#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৫+৬)
রাত সন্ধ্যার কোমড়টা পেচিয়ে ধরে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো। উঠে বসে হাপাতে হাপাতে বললো,,
“” এতো রাতে আমার ফোন দিয়ে কি করবি?””
“” আমার একটা কল আসবে।””
“” তোর কল? আমার নাম্বারে? তাও এতো রাতে?? কে করবে?””
“” রিমান!””
রাত আতংকভরা কন্ঠে বললো,,
“” রিমানটা কে?””
“” ঐ যে আজ এক্সাম হলে আমার পাশে যে বসেছিলো সে!””
“” কে বসেছিলো?””
“” রিমান। উফ! কি সুন্দর দেখতে। চুলগুলো কি সুন্দর কুকড়ানো,যেন সাগরের ঢেউ খেলে আছে। তোমার চুলগুলো এমন সরলা কেন??””
রাত আহতকন্ঠে বললো,,
“” তুই আবার ক্রাশ খেয়েছিস?””
“” ধুর! আমি কেন ক্রাশ খেতে যাবো?? যদিও দেখতে অনেক সুন্দর কিন্তু আমি ক্রাশ খাওয়ার আগে সেই তো খেয়ে ফেললো। তাই আমাকে আর কষ্ট করে খেতে হয়নি।””
সন্ধ্যা কথা শেষ করতেই রাতের ফোনটা বেজে উঠেছে। তাতে যেন সন্ধ্যার উত্তেজনা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। ফোনটা নিতে গেলেই রাত ছো মেরে ফোনটা নিয়ে নিলো। স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে আননোন নাম্বার।
“” রিমান ফোন করেছে তো। দাও আমি কথা বলবো।””
রাত ফোনটা সইল্যান্ট করে বললো,,
“” না। সায়ন ফোন করেছে।””
“” সত্যি?””
“” আমি তোর সাথে মিথ্যে বলবো?””
সন্ধ্যা দেয়াল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখলো ঠিক তিনটা বাজে। অনেকটা ভঙ্গুর মন নিয়ে বললো,,
“” কিন্তু ও তো বলেছিলো ঠিক তিনটে বাজে কল দিবে। তাহলে কি আমি নাম্বার ভুল দিয়ে এসেছি?””
রাতের ফোনটা অনর্গল বেজেই যাচ্ছে। নাম্বারটার উপর কঠিন মনোযোগে চেয়ে আছে রাত। যদি সম্ভব হতো সে এতক্ষনে ফোনপথেই রিমানের হাত,পা,গলা,মাথা,নাড়ি-ভুড়ি যা আছে সব কেটে কুটে টুকরো টুকরো করে দিয়ে আসতো। এতো বড় সাহস আমার স্বপ্নবধুর সাথে প্রেম করতে চায়?? তোর স্বপ্নেও বিয়ে হবেনা।
“” ও তোকে বলেছিলো ও তোর উপর ক্রাশ খেয়েছে?””
“” বলার কি আছে? ক্রাশ না খেলে নাম্বার চাইলো কেন?””
“” নাম্বার চাইলেই দিয়ে দিতে হবে?? তুইকি দানবান হয়ে গেছিস যে কেউ কিছু চাইলেই তোকে দিয়ে দিতে হবে?””
“” কিছু কই দিলাম? আমি তো শুধু নাম্বার দিয়েছি।””
“” তাই বলে আমার নাম্বার দিয়ে আসবি? আমার ফোন দিয়ে তুই অন্য ছেলের সাথে প্রেম করবি? তাও আমার সামনে?””
“” তো কি করবো? তোমরা কেউ আমাকে ফোন কিনে দিয়েছো? আমার ফোন থাকলে তো আমার নাম্বারই দিতাম। তুমি জানো ওর সামনে আমার প্রেস্টিজ পান্চার হয়ে গেছে। আমরা দুজনেই এসএসসি দিচ্ছি অথচ ওর ফোন আছে আমার ফোন নাই। কেন নাই?””
রাত বিড়বিড় করে বললো,ফোন নাই তাই তুই নাম্বার বিলিয়ে আসছিস। আর ফোন থাকলে কি করতি?? কারো তো চাওয়া লাগবেনা নিজ থেকে সেধে সেধেই নাম্বার বিলিয়ে আসতি। এই মেয়েটা আমাকে একটা রাতও ঠিকমতো ঘুমোতে দিলোনা। মরন ঘুমটাও কি শান্তিতে ঘুমাতে পারবো??
“” চুপ করে আছো কেন? বলো কেন নাই?? রিমানতো আমার নাম্বারই চেয়েছিলো। আমি বললাম আমার ফোন নাই। সাথে সাথে ওর মুখটা কেমন কালো হয়ে এলো। আর তুমিতো জানো আমার কালো রঙ কত প্রিয়। তাই আব্বুর নাম্বার দিয়ে এসেছি।””
রাত শব্দহীন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,
“” আমি তোর আব্বু?””
“” তুমি আমার আব্বু হতে যাবে কেন?””
