Happily_Married পর্ব ৪+৫

#Happily_Married 🔪
#Part_4
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


ভার্সিটির জন্য তৈরি হয়ে যেই আমি বের হতে যাবো তখনই বাবা হিটলারের মত এসে হাজির হলো।
কোথায় যাচ্ছিস?(হিমেল সাহেব)

ভার্সিটিতে যাবো।আর কোথায়?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

পনেরো দিন তুই কোথাও যাবি না।(হিমেল সাহেব)

মানে কি?এখন কি আমার লেখাপড়ার উপরেও তোমার নজরদারি চলবে নাকি?(আমি রেগে)

তোর উপর আমার বিশ্বাস নেই।যদি আবার পালাস।(হিমেল সাহেব)

বলছি তো বিয়ের আগ পর্যন্ত কোথাও পালাবো না!(আমি চিৎকার চেঁচামেচি করে)

সরি মা।ক্ষমা কর কিন্তু তুই কোথাও যাবি না বিয়ের আগে।বাড়িতেই থাকবি!(হিমেল সাহেব)

তোমার সব কথা বাধ্য মেয়ের মত শুনি বলে সব সময় জোর করো।মাঝে মধ্যে সত্যিই মনে হয় তোমাকে ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যাই।
বলেই রাগে গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।

আমি যা করছি তোর ভালোর জন্যই করছি।পিয়া তোর নোটস গুলো নিয়ে আসবে।আমি তোর প্রোফেসরদের কাছ থেকেও অনুমতি নিয়েছি।(হিমেল সাহেব হিয়ার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে)

আমি ঘুমাবো।(আমি কড়া গলায়)

হিমেল আর কিছু না বলে চলে গেলো।


চৌধুরী বাড়িতে
শিট আজকে লেট উঠে পড়েছি।কতো কাজ আছে।আর মাত্র পনেরো দিন পরে বিয়ে।(রামিম সাহেব খাবার টেবিলে বসতে বসতে)

বাবা।এতো চিন্তা করো না হাতে হাতে কাজ করলে ঠিক সব হয়ে যাবে।(আলিশা খাবার বাড়তে লাগলো)

আজকে হলোটা কি আলিশা?তোর ভাই আজকে সকাল সকাল অফিসে না গিয়ে সোফায় বসে বসে পেপার পড়ছে!(রামিম সাহেব ফিসফিস করে)

জানি না বাবা।সার্ভেন্ট বলেছে ও নাকি খুব সকালেই উঠে এখানে এসে বসেছে।এমনিতেই তো সকালে উঠে কিন্তু আজকে জানি কি হয়েছে একটু বেশিই সকালে উঠেছে।(আলিশা ফিসফিস করে)

চল গিয়ে দেখি।
বলেই রামিম সাহেব আর আলিশা গেলো।

খুক খুক।(রামিম সাহেব কাশি দিয়ে)

ও বাবা তুমি উঠে পড়েছো?(আলিফ পেপার রেখে)

কি হয়েছে?তুমি নাকি আজকে খুব সকালে উঠেছো।(রামিম সাহেব সোফায় বসতে বসতে)

হুম বাবা।আসলে বিয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে তো।(আলিফ)

কিহ?(আলিশা আর রামিম সাহেব একসাথে)

কি হয়েছে তোমরা এতো অবাক হচ্ছো কেনো?(আলিফ)

আলিশা আমি কি স্বপ্ন দেখছি?(রামিম সাহেব)

না বাবা এইটা সত্যিই!তোমার ছেলে যে কিনা বিয়ে থেকে একশো হাত দূরে থাকতো আজ সে বিয়ে নিয়ে এতো এক্সসাইটেড!(আলিশা অবাক হয়ে)

এই তোমরা কি কেউ আমার বান্ধবীর কাছে হিয়ার লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি তৈরি করতে দিয়েছো।ওর অ্যাসিস্ট্যান্ট আমাকে ফোন করে হিয়ার মাপ চাচ্ছে।(আলেয়া নিচে নামতে নামতে)

রামিম সাহেব আর আলিশা এক দৃষ্টিতে আলিফের দিকে তাকিয়ে আছে,,
কি হলো আলিফের দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?(আলেয়া)

ওকেই জিজ্ঞেস করো?(রামিম সাহেব আলিফকে দেখিয়ে)

আলেয়াও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,,,
হুম আমিই আন্টিকে লেহেঙ্গা আর জুয়েলারির কথা বলছি।আর তোমরা চিন্তা করো না।আমি কোথায়, কোন অনুষ্ঠান হবে সব ঠিক করে ফেলেছি।আর সেই অনুযায়ী বুকিংও করে ফেলেছি আর ইভেন্ট গুলো অর্গানাইজ করার জন্য আমি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির সাথে কথা বলে তাদের হায়ার করে ফেলেছি।আমি গেস্ট লিস্ট তৈরি করে ফেলেছি তোমরা একটু চেক করে নিও যদি তোমাদের কোনো গেস্ট থাকে।আর আমি কার্ড গুলোও ছাপানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছি।আর কিছু?(আলিফ একদমে)

সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।

আরও কিছু?(আলিফ আবারও)

হানিমুন!হানিমুন কোথায় করবি প্ল্যান করেছিস?(আলিশা শকড)

ওইটা হিয়া আর আমি মিলে ডিসাইড করে নেবো?(আলিফ)

তুই কখন এই গুলো ঠিক করলি?(আলেয়া অবাক হয়ে)

কালকে সারা রাত ধরে।(আলিফ)

এইজন্যই তোকে সকালে কেনো দেখা গেছে এইবার বুঝতে পারছি (আলিশা)

ইয়েস।কারণ কাল সারা রাত আমি ঘুমাই নি।(আলিফ)

বাবা আমরা কি কাজ করবো?তুই তো কিছুই রাখিস নি।(রামিম সাহেব)

কে বললো রাখি নি?রাখছি তো!তুমি সবাই ঠিক মত কাজ করছে নাকি দেখবে,আম্মু তুমি গেস্ট দের খেয়াল রাখবে,,আর আলিশা তুই সুন্দর করে ছবি তোলে এফবি তে পোস্ট করবি!ভাইয়া ইজ গেটিং Happily married,,। যাই আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি গিয়ে ঘুমাই।
বলেই আলিফ নিজের রুমে চলে গেলো।

আম্মু আব্বু কি হচ্ছে এসব?একজন বিয়ে করতে চাইছে না আরেকজন বিয়ের জন্য উতলা হয়ে গেছে।(আলিশা শকড)

কতো কিছু দেখার আছে এখনও এই বয়সে।চলো সবাই কাজে লেগে পরি।(রামিম সাহেব)

হুম।এই আজব জুটির কি হবে কে জানে?(আলিশা সোফায় বসে)


বিকেলে
আব্বু দুপুরে এসে খাবারের জন্য ডাক দিয়ে গেছে কিন্তু আমি খুলিনি। খাবো না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছি।একটুও আগেও নাস্তার জন্যে ডাক দিয়ে গেলো কিন্তু আমি খুলিনি।আজ খুব রেগে আছি আমি।আমার কোনো কথার কোনো দামই দেয় না।জীবনে কি বিয়েই সব?বিয়ে করলেই কি সুখে থাকা যায়?বিয়ে করাতে কি যে আনন্দ আমি জানি না।
তবে এই বিয়ে আমার তখনও পছন্দ ছিলো না এখনও পছন্দ না। বিয়ের কথা উঠতে না উঠতেই আমার জীবন থেকে আমার স্বাধীনতা হারিয়ে গেছে।নিজের রুমেও আমাকে পাহারা দিয়ে রাখছে।আমার কলেজে যাওয়া বন্ধ।সব হয়েছে ওই বিয়ের জন্য।(আমি মনে মনে রেগে)

কিছুক্ষণ পর ফোনটা বের করে আকাশকে(আমার আরেক বেস্ট ফ্রেন্ড) ফোন দিলাম।

হ্যাল্লো!নতুন বধূ।(আকাশ ফোন ধরে)

ফাজলামি আজকে কি তোর মগজে বাসা বাঁধছে?(আমি রেগে)

তোর গলার স্বর শুনে মনে হচ্ছে খুবই রেগে আছিস। যাই হোক ফালতু কথা বলে তোর রাগ উঠিয়ে নিজের কবর খুঁড়তে চাই না।(আকাশ)

গুড বয়।এখন বল কই তুই?(আমি)

শপিং এ যাচ্ছিলাম বাইক নিয়ে এখন রাস্তার পাশে দাড়িয়ে তোর সাথে কথা বলছি।কেনো?(আকাশ)

শপিং কেনো?(আমি অবাক হয়ে)

আরে সামনে তোর বিয়ে,পিয়া খবর দিলো।তোর পিচ্ছি কালের বন্ধু আমি আমাকে তো সেই ভালো দেখাতে হবে।তাই আগে থেকেই সব কিছুর তৈরি করতে হবে তো।(আকাশ এক্সসাইটেড হয়ে)

যেই পথে এসেছিস সেই পথে বাড়ি যা।(আমি)

মানে?(আকাশ)

কারণ তুই আমার বিয়েতে আসবি না?(আমি)

কেনো আসবো না?আমি সেই ছোটো বেলা থেকেই দেখতে চেয়েছি কোন সেই হতভাগা হবে যে তোর মত মেয়েকে তার স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করবে!(আকাশ)

