#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৩
.
.
কবুল শব্দটি শুনে তানহা নিস্তব্ধ হয়ে গেল। এই শব্দটি ঘিরে যে সে হাজারো স্বপ্ন বুনেছিল তিহানকে ঘিরে। আজ সেই সব স্বপ্ন মিথ্যে। মিথ্যে সব প্রতিশ্রুতি। যা সে তিহানকে দিয়েছিল। কথাগুলো ভেবেই চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো তানহার। চোখের জল মুছে চোখ দুটো বুজে এক নিঃশ্বাসে বলল তানহা, ” কবুল। কবুল। কবুল। ” পাশে থাকা সকলেই অবাক হয়ে গেল! সেই সাথে খুশিও। তাই তারা অবাককে প্রাধান্য না দিয়ে খুশিটাকে বরণ করে তানহাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর একে একে সবাই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।
এদিকে সবাই যেতে তানহা এক বড় নিঃশ্বাস ফেলল। যাকে এক কথায় বলা যায় দীর্ঘশ্বাস। দু’হাত দিয়ে মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো তানহা। তানহার এই করুণ দশা দেখে চারু ও কেঁদে দিল। ঘরের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে তানহার মাথায় হাত রাখতেই তানহা ঝাঁপিয়ে পড়ে চারুর বুকে। চারুও তানহাকে বুকে আগলে ধরল। মাথার উপর ভরসার হাত পেয়ে তানহা যেন আরও পাগল হয়ে গেল। মুখ চেপে বলতে লাগলো,
” শেষ চারু। সবকিছুই শেষ। আমি যে নিজের হাতে সবকিছু শেষ করে দিয়েছি। নিজের বাবা-মা’র কথা ভেবে নিজের ভালোবাসার সাথে যে প্রতারণা করে ফেললাম আমি। আমার… আমার তিহান! তিহানের কী হবে চারু? ও যে…ও যে জানে না আজই আমার বিয়ে হয়ে যাবে। ও যে আজ বাড়ি যাবে জোর করে হলেও বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসতে। তাও আবার আমার বিয়ের আগে। ও যে জানে আমার বিয়ে আরও দিন দশেক পর। এর মাঝেই আমায় নিজের করে নেয়ার জন্য এক বুক আশা বেঁধে যে যাচ্ছে নিজ পরিবারের কাছে। যখন সবাইকে রাজি করিয়ে নিয়ে আসবে কিন্তু..কিন্তু আমায় পাবে না তখন কি হবে? তিহান তো মরেই যাবে। ওকে যে বাঁচানো যাবে না চারু। বাঁচানো যাবে না। ”
“সবকিছুর সমাপ্তি তো ঘটিয়েই ফেলেছিস। তবে এখন কেন ভাবছিস? আজ থেকে এসকল ভাবনা যে তোর জন্য জায়েজ নয়। তিহান যে আজ এই মুহুর্তের পর থেকে পরপুরুষ তোর জন্য। ”
” এভাবে বলিস না চারু। আমায় এভাবে কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিস না, আমি যে সহ্য করতে পারবো না। ”
” কেন করলি তুই এই কাজ?কেন নিজেদের স্বপ্নকে এভাবে ভেঙে চুরমার করে দিলি? তিহান ভাইয়ার তো এখানে অপরাধ ছিল না। তবে কেন তাকে এভাবে শাস্তি দিলি? তুই কি জানতি না তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হওয়ার আগে সে বিয়ে করতে পারবে না। এটা তো শুধু তার বাড়ির নিয়ম নয়। এ নিয়ম যে পৃথিবীর লগ্ন থেকে হয়ে আসছে। তারপরও… তারপরও তো সে চেয়েছে সবকিছুর বিরুদ্ধে গিয়ে তোকে আপন করে নিতে। তোকে নিয়ে দূরদেশে পারি জমাতে কিন্তু তুই সেই সবকিছু আজ অতীত করে দিলি। যার নেই কোনো ভবিষ্যৎ। ”