“” মাত্রই তো বললি আব্বুর নাম্বার দিয়ে এসেছিস।””
“” ও কালগত ভুল করেছি। আমি দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার তো আব্বুর নাম্বার মুখস্ত নাই। তাই তোমারটা দিয়ে এসেছি।””
“” কেন দিলি? আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলি?””
“” আমার সব কিছুতেইতো তোমার নাম্বার দেওয়া। গার্ডিয়ানেও তোমার নাম্বার দেওয়া। তুমি নিজ থেকেই তো দাও। আমাকে তো ঐদিন বলেও দিয়েছিলে,কখনো কোনো প্রয়োজন পড়লে যেন তোমার নাম্বার দিয়ে আসি। আর এখন বলছো জিজ্ঞেস করিনি কেন? তুমি তো দেখছি দুৃুমুখো মানুষ।””
রাগে রাতের বেগতিক অবস্থা। না পারছে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারছে সহ্য করতে আর না পারছে উগলে দিতে। কি করবে? কি বলবে? কি বলা উচিত বা কি করা উচিত কিছু বুঝতে পারছেনা। তবে কষ্ট হচ্ছে। খুব কষ্ট! বুক শুন্য হয়ে যাওয়া ভয়ের কষ্ট। এই কষ্ট সে কিভাবে সামলে উঠবে?
“” রাত ভাইয়া,তোমাকে কেমন জানি দেখাচ্ছে। তুমি রাগ করছো?””
সন্ধ্যার দিকে তাকাতেই সন্ধ্যা আবার বললো,,
“” তোমার চোখগুলো কেমন লাল হয়ে আছে। কি হয়েছে?””
“” কিছুনা। কাঁচা ঘুম ভেঙে গিয়েছে তো তাই। তুই কি আমার রুম থেকে যাবি?””
“” তুমি সবসময় আমাকে তাড়িয়ে দাও কেন?””
সন্ধ্যার এমন প্রশ্নে রাতের কান্না আসছে। বুক ভেঙে কান্না। বুকটা বুঝি তার দুমড়ে মুচড়ে ছিড়ে কান্না আসতে চাইছে। তবে এই কান্না কি সন্ধ্যা দেখতে পারবে? শুনতে পারবে?? নাকি বুঝতে পারবে?? কিছু পারবেনা। কিচ্ছুটি না। এ কান্না শুধু অন্তরআত্মার জন্য।
রাত নিরাশ কন্ঠে বললো,,
“” তাড়িয়ে দিচ্ছিনা। ঘুম পাচ্ছে ভিষন তাই। রুমের লাইটটা নিভিয়ে দিয়ে যাস!””
রাত সন্ধ্যার কথার উত্তরের অপেক্ষা না করেই শুয়ে পড়েছে। উল্টো দিকে ঘুরে হাতের কনুই দুটো একসাথে করে মুখটা গুজে নিয়েছে। চোখটা বন্ধ করে ভাবছে,,তোকে তাড়ানোর মতো কোনো শক্তিই কি আমার আছেরে স্বপ্নবধু? আমিতো চাই আমার এই রুমটার মধ্যে তোর চলনগতির ঝংকারের শব্দে মুখরিত হোক,তোর শব্দবাক্যে মাতিয়ে উঠুক। তোর নিশ্বাসের শব্দে ভরে উঠুক মাদকতায়। কিন্তু তুই কি চাস? তোর এতো এতো চাওয়ার মধ্যে আমি নেই। অথচ তোর সব চাওয়া আমার মাধ্যমেই তোকে পুরন করতে হয়। কেন এমন হয় স্বপ্নবধু?? তুই কি এভাবেই আমাকে জ্বালিয়ে ছারখার করে দিবি? তুই কি একটুও বুঝিস না আমার ভেতরকার অনুভূতির কথা??
সন্ধ্যা রাতের মাথার কাছটাতে বসলো। গলার স্বর বেশ দৃঢ় করে বললো,,
“” আমি চলে গেলে যদি রিমান কল দেয়? তখন তো আমাকে পাবেনা। আমি আরেকটু থাকি? আমি থাকলে কি তোমার খুব অসুবিধে হবে?””
রাত ধপ করে উঠে বসলো। এক কঠিন ঝাড়ি দিতে চাইলেও দিতে পারলোনা। সন্ধ্যার অনুরোধীমুখটা দেখেই রাত আবার হতাশ হলো। অন্য একটা ছেলের সাথে প্রেম করার জন্য তুই আমার রুমে অপেক্ষা করবি,এই মাঝরাতে। আমাকে এটাও সহ্য করতে হচ্ছে। এর থেকে ভালো হতো তুই এক গ্লাস বিষ এনে দিয়ে বলতি রাত ভাইয়া,তুমি এই বিষটুকু খেয়ে মরে যাও তো। আমি তোমার মরে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আমি তাও হাঁসিমুখে খেয়ে নিতাম।
রাত দীর্ঘশ্বাসটা বুকে আটকে রেখেই সন্ধ্যাকে তাড়া দিয়ে বললো,,
“” অনেক রাত হয়েছে। যা ঘুমুতে যা। কল আসলে আমি তোকে ডেকে দিবো।””
সন্ধ্যার নাছোড়বান্দা দেখার সময়টুকুও নিলোনা। কথার তালে তালে ওকে রুম থেকে বের করে দিয়ে দরজাটা ঠাস করে আটকে নিলো। দরজায় নিজের পিঠটা ঠেকিয়ে বললো,,
“”আমি আর সহ্য করতে পারছিনা। নিজেকে কন্ট্রোলে রাখতে পারছিনা রে। তুই আর এক মিনিটও যদি আমার সামনে থাকিস,আমি ভয়ংকর কিছু করে বসতাম। কি করতাম জানিনা,তবে খুব ভয়ংকর কিছু!””
