#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩০
নীলাশা দৌড়াতে থাকে আর এদিকে সেই লোক গুলো তাকে দেখে তার পিছনে ছুটতে থাকে। কিছুক্ষণ পর নীলাশা ভিড়ের মধ্যে মিলিয়ে যায়। সেই লোকগুলো নীলাশা কে আবার খুঁজতে থাকে, তারা দেখে নীলাশা একটা গাড়ির ডিকিতে। অতঃপর তারাও সেই গাড়ির পিছু নেয়। গাড়ি এসে থামে ইশা’র বাড়ির সামনে তবে নীলাশা তা জানত না। নীলাশা গাড়ি’র ডিকি থেকে বের হয়ে দেখে সে লোক গুলো আসছে। সে দেরি না করে ছুটে যায় সেই বাড়িতে!
এদিকে নীল কে স্টেজে বসানো হয়েছে এখন শুধু ইশা কে আনা বাকি। মেহেরিন আর নিশি যায় ইশা কে আনতে। নিশি বলে উঠে…
– মন খারাপ কেন?
– এই ইশা টিসা কে ভালো লাগে না আমার!
– একটু পর তোর ভাবী হবে সে!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে তাকিয়ে বলে..
– না ইশা আমার ভাবী হবে না।
– মানে!
মেহেরিন বাঁকা হেসে সামনে তাকায়। নিশিও তাকায় সামনে। দেখে একটা ঘোরাঘুরি করছে কিন্তু খুব ভয় পেয়ে আছে সে। নিশি ভ্রু কুঁচকে তাকায় মেহেরিন’র দিকে, মেহেরিন হেসে বলে
– তোমার ভাবী! নীল আপু!
– নীলাশা আপু!
– ইয়াপ বেবী!
– কিন্তু ও এখানে কি করছে?
– সেটা জানতে হলে তো ওর কাছে যেতে হবে।
– দেখে মনে হচ্ছে খুব ভয় পেয়ে আছে।
– আচ্ছা চলো দেখি!
অতঃপর মেহেরিন আর নিশি এসে নীলাশা’র সামনে দাঁড়ায়। হুট করে সামনে আসায় নীলাশা প্রথমে ঘাবড়ে যায় কিন্তু মেহেরিন কে দেখে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে সে। নিশি বলে উঠে..
– তুমি এভাবে এখানে কেন? আর এতো ভয় পেয়ে আছো কেন?
নীলাশা ভয়ের কারনে কিছুই বলতে পারছে না। শুধু ঘামছে। নিশি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নীলাশা কে বসিয়ে দেয়। অতঃপর তাকে পানি খেতে দেয়। নীলাশা ঢকঢক করে এক গ্লাস পানি খেয়ে ফেলে। একটু শান্ত হয়ে সব ঘটনা খুলে বলে সে মেহেরিন কে। নিশি রেগে বলে..
– কি এতো কিছু! তুমি চিন্তা করো না আমি এক্ষুনি দেখছে। সবকটা কে মেরে…
মেহেরিন বলে উঠে..
– আপু শোন, এটা এখন বিয়ে বাড়ি এখানে এখন মারামারি ভালো লাগবে না। আর এভাবেও আমাদের গার্ড এখানে আসে নি তাই এতো রাগিস না। আর আপু’র মা বাবা এখনো ওখানেই আছে ভুলে গেলি।
নিশি অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন নিশি কে চোখ টিপ দিলো। নিশি ব্যাপারটা বুঝতে পারল মেহেরিন নীলাশা কে ভয় দেখাচ্ছে। এদিকে মেহেরিন’র কথায় নীলাশা আরো ভয় পেয়ে গেল। মেহেরিন নীলাশা’র হাত ধরে বলে..
– কিন্তু তুমি চিন্তা করো না আমি ডেভিল কে পাঠিয়ে দিচ্ছি তোমার মা বাবা’র কাছে। তারা তোমার মা বাবা কে দেখে রাখবে।
– সত্যি মেহেরিন তুমি করবে!
– তবে তার জন্য তোমাকে একটা কাজ করতে।
– তুমি বলো কি করতে হবে, তুমি যা বলবে আমি সেটাই করবো।
মেহেরিন নিশি’র দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।
.
মেহেরিন আর নিশি মিলে কনে কে নিয়ে আসল। তাকে নীলের পাশে বসানো হলো। কিছুক্ষণ গান বাজনা হলো। এতোক্ষণ পর মেহেরিন’কে হাসতে দেখে সবাই খুশি হয়। সবাই ভাবে মেহেরিন হয়তো ইশা কে এবার মেনেই নিয়েছে। অতঃপর বিয়ে শুরু হলো। কাজী এসে কনে’র পাশে বসে। তাকে কবুল বলতে বলল! কিন্তু কনে কিছু’ই বলছে না। সবাই বলতে বলছে কিন্তু তবুও কনে কিছু বলছে না। তখন একজন এসে বলে উঠে…
– কিভাবে কবুল বলবে ও! ও তো আর কনে না!
সবাই তাকিয়ে দেখল ইশা দাঁড়িয়ে আছে। নীল সাথে সাথে দাঁড়িয়ে গেল। যদি ইশা এখানে হয় তাহলে তার পাশে কে। সবাই অবাক! অভ্র, আনহা, নিহা, আহিয়ান, কাব্য, ইহান, রোদ্দুর সবাই। শুধু এক কোনে নিশি দাঁড়িয়ে আছে আর মেহেরিন চকলেট খাওয়ায় ব্যস্ত! নীল কনে’র মুখের ঘোমটা সরিয়ে দিলো। নীল বলে উঠে..
– নীলাশা!
নীলাশা নাম শুনে সবাই তাকায় মেহেরিন’র দিকে। কিন্তু মেহেরিন’র সেদিকে খেয়াল নেই। সে আপন মনে চকলেট খাচ্ছে। ইশা কাঁদো কাঁদো মুখ করে বলে…
– নীল তুই পারলি এটা করতে, শেষ পর্যন্ত এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য আমাকে ছেড়ে দিলি তুই!
নীলাশা চুপচাপ বসে আছে, কোনো কথাই বলছে না। কারন মেহেরিন তাকে কিছু বলতে না করছে। তখনকার শর্ত এটাই ছিলো নীলাশা কে নীল কে বিয়ে করতে হবে। নীলাশা প্রথমে না বললেও পরে হ্যাঁ বলতে বাধ্য হলো । নীল রেগে নীলাশা কে জিজ্ঞেস করছে…
– তুমি এখানে কেন?
– …
– কথা বলছো না কেন?
মেহেরিন বলে উঠে…
– কারন আমি এনেছি হবু ভাবী কে।
– মানে!
– মানে টা খুব সহজ ভাইয়া, তোমার বিয়ে নীলাশা আপু’র সাথেই হবে।
– কিহহ?
– হুম!
ইশা বলে উঠে..
– মেহেরিন তুমি পাগল হয়ে গেছো নাকি। বিয়ে আমার সাথে ঠিক হয়েছে।
– আমি আমার ভাইয়ার সাথে কথা বলছি আপু তুমি মাঝে কথা না বললেই ভালো হয়। আর যদি বলো বিয়ের কথা তবে বিয়ে এখনো হয় নি। কিন্তু এখন হবে তাও নীলাশা’র আপুর সাথে।
নীল বলে উঠে…
– আমি এই মেয়েটা কে কোনোমতে বিয়ে করবো না।
– ভাইয়া…
নীল রেগে চিৎকার করে বলে…
– আদুরী! সবসময় তোমার কথা চলবে না। আমি যখন বলেছি আমি ওকে বিয়ে করবো না মানে করবো না!
হঠাৎ করে নীলের ধমক শুনে মেহেরিন লাফিয়ে উঠে। নিহা রেগে নীল কে বলে…
– নীল! কার সাথে কথা বলছো ভেবে বলো। তোমাকে কে রাইট দিয়েছে তুমি আদুরী’র সাথে উঁচু গলায় কথা বলো।
আহিয়ান নিহা কে সামলিয়ে বলে..
– তুমি শান্ত হও, এই সময় তোমার উত্তেজিত হওয়া ঠিক না।
– আপনি দেখলেন কিভাবে কথা বললো ও।
– ও রেগে আছে তাই বলেছে।
– তো কি হয়েছে। ও জানে মেহেরিন কেমন। এসবে অভস্ত তো ও তাই নাহ!
নীলের এতোক্ষণে বোধ হলো ও রাগের মাথায় কি বলেছে। সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। অভ্র এসে নীলের ঘাড়ে হাত রেখে বলল…
– শান্ত হও নীল। এভাবে চেঁচিয়ে লাভ নেই। আমার জানা মতে তো তুমি ইশা কে ভালোবাসো না তাহলে এতো রেগে গেলো কেন?
– সরি দা!
নিহা বলে উঠে..
– আদুরী কোথায়? নিশি আদুরী কোথায়!
রোদ্দুর বলে উঠে…
– ও চলে গেছে আমি নিয়ে আসছি।
নীল বলে উঠে..
– আমি যাচ্ছি!
বলেই নীল চলে গেলো। আনহা আর নিশি আসলো নীলাশা’র কাছে। তারা এসে তাকে সান্ত্বনা দিলো। কারন তারা জানে এসব মেহেরিন করছে। এদিকে মেহেরিন রেগে আলমারি’র মধ্যে বসে আছে। নীল ঘরে এসে মেহেরিন কে খুঁজে কোথায় পায় না। অতঃপর দেখে আলমারি থেকে মেহেরিন’র লেহেঙ্গা’র কাপড় দেখা যাচ্ছে। নীলের আলমারি’র কাছে গিয়ে আলমারি’র দরজায় টোকা দেয়। মেহেরিন জানে এটা নীল। সে আরো জোরে আটকনো দরজা আটকানোর চেষ্টা করে। দু হাঁটু’র ওপর হাত রেখে বসে আছে সে।
– আদুরী সরি! ভাইয়া রেগে ছিলাম তাই বলেছি বের হয়ে এসো।
-…..
– ভাইয়া সরি বললাম তো। আর কখনো হবে না এরকম! বাইরে আসো এভাবে ভিতরে বসে থেকো না।
-…..
– ভাইয়া তোমার জন্য অনেক চকলেট এনেছি!
– …..
– আচ্ছা তুমি চাও তো আমি নীলাশা কে বিয়ে করি আমি করবো এই বার তো বের হও।
– তুমি সত্যি বিয়ে করবে তো
– ভাইয়া তোমাকে কথা দিচ্ছি, বিয়ে করবো।
– সত্যি চকলেট এনেছো!
নীল মুচকি হেসে বলে…
– হ্যাঁ এনেছি বের হও!
মেহেরিন দরজা খুলে বলে…
– কোথায় চকলেট!
নীল হেসে মেহেরিন কে কোলে করে নামিয়ে খাটে বসায়। মেহেরিন বলে…
– আমার চকলেট কোথায়!
নীল মেহেরিন হাতে চকলেটের প্যাকেট দিয়ে বলে..
– এই নাও!
মেহেরিন মুখ ভেংচি দিয়ে বস চকলেট নিয়ে নেয়।
– সরি বললাম তো।
– তুমি আমাকে ধমক দিয়েছো।
– রেগে দিয়েছিলাম সরি!
বলেই মেহেরিন’র কপালে চুমু খায়।
– তুমি বলেছিলে বিয়ে করবে!