চারুর কথাগুলো শুনে তানহার বুকে ফেটে যাচ্ছিলো। তারমাঝে তার একটি কথা মনে পড়লো তাও তিহানের বলা। কথাটি মনে পড়তেই তানহা লাফ দিয়ে চারুকে ছেড়ে উঠে বসে যায়। আর হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
” তিহান যে বলেছিল আমাকে অন্য কারো হতে দিবে না। তবে সে যদি আটকাতে না পারে তাহলে…”
” তাহলে কী তানহা! ”
” তাহলে ও..ও নিজের জীবন দিয়ে দিবে। ”
তানহার কথা শুনে চারু হতভম্ব হয়ে যায়। এই মুহুর্তে তানহাকে কী বলে সান্ত্বনা দেয়া যেতে পারে চারুর জানা নেই। তার হাত পা সমানে কেঁপে যাচ্ছে। চারু যে এই ভালোবাসার, এই সম্পর্কের এক জীবন্ত সাক্ষী। সে ভালো করেই জানে যে এই দুটো মানুষ একে অপরের জন্য কী কী করতে পারে। আর তানহা যে কথাটি বলল এটি যে তিহানের করতে বিন্দু পরিমাণ হাত কাঁপবে না সেটা, তানহার পর তার থেকে ভালো কেউ হয়তো জানে না। চারু কাঁপা গলায় তানহার হাত ধরে বলল,
” এখনো বলছি যাবি তুই? যাবি তিহানের কাছে। বিশ্বাস কর আমি সব ব্যবস্থা করে দিব। কেউ কিচ্ছু বুঝবে না। ”
” কিন্তু… ”
” কোনো কিন্তু না, আমি আর কোনো কথা শুনতে চাচ্ছি না তানহা। ”
” তুই কি ভুলে যাচ্ছিস চারু ! আমার এই মুহুর্তে বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ”
” ভুলে যাইনি তানহা কিন্তু তোকে একটি কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি কেবলমাত্রই তোর বিয়ে হয়েছে এর বেশি কিছু না। তোর হাতে এখনো সবকিছু আছে। তবে যেদিন আফসোস করবি সেদিন তোর হাতে কিছু থাকবে না, শূন্য হাতে থাকবি। তুই কি বুঝতে পারছিস আমি কোন বিষয় নিয়ে বলছি? ”
তানহা চুপ করে আছে। চারুর কথার কোনো উত্তর দিচ্ছে না। তাই চারু আবারো বলল,
” হয়তো তুই বুঝিসনি কিংবা বুঝেও না বুঝার মতো করে আছিস। তাই তোকে ভেঙেই বলছি। যে সম্মানের কথা ভেবে তিহান ভাই নিজের জীবন দিতে ভাববে না আমি সেই সম্মানের কথা বলছি। মাত্রই বিয়ে হয়েছে তবে সম্মানের উপর হাত পড়েনি। তাই বলছি দেরি করিস না। এখনো সময় আছে চলে যা তোর ভালোবাসার কাছে। এখানে যা হবার হবে। আমি সব ট্যাকেল দিব। ”
” কি করবি তুই! ”
” জানি না। তবে এতটুকু জানি, তুই পালানোর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত প্রয়োজন হলে… প্রয়োজন হলে তোর বেশে না-হয় আমি নিজেই বসে পড়বো। ”
তানহা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো চারুর দিকে। ঝাপটে ধরলো চারুকে আর মুখ চেপে কাঁদতে লাগলো। এদিকে চারুও নীরবে চোখের জল ফেলে গেল। তানহা চারুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অসহায় ভাবে বলল,
” এটা কি আদৌ সম্ভব চারু? তুই কি জানিস না আমি কোন ধাঁচের মেয়ে! যেই আমি বিয়ের আগেই বাবা’র মুখের দিক তাকিয়ে বিয়েতে অমত করিনি সেই আমি বিয়ের পর চলে যাবো! যদি চলেই যেতাম তাহলে এখন কেন, অনেক আগেই চলে যেতাম। এইদিনটি দেখার জন্য গা ভর্তি গহনা পড়ে বসে থাকতাম না। ”
তানহার কথার পরিপ্রেক্ষিতে চারু আর একটি কথাও বলেনি কিংবা বলতে পারেনি। কেবল মেঝের দিকে চোখ দুটো রেখে বিছানার একপাশে বসে থাকে।
.
