#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন
পর্ব— ১৯
সকালের এলার্মের তিপ। ঘ্ন শব্দে ঘুম ভাঙ্গলো রোদেলার.. আড়মোড় ভেঙ্গে ওঠে বসতেই সানিয়া আর মুনিরার ফিসফিসানি কানে আসলো তার.. সে অবাক হয়ে জিঙ্গেস করতেই মেয়ে দুটি একটা অন্যটাকে চোখের ইশারা করে দিল.. তারপর মুখ টিপে হাসি…
রোদেলা চোখ ছোট করে জিঙ্গেস করলো— কি সমস্যা?? সকাল সকাল কি নিয়ে এতো কানাকানি??
মুনিরা– কানে কানে কি কথা বলে সেইটা কানে মুখে বলে…
সানিয়া খিলখিলিয়ে হেসে দিল.. রোদেলা দুইটার দিকে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল– বড় কি আর হবি না.. আজিবন এমন থাকবি??? যা কলেজে যাওয়ার জন্য রেডি হ.. এইবলে সে রেডি হতে চলে গেল.. আর সানিয়া বলে ওঠলো— এই মেয়ে পাগল পুরোটা.. আমাদের যেতে বলে নিজে চলে গেল..কাউকে আদেশ দিয়ে সেইটা আগে নিজে পালন করে ফেলে.. এইটা কোন দেশি হিসাব…
মুনিরা ফিক করে হেসে দিল..
//
//
রোদেলা ভার্সিটিতে তামান্না আর অদ্রির সাথে আড্ডা দিচ্ছে… হঠাৎ মিতিশা অদ্রির পাশে বসতে বসতে বলল… অদ্রি,, খুব তো রাস্তা ক্লিয়ার বলছিলি.. এখন দেখগা তোর ফুলে কতোবড় মৌমাছি বসে আছে…
আদ্রি— কথা না প্যাচায় বল কি বলতে চাস???
মিতিশা —- আদ্রি সামনে তাকা…
রোদেলা কনফিউস্ট হয়ে মিতিশা দেখানো সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেল.. হাসনাতের হাত ধরে একটা মেয়ে কিটকিটে হেসে ওঠছে.. মনে হচ্ছে মেয়েটা তারকতোটা ক্লোস..
রোদেলার মেজাজ চরম পর্যায়ে.. সে রেগে সেদিকে হাটা দিল.. সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রোদেলার যাওয়ার দিকে… মিতিশা অবাক হয়ে বলল– এই রোবোট টার কি হলো???
তামান্না সেদিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে– পিয়ার কা বোখার চাড়গায়া….
অদ্রি চোখ বড় বড় করে তাকালো সেইদিকে..
রোদেলা সেদিকে হেটে গেল.. এখন আরো পরিস্কার দেখা যাচ্ছে দুইটাকে.. মেয়েটা হেলেদুলে হাসনাতের ওপর গিয়ে পড়ছে.. আর হাসনাত মেয়েটিকে একটা ম্যাথ বুজিয়ে দিচ্ছে..
রোদেলার কোন এ্যান্গেলে মনে হচ্ছে না মেয়েটা পড়তে এসেছে.. মেয়েটা হাসনাতকে পটাতে ব্যাস্ত.. আর হাসনাত নিজেকে হালকা দূরে সরাতে চায়ছে আর মেয়েটা ওর কাছে চলে যাচ্ছে…রোদেলা রাগে ফুঁসছে.. হাসনাত মেয়েটাকে ফিসফিসিয়ে বলল– মাহিয়া,,, এতো ক্লোজ কি হওয়া বেশি দরকার..
মাহিয়া— ভাইয়া, আপনি এতোটা লজ্জা পাচ্ছেন কেন.. দেখেন আপু কিভাবে জ্বলতেছে.. কাজ আর্লি হবে…
হাসনাত মনে মনে বলল– ও তো জ্বলবে পরে আমাকে ফ্রাই করে খেয়ে ফেলবে…তাও আবার সস দিয়ে..
অন্যদিকে রোদেলা বিরবিরিয়ে বলল –এইজন্য তো আমার ছেলেজাতিটাকেই পছন্দ হয় না… মেয়ে পেলেই মাখন হয়ে যায়.. তারপর যখন মেয়েটা আবার ডলে পড়ছে রোদেলা গিয়ে মেয়েটা অন্য হাতটা টেনে ধরলো.. আর দাতে দাত চেপে মেকি হাসি ঝুলিয়ে বলল– আপু,, তুমি স্যারের পাশে দাড়িয়ে আছ.. এইভাবে হেলেদুলে পড়লে স্যারের নামে বদনামী হবে..
তারপর হাসনাতের দিকে স্হির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল– অবশ্য তোমার স্যারের তো অনেক ভাল লাগছে.. তাই না স্যার.. একেবারে শরীর গরম হয়ে যাচ্ছে আপনার তাই না.???
হাসনাত চোখ বড় বড় তাকিয়ে কয়েকবার ঢুক গিলল– এই রোদেলার মুখে তো দেখি কিছুই আটকাই না.. ডাবলমিনিং ওয়ার্ড এ তো পিএস ডি করে ফেলছে মেবি,.