– হুম করবো তো!
মেহেরিন একলাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে বলে..
– চলো!
নীল মেহেরিন’র এক হাত ধরে স্টেজে নিয়ে আসে। মেহেরিন এক হাত নীল ধরে আছে অন্য হাত দিয়ে সে চকলেট খাচ্ছে। নিহা মেহেরিন কে দেখে তার কাছে গিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে..
– ঠিক আছো তুমি!
– হামম হামম জানো ভাইয়া বলেছে সে নীল আপু কে বিয়ে করবে। অবশেষে নীল আপু আমার নীল ভাবী হবে।
– তাই!
নিহা হেসে নীলের দিকে তাকায়। নীল মুচকি হেসে স্টেজে চলে যায়। কাজী কে বলে বিয়ে শুরু করতে। এসব দেখে ইশা বলে উঠে…
– এসব কি নীল! তুমি বলেছো তুমি আমাকে ভালোবাসো! তুমি আমাকে বিয়ে করবে। এখন তুমি মত পাল্টে ফেলছো।
নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে…
– তোমাকে আমি বলেছিলাম ইশা আমার বোন এই বিয়েতে খুশি না হলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো না। তুমি আমার কাছে ৩ মাস সময় ও চাইলে কিন্তু কিছু কি করতে পারলে। যখন আমার বোন কে খুশি করতে পারলে না তখন এই বিয়েটাও হবে না।
ইশা রেগে কিছু বলতে যাবে তখন নিশি ইশা’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– থ্রেড দেওয়ায় কথা ভুলে ও ভেবো না আর মরতে চাইলে আমাকে বলো ঠিক আছে..!
ইশা রেগে সেখান থেকে চলে যায়। ইশা’র মা বাবাও তার পিছু পিছু চলে যায়। অবশেষে নীল আর নীলাশা’র বিয়ে হয়। এখন খান বাড়িতে যাবার সময়। মেহেরিন হাত ধরে নীলাশা কে গাড়িতে উঠানোর সময় বলে…
– তোমার মা বাবা এখন ঠিক আছে আপু
নীলাশা এই কথা শুনে কৃতজ্ঞতা ভরা চোখে মেহেরিন’র দিকে তাকায়। মেহেরিন জবাবে মুচকি হাসে।
.
সবার মতোই নীল কেও কোলে নিতে হয় নীলাশা কে। অতঃপর দুজনকে ঘরে পাঠানো হয়। কাব্য, নিশি সবাই মিলে ঘরের দরজা পিছন থেকে বন্ধ করে দেয়। ঘরে আসার পর’ই নীলাশা কোল থেকে নেমে যায়। নীল হুট করে নীলাশা’র দুই বাহু চেপে ধরে দেওয়ালে’র সাথে মিশিয়ে বলে…
– এটা কিভাবে করতে পারো তুমি, এতোটা নিচে কিভাবে নামতে পারো। শেষ অবদি আমার বিয়ে টা ভেঙে নিজে বিয়ের আসরে বসে পড়লে। এটাই কি তোমার মা বাবা তোমাকে শিখিয়েছে!
নীলাশা এবার রেগে গিয়ে নীল ধাক্কা মারে। নীল কিছুটা দূরে চলে যায়। নীলাশা বলে উঠে…
– আমার কোনো শখ ছিলো না আপনাকে বিয়ে করার। আমি নিরুপায় ছিলাম বলেই এই বিয়েটা আমায় করতে হলো। না হলে আপনাকে বিয়ে কখনো করতাম না।
– বিয়ে তুমি অলরেডি করে ফেলেছো। আচ্ছা বলোতো আমার বোন কে কি করেছো তুমি!
– এটা এখন আমি কি করে বলবো। আপনার বোন আমায় কেন এতো ভালোবাসে এটা আমি জানবো কি করে।
– সেদিন ওর সামনেই আসা উচিত ছিল না তোমার। সব নষ্টের মূল তুমি।
– আর আপনি সব নষ্টের ফল!
– তোমার সাথে কথা বলাই বেকার! একদম আমার কাছে আসবে না তুমি! আর না কথা বলবে আমার সাথে!
বলেই নীল ওয়াসরুম এ চলে গেল। নীলাশা রেগে গিয়ে বিছানায় বসে। অনেক ক্লান্ত সে! নীল ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে নীলাশা বিছানায়। নীল বলে উঠে..
– তুমি আমার বিছানায় কি করছো।
– ভুলে যাবেন না এই ঘরের সব কিছুর মাঝে আমাদের সমান সমান অধিকার।
– তার মানে তুমি এখানে ঘুমাবে।
– অবশ্যই! নিচে আমি কখনো ঘুমাতে পারবো না। আপনার সমস্যা না থাকলে আমার পাশে ঘুমাতে পারেন। আমি বলে বলছি না হলে অন্য কেউ হলে কখনো বলতো না।
নীল রেগে বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে সোফায় গিয়ে বসে আর বলে..
– তুমি নিজেই একটা সমস্যা। এখন লাইট অফ করো ঘুমাবো আমি।
নীলাশা কিছু না বলে মুখ ভেংচি দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। এভাবেই একজন বিছানায় আরেকজন সোফায় নিজেদের প্রথম রাত পার করে।
.
মেহেরিন খুশিতে দৌড়ে এসে অভ্র’র গালে চুমু খায়। অতঃপর তাকে নিয়ে ঘুরতে থাকে। অভ্র মেহেরিন’র এমন কান্ড দেখে হাসতে থাকে।
– সত্যি বলছি দা তুমি না থাকলে এই বিয়েটা কখনোই হতো। থ্যাংকু থ্যাংকু থ্যাংকু সো মাচ তোমাকে!
– আমি তো শুধু নীলাশা কে বিয়ের আসরে আনলাম বাকি টা তো তুমি করলে!
– তাও তুমি এনে তো দিয়েছো। যাই বলো আমাদের প্ল্যান সাকসেসফুল!
মেহেরিন আর অভ্র’র কথা শুনে আনহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে…
– তার মানে এসব তোমাদের দু’ভাই বোন দের প্ল্যান। আমিও ভাবছি এতোটা কাকতালীয় বিষয় কিভাবে হতে পারে। দুজনের’ই একসাথে বিয়ে।
– আরে মিষ্টি ভাবী আস্তে বলো কেউ শুনে ফেললে সর্বনাশ ধুরি সাড়ে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
– অভ্র আপনি ও!
– কেন মিষ্টি ভাবী নীল ভাবী কে তোমার পছন্দ না।
– হ্যাঁ পছন্দ তো কিন্তু এভাবে..
– দেখলে তো সেদিন দুজন কিভাবে ঝগড়া করছিলো। তাই এভাবে বিয়েটা দিতে হলো। আমার ভাই আমার জন্য কোনো পথ খোলা রাখে নি।
– কিন্তু কিভাবে কি? নীলাশা কে যারা জোর করে বিয়ে করতে চাইছিলো!
অভ্র বলে উঠে..
– ওগুলো আমার লোক ছিল। পুরোটাই প্ল্যান ছিলো নীলাশা কে বিয়ের আসরে আনার। নীলাশা’র পালিয়ে যাওয়া, গাড়িতে উঠে এখানে আসা সব! আর বাকিটা সবাই জানে..
– এতো সব!
– আমার বোন চেয়েছে তো করতেই হবে।
– ইয়াপ দা। চলো আমরা এই খুশিতে একটু ডান্স করি।
– বানরের কথায় বিড়াল নাচে!
– হি হি হি এই ধিনাক ধিনাক এই ধিনাক..
বলে নাচতে নাচতে মেহেরিন চলে যায়। আনহা তাকিয়ে থাকে অভ্র’র দিকে!
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩১ থেকে 35
– “আপনার কি কোনো ধারনা আছে নীল যদি সত্যি টা জানে তখন কি হতে পারে, তখন যদি এই বিয়েটা অস্বীকার করে সে। তখন…
একদমে কথা গুলো বলল আনহা!
– তুমি এতো চিন্তা কেন করছো এসব ওরা কখনো জানতে পারবে না।
– কিন্তু এভাবে ঠকিয়ে, আপনি তো জানেন নীল একদম সহ্য করতে পারে না নীলাশা কে! এভাবে জোর করে বিয়ে দেবার পরিনতি কি হতে পারে!
– নিহা আর আহিয়ান’র পরিনতি যা হয়েছে ওদের ও তাই হবে।
– মানে!
– ভুলে গেলে তোমার আমার বিয়ের কথা আমরা তো জানতাম’ই না আর নিহা আর আহিয়ান’র বিয়ের কথা! আহিয়ান তো বিয়ে করতেই চাইতো না কিন্তু এখন.. এখন কি খুশি নেই তারা।
– তাহলে আপনি বলছেন।
– নিশ্চিতে থাকো দেখবে সব ঠিক থাকবে।
আনহা জবাবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম ফেলল।
.
সকালে নীলাশা ঘুম থেকে উঠে দেখে নীল সোফায় ঘুমিয়ে আছে। সে ফ্রেশ হয়ে আসে বিছানায় বসে। তখন দরজায় কেউ নক করে। নীলাশা উঠে দরজা খুলে দেখে নিশি! সে কয়েকটা শাড়ি নীলাশা’র হাতে দিয়ে যায় বলে এখান থেকে একটা পড়ে নিচে আসতে ব্রেকফাস্ট করতে। আর নীল ও নিয়ে আসতে।
নীলাশা হেসে বলে..
– ঠিক আছে।
অতঃপর শাওয়ার নিয়ে একটা নীল রঙের শাড়ি পড়ে নেয়। নীলাশা এসে নীল’র সামনে দাঁড়ায়। এখন তাকে ডাকবে কিভাবে এটাই ভাবছে। নীলাশা ডাকতে থাকে নীল কে। কিন্তু নীল উঠে না। অতঃপর নীলাশা এক গ্লাস পানি নীলের মুখে ঢালে। নীল লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে।
– এটা কি করলে তুমি!
– যা করেছি ঠিক করেছি। কতোক্ষণ ধরে ডাকছিলাম আপনাকে আপনি উঠেন নি আমি কি করতাম।
– তাই বলে তুমি এরকম করলে।
– হ্যাঁ করলাম এখন উঠুন আর নিচে আসুন!
বলেই নীলাশা চলে গেল।
নীল ফ্রেশ হয়ে নীচে গেল। সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে। সারারাত সোফায় সোবার কারনে নীলের পুরো শরীর ব্যাথা করছে। ইহান বলে উঠে..
– ভাইয়া তোমার অবস্থা এমন কেন।
– আর বলিস না সারারাত সোফাম ঘুমিয়েছি আর এখন পুরো শরীর ব্যাথা করছে।
– কি বললে সোফায়!