তিহান একহাত কপালে রেখে বিছানায় শুয়ে আছে। মাথার উপর চলন্ত ফ্যানের দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলে বালিশ ভেজাচ্ছে। তার চোখের সামনে যে তানহাকে ঘিরে হাজারো স্মৃতি ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু যে স্মৃতি ঘুরে বেড়াচ্ছে তা নয়, তিহানকে যে প্রতি মুহূর্তে স্মৃতিগুলো তাড়া করে বেড়াচ্ছে।চোখের কোণ বেয়ে পড়া নোনাজল থেকে এক ফোঁটা জল নিজের হাতের আঙুলে এনে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তিহান। মনে মনে ভাবল,
” আজ তার পরিবারের সমস্যার জন্য তাদের এতদিনের এতো গভীর সম্পর্কের এই টানাপোড়ন। তানহার কথা তো একটিও ভুল ছিল না। এই সম্পর্ক নিয়ে তানহার পরিবারের তো সমস্যা নেই, আর না আছে নিষেধ। তারা তো অনেক সময় দিয়েছে, অনেক অপেক্ষা করেছে। কিন্তু আর কত! যতবারই তানহার পরিবার বিয়ের কথা বলেছে ততবারই তিহান পিছিয়ে গিয়েছে। তবে নিজের জন্য না, নিজের পরিবারের জন্য। কিন্তু এ কথা যে তানহার পরিবার জানে না। তারা যে ভাবছে ভালোবাসার নাম করে তাদের মেয়েকে চিট করছে তিহান। আর সেই যুক্তি অনুসারে তারা আর দেরি করতে চায় না। আর না অপেক্ষা করতে চায়। যতদ্রুত সম্ভব মেয়েকে এক সুপাত্র দেখে তার হাতে তুলে দিতে চায়। কিন্তু এই তিহানের কি হবে সে কথা ভাবার জন্য কেউ নেই। তার নিজের বাবা-মা’ই যখন তার কষ্ট বুঝলো না, অন্যের বাবা-মা কী করে বুঝবে! ”
ভেবেই তিহান চোখের জল মুছতে লাগলো। শোয়া থেকে উঠে বিছানার উপর থাকা মোবাইলটি হাতে নিল। মোবাইল গ্যালারিতে ঢুকে একে একে তানহার সবগুলো ছবি ঝুম করে দেখতে লাগলো। কিছু ছবি তানহার একার তো কিছু ছবি তিহানের সাথে। তিহানের সাথে তোলা বেশিরভাগ ছবিতেই তানহা হাসি মুখে তিহানের বুকে নিজের মাথা এলিয়ে হাত দিয়ে ধরে রেখেছে। ছবিগুলোতে নিজের বুকে তানহার হাত দেখে তিহানের বুকের বা পাশে একধরনের ব্যাথা অনুভত হলো। বুকে হাত দিয়ে ছবিগুলোর দিকে তাকিয়ে তিহান মনে মনে ভাবলো,
” আচ্ছা! তানহা যেভাবে তার বুকে হাত রেখে হাসি মুখে ছবি তুলেছে ঠিক সেভাবে যার সাথে বিয়ে হবে তার বুকেও কি হাত রেখে হাসি মুখ করে ছবি তুলবে! তানহার কি কষ্ট হবে না তার জন্য! মনে কি পড়বে না তার কথা! মনে কি পড়বে না তার সাথে সময় কাটানোর দিনগুলোর কথা! তানহা কি পারবে তিহানের একটু একটু করে জমানো অধিকার গুলো এক মুহূর্তে অন্যের হাতে তুলে দিতে! অবশ্য মেয়ে হয়ে জন্মেছে ইচ্ছে না থাকলেও যে পারতে হবে তাকে। ”
কথাগুলো ভেবেই এক দীর্ঘশ্বাস ফেলল তিহান। পরক্ষণেই তার মনে হলো সে এসব কি ভাবছে! কেন ভাবছে! সে চাইলেই তো সব সমস্যার সমাধান করতে পারে। তাহলে কেন সে এভাবে ঘরের কোণে বসে আজে বাজে চিন্তা করছে? সে যাবে, হ্যাঁ এক্ষুনি যাবে নিজের বাড়িতে। যে কোনো মূল্যে তার পরিবারকে রাজি করিয়েই আনবে। তানহাকে যে তার চাই চাই।
চোখের জল মুছে বিছানা থেকে নেমে ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল তিহান।
.
