ভালোবাসার রাত ২পর্ব ৩+৪

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৩+৪)

রাত ডিনার শেষে রুমে পা রাখতেই পেছন থেকে দরজা লাগানোর শব্দ! পিছে ঘুরতেই সন্ধ্যা ওর শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে দিয়েছে।

“” আরে কি করছিস?””
“” আজকে ছয় কাপড় খুলবোই খুলবোই!””
“” আরে আমি ছয় কাপড় পড়িনি তো।””
“” তোহ! কি হয়েছে? পড়োনি তো পড়ে নিবে।””

রাত সন্ধ্যার হাতদুটো আটকে নিয়ে বলল,,

“” কি পড়বো?””

সন্ধ্যা নিজের দুপায়ের সাহায্যে আটকে রাখা একটা ব্যাগ বের করলো। বিছানায় উল্টো করে ঢালতেই নানা রকমের কাপড় ছড়িয়ে পড়েছে। সন্ধ্যা মুখভর্তি হাঁসি নিয়ে বললো,,

“”এগুলো””

রাত অবাকের চরম পর্যায়ে গিয়ে আটকে আছে। মেয়েলি পাঁচকাপড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা বক্ষবন্ধনীটার দিকে চোখ যেতেই রাতের চোখ চরকগাছ।

“”সন্ধ্যা,তুই এখনি আমার রুম থেকে বের হবি। এক্ষুনি মানে এক্ষুনি!””

সন্ধ্যা রাতের করুন আদেশের কোনো পাত্তা দিলোনা। ভুল করে মুখের সামনে মাছি চলে আসলে যেমন বিরক্ত নিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ঠিক তেমনি সন্ধ্যা রাতের কথাটা সেভাবে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে কাপড় গুছিয়ে নিয়ে বললো,,

“” শার্টটা খোলা শেষ হলে প্যান্টটাও খুলবে। উফ! আমার যে কি খুশি লাগছেনা রাত ভাইয়া!! আমি হয়তো প্রথম নারী যে সব ছেলেকে হারিয়ে দিয়ে ছয় কাপড় খুলবে!””

রাতের চোখ গরম হয়ে আসছে। সাথে মাথার তালুটা টগবগিয়ে ফুটছে। ছেলেমানুষির লিমিট থাকে। তাই বলে এতোটা?? ও কি আসলেই ছেলেমানুষি করছে নাকি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালানোর জন্য এমন উৎভুক কর্মকান্ড নিয়ে হাজির হচ্ছে?? ১৩ পার হয়ে চৌদ্দতেও পড়েছে। বয়সের তুলনায় ছেলেমানুষিটা কি বেশি হয়ে যাচ্ছেনা?? এমন নয় তো মাথায় বুদ্ধীর ফোটা কম পড়েছিলো?? নাহ! বুদ্ধীতো ঠিকই আছে যেখানে মনে চাচ্ছে সেখানে ঠিকই লাগাচ্ছে।

সন্ধ্যা লাল,নীল,হলুদ বর্নের শাড়ী,ব্লাউজ,পেটিকোট পরপর সাজিয়ে নিচ্ছে। সবার আগে কোনটা পড়াতে হবে সেটাও ভেবে নিচ্ছে। ছোট থেকে বড় আকারে পরপর সাজিয়ে সব থেকে ছোট বক্ষবন্ধনীটা হাতে নিয়ে বললো,,,

“” রাত ভাইয়া,এটা কিভাবে পড়তে হয়??””

সন্ধ্যা কোনো উত্তর না পেয়ে পেছনে ঘুরলো পুরো রুম ফাঁকা!

সন্ধ্যা চটপট পুরো রুম ঘুরে ঘুরে খুজে খুজে না পেয়ে ওয়াশরুমেও দেখলো। কোথাও না পেয়ে ধপধপ পা ফেলে রাতের রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো। এক সেকেন্ডের মধ্যে কোথায় হাওয়া হয়ে গেলো?? রাত ভাইয়া কি হাওয়া হয়ে যাওয়ার ম্যাজিক শিখেছে??

~~

গভীর রাতের ঘনঘটা নিরিবিলি পথ পেরিয়ে বন্ধু সায়নের বাড়ি হাজির হলো রাত। আজ আমি এখানেই ঘুমাবো। কিছুতেই বাসায় যাওয়া যাবেনা। কিছুতেই না। এই মেয়েটা বড় হতে হতে আমার মান সম্মানের ছিটেফোটাও রাখবেনা। শেষে দেখা যাবে বিয়ে করতে চাইলে বলবে,তোমার মতো মানসম্মানশূন্য ছেলেকে আমি কিছুতেই বিয়ে করবোনা। আমারতো মানসম্মানভর্তি ছেলে লাগবে। যাতে প্রতিরাতে একটু একটু করে খশিয়ে আমি আনন্দে গড়াগড়ি করতে পারি!

সায়নের সাথে আড্ডায় মেতে উঠলেও মনটা কেমন উশখুশ করে উঠছিলো বাসায় যাওয়ার জন্য। তাই ঘুমানোর সিদ্ধান্ত নিলো রাত। আজকে ও বাড়ি যাওয়া যাবেনা মানে যাবেইনা। একেতো ঘুম আসছেনা তার উপর ঘড়ির কাটাও ঘুরছেনা। আজ যেন সময় কাটাগুলোর থমকে যাওয়ার আন্দোলন চলছে। তাদের দাবি মানা না হলে তারা চলবেনা। কিন্তু দাবিটা কি??

