#এক_রাতের_বউ
#___পর্ব___৮___
Written by Avantika Anha
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
আমি খুশিই হলাম যে তার থেকে দূরে। যতো সময় সবার মাঝে থাকি পুরো স্মৃতি আমার সাথে যা হয়েছে ভুলে থাকি কিন্তু আবার একা হলেই সব মনে পড়ে যায়। সবাই ব্যস্ত হলো কিছুটা কাজে এদিকে আমি একা এক কোণে দাড়িয়ে আছি। ভাবছি, “গত রাতে কেন আমি তার কাছে গেলাম? আমি কি তার মায়ায় জড়াচ্ছি?”
.
আমার সামনে দিয়ে আরাভ গেলো। কিন্তু তাকালো না। লক্ষ্য করতে লাগলাম আরাভও। ভালোই হলো আমি তার থেকে দূরে থাকাই ভালো। কিছু সময় হোটেলে থেকে আমরা বের হলাম ঘুরতে। আমি সামনের দিকে হাটছি আর আরাভ আমার থেকে কিছুটা দূরে।
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
এক পলক পিছনে তাকিয়ে দেখলাম আরাভ আমার দিকে তাকিয়ে। আমি সামনে তাকালাম। হঠাৎ দেখলাম কোণে একটা পাখি আটকে আছে। ভাবলাম তাড়াতাড়ি ছাড়িয়েই আবার তাদের পিছু ধরবো। কিন্তু পাখিটা ছাড়াতে গিয়েও পারছিলাম না। হঠাৎ কে যেন এসে সাহায্য করলো। পাখিটাকে উড়িয়ে দিয়ে তাকিয়ে দেখি সে আর কেউ নয় আরাভ।
.
আমি- এখানে যে?
আরাভ- দেখলাম তুমি গ্রুপ থেকে বের হয়ে এসেছো তাই দেখতে এলাম।
আমি- ও আচ্ছা ধন্যবাদ সাহায্যের জন্য।
.
এইটুকু বলে চলে যেতে লাগলাম পা পিছলে গেলো। আরাভ ধরে ফেললো। আবারো ওর স্পর্শে আমার কেমন একটা অনুভূতি হলো। তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে দাড়ালাম।
আমি- আবারও ধন্যবাদ।
আরাভ- আনহা।
আমি- বলুন।
আরাভ- আমার থেকে কি দূরে থাকতে চাও?
আমি- হুম।
আরাভ- কেন?
আমি- জানেন না?
আরাভ- সেদিন কেন ওমন করলাম জানি না।
আমি- তাই নাকি? তাহলে আগের গুলো?
আরাভ- তোমাকে তাদের কথা কে বলেছে?
আমি- বলেছে যেই হোক সত্য তো এটা আমিও জানি।
আরাভ- হুমম সত্যি কিন্তু ওরা ওগুলোই ডিজার্ভ করে।
আমি- আচ্ছা আর আমি?
আরাভ- জানি না।
আমি- বাহ দারুণ। না জেনে আপনি একটা মেয়ের এতো বড় ক্ষতি করলেন।
আরাভ- হুম।
আমি- ভালোই তো।
আরাভ- আই এম সরি।
আমি- আপনার সরি দিয়ে কি আমি পবিত্র হবো?
আরাভ- না। তোমার কি লাগবে?
আমি- বিয়ে করুন আমাকে।
আরাভ- সরি আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না।
আমি- তাহলে এতো কথার মানে হয় না। আপনি আপনার মতো থাকুন। দয়া করে দূরে থাকুন। আর এতো কাছে আসতে হলে একেবারে আপন করুন।
.
আরাভ কোনো জবাব দিলো না। জানি থাকবেও না। আমি ওর মতো একজনের সাথে থাকতে পারবো না নিজেও জানি। কিন্তু কেন এমন করে কথা গুলো বললাম আমি নিজেও জানি না। আমি তাড়াতাড়ি হেটে সামনে গেলাম। কিন্তু আমাদের দলের কাউকে পেলাম না। একটু জোড়ে হেটেও পেলাম না। না পেরে কল দিতে গিয়ে দেখি নেটওয়ার্ক নাই। পিছনে তাকিয়ে দেখি আরাভও নাই। “তার মানে কি ও সত্যি চলে গেছে? এখন আমি একা কি করবো?” এসব প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরছিলো। চারপাশে সব অচেনা চিন্তা বাড়তে লাগলো। আশেপাশে জিজ্ঞেস করে অগত্যা সামনে এগোতে লাগলাম। কেন যেন একা লাগছিলো।
.
