এক ঝাঁক জোনাকির আলো পর্ব ২১

#একঝাঁক~জোনাকির~আলো🍁
#writer~হাফসা~আলম 🍂
.
.
২১.
আরিফের নিজেরই এখন নিজেকে ক্যাবলাকান্ত মনে হচ্ছে। নিভ্রকে তার অচেনা অচেনা লাগছে।কেমন যেনো পরিবর্তন নিভ্রর মাঝে ছেঁয়ে গেছে।নিভ্র শপিং মলে বসে আছে।শপিংমলে আসার বিশেষ কোনো কারন নিভ্রর নিজেরই জানা নেই।আরিফ হতবাগ। সে এটা ভেবে হতবাগ যে নিভ্র মেয়েদের শাড়ি বেড় করতে বলেছে। দোকানদারও মহা অবাক এটা দেখে।বলে কি নিভ্রনীল শাড়ি কিনবে??? কিন্তু কেনো??কারোরই মাথায় ডুকছেনা।দোকানের বাইরে ভিড় জমে গেছে।নিভ্রর বডিগার্ডসরা বাইরে দাঁড়িয়ে ভিড় সরাতে ব্যস্ত। আরিফ নিভ্রর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।তাকে বসতে বলা হয়েছে কিন্তু সে বসার মত পরিস্থিতিতে নেই।নিভ্র চার চারটা শাড়ি নিয়েছে।নিভ্রর পছন্দ মানেই বেস্ট।নিভ্র নিজের মনে আউড়াতে থাকে সে আসলে এই চারটা শাড়ি কেনো কিনেছে??আরিফ শাড়ি গুলো মনযোগ দিয়ে দেখে।তিনটা শাড়িই প্রায় একুই রকম কিন্তু একটা শুধু আলাদা।আরিফের মনে কৌতুহল জাগে তাই প্রশ্ন করে……
—-“এই শাড়িটা আলাদা কেনো স্যার??
নিভ্র একবার শাড়িটার দিকে তাকায়।তারপর আরিফকে বললো……
—-“সাফার জন্য।
আরিফ ঝাটকা খায়।পিছিয়ে দাড়ায় একটু।গাঢ়ো সবুজ রং এর সবুজ জামদানী। আরিফ মনে মনে বলে উঠে…….স্যার প্রেমে পড়েছে??পরক্ষনেই সে ভাবতে থাকে।সব মিলিয়ে লাফিয়ে উঠে সে।এতক্ষণে সব তার মাথায় এসেছে।তাহলে এই ব্যাপার।আরিফের লাফানি দেখে নিভ্র কপাল কুঁচকে তাকায়।আরিফ চুপসে যায়।কিন্তু মনে মনে সে হাসে।ভালোবাসা যে ভয়ঙ্কর বস্তু এতে তার সন্দেহ নেই।এটা যেকোন কঠিন থেকে কঠিন ব্যাক্তিকেও নিজের নেশায় মাতাতে পারে।শেষে কি না নিভ্রনীলকেও??ভাবা যায়??আরিফের মনে হচ্ছে না মোটেও ভাবা যায় না।
.
.
চৌধুরী বাড়ি রমরম করে সাজানো হয়েছে।বাড়ির মেইন গেট থেকে শুরু করে সব সাজানো হচ্ছে। সাফা মাত্র নিচে নেমেছে।বাড়িময় সাজসজ্জা দেখে তার মনে কৌতুহল জাগে প্রবল ভাবে।সে ভাবতে থাকে এত সাজের কারন কি??সাফা বড় বড় পা ফেলে রান্নাঘরের দিকে যায়।তাকে আসতে দেখে ইফতেখার চৌধুরী মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললে…….
—-“এদেকে এসো সাফা..
সাফা এগিয়ে যায় তার কাছে।মোহনা আর ইফতেখারের মাঝে দাঁড়িয়ে সে কপাল কুঁচকে থাকে কিছুসময়। তারপর নিজের জানার আগ্রহ প্রকাশ করে।মৃদু সরে প্রশ্ন ছুঁড়েছে সে……..