রাত বিছানা ছেড়ে শার্টটা পড়তে নিলে সায়ন বলে উঠলো,,

“” এতো রাতে কোথায় যাচ্ছিস?””
“” বাসায়।””
“” তুই না বললি আজকে এখানে থাকবি?””
“” বলেছিলাম বলে কি থাকতেই হবে?””
“” তা না। কিন্তু এতো রাতে না গেলেই কি নয়? রাতটা তো পার হতে দে। সকালে নাহয় চলে যাবি!””

রাত শার্টের বোতাম লাগিয়ে ফোনটা পকেটে পুরে বললো,,

“” আর এক সেকেন্ড এখানে থাকলে আমি অক্সিজেন,হাইড্রোজেন,নাইট্রোজেনসহ আরো যত জেন,অক্সাইড আছে সবকিছুর অভাবে মারা যাবো!””
“” সেকি রে,কেন?””
“” যার মুখ দেখে আমার সকাল শুরু হয়। যার মুখ দেখে আমার রাতটা শেষ হয়,যার অনুপস্থিতে আমার একবেলার ভাতও পেটে পড়েনা তাকে ছাড়া একরাত কাটানো ইম্পসিবল। মানুষের বাঁচতে হলে যেমন অক্সিজেনের উপস্থিতি অত্যাবশ্যকীয়। ঠিক তেমনি আমার বাঁচার জন্য অক্সিজেনের জোন হিসেবে সন্ধ্যার মুখদর্শন,নিশ্বাসের শব্দ প্রয়োজন।””

~~

রাতের বাসায় পৌছুতে প্রায় চারটে বেজে গিয়েছে। চুপিসারে নিজের রুমের দিকে পা ফেলতেই চোখ পড়লো আম্মুর রুমে। দরজার নিচ দিয়ে আলোর দীপ্ত ঠিকরে বের হয়ে আসছে। চুপিসারীকে বিদায় দিয়ে গটগট করে তিয়ামতীর রুমের দিকে ছুটছে। পুরো রুম অন্ধকারে ছেয়ে আছে। এই অন্ধকারের খানিকটা গভীরতা নষ্ট করতেই হয়তো তিয়ামতী মোম লাগিয়ে নিয়েছে। ছোট টেবিলটার কোনে মোমের আলোতে জ্বলজ্বল করছে সবুজ সুতিশাড়ী পরিহিতার।

“” তুমি আবার রাত জেগে লিখালিখি করছো?””

হঠাৎ এমন কন্ঠের ঝংকারে কেঁপে উঠেছে তিয়ামতী। তাড়াহুড়োতে মোমটা পড়ে গিয়েছে। রাত জলদিতে ছুটে গিয়ে মোমটা উঠাতে উঠাতে ভালোবাসায় শব্দে লিখা চিঠিটাতে আগুন লেগে গেলো। রাত কাগজটা নিচে ফেলে বললো,,

“” তুমি আমার কথা কেন শুনোনা,আম্মু?? যে স্বার্থপরের মতো তোমাকে একা ফেলে দিয়েছে তার জন্য তুমি এখনো পথ চেয়ে আছো??””

রাতের কথাতে তিয়ামতী চোখ পাকিয়ে বললো,,

“” আমার লুম থেকে এখনি বেলিয়ে যাবি।””
“” যাবোনা৷ যে নেই তার জন্য তোমার রাত জাগাটা আমি সহ্য করতে পারিনা। দিনে দিনে তুমি কতটা অসুস্থ হয়ে পড়ছো সেটা কি একবারও খেয়াল করেছো? আমার যে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই সেটা জানানো?””
“” না,জানিনা।””
“” আম্মু!””

তিয়ামতী রাতের কাধটা শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,

“” তোল আব্বু বেঁচে আছে। উনাকে বেঁচে থাকতেই হবে। আমাল জন্য আল তোল জন্য।””
“” না নেই।””
“” আমি বলছিতো আছে।””
“” তাহলে তোমার চিঠির উত্তর আসেনা কেন? বলো কেন আসেনা??””
“” আসবে দেখিস একদিন ঠিক আসবে। চিঠিল উত্তল হিসেবে উনি স্বয়ং হাজিল হবেন।””
“” কিছু আসবেনা। তুমি মিথ্যে আশায় পড়ে আছো।””
“” লাত!””

মায়ের চোখের অশ্রু রাতের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। তিয়ামতীর পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে বললো,,

“” আম্মু,প্লিজ তুমি উনার জন্য আর এক ফোটাও চোখেরজল ফেলবেনা। আমি সয়তে পারিনা!””

তিয়ামতী ছেলের মাথায় হাত রাখতে গিয়েও থমকে গেলো। চোখের পানি মুছে নিয়ে উল্টো হয়ে ঘুরে দাড়ালো।

“” আমি এখন ঘুমোবো!””

বিছানা ঠিকঠাক করে তিয়ামতীকে শুয়িয়ে দিয়ে কম্বলটা টেনে দিলো রাত।

“” সরি আম্মু!””

তিয়ামতী পাশ ফিরে বললো,,

“” যাল জন্য তোকে পেয়েছি,তাল ভালোবাসায় আমি অশ্রুলফোটা কেন,লক্ত ফোটা ফেলতেও দ্বিধা কলবোনা।””
“”তাহলে তার খোজে যাচ্ছোনা কেন? আমাকেও তো যেতে দিচ্ছোনা।””
“”” আমি তাকে কথা দিয়েছি সে না চাইলে তাল সামনে গিয়ে কেউ দালাবে না!””