– না কিছু না চুপচাপ খাবার খা। এতো কথা বলিস কেন খাবার সময়।
নীলের কথায় ইহান মুখ টিপে হাসল। এদিকে নীলাশা কে বাড়ির সবাই অনেক আদর করতে লাগল। সবার এতো ভালো ব্যবহারে নীলাশা’র ও কিছুটা স্বাভাবিক হতে লাগলো।
এদিকে নীল খুব রেগে আছে নীলাশা’র ওপর। নীল কে সারারাত সোফায় ঘুমাতে হয়েছে নীলাশা’র জন্য। নীলাশা কেও শান্তি তে ঘুমাতে দেবে না সে। বিকালে নীলাশা যখন সবার সাথে বসে গল্প করছিল নীল তখন ঘরে এসে খাটের কিছু পার্ট খুলে দিলো যাতে নীলাশা খাটে বসলেই খাট ধপাস করে ভেঙে পড়ে।
রাতের খাবারের পর নীলাশা রুমে আসল। সবার সাথে কথা বলে এখন তার মুড অনেক ভালো। খুব ঘুম পাচ্ছে তার। তাই ভাবল ফ্রেশ হয়ে এসে ঘুমাবে। এদিকে নীল রুমে এসে দেখে নীলাশা নেই। নীলাশা তখন বের হলো ওয়াসরুম থেকে। নীল নীলাশা’র সামনেই দাঁড়িয়ে ছিল। নীল ইচ্ছে করেই নীলাশা কে ল্যাং মারল। কিন্তু তার প্ল্যান ফ্লপ করলো যখন নীলাশা নীল কে একসাথে ধপাস করে খাটে পড়ল। সাথে সাথেই খাট ভেঙে গেল। খাট ভাঙ্গার আওয়াজ নিচ অবদি গেলো। সবাই ভয় পেয়ে ছুটে এলো। এদিকে নীলাশা নীলের ওপর পড়ে আছে। নীল দ্রুত উঠে নীলাশা কে তুলল। নীলাশা রেগে বলে..
– এটা আপনার কাজ নাহ!
– কিহ আমার কাজ?
– আপনার কারনেই খাট ভেঙে গেল।
– কি আমি কি করলাম সব দোষ তোমার, তোমার ওজন আমার খাট নিতে পারে নি তাই ভেঙ্গে গেছে।
– কি বললেন তাহলে গতকালকে কেনো ভাঙলো না।
– কাল আহত ছিল আজ নিহত হয়েছে।
– ওহ্ আচ্ছা!
বলেই নীলাশা শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুজল।
– এ কি করছো তুমি!
– আজ আপনাকে আমি আহত করবো।
– কিহ?
– ওয়েট দেখাচ্ছি! ঝাড়ু টা কোথায়?
– ঝা..ঝাড়ু , ঝাড়ু দিয়ে কি করবে।
নীলাশা ঝাড়ু হাতে নিয়ে…
– ইচ্ছে করে আমাকে ল্যাং মেরে খাটে ফেললেন, খাট আগে থেকেই নিজেই ভাঙচুর আর এখন খাট ভাঙল তো দোষ আমার! কালকের প্রতিশোধ নিলেন ঘুমাতে দেয় নি বলে নাহ।
– আরে আরে কি করছো তুমি ঝাড়ু নিয়ে!
বলেই নীল দূরে সরে গেল।
– আজ তো আমার ঘাড় থেকে ভূত আমি ছাড়াবোই।
বলেই নীলাশা ঝাড়ু নিয়ে নীলের পিছু ছুটল। নীল ও ভাঙা খাটের চারদিক ছুটতে লাগলো। এরমধ্যে বাড়ির সবাই এসে দেখে নীলাশা নীলের পিছনে ঝাড়ু নিয়ে দৌড়াচ্ছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– খাট ভাঙল কিন্তু নীল ভাবী ঝাড়ু নিয়ে দৌড়াচ্ছে কেন?
মেহেরিন’র কথায় দুজনেই থেমে গেল। নীলাশা ঝাড়ু পিছনে নিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়াল। আনহা বলে উঠে…
– খাট ভাঙল কি করে!
নীল বলে উঠে..
– নীলাশ’র ওজন নিতে পারে নি তাই ভেঙে গেছে।
নীলের চোখ বড় বড় তাকাল। সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। আহিয়ান বলে উঠে..
– তাহলে তুমি কোলে নিলে কিভাবে?
নীল চুপ হয়ে গেল। নীলাশা হেসে বলে উঠে..
– বেশ হয়েছে আরো বলেন মিথ্যে কথা। জিজু উনি ইচ্ছে করে খাটের এই অবস্থা করেছে।
মেহেরিন বলে উঠে..
– কেন?
ইহান বলে উঠে..
– খাট নিশ্চিত পুরান হয়ে গেছিল তাই! যেন নতুন খাট পায়!
মেহেরিন অভ্র’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– দা আমার খাট ও পুরান হয়ে গেছে আমার নতুন খাট চাই!
মেহেরিন’র কথা শুনে সবাই হেসে দেয়। অভ্র মেহেরিন কে নিয়ে চলে যায়। কারন এখানে ওর না থাকাই ভালো। এদিকে আহিয়ান বলে উঠে..
– নীল এমন কেন করল নীলাশা!
– কাল সোফায় ঘুমিয়েছিলেন বলে!
নীলাশা’র মুখ থেকে চট করে কথাটা বের হয়ে গেল। অতঃপর সে নিজেই জিহ্বা কামড় দিলো। আনহা বলে উঠে..
– তাহলে আজ দুজনেই সোফায় ঘুমান কারন খাট কাল ছাড়া আসবে না এটাই দুজনের শাস্তি।
নীলাশা বলে উঠে..
– মিষ্টি ভাবী!
নীল হেসে বলে..
– বেশ হয়েছে এখন তুমিও বুঝবে কাল আমি কি কষ্ট করে ঘুমিয়ে ছিলাম!
নীলাশা ঝাড়ু নীলের দিকে করে..
– আপনাকে তো আমি!
– মিষ্টি ভাবী দয়া করে ভাঙা খাটের সাথে এই ঝাড়ু নিয়ে যাও প্লিজ!
আনহা মুচকি হেসে ঝাড়ু টা নিয়ে বাকি সবাইকে নিয়ে চলে গেল। সেদিন রাতে দুজনেই সোফায় ঘুমাল। ওদের কান্ড কারখানা দেখে বাড়ির সবাই হাসতে লাগলো। কিন্তু ওদের ঝগড়া কমে না। দিন দিন দুজনের ঝগড়া যেন বাড়তেই থাকে।
নিহা জন্ম দেয় একটা কন্যা সন্তানের, তার নাম রাখা হয় অরনি। অরনি যেন আহিয়ানের চোখের মনি। খান বাড়িতে আবারও খুশির খবর আসে। এই অরনি কে নিয়েও ঝগড়া লাগে নীল আর নীলাশা’র। তাদের ঝগড়া এখন মারামারি তে ঠেকেছে। দুজনে চুল টানাটানি অবদি করে। তাদের মধ্যে ভালোবাসার কমতি থাকলেও ঝগড়ার কমতি নেই!
.
কেটে যায় আরো কয়েকমাস। শান্ত এখন ভালোই কথা বলতে পারে। সে সারাদিন থাকে অরনি’র সাথে। এদিকে আহিয়ান অরনি কে মা ডাকার আগে ভূতনি ডাক শিখায়। এই নিয়ে বাড়ির সবার হাসাহাসির কমতি নেই। নীলের মনে এখন কিছুটা হলেও নীলাশা’র জন্য অনুভতি হচ্ছে। নীলাশা কে এখন ভালো লাগতে শুরু করে তার। ইচ্ছে করেই যখন তখন নীলাশা’র সাথে ঝগড়া করে সে। তাকে ছাড়া একটা দিন ও চলে না তার।
মেহেরিন এবার ভার্সিটিতে উঠে, নিহা এখন পুরোপুরি লইয়ার। তার প্রথম কেস খুব সাফল্য ভাবে জিতে সে। নীল এবার নিজের কোম্পানি স্টার্ট করে।
আজ ভালোবাসা দিবস! নিশান ভেবেই নিয়েছে আজ সে নিশি কে প্রপোজ করবেই করবে। ইহান, কাব্য আর রোদ্দুর খুব ভালো ভাবে সার্পোট করছে তাকে। অবশেষে আজ সে তার ভালোবাসার কথা বলতে যাচ্ছে।
এদিকে নীল ও আজ নীলাশা কে প্রপোজ করবে বলে ভেবেছে। খুব সুন্দর করে পুরো ঘর লাল রঙের বেলুন দিয়ে সাজায় সে। নীলাশা’র মনে কি আছে তা জানার জন্য অনেক আগ্রহ সে।
সন্ধ্যার সময় ইহান , কাব্য আর রোদ্দুর কে সাথে নিয়ে বাইরে বের হয়েছে নিশি। তবে সত্যি বলতে নিশি আজ বের হতে চায় নি। কিন্তু ওদের জোরাজোরিতে না করতে পারে না নিশি। অবশেষে একটা জায়গায় এসে গাড়ি থামায় তারা। নিশি জায়গাটা চিনে না। সবাই বের হয় গাড়ি থেকে।
– কোথায় এলাম আমরা।
– দেখলেই বুঝবি চল!
নিশি খানিকটা অবাক হয় তবুও যায় তাদের সাথে। নিশি ফোন টিপছে আর সবার সাথে কথা বলতে বলতে সামনে আগায়। হঠাৎ করেই পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। নিশি অবাক হয়ে সামনে তাকাতেই চমকে উঠে। কারন সামনে খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা। এই ভর সন্ধ্যায় কিছু বেলুন আর ভিন্ন ধরনের হ্যারিকেন নিয়ে সাজানো চারদিক। নিশি মুগ্ধ চোখে দেখছিল আশপাশ। হঠাৎ করেই পেছনে কারো উপস্থিত টের পায় নিশি। চট করেই পেছনে ঘুরতেই দেখে নিশান হাঁটু গেড়ে বসে আছে তার সামনে। তার হাতে টকটকে এক লাল গোলাপ। নিশি এসব দেখে চমকে উঠে। অতঃপর নিশান নিশি’র চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করে…
– আমার কাছে প্রথম ভালোবাসা মানেই যে সব কিছু তা না। কিন্তু সেই ভালোবাসা যদি জীবনের শেষ নিঃশ্বাস অবদি সাথে থাকে তাতেই সেটার সার্থকতা। আমি ও চাই সেই সার্থক প্রেমিক হতে। জান পাখি! আমি তোমাকে ভালোবাসি! তুমি কি ভালোবাসো আমায়!
নিশি অবাক চোখে দেখছে নিশান কে। সে তার মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। দৃষ্টিহীন ভাবে শুধু দেখতে নিশান কে। নিশানের ডাকে নিশি’র হুশ ফিরে আবার..
– জান পাখি!
– হুম!
– হ্যাঁ বা না কিছু বলো।
– যদি কিছু না বলি তখন।
– আমার হাত থেকে ফুল নেওয়ার অর্থ আমাকে বুঝিয়ে দেবে তুমি হ্যাঁ কি না বলেছো!
– আচ্ছা তাহলে সেটাই বুঝে নাও!
বলেই নিশি হাত থেকে ফুল টা নিয়ে চলে গেলো। নিশান এর অর্থ বুঝতে গিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল!
#চলবে….
