Game 2 পর্ব -৫৩+৫৪

#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৫৩_ও_৫৪ ( #রহস্যখোলাসা )

– আমি হানিমুনে যেতে চাই!

– কিহহহ?

– এতো অবাক হবার কি আছে? সবাই তো যায় আর সবাই বিয়ের পর’ই যায়। কিন্তু আমাদের বিয়ের তো এখন প্রায় কয়েকমাস হয়ে গেল তবে সমস্যা নেই। চলুন আমরা এখন যাই!

মেহেরিন ভালোমতো খাটে বসিয়ে নির্ঝর ওর কপালে হাত দিল। অতঃপর হাত পা চেক করে বলল..

– তোমার কি জ্বর এসেছে নাকি অসুস্থ তুমি! অসুখের ঘোরে নির্ঘাত ভুলভাল বলছো চলো ডাক্তার’র কাছে যাবো।

– ডাক্তার’র কাছে গিয়ে কি বলবেন, আমার বউ হানিমুনে যেতে তাই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি ওকে। ও পাগল হয়ে গেছে!

– আরে রেগে যাচ্ছো কেন। আমি তো শুধু জিজ্ঞেস করলাম। ব্যাপারটা কেমন একটা অস্বাভাবিক!

– অস্বাভাবিক তো বটেই। বিয়ের এতো মাস পর হানিমুন যাবো এটাই তো বড় অস্বাভাবিক!

– প্ল্যান কি বলতো মারার প্ল্যান করছো?

– আপনার জান তো আমি এখন’ই নিতে পারি জান! কিন্তু আমি আপাতত ঘুরার মুডে আছি। এখন যদি আপনি না যেতে চান তাহলে সমস্যা নেই আমি যাকে পাবো তাকে নিয়েই হানিমুনে চলে যাবো!

– যাকে পাবে তাকে মানে!

– যেটা আপনি বুঝেছেন সেটাই! এখন বলুন আমাকে নিয়ে যাবেন না কি না।

– তোমার নিশ্চিত কোন প্ল্যান আছে।

– হ্যাঁ তা তো আছেই!

– আমার থেকে পালিয়ে যাবে না সেটা তুমি করতে পারবে না।

– নির্ঝর আমি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি। আমাকে আটকে রাখার সাধ্য আপনার নেই।

– জানি আমি!

– তাহলে চলুন ব্যাংকক!

– ব্যাংকক এ যাবে।

– কেনো কোন সমস্যা?

– না সমস্যা নেই তবে অন্য কোথাও গেলে বলো।

– না আমি ব্যাংকক যেতে চাই আপনি নিয়ে যাবেন কি না বলেন।

– আচ্ছা আমি দেখছি!

– দেখছি না টিকেট কাটুন আমরা কাল যাচ্ছি!

– এখন তো মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি পাগল হয়ে গেছো। একদিনে কিভাবে কি?

– আমি কি জানি! আমি শুধু বললাম আমরা কাল যাবো। এখন কিভাবে যাবো সেটা আপনি ঠিক করুন! নাকি পারবেন না, তাহলে দা কে বলতে হবে।

নির্ঝর মেহেরিন’র গালে হাত রেখে বলল..
– তুমি বললে আমার জান হাজির।

– সেটা তো আমিই নিবোই তার আগে একটু ঘুরাফেরা করি নেই।

– হ্যাঁ করো! 24 hours গার্ড রা পাহাড়া দেবে তোমায়।

– এর বেশিক্ষণ হলেও মাইন্ড করতাম না। আচ্ছা আমি গিয়ে তাহলে ব্যাগ গুছাই!
বলেই মেহেরিন চলে গেলো। নির্ঝর হেসে বলে..

– কিছু তো তোমার মনে চলছে মেহু পাখি! সেটা কি আমাকে জানতেই হবে।

অতঃপর নির্ঝর তার বাবা’র সিকিউরিটি’র জন্য আমান কে কল করল। কিন্তু আমান তার কল ধরল না। নির্ঝর ভাবল আমান হয়তো এখনো তার উপর রেগে আছে। অতঃপর সে তার অন্য গার্ড কে বলে তার বাবা’র পুরো সুরক্ষার ব্যবস্থা করেমেহেরিন’র সাথে ব্যাংকক গেলো। একটা রিসোর্টে উঠলো তারা দুজন। রিসোর্ট টা বেশ বড় আর সুন্দর ছিল। এটার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় ছিল এটার সুইমিংপুল। মেহেরিন রিসোর্ট’র ভিতর যাবার সময় সুইমিংপুলটা তার চোখে পড়ল। বেশ সুন্দর ভাবে সাজানো এটা।

নির্ঝর আগে এই দেশেই থাকতো, নিজস্ব বাড়ি ছিল তার। কিন্তু মেহেরিন কে নিয়ে সেখানে উঠতে চায় নি সে। নির্ঝর মেহেরিন’কে নিয়ে রুমে গেল। তাদের রুমের বাইরে দু’জন গার্ড এছাড়া পুরো রিসোর্ট জুড়েও গার্ড। এসব নির্ঝরের কাজ যাতে মেহেরিন এখান থেকে পালিয়ে না যেতে পারে!

