#ভালোবাসার_রাত
#Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (২৩+২৪)
রাত ফুপির উদ্দেশ্যে কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে ভারী পুরুষকন্ঠ,,
“” তাই নাকি তিল? তোর মর্জিই সব?””
সন্ধ্যা,সিকান্দার সাহেব,রাতের দৃষ্টি পুরুষকন্ঠকে অনুসরন করলেও তিয়ামতী করলোনা। সে চুপচাপ বসে রইলো। ঘাড় বাকিয়ে পুরুষকন্ঠীর লোকটিকে দেখার প্রয়োজনবোধটাও করছেনা। বেশ স্বাভাবিকতার সাথে বসে আছে। যেন কিছুই ঘটেনি!
রিমা খাবার ছেড়ে দাড়িয়ে গেলো। অবাক,বিস্মিত,চমকিত সব সমার্থক শব্দগুলোও যদি এখন তার উপর প্রয়োগ করা হয় তবুও বুঝি তার অনুভূতির কথা প্রকাশ করা যাবেনা। চোখটা বৃত্তাকারে এতোটাই বড় হয়েছে যে এর ব্যাস নির্ণয় করাও কঠিন। মনের অজান্তেই কন্ঠধ্বনি বেজে উঠলো,,
“” রিদ ভাইয়া!””
রিদান দরজা ছেড়ে ধীরতার সাথে এগিয়ে আসছে। মুখে কোমল রঙ,ঠোঁটে মিস্টি হাসি। পায়ের চলনগতি থামিয়ে তিয়ামতীর পাশে দাড়িয়েছে। মিস্টি হাসিটা মুহুর্তেই দুষ্টু হাসির ছায়ায় ঢাকা পড়েছে। পাশের খালি চেয়ারটা শব্দ করে টেনে নিলো। আয়েশি ভাবে বসে হাত বাড়ালো ভাতের বোলে। তিয়ামতীর ভরা প্লেটে আরো দুচামচ ভাত দিয়ে বললো,,
“” নে,শুরু কর।””
রিদানের এই অনুশাসনের জন্যই যেন অপেক্ষায় ছিলো তিয়ামতী, এমন হাবভাবেই ছুটন্তপনায় খাওয়া শুরু করেছে। আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। পুরো মনোযোগ তার ভরাপ্লেটে। মুখভর্তিতে গালদুটো টুলটুল হয়ে গিয়েছে। গিলতে কষ্ট হচ্ছে কি?? চোখের নদী টলমল ভেঙে কয়েকফোটা পাতে পড়তেই রিদান পানির গ্লাসটা এগিয়ে ধরলো।
তিয়ামতী আর রিদানের কান্ডকারখানায় সকলেই হা। কারো মুখে কোনো রো শব্দ নেই। সকলেই এক রোমাঞ্চকর মঞ্চে বসে নাট্যতে মত্ত। নিরব দর্শক রাতও। বাবার মুখের দিকে তার নজর আটকায়নি। হয় তো চাচ্ছেনা আটকাতে। তবে মায়ের দিকে ঠিকই আটকে আছে। নিরবতা ভেঙে রাত চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। কারো দিকে না তাকিয়ে ডাইনিং প্রস্থান করছে। রাতের পিছু পিছু এক এক করে রিমা আর সিকান্দার সাহেবও ডাইনিং ছাড়লেন। তিয়ামতী আর রিদানের উচ্চবাক্যতে যা প্রকাশ পায়নি,নিরববাক্যে তা ঠিক প্রকাশ পাচ্ছে।
সকলে চলে গেলেও সন্ধ্যা তখনো নিজ জায়গায় থম মেরে বসে আছে। পলকহীন চোখ নিয়ে মুগ্ধদৃষ্টিতে চেয়ে আছে রিদানের দিকে। এক জায়গায় স্থির রেখে শান্তি পাচ্ছেনা তাই সময়ভেদে একবার তিয়ামতী তো আরেকবার রিদানের দিকে তাকাচ্ছে। যত দেখছে তত তার চোখদুটো কপালে মিলছে,ঠোঁট দুটো একে অপরের থেকে দুরত্ব বাড়িয়ে তুলছে। উপরের ঠোঁট আর নিচের ঠোঁট সর্বোচ্চ উপরনিচ ছুয়ার আগেই মুখে ভারী দেয়াল এসে পড়লো। সন্ধ্যা কোনোকিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। মাথা তুলে পেছনে তাকাতে রাতের হিসসসস ধ্বনি। সন্ধ্যা কপাল কুঁচকে হাত পা নাড়িয়ে শব্দ করতে যাবে তার আগেই রাত ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। সময় পারের অপেক্ষা না করে সোজা ওকে কোলে তুলে নিশব্দে হাঁটা ধরেছে।
~~
পিঠের সাহায্যে নিজের রুমের দুয়ার খুলে নিলো রাত। সন্ধ্যার ছটফটানি আর মোচড়ামুচড়িতে ওর নাস্তানাবুদ অবস্থা। বড়বড় পা ফেলে ওকে বিছানায় ফেলে দিলো।
“” বড়দের মাঝখানে বসে কি করছিলি? লজ্জা বলতে কি তোর মধ্যে কিছু নেই?? সম্পর্কে তোর মামা-মামি হয় আর এখন তো শ্বশুড়-শ্বাশুড়িও।””
রাতের কথা মাথায় নিলোনা সন্ধ্যা। রাতের ওভাবে রাখাতে সন্ধ্যা না চাইতেও বিছানায় শুয়ে পড়েছিলো। শোয়া থেকে উঠে দৌড়ে পালাবে তার আগেই বাধা পেলো। রাতের হাত সন্ধ্যার পেটে। শক্ত করে চেপে ধরে বললো,,
“” কোথায় যাচ্ছিস? একটু চুপ করে বোস। তোর সাথে কথা আছে।””
সন্ধ্যা চাইলেও উঠে যেতে পারছেনা। ভয়ে তার বুক শুকিয়ে কাঠ। জিহ্বাটাও কেমন খড়খড়ে হয়ে গিয়েছে। পিপাসা পাচ্ছে কি??