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩২
নিশান সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল আর নিশি চলে গেলো। নিশান কিছু’ই বুঝতে পারল না। এদিকে নীল বাসায় এসে জানে নীলাশা বাইরে গেছে। এটা নীলের জন্য খুব ভালো হয়। সে দ্রুত ঘরে গিয়ে পুরো ঘর সাজাতে শুরু করে। পুরো ঘর ডীম লাইট, মোমবাতি আর বেলুন দিয়ে সাজাই সে। নীলাশা’র আসতে আসতে বেশ দেরি হয় কিন্তু নীল তবুও অপেক্ষা করে তার জন্য। অতঃপর নীলাশা বাসায় আসে। নীলাশা ঘরে এসেই ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ে। নীল অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। নীলাশা পুরো ঘরের দিকে একবার চোখ ও বুলালো না। এর মানে কি? নীল যে এতো কষ্ট করে এতো কিছু করলো এটা এভাবে নষ্ট হয়ে যাবে। নীল উঠে বিছানায় নীলাশা’র পাশে গিয়ে বসল। দেখল নীলাশা ঘুমিয়ে গেছে। এতো তাড়াতাড়ি কিভাব ঘুমিয়ে পড়তে পারে সে। এতোটাই ক্লান্ত ছিলো নাকি। নীল বসে বসে নীলাশা কে দেখতে দেখতে একসময় সেও ঘুমিয়ে পড়ল।
নিশি ঘুমিয়েছে একটু আগেই, তবে হঠাৎ কেন জানি মনে হচ্ছে কেউ আছে তার ঘরে। নিশি এবার চট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নিশান তার দিকে তাকিয়ে আছে এক ধ্যানে। নিশি নিশান কে এতো রাতে তার ঘরে দেখে অনেক অবাক হলো। নিশি জিজ্ঞেস করল..
– তুমি আমার স্বপ্ন নাহ সত্যি!
– তোমার কি মনে হয় জান পাখি।
– এতো রাতে আমার ঘরে কি করছো?
– আমার ঘুম কেড়ে নিয়ে তুমি এখানে শান্তিতে ঘুমাবে এটা কি করে হয় বলো।
– আদি কালের সিনেমার ডায়লগ বলো না যে তোমার স্বপ্নে আমি এসেছিলাম বলে তোমার ঘুম হয় নি।
– নাহ এটা বলবো না কারন স্বপ্নে তোমাকে আরো সুন্দর লাগে আর রোমান্টিক!
– এতো রাতে এই কথা বলতে এসেছো।
– না
– তাহলে…
– ওই যে বললাম না তুমি আমার ঘুম কেড়ে নিলে।
– আমিও তো বললাম কারন কি?
– এটাই যে তুমি আমাকে উওর না দিয়েই চলে এসেছো।
– কিসের উওর?
– আজ যে তোমায় আমি প্রপোজ করলাম সেটার উওর।
– তুমি না বললে তুমি আমায় বুঝবে।
– সেটা গোলাপ ফুল নিলে তার অর্থে বুঝবো কিন্তু তুমি তো সেটা নিয়েই চলে এলে।
– ওহ্ আচ্ছা গুড নাইট আমি ঘুমালাম।
বলেই নিশি মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়ল। হুট করে নিশান নিশি কে কোলে তুলে নিলো।
– আরে আরে কি করছো।
– যা করছি বেশ করছি!
বলেই তাকে কোলে নিয়ে বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো!
– নামাও আমাকে এখনি মানে এখনি।
অতঃপর নিশান নিশি কে নামিয়ে দিলো। নিশান নিশি’র দিকে তাকিয়ে বলল…
– জান পাখি!
– আমার নাম নিশি!
– তো আমি কখন বললাম তোমার নাম ছাগল।
– তাহলে জান পাখি বলছো কেন?
– আমার ইচ্ছা!
নিশি নিশানের দু গাল ধরে এদিক ওদিক করে বললো..
– ড্রিংক করেছো!
– ছিঃ কি বলছো আমি এইসব খাই না।
– তাহলে এমন আবল তাবল কেন বলছো
– তুমিই তো বলাচ্ছো। এতো সাসপেন্স কেন রাখছো বলো।
নিশি নিশানের কলার ধরে বেলকনির গ্রিলে ঠেকিয়ে বলে..
– এখান থেকে নেমে সোজা বাসায় যাও।
– কিন্তু!
– যেতে বলেছি।
নিশান কিছু না বলে গ্রিল ধরে নামতে লাগলো। নিশি ভাবল হয়তো সে চলে গেছে তাই রুমে আসতে নিলো তখন হঠাৎ নিশান আবার উঁকি দিয়ে বলল..
– উওরটা বলো না প্লিজ।
– তুমি আবার!
– দেখো প্রচুর টেনশন হচ্ছে শেষে না আমি হার্ট অ্যাটাক করি। বলে দাও!
নিশি নিশানের কাছে গিয়ে আবার ও কলার ধরে বলল..
– যদি আমি ফুল না নিতাম তাহলে উওর কি হতো?
– না!
– আর আমি ফুল নিয়েছি এর অর্থ কি?
– হ্যাঁ কিন্তু তুমি যে চলে আসলে!
– সেটা আমার এটিটিউড!
– এখানেও এটিটিউড দেখাতে হবে তোমাকে।
– হুম!
– তাহলে তোমার উওর টা কি!
– আবার জিজ্ঞেস করছো?
– আরে আমি যে বললাম সেটার রিপ্লাই দাও!
নিশি মুচকি হেসে বলল..
– আমি… তোমাকে ভালোবাসি…!
– হায় মে মারযাভান!
বলেই নিশান হাত ছেড়ে নিলো, আর ধপাস করে নিচে পড়ে গেল। এদিকে নীলাশা’র ঘর বেশি উপরে ছিল না যার কাররে নিশান ব্যাথা পায় নি। সে নিচে বসে নিশি’র দিকে তাকাল। নিশি তাকে চোখের ইশারায় চলে যেতে বললে সে একটা চোখ টিপ দিল। এরমধ্যে গার্ড’রা সবাই আসতে নিলো। নিশি ইশারা করে নিশান কে চলে যেতে বললো!
এদিকে কিছু পড়ে যাবার আওয়াজ শুনে নীলাশা লাফ দিয়ে ঘুম থেকে উঠলো। সে চোখ ঢলতে ঢলতে আশপাশ দেখতে লাগলো। কেমন জানি লাগছে সব কিছু। নীলাশা’র চোখ থেকে এখনো ঘুম যায় নি। সে ঘুম ঘুম চোখে ঘরের লাইট জ্বালালো। দেখল পুরো ঘর খুব সুন্দর করে সাজানো। নীলাশা চারদিক দেখতে লাগলো। অতঃপর সে হাঁটতে হাঁটতে আসলো ডেসিন টেবিলের কাছে। সেখানে আয়ানায় লেখা ছিল..
– আই লাভ ইউ নীল!
এটা দেখেই নীলাশা’র চোখ থেকে ঘুম উধাও। সে বড় বড় চোখ করে এটা পড়তে লাগলো। অতঃপর পুরো ঘর আবার দেখতে লাগল।
নীলাশা বিড় বিড় করে বলে..
– এতো সাজানো কেন ঘরটা, আর এখানে এই গুলো লেখা কেন? কে এসেছিলো এখানে, নিশ্চিত কোনো মেয়ে নিয়ে এসেছিলেন উনি। আর এখানে মেয়ের সাথে ছিলেন উনি। প্রেম করছিলেন মেয়েটার সাথে। এজন্য’ই আজ অফিস থেকে তাড়াতাড়ি চলে এসেছে। ওহ্ হ্যাঁ ভালোবাসা দিবসে প্রেমিকা নিয়ে এখানে এসেছিলেন উনি। আমার ঘর ভাঙতে চাইছে উনি। আমার সতীন আনবে।
বলেই নীলের দিকে তাকাল। নীল বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। নীলাশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠে..
– ঘুম বের করছি ঘুম, আমার ঘুমের বারো টা বাজিয়ে ঘুমানো হচ্ছে!
বলেই নীলাশা এক গ্লাস পানি নিয়ে নীলের মুখে ছুঁড়ল। প্রতিবারের মতো এবারও নীল লাফিয়ে উঠল। দেখে তার সামনে নীলাশা রেগে দাঁড়িয়ে আছে। নীল বুঝতেই পারছে না রাগের হলো টা কি? সে তো নীলাশা কে খুশি করার জন্য এসব করেছিলো তাহলে নীলাশা রেগে আছে কেন?
– এতো রেগে আছো কেন?
– এতো কিছু করে আবার জিজ্ঞেস করছেন রেখে আছি কেন?
– কেন কি করেছি আমি!
– কি করেছেন? দেখুন তাহলে..
বলেই নীলাশা নীল টেনে আয়নার সামনে নিয়ে আসল। অতঃপর বলল..
– দেখুন এখানে কি লেখা আছে!
নীল আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখল সে নীলাশা’র জন্য লেখা “আই লাভ ইউ নীল” এটা লেখা। নীল এটা নীলাশা কে প্রপোজ করার জন্য লিখেছিল।নীল শান্ত ভাবেই বলল..
– কি লেখা?
– কেন মাথার সাথে সাথে কি এখন চোখ টাও গেলো নাকি ?
– হ্যাঁ দেখেছি কি লেখা এখন হয়েছে টা কি?
– আবার বলছেন কি হয়েছে? কোন সতীন কে আনছেন আপনি আমার ঘরে!
– সতীন!
– সতীন নয়তো কি? কোন মেয়ের চক্করে পরেছেন আপনি। আবার ওই ইশা টিসা নয়তো। ওই শাকচুন্নী’র প্রেমে পড়লেন নাকি আপনি।
– এসব কি বলছো!
– নয়তো আর কি বলবো। এখানে লেখা আছে আপনাকে কেউ ভালোবাসে এখন এটা তো আমি লিখি নি তাহলে নিশ্চয়ই কোনো মেয়ে লেখেছে। আর এই ঘর, এই ঘর আপনি এতো সুন্দর করে কেন সাজিয়েছেন কার জন্য সাজিয়েছেন!
নীল এবার পুরো কথা বুঝতে পারল। এখনো নীলাশা পুরোই উল্টো বুঝেছে। নীল ভেবেছিল মেহেরিন তাকে নীল ভাবী বলে ডাকে তাই সে নীল বলেই প্রপোজ করবে কিন্তু এখানে ম্যাম ভাবছেন উনার সতীন আসবে। নীল হাসবে না কাঁদবে কিছু্ই বুঝতে পারছে না। কোনোমতে বললে..
– কারও জন্য না, কেউ আসে নি, কে আসবে বলো।
নীলাশা ন্যাকা কান্না করে বলল..
– আপনি আমাকে ধোঁকা দিচ্ছেন, আমাকে ছেড়ে দিবেন আপনি। আমি এখন কোথায় যাবো আম্মু! এই ছেলে তো চরিত্রহীন।
নীলাশা’র কথা শুনে নীল ৪২০ ভোল্টের শক খেলো। এই মেয়ে কি বলছে এইসব! নীলাশা আবার ও বলতে শুরু..
– এই ছেলে আমার সতীন আনছে,আম্মু কোথায় তুমি!
এই ছেলে একটুও ভালো না ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়ের সাথে ঢ্যাশাঢ্যাশি করছে।
– এই চুপ চুপ এই মাঝরাতে গরুর মতো চেঁচাচ্ছো কেন?
– এখন নাকি আমি গরু! আম্মুউউউউউ…
নীল নীলাশা’র মুখ চেপে ধরে বলল..
– থামো থামো প্লিজ থামো আর চেঁচিয়ে না।
নীলাশা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে নীলের দিকে। নীল মুচকি হেসে বলল..