সে মৃদু হেসে– মুনিরা তুমি ক্লাসে যাও.. মুনিরা হেসে হাসনাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল– ওকে স্যার ক্লাসে দেখা হচ্ছে. হাসনাত রোদেলার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালো.
মুনিরা চলে যেতেই রোদেলা হাসনাতের দিকে তাকিয়ে দাতে দাত চেপে বলল– কোন ব্যাচ??
হাসনাত পরপর ঢুক গিলে তাড়াতাড়ি বলল– আমি কি ভার্সিটিতে পরি নাকি যে ব্যাচ হবো.. আমি তো টিচার… রোদেলা হতাশাজনক লুক দিয়ে বলল– ডং দেখানোর জায়গা এইটা না.. আমি মেয়েটার কথা জিঙ্গেস করছি..
হাসনাত— ২য় সেমিস্টার.. এ্যাকাউন্টিং…
রোদেলা হাসনাতের কাছে দাড়িয়ে বলল– মেয়েদের আজকাল স্পেসিয়াল ক্লাস ও দিচ্ছেন??
হাসনাত নিচে দিকের তাকিয়ে বলল–আসলে ও নাকি কি বুঝতেছিল না।। তাই আরকি বোঝালাম..
রোদেলা রেগে কটমটিয়ে তাকিয়ে— হুম.. বোজাতে থাক.. এইবলে সে কটমটিয়ে প্রস্হান করলো..
তার কেন যেন মনে হচ্ছিলো হাসনাত হয়তো তারজন্যই এসেছে.. তাকে হয়তো ভালোবাসে.. কিন্তু না সে বারবার তার চোখে আন্গুল দিয়ে বোঝিয়ে দেয়,, যে সে রোদেলাকে ভালোবাসে না.. এইসব ভাবতে ভাবতে সে রাস্তার পার হতে গিয়ে হঠাৎ কেউ তার হাত ধরে টেনে নিয়ে রাস্তার অন্যপাশে নিয়ে আসে.. আর সাথে সাথে একটা বড় বাস সাই করে তাদের পাস করে.. রোদেলা বিস্ফারিত নয়নে সেদিকে তাকায়.. আর এক মিনিটস দেরি হলে রোদেলার মিক্সভর্তা হয়ে যেত.. সে ধন্যবাদ দৃষ্টি নিয়ে সমানের দিকে তাকালো.. আর তাকিয়ে সে অবাক হয়ে রইলো.. এই যে ইস্পা..
ইস্পা রোদেলাকে দেখে জোরে জড়িয়ে ধরলো।তারপর আন্তরিকের সাথে বলল– কেমন আছ রোদেলা.. কতোদিন দেখিনা তোমায়.. অনেক মিস করেছি তোমায়…
রোদেলা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।। ইস্পাকে এতো আন্তরিক সে আর দেখে নি.. হঠাৎ তার পাশে এক যুবক কোলে একটা পাচ মাসের বেবি নিয়ে এসে দাড়ালো। বেবিটা অতিরিক্ত কিউট.. রোদেলার ইচ্ছে হচ্ছে ছুয়ে দিতে.. সে পরম আদরে বেবির হাত ধরতেই বেবি ছোট হাত দিয়ে রোদেলার হাত ধরে ফেলল.. রোদেলা মিষ্টি হেসে কোলে তুলে নিল.. ওই যুবকটা তাদের একটা ক্যাফেতে নিয়ে গেল.. রোদেলা মানা করতে চেয়ে মানা করলো না.. এইটা বেমানান.. আর ইস্পার কাছে কিছু প্রশ্নও আছে তার…
বসতেই ইস্পা তাদের পরিচয় করে দিল.
—-রোদেলা এইটা আমার হাসবেন্ড মিমন.. আর মিমন এইটা রোদেলা. আমার কাজিন..
হঠাৎ মিমন ওর দিকে তাকিয়ে অবাক চোখে বলল– হাসনাত ভাইয়ের রোদেলা…
সাথে সাথে রোদেলা অবাক হয়ে তাকালো.আর ইস্পা মিষ্টি হেসে মাথা নাড়লো..তারপর রোদেলার দুই হাত নিজের হাতের মুটোয় পুরে বলল– সরি রোদেলা.. ঐদিন তোর সাথে থাকতে পারি নাই.. পরে শুনে অনেক খারাপ লাগছে.. হাসনাত ভাইয়া সেইদিন চিৎকার করে কান্না করেছিলো.. আসলে আমরা কেউ ছিলাম না বাসায়.না হয় এতোবড় অপমান হতোনা তোমার.. আম্মুরা মামিকে অনেক কথা শুনিয়েছে পরে..
রোদেলা অবাক চরম সিমানায় পৌছালো.. এসব কি বলছে ইস্পা.. ওরা বাসায় ছিল না… তাহলে কোথায় ছিল.. আর সে যা দেখেছিল.. সে অবাক হয়ে জিঙ্গেস করলো— কোথায় ছিলে তোমরা??