রাত সন্ধ্যার মুখোমুখি বসলো। ওর মাথা নিচের দিকে ঝুকে আছে,কোলের উপর হাতের দশআঙুল একে অপরের সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত।
“” কি হয়েছে তোর? এমন আচরন করছিস কেন?””
রাতের কন্ঠের প্রত্যেকটা বাক্যে সন্ধ্যা যে কেঁপে কেঁপে উঠছে তা রাতের চোখ এড়ায়নি। রাত সন্ধ্যার আরেকটু কাছে চেপে এলো। ওর হাতের যুদ্ধ বন্ধ করতে আঙুলগুলো নিজের এক হাতে বন্দী করেছে। অন্যহাত সন্ধ্যার থুতনিতে রেখে নিচু মাথা উচু করলো। ওর বন্ধচোখের কম্পন পাতাতে রাতের তীক্ষ্ণদৃষ্টি। দৃষ্টিপাত স্থির রেখে বললো,,
“” আমি তোর ভয় না,নিরাপদ আশ্রয়। তোর এমন আচরনে আমার বুকটা ফেটে যায়। সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দিতে ইচ্ছে করে। স্বপ্নবধু! আমি যে তোর ভালোবাসার প্রতিক্ষায় আছি। আর কত আমার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিবি?? যখন ফেল করে বসবো তখন সহ্য করতে পারবি তো??আমি তোর ভালোবাসায় পিপাসাতে ভুগছি। এবার তো আমার পিপাসা মিটিয়ে দে!””
“” আমমমি আমমম্মুরর ককাছে যাববো!””
রাতের শীতল কন্ঠ মুহুর্তেই উষ্ণ হয়ে গেলো। সন্ধ্যার দুগাল খামচে ধরে বললো,,
“” কোথাও যাবিনা তুই। বউ হোস তুই আমার। আমার রুম মানেই তোর রুম। তুই এখানেই থাকবি। এখানটাই পড়ে থাকবি!””
সন্ধ্যার বন্ধ চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। রাত লম্বা নিশ্বাস ছেড়ে ওর গাল ছেড়ে দিলো। ওর হাতদুটো নিজের গলায় নিয়ে বললো,,
“” মেরে ফেলতে চাস আমাকে? তাহলে মেরে ফেল। এভাবে সময় নিয়ে একটু একটু করে কষ্ট দিয়ে মারছিস কেন? নে আমার গলা টিপে ধর। আমি একটুও বাধা দিবোনা। নিশ্বাসগুলো তো এমনিতেই থমকে আছে। ওরাও একটু শান্তি পাক!””
সন্ধ্যা নিজের হাত সরিয়ে হাউমাউ করে কাঁদছে। এমন শব্দ করে তো বাচ্চারা কাঁদে ও কেন কাঁদছে? তাহলে কি ও এখনো বাচ্চাই রয়ে গেছে?? ভুল করে ভুল সময়কে আপন করে নেইনি তো??
রাত সন্ধ্যার চোখের পানি মুছতে যাবে তখনি ও পেছনে চলে গেলো। বিছানার এককোণে চেপে অনরবত কেঁদে যাচ্ছে। রাত বিছানা থেকে নেমে গেলো। কিছু ক্ষণ দুরন্তগতিতে রুমে ছটোছুটি করলো। সন্ধ্যার দিকে গরম মেজাজ ছাড়লো। বিড়বিড় করে নিজেকে ধমকালো। এক পর্যায়ে রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে বললো,,
“” যা খুশি কর,কিন্তু এই রুম থেকে যদি একপাও নড়েছিস,তাহলে হাত,পা কেঁটে গরম পানিতে সেদ্ধ দিবো!””