– তুমি দেখতে চাও তোমার সতীন কে!
নীলাশা রেগে চোখ বড় বড় করে ফেলে। নীল বলে..
– তাহলে এই দেখো!
বলেই নীলাশা’কে ঘুরিয়ে আয়ানার দিকে নিলো। নীল হাত দিয়ে দেখাল…
– এই যে এই হাতি বাচ্চা হলো তোমার সতীন!
নীলাশা দেখল আয়নায় তার’ই প্রতিচ্ছবি! নীল চোখ ঘুরিয়ে বলল..
– এটা তো আমি!
– হ্যাঁ তুমি!
– আমি আপনার প্রেমিকার কথা বলছি যার জন্য আপনি আমার ঘর সাজিয়েছেন।
– সে আমার প্রেমিকা নয় সে আমার হাতি বাচ্চা বুঝলে!
নীলাশা’র নাক ঘসে!
– আপনি আমায় বলছেন!
– তুমি এতোক্ষণে বুঝলে!
– কিন্তু এখানে তো নীল লেখা।
– আদুরী কি বলে ডাকে তোমায়।
– তার মানে আপনি সতীন আনছেন না কেন।
– তুমি যেই, এরপর আরেকটা। আমার পক্ষে এতো গুলো সম্ভব না।
– মানে কি বলতে চান আপনি! আমি কি হুম কি আমি!
– হাতি বাচ্চা!
বলেই নীল দৌড়, নীলাশাও দৌড়ালো নীলের পিছনে। এই মাঝরাতে দুজনেই পুরো ঘর ঘুরতে থাকে। নীলাশা এক সময় হাঁপিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নীল ও হাঁপিয়ে যায়। নীল তাকিয়ে থাকে নীলাশা’র থাকে। নীলাশা নীল কে দেখে একটা মুখ ভেংচি দেয়। নীল মুচকি হেসে নীলাশা কে এক টানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়।
নীলাশা কিছু বলতে গেলে নীল নীলাশা’র ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে চুপ করতে বলে। নীল চুপ হয়ে তাকিয়ে থাকে নীলের চোখের দিকে। নীলের চোখে আজ অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছে সে। কিন্তু সুপ্ত ভালোবাসা! কিন্তু এই ভালোবাসা কার জন্য! তার জন্য কি?
নীল বলে উঠে..
– হুম এই ভালোবাসা তোমার জন্য!
নীলাশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে নীলের দিকে। তার মনের কথা সে কিভাবে জানল। নীল হেসে বলে উঠে..
– তুমি যেই বাচাল তোমার মন কি আস্তে আস্তে কিছু বলতে পারে।
– ছাড়ুন তো আমায়!
– আরে আজব তো আমি এতো রোমান্টিক মুডে আছি আর তুমি ঝগড়া করছো
– আপনার সাথে রোমান্স করার বিন্দু মাত্র ইচ্ছা নেই আমার।
– তাহলে এতোক্ষণ ভ্যা ভ্যা করছিলে কেন, এতো ভয় কিসের ছিল তোমার। আমাকে তো ভালোবাসোই না তাহলে হারানোর ভয় কেন ছিল তোমার মাঝে!
– এসব আমার মনে মটেও ছিল না।
নীল নীলাশা কে ছেড়ে দিয়ে বলে..
– সত্যি!
– হুম অবশ্যই!
– ঠিক আছে তাহলে যার মনে থাকবে তাকে খুঁজে নেবো।
– মানে।
– মানে এমন একজন কেউ যে আমাকে ভালোবাসবো। তোমার ভাষায় তোমার সতীন আনবো।
নীলাশা রেগে নীলের কলার ধরে বলে…
– এতো বড় সাহস আপনার আপনি আমার সতীন আনার কথা বলছো।
– করছো কি ছাড়ো।
– কেন ছাড়বো আপনাকে আমি পুলিশে দেবো।
– কেন
– আপনি আমায় ঠকিয়েছেন তাই!
– কখন ঠকলাম তোমায়, আর আমি পুলিশ কে বলে দেবো আমার এই বউ আমায় ভালোবাসে না তাই আরেক বিয়ে করবো। বাই দ্যা ওয়ে ইউ নো হু আই এম আদ্রিয়ান খান নীল! পুলিশের এতো সাহস নেই যে আমায় ধরবে!
নীলাশা নীল কে ছেড়ে দিয়ে শান্ত গলায় বলে..
– আপনি সত্যি সত্যি আরেকটা বিয়ে করবেন।
– হ্যাঁ করবো।
– দেখুন এরকম করবেন না প্লিজ!
– কেন করবো না, আমার মন আমার ইচ্ছা!
বলেই নীল পেছন ফিরে চলে যেতে নিলো। তখন নীলাশা বলে উঠে..
কাঁদো কাঁদো গলায় বলে…
– তাহলে আমার কি হবে, আপনি আমায় বের করে দেবেন। আপনি তো তাকেই ভালোবাসবেন আমাকে তো বাসবেন না তাহলে আমাকে আর এখানেও থাকতে দিবেন না!
নীল খেয়াল করল নীলাশা ওর কথা সিরিয়াসলি নিয়ে নিয়েছে। নীল তাড়াতাড়ি নীলাশা’র কাছে গিয়ে বলে..
– হাতি বাচ্চা এই হাতি বাচ্চা কি হলো তোমার।
করুণ স্বরে..
– আপনি কি তাকেও হাতি বাচ্চা বলে ডাকবেন।
নীল হেসে নীলাশা কে জরিয়ে ধরে বলল…
– আমার হাতি বাচ্চা শুধু একটাই আর সেটা তুমি! বুঝলে আমার ভালোবাসাও তুমি!
নীলাশা নীলের বুকি মাথা রেখে..
– তাহলে আপনি আর বিয়ে করবেন না।
– আরে আমি তো মজা করছিলাম!
– কিহহ!
– এতো চেঁচিয়ো না সবাই ঘুমাচ্ছে.
– আপনি ইচ্ছে করে আমাকে কষ্ট দিলেন।
– কি আর করবো বলো তুমি তো সোজা কথা বুঝো না। তবে তুমি যদি এখনো বলো আমায় ভালোবাসো না তাহলে আমি করতেই পারি আরেকটা বিয়ে।
নীলাশা কিছু না বলে নীলের সাথে আরো শক্ত ভাবে মিশে গেল। নীল নীলাশা কে ছেড়ে ওর গালে হাত রেখে ঠোঁটের দিকে আগাতে থাকে। নীলাশা চোখ বন্ধ করে নেয়। নীল নীলাশা’র ঠোঁটে আলতো করে চুমু খায়। অবশেষে তাদের ভালোবাসাও পূর্ণতা পায়!
#চলবে….
[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩
৬ মাস পর…
কাব্য আজ দেশে ফিরছে, প্রায় কয়েক মাস আগে কিছূ কাজের জন্য তাকে কানাডা পাঠানো হয়েছিল। সেখান থেকে আজ ফিরছে সে। এই নিয়ে বাড়ির সবাই বেশ উত্তেজিত। তার আসার কারনে সকাল সকাল উঠে আনহা তার জন্য রান্না করছে। নিহা, নীল তৈরি হচ্ছে রিসিভ করতে যাবে। সবাই বেশ খুশি, কিছু না কিছু করবে বলে কিন্তু এখানে মেহেরিন…
সে যে কাল রাতে ঘুমিয়েছে এখন পর্যন্ত উঠে নি সে যেখানে শান্ত আর অরনি দুজনেই তার বিছানায় এসে তাকে ডাকছে। সে বলছে আর দু’মিনিট আর দু’মিনিট এভাবে করতে করতে প্রায় এখন দু’ঘন্টা হতে চলল কিন্তু মেহেরিন’র দু’মিনিট আর শেষ হলো না। শান্ত শেষমেষ অরনি কে নিয়ে বাইরে চলে এলো।
নীলাশা প্রেগন্যান্ট আজ ৩ মাস, অরনি এখন ভালো করেই ভূতনি বলতে পারে। কিন্তু এখানে সব পরিশ্রম আহিয়ানের। বেচারি নিহা এখন অবদি মা ডাকটা শুনতে পেলো না। এদিকে ভার্সিটিতে একটা নতুন বন্ধু হয়েছিল মেহেরিন’র। মেহেরিন ও তার সাথে অনেকটা ফ্রি হয়ে গেল। তবে এই বন্ধুত্ব বেশি দিন টিকল না। মেহেরিন সেই রাগে এখন কারো সাথে’ই বন্ধুত্ব করতে চায় না।
কাব্য’র ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে।আহিয়ান, নিহা, নীল, রোদ্দুর তাকে রিসিভ করতে গেছে। সবাইকে এখানে দেখে কাব্য অনেক খুশি তবে মেহেরিন যে আসবে না সেটা হয়তো সে জানতো। মেহেরিন এখনো মরার মতো পড়ে ঘুমাচ্ছে। দুপুর ১২ টা বাজে এখন, কাব্য মেহেরিন’র ঘরে আলো। বিছানার কাছে এসে ঘুমন্ত মেহেরিন কে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে দেখে নিলো অতঃপর মেহেরিন কে খুব জোরে একটা চিমটি দিলো। মেহেরিন লাফিয়ে উঠলো। চোখ ঢলতে ঢলতে বলে..
– কোন কচ্ছপের বাচ্চা আমার ঘুমটা নষ্ট করল!
– এই আমি!
মেহেরিন ঘুম ঘুম চোখে সামনে তাকিয়ে দেখল কাব্য। তাকে দেখে মেহেরিন এক গাল হেসে তাকে জড়িয়ে ধরল।
– এসে পড়েছিস!
– হুম!
– কেমন কাটলো এতো দিন তোর।
– খুব ভালো। তুই বল…
– হুম ভালো। তুই অনেক দূর থেকে এসেছিস অনেক টায়ার্ড তুই যা ফ্রেশ হয়ে নে ঠিক আছে। গুড নাইট!
বলেই মেহেরিন আবারও শুয়ে পড়ল। আর শুয়ে পড়ার সাথে সাথেই ঘুম। কাব্য এটাই আশা করেছিল তার কাছ থেকে। এদিকে সবাই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা মেহেরিন’র এমন কান্ড দেখে হেসে উঠলো।
.
রাতে….
সবাই বসে আড্ডা মারছে। মেহেরিন শান্ত কে কোলে নিয়েছে, শান্ত নিয়েছে অরনি কে আর অরনি কোলে নিয়েছে বিড়াল বাচ্চা কে। তবে সেই বিড়াল বাচ্চা এখন আর বিড়ার বাচ্চা নেই অনেক বড় হয়েছে তবে মেহেরিন তাকে সেই বিড়াল বাচ্চা বলেই ডাকে। মেহেরিন’র দেখাদেখি শান্ত আর অরনি দুজনেই সেই নামে ডাকে।
সবাই অনেক ধরনের গল্প গুজব করছে। অনেক দিন পর সবাই আজ একসাথে। পুরো জমজমাট একটা পরিবেশ। তখন নিশি বলে উঠে..
– তা কাব্য শুধু কি কাজ’ই কমপ্লিট করলি নাকি গফ টফ কিছু পেলি!
নিশি’র কথায় কাব্য কেমন চুপ হয়ে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে তার সাথে। গোলামাল লাগছে ব্যাপারটা কিছু তো একটা হয়েছে! রোদ্দুর বলে উঠে..