সামনে চোখ পড়তেই বেডটার উপর সাদা আলো জ্বলে উঠেছে। মোবাইলের আলোটাকে রাতের কাছে অগ্নিকুন্ডলি মনে হচ্ছে। দ্রুতগামীতে ফোনটা তুলে নিয়ে সজোরো আছাড় মারলো দেয়ালটাতে। কয়েক টুকরো না হলেও দু/তিনভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতেও যেন রাতের রাগ কমার নাম গন্ধ নেই। নিজের রাগটাকে হজমে আনতে সেই ছোট্ট টুকরোগুলোকে তুলে নিয়ে আরো কয়েকটুকরোতে ছিন্নভিন্ন করে ফেললো।
~~
গালে কারো ভালোবাসার পরশে ঘুম ভেঙে গিয়েছে তিয়ামতীর। চটপট উঠে বসতেই তিয়ামতীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়েছে রাত। তিয়ামতীও ছেলের চুলে আঙুল বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,,
“” আমাল ছেলেটাল বুঝি মন খালাপ? অনেক দিনবাদে মামনিল আদল খেতে এসেছে যে।””
“” খুব কষ্ট হচ্ছে গো মামনি। ভালোবাসা এতো কষ্টের কেন? আমি কেন এমন কষ্টের সাগরে ডুবতে গেলাম? দিনে দিনে আমি যে অতলে ডুবে যাচ্ছিস!””
তিয়ামতী ছেলের গালে হাতের ছোয়ায় আগলে নিতেই হাতটা ভিজে উঠেছে। বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। তাড়াহুড়োয় বললো,,
“” আমাল বাবাটা কি কাঁদছে? কি এমন হলো যে চোখ গলে গিয়েছে? আমাল ছেলে তো এতো নলম মনেল মানুষ নয়।””
মায়ের সাথে রাতের বন্ধুত্বপূর্ণ সখ্যতা। ছোটখাটো,খুটিনাটি,নানা লজ্জাজনক ঘটনাও আম্মুর সাথে শেয়ার করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার ব্যাপারে এতোটা খোলাসাভাবে কখনোই কিছু বলা হয়ে উঠেনি। যতই হোক মা তো। একটু লজ্জারপর্দা না থাকলে চলে?? কিন্তু আজ এই লজ্জার পর্দাটাকে সরিয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। খুব করে মনটা চাইছে একটু মন খুলে কারো সাথে দুটো কথা বলতে। এভাবে চেপে রাখতে রাখতে ভেতরের রাগটাও কেমন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। যদি সেটা বেড়িয়ে আসে তাও আক্রমন করে বসে সন্ধ্যার উপর? তাহলে ও কি সহ্য করতে পারবে? এতো মিশুকতাটা যদি হারিয়ে যায়??
রাত উঠে বসে তিয়ামতীর কাধে মাথাটা রাখলো। ধীরস্বরে পুরো ঘটনা খুলে বলছে। সবটা শোনার পর তিয়ামতীর না রাগ হলো,না মন খারাপ হলো,না কোনো খারাপ লাগা কাজ করলো,না কোনো কষ্ট হলো। সে দিব্যি অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। এতে বেশ অভিমানের বিশাল এক ছায়া নিয়ে রাত অভিমানি সুরে বললো,,
“” তুমি তোমার ছেলের কষ্টের কথা শুনে হাঁসছো? বুঝছি তুমিও আর আমাকে ভালোবাসোনা। তোমাকে আর কিছু বলবোইনা!””
রাত অভিমানে পা চালালে তিয়ামতী পেছন থেকে বলে উঠলো,,
“” তুই জানিস,তোকে এখন কতটা বাচ্চা লাগছে?””