সামনের রাস্তা গুলো ফাঁকা লাগতে লাগলো। কিছুটা ভয় তাই আমি একটা কিটক্যাট খেতে লাগলাম আর সেই সাথে আমি ফোনে নেটওয়ার্ক খুঁজতে লাগলাম। আশে পাশে তাকিয়ে একটু বেশিই ফাঁকা লাগতে রাখলো। সামনে দুইটা রাস্তা পেলাম।সাইন পেলাম না কোথাও তাই আন্দাজ করে এক রাস্তায় হাটা ধরলাম। হঠাৎ সামনে সাপ দেখতে পেলাম। এমনি আমার এসব প্রাণী আজব লাগে+ভয়ও। আমি চুপচাপ দাড়িয়ে গেলাম। নড়ার শক্তি হারিয়ে গেলো। সাপটা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমি আর অপেক্ষা না করে আম্মু বলে দৌড় দিলাম উল্টা দিকে। দৌড়াতে দৌড়াতে এক মুহূর্তে একজনের সাথে ধাক্কা খেলাম। তাকিয়ে দেখি আরাভ। ভয়ের কারণে আরাভকেই জড়িয়ে ধরলাম।
.
আরাভ- শান্ত হও।
আমি- (কান্না পেলো)
আরাভ- আরে পাগলি মেয়ে এতো কিভাবে কাঁদো?
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
আমি- আমি কাউকে পাচ্ছি না।
আরাভ- জানি ওরা সামনে এগিয়ে গেছে।
আমি- আপনি কিভাবে জানলেন?
আরাভ- তুমি যাওয়ার পরপরই ওদের কল দিলাম তখন শুনলাম। স্যার বকা দিলো এতো কেয়ারলেস হওয়ার জন্য। কোনো মতে বুঝালাম।
আমি- কিন্তু কিভাবে জানলেন আমি এখানে? পিছনে তো আপনাকে পেলাম না।
আরাভ- আমি তো আর তোমার মতো গাধা না। শুনেই তোমাকে খুঁজতে লাগলাম। আশাপাশে তোমার খোঁজ করলাম পিক দেখিয়ে তোমার তখন বললো।
আমি- আমার পিক কই পেলেন?
আরাভ- জানার কথা না।
আমি- বলুন।
আরাভ- তুলেছি লুকিয়ে।
আমি- মানে?
আরাভ- হুম।
আমি- আর যে কি কি করছেন আল্লাহ জানে।
আরাভ- মে বি। বাই দা রাস্তা আমাকে জড়িয়ে ধরে কি ভালো লাগছে নাকি?
.
আমি তাড়াতাড়ি আরাভকে ছেড়ে দিলাম। ভয়ের কারণে ওকে জড়িয়ে ধরছিলাম।
আমি- পিছনে তো দুটো রাস্তা ছিলো। কিভাবে বুঝলেন?
আরাভ- তুমি যে উবু দশ বিশ করে বেশিরভাগ কাজ করো জানা ছিলো। আর প্রথমের টা দশ ধরলে তো …. বুঝলা কেমনে জানলাম?
আমি- ভাই আমারে ইট্টু টিপস দিবেন?
আরাভ- আসো বৎস।
আমি- ফুটেন আমি কোনোদিন আপনার হেল্প নিবো না। যে আমার শরীর নিয়ে খেলেছে। তার কাছে আমি কিছুই শিখবো না।
আরাভ- হুমমম। এখন যাই হোক একা যাবা নাকি আমার সাথে?
আমি- একা যাবো। কিন্তু কোনদিকে যাবো যাস্ট একটা হেল্প বলেন?
আরাভ- আগের রাস্তায়।
আমি- ওকে।
.
সাহস নিয়ে আগাতে লাগলাম। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকালো। সাধারণত যা হয় ভয় পেয়েছে একজন। কিন্তু আনহা না আরাভ ভয় পেয়েছে। আমি পিছনে ঘুরে দেখি আরাভের মুখের অবস্থা হাইস্যকর।
আমি- কিচ্চে এরাম করে দাড়ায় কেন?