মেহেরিন ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে লাগল। হঠাৎ করেই নির্ঝর এসে তাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে তার চুলে মুখ গুজল। মেহেরিন চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। নির্ঝর ওকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে কপাল বরাবর একটা চুমু খেলো। মেহেরিন নির্ঝরের কোমরের দিকে শার্ট আঁকড়ে ধরল। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র ঠোঁটের দিকে আগাতে লাগলো। কিন্তু এর আগেই সে অজ্ঞান হয়ে বিছানায় পড়ে। মেহেরিন নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল…

– লাভ ইউ জান!

অতঃপর তার ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বলল..

– গুড বাই!

বলেই মেহেরিন বেলকনির গ্রিল বেয়ে নামল। এদিকে নির্ঝর অজ্ঞান হয়ে ঘরেই পড়ে আছে। মেহেরিন রাতের বেলায় পালানোর চান্স নিলো না কারন রাতের বেলায় গার্ডরা বেশি সজাগ থাকবে। সে নিচে নেমেই মাথা একটা ক্যাপ দিয়ে সবার চোখ থেকে আড়াল হয়ে বের হয়ে গেল রিসোর্ট থেকে। রিসোর্টের বাইরে ডেভিল গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার জন্য। মেহেরিন সেই গাড়িতে উঠে গেল!

প্রায় ৩ ঘন্টা পর নির্ঝরের জ্ঞান ফিরল। তার মাথা ঘুরছে, তার সাথে ঘাড়ে ব্যাথা করছে।‌ মেহেরিন ইনজেকশন টা এখানেই পুশ করেছিল। নির্ঝর মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ল। তার ধারনা ঠিক ছিল মেহেরিন পালিয়েছে। তার ধারনা আগে থেকেই ছিল মেহেরিন পালাবে তাই তখন সে সুযোগ বুঝে মেহেরিন’র ঘাড়ে একটা ট্রেকিং চীপলাগিয়েছিল। ডিভাইস টা অনেক ছোট তাই মেহেরিন সেটা হয়তো খেয়াল করতে পারবে না।

নির্ঝর রিসোর্ট থেকে বের হয়ে গাড়িতে এসে বসল। তার গার্ডরাও তার সাথে চলে এলো। নির্ঝর ট্রেকিং ডিভাইস নিয়ে ট্রেকিং করতে শুরু করল। অতঃপর গাড়ি নিয়ে সেই পথ অনুযায়ী ফলো করতে লাগলো।

প্রায় আরো ২ ঘন্টা পর নির্ঝর মেহেরিন’র খোঁজ পেল। নির্ঝরের সামনের গাড়িটা ট্রেকিং ডিভাইস এ দেখানো হচ্ছে। নির্ঝর কথায় ৪ টা গাড়ি ওই গাড়িটা কে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলল। অতঃপর নির্ঝর বের হয়ে গাড়ির দরজা খুলে তাকিয়ে দেখল একজন মহিলা আর তার বাচ্চা বসে আছে। নির্ঝর কে দেখে মহিলা টা তার বাচ্চা কে আগলে ধরল। মনে হচ্ছে বেশ ভয় পেয়েছে। নির্ঝর অবাক হয়ে মেয়েটার দিকে তাকাল। তার কোলে একটা ঝুড়ি আছে যেখানে একটা বিড়াল বাচ্চা আছে। নির্ঝর বিড়াল টাকে হাতে নেবার পর দেখল ট্রেকিং ডিভাইস এটাকেই এতোক্ষণ ফলো করছিল। অতঃপর নির্ঝর বিড়ার বাচ্চা টাকে হাত বোলাতেই সেই ট্রেকিং চীপ টা পেয়ে গেল।

নির্ঝর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করল সেই চীপটার কথা কিন্তু মেয়েটা কিছুই বলতে পারল না। অতঃপর নির্ঝর মেহেরিন’র পিক দেখানোর পর মেয়েটা জানালো কিছুক্ষণ আগে মেয়েটার সাথে তার কফি শপে দেখা হয়েছে। নির্ঝর বুঝে গেল মেহেরিন তার চাল ধরে ফেলেছে। সে মা আর বাচ্চা দুজনকেই সরি বলে যেতে দিল। অতঃপর রেগে খুব জোরে গাড়িতে একটা লাথি মারল।

#ফ্লাশব্যাক…

মেহেরিন একটা কফি শপে বসে কফি খাচ্ছে। তখন তার সামনে একটা বাচ্চা মেয়ের একটা বিড়ার ঘুরছিল। বিড়াল টা খুব কিউট ছিল। মেহেরিন বাচ্চা টার দিকে তাকিয়ে হেসে সেই বিড়াল টাকে কোলে নিল। অতঃপর নিজের ঘাড় থেকে সেই ট্রেকিং চীপ টা বের করে হেসে সেটা বিড়ালের গায়ে লাগিয়ে দিল। অতঃপর সেখান থেকে বের হয়ে গেল। এদিকে মেয়েটাও বিড়াল টাকে ঝুড়িতে রেখে বেরিয়ে গেল।

এসব মনে করে মেহেরিন গাড়িতে বসে হাসছে, ভাবছে নির্ঝরের অবস্থা এখন কেমন। নির্ঝর ভেবেছিল সে কিছুই বুঝতে পারে নি কিন্তু সে বুঝেছিল।