তিয়ামতীর প্রশ্নে রাত থমকে গিয়েছে। তবে পিছু না ঘুরেই বললো,,
“” না “”
তিয়ামতী শরীরের কম্বলটা পাশে ফেলে ছেলের কাছে গিয়ে,কান টেনে বললো,,
“””” পাঁচ বছলেল বাচ্চাল থেকেও ছোট। কিন্তু আমাল ছেলেটাল বাহিলটা তো এখন পুর্নযুবকের ছায়া টগবগ কলছে। কিন্তু তবুও কেন আমি তাল মাঝে একটা বাচ্চাকে দেখতে পাচ্ছি?? আল তুই বা কেন এমন বাচ্চাদেল মতো কলছিস?? এল কালন হলো তোল আল আমাল মধ্যে এক নিলভলশীলতা,ভলসা,অসীম ভালোবাসা লয়েছে। যেগুলো তোল আমাল ভলসাল থেকে তুই একটু একটু কলে গলে তুলেছিস। জীবনের সবচেয়ে নমনীয় মুহুল্তটা হলো ০-৫ বছল। এই বয়সে একটা বাচ্চা সামান্য ছোয়াতেই ভলসাল হাতদুটো চিনে ফেলে। সেজন্যই প্রত্যেকটা বাচ্চা যতই বল হোকনা কেন মা-বাবাল কাছে আসলে সে নিজেল লুপটা ভুলে গিয়ে একটা শিশুতে চলে আসে। ইচ্ছে কলে যে আসে এমনটা নয়,স্বভাবসুলভ এসে যায়। তাহলে সেদিক দিয়ে সন্ধ্যাল আচলনটাকে আমি স্বাভাবিকই মনে কলছি। ওল ১৫ বছল বয়সেল সবটা সময় তোল সাথে কাটিয়েছে আল এখনো কাটাচ্ছে। সেই ছোট্টটি থেকে তুই ওল পথপ্রদর্শক হিসেবে পথ চিনিয়ে দিচ্ছিস। ও কোন পথে পা ফেলবে সেটা তুই দেখিয়ে দিচ্ছিস। আল ও চোখ বন্ধ কলে সেটাই কলে যাচ্ছে। আমাল তো মনে হয় ওল মা এটাও জানেনা সন্ধ্যাল পছন্দেল খাবাল কি,এমন কি ও কোন ক্লাসে পলে সেটাও বলতে হলে কিছুক্ষন ভাববে। তাহলে এবাল তুই বল ওল বাচ্চাসুলভ আচলনে ওল কি কোনো দোষ আছে?””
রাত চুপ করে আম্মুর কথা শ্রবণ করে যাচ্ছে। তিয়ামতী গলাটা ভিজিয়ে গম্ভীর সুরে বললো,,
“” তবে এল পেছনে আলেকটা কালনও আছে। তুই ওকে যেভাবে আগলে লাখছিস সেটা বেশি হয়ে যাচ্ছে। ওকে বল হওয়াল জন্য তুই কোনো স্পেস দিয়েছিস কি? কিছু শিখতে হলে,বুঝতে হলে সামাজিক সখ্যতাল প্লয়োজন। সেটা কি ও পেয়েছে?? আমি যতটুকু জানি ওল তো কোনো ফ্লেন্ডও নাই। কেন নেই সেটা তুই ভালো জানিস। কিন্তু এতোটা বন্দী কলাটা কি ঠিক হচ্ছে?? পাখি তো চাইবেই একটু খোলা আকাশে উলতে,এখন আকাশে উলতে পালবেনা দেখেতো ব্লিষ্টিল পানি আকলে ধলবেই। সন্ধ্যাও তেমনি,ও হুটহাট চোখে যা দেখছে সেটাল মধ্যে আনন্দ খুজে পাচ্ছে,সেটা আকলে ধলতে চাইছে। এখন সেটা ভালো কি মন্দ সেটা জানতে হলে ওল সেলকম পলিবেশেল প্লয়োজন। যেটা তুই ওকে দিচ্ছিসনা। লাত বাবা,আগলে লাখা ভালো,তবে বন্দী কলে নয়,আপোসে যতটুকু লাখা যায় ততটুকুই!””
~~
পরীক্ষা শেষে সন্ধ্যা এখন পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি। কেন বলেনি সেটা রাত ঠিক বুঝতে পারছে তাই সে ও চাইছেনা কিছু জিজ্ঞেস করতে। কিন্তু বেশ কিছু সময় নিরবতা কাটিয়ে সন্ধ্যা মন খারাপ করে বলল,,
“” রাত ভাইয়া,রিমানটা খুব পচা। কাল তো আমাকে কল দিলোইনা। আর আজ আমার সাথে বসলোও না। সেই সবার শেষে গিয়ে বসেছে। আমার সাথে একটা কথা পর্যন্ত বললোনা। ওটার ফোন ভেঙে গুড়ো গুড়ো হয়ে যাক। যেন আর কোনো মেয়ের নাম্বারে কল দিতে না পারে। মুখের কথা ফুরিয়ে যাক,যাতে আর কারো সাথে কথা বলতে না পারে।””
সন্ধ্যার কথায় রাত মুচকি হেঁসে উঠে। স্টিয়ারিংটা চেপে ধরে মোড় গুড়িয়ে নিলো বাসার উদ্দেশ্যে।
~~
নিজের থার্ড ইয়ারের শেষ পরীক্ষাটা দিয়ে বাসায় ফিরছে রাত। চোখে,মুখে ক্লান্তিছাপ,প্রচন্ড ক্ষুধাও লেগেছে বাহিরের খাবার খুব একটা পছন্দ নয়। তাই বাড়িতে খাবে বলেই খুব তাড়াহুড়োতে বাসায় পৌছুলো। দরজায় পা ফেলতেই চোখ ছানাবড়। ডাইনিং টেবিল পুরো খালি।মেঝেতে চারপাশে ভাত,বিভিন্ন তরকারী,প্লেট,গ্লাস,চামচ সহ নানান জিনিস ছিটিয়ে আছে। কাচের জিনিসগুলো ভেঙে গুড়ো গুড়ো। চেয়ারগুলোও একেকটা একেক জায়গায় পড়ে আছে।
রিমা রাতকে উদ্দেশ্য করে মেঘের গর্জনে গর্জে উঠে বললো,,
“” আদরে আদরে বাদর বানিয়েছে। এ বাড়িতে আমি থেকে কি করবো? এ বাড়ির একটা মানুষও কি আমার কথা শোনে? নিজের পেটের মেয়েটা ও শুনেনা। এই হাত গুটিয়ে বসলাম আমি। আজ থেকে এ পরিবার থেকে আমার ছুটি।””
রাত চোখের ইশারায় মাকে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? তিয়ামতী কিছুটা এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বললো,,
“” সন্ধ্যা ক্ষেপেছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুর্ণিঝড়ের মতো সব গুড়িয়ে দিয়ে নিজের রুমে ঢুকে বসে আছে। ভেতর থেকে আটকানো। এতো করে ডাকলাম খুললোইনা মেয়েটা!””
