#রিপোস্ট
#অন্তরালের_কথা
লেখা – জান্নাতুল ফেরদৌস মাটি
পর্ব – ৪৫
.
.
তিহান পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে তার সেই পূর্বপরিচিত ওয়েটারটি। তবে আজ তার চাহনি পূর্বের ন্যায় একদমই ভিন্ন। ভ্রু দুটো কিঞ্চিৎ পরিমাণ কুচকে আছে। আর সেই কুচকে যাওয়া ভ্রু এর মাঝে যেন ঘুরে বেড়াচ্ছে হাজারো প্রশ্নের সমারোহ। তাই মুচকি হাসি দিয়ে তিহান বলল,
” পারিবারিক সিদ্ধান্তেই ও আমার ওয়াইফ। ”
ওয়েটারটি যেন আচমকা একটা বড়সড় ধাক্কা খেল। সে যে ভাবতেও পারেনি এরকম কিছু একটা হবে। তিহান ও তানহার সম্পর্কের শুরু থেকে তারা এ রেস্টুরেন্টে আসত। এতগুলো বছরে কতশত বার যে এ রেস্টুরেন্টে ওরা এসেছে এবং খেয়েছে সেটা হয়তো রেস্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষও জানে। হাতেগোনা রেগুলার কাস্টোমারদের তালিকায় তিহান ও তানহারও একসময় নাম পড়ে গেল। আর সেই তালিকার নাম দুটোকে এতগুলো বছর পর এভাবে ভাগ হয়ে দু’খন্ড হতে দেখলে কেই-বা অবাক হবে না! ওয়েটার বলল,
” ম্যাডাম! ”
তিহান এবারও মুচকি হেসেই বলল,
” সেও পরিবারের সিদ্ধান্তেই অন্যের স্ত্রী।”
ওয়েটারটি আর কিছু বলতে পারল না। কেবল ছোট্ট করে একটি নিঃশ্বাস ছেড়ে চলে গেল নিজ স্থানে।
এদিকে এই চার অক্ষরের ওয়াইফ নামক শব্দটি শুনে নিদ্রা যেন একটি ঘোরে চলে গিয়েছে। কোথায় কি কথা হচ্ছে না হচ্ছে কিছুই যেন মাথায় ধরছে না তার।
ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে কেবল তিহানের দিকে। ব্যাপারটি বুঝতে পেরে তিহান বলল,
” তোমার ভাষায় বুড়োতো হয়ে গিয়েছি। এখন এই বুড়োর কি রূপ জ্বেলেছে যে, এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছ? এদিকে কফি যে ঠান্ডা হচ্ছে তার কী খবর আছে?”
নিদ্রা মুখ কাচুমাচু করে বলল,
” না মানে আসলে..”
” তাকিয়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যা করতে বলিনি। কফি ঠান্ডা হচ্ছে তাই বলেছি। ”
” হুম। ”
দুজনেই কিছুক্ষন চুপ করে রইলো। হঠাৎ করে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে নিদ্রা বলল,
” স্মৃতিময় স্থানে নিয়ে এসেছেন, কিন্তু স্মৃতি জড়িত কোনো কথাই তো বলছেন না। ”
” স্মৃতি জড়িত কোনো কথাতো নেই তোমার সাথে। আর না তোমাকে স্মৃতিময় দিনগুলো ব্যাখ্যা করতে এসেছি। আমিতো কেবল কিছু সময় অনুভব করতে এসেছি। ”
” তাহলে আমায় নিয়ে এসেছেন কেন? আপনি একাই এসে অনুভব করে যেতেন।”
” তোমার তো কোথাও যাওয়া হয়না তাই নিয়ে এসেছি৷ যদি মনটা ফ্রেশ হয় তোমার। ”
” আমার মনের ফ্রেশের কথাও আজকাল ভাবেন তাহলে? ”
” ইচ্ছে হয় না তোমায় নিয়ে ভাবতে কিন্তু অটোমেটিক হয়ে যায়। ”
” ওহ্! তো স্মৃতির কথা কি আদৌও আমি জানতে পারব না? ”
” হয়তো না। ”