রাত শব্দ করে দরজা আটকালো। কিছু একটা ভেবে নিয়ে বাইরে থেকে সিটকিনিটাও দিয়ে দিলো।
~~
ঘড়ির কাঁটা দশকে বিদায় দিয়ে এগারোতে ঠেকেছে। এই সময় তিয়ামতীর ঘুমের তলদেশে অবস্থান করা উচিত। কিন্তু সে এখন রান্নাঘরে অবস্থান করছে। টেনশন,ভয়,অসস্থিতে সে বারবার ভিজে উঠছে। নিজের রুমে পা ফেলার কথা ভাবলেই বুক ধরফর ধরফর করছে। এমন বিরক্তিকর পরিস্থিতে সে কিশোরী বয়সেও পড়েছিলো। রিদ ভাইয়ের আগমনির পর যখন তাকে চা বানিয়ে দিয়ে আসতে হয়েছিলো। আজও সে চায়ের পাত্রে পানি বসিয়েছে। কিন্তু চা কাঁপে ঢালার আগেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন কিশোরী বয়সের অনুভূতিগুলো এই বয়সে এসে বারবার আমাকে কেন বিরক্ত করছে?? রিদ ভাইয়ার জন্য? কিন্তু এখন তো উনি আমার স্বামী তবুও কেন ভয়েরা আমার শিরদাড়াতে উঠানামা করছে??? এত বছরের দুরত্বের জন্য?? তিয়ামতীর ভাবনায় চিড়ধরে রিমার চিৎকারে। চায়ের পানি আরেকদফায় শুকিয়ে পোড়া লেগেছে। ধোয়ায় পুরো রান্নাঘর ঝাপসা। রিমা চুলার আগুন নিভিয়ে দিয়েছে। নাকে শাড়ীর আঁচল চেপে ধরে বললো,,
“” এখানে থেকেও এখানে নেই। ব্যাপার কি??””
রিমার প্রশ্নে তিয়ামতী নির্ভীক। কি বলবে সে কোথা খুজে পাচ্ছেনা। রিমা তিয়ামতীকে রান্নাঘর থেকে টেনে বের করলো। হালকা খুশখুশ কাঁশি পাচ্ছে তার। নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললো,,
“” যার ভাবনায় হারিয়ে গিয়েছিস,সে তোকে ডেকেছে। রেগে লাল। সেই যে চায়ের কথা বলে বেরিয়ে এলি তারপর তো তোর কোনো হদিস নেই। আমাদের রুম থেকে বের করে দিয়েছে। এর মানে সে এখন তোকে ডাকছে,বুঝলি?””
তিয়ামতী লজ্জায় লাল। এমন লজ্জা যে তাকে এই শেষ বয়সেও পড়তে হবে তা কি সে কখনো ভেবেছিলো??
“” এখনো দাড়িয়ে রইলি যে?? তুই কি চাচ্ছিস এখন ভাইয়া এসে তোর চুল টেনে ধরুক?? সহ্য করতে পারবি তো??””
রিমার দিকে তিয়ামতীর আর্ত দৃষ্টিবিনিময়। তিয়ামতী ঠোঁট নাড়িয়ে কিছু বলবে তার আগেই রিমার অনিচ্ছাসুর,,,
“” এসবের মধ্যে আমি নাই। এই বুড়ো বয়সে আমি কোনো লজ্জাতে পড়তে চাইনা। ভাইয়াকে আমার থেকে তোর বেশি চেনা।””
রিমা হাত কাধের উপর তুলে না না’তে নাড়িয়ে নিজের রুমের দিকে ছুটলো। তিয়ামতী রিমার চলে যাওয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো। কিছু সময় আরো পার করে চা বানিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়িয়েছে। শাড়ীর আঁচল মাথায় দিতে লজ্জা পাচ্ছে। তাই পেছন দিয়ে টেনে বামপাশের কাধে ফেললো।
~~
রুমের দরজায় আসতেই রিদস্পন্দন উচ্চগতিতে বাড়ছে। রুদ্ধশ্বাসে দরজা মেলতেই তিয়ামতী থম মেরে গেলো। পুরো রুম অন্ধকারে ঢাকা। হঠাৎ করেই ওর বুকে জড়োয়াভয় জায়গা করে নিচ্ছে। অন্ধকারকে সে ভয় পেত। তবে তা অল্প বয়সে এখন তো সে ভয় পায়না। অন্ধকারকে আপন করেই তো দিব্যি রাত কাটাতে পারে। তবে আজ হঠাৎ পুরোনো ভয় জেগে উঠছে কেন??
তিয়ামতীর হাত কাঁপছে,সাথে চায়ের কাঁপ। অন্ধকারেও তার রিদ ভাইয়াকে খুজছে। একমাত্র সেই তো তার এই ভয় দুর করার অবলম্বন। কয়েক কদম এগিয়ে চারপাশে চোখ বুলালো। জানালাগুলো কি বন্ধ করা?? এমন ঘুটঘুটে অন্ধকার তো হওয়ার কথা না। তিয়ামতী ভাবনায় আরেক পা এগুতেই ধপ করে পরে গেলো। মেঝেতে পরে গেলে এতক্ষণে নাক ভেঙে চিৎকার দেওয়ার কথা। ব্যথা পায়নি মানে মেঝেতে পরেনি তাহলে পরলোটা কই?? তিয়ামতী হাত বাড়িয়ে বুঝার চেষ্টা করছে সে কোথায় পরেছে। হাতে খসখস কিছু লাগছে মনে হচ্ছে চুল। ভালো মতো বুঝার জন্য আরেকটু নড়ে এদিকঐদিক যেতেই রিদান আঙুল কামড়ে ধরলো।
“” আহ! লাগছে তো,লিদ ভাইয়া!””