চলবে
#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (৬)
রিমা রাতকে উদ্দেশ্য করে মেঘের গর্জনে গর্জে উঠে বললো,,
“” আদরে আদরে বাদর বানিয়েছে। এ বাড়িতে আমি থেকে কি করবো? এ বাড়ির একটা মানুষও কি আমার কথা শোনে? নিজের পেটের মেয়েটা ও শুনেনা। এই হাত গুটিয়ে বসলাম আমি। আজ থেকে এ পরিবার থেকে আমার ছুটি।””
রাত চোখের ইশারায় মাকে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? তিয়ামতী কিছুটা এগিয়ে এসে নিচু স্বরে বললো,,
“” সন্ধ্যা ক্ষেপেছে। কিছুক্ষণ আগে ঘুর্ণিঝলেল মতো সব গুলিয়ে দিয়ে নিজেল লুমে ঢুকে বসে আছে। ভেতল থেকে আটকানো। এতো কলে ডাকলাম খুললোইনা মেয়েটা!””
“” কেন,ওর আবার কি হলো?””
“” তুই গিয়ে দেখ।””
রাত ধ্বংসাবশেষ রুমটার দিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলো। দ্রুত পা চালিয়ে সন্ধ্যার রুমের দিকে এগুচ্ছে। মেয়েটার মধ্যে বেশ চাঞ্চল্যতা থাকলেও কখনো এ রকম ক্ষ্রিপ হতে দেখেনি রাত। জিদ আছে প্রচন্ড,রাগ ও আছে,একরোখা টাইপের ও কিন্তু এমন ভয়ংকর কান্ড ঘটানো তার দ্বারা সম্ভব হয়নি। বড়দের অবাধ্য,মুখে মুখে তর্ক করতেও কখনো দেখেনি। তার তো যত অবাধ্য সব আমার সাথে,যত তর্ক সব আমার সাথে। তাহলে আজ এমন কি হলো যে এমন ঘুর্ণিঝড়ের রুপ ধারন করে ফেললো??
সন্ধ্যার রুমের বন্ধ দরজাটার কাছে দাড়িয়ে আছে রাত। নরম সুরে ডেকে উঠলো সন্ধ্যাকে,,
“” সন্ধ্যা,দরজাটা খোল তো।””
ভেতর থেকে কোনো শব্দ না পেয়ে এবার দরজায় নক করতে করতে বললো,,
“”কি হয়েছে? হঠাৎ এতো রাগ কেন? আমাকে বলবিনা?””
এবার ভেতর থেকে পা চালানোর শব্দ। দরজার কাছটাতে এসে থেমে গিয়েছে। রাত গলার স্বরটা আরেকটু আদুরীভাব নিয়ে বললো,,
“” দরজা খোল,সন্ধ্যা।””
“” খুলবোনা।””
“” কেন? এই বদ্ধঘরে বন্দী থাকার ইচ্ছে জেগেছে নাকি? এখন কি তোর বন্দীদশার স্বাদ নেওয়ার শখ হয়েছে? সেটা তুই আমাকে বলতে পারতি। তাই বলে এভাবে খাবার ছুড়ে ফেলবি? তোকে আমি কতবার বলেছি যে,রাগ রাগের জায়গায় থাকবে তা যেন ভাতে না পড়ে!””
“”সরি রাত ভাইয়া।””
“” হুম! এবার দরজাটা খোল।””
“” না।””
“” আবার না কেন?””
“”যতক্ষণনা আমার দাবি মানা হবে ততক্ষণ আমি এই বন্ধ দরজার পেছনেই পড়ে থাকবো।””
“” দাবি? কিসের দাবি? তুই কি এখন রাজনীতিতেও নেমে পড়েছিস? আমার দাবি মানতে হবে মানতে হবে,বলে হাত আকাশে তুলে আন্দোলন করবি ভাবছিস??””