—–“আম্মু এখানে কি আজ পার্টি আছে??না মানে সারা বাড়ি সাজানো হচ্ছে তো তাই প্রশ্নটা করলাম??”
ইফতেখার রান্নার চামুচ নাড়তে নাড়তে সাফার মুখের দিকে তাকিয়ে হাঁসে।তারপর শেষ নাড়াটা নেড়ে বললো……
—-“হুম পার্টি আছে।তোমার রাফা আপু আছে না উনার এনগেইজমেন্ট। কেনো তোমাকে বলেনি ও??”
সাফা যেনো আকাশ থেকে পড়েছে এমন একটা ভাব নিলো সে।তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে ভারী অবাক গলায় বললো……..
—-“না তো আপু শুধু বলেছে আজ যাতে ভার্সিটিতে না যাই।তাই গেলাম না।কিন্তু এটা তো বলেনি আমাকে।কার সাথে এনগেইজমেন্ট হবে আম্মু??”
—-“নিশানের কথা বলেছে তোমাকে??”
—“একটু করে বলেছে। মানে শুধু নাম তারপর আর বলেনি।কে উনি আম্মু?? ”
সাফার এমন প্রশ্নে ইফতেখার হাঁসে। মোহনা একটু এগিয়ে এসে বলে…..
—-“ওই হলো রাফার হবু বর বুঝলে মিষ্টির দোকান??”
সাফা প্রথমে বাদ্ধ মেয়ের মতো মাথা নাড়ায়।তারপরে চট করে তাকিয়ে নিজের বোকামিতে হাঁসে। ইফতেখার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে……
—-“কিছু খাবে??”
সাফা এমন প্রশ্নে বিরক্ত হয়।তার একদম ভালো লাগে না এই কথাটা।এরা তাকে দেখলেই এই প্রশ্নটা করে।আজিব সে কি খাওয়ার জন্যেই তৈরি হয়েছে??নাকি তাকে খাদক টাইপের লাগে??কোনোটাইত তার মনে হয় না।তবে এমন আজিব প্রশ্ন এরা কেনো যে করে??সাফা জবাবে মাথা নাচিয়ে না বুঝায়।ইফতেখার সাফার মুখের অবস্থা দেখে হাঁসে। মেয়েটাকে খাবারের কথা বললেই মুখটাকে এমন চিপসের পেকেটের হাওয়া যাওয়ার মত চুপসে যায়।সাফা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।সে হাঁটছে এখন সে কি করবে??রাফা তো এখন ব্যস্ত। তাই সাফা বাড়ির দরজার দিকে হাটাঁ দেয়।গন্তব্য বাগান।বাহিরে মিটিমিটি বৃষ্টি হচ্ছে। সাফার খুশি এবার কে দেখে।বৃষ্টি মানেই একঝাঁক ভালো লাগা। যা সাফার মন মাতিয়ে রাখে।সাফা ভিঁজে ভিঁজেই বাগানে যায়।বৃষ্টি প্রতিটি ফোটা তাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সাফা হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরে দেখছে।গায়ে মাখাচ্ছে বৃষ্টি নামক প্রেম।বাগানে কেউ নেই।সাফা সোজা কদম গাছের নিচে দাড়িয়ে পরে।ইচ্ছে হচ্ছে এখনই গাছে উঠে কদম ছিঁড়ে নিতে।কিন্তু কি ভাবে উঠবে তাই ভাবছে সে।বিশাল গাছের কিছু ডাল নিচে নেমে আসছে কিন্তু সাফা সেই ঢাল ধরতে পারছে না।তাই লাফাচ্ছে।পাতা ধরতে পারলেও ফুল ধরতে পারছেনা। সাফা হারার পাত্রী না তাই সে তার চেস্টা করেই চলেছে।
.