তিয়ামতীর হাত ছেড়ে ওকে ঘুরিয়ে নিলো রিদ। ওর উপরে শুয়ে পাশে পরে থাকা ল্যাম্পসেটের আলো জ্বালিয়ে দিলো। সাথে সাথে তিয়ামতী চোখ বুজে ফেলে।
রিদান শক্তকন্ঠে বললো,,
“” চোখ বুঝলি কেন? খোল বলছি,এখনি খুলবি। কি হলো খোল!””
রিদের ধমকামিতে তিয়ামতী চমকে উঠছে। তবুও চোখ মেলার সাহস পাচ্ছেনা। ভয় হচ্ছে তার,হারানোর ভয়। এমন যদি হয় এটাও তার স্বপ্ন,চোখ মেললেই সব শেষ!
“” কিরে,আমার কথা কি কানে যাচ্ছেনা?””
তিয়ামতী এবার রিদকে ঝাপটে ধরলো। বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আদ্রকন্ঠে বিড়বিড় করছে,,
“” চোখ মেললেই আপনি হালিয়ে যাবেন। মেলবোনা। কিছুতেই মেলবোনা। আপনাকে কাছে পাওয়াল জন্য আমি অনন্তকাল চোখ বন্ধ কলে থাকতে পালি।
“” আমি কি তোর ইচ্ছেতে এসেছি নাকি যে তুই ভাববি আর আমি চলে যাবো?? আমি তো আমার ছেলের ইচ্ছেতে এসেছি।””
তিয়ামতী এবার আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারলোনা। অবাক হওয়ার সাথে কি চোখের খুব শক্ত সম্পর্ক আছে?? অবশ্যই আছে,নাহলে সে না চাইতেও কেন চোখ মেলে ফেললো।
“” তোর মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে,এই চিঠির ব্যাপারে তুই কিছু জানিসনা। আমি অবশ্য আগেই আন্দাজ করেছিলাম। তুই একটাবার ভাব,২৪ বছরের ছেলে আমার। এতগুলো বছর পার করে সে আমাকে প্রথম চিঠি লিখলো,অথচ একবারও বাবা বলে ডাকলোনা। কি সাংঘাতিক! দু/চার লাইনের চিঠিতে সে তার পুরোজীবনের অভিমান ভরে দিয়েছে। এমন সাংঘাতিক ছেলের মুখে বাবা ডাক না শুনে যদি আমি পরপার হতাম তাহলে কি আমি শান্তি পেতাম?? বাপ রে বাপ,চিঠির প্রত্যেকটা অক্ষরে কি ঝাঝ! আমি তো পড়ছিলাম নাকি পুরছিলাম সেটাই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।””
তিয়ামতী হতভম্ব। রিদান এগুলো কি বলছে তার মাথায় কিছুই ঢুকছেনা। রাত কি করে চিঠি লিখলো? ওকে তো আমি ওর বাবার ঠিকানা দেইনি তাহলে?
রিদান মাথা উচু করে নাক উচিয়ে বললো,,
“” কেমন গন্ধ গন্ধ লাগছে রে তিল,কোথা থেকে আসছে বলতো?””
রিদান মাথাটা বামে-ডানে ঘুরিয়ে গন্ধের উৎস খুজার ভঙ্গি করছে। সেই ফাঁকে তিয়ামতী চট করে বামহাতে নাকটা মুছে নিলো। মিহিসুরে বললো,,
“” কোথায় গন্ধ,আমি তো পাচ্ছিনা।””
“” দেখি তোর হাতটা দেখাতো!””
হাত লুকিয়ে তিয়ামতী করুণভাবে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো।
#ভালোবাসার_রাত
# Season_2
#রোকসানা_রাহমান
পর্ব (২৪)
রিদান মাথা উচু করে নাক উচিয়ে বললো,,
“” কেমন গন্ধ গন্ধ লাগছে রে তিল,কোথা থেকে আসছে বলতো?””
রিদান মাথাটা বামে-ডানে ঘুরিয়ে গন্ধের উৎস খুজার ভঙ্গি করছে। সেই ফাঁকে তিয়ামতী চট করে বামহাতে নাকটা মুছে নিলো। মিহিসুরে বললো,,
“” কোথায় গন্ধ,আমি তো পাচ্ছিনা।””
“” দেখি তোর হাতটা দেখাতো!””
হাত লুকিয়ে তিয়ামতী করুণভাবে রিদের দিকে তাকিয়ে রইলো। রিদের তাড়াসুর,,
“” কি হলো,দেখা। হাত কই তোর? খেয়ে ফেলেছিস?””