রাত অভিমান নিয়ে চলে আসতে নিলে তিয়ামতী পেছন থেকে বললো,,

“” সন্ধ্যাকে লাগিয়েছিস কেন? না খেয়েই ঘুমিয়ে পলেছে মেয়েটা!””

~~

প্লেটভর্তি ভাত নিয়ে সন্ধ্যার রুমে ঢুকে পড়লো রাত। রুমের লাইটটা জ্বালাতে গিয়ে থমকে গিয়েছে। ধীর পায়ে সন্ধ্যার কাছে মাথার পাশটায় বসলো।

সোজা হয়ে শুয়ে থাকলেও হাত-পা সব আঁকাবাকা হয়ে আছে। পা একটা একটু ভাজ তো অন্য পা মেলে রেখেছে। হাত একটা বালিশের নিচে তো আরেকহাত কাধটা ছুয়ে আছে। পা দুটো পাশাপাশি সমানতালে রেখে হাতদুটো পেটের উপর রাখতে গিয়ে কিছু সেকেন্ডের জন্য থমকে গেলো রাত। আকাশী রঙের জামাটা পেটের দিক থেকে কিছুটা সরে আছে। গভীর অন্ধকারের নীল ড্রিম আলোতে জামার রঙটা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলেও পেটের রঙটা যেন আরো বেশি ভেসে উঠেছে! জামাটা টেনে ঠিক করে দিয়ে সন্ধ্যার হাতদুটো পেটে রেখে বিড়বিড় করে বললো,,আমার বেখেয়ালি,তুই কবে খেয়ালি হবি??

সন্ধ্যাকে ঠিকঠাক করে লাইটটা জ্বালিয়ে এসে ওকে ডাকতে গিয়েও আবার থেমে গেলো। সন্ধ্যার মুখপানে চেয়ে আছে গভীর মনোরন্জনায়! চুলগুলো চিকন রাবারব্যান্ডে বাধা থাকলেও চারপাশ থেকে খুলে গিয়ে পাখির বাসার মতো হয়ে আছে। ছোট কপালের নিচেই গভীর কালো ব্রুযুগলের মধ্যভাগে বেয়ে আছে সরু নাকের ভারী পাতা,ভাসাভাসা চোখদুটো এখন আর ভাসা বুঝা যাচ্ছেনা। ফর্সা গালের গোলগাল মুখটিতে চিকন ঠোঁটের কোনেই কালো ছোট্ট তিল। তিলের দিকে চোখ পড়তেই রাতের মনে হলো তিলটা আগের থেকে বড় হয়ে গেছে। সত্যিই কি তাই?

রাত সন্ধ্যার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,,

“” স্বপ্নবধু,তুমি কি জানো,,আমার স্বপ্নে তুমি বধু সাজে আমাকে পাগল করে দিয়েছিলে? সেই পাগলামিতেই তোমার বড় হওয়ার ভাজে ভাজে আমি মাতোয়ারা হয়ে ভাসছি তার থেকেও বেশি উথালপাথাল হয়ে যাবো তোমার বাস্তব বধু সাজে?? তখন আমাকে সামলানোর দায়িত্বটা কিন্তু তোমারই!””

সন্ধ্যা একটু নড়ে উঠতেই রাত নিজেকে সামলে নিয়ে আদুরী কন্ঠে ডেকে উঠলো,,

“” সন্ধ্যা? জলদি উঠে বস।””

সন্ধ্যা চোখ মেলে রাতকে দেখে নিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে বললো,,

“” তোমার সাথে কথা নাই।””
“” কথা বলতে বললাম কখন? খেতে বলেছি।””
“” যার সাথে কথা নাই তার কথাতে আমি খাবো কেন?””
“” সত্যি খাবিনা?””
“” না।””

রাত প্লেটে ভাত মেখে নিয়ে বললো,,

“” তা কথা নাই কেন? এতো জলদি তোর কথা ফুরিয়ে গিয়েছে?””

সন্ধ্যা শুয়ে শুয়ে কথা বলে আরামবোধ না পেয়ে উঠে বসলো। ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বললো,,

“” তুমি আমাকে বিজয়ী হতে দাওনি। তুমি শুধু আমার না সব মেয়েজাতিকে অপমান করেছো।””
“” ওমা আমি কখন অপমান করলাম?””
“” তাহলে কি করেছো?? যুদ্ধের ময়দানে আমাকে ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছো। আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দাওনি!””

রাত ভাতের দলা পাকিয়ে সন্ধ্যার মুখের সামনে ধরে বললো,,

“” আমি মোটেও অপমান করিনি। তুই ভুল সময়ে যুদ্ধে নেমেছিলি। মনে আছে ঐদিন তুই আমাকে কি বলেছিলি?””

সন্ধ্যা মুখের সামনে ধরে রাখা ভাতের দলাটা সরিয়ে বললো,,

“” কি?””
“” বলেছিলি বিয়ের পর ছেলেরা মেয়েদের পাঁচ কাপড় খুলে। তাহলে তুই বিয়ে না করেই যদি ছয় কাপড় খুলিস তাহলে কি হবে?? বিজয়ী হতে হলে তোকে সব রুলস ফলো করতে হবে। মানে তোকে আগে বিয়ে করতে হবে।””

সন্ধ্যা রাতের হাত টেনে ভাত মুখে পুরে খেতে খেতে বললো,,

“” সত্যিইতো। আমি তো রুলস ভঙ্গ করতে গিয়েছিলাম। ভাগ্যিস তুমি মনে করে দিলে। কিন্তু এখন আমি কাকে বিয়ে করবো?””

