ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ১৮

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ১৮

—- তোমাকে অনেক স্ট্রং ভাবতাম আমি.. কিন্তু এমন মেয়েদের মতো ফ্যাচফ্যাচ করে কান্না কর তা তো জানতাম না.. আর কোন বদ অভ্যাস আছে কিনা বল দাও আগে ভাগে।। না হয় পরে আমার মেয়ের থেকে মার খাবে….
হাসনাত ফিক করে হেসে দিল..তারপর বলল– আঙ্কেল আপনার মেয়ে আমার চেয়ে বেশি কাদে…
—- কি এতোবড় কথা.. তুমি রোদেলার বাবা মি শামীম এমরুলের সামনে তার মেয়ের নামে বদনামি করছ..যাও বিয়ে ক্যান্সেল তোমার…
হাসনাত হাসতে হাসতে খাটে বসে বলল– ওকে জান আজথেকে আপনিও আমার শশুর হিসেবে ক্যান্সেল…
রোদেলার বাবা হালকা রাগ করেছে এমন ভাব দেখিয়ে আবার উচ্চস্বরে হেসে দিলেন.. হাসনাতের চোখের পানিগুলো নিজের হাত দিয়ে মুছে দিলেন তারপর পরম আফসুসের ভঙ্গিতে বলল– আহারে,, হাসনাত আরিয়ান,, তোমার ভাগ্যটা কতো খারাপ কোথায় তোমার বউ তুমি কান্না করলে নিজের শাড়ি ছিড়ে সেই শাড়ি দিয়ে তোমার চোখের পানি মোচবে তা না.. এখন তোমার শশুর মুছে দিচ্ছে.. ইস,, ফিলিং বেড ফর উ।।
হাসনাত হালকা মুচকি হেসে– শাড়ি দিয়ে মুছলে কি ময়লা লাগবে যে ছিড়ে মুচতে হবে… আর এছাড়া এই ল তো মেয়েদের জন্য.. ছেলেদের তো শশুরই মুছে দেয়… তারপর চোখ টিপ দিয়ে দেখালো চেকম্যাট…
রোদেলার বাবা হেসে বলল– আরে কান্নার সাথে তো সর্দি ও বের হয় তোর.. তারপর ব্রু কুচকে বলল– তোরে এই কথা শিখালো টা কে…
তখন হাসনাতের বাবা রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল– কে আবার.. আমি আরকি…
মি শামীম সেদিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে তার কাছে গিয়ে পেটে গুতো দিয়ে বলল– মি হিমেল আরিয়ান,,, আমার তো আগে থেকেই জানা আছে এমন ওল্টাপাল্টা শিখাশুধু তুই ই দিবি.. সাথে সাথে মি হিমেল হেসে মি শামীমকে জড়িয়ে ধরলো…
শামীম আর হিমেল স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটি সব একসাথেই. মূলত তারা ছোট বেলার বন্ধু.. আর এই সূবাদে হাসনাতের সাথে দুই বাবাই অনেক ফ্রি..হাসনাত কে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসেন তিনি.. মাবাবা যেমন সন্তানের মুখ দেখে তার মনের খবর জানে ঠিক তেমনি শামীম ও হাসনাতের মনের খবর অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিল যখন রোদেলা মাত্র ক্লাস নাইনে পড়তো.. সে অনেক ভেবে একদিন হাসনাতকে একটা পার্কে ঘুরতে নিয়ে যায়.. হাসনাত অনেকটা প্রফুল্ল হয়ে তার সাথে গেল.. তখন সে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ে…

শামীম —- হাসনাত, একটা গেইম খেলবি??
হাসনাত — তুমি বুড়া বয়সে খেলতে পার্কে নিয়ে এসেছো আমাকে.. এইটা কোন কথা…
শামীম—- হুম.. খেলবি কিনা বল..
হাসনাত– নিয়মতো বল আগে।।।
শামীম — আমি একটা ওয়ার্ড বলবো.. সেইটার রিলেটেড যেই ওয়ার্ডটা তোর মনে প্রথম আসবে.. তুই সেই নামটা বলবি..
হাসনাত — শিশুর বাচ্চাদের খেলা..ওকে বল..
শামীম মুচকি হেসে– ফুল?
হাসনাত — বেলী..
শামীম– জায়গা. — কক্সবাজার
শামীম—সময়— রাত.
প্রিয় বাড়ি— তোমার বাড়ি…
প্রিয় মানুষ– বাবা,, তুমি
স্বপ্ন– ভালো কিছু করা..
চোখ বন্ধ করে কাকে দেখিস— সেই মায়াবতীকে…
ভালোবাসা—- রোদেলা…
হাসনাত তাড়াতাড়ি চমকে সামনের দিকে তাকালো..শামীম স্হির দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে.. সে আমাতাআমাতা করে বলল– আসলে আন্কেল..
শামীম অন্যদিকে তাকিয়ে— ভালোবাসা খারাপ না হাসনাত.. তবে সময়টা খারাপ.. ওকে নিয়ে অনেক আশা আমার।। ও ভার্সিটিতে ভালো সাবজেক্ট এ পড়বে.. আমার কোন ছেলে নেয়.. আর তাই ওরা আমার কাছে ছেলের ই মতো এখন..
হাসনাত— সরি আন্কেল..আমি ওর সাথে আর আগের মতো তেমন মিশবো না..সব আমার ভূল..
শামীম — এতো কম ভালোবাসা? দমে গেলি??
হাসনাত — নাহ আসলে…
শামীম—- ওকে.. তুই টাইম নে.. রোদেলা অনার্স এ ভর্তি হওয়া পর্যন্ত এই চার বছর তুই ওকে কিছু বলতে পারবি না.. চার বছর পর ও যদি ওর প্রতি তোর ভালোবাসা না কমে. তোর সাথে বিয়ে দিব আমি…
হাসনাত সেইদিন খুশিতে জড়িয়ে ধরেছিল তাকে…