তিয়ামতী বামহাতটা নিজের পিঠের নিচে লুকিয়ে ডানহাত বাড়িয়ে ধরলো। রিদান হাতের তালুতে গভীরভাবে নাক ডুবিয়ে বললো,,
“” আরেক হাত কই?? মাইক দিয়ে পে পে করে বলতে হবে যে হাতদেবী,আপনার বা’হাতটা কি আমি একটু দেখতে পারি? একটু গন্ধ শুকতাম!””
তিয়ামতী মুখে আধার এনে বা’হাতটাও বাড়িয়ে ধরলো। হাতের দিকে তাকিয়েই রিদান বলে উঠলো,,
“” ছি!ছি!!ছি!!! তুই টয়লেট ছেড়ে হাত ধোসনা গন্ধে তো আমার বমি আসছে!””
রিদান দু’গালে বাতাস ভরে বমি করার ভাব ধরেছে। এইবুঝি পেট উল্টিয়ে সব বের হবে। তিয়ামতী কান্নাসুরে বললো,,
“” আপনি পচা কথা কেন বলছেন? আমি তো এই হাত দিয়ে নাকেল ঘাম মুছেছিলাম!””
রিদান তিয়ামতীর নাকের দিকে তাকিয়ে অট্টস্বরে হেঁসে উঠলো,,
“” তারমানে তোর নাকে জীবানুরা পায়খানা করেছিলো?? তাইতো বলি এমন নিকৃষ্ট গন্ধ কোথা থেকে আসছে।””
রিদ তিয়ামতীর নাকে গাঢ়দৃষ্টি দিয়ে বললো,,
“” এই দেখ,দেখ আবার পায়খানা জমছে!””
রিদ আবারও অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছে। হাসির সুরে তার মুখমন্ডল ছোটছোট নড়নে নড়ছে। তিয়ামতীর এখন ঠোঁট ভেঙে কান্না আসতে চাইছে। কিন্তু সে কাঁদবেনা। সে এখন তার রিদ ভাইয়াকে দেখবে। ইশ! কতযুগ পর দেখছে! চোখের দেখাটা পাবে তা তো সে কল্পনাও করেনি।
কপালের কাছঘেষা চুলে দু/একটা সাদা চুল উকি দিচ্ছে। এতে যেন রিদের ফর্সামুখের সৌন্দর্যটা দ্বিগুন হারে বেড়েছে। ছোটবেলা পাঠ্য বইয়ের এক গল্পে পড়েছিলো,বুড়ো হলে মানুষ আরো বেশি সুন্দর হয়ে যায়। কথাটা কি রিদ ভাইয়ার সাথে মিলে যাচ্ছে?? সত্যিই কি তাই নাকি সব তার মনের ভুল। ওর রিদ ভাইয়া তো হাতে লাঠি ধরা বুড়ো নয়,চেহারায় এখনো যুবক বয়সের ছাপ স্পষ্ট! আর ব্যবহার??
তিয়ামতীর ভাবনায় ছেদ পড়ে রিদের আরেকদফা অট্টহাসিতে। ভাবনার ছেদ জোড়া লাগিয়ে আবার ভাবনারাজ্যে ডুব দিলো। মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর,রাগী,একরোখা,গম্ভীর,স্বল্পবাক্য ছেলেগুলোর অট্টহাসি দুই রকম হয়। এক. বোকা হাসি,যেটা তাদের চেহারার সাথে একেবারেই যায়না ২. বাচ্চাহাসি। রিদের হাসিটাকে তিয়ামতী দুই নাম্বারে ফেললো।
রিদান হঠাৎ করেই তিয়ামতীর উপর থেকে সরে গিয়ে বললো,,
“” কাত হয়ে শো’তো। এভাবে শুয়ে আরাম পাচ্ছিনা। মনে হচ্ছে তোকে ভালো করে ছুতে পারছিনা,আর কথাও বলতে পারছিনা।””
তিয়ামতী রিদানের ভাবসাব বোঝার চেষ্টা করছে। রিদান বড্ড অধৈর্য্য হয়ে নিজেই ওকে ডানপাশে ঘুরিয়ে দিলো। বা’পাশে নিজে শুয়ে নিয়ে তিয়ামতীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো। তিয়ামতীর পেটে হাতের নরম স্পর্শ দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়েছে। গলার ভাজে ছোট্ট চুমু খেলো। তিয়ামতীর চোখ বুঝে আসছে,গাঢ় ঘুমের ডোরাকাঁটা জ্বালা চোখে নিয়ে রিদের মধ্যে গুটিসুটি মেরে মিশে যাওয়ার প্রবল প্রনবতা!
তিয়ামতীর গালের সাথে নিজের গাল মিশিয়ে নিলো। রিদানের ফিসফিস সুর,,
“” কি ভেবেছিলি? আমি মরে গিয়েছি?””