নিভ্র নিজের ঘরে এসে ভাবছে পেকেট গুলো কিভাবে জায়গায় পৌঁছাবে। তার মাঝে একটা অসস্তি কাজ করছে।সবাই না জানি কি ভাবে নিবে ব্যাপারটা।এমনেতেই নিজের অদ্ভুত কান্ডে নিভ্র নিজেই বিরক্ত। তার উপর সবাই ইদানীং তার দিকে কিভাবে যেনো দেখে।আর মিটমিটিয়ে হাসে।এই হাসির কারন খুজে পায় না নিভ্র।এর মধ্যেই যদি সে শাড়ি গুলো নিজের হাতে দিয়ে দেয় তবে তো ভয়ঙ্কর কিছু ঘটবে।এসব ভেবেই সে হাঁসফাঁস করছে।এক অস্থিরতা বিরাজ করছে তার মাঝে।নিভ্র সোফায় বসে কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ ঘরে পাইচারি করছে।নিভ্রর সকল চিন্তার শেষ হলো রহমত চাচার কথা মনে হতে।সে রহমত চাচাকে দিয়ে সবার রুমে তাদের ব্যাগ গুলো রাখতে বলে দিলো।
.
.
নিভ্র ছাদের একপাশে এসে দাঁড়িয়ে আছে।চার পাচঁ বার নিচে ঘুড়ে এসেছে কিন্তু সাফাকে দেখা হলো না।ইদানীং সাফাকে না দেখলেই তার বুকের ব্যথাটা বেপক আঁকার ধারন করে।সব সময় শূন্যেতা বিরাজ করে মনে।কিন্তু সাফার সেই মায়া মায়া বাচ্চাদের মত চেহারাটা দেখলে তার শান্তি শান্তি লাগে।নিভ্র নিজের মনেই কথা গুলো ভাবছে।হঠাৎ চোখ পরে বাগানে।সাফাকে দেয়াল বেয়ে উঠতে দেখে নিভ্র বিষফোঁড়িত চোখে তাকায়।নিভ্র ভালো করে দেখার চেষ্টা করে।মুহূর্তেই তার মাথা ঘুড়ে উঠে।নিভ্র কিছু না ভেবেই।দৌড়ে নিচে নামে।সিঁড়ির কাছে আসতেই অভ্রর সাথে ধাক্কা লাগে।সেদিকে তার মন নেই।সে দ্রুত বাগানে যেতেই বেশি আগ্রহি।অভ্র অবাক নিভ্রর এমন বেপরোয়া টাইপের কাজে।সে ভ্যাবলার মত তাকিয়ে থাকে কিছুসময়।ইদানীং নিভ্রর কার্যকলাপ তার কাছে পাগলের মত লাগে।ভাবতেও অবাক লাগে নিভ্রনীলের এত পরিবর্তনও সম্ভব।
.
নিভ্র বাগানের শেষ বাউন্ডারির দেয়ালের সামনে এসে দাড়ায়।হাঁপাতে হাঁপাতে সে সাফার দিকে তাকায়।সাফার চোখ তার দিকে নেই।সে পা উঁচিয়ে ফুলছিঁড়তে ব্যস্ত। রাগে নিভ্রর মাথা কাজ করছেনা।মন চাচ্ছে ঠাটিয়ে একটা চর মেরে দিতে সাফার গালে।নিভ্র প্রকট রাগ নিয়ে সাফাকে উদ্যেশ করে বললো……
—-“সাফা তুমি এখানে কি করছো??দেয়ালে কেনো উঠেছ তুমি??নামো….

নিভ্রর এমন চিৎকারে সাফা হকচোকিয়ে যায়।নিভ্রকে এভাবে রেগে থাকতে দেখে সাফা ভয়ে তার দিকে তাকিয়ে দ্রুত নামতে গিয়েই ঠাসসস।সাফা পা পিছলে দেয়াল থেকে পড়ে যেতে নেয়।নিভ্র উদ্বেগ হয়ে তার দিকে নিজের বলিষ্ঠ দেহ এগিয়ে দিতেই সাফা নিভ্রর বুকে এসে আছঁড়ে পরে।নিভ্র যেনো হাপছেড়ে বেচেঁছে।জোড়ে কয়েকটা দীর্ঘশ্বাস নিলো সে।সাফা ভয়ে এখনো চোখ বুজে আছে।সে মনে মনে ভাবছে এখনো ব্যথা কেনো হচ্ছে না।পড়ে গেলেতো ব্যথা হওয়ার কথা।কিছুক্ষণেই সে নিজের এক চোখ খুলে নিভ্রর রাগি রাগি চেহারা দেখে দুই চোখই বড় বড় করে খোলে।নিভ্রর গলা জড়িয়ে আছে সাফা।এটা সে বুঝতে পেরে নিভ্রকে ছেড়ে দেয়।নিভ্র চোখ রাঙায়।গলার সরে রাগি ভাব এনে সে বলল…….