সেইদিনের কথা মনে করে শামীমের চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো.. সে হিমেলের দিকে তাকিয়ে বলল– কেমন ছেলেটা কেমন হয়ে গেল হিমেল.. সবকিছুর পিছনে হয়তো আমিও দ্বায়ী…
হিমেল তার কাধে হাত দিয়ে বলল– তোর দোষ নেয় ইয়ার.. মন ছোট করবি না তুই.. আর এছাড়া তুই ই তো ওকে পলিটিক্স এর রাস্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে এসেছিস সেইদিন..
শামীম আআফসোস ভরা কন্ঠে বলল — তাও কি ওর জিবনটা সাজাতে পারলাম.. ওকে বললাম রোদেলার সাথে বিয়ে দিয়ে দি.. কিন্তু ওর মতে রোদেলার মনে ওর জন্য ভালোবাসা ফুটিয়ে তারপর বিয়ে করবে.. আার তাই তো এই জবটা নিল…
হাসনাত ওদের কাছে এসে পাশে দাড়িয়ে বলল– ওর মনে আমার জন্য বিশেষ জায়গা আছে.. শুধু ওর মনের ভাষাটা ওকে বোঝানোর অপেক্ষা…
শামীম মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল– এইসব করতে করতে বুড়ো হয়ে যাও তুমি.. দাত কয়েকটা পড়ে গেলে তারপর বিয়ে করিও…ওকে???..
হাসনাত আর হিমেল হেসে দিল আর একটুপর শামীম সাহেবও…

সকালের মিষ্টি আবাহাওয়ায় ভার্সিটির পরিবেশটা আরো বেশি মনরোম মনে হচ্ছেরোদপ..রোদেলা রাস্তার একপাশ ধরে হাটছে.. মিষ্টি বাতাশটা কানপ কানে কি যেন বলে যাচ্ছে।। পাখির কিচিমিচি আওয়াজ যেন আরো নেশা লাগিয়ে দিচ্ছে…রোদেলা চুপচাপ প্রকৃতিটা দেখছে.. হঠাৎ কোথা থেকে হাসনাত টপকে রোদেলার সামনে এসে দাড়ালো.. রোদেলা ভয়ে কয়েক লাফ পিছনে দিয়ে আবার ব্রু সরু করে তাকিয়ে বলল– আমাকে মেরে ফেলার সুপারিশ নিয়েছেন নাকি কারো থেকে??
হাসনাত — কেন কি করলাম..
রোদেলা— এইযে সামনে এইভাবে লাফিয়ে এলেন যদি স্টোক করতাম আর অসময় আমার টিকেটটা কোরে ..
হাসনাত তাড়াতাড়ি রোদেলার মুখের সামনে আন্ঙুল দিয়ে বলল– এইসব ওল্টা পাল্টা কথা বলা ছাড়া আর কাজ নেয়?? বলবে না একদম এইসব.
রোদেলা অবাক হয়ে হাসনাতের দিকে তাকালো.. সত্যি কি ও আমাকে ভালোবাসে…সে ভাবলো.. আবার হঠাৎ সেই সিনটা চোখের সামনে ভেসে উঠলো.. হাসনাতকে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলল– মেয়ে দেখলে শুধু কাছে আসতে ইচ্ছে হয় তাই না.আপনারবেয়াদব ছেলে একটা. এই বলে হনহনিয়ে চলে গেল..আর হাসনাত তার যাওয়ার পানে চেয়ে রইলো.রোদেলা যে হাসনাতের নামে এমন ভাবতে পারে হাসনাতের যেন বিশ্বাস ই হলো না.. সে অবাক হয়ে রোদেলার পিছনে হাটা ধরলো.

