটাই না করেছে। এক বার হাতে থাকা ডিভোর্স পেপারের দিকে নজর বুলালো। এ যেনো তার সুখময় জীবনের সমাপ্তি নোটিশ।
_________________________________
উমার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে শুভ্রতা। ভেতরে যাওয়ার সাহস হচ্ছে না। তখনই ঘর থেকে বেরিয়ে এলো চিত্রা। শুভ্রতাকে নিয়ে ওর ঘরে গেলো। শুভ্রতা নিশ্চুপ। চিত্রাও তাই। মৌনতা ভেঙে চিত্রা বললো,
~কলেজ জীবনে উমা ছিল তোর মতই চঞ্চল, রাগী, জেদি। যা মনে আসতো, যা ঠিক মনে হতো তাই করে বসতো। এর পরিণাম কি হবে তার পরোয়া করতো না। যা হবে দেখা যাবে মনোভাব ছিল। তোর বাবার সাথে উমার বিয়ে হওয়ার পর দেখলাম তার পরিবর্তন। সে সব মুখ বুজে সহ্য করতে শুরু করলো। আবসার যা বলতো তাই। এতটাই ভালোবাসতো তোর বাবাকে যে তার মনে হতো যদি সে ভুল করে তবে আবসার না চলে যায়। মাঝে পরিস্থিতির চাপে আমাদের দেখা হয়নি বহু বছর। এত বছর পরেও দেখলাম তোর মা সম্পর্ক বাঁচানোর জন্য জড়োসড়ো হয়ে থাকে। সেই চঞ্চল মেয়েটা যেনো কোথাও হারিয়ে গেছে। কিন্তু এই চঞ্চলতা আমি তোর মধ্যে দেখেছি। তুই ঠিক সেই ছোট উমার মত।
~আম্মু আমার প্রতি রাগ করেছে তাই না?
~না, তোর এই কাজে সে খুশি। তুই ঠিক পদক্ষেপ নিয়েছিস শুভ্রতা। তবে একটা ভুল করেছিস। তোর ওকে আগে জানানো উচিত ছিল। সে তোর প্রতি অভিমান করেছে। তবে ডিভোর্স হওয়ায় সে ভেঙে গেছে। এটা স্বাভাবিক। সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে।
শুভ্রতা দরজার দিকে পা বাড়ালো।
~কোথায় যাচ্ছিস?
~আম্মু অভিমান করে থাকলে দম বন্ধ লাগে।
বলেই চলে এলো শুভ্রতা। মিশ্র এক অনুভূতি হচ্ছে তার। মা বাবার ডিভোর্সটা যেনো চোখের পলকেই হয়ে গেলো। সে তো ভেবেছিলো আবসার তাদের হারানোর ভয়ে ইতিকে ডিভোর্স দিবে। কিন্তু যে নিজ মর্জিতে দূরে যায় তাকে কি আর নিজের কাছে বেধে রাখা যায়?
~~~
চলবে~
(কি মনে হয়? শুভ্রতা কি ঠিক করেছে? নাকি মায়ের থেকে লুকিয়ে, বাবার পক্ষ নিয়ে তার সারাজীবন চুপ করে থাকা উচিত ছিল? অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। হ্যাপি রিডিং~)