– নিশি তো খালি আকাশে ঢিল ছুঁড়লো কিন্তু এখন তো মনে হচ্ছে ঢিল টা নিশানায় লেগেছে।
ইহান বলে উঠে..
– কাব্য সত্যি আমরা কি তাহলে এইবার ভাবী ডাকতে পারবো।
কাব্য হেসে মাথা নিচু করে নিল। অতঃপর ধীরে ধীরে বলল..
– ১ মাস হলো তার সাথে পরিচয় খুব ভালো মেয়ে!
মেহেরিন চট করে বলে উঠে..
– কি, কে, কখন, কোথায়, কিভাবে, কার সাথে !
– একটু দম নে!
– তুই বলবি!
– আচ্ছা গাইস মেয়েটার নাম ক্যাট.. ক্যাট মেহেনজা!
আনহা বলে উঠে..
– ক্যাট ইউ মীন বিড়াল!
সবাই হেসে উঠে। কাব্য বলে..
– আসলে ভাবী জন্মসূত্রে সে ক্যানাডার নাগরিক তাই এমন নাম।
– ওহ্ আচ্ছা তাই বল।
নীলাশা বলে উঠে..
– ফ্যামিলি তে কে কে আছে?
– ভাবী ক্যাট অনাথ!
সবাই চুপ হয়ে যায়। কাব্য বলে উঠে..
– কার এক্সিডেন্ট এ মা বাবা মারা যায়। অতঃপর অনাথ আশ্রমে বড় হয় সে। তবে দেখতে খুব মিষ্টি! তোমাদের অনেক ভালো লাগবে ওকে। আমার সাথে প্রথম একটা ক্যাফে তে দেখা হয় ওর!
ইহান বলে উঠে..
– আমাদের কাব্য ভাই দেখি প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!
নিহা বলে উঠে..
– আচ্ছা বেচারা এভাবেই পারে না লজ্জায় মরে যায় তোরা আর প্লিজ পিন্চ মারিস না!
আহিয়ান বলে উঠে..
– তোমার সাথে নিয়ে আসতে তাকে!
– আনতে চেয়েছিলাম জিজু তবে তার একটু কাজ আছে আর তার অফিস থেকেও ছুটি নিতে হবে। তবে কয়েকদিন পর’ই আসবে সে। আমাকে জানিয়েছে..
নিশি, রোদ্দুর, ইহান একসাথে বলে..
– ওহ্ আচ্ছা!
– গাইস প্লিজ!
নীল বলে উঠে..
– মেয়ে বাংলা জানে!
– হ্যাঁ জানে ওর মা বাঙালি ছিল। তাই খুব ভালো বাংলা কথা বলতে পারে।
– তার মানে বেশ ভালো ভাবে পটিয়েছিস!
– ভাইয়া তুমি ও!
নীলাশা নীল কে গুঁতো মেরে বলে..
– আপনিও না চুপ করুন!
একে একে সবার কথা শেষ হলে এবার মেহেরিন বলার জন্য প্রস্তুত নেয়। সে উঠে কাব্য’র কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অতঃপর কাব্য’র গাল ধরে মুখটা একবার এদিক একবার ওদিক করে বলে..
– মেয়েটা তোর কি দেখে প্রেমে পড়ল বল তো!
– আদুরী!
– আমি সিরিয়াসলি বলছি, তোর কোন গুন দেখে মেয়েটা তোর প্রেমে পড়ল এটা জানতে চাওয়া আমার মন।
আনহা বলে..
– তোমার মন তো তাই জানার কোনো শেষ নেই!
আহিয়ান বলে..
– পৃথিবীতে যত অযুক্তি কথা আছে তা জানতে চাওয়া আমাদের মেহেরিন’র মন।
মেহেরিন একটু ইনোসেন্ট ফেস করে তাকাল। অতঃপর সবাই একসাথে হেসে উঠে।
.
১ সপ্তাহ পর…
কাব্য আজ খুব খুশি কারন আজ ক্যাট আসছে। মেহেরিন কিছুক্ষণ পর পর কাব্য কে দেখছে। সত্যি সে অনেক খুশি আর খুব এক্সাইটেড! রোদ্দুর, কাব্য আর মেহেরিন এই ৩ জন এসেছে ক্যাট কে রিসিভ করতে। ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে কিছুক্ষণ আগে। একে একে চেকিং করে সবাই বের হচ্ছে। মেহেরিন অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ক্যাট কে দেখার জন্য। কারন এই ১ সপ্তাহে কাব্য ক্যাটের কথা বলে বলে তার মাথা খেয়ে ফেলেছে তাই তাকে দেখবার আগ্রহ তার বেড়ে গেছে।
হঠাৎ কাব্য মেহেরিন’র ঘাড়ে হাত রেখে সামনে তাকাল, মেহেরিন ও সাথে সাথে তাকাল। একটা মেয়ে আসছে, চুল গুলো ব্রাউন রঙের স্লিকি চুল তবে বেশি বড়ো না, পড়নে কালো রঙের একটা ওয়েস্টন ড্রেস, চোখে কালো রঙের সানগ্লাস। মেয়েটা কে দেখে ক্যাট’ই মনে হচ্ছে।
মেয়েটি এসেই কাব্য কে জরিয়ে ধরল। কাব্য ও তাকে জড়িয়ে ধরল। মেহেরিন এখন ফুলফিল সিউর।
– কেমন আছো বেবী!
– ভালো তুমি!
– হুম ভালো।
– আসতে কোনো সমস্যা হয় নি তো!
– না কোনো সমস্যা হয় নি!
– এখানে আসো, ( মেহেরিন কে উদ্দেশ্য করে ) মিট মাই জান আদুরী!
– মেহেরিন বর্ষা খান রাইট!
– ইয়াপ!
ক্যাট এসে মেহেরিন কে এসে জরিয়ে ধরে। মেহেরিন ও তাকে জরিয়ে ধরে। অতঃপর কাব্য রোদ্দুর কে পরিচয় করিয়ে দেয়। ক্যাট তার সাথে হাত মিলায়। ক্যাট মেহেরিন কে উদ্দেশ্য করে বলে..
– তোমার দেখার অনেক আগ্রহ ছিলো আমার জানো!
– আমার ও। বাই দ্যা ওয়ে তুমি দেখতে খুব কিউট!
– কিন্তু তুমি আমার চেয়ে বেশি কিউট, একদম কিউটি কিউটি!
– থ্যাংকু, তোমাকে আমি আজ থেকে মিয়াও ভাবী বলে ডাকতে পারি।
– মিয়াও ভাবী!
– এভাবেও তুমি আমার ভাবী হবে আর তোমার নাম তো ক্যাট মানে বিড়াল এজন্য নামটা রাখলাম ভালো না
– বেস্ট নাম দিলে আমায়!
কাব্য বলে উঠে..
– শেষমেষ মিয়াও ভাবী!
#চলবে….
( প্রিয় পাঠকগন, এই গল্পের ইতি চলে এসেছে। জলদি শেষ হয়ে যাবে গল্পটা! )
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৪ [ #শেষ_পর্বের_প্রথমাংশ ]
কাব্য ক্যাট কে নিয়ে বাসায় আসে, সবাই তাকে দেখে খুব খুশি হয়। অনেক সুন্দর করে সবাই অ্যাপায়ন করে তার। ক্যাট’র এসব কিছু খুব ভালো লাগে। তবে এখানে মেহেরিন’র সাথে তার খুব ভাব জমে। সবার সাথেই খুব সহজে মিশে যেতে থাকে সে। সেদিন ক্যাট আর মেহেরিন দুজন মিলে যায় রান্না করতে। রান্না কিছু না হলেও রান্না ঘরে সেদিন বেশ তুফান উঠেছিল। জিনিসপত্র উড়ে উড়ে বসার ঘরে এসে পড়েছিল। ভয়ে কেউ সেদিন আর রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় নি।
কাব্য খুব খুশি কারন মেহেরিন’র ক্যাট কে ভালো লেগেছে। এটা নিয়ে খুব চিন্তায় ছিল সে। তবে এদিকে আবার ও মেহেরিন’র হামলা হলো। মেহেরিন গাড়ি ড্রাইভ করছিল তখন হুট করে পেছন সিট থেকে কেউ এসে তার গলা টিপে ধরে। মেহেরিন গাড়ির সামনের আয়নায় তাকে দেখে। তার মুখে মুখোস আর হাতে গ্লাফস। মেহেরিন গাড়ির হ্যান্ডেল টা ধরে গাড়ি ঘোরায়। মেহেরিন’র গলা থেকে তার হাত ছুটে যায়। অতঃপর সে একটা ছুড়ি নিয়ে মেহেরিন’র গলায় দিতে গেলে ভাগ্যের জোরে সেদিন মেহেরিন বেঁচে যায়। তবে তাকে ধরতে পারে নি।
একথা শোনার পর অভ্র’র চিন্তা আবারও বেড়ে গেলো। কে এই নতুন শত্রু তাদের যে এভাবে তাদের পিছনে লেগে আছে। আজ হয়তো মেহেরিন বেঁচে গেছে কিন্তু যদি পরেরবার কিছু হয়ে যায় তখন। এদিকে সেই লোকটা আজ বেশ খুশি। অবশেষে এখন তার মনে হচ্ছে তার প্ল্যান এবার সফল হবে। সে ওয়াইনের বোতল টা হাতে নেবার পর আরেকটা লোক এসে উপস্থিত হলো।
– খুব খুশি মনে হচ্ছে তোমায়।
– এতোদিন পর আমার প্ল্যান সাকসেসফুল হবে, অবশেষে এবার মেহেরিন বর্ষা খানের ইতি হবে। আমি খুশি হবো না।
– প্ল্যান হয়ে গেছে। দু’সপ্তাহ পর খান কোম্পানির একটা মিটিং কনফারেন্স আছে। খান পরিবারের সবাই থাকবে সেখানে। সেদিন মেহেরিন’র গল্পের ইতি হবে। তবে..
– তবে!
– নিহা সেখানে থাকবে না। কোম্পানি’র কাজে ১ সপ্তাহ পর ব্যাংকক আসছে সে।
– তাহলে তার গল্পের ইতি সেখানেই করার প্রস্তুত কর। বাই দ্যা ওয়ে আমি বাংলাদেশ কবে যাচ্ছি!
– আগামীকাল ফ্লাইট তোমার!
সে হেসে বলল..
– মেহেরিন বর্ষা খান ওরফে আদুরী ইউর গেইম ইজ ওভার নাও।
বলেই হাতে থাকা মেহেরিন’র ছবি টাকে মোমবাতি’র আগুনে জ্বালিয়ে দিলো।
.
কয়েকদিন পর..
মেহেরিন, কাব্য, রোদ্দুর, ইহান, নিশি আর ক্যাট শপিং করতে গিয়েছিল। সেখানে মেহেরিন আর ক্যাট একসাথে ছিল। মেহেরিন তখন বলে উঠে..
– আচ্ছা মিয়াও ভাবী, কাব্য’র কি তোমার বেশি ভালো লেগেছিল।
– কেন ওর মধ্যে ভালো কি নেই বলো।
– আরে আমি কখন বললাম নেই তবে থাকলেও সেটা আমার চোখে পড়ে না।
– তুমি ওর বন্ধু তো তাই!