এইবার যেন অবাক হওয়ার কথা ইস্পার.. সে অবাক হয়ে বলল– তুমি জান না?? ইষা আপুর গায়ে হলুদের দিন আমার দাদু মারা যান.. তুমি তো জান আমি দাদুর সাথে কতোটা এটাচ.. আমি নানুর বাড়িতে আসতামিনা কখনো দাদুকে রেখে.. ইসা আপুর বিয়ে তাই আম্মু জোর করে নিয়ে এসেছিলেন..
সেইদিন হঠাৎ ছাদে যাওয়ার সময় আমার ফুফাতো বোন কলে জানায়.. সাথে সাথে সিড়ি থেকে পড়তে নিয়ছিলাম আমি.. কয়েকটা সিড়ি পড়তেই হাসনাত ভাইয়া ধরে ফেলেন আমায়. না হয় আমিও সেইদিন চলে যেতাম.. কিন্তু পা টা ভিষনভাবে মচকে যায়. এতোটা যে হাটতেই পারছিলাম না..
রোদেলা তখন আনমনে বলে— তারপর হাসনাত ভাই তোমাকে কোলে করে রুমে নিয়ে শুয়ে দেয়…
ইস্পা অবাক হয়ে বলে— হুম,, কেন সেইটা নিয়ে কি মামিরা কোন ইস্যু করেছিল??
রোদেলা আনমনে মাথা ধোলাল.. তার চোখ ফেটে পানি আসছে.. কিন্তু সে নিজেকে সংযত করে নিল.. তারপর ইস্পার দিকে তাকিয়ে বলল– তারপর..
ইস্পা— তারপর আর কি.. আমরা সবাই আমার দাদুর বাড়ির যাওয়ার জন্য মাইক্রোতে উঠি.. হাসনাত ভাই কেন যেন বের হতে চায় গাড়ি থেকে.. কিন্তু সবাই আটকে দেয় লেইট হবে তাই..তবে আমার মনে হয়েছিল সে তোমাকে বলতে যেতে চেয়েছিল.. ইফ্ফাতরাও আমাদের সাথে গিয়েছিল.. ওর আম্মুর চাচি তাই..
রোদেলার মাথা এখন দুয়ে দুয়ে চার হচ্ছে… এই কারনে সেইদিন বড়মামিরা ছিল না.. আমি কতো বড় বোকা..নিজেকে নিজের মারতে ইচ্ছে হলো রোদেলার.. ইস্পা মুখ ছোট করে বলল– আসলে তোামদের জালানোর জন্য দুষ্টিমি করতাম.. কিন্তু তোমাদের ছাড়া নানুর বাড়িতে মন বসতো না..রোদেলা মাথা দুলিয়ে বলে— আমি এসব মাথায় রাখি নি…
ইস্পা — থেংকিউ…
সে ইস্পার সাথে আরো টুকিটাকি কথা বলে বেরিয়ে গেল.. ইস্পাও তাকে নিজের বাসায় যাওয়ার অনেক করে অনুরোধ করলো রোদেলা আর একদিন বলে চলে এলো…. রোদেলা বাসায় পৌছে দেখলো তামান্না বসে আছে.. সে রোদেলাকে দেখতেই বলল– রোদেলা,, কই ছিলি,,, জানিস হাসনাত ভাইয়ের সাথে ওই মেয়েটা কতো কাহিনি করছিল.. আবার তার গাড়িতে চেপে চলে গেল.. দেখবি হাসনাত ভাইকে পটিয়ে ছাড়বে. হঠাৎ সানিয়া এসে বলল– তো আর কি করবে.. হাসনাত ভাই কি আজিবন সন্নাসী লাইফ লিড করবে.. আর চোখের সামনে বিরিয়ানি থাকলে কে দেখেনা.. আর তুই তো ওনাকে ঘৃনা করিস…
রোদেলার ওদের কথাগুলো সুচের মতো গায়ে বিধতে লাগলো.. তার কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে..সে কান্না করতে লাগলো.. তারপর কিছু ভেবে নিজের চোখের পানি মুছে বলল– অনেক কান্না করেছি.. আর না.. আমার জিনিস.. আমি কাউকে দিবো না…
সানিয়া মুচকি হেসে হাসনাতকে কল দিয়ে বলল– রোদেলা সব সত্যি জেনে গেছে কিভাবে জানি না…
হাসনাত— তাহলেকি আমি ওকে কালকে প্রপোজ করবো???
সানিয়া— এতো উতলাহন কেন?? ওকে আর একটু শক্ত করি.। আর না হয় কয়েকদিন পর আবার আর একটা নিয়ে নাচবে.. তাই ওকে একটু বোঝানো দরকার…
হাসনাত — কিন্তু আমার জানটা…..
মুনিরা— চুপ একদম.. মেয়েদের মতো করবেন না.. করলে একদম বিয়ে ক্যান্চেল করে দিব.. দুসপ্তাহ পর আপনাদের বিয়ে.. ততদিন আগের হিটলার হয়ে থাকুন.. আর কালকে হিরো সেজে আসবেন…
চলবে