আরাভ- আমি বিদ্যুৎ চমকানো ভয় পাই।
আমি- কিতা? সত্যি? এতো বড় হয়ে ভয় পান হিহিহি।
আরাভ- না মানে।
আমি- হায়রে যে ছেলে এতো মেয়ের শরীর নিয়ে খেলতে ভয় পেলো না। সে সামান্য এতে ভয় পেলো।
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- আসেন আমি আছি। আপনার কিছু হবে না।
.
আরাভ পাশাপাশি দাড়ালো। দুজনে হাটতে লাগলাম। আবারও বিদ্যুৎ চমকালো। আরাভের দিকে তাকিয়ে দেখলাম আরাভ এবারও ভয় পেয়েছে। কিন্তু আজব ব্যাপার এতো ভয় পেয়েও আরাভ আমাকে স্পর্শ করে নি। হয়তো ওর জায়গায় হলে আমি পাশের জনের হাত ধরে ফেলতাম।
.
আমি- হাতটা ধরেন। আমি আছি পাশে।
আরাভ- আচ্ছা।
.
আরাভ আমার হাতটা ধরলো।
.
আমরা হাটছি।
আমি- তা মি. আরাভ আমার প্রশ্নের জবাব দিবেন না?
ফেসবুক পেজ: নিঃস্বার্থ ভালোবাসা
আরাভ- (নিশ্চুপ)
আমি- হাহা জানতাম জবাব নেই।
আরাভ- (নিশ্চুপ) {আবারও বিদ্যুৎ চমকালো আরাভ শক্ত করে আমার হাত ধরলো। ও একটু বেশিই হয়তো ভয় পায়}
আমি- আচ্ছা কি খেতে ভালোবাসেন? (কথা ঘুরিয়ে তার মনের ভয় দূর করতে)
আরাভ- কিছু না।
আমি- ও আচ্ছা। তা জানেন আমি অনেক কিছু খাই।
আরাভ- কেমন খাও বুঝা যায়।
আমি- না মানে খাই খাওয়ার জিনিস খাই না।
আরাভ- একটু মোটা হও। বেশিই পাতলা।
আমি- পার্ফেক্ট আছি।
আরাভ- তাও ধরা যায় কারণ যখন কোলে নিছিলাম ওজন মনে হইছে।
আমি- স্টপ।
আরাভ- ওকে।
.
আবারো দুজন নিশ্চুপ হাটছি।
আমি- আচ্ছা মি. আরাভ সত্যি করে বলেন না আমার কি দোষ ছিলো?
আরাভ- জানি না। আমি সত্যি জানি না কেন এমন করলাম। আমি এটাও জানি না আমি এখানেই বা কেনো আসলাম।
আমি- আচ্ছা।
.
হঠাৎ বৃষ্টি নামলো। আমরা তাড়াতাড়ি দৌড় দিয়ে এক গাছের নিচে দাড়ালাম। হঠাৎ বৃষ্টি কিছুটা ঠান্ডা পানি। হাত বাড়িয়ে ধরতে লাগলাম।
.
আরাভ- বৃষ্টি খুব ভালোবাসো তাই না?
আমি- হুমমম।
আরাভ- আচ্ছা। (কোনো কথা পেলাম না সামনে বাড়ানোর)
.
আমি বৃষ্টিতে ভিজতে এগোলাম।
আরাভ- যেও না।
আমি- কেন?
আরাভ- ঠান্ডা লাগবে।
আমি- না আমি যাবোই।
.
এটুকু বলে আমি আগাইতে লাগলাম। আরাভ আমার হাত ধরে তার দিকে টান দিলো। আমার এক হাত তার বুকে। শার্টটা কিছুটা ভিজে যাওয়ায় আমি তার বুকের ধুকবুকানি অনুভব করতে পারছিলাম। আরাভ আমার থেকে লম্বা হওয়ায় ওর চুলের মুখের বৃষ্টির কয়েক ফোটা পানি আমার মুখের উপর পড়লো। দুজনেই কিছু সময় দুজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম। হঠাৎ মাথায় এলো, আরাভের কিছু কাজ। তাড়াতাড়ি নড়ে উঠলাম।
.
আরাভ- ভিজো না।
আমি- হুমম।
.
দুজনেই নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকলাম আর বৃষ্টি দেখতে লাগলাম।
.
#________________চলবে_____________