– কেন বন্ধু বলে কেন।
– কেন তুমি জানো হার এক দোস্ত কামিনা হতা হে!
– তুমি আমি খুব সুইট!
ক্যাট মেহেরিন’র গাল টেনে বলে..
– একদম রসগোল্লা’র মতো!
মেহেরিন হেসে উঠে। কিন্তু হঠাৎ করেই ক্যাট মেহেরিন কে খুব জোরে ধাক্কা মারে। মেহেরিন সামলাতে না পেরে ধপাস করে পরে যায়। অতঃপর অনেক মানুষের গোলমালের আওয়াজ পাওয়া যায়। এখানে নাকি গুলি চলেছে। মেহেরিন একবার ওপাশে তাকায়। মানুষজন দৌড়াদৌড়ি করছে, ভিড়ের মধ্যে থেকে কাব্য , রোদ্দুর,ইহান আর নিশি দৌড়ে এদিক আসছে। মেহেরিন ক্যাট এর দিকে তাকাল। ক্যাট এপাশে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন ও এপাশে তাকাল। কিছু লোক তাদের দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের মুখেও ওই একই মুখোস যেটা সেদিন গাড়িতে লোকটা পড়ে এসেছিল। তাদের একেকজনের হাতের গান।
কাব্য ছুটে এসে মেহেরিন’র কাছে আসল। নিচ থেকে মেহেরিন তুলল। এদিকে লোক গুলো গান তাক করে একের পর এক গুলির শব্দ পাওয়া গেল। তবে সেটা লোকগুলো চালাই নি, চালিয়েছে ডেভিল আর গার্ড গুলো। ডেভিল গুলি চালাতে লাগল আর একে একে সবাই নিয়ে বের হয়ে গেল।
.
রাতে মেহেরিন ক্যাট’র ঘরে নক করল! ক্যাট বিছানায় বসে ল্যাপটপ টিপছিল। মেহেরিন কে দেখে হেসে তাকে ভেতরে আসতে বলল..
– ঠিক আছো।
– আমার আবার কি হবে, তোমাকে থ্যাংকু দিতে আসলাম
– কেন?
– এই যা ভুলে গেলে, তুমি তো দেখি আমার থেকেও মন ভোলা। কিন্তু মেহেরিন আর যাই ভুলুক কারো ফেভার কখনো ভুলে না। আমাকে তান বাঁচানোর জন্য!
– এটা আমার দায়িত্ব ছিল, তবে এটা কখনো ভেবে না আজ যে বাঁচিয়েছে কাল ও সে বাঁচাবে।
– কেন সে’ই আবার মারার প্ল্যান করবে নাকি।
ক্যাট মুচকি হেসে বলল..
– কাল সে না ও থাকতে পারে!
– ওহ আচ্ছা।
অতঃপর দুজনেই খানিকক্ষণ গল্প করলো। এবার মেহেরিন ঘরে গেলো। ঘরে আসতে না আসতেই ডেভিল দৌড়ে আসল।
– ম্যাম!
– ডেভিল এতো রাতে, এভরিথিং ইজ ফাইন!
– নো ম্যাম!
– কি হয়েছে?
– ম্যাম সেখানে.. সেখানে কাউকে দেখা গেছে।
– হোয়াট,কি বলছো!
বলেই মেহেরিন ঘর থেকে বের হলো তার সাথে সাথে ডেভিল ও আসতে লাগল!
– ম্যাম সিসি টিভি ক্যামেরায় দেখা গেছে তবে কে সেটা জানা যায় নি।
– সে কোথায়?
– ম্যাম সেখানেই আছে, তাকে নিয়ে যেতে পারি নি।
মেহেরিন ডেভিলের দিকে তাকিয়ে বলল..
– তার মানে তাকে দেখেছে!
ডেভিল মাথা নিচু করে রইল। মেহেরিন দু’হাত ঘসে তার রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল , অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল..
– এই জায়গা দ্রুত চেঞ্জ করো, যেভাবেই হোক জানার চেষ্টা করো কে ছিল। আর গার্ড আরো বাড়িয়ে দাও। কোনোমতে যেন কেউ জানতে না পারে। ওকে!
– ইয়েস ম্যাম!
অতঃপর মেহেরিন গাড়িতে গিয়ে উঠলো। কিছুক্ষণ পর একটা বাড়িতে আসল মেহেরিন। দাঁড়িয়ে চোখ বোলাতে থাকল বাড়িটার দিকে। ছোটবেলার সব স্মৃতি জুড়ে আছে তার এখানে। তার মা’র সাথে তার খেলা করা, সারাদিন ছোটাছুটি করা সব কিছু। মেহেরিন হেটে বাড়িটার পিছনে গেলো। এখনো সেই দোলনা টা আগের মতোই আছে। সেই আম গাছ’টা এখানো আছে সেখানে। কতোই না মনে পড়ে এই দোলনায় বসে মা সাথে কতো খেলেছে সে। বাগানের ফুলগাছ গুলো এখন আর আগের মতো করে কেউ যত্ন নেয় না। আফসোস লাগছে মা থাকলে কখনো গাছ গুলোর এই হাল হতো না। রাতের আঁধারে যেখানে সব অন্ধকার থাকার কথা সেখানে এই বাড়িটা পুরো আলোয় আলোকিত। কারন তার মা’র অন্ধকার ভালো লাগে না। তাই তাদের বাগানের এই দিক টাও বিভিন্ন রকমের লাইটিং দিয়ে সাজানো।
মেহেরিন জোরে জোরে ডেভিল কে ডাক দিলো। ডেভিল এসে উপস্থিত হলো।
– জ্বি ম্যাম।
– কাদের রাখছো কাজে, এই ফুল গুলোর যত্ন নেয় না কেন।
– আমি দেখছি ম্যাম।
– হুম দেখো ফুল গুলোর যত্ন যাতে ঠিক ভাবে নেওয়া হয়।
.
মেহেরিন এসে দাঁড়ালো সদর দরজার মুখে। দরজার ঝুলে থাকা তালা টায় ধুলো জমে গেছে। ডেভিল এসে তালা টা খুলল। মেহেরিন বাড়িতে পা রাখল, আজ প্রায় ৮ বছর পর। এই ৮ বছর আগে তার মা মারা যাবার পর আর কখনো এই বাড়িতে আসে নি। ঘরের ভেতর টুকু পরিষ্কার লাগছে, কয়েকদিন পর পর সার্ভেন্ট এসে পরিষ্কার করে যায় তাই এমন লাগছে। মেহেরিন হাঁটতে হাঁটতে গেলো তার মায়ের ঘরে। দেওয়ালে থাকা তার আর তার মায়ের ছবিটা এখনো আগের মতোই আছে। তার মুখের সেই স্নিগ্ধ হাসি দেখতে পাচ্ছে সে দূর থেকেই। মেহেরিন খেয়াল করল তার চোখ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। সে আর দেরি না করে চট করে চলে এলো।
নিচে আসা মাত্রই গাড়ির আওয়াজ আসল। ডেভিল বলে উঠে..
– সে এসে পড়েছে!
– স্টোর রুমে আটকে রাখো তাকে, তার মুখ টাও দেখতে চাই না আমি। আর হ্যাঁ আগে যেভাবে আদর যত্ন করতে এখনো সেই ভাবেই করবে। মরনযন্ত্রণা দেবে ওকে। আর হ্যাঁ খেয়াল রাখবে এটার খবর যেন কেউ না পায়। আগের মতো ভুল এবার যাতে না হয়!
– জ্বি ম্যাম।
মেহেরিন বাইরে বের হয়ে আসল। দেখল সেই লোকটা দাঁড়িয়ে রাখা হয়েছে। মুখে কালো কাপড় দেওয়া। মেহেরিন তার থেকে চোখ সরিয়ে সানগ্লাস টা মুখে দিয়ে গাড়ি নিয়ে চলে এলো।
#চলবে….
[ ৯ টা বাজে আরেকটা পর্ব দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে! ]
#Game
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৫ [ শেষ_পর্বের_ দ্বিতীয়াংশ ]
আজ ক্যাট’র এনগেজমেন্ট, বিয়ের অ্যানাউসমেন্ট আজ হবে। সকাল থেকেই পুরো বাড়িতে হৈ চৈ লেগে আছে। শান্ত আর অরনি মিলে পুরো ঘর ছোটাছুটি করছে আর আনহা তাদের পিছনে ঘুরছে। তাদের সামনে হুট করেই নিহা এসে দাঁড়াল। দুজনেই দাঁড়িয়ে গেল।
– দুজনে মিলে এভাবে দৌড়াচ্ছো কেন? পরে গেল ব্যাথা কে পাবে শুনি!
দুজনেই বলে উঠে..
– আমরা!
– তাহলে..
অরনি বলে উঠে..
– কি করবো দৌড়াতে বেশ লাগে আমাদের!
– তোমার মতো দুষ্টু মেয়ে তো এই কথাই বলবে কি শান্ত’র মতো শান্ত বাচ্চা টা আজ এতো দুষ্টুমি কেন করছে।
শান্ত নিহা’র কথায় মাথা নিচু করে ফেলে! নিহা হেঁসে একটু বসে শান্ত’র দিকে তাকিয়ে বলে..
– আমার ফুফুজান দেখি রাগ করতেও শিখে গেছে।
– ফুপি!
– আজ দুষ্টামি করো না ফুফুজান, বাড়িতে আজ অনুষ্ঠান তোমার মা হয়রান হয়ে যাবে বুঝলে।
– হামম!
অরনি কে উদ্দেশ্য করে বলে..
– তোমাকে আলাদা করে বলতে হবে!
অরনিও মাথা নিচু করে ফেলে। আনহা এসে দুজনকে নিয়ে বলে..
– হয়েছে ননদিনী দুজনকে আর বকা লাগবে না। আমার দুই চোখের মনি অনেক ভালো বুঝলে!
– তুলছো তো মাথায়!
– আছেই তো এই দুজন! ওদের মাথায় তুলবো না তো কাকে তুলবো।
এইসময় নিশি নীলাশা কে নিয়ে এসে বলে..
– আরেকজন আসছে টেনশন নিয়ো নিও না।
নীলাশা বলে উঠে..
– টেনশন নিবে না গো টেনশন দিবে!
সবাই হেসে উঠে!
.
বিকালের দিকে ক্যাট কে সাজাতে থাকে নিশি, আনহা আর নিহা! মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছে তাদের। ক্যাট কে সাদা রঙের একটা লেহেঙ্গা পড়ানো হয়। তাতে গোল্ডেন রঙের কারুকাজ! ওদের সাজানো দেখে মেহেরিন বলে উঠে..
– ইশ আমি যদি সাজতে পারতাম!
নিশি বলে উঠে..
– আমি না বল আমরা, নিহা দি আর মিষ্টি ভাবী দুজনেই সেজেছে!
মেহেরিন বলে উঠে..
– বিয়ের আগে তো এতো সেজে গুজে থাকতে না দি এখন কেন এতো সাজো!
– কারন এখন সাজলে দা কিছু বলে না।
নিশি বলে উঠে..
– সাজো সাজো এখন তোমাদের’ই সময়!
– আপনা টাইম ভি আইয়ে গা। তব দেখনা হাম কেয়া করতে হে!