নির্ঝর প্রায় ৭ দিন ধরে মেহেরিন’র খোঁজ করল কিন্তু কিছুই পেলো না। অবশেষে হতাশ হয়ে সে দেশে ফিরে এলো। বাড়িতে এসে গাড়ি থামাতেই নির্ঝরের কেমন অস্থিরতা বেড়ে গেল। সে কিছুক্ষণ গাড়িতেই বসেই সেটা অনুভব করতে লাগলো। অতঃপর সামনে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন’র গাড়ি।

নির্ঝর দ্রুত গাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়িতে ঢুকল। সদর দরজা খোলা! নির্ঝর বাড়ির ভিতর এসে দেখে মেহেরিন বসার ঘরে বসে পপকর্ন খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। নির্ঝর হা হয়ে তাকিয়ে আছে। তার কাছে যেন মনে হলো এটা একটা স্বপ্ন। সে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেল।

মেহেরিন একবার ঘুরে দেখল নির্ঝর আসছে। সে এক গাল হেসে দাঁড়িয়ে গেলো। নির্ঝর মেহেরিন’র সামনে এসে ওর গালে হাত রেখে বলল..

– এটা তুমি মেহু পাখি!

– হুম আমি!

নির্ঝর মেহেরিন’কে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরল। ও ভেবেছিলো হয়তো মেহেরিন কে আর পাবে না সে। কিন্তু এখানে এভাবে মেহেরিন কে পাবে বলে সে আশাই করে নি। কিছুক্ষণ এরকম জরিয়ে ধরে থাকার পর নির্ঝর মেহেরিনকে বলতে লাগল…

– কোথায় গিয়েছিলে তুমি? জানো আমি কিভাবে খুজেছিলাম। পাগল হয়ে গিয়েছিলাম প্রায়!

মেহেরিন নির্ঝরের গালে হাত রেখে বলল..
– সরি নির্ঝর আসলে..

বলার আগেই নির্ঝর মেহেরিন’র কপালে চুমু খেয়ে বলল..
– অনেক ভালোবাসি তোমায়! অনেক! মেহু পাখি আমি পারবো না তোমাকে ছাড়া থাকতে!

– আই লাভ ইউ নির্ঝর!
বলেই মেহেরিন আবারো নির্ঝরের ঘাড়ে একটা ইনজেকশন পুশ করল। নির্ঝর অজ্ঞান হয়ে গেল। ডেভিল এসে তাকে ধরল..

– ম্যাম!

– নিয়ে যাও উনাকে। পুরো পরিবার কে একসাথে রেখে আসো!

অতঃপর ডেভিল নির্ঝর কে নিয়ে গেল। মেহেরিন নির্ঝরের পুরো বাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল..

– দ্যা গেইম ইজ ওভার!
.
নির্ঝরের মুখে পানি ছিটানো হলো। নির্ঝর আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকাল। সব কিছু ঝাপসা! তার মাথা যন্ত্রণা করছে। খুব খারাপ ভাবে যন্ত্রণা করছে! নির্ঝর বুঝতে পারল তাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে! নির্ঝর আশপাশ তাকিয়ে দেখল পুরোই অন্ধকার সব খানে। হঠাৎ কেউ‌ বলে উঠে… “জান আমি এখানে”!

নির্ঝর সামনে তাকিয়ে দেখল মেহেরিন তার সামনেই বসা। তার এক হাতে একটা গান আর এক হাতে চকলেট’র প্যাকেট। সেখান থেকে সে এক কামড় দিল। নির্ঝর কাঁপা কাঁপা গলায় বলে..

– ম..মেহু পাখি!

– হুম আপনার মেহু পাখি! তবে আপনার জন্য আরো সারপ্রাইজ আছে দেখতে চান!

নির্ঝর অবাক হয়ে তাকাল। মেহেরিন ইশারা করল অতঃপর সব লাইট জ্বলে উঠলো। নির্ঝর চোখ বন্ধ করে নিলো। অতঃপর আবার চোখ খুলে তাকাল। পুরো জায়গাটা সাদা রঙ করা। সাদা আর আলোয় একদম আলোকিত। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল এখানে এক পাশে অভ্র , নিহা, নীল, নীলাশা, আহিয়ান, রোদ্দুর, আরিশা, কাব্য, ইহান আর ডেভিল দাঁড়িয়ে আছে। সবাই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেহেরিন চুটকি বাজিয়ে বলল..

– আরে সারপ্রাইজ এটা না তো!

বলেই তার চেয়ার পেছনে ঘুরাল। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল ওর বাবা আরমান কে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তার নিচে খুব বড় একটা পাত্রে পানি। নির্ঝর তাকে দেখে হতবাক হয়ে গেল। বলে উঠল “বাবা”। মেহেরিন বলে উঠে..

– কি ভেবেছিলেন লুকিয়ে রাখতে পারবেন। আচ্ছা একটা ম্যাজিক দেখবেন!

অতঃপর মেহেরিন ইশারা করল। আরমান কে সেই পানিতে ডুবিয়ে রাখা হলো। নির্ঝর চিৎকার করতে লাগলো।

– মেহেরিন না। মেহেরিন বাবা মারা যাবে । তুমি ছেড়ে দাও বাবাকে। মেহেরিন!

মেহেরিন ইশারা করল। আরমান কে উঠানো হলো। আরামান বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে আর কাঁশছে। মেহেরিন এসব দেখে খুব হাসল। প্রান ভরে হাসল। নির্ঝর তার বাবা কে ডাকছে। আরমান’র কানে যেন কোন কথাই যাচ্ছে না। সে নিজের মতোই হাপাচ্ছে।

মেহেরিন বলে উঠে..
– আরে আরমান সাহেব যে আপনার ছেলে আপনাকে ডাকছে। কথা বলুন ওর সাথে!

