– “ইস্ক, পেয়ার, মহব্বত এগুলো হলো ভালোবাসার আরেক নাম। তবে আমার কাছে ভালোবাসার আরেক নাম মানে শুধু তুমি! তুমিই আমার প্রথম আর শেষ ভালোবাসা। শুধু আমার ভালোবাসা,আর এই ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। শুধু তোমার জন্য মেহুপাখি! মেহু পাখি! তুমি আমার মেহু পাখি!”
কথাগুলো মেহেরিন’র হাসি মাখা ছবিটা হাতে নিয়ে বলতে থাকে নির্ঝর! তাকিয়ে আছে একদৃষ্টিতে মেহেরিন’র ছবির দিকে। তার হরিণী চোখ, মায়াবি মুখ যেন পাগল করছে তাকে। নির্ঝর ছবি টা হাতে নিয়ে পুরো ঘর জুড়ে ঘুরতে থাকে।
অতঃপর বিছনায়া শুয়ে বালিশের ওপর মাথা রেখে হাসতে হাসতে বলতে থাকে..
– শাহজাহান তৈরি করেছিল তাজমহল কিন্ত আমি কি করবো তোমার জন্য। আমার ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে কি চাইবে তুমি আমার, তবে তুমি যা চাইবে তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আমি। বিলেয়ে নিজের সর্বস্ব তোমার চরণে। আমার আকাশের বুকে বৃষ্টি হয়ে ঝরবে তুমি। সেই বৃষ্টির পানিতে ভিজবে এই পুরো শহর। আগলে রাখবো তোমায় নিজের শহরে। নাও মেহুপাখি তোমার জন্য এখন আমি কবিতা বলতেও শিখে গেছি। আচ্ছা মানুষ প্রেমে পড়লে নাকি কবিতা লেখে তাহলে এটা সত্যি আমি তোমার প্রেমে পড়ে গেছি। তবে যাই বলো তোমাকে হীনা একা একা আর সহ্য হচ্ছে না আমার। খুব শীঘ্রই আসছি আমি তোমার কাছে। আমার মেহু পাখি’র কাছে। যার জন্য আমার জন্ম!
বলেই আবার দাঁড়িয়ে পরল নির্ঝর। পুরো ঘরের দিকে তাকাল। ঘরের প্রত্যেকটা দেওয়ালে শুধু মেহেরিন’র ছবি। নির্ঝর মেহেরিন’র ছবির দিকে তাকিয়ে তার নেশায় হারিয়ে গেল!
.
মেহেরিন’র মৃত্যুর খবর দ্রুত ছড়িয়ে গেলো পুরো নেটওয়ার্কে। সব চ্যানেলের ব্রেকিং নিউজ এটাই। একটা বোম ব্লাষ্টে মারা গেছে মেহেরিন বর্ষা খান! সবাই বসে আছে অফিসের ভেতর অভ্র’র কেবিনে। নিচে পুলিশ এসে চেক করছে। মিডিয়ার লোকজন নিচে ভিড় করে দাঁড়িয়ে আছে। সবার এক প্রশ্ন, কিভাবে মারা গেল মেহেরিন বর্ষা খান?
অভ্র চুপচাপ বসে আছে, তার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। না পারছে কাঁদতে না পারছে কিছু করতে। ভাবতেই কষ্ট লাগছে এতোদিন যেই বোনকে আগলে রাখলো এই ৫ সেকেন্ড’র জন্য সেই সব কিছু তছনছ করে দিলো। কিছুই অবশিষ্ট রইল না তার জীবনে। অভ্র’র পাশে বসে আছে আনহা। তার মুখ খানা মলিন হয়ে আছে। কিভাবে সান্তনা দেবে সেই ভাষা নেই তার।
কাব্য, রোদ্দুর, ইহান বসে আছে চুপচাপ। ক্যাট কাব্য’র হাত খানা ধরে রেখেছে। নীলাশা জ্ঞান হারিয়েছে, নীল আর নিশি তার কাছে। সবার মাঝেই নিরবতা কাজ করছে। কেউ’ই কোন কথা বলছে না। না কান্না করছে।
হঠাৎ এক গার্ড দৌড়াতে দৌড়াতে এলো অভ্র’র কেবিনে। সে এসেই হাঁপাতে লাগলো। শুধু আহিয়ান তার দিকে তাকাল কারন আর কারো কোনো কিছুতে কোনো উৎসাহ নেই। আহিয়ান তাকে জিজ্ঞেস করল…
– কি হয়েছে?
– স্যার!
– কি হয়েছে, এমন করে হাঁপাচ্ছো কেন। নিচে সব ঠিক আছে।
– মে… মেহেরিন ম্যাম..
– মেহেরিন!