জানালা দিয়ে মেঘে ঢাকা দূর আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে তানহা। পাশে রয়েছে প্রাণপ্রিয় বান্ধুবী চারু। তবে নেই তাদের মাঝে কোনো কথা আর, না আছে কথা বলার মতো বাক্য। যে যার মতো বিছানার কোণে বসে রয়েছে।
হঠাৎ দরজার অপর পাশ থেকে টোকার আওয়াজ পাওয়া গেল। তাতে তানহার মাঝে বিশেষ কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। চারু তানহার দিকে একপলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে বিছানা থেকে উঠে এগুতে লাগলো দরজা কাছে। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে একহাত উঁচু করে ছিটকিনি খুলতে খুলতে পেছনে না ফিরে তানহাকে বলল, ” দরজার ওপারে কেউ এসেছে হয়তো নতুন বউকে নিয়ে যেতে। সোজা হয়ে বস দরজা খুলছি। ”
তানহাও কোনো কথা না বলে বাহির থেকে চোখ ফিরিয়ে মাথা ঝুঁকে সোজা হয়ে বসলো। চারু দরজা খুলতেই তানহার কিছু কাজিন দৌড়ে ঘরে ঢুকে পড়লো তানহাকে নিচে নিয়ে যাওয়ার জন্য। বিদায়ের সময় যে হয়ে গিয়েছে। কাজিনদের কথামতো তানহা বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো। কাজিনরা তানহার হাত ধরতে গেলেই তানহা বলল ৫ মিনিট ওয়েট করতে। তানহা ধীর পায়ে এগুতে লাগলো তার পড়ার টেবিলের কাছে। টেবিলের উপর থাকা নিজের মোবাইলটি হাতে নিয়ে আলমারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। আলমারির একপাশ খুলে ড্রয়ার টান দিয়ে তার মাঝে মোবাইলটি রেখে কাপড়ের মাঝে থাকা কয়েকশত ছবি বের করে হাত নিল। সেগুলো একপলক দেখে চোখের জল ফেলে ড্রয়ারে রেখে ডান হাত দিয়ে আলমারি পাট্টাটি লাগিয়ে আলমারি লক করে চাবি হাতের মুঠোয় নিয়ে দাঁড়ালো জানালার কাছে। হাত ভর্তি চুরি নিয়ে মুঠো হাতটি মেলে ধরলো জানালার ওপারে। মুহুর্তের মধ্যে মুঠোর মাঝে থাকা আলমারির চাবিটি ফেলে দিল নিচের ময়লার স্তুপে। সেই সাথে মুছে ফেলল নিজের কাটানো সকল অতীত। সকল সম্পর্ক। চাবি ফেলে পেছনে ফিরতেই দেখে চারু দাঁড়িয়ে। তানহা চারুকে পাশ কাটিয়ে যেতেই চারু বলল,
” পুরনো মোবাইল, পুরনো ছবি অর্থাৎ তিহান ভাইয়ের সাথে কাটানো সকল স্মৃতি তালাবদ্ধ করলেই কি ভুলে যেতে পারবি? ”
” মানুষ পারে না এমন কোনো কাজ নেই।”
” তাহলে চাবি ফালিয়ে আলমারি কেন অকেজো করলি? ছবিগুলোই ফালিয়ে দিতি। তাহলে অন্তত অতীতের জন্য তোর ব্যবহার যোগ্য কোনো জিনিসেরই ক্ষতি হতো না। ”
চারুর কথা শুনে তানহা চুপ করে চারুর দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর এক’পা দু’পা করে এগুলো দরজার দিকে। তাও আবার কাউকে ছাড়াই।
.