এইবাক্যটা যে তিয়ামতীর খুব অপছন্দ হয়েছে তা বেশ বুঝতে পারছে রিদ। ও সরে যেতে নিলেই রিদের হাতের স্পর্শ শক্ত হয়ে পড়লো তিয়ামতীর পেটে।
“” চুপচাপ শুয়ে থাক। অনেক কথা বলার আছে,অনেক কিছু জানানোর আছে। আমাকে ক্ষেপাস না। তুই জানিস আমার এতো ধৈর্য্য নেই। তবুও এখন ধৈর্য্য চেপে ধরে আছি।””
রিদের অনুশাসনে তিয়ামতীর শক্ত হয়ে আসা শরীরটা আবার নরম হয়ে আসলো। চুপচাপ শুয়ে রইলো।
“”যেদিন তোকে জোর করে বাংলাদেশে পাঠালাম সেদিনটার কথা আমি আজও ভুলতে পারিনি। তোর চোখের পানিগুলো আমাকে বড্ড জ্বালিয়েছে রে,প্রতিটা ক্ষণে ক্ষণে আমাকে পুড়িয়েছে। তোর ভেতরটা শূন্য হয়ে যাচ্ছিলো তবুও তুই মুখ ফুটে একটাবার বলতে পারিসনি,আমি যাবোনা,আমি আপনার কাছে থাকবো। কিন্তু চোখের জলে সব বলে দিচ্ছিলি। আর আমি তোর চোখের ভাষা বুঝতে পেরেও তোকে ফেরত পাঠালাম।কাধে বয়ে বেড়াচ্ছিলাম তোর আর আমার একটি ভালোবাসার রাত! তুই আমার বলা প্রত্যেকটি কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছিস। না নিজে আমার খোঁজ করতে এসেছিস আর না কাউকে খোঁজ করতে দিয়েছিস। তোর বুকে তুই কত বড় পাথর চেপে রেখেছিলি তার পরিমাপটা আমি টের পেয়েছিলাম। কিছুদিন বাদেই তুই আমাকে চিঠি লিখলি। জাস্ট একটি লাইন ছিলো চিঠিতে,*কেমন আছো,লিদ ভাইয়া* আমি জানি এই একটি লাইনের দশটা অক্ষরে ছিলো তোর অজস্র সুপ্ত অভিমান। আমি সেদিন অনেক কেঁদেছিলাম। ইচ্ছে হচ্ছিলো এখনি চলে আসি তোর কাছে। তোকে বুকে চেপে ধরে বলি,আমি তোকে ছাড়া একটুও ভালো নেই। ভালো থাকা সম্ভবও না। কিন্তু তুই তো জানতিস আমি নিরুপায়। তারপর তোর দ্বিতীয় চিঠি। যেখানে তুই আমায় জানালি আমার ভালোবাসার মুক্তোর দানা তোর পেটে। সেদিনও আমি অনেক কেঁদেছিলাম কিন্তু ওটা সুখের কান্না ছিলো। কারণ,তোর চাওয়া পুর্ণ হতে চলেছে। আমার তখন তোর মুখটা দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিলো খুব। কিন্তু তা আমার ভাগ্যে ছিলো কই। এরপর থেকে তুই আমাকে নিয়মিত চিঠি লিখতে শুরু করলি। এখন আর এক দুই লাইন নয়,এক/দুই পৃষ্ঠা ছাড়িয়ে যাচ্ছিলো তোর চিঠি। খুটে খুটে তোর আর আমার ছেলের কথা লিখতি। তুই বিশ্বাস কর,তোর চিঠি পড়ার সময় আমি ভুলেই যেতাম আমি তোদের মাঝে নেই। অনেকটা দুরে,হয়তো কখনো কাছে আসতেও পারবোনা। আমি তো সব আমার চোখের সামনে দেখতে পারতাম। মনে হতো তোরা আমার মাঝেই আছিস। এভাবেই চলছিলো।
তোর চিঠি আর আমার অসুস্থতা সমান তালে চলছিলো। যত তোর চিঠি আসছিলো তত আমার অবস্থা শোচনীয়ের পথে। দিনকে দিন শারীরিক দুর্বলতা আমাকে খেয়ে ফেলছিলো। এর মাঝেই আমার ইউনিভার্সিটির এক শিক্ষক এসে হাজির। আমাকে খুব স্নেহ করতেন উনি,ছেলের মতো ভালোবাসতেন। উনি আমাকে দেখে খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন। আমাকে বিভিন্ন হ্যালথকেয়ারের পরামর্শ দিলেন। অনেক যুক্তি,উপযুক্তিতে আমাকে বুঝাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু আমি নাছোড়বান্দা। যেখানে আমি জানতাম আমি আর কিছুদিনের অতিথি সেখানে এসব ঝামেলায় গিয়ে কি হবে?? আমার মতো উনিও জেদ চেপে বসলেন,আমার এখানে ঘনঘন আসতে লাগলেন। হয়তো খুব বেশিই আমার মায়ায় পড়ে গিয়েছিলেন অথবা কোনো এক অদৃশ্য টান অনুভব করছিলেন আমার জন্য!
এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো আমার দিন। আমার অবস্থা এতোই খারাপ যে আমি বিছানা বাসী। যেখানে ভেবেছিলাম,হয়তো আর এক/দুবছর নিশ্বাস নেওয়ার শক্তি আমার সেখানে পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে তখনও আমি দিব্যি নিশ্বাস নিতে পারছি। যদিও শরীর তখন আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। এই দিকে তোর পাঠানো রাতের হাজারও ছবি,দুষ্টুমীর ছন্দ আমার ভেতর লোভ জাগাচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো দুনিয়ার সব নিয়মকানুনের বাইরে চলে যেতে যেখানে আমার নিয়মে সব হবে,আমার ইচ্ছেতে সব হবে। যেখানে থাকবো তুই আমি আর আমাদের ভালোবাসার রাত।
নিজের ভাগ্যের সাথে লড়াই করে পেরে উঠছিলাম না। অবশেষে নিজের জেদ ছেড়ে স্যারের আশ্রয়ে সিটিয়ে গেলাম। মনের কোনে ছোট্ট ইচ্ছা,দেখিনা কি হয়। উনি বেশ উৎসাহেই আমাকে অন্যত্র শিফট করালেন। যেখানে আমার মতো হাজারও রোগী আশার আলো খুজছেন। তাদের দেখে আমার মনে অন্যরকম বল তৈরী হলো।
কঠোর নিয়মকানুন,জীবনচর্চায়,চিকিৎসাধীনে আমার শরীরের অনেকটাই পরিবর্তন আসছিলো। মনের ভেতর আবার ক্ষীণ আশার আলো জাগছিলো। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে তোকে ছুতে চাইতাম। আমার ছোট্ট পৃথিবীকে আকড়ে ধরে বাঁচার প্রবল উন্মেদনায় ভুগতাম। ধীরে ধীরে আমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠছিলাম।
এতো বছরেরও তোর কোনো চিঠির উত্তর আমি দেইনি। কিইবা লিখতাম বল?? লেখার মতো কিছু ছিলো কি?? কিন্তু এইবার পুরো ৯ বছর বাদে তোকে লিখতে বসেছিলাম। একটু সুখের ছন্দ। কিন্তু ডাকবাক্সে চিঠি ফেলার আগেই আমার জীবনের ছন্দপতন ঘটলো। হঠাৎ করেই শরীর খারাপ হতে লাগলো। ডক্টররা চেকআপ করে জানালেন,আমার শরীরে বাস করছে ব্লাডক্যানসার! আমি আবার ভেঙে পড়ি। আমার একটু একটু করে সাজানো সেই আশার আলো দমকা হাওয়াই আবার অন্ধকারে মিলে গেলো। ছিড়ে ফেললাম তোর চিঠির উত্তর। ভেঙে গেলো আমার জীবনচর্চার কঠোর নিয়ম।
আমি আর ওখানে পড়ে থাকতে পারছিলাম না। একাকিত্ব আমাকে গ্রাস করে ফেলছিলো। ডুবে যাচ্ছিলাম হতাশায়। আমি এতোটাই ভেঙে পড়েছিলাম যে আমি আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজটাও করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার আশার আলো নিভে গেলেও স্যারের যায়নি। উনার মধ্যে কিছু তো ছিলো। যা আমাকে নতুন জীবন দেওয়ার জন্য উনাকে উন্মাদ করে তুলছিলো। তার বেশ কয়দিনবাদে উনি আমার কাছে আসেন এক নতুন ইচ্ছের ফুল নিয়ে। উনি আমার শরীরে স্টেম-সেল প্রতিস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন। এটি বিভিন্ন ক্যানসারের প্রতিকরণের করা হয়। ২০০৩ সালে একজন এইডস রোগী ক্রমাগত স্টেম-সেলের মাধ্যমে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। সেই রেখা থেকেই স্যার আমাকে এই পদ্ধতি গ্রহণ করতে বলেন। যদিও এটি একটি ব্যয়বহুল,জটিল এবং ঝুকিপূর্ণ। আবার কোনো টেকসই ব্যবস্থাও না। কিন্তু যেখানে আমার বেঁচে থাকার সামান্য কোনো আশা নেই সেখানে আমি দ্বিমত প্রকাশ করেই কি করবো?? আমি আমার নিজ থেকে নিজেকে বিসর্জন দিলাম। যা হবার হবে!
তারপর উনার তত্ত্ববধানে আমি দীর্ঘসময় কাটাচ্ছিলাম। ডক্টররা বারবার পরীক্ষা করেও কোনো পজেটিভ ফলাফল পাচ্ছিলেননা। তবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। আর সেই চেষ্টাতে আর তোর ভালোবাসার টানেই মনে হয় আমার এতকিছুর মাঝেও নিজের নিশ্বাসটা আটকে ছিলো। নিশ্বাসটা তো আর আমার নামে না তোর নামেই চলছিলো। তাই আজ আমি তোর কাছে।
আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ নই,আর কখনো হয়তো হয়ে উঠাও হবেনা। তবুও আমার কোনো দুঃখ নেই। আবার যে তোর কাছে,তোর ছোয়ায় বুক ভরে নিশ্বাস নিতে পারছি আমার এতেই চলবে। আমি জানিনা কি করে কি হয়েছে,তবে সৃষ্টিকর্তা চাইলে কিছুই অসম্ভব নয়।
কতদিন বাঁচবো জানিনা। তবে তোকে ছাড়া আমি আর এক সেকেন্ডও বাঁচতে চাইনা। এমনিতেও আমাদের দেশের গড়আয়ু ৬০-৬৫ বছর। আমি তো অলরেডি প্রায় ৫০ বছরেই রয়েছি। তাহলে আর কিসের চিন্তা?? সুস্থ হোক আর অসুস্থ হাতে সময় খুব কম। এই কম সময়টাতে আমার তোকে চাই। কিরে থাকবি তো আমার হয়ে?””