“” হুম। তবে রাস্তায় নয়,বাসাতে। আমি একজন প্রতিবাদী নারী হবো।””
“” প্রতিবাদী নারী?””
“” হুম।””
“” আগে দরজাটা খোল। তোর প্রতিবাদী মুখখানা দেখি।””
সন্ধ্যা দরজা খোলে রাতকে টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে নিয়েছে। সাথে সাথে দরজায় সিটকিনি দিয়ে দিলো।
“” আবার দরজা আটকাচ্ছিস কেন?””
“” দরজা না আটকালে আমার দাবী পুরন করবো কিভাবে?? আজ তো আমি বন্ধ দরজার অনশন পালন করবো।””
রাত ব্রু কুচকে বললো,,
“” তোর দাবীগুলো কি কি বলে ফেলতো।””
সন্ধ্যার মুখটা সাথে সাথে মলিন হয়ে এলো। ঝপ করে মেঝেতে বসে পড়লো। একটু জোর গলায় বললো,,
“” আমি কোনো গার্লস কলেজে পড়বোনা। এ বাসার সবাই আমাকে একলাপাখি করে বন্দী করে রেখেছে। মানুষতো পাখি বন্দী করলেওএকটা মেয়ে পাখির সাথে ছেলে পাখিকে রাখে। আর আমাকে দেখো,আমাকে পুরো একা বন্দী করে রেখেছে। আমার কেন কোনো বন্ধু নাই? আমি কেন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনা? আমি কেন অন্যদের মতো উড়তে পারিনা?? আমি এসব আর মানবোনা। আমার এখন খোলা আকাশ চাই। যেখানে হাজারও রঙবেরঙের পাখির কিচিরমিচির থাকবে। আমিও ওদের সাথে হৈ হুল্লোড় করতে করতে উড়বো।””
সন্ধ্যার কথাতে রাত আৎকে উঠেছে। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করার বোধগম্য হচ্ছেনা। সন্ধ্যার করা এতো এতো প্রশ্নের উত্তরে সে কি বলবে?? এই সবকিছু তো তার কথাতেই হচ্ছে।
সন্ধ্যা রাতের দিক থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে বললো,,
“”রাত ভাইয়া,তোমার আম্মু কত ভালো,তুমি সারাদিন বাইরে থাকলেও কিছু বলেনা। রাত করে আসলেও কিছু বলেনা। তুমি তো বয়েজ স্কুল,কলেজও পড়োনি। তোমার কত কত বন্ধু। আর আমার আম্মু-আব্বু এমন কেন? তুমি আমার আব্বুকে এখনি গিয়ে বলবে আমি কোনো গার্লস কলেজে ভর্তি হবোনা। হবোনা মানে হবোইনা।””
রাতের মনে হলো সে এখানেই থমকে গিয়েছে। তার জীবন ঘড়ীটা এবার আর তার ইচ্ছেতে না নিজের ইচ্ছেতে চলতে শুরু করে দিয়েছে। আচ্ছা সন্ধ্যা যদি জানতে পারে তার এই একলাপাখির বন্দীদশার পেছনে আমার ইচ্ছেরা বিদ্যমান। তাহলে কেমন হবে? ও কি আমার সাথে রাগ করবে?? কিন্তু আমি তো ওকে একলাপাখি নয়,আমার জীবনপাখি হিসেবে রাখতে চেয়েছিলাম। তাহলে ও কেন আমাকে ওর সঙ্গী হিসেবে দেখতে পারছেনা??
রাতকে এমন চুপ হয়ে থাকতে দেখে সন্ধ্যা ওর হাতে ধরে কিছুটা ঝাকুনি দিয়ে বললো,,
“”বলোনা বলবে তো?””
“” হুম।””
রাত চুপচাপ দরজার দিকে এগুলে সন্ধ্যা আবার বললো,,
“” আমার বাসায় টিভি চাই,এতোগুলো বছরে আমার কতগুলো রোমান্টিক মুভি মিস হয়ে গেছে,একটা ফোনও চাই,এতোবড়। তুমি আমাকে ফেসবুক,হোয়াটস অ্যাপ,ইমু,টুইটার,ইমেইল সব খুলে দিবে।””
“” তোর একসাথে এতো কিছু চাই?””
সন্ধ্যা মুখভর্তি হাসি নিয়ে বললো,,
“” হুম। সব চাই। এখন থেকে আমার সব চাই,সব।””
রাত বিড়বিড় করে বললো,শুধু আমাকেই চায়না তোর,তাইনা?