—-“সমস্যাটা কি তোমার??এখানে এভাবে উঠেছিলে কেনো??আর আমি তোমাকে নামতে বলেছি। লাফাতে না।স্টুপিড একটা।তুমি কি একটু সিরিয়েস হতে পারোনা??যানো এখান থেকে নিচে পড়লে কোমড় তো ভাঙ্গবেই সাথে হাত পাও ভাঙ্গবে।এটা যানো তুমি??

সাফা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।ভয়ে নয়।নিভ্রকে কি জবাব দিবে সেটাই ভাবছে।কথাগুলোকে সে জোড়া লাগাতে ব্যস্ত। নিভ্র এবার চরম বিরক্ত। মেয়েটা এমন ভাব করছে যেনো কিছুই করেনি সে।ইনোসেন্ট ভাব কিভাবে মুখে নিয়ে আসে এটাই নিভ্র বুঝতে পারেনা।সাফা এমন একটা ভাব করছে যেনো সে কত ভয় পায় নিভ্রকে।কিন্তু নিভ্র যানে এই মেয়ে তাকে বিন্দু মাত্রও ভয় পায় না।উল্টা এমন এমন কাজ করে নিভ্র নিজেই ভয় পেয়ে যায়।নিভ্রর এবার রাগ যেনো আরো বাড়ছে।রেগে মেগে আগুনের ফুলকির মত ফঁসফঁস করছে সে।সাফার সামনে তুরি বাজিয়ে উচ্চসরে নিভ্র বলে…..
—-“তোমার কি আমার কথা কানে যায় না?? কি করছিলে এখানে??
নিভ্রর ধমকে সাফা নড়ে উঠে।এবার ভয় পাচ্ছে সে।সাফা ভীতূ চোখে নিভ্রর দিকে তাকায়।নিভ্রর রাগ যেনো এখানেই শেষ।তার চোখ সরল হয়ে আসে।চোয়ালের শক্ত ভাব কাটে।সাফা কাঁদোকাঁদো গলায় বলে….
—“এমন করেন কেনো??এটুইত উঠেছি।এত চেঁচাতে হয় বুঝি??ভয় করে তো।কি ভয়ঙ্কর গলা আপনার??এভাবে চেঁচালে বউ পাবেননা জীবনে দেখে নিয়েন??

নিভ্রর এবার নিজের মাথায় নিজের বারি দিতে ইচ্ছে করছে।মেয়েটা কি থেকে কিসে চলে যায় নিভ্র বুঝতে পারেনা এখন বউটা আবার কোথা থেকে এসেছে??নিভ্র বিরক্তি নিয়ে বলল…….
—“এবার বলবে তুমি ওখানে কি করছিলে??