– আচ্ছা দেখবো। এখন আপাতত ক্যাট এর সাজ দেখ!
অতঃপর সবাই সাজগোজ এ মন দেয়। হঠাৎ সেখানে নীল এসে বাড়ি সাজানো হয়েছে সেটা দেখাবে বলে সবাইকে নিয়ে যায়। মেহেরিন তো নাচতে নাচতে বের হয়ে যায়। ক্যাট একাই ঘরে থাকে। হঠাৎ করে দরজা বন্ধ করার আওয়াজ আসলে ক্যাট চমকে উঠে। তাকিয়ে দেখে কাব্য তার সামনে দাঁড়ানো। কালো রঙের কুর্তায় চমৎকার লাগছে তাকে। ক্যাট কাব্য’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে..
– তুমি এখানে..!
– তো আর কার আশা করবে?
– আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নীল ভাইয়া কে তুমি পাঠিয়েছো।
কাব্য হেসে মাথায় হাত দিয়ে বলে..
– বুদ্ধিমান তুমি!
অতঃপর হুট করেই ক্যাট কে এক টানে নিজের কাছে এনে বলে..
– খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো তোমাকে!
ক্যাট হেসে কাব্য’র ঘাড়ে হাত রেখে বলে..
– কেন আমি কি বিশ্ব সুন্দরী!
– আমার হৃদয় তুমি!
– আচ্ছা একটা কথা বলো তো!
– কি?
– কাকে বেশি ভালোবাসো আমায় নাকি মেহেরিন কে।
– হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন?
– কারন সব প্রেমিক তার প্রেমিকা কে জান বলে ডাকে কিন্তু তুমি মেহেরিন কে জান বলো বিধায় আমাকে জান বলো নি।
– তুমি আসলেই মারাত্মক!
– সিরিয়াল কিলার আমি!
কাব্য হেসে ক্যাটের কোমরে হাত রেখে বলে..
– আর সাইলেন্ট কিলার আমি!
– উওরটা পেলাম না।
– নিজেই তো বললে আমার জান হলো মেহেরিন। নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি ওকে।
– আর আমায়!
– আমার জীবন তুমি!
– এমন উওর দিলে যে আমি দ্বিধায় পড়ে গেলাম। অনেক ভাবতে হবে এখন!
– তুমি ভাবতে থাকো আর আমি আমার কাজ করি!
বলেই ক্যাট’র ঠোঁটে আলতো করে চুমু খেলো। ক্যাট একটা ধাক্কা মেরে বলল..
– আমার সাজগোজ নষ্ট করার ধান্দা!
– আরে আমি তো রোমান্স করতে এসেছিলাম!
– মেহেরিন! মেহেরিন কোথায় তুমি!
– আরে যাচ্ছি যাচ্ছি! সোজাসুজি বললেই পারতে বের হও। জান কে কেন ডাকছো
– বের হবে তুমি!
– যাচ্ছি বাবা!
.
জাঁকজমক ভাবেই ক্যাট আর কাব্য’র এনগেজমেন্ট সম্পূর্ন হয়। বিয়ের তারিখ ১০ দিন পর ঠিক হয়। এদিকে পরেরদিন’ই নিহা চলে যায় ব্যাংকক।
প্রায় ৩ ঘন্টা হয়ে গেল আহিয়ান নিহা কে কল করছে কিন্তু ফোন বন্ধ। আহিয়ান এবার অস্থির হয়ে উঠল। সে দেরি না করে মেহেরিন’র কাছে গেল। মেহেরিন শান্ত আর অরনি’র সাথে খেলছিল। আহিয়ান সেখানে এসে উপস্থিত হয়!
– জিজু কি হয়েছে?
– নিহা’র সাথে কথা হয়েছিল তোমার মেহেরিন!
– দি’র সাথে, হ্যাঁ তো। দি পৌঁছে আমাকে কল করেছিলো তোমাকে করে নি।
– হ্যাঁ মেসেজ করেছিল আমি মিটিং এ ছিলাম তাই কথা বলতে পারি নি। কিন্তু এখন প্রায় ৩ ঘন্টা ধরে কল করছি বাট ফোন বন্ধ!
– কিহহ আচ্ছা আমি দেখছি! মিষ্টি ভাবী, মিষ্টি ভাবী!
আনহা বলে উঠে..
– হ্যাঁ গো ননদিনী!
– শান্ত আর অরনি কে একটু নিয়ে যাও।
– আসছি!
অরনি যাবার সময় বলে উঠে..
– আম্মু’র কি হয়েছে খালামনি!
– কিছু হয় নি আম্মুজান। তুমি যাও তোমার দা’র সাথে খেলো।
অতঃপর আনহা’র সাথে চলে যায় শান্ত আর অরনি। তারা যেতেই মেহেরিন ডেভিল কে ডাকে।
– ম্যাম।
– দি’র ফোন কি বন্ধ!
– আমি চেক করছি ম্যাম!
অতঃপর ডেভিল ফোন কে বন্ধ পায়। মেহেরিন বলে উঠে..
– গার্ড দের কল করো!
ডেভিল এক গার্ড কে কল করে তার ও ফোন বন্ধ পায়। একে একে সব গার্ডদের ফোন করতে থাকে। মেহেরিন আর আহিয়ান দুজনই চিন্তা করছে। অবশেষে একজন গার্ড ফোন ধরে। তখন সে বলে তাদের ওপর অ্যাটাক হয়েছিল। সবাই আহত হয়েছে এমনকি নিহা ও। তবে এখন ভালো আছে।
মেহেরিন বলে দি’র সাথে কথা বলবে। অতঃপর নিহাকে ফোন দেওয়া হয়।
– আদুরী!
– দি ঠিক আছো তুমি?
– হ্যাঁ ঠিক আছি, বেশি কিছু হয় নি হাতে একটু ব্যাথা পেয়েছি। রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবো।
– কিন্তু এসব হলো কি করে?
– জানি না হঠাৎ করেই অ্যাটাক করল। তবে বেঁচে গেছি, একজন আমাকে বাঁচিয়েছে!
– কে সে!
– সে আমাদের কোম্পানির নতুন ইনভেস্টর!
– ওহ্ আচ্ছা। আমি আসবো।
– না আমি ঠিক আছি। তোমার আসার দরকার নেই।
– জিজু’র সাথে কথা বলো!
– হুম!
.
– নিহা!
– হ্যাঁ ঠিক আছি আমি, চিন্তা করিয়েন না।
– আমি আসবো!
– না আপনি থাকেন অরনি’র কাছে।
– যত্ন নিও নিজের, একটু সাবধানে থেকো।
– আপনিও আর অরনি’র কে দেখে রাখেন। কোথায় সে?
– শান্ত’র সাথে খেলছে।
– আচ্ছা ঠিক আছে পরে কথা বলবো।
– হুম। আমি আবার কল করবো।
– আচ্ছা!
.
রাতে মেহেরিন বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ কেউ বেলকনি দিয়ে তার রুমে আসল। তার মুখে মুখোস আর হাতে গ্লাফস। সে একটা ছুড়ি নিয়ে মেহেরিন’র দিকে আগাচ্ছে। মেহেরিন’র বুকে ছুরি টা বসিয়ে দিতে যাবে এর আগেই মেহেরিন ছুরি’টা ধরে ফেলল। সে অবাক হয়ে মেহেরিন’র দিকে তাকাল। মেহেরিন বলে উঠে..
– ওয়েলকাম! আমি জানি তুমি আসবে!
সে আরেকটা হাত দিয়ে ছুরি গাধঁতে গেলে মেহেরিন তাকে একটা ধাক্কা মারল। অতঃপর দুজনেই মারামারি করল। এক পর্যায়ে মেহেরিন তার হাতে ছুরির আঘাত বসিয়ে দিল। অতঃপর তার মুখোস খোলার আগেই সে পালিয়ে গেল। মেহেরিন আর তাকে ধরতে পারল না।
.
সকালে কাব্য এক কাপ কফি নিয়ে ক্যাট’র ঘরে আসলো। সে এখনো ঘুমে কাতর। কাব্য তার সামনে দাঁড়িয়ে ক্যাট কে দেখতে লাগলো। খুব ভালোবাসে সে ক্যাট কে। কফির মগ টা টি টেবিলে রেখে ক্যাট’র কপালে একটা চুমু খেল। ক্যাট’র ঘুম ভেঙ্গে গেল। কাব্য বলে উঠে…
– গুড মর্নিং বেবী!
– গুড মর্নিং!
– সকাল হয়েছে।
– তো কি আমার ঘুম এখনো শেষ হয় নি।
কাব্য হেসে বিছানার কোনে বসল। ক্যাট উঠে কাব্য’র কোলে মাথা রাখল। ক্যাট বলে উঠে..
– তোমার ঘুম এতো তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল!
– আমি তো সকাল সকাল’ই উঠো
– ভালো বিয়ের পর সকালের নাস্তা টা তুমি’ই করবে ওকে। লাঞ্চ বাইরে করবো আর ডিনার দুজনে একসাথে বাইরে থেকে করে আসবো।
– অনেক সুন্দর প্ল্যান।
– হুম জানি ধন্যবাদ। আমি এখন একটু ঘুমাই ঠিক আছে।
বলেই কাব্য’র কোলে ঘুমিয়ে গেল। কাব্য তার মাথায় হাত বোলাতে লাগলো!
.
কয়েকদিন পর…
আজ প্রেস কনফারেন্স এ খান পরিবারের সবাইকে থাকতে হবে। তাই সবাই তাদের নতুন কোম্পানি তে গেল। প্রেস কনফারেন্স শুরু হবে তার আগে মেহেরিন’র কাছে এলো। মেহেরিন বললো তাকে এখন যেতে, বলেই নিচে আসল। নিচের ফ্লোরে সব মিডিয়া উপস্থিত ছিল। ডেভিল এসে গাড়ি বের করল। অভ্র বলল…
– আদুরী আমিও যাই তোমার সাথে!
– না দা আমি আধ ঘন্টা’র মধেই এসে পড়বো।
– তবে!
– গার্ডদের নিয়ে যাচ্ছি দা চিন্তা করো না।
বলেই মেহেরিন গাড়িতে বসল। অভ্র নিজের হাতে গাড়ির দরজা বন্ধ করে বলল..
– সাবধানে যেও।
বাকি সবাই একটু দূরেই ছিল। গাড়ি স্টার্ট হবার পর’ই অভ্র পা বাড়ালো। একদিকে সবাই ভেতরে ঢোকার জন্য পা বাড়ালো। মেহেরিন গাড়ির ড্রাইভিং সিটের পাশে বসা ছিল। হঠাৎ তার চোখে একটা চিরকুট পরল। মেহেরিন ভ্রু কুঁচকে চিরকুট টা খুলল। তাতে লেখা ছিল..
– game over aduri!
হুট করেই গাড়িটা ব্লাস্ট হয়ে গেল। মাত্র ৫ সেকেন্ড হলো অভ্র তার পা বাড়িয়েছিল আর তখন’ই এই ব্লাস্ট হলো। সবাই অবাক হয়ে পিছনের দিকে গেল। দেখল পুরো গাড়িটা আগুনে জ্বলছে, এভাবেই মেহেরিন’র গল্প এখানেই শেষ হলো। তার এই গেম এখানেই অভার হলো।
#সমাপ্ত