~~
সিকান্দার সাহেব গম্ভীর হয়ে বললেন,
“” তুমি কি ভেবে-চিন্তে এ সিদ্ধান্তে এসেছো রাত? রিদ ভাইয়াকে আমি পারসোনালি অনেক শ্রদ্ধা করতাম। তুমি তার ছেলে হিসেবে যেমন আমরা তোমাকে আমাদের নিজের ছেলের মতো করে ভালোবেসে এসেছি,তেমনি তুমি ছেলে হিসেবেও চমৎকার। আর আমরা বসাই এটাও জানি তুমি আমার মেয়েকে কতটা ভালোবাসো। সেইসব খাতিরেই আমরাতো এটাও মেনে এসেছি সন্ধ্যা একটু বুঝতে শিখলেই তোমাদের বিয়ে দিয়ে দিবো। আর তাই তোমাদের মাঝে আমরা কখনোই কোনো বাধার দেয়াল দাড় করিনি। তুমি যেভাবে বলেছো সেইভাবেই সন্ধ্যার ভবিষ্যতের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছোটবেলা থেকে ওকে যেভাবে বড় করা হয়েছে তার তুলনায় এখন তোমার হুট করে সিদ্ধান্তে যদি কোনো বাজে প্রভাব পড়ে যায় সেটা সামলে নিতে পারবে তো?? ও এখন জেদ ধরেছে পরে সব ভুলে যাবে। তুমি ওর জেদে নিজে কেন দমে যাচ্ছো?””
সিকান্দার সাহেবের এতো বড় বক্তব্য শেষেও যখন রাত কোনো হা,হু করেনি তখন উনি নিজের চেয়ার ছেড়ে রাতের কাধে হাত রাখলেন। রাত চমকে উঠতেই সিকান্দার সাহেব বলে উঠলেন,
“” সন্ধ্যাকে আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি। তুমি কোনো চিন্তা করোনা।””
“” না ফুপা। ও যেমনটা চাইছে তেমনটা করতে দাও।””
~~
হালকা গোলাপী থ্রি-পিস পড়েছে সন্ধ্যা,সাথে ঠোঁটে লিপস্টিক,কানে ছোট সাদা পাথরে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। সন্ধ্যাকে খুব একটা সাজতে দেখেনি রাত। তাহলে আজ কেন এমন সেজেছে? নতুন শহরে পা রাখছে বলে?? সন্ধ্যার দিকে সরাসরি তাকাতে পারলোনা রাত। যদি ওকে বাধা দেওয়ার অদম্য ইচ্ছেটা আবার জেগে উঠে। ড্রাইভিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে সামনের লুকিং গ্লাসটার দিকে বারবার আড়চোখে চেয়ে দেখছে। চোখে,মুখে আনন্দ,উল্লাসটা যেন ওর কাজল রাঙা চোখটাকে আরো বেশি প্রাণবন্ত করে দিচ্ছে। ঠোঁটের কোনের হাঁসিটা মিলছেইনা। রাত নিজের বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসা দীর্ঘশ্বাসটা লুকিয়ে সামনের সারি সারি ছোট-বড় দু/চারচাক্কার গাড়ীগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো,এতোদিন আমি তোর বড় হয়ে উঠার যে প্রার্থনা করে এসেছিলাম তা ভুল ছিলো রে স্বপ্নবধু। আজ বড় আফসোস হচ্ছে রে,আমার সন্ধ্যা ছোটতেই বেশ ছিলো। এখন তো যত বড় হচ্ছে সে তত আমার নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। একদিন হয়তো আমি হাত বাড়িয়ে তোর হাতটা ধরতে চাইলেও আমার হাতটা শুন্যই পড়ে থাকবে।
“” রাত ভাইয়া,আজ প্রথম কলেজ যাচ্ছি বলে তোমার সাথে এলাম। এরপর থেকে কিন্তু আমি একা একা যাওয়া আসা করবো। তুমি বাসায় বলে দিও।””
“” হুম।””
~~
সন্ধ্যা নতুন কলেজে পা রাখতেই ও হাতদুটো দুপাশে মেলে আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। কিন্তু সে কি খেয়াল করেছে তার পাশের মানুষটির হার্টবিট থেমে গিয়েছে?? পুরো কলেজজুরে ছেলেমেয়ের উপস্থিতিতেও রাতের মনে হলো এখানে একমাত্র সন্ধ্যাই মেয়ে আর বাকি সব ছেলেমানুষ। যারা চাইলেই তার সন্ধ্যাকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারে।
সন্ধ্যাকে বিদেয় দিয়ে রাত চলে আসতে গিয়েও থমকে দাড়ালো। পেছন ঘুরে সন্ধ্যার চলে যাওয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেনি। দৌড়ে গিয়ে পেছন থেকে ওকে ঝাপটে ধরেছে। ঘটনার আকস্মিকতায় সন্ধ্যা ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। ওর চিৎকারে আশেপাশের সকল স্টুডেন্টরা জড়ো হয়ে আসছে।
“” রাত ভাইয়া,কি করছো। ছাড়ো আমাকে।””
সন্ধ্যার অনুরোধ রাতের কানে বাজলোই না। ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে এবার সামনে থেকে জড়িয়ে ধরে,চোখ বন্ধ করে আছে। নিজের দমটাও আটকে রেখেছে। আমার এতো কেন ভয় লাগছে স্বপ্নবধু। আমাকে যে ভয়নামক রাক্ষসটা খেয়ে ফেলছে। আমি তোকে হারিয়ে ফেলবোনা তো??