তিয়ামতী তখনো চুপ। আজ যেন তার কর্ণদ্বয় সার্থক! এই মানুষটার কন্ঠস্বর শোনার অপেক্ষায়তো সে বেলায় বেলায় বিরস সময় কাটিয়েছে। রিদান তিয়ামতীর বুকে মাথা রেখে বললো,,
“” তোর ভালোবাসায় আমি সত্যি মুগ্ধ। এতো ভালোবাসা তুই কোথা থেকে শিখলি বলতো?””
তিয়ামতী রিদানের চুলে আঙুল ঢুকিয়ে বললো,,
“” আপনাল থেকে।””
রিদান সাথে সাথে ওর বুক থেকে মাথা সরিয়ে ফেললো। তিয়ামতীর দিকে সন্দিহানদৃষ্টিতে চেয়ে আছে,কপাল কুচকে বললো,,
“” আমি কি কখনো বলেছি আমি তোকে ভালোবাসি?””
“” বললেই কি না বললেই কি,আমি সব বুঝি!””
“” বাব্বাহ! এতো বুঝ?””
তিয়ামতী লজ্জায় চোখ সরিয়ে নিতেই রিদান ওর কপালে চুমু খেয়ে বললো,,
“” আমি তোর এখানে ছিলাম বলেই আজ আবার ফিরে এলাম। যদিও ইচ্ছে ছিলো আরো কিছুদিন পর আসবো কিন্তু মা-ছেলের জন্য আর দুরে থাকতে পারলাম কই!””
রিদান তিয়ামতীর বামহাতটা নিজের চোখের সামনে ধরলো। শাহাদাৎ আঙুলে নিজের পড়িয়ে দেওয়া আংটি দুটো এখনো চকচক করছে। খুব বেশিই যত্ন পড়েছিলো মনে হয়। রিদান ঠোঁটে মিস্টি হাসি এনে আরেকটা প্লাটিনামের সরু আংটি পড়িয়ে বললো,,
“”তোর যত্নের আরেকজন ভাগীদার বানালাম।””
“” মানে?””
“” সেবার তোর আর আমার ভালোবাসার রাত এসেছিলো,এবার তোর আর আমার ভালোবাসার ভোর আসবে!””
তিয়ামতীর চোখদুটো বড় হয়ে আসছে বুঝতে পেরে রিদ ওর হাত দিয়ে চোখ ঢেকে, দ্রুততার সাথে বললো,,
“” একদম অবাক হওয়ার ঢং করবিনা। তুই যদি ভেবে থাকিস বয়সের দোহায় দিয়ে আমাকে দুরে রাখবি,সমাজের দোহায় দিয়ে আমাকে দমিয়ে রাখবি তাহলে আমি শুনবোনা। আমি কোনো দোহায় শুনবোনা,কোনো মানা শুনবোনা,কোনো বাধা মানবোনা। আমার সব চাই,আমার তোকে চাই,আমার বউকে চাই। নতুন বউয়ের মতো চাই। তোর লাজুক মুখ দেখতে চাই। বাবুরভারে বড় হওয়া পেটে চুমু খেতে চাই। আমার ছোট্ট বাবুকে কোলে নিতে চাই। ওর মুখে প্রথম বুলি শুনতে চাই,আমার বুকে নিয়ে ঘুম পাড়াতে চাই। আমার হাত ধরে হাঁটা শিখাতে চাই। আমার সব সব সব চাই,তিল। আমার এক ছেলেকে তুই তোর মতো করে বড় করেছিস। আরেক ছেলেকে আমার মতো করে বড় করবো। তুই কিচ্ছু বলবিনা। কিচ্ছুনা!””
তিয়ামতী জোর করে রিদানের হাতটা নিজের চোখ থেকে সরিয়ে বললো,,
“” এক ছেলে থাকতে আবার ছেলে কেন? আমার তো এখন মেয়ে চাই।””
তিয়ামতী নিজের কথা শেষ করেই দাঁত দিয়ে জিহ্বা কেটে নিলো। ইশ! এটা সে কি বলে ফেললো? লজ্জায় তিয়ামতীর বিছানার সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তিয়ামতীর মনের অবস্থা বুঝতে পেরে রিদান শব্দ করে হেসে উঠলো। এতে যেন তিয়ামতীর লজ্জা দ্বিগুন হারে বেড়ে গেছে। ইচ্ছে করছে রিদ ভাইয়াকে ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যেতে। সত্যিই কি পালাবে? কিন্তু যদি ধরে ফেলে?? তিয়ামতী কিভাবে পালাবে সেই ছক সাজানোতে ব্যস্ত।
চলবে