রাত দ্বিতীয় বারের মতো ওর মুখের সামনে ভাত ধরে বললো,,

“” কাউকেনা।””

সন্ধ্যাও ভাতটা সরিয়ে বললো,,

“” কেন?””
“” কারন তুই এখন পিচ্চি মেয়ে। আর পিচ্চি মেয়েকে কোনো ছেলেই বিয়ে করবেনা।””

সন্ধ্যা আবার রাতের হাত টেনে মুখে ভাত পুরে বললো,,

“” তাহলে তুমি করবে।””

রাত ভাতের প্লেটটা রেখে বললো,,

“” তোর কি আমাকে ছেলে মনে হয়না?””
“” সেটা কখন বললাম?””
“” তাহলে কোনো ছেলের মাঝে কি আমি পড়িনা?””

সন্ধ্যা ভাতের প্লেটটা রাতের হাতে তুলে দিয়ে বললো,,

“” তুমি সবার মাঝে কেন পড়বে? তুমি তো আমার রাত ভাইয়া। তুমি আমাকে কত ভালোবাসো। এই যে আমাকে খায়িয়ে দিচ্ছো,অন্যরা তো দিচ্ছেনা। তাই তুমি আলাদা। আলাদা বলেই তো তুমি বিয়ে করতে পারবে। আমরা এখনি বিয়ে করবো। তারপর ছয় কাপড় খুলে আমি বিদ্রোহী নারী হবো!””

রাত ভাতের প্লেট নিয়ে উঠে দাড়িয়ে বললো,,

“” আমি কোনো পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করতে পারবোনা।””
“” কেন?””
“” তোর জন্য কি আমি বাল্য বিয়ে করে জেলখানায় পচে মরবো?””

সন্ধ্যা অসহায় মুখ করে বললো,,

“” তাহলে আমি কাকে বিয়ে করবো?””
“” আগে তো আঠারোতে পা দে। তারপর ভাবিস।””
“” তখন ভেবে আমি সময় নষ্ট করতে পারবোনা। আমার আঠারো হলেই তুমি আমাকে সাথে সাথে বিয়ে করে নিবে।””
“” সামান্য ভাবতে গেলেও তোর সময় নষ্ট হয়ে যাবে?””
“” হুম।””
“” তোর সময় এতো দামী?”
“” হুম!””

রাত সন্ধ্যার দিকে পানি বাড়িয়ে ধরলো।

“” পানি খাবোনা।””
“” পানি আবার কি অপরাধ করলো?””
“” তুমি আগে আমাকে প্রমিস করো,আমার বিয়ে হওয়ার পর তুমি আমাকে ছয় কাপড় খুলতে দিবে।””
“” ওকে।””
“” এভাবে বললে হবেনা।””
“” তাহলে?””

সন্ধ্যা দৌড়ে নিজের টেবিলে গিয়ে একটা খাতা নিয়ে কি সব লিখে এসে বললো,,

“” এখানে সাইন করো!””

রাত কাগজটা নিয়ে দু লাইনের লিখা পড়তে লাগলো,,

**আমি কথা দিলাম সন্ধ্যাকে বিয়ে করার পর ওকে ছয় কাপড় খুলতে দিয়ে ওকে বিদ্রোহীনারীতে গড়ে উঠার সুযোগ করে দিবো**

“” এটাতে সাইন করলে কি হবে?””
“” তুমি যদি আমাকে ছয় কাপড় খুলতে না দাও তাহলে আমি তোমার নামে মামলা করবো।””

রাত চোখদুটে বড়বড় করে বললো,,

“” তুই আমার নামে মামলা করবি?””
“” হুম। সাইন করোনা। আমার গলায় ভাত আটকে আছে। পানি খাবো।””
“” আমাকে ব্ল্যাকমেইল করছিস?””
“” হুম।””

রাত সাইন করে ওর হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে বললো,,

“”যত্ন করে তুলে রাখিস। তোর কাজে না আসলেও আমার আসতে পারে!””

~~

সময়ের তালে তাল মিলিয়ে সন্ধ্যা বড় হয়ে উঠছে। আর তার চঞ্চলতার কৌতুহলগুলোকে কমাতে রাত নানা চিন্তায় বিভোর। সন্ধ্যার জন্য ৪ টা প্রাইভেট টিউটর রেখেছে। দরকার হলে আরো রাখবে। এই মুহুর্তে ওর মাথায় নতুন নতুন আজগুবি চিন্তা-ভাবনাকে দমাতে হলে ওকে ব্যস্ত রাখাটাকেই বেশি প্রশ্রয় দিচ্ছে রাত। সেফটি হিসেবে সবগুলো টিউটরই মেয়ে হিসেবে রেখেছে।

প্রাইভেটের পড়া,ক্লাসের পড়া,কোচিংয়ের পড়া,এ পরিক্ষা-সে পরীক্ষা আবার সামনেই টেস্ট শুরু হওয়াতে বেশ ব্যস্ত আর ক্লান্ত সময় কাটাচ্ছিল সন্ধ্যা। এতে যেন রাতের ভেতরে অজানা ভয়ের আশংকা কমে আসছিলো। ঠিক এ সময়েই হঠাৎ সন্ধ্যা বই খাতা নিয়ে হাজির। চুপচাপ রাতের পাশে চেয়ার টেনে অংক কষতে শুরু করে দিয়েছে।

রাত কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেও করছেনা। ভেতরে ভয়েরা এক দফা নাচানাচি শুরু করে দ্বিতীয় দফাতে শুরু করবে। না জানি আজ কি ইচ্ছে নিয়ে হাজির হয়েছে। দেখতে দেখতে এক ঘন্টা পার হয়ে দ্বিতীয় ঘন্টার জানান দিচ্ছে ঘড়ির কাঁটা কিন্তু তখনো সন্ধ্যা অংক কষেই যাচ্ছে। এতে রাতও একটু সস্তি পেলো। তাহলে কি মেয়েটা এবার সত্যি বড় হচ্ছে? হবেনা কেন? কয়েক মাস পরেই যে এসএসসি দিবে!