থ্যাঙ্ক ইউ ফর দা ইনসাল্ট।আজ কাল যাকে দেখো সেই ইনসাল্ট করছে!(আমি)

ওয়েলকাম।আচ্ছা বাদ দে এইসব।এখন বল আমি আসবো না কেনো?(আকাশ)

কারণ
পরেই আকাশকে আমি আমার ব্যাক আপ প্ল্যান সম্পর্কে বলি।

তুই শুধরানোর মানুষ না।তুই জানিস এই প্ল্যান কতটা রিস্কি।(আকাশ)

জীবনটাই রিস্কি।এখন তোকে যা বলেছি তুই তাই তাই করবি!একটু এদিক ওদিক হলে কিন্তু তোর আর আমার জানাজা দিবে আমার বাবা।(আমি)

দেখ তুই তো আমার জীবনে ভয়ে দেখিয়ে আমার আত্মা গলা পর্যন্ত নিয়ে এসেছিস এখন আংকেলের কথা বলছিস।এইবার কিন্তু ভয়ে আমার আত্মা বের হয়ে আসবে।(আকাশ)

এইজন্যই বলছি।মনোযোগ দিয়ে কাজ করবি।কোনো সমস্যা যেনো না হয়।(আমি)

আচ্ছা।তবে একটা কথা।(আকাশ)

কি?(আমি)

আমি সেই তোর যখন নাক দিয়ে সর্দি পড়তো সেই কালের বন্ধু আর আমিই তোর বিয়েতে যাবো না।(আকাশ নেকা কান্না করে)

ইয়াক ছি:।কি বলছিস?আচ্ছা আচ্ছা তোর নেকা কান্না থামা।তুই আমার বিয়েতে না আসার বদলে আমি তোর বাইকের এক বছরের সার্ভিসএর টাকা দিবো।খুশি?(আমি)

এইটাইত আমি চাই।আচ্ছা যেহেতু ডিলটা হয়ে গেছে সেহেতু আমি এখন রাখছি।
বলেই আকাশ ফোন কেটে দিলো।

কি মীর জাফর টাইপ ফ্রেন্ড আমার!(আমি অবাক হয়ে)



সন্ধ্যায়
হিয়া দরজা খোল।(পিয়া দরজায় টোকা দিয়ে)

আমি দরজা খুলতেই ও হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকলো।

তুই আংকেলের সাথে ঝগড়া করেছিস?(পিয়া রেগে)

উনি কি করেছে জানিস না?(আমি রেগে)

তুই কি করেছিস তুই জানিস না?এর পরেও আঙ্কেল কি করে তোকে বিশ্বাস করবে?(পিয়া)

বিয়ের জন্য আমার সব কিছুর উপর উনি নজরদারি করছে।এইসব তোর চোখে পড়ছে না?(আমি)

বিয়ের জন্য উনি তোর উপর নজরদারি করছে না।উনি নজরদারি করছে তোর স্বভাবের কারণে।কারণ তুই তো উনাকে কোনো কারণ দেস নি উনাকে বিশ্বাস করার।বার বার উনাকে ভুল বুঝে গেলি।এখনও বুঝলি?তুই জানিস না তুই ছাড়া উনার কেউ নেই।তবুও তুই উনাকে কষ্ট দিস।তুই জানিস তুই খাস নি বলে উনিও কিছু খায়নি।তুই ভাবছিস তুই নিজেকে কষ্ট দিচ্ছিস,নিজেকে খারাপ বানাচ্ছিস কিন্তু এইসব করে তুই তোর বাবাকেই বেশি কষ্ট দিচ্ছিস।যা গিয়ে এখন আংকেলের সাথে খাবার খাবি।এখন জেদ ধরে থাকলে ইচ্ছামত মাইর খাবি?(পিয়া আমাকে টানতে লাগলো)

তুই জানিস তুই আমাকে এখন মাইর দিকে পরে তুই এর থেকে বেশি মাইর খাবি।(আমি)

জানি।তবুও চল।
বলেই পিয়া নিয়ে আমাকে বাবার পাশে খাবারের টেবিলে বসালো।
আমি আর বাবা একে অপরের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে দুজনই মুখ ফুলিয়ে বসে রইলাম।

আঙ্কেল এখন আপনিও!আর আমি কাউকে কিছু বলবো না।যদি তোমাদের এই যুদ্ধ না ভাঙ্গে তাহলে কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো আর আসবো না।বলে দিলাম।

এই দাড়া তুই চলে গেলি এই হিটলার বাবা থেকে আমাকে বাঁচাবে!(আমি পিয়ার এক হাত ধরে)

হুম মা।তুমি চলে গেলে এই অসভ্য মেয়েকে আমি কি করে সামলাবো!(হিমেল সাহেব পিয়ার আরেক হাত ধরে)