মেহেরিন’র কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে গেল। অভ্র চমকে উঠল। সে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইল গার্ডের দিকে। গার্ড তোতলাতে তোতলাতে বলল..
– মে মে মেহেরিন ম্যাম এর ভূত! মেহেরিন ম্যামের ভূত নিচে!
কথাটা শোনা মাত্রই সবাই ছুটল নিচে। অভ্র দৌড়ে নিচে আসল। নিচে আসা মাত্রই তার চোখ স্থির হয়ে গেল। চোখ দুটো কে বিশ্বাস করতে পারছে না সে। আনহা দৌড়ে এসে বলে উঠল..
– মেহেরিন!
সবাই এসে যেন চোখে তাক লাগিয়ে গেলো। সামনে মেহেরিন! সে তার লাল রঙের গাড়িটার ওপর বসে আছে। তার কোলে বিড়াল বাচ্চা টা, সে এক হাতে চকলেট খাচ্ছে আর অন্যহাত দিয়ে বিড়াল টাকে আদর করছে। এদিকে যে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে তাতে তার কোনো হুশ নেই। আশপাশ থেকে সাংবাদিকরা ছবি তুলতে লাগল তার। তারাও বেশ অবাক। মরা মানুষ আবার ফিরে এলো কি করে এটা তাদের বোঝার বাইরে। অভ্র ধীরে ধীরে হেঁটে মেহেরিন’র কাছে গেল। মেহেরিন সামনে কারো উপস্থিতি পেয়ে মাথা তুলে তাকাল। অভ্র কে দেখতে পেয়ে এক গাল হেসে বলে উঠলো..
– দা!
অভ্র’র মেহেরিন’র কথা শুনে মুচকি হেসে তার গালে হাত রাখল। অতঃপর তার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে বলল..
– ঠিক আছো তুমি!
– বিন্দাস আছি!
অভ্র খুশির কারনে আর কিছুই বলতে পারল না! তার মুখ দিয়ে কোনো কথাই বের হচ্ছিল না। সে দু’চোখ ভরে মেহেরিন কে দেখতে লাগলো। এদিকে মেহেরিন’র কথা শুনে নীল আর নিশি ছুটে এলো। মেহেরিন কে জীবিত দেখতে পেয়ে নীল তাকে জরিয়ে ধরল। তাকে অসংখ্য চুমু দিয়ে বলল..
– কিছু হয় নি তোমার বলো। এটা সত্যি তুমি, তাই না আদুরী।
– আমি কোনো ভূত না ঠিক আছে আর হ্যাঁ ভূত চকলেট খায় না। বুঝলে!
নীল হেসে তাকে বুকে জরিয়ে নিলো। একে একে নিশি, কাব্য, রোদ্দুর, আনহা, আহিয়ান সবাই এসে তাকে জরিয়ে ধরল। সবাই বেশ খুশি। এদিকে ক্যাট কে খুব চিন্তিত লাগছিলো। মেহেরিন ক্যাট এর সামনে দাঁড়িয়ে হেঁসে বলল…
– কি হলো মিয়াও ভাবী! আমি ফিরে আসায় খুশি হও নি তুমি!
ক্যাট মেহেরিন’র দিকে তাকিয়ে হেসে বলল..
– কি যে বলো না খুশি হবো না কেন অনেক খুশি!
বলেই মেহেরিন কে জরিয়ে ধরল।
আহিয়ান বলে উঠে..
– মেহেরিন এই ব্লাস্ট কি করে হলো আর গাড়িতে তো তুমি ছিলে, তাহলে..
মেহেরিন ক্যাট কে ছেড়ে আহিয়ান’র কাছে আসল। অতঃপর বলতে লাগল..
– রহস্য বুঝলে জিজু রহস্য। আমার জীবনটাই একটা রহস্য!
– মানে!
– মানে টা তো তোমাদের ক্যাট মেহেনজা বলবে তাই না মিয়াও ভাবী!
মেহেরিন’র কথায় সবাই চমকে উঠলো তার সাথে ক্যাট। সে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। কপালে ঘাম জমছে তার। বার বার শুকনো ঢোক গিলছে। মেহেরিন হেসে বলে উঠে…
– এতো ভয় কেন পাচ্ছ মিয়াও ভাবী!
কাব্য বলে উঠে..
– ভয়, ভয় কেন পাবে মেহেরিন!
– তাহলে মিয়াও ভাবী কে দেখতে এমন লাগছে কেন।
– মেহেরিন কি বলবি ভালো করে বল। কি বলছিস তুই এসব!
মেহেরিন ক্যাট এর সামনে দাঁড়িয়ে বলল..
– আমার গাড়ি কিভাবে ব্লাষ্ট হলো সেটা তোমাদের বলবে মিয়াও ভাবী! তাই না!