সাফা হাত বাড়িয়ে গাছ দেখায়।মুখে আল্লাদী ভাব এনে বলে……
—“কদম নিতে উঠেছিলাম।আমি তো আপনার মত খাম্বা না তাই নিচ থেকে নিতে পারছি না।এর জন্যেই দেয়ালে উঠা।

নিভ্র এবার সরু চোখে তাকায়।বৃষ্টির ফোটাফোটা পানিতে সাফা ভিজে একাকার হয়ে আছে। এখনো বৃষ্টি হচ্ছে। ফোটা ফোটা পানি সাফার গালে, চোখে,মুখে,ঠোঁটে জমা হচ্ছে। নিভ্র গাছের দিকে চোখ নেয়।তাকিয়ে দেখে কিছুটা উপরে কদম ঝুলে আছে।নিভ্র হাত বাড়িয়ে ঢাল ভেঙে নেয়।সাফা চোখ বড় বড় করে তাকায়।সে ভাবতে পারছেনা নিভ্র এতটা শক্তিশালী?? বাবা গো..ঢাল ভেঙে দিলো এভাবে তবে সাফাকে ভাঙতে তার সত্যিই বেশি কষ্ট লাগবে না।কথাটা ভেবে সাফা ঢোগ গিলে।নিভ্র সাফাকে উদ্যেশ করে বলল……
—-“নেও যত কদম নেওয়ার।এই সামান্য ফুলের জন্য তুমি বৃষ্টিতে এভাবে লাফাতে লাফাতে দেয়ালে উঠে গেলা??ডাফার একটা…

সাফা পিক করে হেঁসে দেয়।নিভ্রর মুখে স্টুপিড, ডাফার, সিরিয়েস হতে বলা এগুলো শুনলে সাফার ভালো লাগে।মন চায় আরো ক্যারলেস হয়ে যেতে।তখন নিভ্র এভাবে তাকে শাসন করবে।সাফা নিচে বসে।কদম গুলো ঢাল থেকে ছাড়িয়ে নেয়।তারপর নিভ্রর হাতে কিছু ধরিয়ে বলে…..
—-“ভাববেন না আপনাকে দিয়েছি।নিয়ে নিবো বাসায় গিয়ে এখন আমার হাতে জায়গা নেই।আচ্ছা একটা কবিতা শুনান।

নিভ্র বিষম খায়।খুক খুক করে কেশে উঠে।তার মাথায় সত্যিই এখন একটা কবিতা ঘুড়ছে।সাফা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বলে…..
—-“এমন করছেন কেনো??কবিতা শুনালে কি হয়??শুনান না একটা??
—-“আমি কি কবি নাকি???(নিভ্রর সোজা জবাব)
—“হু্ বললেই হলো।আমি জানি আপনি পারেন।মনে নেই ওইদিন শুনিয়েছিলেন??এখনও পারবেন।শুনান না!!

নিভ্র ভ্রুকুঁচকে ভাবে।সাফার দিকে তাকিয়ে গম্ভীর গলায় বলে…….
—-“পারবো না।
সাফা হতাশ হয়।রাগও হয় খুব।তাই নিভ্রর সাথে আর কথা না বলে হাটাঁ দেয়।নিভ্র তাকিয়ে তা দেখে জোরে বলে…..
—–“সাফা দাড়াও
সাফা দাড়ায় না।লোকটা সব সময় কেমন কেমন গম্ভীর আর চুপচাপ করে থাকে।সাফার এমন লোক গুলো একদম ভালো লাগে না।কিন্তু নিভ্রকে তার সব রূপেই ভালো লাগে।নিভ্র হয় তো তাকে তেমন পছন্দ করে না তাই পাত্তা দিতে চায় না।তবে এত ক্যায়ারি ভাব দেখায় কেনো??সাফার খুব কষ্ট হয়।বুক ভার হয়ে আসে।মন খারাপ হয়।দম আঁটকে আসে কষ্ট।চোখে পানিও চলে আসে।নিভ্র দ্রুত গতিতে সাফার সামনে আসে।সাফা চোখ বাকিয়ে তাকায়।নিভ্র সাফার চোখের দিকে তাকায়।সাফা নিভ্রকে দেখে মনে মনে ভাবে একটা হলুদ পাঞ্জাবি হলেই এখন নিভ্র তার হিমু হয়ে যেতো।হাতেও কদম আছে।নিভ্র একবার চোখবুজে শ্বাস নেয়।সাফার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে শুরু করে………..