ভাবলেশহীন ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে তানহা। তানহাকে ঘিরে আশেপাশে রয়েছে তার অতি আপনজন। তার বাবা-মা,পরিবার-পরিজন,আত্মীয়স্বজন সকলে। সেই আপন মানুষগুলো বর্তমানের এই মুহূর্তে একটি বেদনাদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছে। তৈরি করেছে এক আহাজারিময় পরিবেশ।
তবে এটা যে ভিন্ন কিছু নয়,এটা যে অতি সাধারণ একটি মুহূর্ত। যেকোনো মেয়ের বিদায়ের সময়ই যে তার পরিবার চোখের জলে ভাসবে, বিশেষ করে বাবা-মা।যে সন্তানকে আদর-আহ্লাদ, ভালোবাসা, স্নেহ,ভরসা দিয়ে বড় করে ছোট ছোট হাত পা দিয়ে হামাগুড়ি শিখায়, হাঁটতে শিখায় সে সন্তানকে অন্যের ঘরে, অন্যের হাতে সমর্পণ করতে যে, যেকোনো বাবা-মায়ের চোখের জল আসবেই। আর এই দৃশ্যটি যে বিদায়ের আসল মুহূর্ত। তবে বিদায়ের মুহুর্তটি তখনই স্বার্থকতা পায়, যখন বাবা-মায়ের সাথে কনে নিজেও নিজের অতীত অর্থাৎ বাবা-মায়ের দেয়া নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা মনে করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। এটাই যে পৃথিবীর লগ্ন থেকে হয়ে এসেছে। তাই মানুষ এই দৃশ্যটির সাথে ভীষণ ভাবে পরিচিত।
তাইতো তানহার বাবা-মা’র কান্না, আত্মীয়স্বজনদের কান্না সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। কিন্তু স্বাভাবিক ভাবে নেয়নি তানহার আচরণ। তানহার আচরণ যে ছিল একদমই ভিন্ন। বলতে গেলে অস্বাভাবিক। তানহার চোখ জুড়ে না আছে বিন্দুমাত্র জলের ছিটাফোঁটা, আর না আছে মুখ জুড়ে কোনো কষ্টের ছাপ কিংবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হবার কষ্ট। এমনকি তানহা তার বাবা-মা’র হাতটি পর্যন্ত ধরেনি। তানহাতো আছে একবারেই সটান। যাকে সোজা ভাষায় বলা হয় রোবট। তবে এই রোবট নামক তানহার চোখ যেন কাউকে খুঁজে বেড়াচ্ছে ! আশেপাশে পরিবারের মানুষ থাকা স্বত্তেও তানহার চোখ যেন আরও ঘনিষ্ঠ আপন কাউকে খুঁজে যাচ্ছে। বিদায়ের এই ব্যাথাতুর পরিবেশে তানহার এরকম অসংগতিপূর্ণ আচরণ দেখে সেখানে উপস্থিত থাকা প্রায় সকলেই অবাক হয়ে যায়। বিশেষ করে বরযাত্রী। যেটা তাদের মুখের ভংগী দেখেই তানহার বাবা জামাল সাহেব বুঝে যায়। তাই মেয়ের হাত ধরে ছলছল চোখে তাকিয়ে বললেন,
.
.
চলবে….