” যদি না-ই আমি জানতে পারি, কেন তাহলে আমার মনের ভেতর কৌতুহল সৃষ্টি করলেন? কেন অস্থিরতা বিরাজের সুযোগ করে দিলেন? এমনিতে কি কম অস্থিরতার মাঝে থাকি যে, নতুন করে আরও আমদানি করে দিলেন? ”
” যেচে যেচে অস্থিরতাকে স্বাগতম জানালে কার কি করার আছে বলো। ”
” তারমানে আপনি বলবেন না? ”
” কফিটা শেষ করো উঠতে হবে। ”
বলেই তিহান মুখ ফিরিয়ে নিল। নিদ্রাও আর কিছু বলল না। চুপচাপ কফি টুকু খেয়ে যাচ্ছে।
তিহানের চোখ দুটো পড়ে আছে পাশের টেবিলটির দিকে। যেখানে সবসময় তিহান আর তানহা বসে কফি খেত। আজও তার ভীষণ ইচ্ছে ছিল সেই টেবলটিতে বসার কিন্তু, নিদ্রার দিকে নজর পড়তেই সেই ইচ্ছে মুহূর্তের মাঝে ধূলিসাৎ হয়ে গেল। তিহান যে পারবে না তানহাকে জড়ানো সেই মধুর স্মৃতিটুকুতে অন্যের আসন বসাতে।
তিহানের চোখ দুটো ভিজে আসছে। নিদ্রার থেকে চোখের জল লুকাতেই ওয়েটারকে ডেকে বিল দিয়ে নিদ্রাকে না নিয়েই কোনোমতে বেরিয়ে গেল তিহান। নিদ্রা বেশ অবাক হলো সাথে অপমানিত বোধও করলো। রেস্টুরেন্টে থাকা প্রতিটি ব্যাক্তি নিদ্রার দিকে তাকিয়ে ছিল তিহান চলে যাবার সময়। নিদ্রার ইচ্ছে করছিল মরে যেতে এক্ষুনি। কিন্তু সেটাতো আর সম্ভব নয়, তাই সে নিজেও দ্রুত রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে তিহানের কাছে চলে গেল। বলল,
” জায়গায় জায়গায় আমায় অপমান না করলে আপনার ভালো লাগে না তাই না?”
বলেই চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে তিহানের দিকে তাকালো নিদ্রা। মুহূর্তের মাঝে নিদ্রার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি যেন বরফের ন্যায় গলে পানি হয়ে গেল। এই প্রথম নিদ্রা নিজে থেকে তিহানের কাছে গিয়ে দু’গালে হাত রেখে বলল,
” কি হয়েছে আপনার? আপনি এই মাঝ রাস্তায় কাঁদছেন কেন? ”
” মানুষ তাকিয়ে আছে নিদ্রা, দূরে যাও। ”
” আপনি আগে বলুন, আপনি কেন কাঁদছেন? কি এমন আছে ওই রেস্টুরেন্টে যে আপনাকে কাঁদাতেও সময় নিল না! ”
তিহান কিছু বলতে পারছে না। বুকটা যেন আরও ভেঙে আসছে।
এদিকে নিদ্রা তিহানের চোখের জল মুছে, নিজের পড়নের ওড়না দিয়ে তিহানের পুরো মুখ মুছে নিজের চোখের জল ফেলে বলল,
” কেন এভাবে নিজেকে শেষ করছেন? আপনার জীবনের সাথে যে কিছু জীবন জড়িত সে কথা কেন ভুলে যাচ্ছেন? আপনার অতীতে কি হয়েছিল জানি না, তবে অতীতের কথা ভেবে নিজের বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে কেন জলাঞ্জলি দিচ্ছেন? প্রত্যেকটি ব্যাক্তিরই অতীত থাকে। তাই বলে কি তারা জীবনের চাকাকে থামিয়ে রেখেছে? রাখে নি। তাহলে আপনি কেন থামিয়ে রাখছেন? ”
এবারও তিহান কিছু না বলে নিদ্রাকে নিজের থেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে একটা সিএনজি ডাক দিয়ে বসে পড়ল।
.
