#Game_2
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩
– আই লাভ ইউ!
মেহেরিন এমন কথা শুনে অনেকটা অবাক হয়। তবুও বলে উঠে..
– আই লাভ ইউ টু!
নির্ঝর একথা শুনে চমকে উঠে..
– কিহহহহ কি বললে তুমি!
– কি বললাম!
নির্ঝর মেহেরিন’র সামনে দাঁড়ায়। মেহেরিন ফোন টা বের করে টিপতে থাকে। নির্ঝর বলে উঠে..
– তুমি বললে তুমি আমাকে ভালোবাসো!
– কখন বললাম?
– এই যে আমি তোমাকে মাত্র আই লাভ ইউ বললাম তখন!
মেহেরিন হেসে বলে..
– আমার কাজ হয়ে গেছে।
– মানে!
– মানে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে একটা অচেনা মেয়েকে আই লাভ বলে ইভটিজিং করার শাস্তি জানেন, আপনি আমাকে এই যে কথাটা বললেন আমি এটা রেকর্ড করেছি এখন এটা নিয়ে পুলিশে দেবো তিনি আপনার ব্যবস্থা করবে।
– তার মানে তখন তুমি আমার সাথে চালাকি করে উওর দিয়েছিলে!
– খুব স্মার্ট আপনি সহজেই বুঝে গেলেন।
বলেই মেহেরিন গাড়ির কাছে যেতে নিলো। তখন নির্ঝর পেছন থেকে বলে উঠলো..
– হেই মিস!.
– ওয়াট!
– তুমি এটা কিভাবে ভেবে নিলেন যে আমি তোমাকে ভালোবাসি এইটা বলেছি!
– মানে!
নির্ঝর কান থেকে ব্লুটুথ বের করে মেহেরিন কে দেখিয়ে বলে..
– চেক ইট আমি আমার মা কে এই কথা বলছিলাম!
– সিরিয়াসলি গফ বললে হয়তো মিথ্যে টা একটা মিথ্যে হতো।
– সরি আমার কোনো গফ নেই আমি আসলেই আমার মা কে বলেছি। কল করবো কথা বলবে তুমি। চাইলে বলে নিতো পারো।
– Whatever! রাস্তার সামনে থেকে গাড়ি সরান আমার লেট হচ্ছে।
– আমি কি ইচ্ছে করে রেখেছি নাকি গাড়ি চলছে না আমি কি করবো!
– পুরো রাস্তার এক পাশে আপনি দাঁড়িয়ে আছেন তো আরেক পাশে আপনার গাড়ি, মানুষ যাবে কোথা দিয়ে!
– আমি তো গাড়ির’র জন্য’ই মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছি। আমার গাড়ি আসার কথা হয়তো এখনো জ্যামে আটকে আছে তাই আসতে পারে নি।
– ….
– আচ্ছা একটা হেল্প করো না আমার একটু লিভ দাও।
– কিহ?
– আজব তো আমি তোমার দেশে নতুন, বিদেশ থেকে এলাম আর আমাকে সাহায্য করতে পারছো না এই বুঝি তোমাদের দেশের মানুষের কাজ।
– কোথায় যাবেন আপনি!
– বেশি দূর না কাছেই একটা ভার্সিটিতে যাবো আসলে আমি একজন সিঙ্গার, বাংলাদেশের গান নিয়ে রির্সাচ করতে চাই তাই এখানে এসেছি..
– হয়েছে হয়েছে এতো কথা না বলে গাড়িতে বসুন আমার লেট হচ্ছে।
– থ্যাংকু!
বলেই নির্ঝর গাড়িতে বসল। মেহেরিন তার পাশে বসে গাড়ি ড্রাইভ করতে শুরু করল। নির্ঝর বলতে শুরু করল..
– হাই আমার নাম নির্ঝর চৌধুরী মেঘ! ব্যাংকক থেকে এসেছি। ব্যাংকক আমার একটা গানের ব্যান্ড আছে।
black soul শুনেছ নিশ্চয়ই!
– না শুনি নি।
– তো কি এখন তো শুনলে! আচ্ছা তোমার নাম কি?
মেহেরিন কিছু না বলে গান বাজাতে লাগলো। অতঃপর নির্ঝর কিছু জিজ্ঞেস না করে গান শুনতে লাগলো আর বার বার আড়চোখে মেহেরিন’কে দেখতে লাগল। কিন্তু গান শেষ হবার পরও সেই গান আবার বাজতে লাগলো। তাও একবার না বার বার। নির্ঝর গান চেঞ্জ করতে গেলে মেহেরিন নির্ঝর’র হাত ধরে ফেলল।
– কি হয়েছে?
– এক গান কতোবার শুনবে চেঞ্জ করে দেই।
– না এটা আমার প্রিয় গান, আমি বারবার শুনবো এইটা।
– ওহ্ আচ্ছা। প্রিয় জিনিস দেখতে কখনো ক্লান্ত লাগে না বলো!
নির্ঝর’র কথা শুনে মেহেরিন তার দিকে তাকায়। কিন্তু কিছু বলে না। মেহেরিন গাড়ি এনে থামায় ভার্সিটির সামনে। নির্ঝর তাকে ধন্যবাদ দিয়ে নামতেই দেখে মেহেরিন ও নামে। নির্ঝর খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে..
– তুমি নামলে যে!
– আমিও এই ভার্সিটির স্টুডেন তাই!
– সত্যি তাহলে তো তোমার সাথে আমার রোজ দেখা হবে।
– এক্সকিউজ মি রোজ কেন দেখা হবে?
– যখন দেখা হবে তখন বুঝবে। বাই দ্যা ওয়ে..