আরমান মেহেরিন’র কথায় এবার নির্ঝরের দিকে তাকাল। নির্ঝর চেয়ার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করতে লাগল। মেহেরিন হেসে বলল..

– পারবেন না নির্ঝর! আপনি পারবেন না। এটা আদুরীর ফাঁদ এতো সহজে বের হতে পারবেন।

– মেহেরিন আমার বাবা’র কিছু হলে আমি কিন্তু কাউকে ছাড়বো‌ না কাউকে। সব কিছু শেষ করে দেবো সব। তুমি ভাবতে পারছো না এর ফল কি হতে পারে। আমার ভালোবাসা নিয়ে এভাবে খেলো না তুমি!

– আপনার ভালোবাসা। লাইক সিরিয়াসলি নির্ঝর আপনার ভালোবাসা নিয়ে আমি খেলেছি। কিন্তু আমার যতটুকু মনে পরে আপনি খেলেছেন আমার ভালোবাসা নিয়ে!

– মেহেরিন তুমি ছাড়ো আমার বাবা কে।

– আচ্ছা ছেড়ে দিলাম!

বলেই আরমান কে আবারো পানিতে ডুবানো হলো। আরমান এবারোও ছটফট করতে লাগলো আর এদিকে নির্ঝর। অতঃপর মেহেরিন আবারো তাকে উঠালো। বলল…

– নির্ঝর একটা সিক্রেট বলি আপনাকে, এটা পানি না। এটা হলো কেরোসিন যাতে আপনার বাবা কে আমি জ্বালিয়ে দিবো।

নির্ঝর হতবুদ্ধি হয়ে গেল। তার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পরল। মেহেরিন আবার বলল..

– আপনি এখন বুঝবেন নির্ঝর নিজের চোখের সামনে নিজের প্রিয় মানুষ টা মারা গেলে কেমন লাগে।

– মেহেরিন না। মেহেরিন প্লিজ এমন করো না ‌, অনেক বছর পর আমি আমার বাবা কে পেয়েছি।

– কিন্তু আমি তো এমনটাই করবো।
বলেই ডেভিল কে ইশারা করলো। ডেভিল একটা আগুনের মশাল নিয়ে সামনে আগালো। আরমান এখন মনে হচ্ছে প্রায় অজ্ঞান হয়ে গেছে। নির্ঝর আগুনের মোশাল দেখে ছটফট করতে লাগলো। ডেভিল আগুন লাগাতে যাবে তখন হঠাৎ করেই পেছন থেকে কেউ বলে উঠল..

– আদুরী থামো!

মেহেরিন কথাটা শুনে বাঁকা হাসি দিয়ে পিছনে তাকাল। দেখল নীলাশা ছুরি ধরে আছে আরিশা’র গলায়।

– ডেভিল কে পিছাতে বলো নাহলে কিন্তু এখানে আরিশা মরবে।

আরিশা ভয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাকি সবাই অবাক শুধু নির্ঝর আর মেহেরিন বাদে। নীল বলে উঠে..

– নীল তুমি!

– নীল আপনি আদুরী কে বলুন আমার বাবা আর ভাই কে যেনো ছেড়ে দেয়। নাহলে কিন্তু আমি সত্যি আরিশা কে মেরে ফেলবো।

রোদ্দুর বলে উঠে..
– নীল ভাবী তুমি এটা কি বলছো!

– তোমার জান কে বলে আগে এসব থামাতে। না হলে..

মেহেরিন হেসে বলল..

– কাহিনী মে আব আয়া হে টুইস্ট! কি সবাই বুঝলে তো এই তৃতীয় ব্যক্তি টা কে?

– মানে!

– মানে এটাই! এনি কোন নীলাশা আহমেদ টাহমেদ না। এটা হলো নীলাশা চৌধুরী ওরফে নির্ঝরের বড় বোন। কি ঠিক বললাম তো জান!

– আমি এখন কোন তর্ক করতে চাই না আদুরী। আমাকে বাবা কে এক্ষুনি তুমি ছাড়ো। না হলে..

– না হলে.. কি মেরে ফেলবে আরিশা কে তাই তো। আচ্ছা তোমরা ভাই বোন কি বলো তো। এতো ভালো অভিনয় শিখলে কার থেকে। এই আরমান’র থেকে। কিন্তু কিভাবে? এই শয়তান টার রক্ত তো তোমার শরীরে বইছে না।

অভ্র বলে উঠে..
– আদুরী তুমি কি বলতে চাও!

মেহেরিন দেখল সবাই তার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এমনকি নির্ঝর ও। নীলাশা বলে উঠে..

– আদুরী, কথার জ্বালে পেঁচিয়ো না। এতে কিন্তু তোমার সময় নষ্ট হবে। তোমার ফ্রেন্ড মানে ভাবী ও কিন্তু প্রেগন্যান্ট। তাই চান্স নিও না দুজনের জীবন এখানে!

রোদ্দুর অবাক চোখে আরিশা’র দিকে তাকাল। আরিশা কাঁদছে! রোদ্দুর বলে উঠে..

– ভাবী তুমি কি বলছো?