কড়ই ফুল দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে সেই কখন থেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে তিহান। নিদ্রা বিষয়টি খুব ভালো করেই লক্ষ্য করছে কিন্তু মুখে কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। যদি প্রশ্নের বেড়াজালে তিহান আবারও ভেঙে পড়ে সেই ভয়ে। এদিকে নিদ্রার পা’ও অবশ হয়ে আসছে। আর অবশ হবে না-ই বা কেন! পার্কে এসেছে প্রায় মিনিট বিশেক। এই বিশ মিনিট যাবৎ যে নিদ্রা এ ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে। যতবার বেঞ্চটিতে তিহানের পাশে বসার চেষ্টা করেছে ততবারই তিহান বলেছে, অন্য বেঞ্চে বসতে। এখানে বসা যাবে না। কিন্তু নিদ্রাই বা কীভাবে অন্য বেঞ্চে বসবে। তাও আবার এই ভর দুপুরে। যদি তাকে একা দেখে কেউ কিছু বলে! তাইতো নিদ্রা ঠাই দাঁড়িয়ে রয়েছে বেঞ্চটির সামনে তিহানের বরাবর। কিন্তু আর পারছে না সে দাঁড়িয়ে থাকতে। পা ঝিম ধরে অবশ হয়ে যাচ্ছে। তাই না পারতেই মাটিতে ঘাসের উপর বসে পড়ল নিদ্রা। আর বলল,
” এই বেঞ্চটিতে কিছুটা সময় বসলে কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত? কোমড়টা আমার শেষ। পা দুটোও ঝিম ধরে গিয়েছে। ”
” পার্কে কি এই একটাই বেঞ্চ? তোমাকে এ বেঞ্চে বসতে নিষেধ করলেও অন্য বেঞ্চে গিয়ে বসতে তো বলেছি তাই না? এখন তুমি যদি অন্য বেঞ্চে না বসে এখানে দাঁড়িয়ে থাকো তার দায় তো আর আমার না। ”
” কেন? এ বেঞ্চে এমন কি আছে যার জন্য আমি বসতে পারব না? ”
” আছে, অনেক কিছুই আছে।এ বেঞ্চকে ঘিরে যা আছে, এ জীবনে তোমার বুঝার বোধগম্য হবে না। ”
” এতটাও আবার অকর্মা মনে করবেন না। যথেষ্ট বুঝদার হয়ে গিয়েছি এ ক’দিনে। ”
” বেশ ভালো। তবে কিছুটা সময় চুপ থাকলে আরও ভালো হয়। ”
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তরতাজা কড়ই ফুলটি শুকিয়ে নেতিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এখনো তিহানের মাঝে কোনো পরিবর্তন আসেনি। সেই যে ভর দুপুরে কড়ই ফুলটি হাতে নিয়ে বেঞ্চে হেলান দিয়ে ঘাড় কাত করে আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বুজে ছিল, এখনো সেই অবস্থাতেই আছে। রোদের তাপে মুখখানা ঝলসে গিয়েছে। তাতে খুব একটা সমস্যা হয়নি তিহানের। এদিকে নিদ্রা সবকিছু দেখেও কিছু বলেনি। তবে এখন যে না বলে পারছে না। চারিপাশে আঁধার নেমে আসছে। মানুষজন তাদের দিকে চিড়িয়াখানার জন্তুর মত তাকিয়ে আছে। ভীষণ অস্বস্তি লাগছে নিদ্রার। এ অস্বস্তি বোধ থেকেই নিদ্রা কিছু বলার জন্য মুখ খোলার আগেই তিহান চোখ বুজে বলল,
” জানো নিদ্রা, এই সেই জায়গা আর এই সেই কড়ই গাছ যেখানে আমি আমার সর্বস্ব হারিয়েছিলাম। ”
” ঠিক কেমন করে সর্বস্ব হারিয়েছেন? ”