এরমধ্যে একজন বলে উঠে..
– হেই মেহেরিন!
দুজনেই পিছনের দিকে তাকায়, দেখে একটা ছেলে তাদের দিকে আসছে। নির্ঝর ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে ছেলেটার দিকে। ছেলেটা একগাল হেসে মেহেরিন’র সামনে দাঁড়িয়ে বলে..
– কখন আসলে তুমি!
মেহেরিন শান্ত ভাবেই বলল..
– দেখতেই পাচ্ছ এখন এসেছি!
– মেহেরিন তুমি রেগে আছো।
– রেগে থাকার কারন!
– না তোমাকে দেখে মনে হলো তাই!
– নিরব আমার ক্লাসের লেট হচ্ছে বাই!
বলেই মেহেরিন চলে গেল। নির্ঝর বেশ বুঝতে পারল মেহেরিন ছেলেটার সাথে একদম কথা বলতে চায় না এদিকে সেই ছেলেটা মানে নিরব মেহেরিন’র পিছন পিছন যেতে লাগলো।
নির্ঝর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে মেহেরিন’কে যতদূর অবদি দেখা যায় দেখতে লাগল। হঠাৎ করেই তখন গাড়িতে শব্দ আসলো। নির্ঝর তাকিয়ে দেখল তার দল চলে এসেছে। নির্ঝর তাদের নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে চলে গেলো।
.
মেহেরিন ক্লাসে বসে স্যার’র কথা শুনছে এদিকে তার পাশের বেঞ্চেই বসে আছে নিরব। নিরব তাকে দেখেই যাচ্ছে। মেহেরিন’র খুব বিরক্ত বোধ হচ্ছে সে ক্লাস শেষ হওয়া মাত্রই বের হয়ে আসে ক্লাস থেকে। তার পিছন পিছন বেরিয়ে আসে নিরব।
– এই মেহেরিন শুনো না।
মেহেরিন বিরক্ত হয়ে বলে..
– কি?
– কথা বলছো না কেন আমার সাথে।
– কি কথা বলবো। শুনো নিরব আমি আগেই বলেছি তুমি শুধু আমার একটা ভালো বন্ধু ছিলে কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোমার প্রতি।
– বন্ধু ছিলাম!
– নিজের বন্ধুত্ব তুমি নিজেই হারিয়েছো।
– আমি তার জন্য সরি তো ইয়ার বলছি তো ভুল হয়ে গেছে।
– তুমি সুইসাইড অ্যাটেন্ড করার চেষ্টা করেছিলে।
– সেটা তো তোমার জন্য’ই
– এজন্য’ই বন্ধুত্ব হারিয়েছো তুমি!
– আচ্ছা মেহেরিন সব কিছু আবার শুরু করি একটা সুযোগ..
কিছু না বলেই মেহেরিন চলে আসতে নিলো। তখন হঠাৎ একটা গানের সুর মাইকে বেজে উঠল। গানের ক্লাস থেকেই গানের সুর টা আসছে। মেহেরিন দৌড়ে সেখানে গেল। অনেক ভিড় সেখানে! এরমধ্যেই গান বেজে উঠলো!
কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
মেহেরিন ভিড়ের পিছন থেকেই তাকে দেখার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই দেখতে পেলো না। অতঃপর মেহেরিন একটা টুলের ওপর দাঁড়িয়ে তাকে দেখল। তাকে দেখা মাত্রই মেহেরিন’র চোখ জোড়া বড় বড় হয়ে গেল। কারন এটা নির্ঝর ছিল। এদিকে নির্ঝর গিটার বাজাতে বাজাতে আবার গান গাওয়া শুরু করল…
ভুলভাল ভালবাসি,
কান্নায় কাছে আসি
ঘৃণা হয়ে চলে যাই থাকি না
কথা বলি একাএকা,
সেধে এসে খেয়ে ছ্যাঁকা
কেনো গাল দাও আবার বুঝি না
খুব কালো কোনো কোণে,
গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেনো আর কেউ শোনে না
গান গেয়ে চলে যাবো,
বদনাম হয়ে যাবো
সুনাম তোমার হবে হোক না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
মেহেরিন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হা হয়ে তাকিয়ে আছে নির্ঝর’র দিকে। হঠাৎ করেই নির্ঝরের চোখ পড়ে মেহেরিন’র ওপর। দুইজনের চোখাচোখি হয়। নির্ঝর গিটার বাজিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেহেরিন’র কাছে আসে। অতঃপর তার দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়। মেহেরিন তার হাত ধরে টুল থেকে নামে। নির্ঝর মেহেরিন’র চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে বলে…
যদি তুমি ভালোবাসো,
ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনো খানে রবে না
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে,
অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না
আমি গলা বেচে খাবো,
কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা হবে না
কারো একদিন হবো,
কারো একরাত হব
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
কথা হবে দেখা হবে,
প্রেমে প্রেমে মেলা হবে
কাছে আসা-আসি আর হবে না
চোখে চোখে কথা হবে,
ঠোঁটে ঠোঁটে নাড়া দেবে
ভালবাসা-বাসি আর হবে না
শত রাত জাগা হবে,
থালে ভাত জমা রবে
খাওয়া দাওয়া কিছু মজা হবে না
হুট করে ফিরে এসে,
লুট করে নিয়ে যাবে
এই মন ভেঙে যাবে জানো না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবেনা
গান শেষ হতেই মেহেরিন সেখান থেকে চলে আসে। সবাই হাত তালি দিতে থাকে। নির্ঝর গিটার টা রেখেই মেহেরিন’র পিছু পিছু দৌড়াতে থাকে।
#চলবে….