– হুম রোদ্দুর তোমার সন্তান এখন আরিশা’র গর্ভে। কি চাও এটা এখন তোমার ডিসেশন।

মেহেরিন হেসে বলে..
– আমি জানি নীল ভাবী তোমার হাত ওকে মারতে একবার ও কাঁপবে না। এর আগে আমাকেও পানিতে ডুবাতে তোমার হাত কাঁপে নি।

সবাই এবার আরেকদফা অবাক হলো সাথে নীলাশাও। নির্ঝর হা করে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন বলে উঠে..

– কি অবাক হলে.. আসলে আমার এই দুই দুই চার করতে বেশি সময় লাগলো না। আমি ঠিক বললাম তো ওই ব্যক্তি টা তুমি ছিলে যে কি না আমায় পানিতে ডুবিয়ে মারতে চেয়েছিলে।

– হ্যাঁ আমিই ছিলাম যে তোমাকে মারতে চেয়েছিলাম, আমিই ছিলাম যে কি না তোমাদের সব খবর আমার ভাই কে দিতাম, আমিই ছিলাম যে কি না এখানে থেকে তোমার শত্রু হয়েও তোমার ভাবী হয়ে তোমার কাছে ছিলাম।

– থ্যাংকু ভাবী! আমি শুধু এটাই চেয়েছিলাম যে তুমি নিজের মুখে সব বলো। এখন তোমার কাজ শেষ!

বলা মাত্রই পেছন থেকে তিশা এসে নীলাশা’র হাত ধরে ফেলল। রোদ্দুর তখন’ই আরিশা কে টেনে নিজের কাছে নিল। নীলাশা ছটফট করতে করতে একবার পেছন তাকিয়ে দেখল তিশা। সে বলে উঠে..

– তিশা তুই! তুই ওদের দলে, তুই কিভাবে করতে পারিস এটা। তুই জানিস ওরা তোর বাবা কে মারতে চায়।

– সব জানি সবকিছু জেনেও আমি ওদের সাথে। কারন তোমরা ভুল করছো।

নির্ঝর বলে উঠে..
– তিশা তুই আপু কে ছাড়! আর এইসব কি বলছিস তুই। কতো টুকুই বা জানিস তুই।

– যা জানি তা সঠিক জানি। এই শয়তান টা আমার বাবা না। আমার বাবা কে মেরে ফেলেছে এই শয়তান টা। আর তোমরা ওকে বাঁচানোর চেষ্টা করছো।

এবার শুধু নীলাশা আর নির্ঝর অবাক হলো। কারন বাকি সবাই জানতো। নীলাশা এবার থেমে যাওয়াতে তিশা ওকে ছেড়ে দিল। তিশা কাঁদতে কাঁদতে নিচে পড়ে গেল। বলতে লাগল..

– মেরে ফেলেছে এই শয়তান টা আমার বাবা কে। মেরে ফেলেছে আমার মা কে। আমরা তো সেই ১১ বছর আগেই অনাথ হয়ে গিয়েছিলাম। ওরা কেউ আমাদের মা বাবা না। ওরা ঠকিয়েছে আমাদের।

– তোর মাথায় এসব কে ঠুকিয়েছে ওই আদুরী। তুই এখন ওকে বিশ্বাস করছিস।

– নীল ভাবী। আমি তো কিছুই করি নি। শুধু ডি এন এ টেস্ট করিয়েছিলাম। ব্যস, সবকিছু সামনে চলে এলো। বাই দা ওয়ে ননদিনী সরি তোমাকে আমি একটা মিথ্যে বলেছিলাম।

তিশা অবাক হয়ে তাকাল মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন হেসে বলল..

– আমার ফাদার ইন ল আর মাদার ইন ল মারা যায় নি। তারা বেঁচে আছে দেখতে চাও ওদের।

তিশা দাঁড়িয়ে গেল। নীলাশা আর নির্ঝর অবাক। অতঃপর ডেভিল তাদের নিয়ে এলো।

একজন পুরুষ আরেকজন মহিলা আসল। তাদের মুখটা মলিন। চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে। দেখে মনে হচ্ছে খুব অসুস্থ, দুর্বল। তিশা তাদের দিকে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন বলে উঠে…

– রিদুয়ান চৌধুরী আর নীলিমা চৌধুরী! তিশা তোমার আর তোমার ভাইবোনের, মা আর বাবা!

তিশা চোখে পানি ছল ছল করছে। সে হেসে দৌড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরল রিদুয়ান। অতঃপর নীলিমা মা কে জরিয়ে ধরল। নীলিমা তার কপালে একটা চুমু খেয়ে বলল..

– আমার সেই ছোট তিশা! কতো বড় হয়ে গেছে!

– মা!
বলেই তাকে জরিয়ে ধরল। নীলিমা’র চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরল। নীলাশা আর নির্ঝরের কাছে এখনো সব কিছু ঝাপসা। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। মেহেরিন বলে উঠে..

– সময় হয়ে গেছে #রহস্যখোলাসা করাবার। এই গেইম এমন একজন গেইম প্লেয়ার আছে যে কি না আড়াল থেকেই সব চাল চালতো। আর তাও একদম পারফেক্ট চাল!
বলেই সে পেছনে ঘুরল , তার সাথে সাথে সবাই পিছনে ঘুরল। দেখল আরমানের পাশ থেকে দেওয়াল সরে যাচ্ছে, সেখানে আরো একজন কে দেখা যাচ্ছে। সে হলো উষা!