ক্যাট মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে, কাব্য কিছুতেই বুঝতে পারছে না মেহেরিন কেন বার বার ক্যাট এর কথা বলছে। এদিকে সবাই মুখেও এক প্রশ্ন ক্যাট কেন!
মেহেরিন মুচকি হেসে বলল..
– আচ্ছা সবার কনফিউশন আমি দূর করছি তবে তার আগে মিয়াও ভাবী কিছু বলবে মানে বলতে চাও তুমি!
– মে.. মেহেরিন আমি কি বলবো!
– এটাই যে আমাকে মারার জন্য তোমাকে টাকা কে দিয়েছিল!
ক্যাট বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন বলে উঠে..
– আবারও হেরে গেলে তুমি। কিন্তু একবার না বার বার। প্রথম তখন হারলে যখন গাড়িতে আমাকে মারার চেষ্টা করেছিলে, দ্বিতীয় বার তখন যখন আমার ঘরে এসে আমাকে ছুড়ি মারতে চাইলে আর তৃতীয় বার এখন যখন গাড়ি ব্লাস্ট করে আমাকে মারতে চাইলে।
কাব্য বলে উঠে..
– কি বলছিস এইসব, ক্যাট এইসব কেন করবে!
– হ্যাঁ তাই তো কেন করবে? কিন্তু সিরিয়াস কিলারদের কাজ কি কাব্য! টাকার জন্য মানুষ খুন করা, তো ক্যাট মেহেনজা কি বলবেন আপনি!
ক্যাট বলে উঠে..
– আমি আমি মানে..!
কাব্য অবাক তাকিয়ে আছে ক্যাট এর দিকে। ক্যাট কেমন যেন থতমত খেয়ে গেছে। তাকে দেখে কেমন জানি লাগছে তার।
মেহেরিন ক্যাট’র সামনে গিয়ে বলল..
– তুমি কি ভাবলে ক্যাট, তোমার সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। আচ্ছা তুমি কি জানো না কে আমি! মেহেরিন বর্ষা খান আমি। মাফিয়া গ্যাং’র লিডার আর তোমার সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই আমার কাছে। ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন ক্যাট তুমি বাংলাদেশে পা রাখার আগের রাতেই আমি তোমার সম্পর্কে সব জানতাম। এভরিথিং! তুমি কে, তোমার উদ্দেশ্যে, এখানে আসার কারন সব। এমনকি তুমি যে এখানে আমাকে মারতো এসেছো আমি তাও জানতাম।
ক্যাট অবাক চোখে তাকায় মেহেরিন’র দিকে। মেহেরিন হেসে কাব্য কে বলে…
– ক্যাট মেহেনজা,দ্যা মোস্ট ওয়ানটেড সিরিয়াল কিলার। যে কি না আমাকে মারার জন্য এখানে এসেছে। বুঝলি কাব্য!
সবাই অবাক হয়ে যায় এই কথা শুনে। তার মানে এই গোপন শত্রু ক্যাট ছিল। যাকে এতো ভালোবাসতো তারা। কাব্য’র তো যেন সময় সেখানেই থমকে গেছে। সে কি বলবে বুঝে উঠতে পারে না। তার পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যায়। সে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ক্যাট’র দিকে। ক্যাট মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কাব্য’র খুব ইচ্ছে করছিল ক্যাট কে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে “এই কাজ টা কেন করল সে” কিন্তু ক্যাট’র প্রতি তার ঘৃণা এখন তাকে কথা বলতে দিচ্ছে না।
মেহেরিন ক্যাট কে বলে..
– এখন নিশ্চয়ই এটাই ভাবছো আমি তোমাকে আমার বাসার এতো আদর যত্ন করে কেন রাখলাম। আসলে কি বলতো কথায় আছে বন্ধু কে অনেক কাছে রাখো আর শত্রু কে তো বন্ধুর থেকে ও আরো কাছে রাখো। আমিও ঠিক তাই করেছি তোমার গতিপথ সম্পর্কে জানলাম। তুমি কি কি করতে পারতে সেই সম্পর্কে জানলাম। আর রইল এই চিরকুট যা তুমি আমায় দিলে যাতে লেখা game over aduri! ( তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ) ঠিক’ই বলেছো গেম ওভার তবে আমার না তোমার! তোমার গেম ওভার হলো ক্যাট।
ক্যাট রেগে তাকিয়ে আছে মেহেরিষ’র দিকে। কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই ক্যাট একটা গান তাক করল মেহেরিন’র কপাল বরাবর। আর বললো…
– ইউ রং আদুরী! গেম আমার না তোমার ওভার হবে। আর তা এক্ষুনি!
তখন পেছন থেকে নিহা বলে উঠে..
– আরে আদুরীর মিয়াও ভাবী আগে পিছনে তো দেখো!
#চলবে….
#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#সূচনা_পর্ব