এবার আর তিহান কিছু বলল না। তবে বন্ধ চোখের কোন বেয়ে টপটপ করে জল পড়ার ধারাকেও লুকানোর চেষ্ঠা করল না। মনে মনে বলল,
” আমিতো সেই কবেই তোমায় ভুলে গিয়েছিলাম তানহা। নতুন করে বাঁচতেও শিখে গিয়েছিলাম। তবে কেন সেদিন উপর ওয়ালা তোমাকে বউ রূপে আমার সামনে পাঠিয়েছিল! কেন নতুন করে আশা জাগিয়েছিল মনের ভেতর তোমায় ঘিরে! কেন ভেঙে যাওয়া স্বপ্নকে পুনঃরায় জোরা লাগিয়েছিল! যে স্বপ্ন কি-না এ জীবনে পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। বলতে পারো, কী করে তোমার ওই বউ রূপী মুখখানি ভুলে গিয়ে অন্য কাউকে আপন করে নিব! পারবে বলতে আমায়! জানি পারবে না। এর উত্তর কেউ দিতে পারবে না। তবে নতুন নতুন সম্পর্ক চাপিয়ে দিতে সবাই পারবে। যেমনটা তোমরা সবাই মিলে নিদ্রার মত ছোট্ট একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করে আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছ। ”
চোখ মেলে তাকিয়ে মেঘে ঢাকা আকাশ দেখে মুচকি হেসে চোখের জল মুছে বলল,
” স্মৃতিময় স্থান তো অনেক আছে কিন্তু একদিনে তো আর সব জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব না। তাই আজ দুটো জায়গা ঘুরে গেলাম। তবে একটি স্থানে কখনোই যাওয়া সম্ভব না, তাই হয়তো সে নিজে এসে ধরা দিয়েছে। ”
নিদ্রা ঠিক বুঝতে পারছে না তিহান কী বলতে চাইছে। তিহান একহাত উঁচু করে আকাশের দিকে ইশারা করে বলল,
” ওই যে দেখছ না ঘন কালো মেঘগুলো।এই মেঘগুলো আমার জীবনের প্রতিটি বিশেষ মুহূর্তে ঝড়ে পড়েছিল আমার উপর বৃষ্টি হয়ে। ছুঁয়ে দিয়ে গিয়েছিল মন, গেঁথে রেখে গিয়েছিল কোমল কিছু অনুভূতিকে।আর জানান দিয়েছিল তারাও সাক্ষী হয়ে থেকেছে আমার সকল প্রাপ্তির। তবে…. ”
কিছুটা সময় থেমে আবারও তিহান বলল,
” তবে এই মেঘগুলোই আবার সাক্ষী হয়ে থেকেছে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় সম্পদকে হারিয়ে ফেলার সময়। ”
বলেই ছোট বাচ্চাদের ন্যায় কাঁদতে লাগল তিহান। বসা থেকে দ্রুত উঠে তিহানের সামনে দাঁড়িয়ে নিদ্রা বলল,
” আপনি আবার কাঁদছেন? ”
আচমকা নিদ্রার হাত টেনে কোমড় জড়িয়ে নিদ্রার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে কাঁদতে তিহান বলল,
” আমি পারছি না নিদ্রা। আমি আর পারছি না। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। সবকিছু ধোঁয়াশা হয়ে আসছে চোখের সামনে। কিন্তু আমিতো… আমিতো এই ধোঁয়াশার বেড়াজালে নিজেকে হারিয়ে ফেলতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই। প্রাণ খুলে বাঁচতে চাই। বুক ভরে শান্তির নিঃশ্বাস নিতে চাই। আমাকে হারিয়ে যেতে দিও না নিদ্রা। আমাকে হারিয়ে যেতে দিও না। ”