🍁
খোলা মাঠের দুইপ্রান্ত
আমার হাতে একগুচ্ছ কদম জীবন্ত।
তুমি এলে তাই
বৃষ্টিতে নিজেকে ভিজাঁই।
তোমার নীল শাড়ি
আকাশটা আমার বাড়ি
তোমার সুপ্ত অনুভুতি
আমার দুইপ্রান্তের সিমান্ত খালি
সব দিয়ে শূন্যে আমি
তোমাতে আমি ডুবি জানি।
তোমার স্নিগ্ধতায় আমি হারতে জানি
দুহাতে তোমায় আগলে রাখি
এ বুকের অবাদ্ধ শব্দ তুমি
🍁
কবিতাটা বলেই নিভ্র আর তাকিয়ে থাকতে পারেনা।সে দ্রুত সাফার সামনে থেকে সরে যায়।বুকটা তার টিপটিপ করছে।শরীর কাপঁছে। যেনো মনে ঝড় বইছে।শিরশির করছে বুকে।রঞ্জে রঞ্জে শিহরণ দিচ্ছে। সাফা বরফের মত জমে দাঁড়িয়ে আছে।বৃষ্টি তাকে ভিঁজিয়ে দিচ্ছে মনেন মত করে।হঠাৎই সাফার লজ্জা লাগছে খুব।মনে মনে নিজেকে ঝাড়ি দেয় সে।কি দরকার ছিলো কবিতা শুনার।এখন তো সে এই কবিতা ভেবে ভেবে দম আঁটকে মরে যাবে।
.
.
সাফা নিজের বিছনায় বসে আছে।চোখ তার বিছানার উপড়ে রাখা পেকেট টাতে।বুঝতে পাড়ছে না এটা তার রুমে কিভাবে এলো।সাফা চাইছে একবার খুলে দেখতে কিন্তু কার না কার ভেবে আর খুলছে না।সন্ধ্যা থেকেই পার্টি শুরু হবে।সবাই প্রায় তৈরি হতে ব্যস্ত।মেহমানরা চলে এসেছে প্রায়।কিন্তু কাউকেই সাফা চিনতে পারছে না।সাফার মন খারাপ হয়।সবাই ব্যস্ত। তার ভালো লাগেনা এভাবে থাকতে।নিচেও যেতে পারছেনা সবাই হাইসোসাইটি। তাকে কেমন যেনো বেমানান লাগে। হঠাৎ দরজাটা খট করে উঠে।সাফা চোখ তুলে তাকায়।রাফা দাঁড়িয়ে আছে।তার পরনে গোলাপি একটা কাজ করা শাড়ি।মেকাপও করেছে হালকা।রাফা হাসি মুখে এগিয়ে আসে।সাফা মনে মনে ভাবে এই আপুর হাসি এতো সুন্দর কেনো??মনে হয় পাগল করার মতো।রাফা সাফার পাশ থেকে পেকেটা নিয়ে খুলতে খুলতে বলে…….
—-“তুমি এখনো রেডি হওনি কেনো মিষ্টির দোকান??
—-“আমি কি পরবো বুঝতে পারছি না আপু।তাই বসে আছি(মুখ ফুলিয়ে বলে সাফা)
—-“আমি আছি কি করতে??চলো আমি তোমাকে সাজিয়ে দি।সাথে শাড়িও পরিয়ে দি।
সাফা অবাক হয়ে বলে…….
—-“শাড়ি কেনো পড়বো আপু??
—-“সবাই পরেছে তাই।
—“কিন্তু আমার তো শাড়ি নেই এখানে।সব বাসায়(মন খারাপ করে বলে সাফা)
রাফা একগাল হেসেঁ সাফার গাল টেনে দেয়।তারপর পেকেট থেকে সবুজ জামদানীটা বের করে সাফার সামনে ধরে।মুখে বলে…….
—-“বাহ দাড়ুন লাগছে।যানো এটা কে কিনেছে??
—“না। আর এটা তো আমার না।
—-“তোমারই।আচ্ছা থাক পরে বলবো।তবে মনে রেখো স্পেশাল কেউ।এমন কি আমারটাও সে কিনেছে।
সাফা অবাক হয়।আর ভাবে কে এই স্পেশাল মানুষ।আর এত সুন্দর শাড়ি কে পছন্দ করতে পারে।সাফা হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখে। শাড়িটা অসাধারণ সুন্দর। রাফা সাফাকে তৈরি করে দেয়।সাফা অবাক হয়ে রাফাকে দেখে কতটা ভালো হলে নিজের এনগেইজমেন্টে আর একজনকে সাজিয়ে দিতে পারে_________
.
.
#চলবে____🍁
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন _______🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here