রোদেলা মন খারাপ নিয়ে যেই ক্লাসে ডুকবে হঠাৎ একটা ছেলে রোদেলার সামনে দাড়িয়ে পড়লো হাসনাত ছেলেটাকে দেখে পাশে দেয়ালে লুকিয়ে দেখতে লাগলো.. রোদেলা হালকা ব্রু কুঁচকে বলল– ইশাম কিচু বলবি?
ইশাম লাজুক মুখে বলল– তোমাকে কিছু বলার আছে.. আসলে লজ্জা লাগছিল বলতে..
রোদেলা অবাক চোখে তাকালো… হাসনাত সেদিকে মুখ বাকিয়ে বলল– হু.. লাজুকলতা!!! তো বেটা কম্বলের ভিতরে লুকিয়ে বসে থাকতি.. আমার সম্পত্তিরর দিকে চোখ কেন তোর.. আবার নিজে নিজে বুলি আওড়ে বলল– সে আমার সম্পত্তি নয় আমার সম্পদ..
..মুচকি হেসে আবার তাকালো সেদিকে.. হঠাৎ ইশাম রোদেলার হাত ধরে বলল– রোদেলা আই লাভ ইউ.. চল বিয়ে করে ফেলি… হাসনাত চোখ বড় বড় করে তাকালো.. বিরবিরিয়ে বলল– শাল জানোস আমি ৮ বছর ধরে ফিল্ডিং করি আর তুই দুই দিনে এসে নো বলে ছক্কা হাকাচ্ছোস..তুই তো আর জানিস না তোর কম্পিটিটর কে .. দি গ্রেড হাসনাত আরিয়ান হঠাৎ পিছন থেকে কেউ বলে ওঠলো— কম্পিটিটর টা আবার কে।। বেকুব আরিয়ান.. তোমার লজ্জা হওয়া উচিত হাসনাত ভাই..
হাসনাত তাড়াতাড়ি পিছনে তাকিয়ে দেখলো সানিয়া দাঁড়িয়ে.. হাসনাত হেসে ওর কাছে গিয়ে বলল — কি খবর সুন্দরী.. সানিয়া হেসে– আমি তো ভালই.. এতোবছর পর কোথাথেকে.. এতোদিন কি স্যান্নাসী সেজে বনে ছিলা..
হাসনাত মুচকি হেসে বলল– সব বলবো আগে আমার কলিজাটাকে দেখ..
সানিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল– হু..পাচ বছর পর এসে সাহেব তার বাসি কলিজা খুজতেছে…

হাসনাত সামনে তাকাতেই দেখলো রোদেলা মুখ গোমড়া করে বলল– দেখ আমি এইসব লাইক করি না.. আমি ভালোবাসাকে ঘৃনা করি.. এইবলে সে ওই জায়গা থেকে চলে গেল।।। আর হাসনাত মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল– হু ঘৃনা করি.. আরে পিপড়া যদি বলে সে চিনি ঘৃনা করে তা যেমন সম্ভব নয় তোরটা ও সম্ভব না বোঝলি .. এইবলে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল– তবে এই বেটাকে ছাড়বো না আমি.. আমার কলিজায় হাত দিচ্ছিল সে. ওরে ফেল করাই দিব দেখিস যাতে রোদেলাকে আপু ডাকতে হয় ওর..
সানিয়া হতাশজনক লুক দিয়ে বলল– অনার্সে একটাই ফেল করলেও ওপরের ক্লাসে ওঠতে পারে..আমি জানতাম.তুৃমি অর্ধেক পাগল ছিলা পুরা পাগল কখন থেকে হয়ে গেলা…
হাসনাত ফিক করে হেসে বলল– চল বসি..
সানিয়া হাসনাতকে নিয়ে ক্যান্টিনে বসতে বসতে বলল– তুমি কি সত্যি জান না রোদেলা কেন ভালোবাসাকে ঘৃনা করে … হাসনাত মাথা ধোলাল..
সানিয়া— তোমার জন্য.. তোমার কাজের জন্য..
হাসনাত অবাক হয়ে বলল– আমি কি করছি..
সানিয়া অবাক হয়ে সব বলল..আর রোদেলার কান্নাকাটি ও বলল…
হাসনাত স্তব্ধ হয়ে সানিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো.. তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো.. তারপর সে ধির স্বরে বলল– রোদেলা,, এতোটা খারাপ ভাবিস তুই আমাকে.. একবার জিঙ্গেস করতি…
সানিয়া অবাক হয়ে বলল– কি হয়েছিল সেইদিন??
হাসনাত সব বলার পর সানিয়া অবাক হয়ে রইলো তারপর সে মুচকি হেসে বলল– তোমার জন্য একটা প্ল্যান আছে আমার কাছে..
হাসনাত সব শুনে বলল– ধূর.. ফাজিল মেয়ে.. সত্যিটা বলে দিলে কি হয়..
সানিয়া— কষ্ট দেওয়ার অধিকার কি শুধু ওর.. ওর যুক্তিতে ওকে ফেলানো দরকার.. না হয় দেখবা সত্যি বললেও ভালোবাসিটা বের হবে না.. তবে হাসনাতের ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে.. রোদেলা যদি তাকে তোলে আছাড় দেয় সে কি করবে সেইটাই ভাবার বিষয়.. ইস,, ভাঙ্গা কোমড় ওয়ালা ছেলের সাথে কিউট মেয়েটা বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেলে.. রোদেলা আছাড় দেওয়ার শক্তি না পেলে সে নিজেই টেবিলের ওপর থেকে লাফ দিয়ে দিবে..

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here