তিহানকে এভাবে হাউমাউ করে কান্না করতে দেখে নিদ্রা নিজেও কেঁদে ফেলল। সে জানে না তিহানের আর্তনাদের কারণ। কিন্তু সে এটা বুঝে গিয়েছে সে ছাড়া ত্রিভুবনে এই অভাগার কেউ নেই। তিহানকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরে নিদ্রা বলল,
” কে বলেছে আমি আপনাকে হারিয়ে যেতে দিব? আপনাকে হারাতে দিলে যে আমি নিজেই হারিয়ে যাব বুঝতে পারেন না? আর নিজের সুখ কে কি কেউ হারিয়ে যেতে দেয়? আপনি যে আমার সুখ, আমার বর্তমান, আমার ভবিষ্যৎ। আপনার মাঝেই যে আমার বাস তাহলে কি করে আপনাকে ধোঁয়াশার মাঝে একলা পথের পথিক করে ছেড়ে দিই? এই দেখুন কীভাবে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছি আপনাকে, ঠিক এভাবে সারাটা জীবন আপনাকে নিজের আষ্টেপৃষ্ঠে মিশিয়ে রাখব। ”
আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তিহান বলল,
” আমি মিশতে চাই নিদ্রা। আমি তোমার মাঝে মিশে নিজের অতীত থেকে চিরতরে বিদায় নিতে চাই। কিন্তু আমি যে পারছি না। খুব করে চেষ্টা করছি কিন্তু কিছুতেই পারছি না তোমার মাঝে মিশতে। একটি দেয়াল যেন সর্বক্ষণ তোমার আমার মাঝে এসে নিজের জায়গা দখল করে নিচ্ছে। ”
” এ দেয়ালকে ভেঙে চুরমার করতে আপনার যত সময়ের প্রয়োজন আপনি নিন। তবে মনে রাখবেন এই আমি প্রতিটি দিন, প্রতিটি ঘন্টা, প্রতিটি মুহূর্ত অপেক্ষায় বসে থাকব আপনার ঠোঁটের কোণে হাসি হবার কারণ হওয়ার আশায়। ”
তিহান আর কিছু বলল না, আর না নিদ্রা বলল। দু’জনেই দু’জনার আষ্টেপৃষ্ঠে মিশে নীরবে চোখের জল ফেলে যাচ্ছে।
.
আজ তানহার এতগুলো দিনের অপেক্ষার অবসান ঘটবে। অতল যে আসছে তার কাছে। এ দুটো মাস যে তানহা কীভাবে কাটিয়েছে সে নিজেও হয়তো জানে না। সকাল থেকেই তানহার ব্যস্ততার যেন শেষ নেই। অতলের পছন্দের সব খাবার আজ সে নিজের হাতে রান্না করেছে। মা আর নিদ্রা নিষেধ করলেও তানহা সেসব নিষেধের পরোয়া করেনি। উল্টো হাসতে হাসতে সব রান্না করেছে। নিজের মনের প্রশান্তির জন্য আর শেষ মুহুর্তের অপেক্ষার সময়টুকু দ্রুত পার হবার জন্যে। তবে এখন তানহার আর সময় কাটছে না। সবকাজ সেরে নিজেকে অতলের মন মত সাজিয়েও যেন অপেক্ষার অবসান ঘটছে না। ভীষণ অস্থির লাগছে তার। আর এই অস্থিরতাকেই সঙ্গী করেই ঘরের মাঝে পায়চারী করে যাচ্ছে তানহা।
হঠাৎ-ই দূর থেকে একটি মিষ্টি সুঘ্রাণ ক্রমশ তানহার খুব কাছে ভেসে আসতে লাগল। তানহার হার্টবিট যেন স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উঠানামা করতে লাগল। তানহা ঘাড় ফিরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই তার চোখ যেন ঝাপসা হয়ে আসে। তার অপেক্ষার অবসানের যে সমাপ্তি ঘটেছে। হ্যাঁ, অতল এসেছে। তানহার অতল এসেছে। তানহা একমুহূর্ত দেরি না করে ঝাপিয়ে পড়ল অতলের বুকে। চোখের জল ফেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
.
.
চলবে….