সন্ধ্যা চুপচাপ দুঘন্টা অংক কষে নিয়ে রাতের সামনে খাতাটা দিয়ে বললো,,

“” রাত ভাইয়া,দেখোতো সব ঠিক আছে নাকি?””

রাত গভীর পর্যবেক্ষনে কলম খুচিয়ে দেখায় যেইনা ডুব দিয়েছে তখনি সন্ধ্যা বলে উঠলো,,

“” তুমি কি সিগারেট খাও?””

রাত নিজের মনোযোগ খাতাতে রেখেই ছোট্ট করে বললো,,

“” না।””
“” তাহলে আমি সিগারেট কোথায় পাবো?””

এবার রাতের টনক নড়ে উঠলো। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” তুই সিগারেট দিয়ে কি করবি?””
“” দরকার আছে। তুমি আমাকে এনে দাও!””
“” তোর কি এখন আমাকে সিগারেটের ধোয়া খাওয়ানোর ইচ্ছে জেগেছে নাকি?””
“” তোমাকে খাওয়াবো কেন? আমি ছেকা খাইছি। আমি খাবো!””

চলবে

#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৪)

রাত গভীর পর্যবেক্ষনে কলম খুচিয়ে দেখায় যেইনা ডুব দিয়েছে তখনি সন্ধ্যা বলে উঠলো,,

“” তুমি কি সিগারেট খাও?””

রাত নিজের মনোযোগ খাতাতে রেখেই ছোট্ট করে বললো,,

“” না।””
“” তাহলে আমি সিগারেট কোথায় পাবো?””

এবার রাতের টনক নড়ে উঠলো। সন্ধ্যার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“” তুই সিগারেট দিয়ে কি করবি?””
“” দরকার আছে। তুমি আমাকে এনে দাও!””
“” তোর কি এখন আমাকে সিগারেটের ধোয়া খাওয়ানোর ইচ্ছে জেগেছে নাকি?””
“” তোমাকে খাওয়াবো কেন? আমি ছেকা খাইছি। আমি খাবো!””

সন্ধ্যার কথাতে রাত চমকে উঠলেও সেটা প্রকাশ পাচ্ছেনা। শান্তস্বরেই বললো,,

“” ছ্যাকা খেয়েছিস মানে?””
“” উফ! তুমি ছ্যাকা খাওয়াও বুঝোনা? তুমি তো খুব বাহাদুরী দেখাও আমার থেকেও কত বড় অথচ ছ্যাকার মানেই বুঝোনা!””
“” এতো বকবক না করে আসল কাহিনি বল।””

সন্ধ্যার বিরক্তিমাখা মুখটা নিমিষেই লজ্জায়মেখে যাচ্ছে। যেমন তেমন লজ্জা না,মহিমায়নী লজ্জা যাকে বলে! লজ্জাতে সন্ধ্যা খাতাতে আকিবুকি আঁকতে আঁকতে চোখের চাহনি লুকোনোর চেষ্টা করছে। মুখে কোনো কথা নেই। এমনই এক ভাব যে,তার লজ্জা দেখেই রাত সব বুঝে নিবে।

রাত সন্ধ্যার হাত থেকে খাতাটা টেনে সরিয়ে বললো,,

“” চুপ করে আছিস কেন? আমার দিকে তাকাতো!””

সন্ধ্যা এক পলক তাকিয়ে সাথে সাথে আবার চোখ নামিয়ে নিয়েছে। এমন সন্দেহআশ্চর্য আচরনে রাতের ভেতরটা তখন ঢিপঢিপ করে উঠছে। ও কি তাহলে কচি বয়সের প্রেমে ডুবেছে?? কিন্তু কি করে সম্ভব??

রাত কিছুটা জোর গলায় আবার বললো,,

“” বলবি কিছু??””

সন্ধ্যা মাথা উপর নিচ করে হ্যা বুঝাতেই রাত নিজের দমটা বন্ধ করে আবার বললো,,

“” তাহলে বল!””

এবার হুট করেই সন্ধ্যার সব লজ্জা ভাগ করে নিজ থেকে আলাদা করে নিয়েছে। অনেকটা ঢিল মেরে ফেলে দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,,

“” পরশুদিন..””