চারপাশের সকলের উপস্থিতেতে,তাদের অদ্ভুত চাহনিতে সন্ধ্যা বেশ বিব্রতবোধ করছে। রাতের শক্তবাধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে না পেরে বেশ অসহায়ও ঠেকলো। সন্ধ্যা প্রায় কেঁদেই দিবে এমন ভাবে আসতেই রাত ওকে ছেড়ে দিলো। দুহাতে কপোলচেপে ধরে বললো,,
“” সাবধানে থাকিস।””
রাত আর এক সেকেন্ডও ওখানে দাড়ালোনা। দ্রুতকদমে অনেকটা দৌড়েই বেড়িয়ে এলো সন্ধ্যার নতুন শহর থেকে।
~~
নতুন কলেজে সন্ধ্যার বন্ধুর অভাব নেই। ছেলে বন্ধু,মেয়ে বন্ধুর সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। নতুন ফোন নিয়ে সারাদিন বিজি। কখনো ফোনালাপ,কখনো চ্যাটিং বা কখনো ভিডিও কলে। এসবের জন্য তার হেল্প নেয়নি সন্ধ্যা। ড্রয়িংরুমের নতুন টিভিটা হয়তো ও এখনো অন করেও দেখেনি। টিভির সামনের সোফাটাতে বসে বসে রাত ঠিক ঠিক সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা করে। মাঝে মাঝে টিভি অন রেখে ঘুমিয়েও পড়ে। আজকাল আর সন্ধ্যার নতুন অদ্ভুদ ইচ্ছেগুলো জাগেনা। আসলেই কি জাগেনা নাকি এখন ইচ্ছেপুরনের মানুষ হয়ে গিয়েছে??
রাত সবই দেখে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও সে চুপ। কেন চুপ সে জানেনা। তবে এর শেষ দেখে ছাড়বে।
~~
“” রাত ভাইয়া,টিভিটা এভাবে দু টুকরো হয়ে পড়ে আছে কেন?””
রাত কুশনটা মাথার নিচ থেকে ছড়িয়ে সোফাতে সাজিয়ে রাখলো। বড় একটা হামি টেনে সন্ধ্যার দিকে তাকালো। সন্ধ্যা কি এখন পাঁচ কাপড় রেখে চার কাপড় পড়া শুরু করেছে??
উচুহিলটা পায়ে পড়ে সন্ধ্যা চিৎকার করে বললো,,
“” আজকে আমার আসতে দেরি হবে। তুমি আম্মুকে বলে দিওতো।””
কেন দেরি হবে? সে প্রশ্নটাও বের করতে পারলোনা রাত। আজকাল তার রাগগুলো মিয়িয়ে পড়ছে। সাথে সাথে অভিমানগুলো খুব করে চেপে ধরছে তাকে। কিন্তু এই অভিমানটা দেখার কি কেউ আছে?
~~
সন্ধ্যার কলেজের বাইরে গাড়ী নিয়ে অপেক্ষা করছে রাত। অনেক হয়েছে আর নয়। এভাবে চলতে দিতে পারবেনা সে। রাত গাড়ী থেকে নেমে দরজাটা ঠাস করে লাগিয়ে বললো,,তোর দেরি হওয়া আমি ছুটাচ্ছি। বেশি পেঁকে গিয়েছিস না?? কিছু বলছিনা দেখে যে কিছু বলবোনা এটা তোর ভুল ভাবনা। আমার তোকে চাই। তার জন্য তোকে রুমে কেন,ছোট্ট পাখির খাঁচাতেও বন্দী করবো।হুহ!
রাতের রাগকে ধুয়ে দিতেই হয়তো ঝপঝপ করে বৃষ্টি নেমে গিয়েছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে সামনে চোখ পড়লো। সন্ধ্যা উচু জুতো পড়ে আকাবাকা হয়ে হেঁটে বের হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ায় বেশ বিরক্ত হয়ে হাত দিয়ে পানি ঝেড়ে ফেলার মতো করছে। রাত তাড়াতাড়ি গাড়ী থেকে একটা ছাতা নিলো। খুলতে খুলতে সন্ধ্যার দিকে কিছুদুর এগিয়েই থমকে গিয়েছে। সন্ধ্যার শরীরে আর বৃষ্টির পানি পড়ছেনা। পড়বে কিভাবে ওর মাথায় ছাতা ধরার জন্য ওর রাত ভাইয়া ছাড়াও অন্য মানুষ আছে!
সন্ধ্যার হাঁসিমাখা ধন্যবাদটাও রাত এতদুর থেকে পড়ে ফেলেছে। যে ছাতার নিচে রাত আর সন্ধ্যা থাকার কথা সে ছাতার নিচে অন্য ছেলে?? রাগে পুরো শরীর দিয়ে যেন আগুন জ্বলছে রাতের। সেই আগুনে বৃষ্টির শুদ্ধ,ঠান্ডা পানিগুলোও গরম হয়ে বাষ্পাকারে উড়ে যাচ্ছে!
চলবে