মেহেরিন বলে উঠে..
– আমার নকল শাশুড়ি আম্মু! উষা চৌধুরী অপস উষা আহমেদ!

সবাই অবাক কি হতে চলছে এখন কারোই ধারণা নেই। এখানে মেহেরিন ইশারা করার পর দুজন কে নিচে নামিয়ে চেয়ারে বেঁধে সামনে আনা হলো। দুজনেই অজ্ঞান। মেহেরিন নির্ঝরের চেয়ারের দড়িটা খুলে ফেলল। নির্ঝর উঠে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল তার দিকে। মেহেরিন হেসে দুজনের মুখে পানি দিল। দুজনের এবার জ্ঞান ফিরল।

– আসসালামুয়ালাইকুম শাশুড়ি আম্মু! জ্ঞান ফিরেছে আপনার!

– মেহেরিন! নির্ঝর নীলাশা দেখো মেহেরিন আমাকে মারার চেষ্টা করছে। এখানে তোমার বাবা কেও বেঁধে রেখেছো। তোমরা আমাকে না হলেও তোমাদের বাবা কে বাচাও।

কিন্তু নির্ঝর আর নীলাশা দুজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল। মেহেরিন হেসে বলল..

– একটু ওদিক ও তাকাও।

উষা ওদিক তাকিয়ে দেখল রিদুয়ান আর নীলিমা দাঁড়িয়ে আছে। ওদের দেখে তার চোখ বার হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। আরমান আর উষা একসাথে বলে উঠে..

– রিদুয়ান আর নীলিমা।

– কি অবাক হলে নাকি শাশুড়ি আম্মু!

নির্ঝর বলে উঠে..
– মা! মা এসব কি বলছে মেহেরিন।

নীলাশা বলে উঠে..
– মা তুমি নাকি আমাদের মা নও। এটা মিথ্যে না মা তুমি বলো এটা মিথ্যে!

– হ্যাঁ হ্যাঁ এটা মিথ্যে। আমি তোদের মা। এতোদিন আমিই তোকে লালন পালন করেছি।

মেহেরিন হেসে বলে..
– বাহ জন্ম দেন নি।

তিশা রেগে বলে উঠে..
– ভাবী তুমি ওই শাকচুন্নী কে আমার হাতে ছেড়ে দাও আমি মারবো ওকে।

রিদুয়ান তিশা কে আটকিয়ে বলে..
– শান্ত হও মা।

– কিভাবে শান্ত হবো বাপি। তুমি জানো না, আমি এতোদিন ভেবে গেছি আমার বাবা নেই কিন্তু তুমি ছিলে তো। ওই শয়তান আর শাকচুন্নী দুটো মিলে আটকিয়ে রেখেছিলো তোমাদের!

নির্ঝর রেগে বলে..

– তিশা চুপ করো। কি সব বলছো তুমি!

– তিশা যা বলছে ঠিক বলছে। আর আপনি এতো নিশ্চিত ভাবে বলছেন কিভাবে? আমি তো বললেন আমার ১৫ বছর বয়সের পর কোন স্মৃতি মনে নেই। মেমোরি লস তাহলে আপনি কিভাবে বুঝেন এটা আপনার মা বাবা।

– মেহেরিন!

– সব বলছি আমি, শুরু থেকে! নির্ঝর আপনার মনে আছে সেদিন আপনি বললেন আপনাদের এক্সিডেন্ট এ মেমোরি লস হয়েছে। তাই আপনাদের ভাই বোনের কারো কিছু মনে নেই। এটা আমার কাছে তখন তেমন একটা গুরুত্ব ছিল না কিন্তু যখন আপনি বললেন আপনাদের নাকি আমি এক্সিডেন্ট করেছিলাম তখন আমার সন্দেহ হলো। কারন আমি এমন কিছু করেই নি। তাই আমি আরমানের সমস্ত ঘটনা জানলাম। ওর সরনেম কখনোই চৌধুরী ছিল না। তাহলে আপনার সরনেম কিভাবে চৌধুরী হলো। তাহলে কি সে পাল্টিয়ে ছিল। হ্যা্ঁ এটা হতে পারে তবুও আমি একটা চান্স নিলাম। সেটা হলো আপনি।

নির্ঝর আর নীলাশা অবাক হয়ে সব শুনছে। উষা আর আরমান চুপ হয়ে বসে আছে। তারা জানে তাদের হাতে আর কিছু নেই।মেহেরিন বলতে লাগল..

– আপনি আপনার বাবা কে খোঁজার জন্য পাগল হয়ে গেলেন আর এটা আমার জন্য গুড চান্স ছিল। তাই আমি আপনার বাবা কে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিলাম। আর তাকে অসুস্থ করে দিলাম যাতে সে কোন কথা বলতে না পারো। হুইল চেয়ারে স্পিকার লাগালাম যাতে আপনাদের সব কথা আমি শুনতে পারি।

শাশুড়ি আম্মু’কে প্রথম সন্দেহ হয়েছিল যখন সে আমাকে দোষারোপ করল আমি তাদের বিষ খাইয়েছি। কিন্তু সেটা আমি না আমান করেছিল। আর এটার সাক্ষী ছিল তিশা। তিশা দেখেছিল আমান কে এসব মিশাতে আর এই উষা কেও দেখেছিল তার সাথে দাড়িয়ে থাকতে। পরে তিশা এসে আমাকে সব বলল।