রাত তাড়াহুড়োতে বললো,,

“” পরশুদিন কি?””
“” উফ! আমাকে বলতে দিবে তো। চুপ করে শুনো।””
“” ওকে বল।””
“”পরশুদিন ক্লাস শেষে গেইটে দাড়িয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম ঠিক তখনি…””
“” তখনি কি?””
“” ধুর বলবোইনা।””
“” কেন?””
“” তুমি মাঝখানে প্রশ্ন করে আমার লাভস্টোরিকে অপমান করছো।””
“” তোর লাভস্টোরি? তোর লাভস্টোরিও হয়ে গেছে?””
“” কেন আমার লাভস্টোরি হওয়া নিষেধ নাকি? বুঝেছি তুমি আমার লাভস্টোরির সাথে আমাকেও অপমান করছো। তোমাকে আর কিছু বলবোনা।””

সন্ধ্যা রাগ দেখিয়ে উঠে যেতে নিলে ওর হাতটা চেপে ধরে রাত। অসহায়গলায় বললো,,

“” করবোনা।””
“” কি?””
“” অপমান। প্রশ্নও করবোনা। বল না পরশুদিন কি হয়েছিলো!””
“” ঠিক তো?””
“” হুম।””

সন্ধ্যা এবার বেশ আরাম করে বসলো। পা দুটো চেয়ারের উপর তুলে ভাজ করে নিয়েছে। জ্ঞানী জ্ঞানী ভাব নিয়ে বললো,,

“” ঠিক তখনি দুটো ছেলে আমার সামনে দিয়ে হেঁটে গেলো। একটা ফর্সা তোমার মতো। আরেকটা কালোবর্নের। যে ছেলেটা কালো সে একটা কালো শার্ট পড়ে ছিলো,গলায় মোটা শিকলচেইন,চোখে কালো সানগ্লাস,হাতে প্লাস্টিক ফিতে,পায়ে কালো চামড়ার চিকন ফিতের জুতো। উফ! কি যে সুন্দর লাগছিলো না রাত ভাইয়া। আমিতো হা করে তাকিয়ে রইলাম। আর সাথে সাথে ক্রাশ এবং প্রেম একসাথে খেয়ে বসলাম। প্রথমে ক্রাশটা বেশি পার্সেন্ট থাকলেও এখন মনে হচ্ছে প্রেমটা বেশি ছিলো।””

সন্ধ্যার কথাতে রাত হা করে তাকিয়ে রইলো। এমন কালো পাহাড়ের প্রেমে পড়ে গেলো??

“” এক দেখায় তোর এতো কিছু হয়ে গেলো?””
“” হুম হলোইতো।””
“” তো,এটার সাথে ছ্যাকা কি করে আসলো??””
“”এসেছেইতো। আমি যে কাল সারাদিন ক্লাস না করে গেইটের সামনে দাড়িয়ে আমার কালা প্রেমের অপেক্ষায় ছিলাম সে কেন এলোনা?? তুমি জানো আমি কত আশা নিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম? চিঠিও তো লিখেছিলাম। কিন্তু সে আমার সব আশা,সব প্রেম,আমার প্রেমময় চিঠি সব অক্ষরগুলোকে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে দিয়েছে। তুমিই বলো আমি এইটুকু মেয়ে হয়ে এতোবড় কষ্ট,এতো বড় ছ্যাকা কি করে সইবো?””
“” একদিন আসলোনা বলে তুই ছ্যাকা খেয়ে ফেললি?””
“” হুম। একদেখায় যদি প্রেম হয় তাহলে একদিন দেখা না হলে ছ্যাকা হবেনা কেন? অবশ্যই হবে।””

রাতের রাগে হাত-পায়ে জ্বলন শুরু হয়ে গেছে। ইচ্ছে করছে সন্ধ্যাকে কষে দুটো চড় মেরে বুঝিয়ে দিতে প্রেম আর ছ্যাকা মিলেমিশে এক হয়ে গেলে কেমন হয়।

“” এখন বলো,আমার সিগারেট কখন এনে দিবে?? আমার কিন্তু কালো কালার সিগারেট চাই।””
“” কালো লাগবে কেন?””
“” ওমা,আমার কালা প্রেমের শোক পালন করতে হলে তো কালোই লাগবে। আর আমি কি এমনি এমনি প্রেমে পড়ছি নাকি? তুমি জানোনা কালো আমার ফেবারিট কালার? কালো দেখলেই আমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।আচ্ছা রাত ভাইয়া,তুমি কেন কালো হলেনা? তাহলে আমি তোমাকেও খেয়ে নিতাম।””
“” আমাকে খেয়ে নিতি?””
“” হুম। তবে তোমাকে খেতে আমার অনেক কষ্ট করতে হতো। তুমি যে সুঠামদেহির অধিকারি। এখন থেকে তুমি না খেয়ে থাকবে।””
“” কেন?””
“” যাতে তুমি চিকন ফিনফিনে হয়ে যাও। তাহলে আমার খেতে সুবিধা হবে।””
“” আমাকে খেয়ে কি করবি?””
“” পেটে নিয়ে ঘুরবো। আর সবাইকে বলে বেড়াবো,আমার রাত ভাইয়া আমার পেটে থাকে।””

হু! এসবি পারবি। আমি যা চাই তা পারবিনা। বুকে না রেখে পেটে রাখার প্লেন করে ফেলেছিস। কয়দিন পর বলবি রাতভাইয়া,তুমি পুচকি লাল পিপড়ে হলেনা কেন? তাহলে আমি তোমাকে পায়ে পিষে দিতাম। তুমি জানোনা লাল রঙ আমার কত অপছন্দের??? কিন্তু আমি যে অপেক্ষায় আছি তোর ভালোবাসায় পিষে যেতে। মিশে যেতে তোর মনের হাজারও রঙের রংধনুটাতে! রাত ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,,

“” সন্ধ্যা রুমে যা।””
“” কেন?””
“” আমার ঘুম পাচ্ছে।””
“” কিন্তু আমার সিগারেট?””

সিগারেটের কথা শুনতেই রাতের চোখদুটো অগ্নিলিলায় লিলায়িত। একটা কেন হাজারও সিগারেট ওই লিলাতে জ্বলে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রাগটাকে চোখের পাতায় আড়াল করে বললো,,

“” আমি এনে দিতে পারবোনা।””
“” কেন?””
“” আমার কাছে টাকা নেই।””
“” টাকা নেই মানে? তুমি এতো দামড়া ছেলে অথচ সামান্য একটা সিগারেট কেনার টাকা নেই?””
“” না নেই।””
“” তাহলে মামির কাছ থেকে নাও,আম্মু-আব্বুর কাছ থেকে নাও। আমার কাছ থেকেও নিতে পারো।””
“” আমি কারো কাছ থেকে নিতে পারবোনা। তুই কি এখন যাবি?””
“” তুমি এমন চোখ বন্ধ করে কথা বলছো কেন?””
“” ঘুমাচ্ছি তাই।””

সন্ধ্যা রাতের চোখের সামনে হাতটা নাড়িয়ে বললো,,

“” দাড়িয়ে দাড়িয়ে ঘুৃম?””
“” হুম।””
“” তোমার এখনি ঘুমাতে হচ্ছে? তোমার জন্য আমি আমার কালা প্রেমের শোকটাও পালন করতে পারলাম না। তুমি একটা পচা-পচা-গন্ধপোকার মতো পচা!””

সন্ধ্যা বিরবিড় করতে করতে বের হয়ে গেলো।

~~

তীব্র নিকোটিনের গন্ধ ঠেকছে রাতের নাকে। ঘুমের ঘোরে গন্ধটা বারবার মাথাটা নাড়িয়ে দিলেও তখনো বুঝে উঠতে পারছিলোনা রাত। এপাশওপাশ করে ঘুমের মাঝেই বিভোর। কিন্তু কারো লাগাতার কষ্টায়িত কাশির চটে রাত লাফিয়ে উঠলো। কি হচ্ছে বুঝার জন্য চারপাশে চোখ বুলাচ্ছে। সজাগ থাকায় গন্ধটা এবার ব্রেনে প্রচন্ড চাপ লাগিয়েছে। বিছানা ছেড়ে চটজলদি লাইটটা অন করতেই রাতের মাথা নষ্ট হওয়ার উপক্রম। নিজের রুমের এককোনে বসে আছে সন্ধ্যা। কালো কাপড়ে নিজেকে মুড়িয়ে নিয়েছে। কালো ঝলমলে কাধছাড়া খোলা চুল,চোখে কাজল,ঠোঁটেও কি কালো লিপস্টিক লাগিয়েছে? নাহলে এতো কালচে রঙ হেসে উঠে আছে কেন?? কিন্তু তা নিখুতভাবে বুঝার সময় নেই রাতের। কালোরাঙা ঠোঁটদুটোতে চারআঙুলে চেপে আছে কালো জ্বলন্ত সিগারেট। রাত দৌড়ে সিগারেটটা ধরতে যাবে তার আগেই সন্ধ্যা দ্বিতীয় দফায় কেঁশে উঠেছে। কাঁশতে কাঁশতে দম যায় যায় অবস্থা। রাত ওর পিঠে হাত বুলাতে বুলাতে বললো,,

“” তুই সিগারেট কই পেলি?””
“” আমি কিনে এনেছি। তোমার মতো আমি দামড়ি না হলেও আমার কাছে অনেক টাকা আছে। তুমি আমার লাভস্টোরির শোক পালন করতে না দিলে কি হবে? আমি তো পালন করবোই। আমার পেহেলা পেহেলা পেয়ার!””

সন্ধ্যা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আসতেই ওর হাত চেপে ধরলো রাত। সিগারেটটা শক্তমুঠোতে চেপে ধরে আছে সন্ধ্যা।

“” সন্ধ্যা,ওটা আমাকে দে বলছি। তোর হাতে লেগে যাবে।””
“” দিবোনা। আমি আমার কষ্ট ভুলবো। আমার কালা প্রেম কেন এলোনা? কেন ছ্যাকা দিলো আমাকে? কেন কেন কেন????””
“”তোর কেন এর উত্তর পরে দিচ্ছি,আগে এটা ছাড়!””
“” কেন ছাড়বো? আমিতো এখনো ভালো করে খাইনি। পেটে ঢুকার আগেই কাশির সাথে সব বেড়িয়ে আসছে,সব যদি বেড়িয়ে আসবেই তাহলে এগুলো কেন খায়?””

এই মুহুর্তে সন্ধ্যার কথার উত্তর দেওয়ার অবস্থায় নেই রাত। রাতের হাত থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে সিগারেটটা পুনরায় মুখে পড়লো সন্ধ্যা। এবার বেশ ক্ষেপে গেলো রাত। কিছুটা জোরপুর্বক সিগারেটটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। দুজনের দস্তাদস্তিতে সিগারেটের অগ্নিমুখটা গিয়ে রাতের হাতে লেগেছে। রাত নিচু শব্দে আহ! করে উঠতেই সন্ধ্যা নিজের হাতটা সরিয়ে নিয়েছে। তাতে যেন রাতেরও সুবিধা হলো, সিগারেটটা নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়েছে। সন্ধ্যা বেশ ভয় ভয় নিয়ে রাতের ঝলসে যাওয়া জায়গায় হাত দিতে গেলে রাত ওকে আটকে দিলো।

“” তোর মুখে বিশ্রী গন্ধ করছে সন্ধ্যা। যা দাঁতটা ব্রাশ করে শুয়ে পড়।””

সন্ধ্যা কাদুকাদু কন্ঠে বললো,,

“” তোমার বুঝি খুব লেগেছে? সরি রাত ভাইয়া।””
“” কোথায় যে লেগেছে সেটা যদি বুঝতি!””
“” বুঝবোনা কেন? আমি কি কানা? এইতো আমি দেখতে পারছি,তোমার হাতে লেগেছে।””
“” হুম। যা রুমে যা।””