সব বুঝতে পারলেও ডাউট ছিলাম তাই সিউর হবার চেষ্টা করলাম। কয়েকদিন পর আপনি আপনার নকল মা কে নিয়ে গেলেন আরমান’র কাছে। উষা তাকে দেখে ইমোশনাল হয়ে গেল আর আপনি ঔষধ আনতে যেতেই সে সব বলে দিল উষা কে। আর আমি সব শুনে ফেললাম ব্যস। যতটুকু জানলাম তৃতীয় ব্যক্তি টা নীল ভাবী ছিল আর আপনারা তার সন্তান নন। আর হ্যাঁ এটাও বললো যে আপনার আসল মা বাবা বেচে আছেন উনি তাদের লুকিয়ে রেখেছে। আর তিনি শুধু বার বার বললেন আমাদের ছেলে আমাদের ছেলে!

তিশা বলে উঠে..
– ভাবী এসব কথা আমাকে বলেছে কিন্তু মা বাবা যে বেঁচে আছে এটাই বলে নি। তাই আমি তখন থেকেই আমি ভাবী’র দলে ছিলাম। বিশ্বাস করেছিলাম তাকে!

– সরি গো ননদিনী! তুমি এখনো বাচ্চা তোমাকে এইসব বললে আমি তুমি খুশি হয়ে সবাইকে বলে দিতে। তাহলে আমার প্ল্যান টা ফ্লপ হয়ে যেতো। তাই তোমাকে একটু কষ্ট দিলাম কারন সুখ সবার সাথে ভাগ করতে পারলেও কষ্ট সবার সাথে ভাগ করতে পারে না।
বলেই নির্ঝর আর নীলাশা’র দিকে তাকাল। দুজনেই চুপ!

অতঃপর মেহেরিন হেসে বলল..
– তিশা কথা শোনার পর আমান কে সন্দেহ করলাম অতঃপর.. ওয়েট আমান কে আনা দরকার!

অতঃপর ডেভিল আমান কেও নিয়ে এলো। মেহেরিন হেসে বলল..
– নাও ফ্যামিলি ফুল ফিল হলো এখন!

– মানে!

নিহা বলে উঠে..

– মানে এটাই নির্ঝর আমান তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড বলে কেউ না ও হলো উষা আর আরমানের সন্তান! তার বংশধর। এই দেখো ম্যাডিকেল রিপোর্ট!

নির্ঝর রিপোর্ট টা হাতে নিল অতঃপর যা দেখল এতে তার চোখ চড়কগাছ! সে আমানের দিকে তাকাল। আমান মাথা নিচু করে আছে। মেহেরিন বলে উঠে..
– দা আমি হাঁপিয়ে গেছি বাকি টা তুমি বলো!

বলেই সে ধপাস করে নিচে বসে পড়ল। অতঃপর চকলেট খেতে খেতে সবাইকে দেখতে লাগল। অভ্র বলে উঠে..

– এই গেইম’র মাস্টারমাইন্ড হলো উষা! যদিও সে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারি নি। কিছুতেই কিছু হয় নি। মেহেরিন তাকে ধরে ফেলল! আমান কে উঠিয়ে অতঃপর তাকে অনেক মারধর করলাম। অবশেষে সে মুখ খুলল যে সেই উষা আর আরামানের ছেলে! যদিও তার আগেই আমরা ডিএনএ টেস্ট করতে পাঠিয়েছিলাম! সে অনেক আগে থেকেই জানত সবকিছু। আর নিজের বাবা কে বাঁচানোর জন্য’ই সে আর তার মা তোমাদের দুজনকে ব্যবহার করছিল।

নীল বলে উঠে..
– আমান’ই বললো যে রিদুয়ান আংকেল আর নীলিমা আন্টি কে ব্যাংকক এ আটকে রাখা হয়েছে। ( বলেই নীলাশা’র দিকে তাকাল। নীলাশা তাকিয়ে আছে তার দিকে। নীলাশা ঠিক দেখল নীলের চোখে তার জন্য জমা ঘৃণা । অতঃপর নীল মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলল.. ) আদুরী যেভাবেই হোক নির্ঝর কে নিয়ে ব্যাংকক গেলো আর সেখান থেকে গিয়ে সে , রোদ্দুর আর আমি তাদের খুঁজে আনলাম!

কাব্য বলে উঠে..
– আমি আরমান কে তুলে আনলাম আর ইহান আর তিশা মিলে উষা কে তুলে আনল। সবাইকে একসাথে করে জিজ্ঞেসাবাদ করলাম!

রোদ্দুর বলে উঠে..
– নির্ঝর তোমাদের উপর কখনো এক্সিডেন্ট করা হয়নি। আরমান অধরা আন্টি কে মেরে ফেলার পর পালিয়ে তোমাদের ওখানে উঠেছিল। তখন তোমার বাবা আর মা তাদের কে দয়া করে নিজের কোম্পানি তে চাকরি দেয়। আর সেই সুযোগটাই আরমান আর স্ত্রী নিল। তারা সুযোগ বুঝে তোমাদের সবাইকে অজ্ঞান করে ফেলল। তারা তোমাদের সবাইকে মারতে চেয়েছিল কিন্তু..