সন্ধ্যা চলে যেতেই রাত উঠে দাড়ালো। মেঝেতে পরে থাকা আংশিক বেঁচে থাকা জ্বলন্ত সিগারেটটা উঠিয়ে নিলো। এই সিগারেটটার মতো আমার ভেতরটাও কি তুই এভাবে জ্বালিয়ে শেষ করে দিতে চাচ্ছিস,স্বপ্নবধু?? এদিকে আমি তোকে আমার বউ বানানোর স্বপ্ন নিয়ে প্রতিটা রাতে চোখ বন্ধ করছি একটি নতুন আশার দিনের জন্য আর তুই কি করছিস?? তোকে এতো এতো আগলে রেখেও কেন আমার মাঝে বন্দী করতে পারছিনা?? যত বড় হচ্ছিস তত আমার জালকে ছিড়ে ছিড়ে বের হয়ে আলগা হয়ে যাচ্ছিস। তুই কবে আমার ভেতরটা বুঝার চেষ্টা করবি?? আমি পাগল হয়ে গেলে???

সিগারেটের শেষ অংশটুকু শেষ হওয়ার আগেই নিজের হাতে চেপে ধরলো রাত। সন্ধ্যার বেখেয়ালির জ্বালিয়ে দেওয়া জায়গাটার ঠিক পাশে। পাশাপাশি দুটো ঝলছে যাওয়া বৃত্তের দিকে তাকিয়ে বললো,আমি তোর পাশে ঠিক এভাবে সারাজীবন থাকার জন্যে অপেক্ষীয়মান অনলে জ্বলছি আর তুই এক পলকের কালা পাহাড়কে দেখে প্রেমে ধসে পড়ছিস,আবার ছ্যাকা খেয়ে সিগারেট খেয়ে শোক পালন করছিস,সাথে আমাকেও পুড়িয়ে মারছিস। আমাকে এতো জ্বালাচ্ছিস তো এর সব শোধ আমি তুলবো- তুলবো-ঠিক তুলবো। শুধু সময়ের অপেক্ষায় আছি।

~~
আজকে সন্ধ্যার এসএসসি পরীক্ষা শুরু। সারারাত নির্ঘুমে কাটিয়েছে রাত। সন্ধ্যার পরীক্ষা নিয়ে নয়,যেখানে সন্ধ্যার সিট পড়েছে সেইখানটার জন্য। ছেলেদের থেকে দুরে দুরে রাখার জন্য যত কৌশল আছে সব ঢেলে দিয়ে অতিরিক্ত থাকলে সেটাও প্রয়োগ করেছে সন্ধ্যার উপর। তবুও মনের ভেতরে ভয়েরা কুকড়িয়ে উঠে। পরীক্ষা গার্লস স্কুলে নয় অন্য স্কুলে দিতে হবে। আবার না জানি কোন ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে কোন ভয়ংকর ঘটনা ঘটায়!

পরীক্ষা শেষে রাত সন্ধ্যাকে নিয়ে বাসায় ফিরছে। এনিয়ে বিনিয়ে বারবার জানার চেষ্টা করছে নতুন কিছু ঘটিয়েছে নাকি। কিন্তু ওকে তো স্বাভাবিকই লাগছে। তাহলে কি এবার একটু সুস্থির নিশ্বাস নেওয়া যায়??

~~

মুখের মধ্যে নরম ভারী কিছুর চাপ পড়াতে রাতের ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ মেললেও কিছু দেখতে পারছেনা। মুখের উপরে খসখসে কিছু একটা বারবার ঘষা লাগছে। বারবার নড়ে উঠাতে বুঝতে পারলো সন্ধ্যার পেট ছুয়ে আছে রাতের নাক।

রাত দম বন্ধ করে বলে উঠলো,,

“” নিশ্বাস আটকে মারবিতো,বালিশ চেপে ধরে মেরে ফেলনা। পেট দিয়ে চেপে ধরে আছিস কেন? একটু শান্তিতে মরতে দে।””
“” উফ! তোমার ফোনটা কোথায়? খুজে পাচ্ছিনা।””
“” ফোন খুজার জন্য এভাবে মেঝেতে পা ঠেকিয়ে উপুত হতে হবে? তাও আমার মুখের উপর দিয়ে? বুদ্ধী কি তোর হবেনা?? তুই কি এখনো ছোটটি আছিস রে সন্ধ্যা? তোর বড় হওয়ার সাথে সাথে যে আমার অনুভূতিগুলোও জড়তা কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছে,সেটা বুঝছিস না?””
“” তুমি কি বিড়বিড় করছো রাত ভাইয়া? আমার সুড়সুড়ি লাগছে। চুপ করে থাকতে পারোনা? মোবাইলটা কোথায় রেখেছো?””

রাত সন্ধ্যার কোমড়টা পেচিয়ে ধরে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে দিলো। উঠে বসে হাপাতে হাপাতে বললো,,

“” এতো রাতে আমার ফোন দিয়ে কি করবি?””
“” আমার একটা কল আসবে।””
“” তোর কল? আমার নাম্বারে? তাও এতো রাতে?? কে করবে?””
“” রিমান!””

রাত আতংকভরা কন্ঠে বললো,,

“” রিমানটা কে?””
“” ঐ যে আজ এক্সাম হলে আমার পাশে যে বসেছিলো সে!””

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here