ইহান বলে উঠে..
– কিন্তু সমস্যা হলো তোমাদের সম্পত্তি তে! সেখানে লেখা ছিল রিদুয়ান আর নীলিমার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় আর যদি তখন তোমাদের কারো বয়সী ২৫ না হয় তাহলে সব সম্পত্তি ট্রাস্ট এ চলে যাবে। সেখানে তোমরা ৩ ভাই বোন এর কেউই এসব কিছু পাবে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে তাদের বন্দি করে রাখল। আর তোমাদের মেমোরি লস করে নিজের কাছে রাখল। কিন্তু তাদের প্ল্যান তারা আবার চেঞ্জ করলো মেহেরিন আরমান কে তুলে নিয়ে যাবার পর। তারা ভাবলো কেননা তোমাদের ব্যবহার করে তাদের প্রতিশোধ নেওয়া যায়।

কাব্য বলে উঠে..
– এজন্য তারা আমান কে নির্ঝরের বন্ধু বানালো আর নির্ঝর তাকেই বেশি বিশ্বাস করতো। অতঃপর আমান আর উষা’র তোমাদের দিয়ে এসব কাজ করালো। বলতে হবে উষা আহমেদ আপনি আপনার হাসবেন্ড এর থেকে কিছু কম না। আপনি খুন না করলেও তার থেকেও অনেক বড় অন্যায় কাজ করছেন।

নির্ঝর এসব শুনে থমকে গেল। নীলাশা তো পড়েই যাচ্ছিল তখন আরিশা এসে তাকে ধরল। নীলাশা আরিশা কে দেখে লজ্জায় মুখ টা নিচু করে ফেলল।
অতঃপর আহিয়ান বলে উঠে..
– আর আমি হলাম দর্শক যে কি এসব কিছু শোনছিলাম!

মেহেরিন হেসে উঠলো। বলল..
– ঠিক বলেছো জিজু তুমি আর আমি হলাম দর্শক যারা এতোক্ষণ এসবের সাক্ষী হলাম! দেখছো কতো মিল আমাদের!

– এজন্য’ই তোমাকে এতো ভালোবাসি আমি শ্যালিকা!

– লাই ইউ জিজু!

নিহা ঘাড় ঘুরে একবার এদিক আরেকবার ওদিক তাকাল। অতঃপর বলল..
– আপনারাই দুজন যে কি না সিরিয়াস মোমেন্ট ও হাসতে থাকেন!

আহিয়ান নিহা’র দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হেসে দিল। নিহা মুখ ভেংচি দিল। মেহেরিন ইহানের হাত ধরে উঠলো। অতঃপর বলল..
– তো গেইম ওভারের সময় হয়ে এসেছে!

বলেই আগুন নিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালো।
– এখন দেখবে আগুনে জ্বলতে ঠিক কেমন লাগে।

তিশা ও এসে দাঁড়াল বলল..
– আমিও জ্বালাবো তোমাদের। তোমাদের জন্য আমি অনেক কিছু হারিয়েছি।

উষা আর আমান দুজনেই কাকুতি মিনতি করতে লাগলো। আর আরামান তো জানত’ই তাকে বেঁচে থাকতে দেবে না। এতোদিন অনেক কষ্ট দেওয়া হয়েছে তাকে শুধু আজকের এই দিনটার জন্য। উষা নির্ঝর কে বলল..
– আমি তোর মা নির্ঝর, এতোদিন তোকে মায়ের আদরে বড় করেছি। নীলাশা তুই!

দুজনেই মুখ ঘুরিয়ে নিল। নীলাশা কাঁদছে। মেহেরিন আর তিশা দুজনেই একসাথে আগুন ধরিয়ে দিল। জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়া হলো তাদের। মেহেরিন তাদের সামনে দাঁড়িয়ে হাসল। অভ্র এসে তার পাশে দাঁড়াল আর ইহান এসে তিশা’র পাশে। অতঃপর মেহেরিন ঘুরে নির্ঝরের সামনে দাঁড়াল। তার হাতে একটা পেপার দিল। নির্ঝর পেপার টা হাতে নিয়ে দেখে ডির্ভোস পেপার। মেহেরিন বলে উঠে..
– বলেছিলাম কোন দিন আমার ভালোবাসা আপনার ঘৃণার মাঝে হারিয়ে গেলে সেদিন আপনি আমাকে হারাবেন। আর সেই দিন এসে পড়েছে। আপনি আমার দা, দি, আপু ভাইয়া, রোদ্দুর ওদের সবাইকে অনেক কষ্ট দিয়েছেন। সব ভুলে গেলেও ওদের কষ্ট আমি ভুলতে পারবো না। আমি সাইন করে দিয়েছি এখন শুধু আপনার টা বাকি!

– মেহু পাখি!

– কি এগ্রিমেন্ট তো!
বলেই মেহেরিন হেসে এগ্রিমেন্ট’র পেপার হাতে নিয়ে সেটা সেই আগুনে ফেলে দিল। জ্বলে গেলো সেটা। অতঃপর মেহেরিন বেরিয়ে আসল। তার পিছু পিছু সবাই বেরিয়ে এলো। আরিশা এখনো নীলাশা কে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। নীল একবারও তাকাল না তার দিকে। রিদুয়ান এসে নির্ঝরের কাঁধে হাত রাখল। নির্ঝর কাঁদতে কাঁদতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ল।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here