তাহলে এখন একে অপরকে খাইয়ে দাও।(পিয়া)

পরেই বাবা পিয়ার কথা শুনে আমাকে খাইয়ে দিলো।আমিও বাবাকে খাইয়ে দিয়ে বললাম,,
সরি আব্বু।

আব্বু আমার মাথায় হাত দিয়ে বললো
ইটস ওকে আমার লক্ষ্মী মা।

বাহরে আমাকেও কেউ খাইয়ে দাও।(পিয়া)

আয় তোকেও খাইয়ে দেই।(হিমেল সাহেব)

আমিও দোকান থেকে বিষ এনে খাইয়ে দেই।(আমি)

হ্যা হ্যা very funny।(পিয়া)


এক সপ্তাহ পর
বাড়িতে মেহমানদের আনাগোনা শুরু হয়ে গেছে। ও বাড়ি থেকেও অনেক লোকজনও পাঠিয়েছে বিয়ের কাজের জন্য।আমাদের বাড়িতে তো তেমন কোনো মানুষ নেই।আমার বাবার পক্ষের কোনো আত্মীয় স্বজন নেই।আর মার খবর জানিও না।তাই আত্মীয় স্বজনদের আহাজারি আমাদের বাড়িতে নেই বললেই চলে।তবে পাড়া প্রতিবেশীরা রয়েছে। তারা অনেক ভালো।আমার আব্বু একা বলে তার হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে।আজকাল এইরকম প্রতিবেশী খুব কমই পাওয়া যায়।পাবেল আংকেল আর আরেকজন আঙ্কেল মিলে বিয়ের বাজারের দায়িত্বে রয়েছেন।পরি আন্টি, আর বাকি সব মহিলারা রান্নাবান্না আর বাকি কি নিয়ম আছে সেগুলো লক্ষ্য রাখছে। পীয়াও আজ থেকে ভার্সিটিতে যাবে না।আর আমাদের নোটস গুলো আকাশ করবে।বেচারা এই নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলো কারণ ওকে ক্লাসে খুব কমই দেখা যেতো কিন্তু আমাদের কারণে ওকে এই কয়দিন রেগুলার ক্লাস করতে হবে।পিউ আপু সাজানোর ডিপার্টমেন্টে,এছাড়াও পার্লারের লোকও উনিই ঠিক করবেন।খুবই ব্যাস্ত সময় পার করছেন সবাই।এদিকে আমি আর পিয়া একটু পর পর রান্না ঘরে যাচ্ছি আর কিছু না নিয়ে এসে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে খাচ্ছি আর সবার কাজ কর্ম দেখছি।আমার অবস্থা এই রকম যার বিয়ে তার তাল নেই পাড়া প্রতিবেশীর ঘুম নেই।

কিছুক্ষণ পর দেখি কিছু কতো গুলো বাক্স এনে সোজা আমার রুমে ঢুকে গেল।সাথে বাবাও ছিলো,,
কি হলো বলা নেই কওয়া নেই?ডাইরেক্ট আমার রুমে ঢুকে পড়ল।(আমি ভ্রু কুঁচকে)

চল গিয়ে দেখি কি এনেছে?(পিয়া)

হুম।
পরেই আমি আর পিয়া রুমে ঢুকলাম।লোকগুলো বক্স গুলো আমার খাটে রেখে চলে গেলো।এতক্ষণে রুমে পরি আন্টি,পিউ আপুও চলে আসলো।আব্বু গিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো। এখন রুমে আমি,পিয়া,পরি আন্টি,পিউ আপু আর আব্বু।

আব্বু এইসব কি?(আমি ব্যাগ গুলো ঘাটাঘাটি করতে করতে)

তোর বিয়ের লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি।সব পাঠিয়ে দিয়েছে তারা!(হিমেল সাহেব)

আমি তো এমনি বলেছিলাম।তারা সত্যিই সত্যিই ডিজাইনার লেহেঙ্গা আর জুয়েলারি বানিয়ে পাঠিয়েও দিয়েছে। আশ্চর্য মানুষ তারা। যাই ডিমান্ড করছি তাই পূরণ করছে!এখন তো বিয়ে ভাঙ্গা আরো মুশকিল হয়ে যাবে(আমি মনে মনে)

কি হলো?গিয়ে দেখ তোর জিনিস পত্র কেমন হয়েছে?(পরি আন্টি)

পিয়া আমার বিয়ের লেহেঙ্গা বের করে বললো,,
হিয়া দেখ কতো সুন্দর তাইনা?

আমি বিয়ের লেহেঙ্গা দেখে অবাক হয়ে গেলাম।খুব সুন্দর করে বানানো হয়েছে।যেই বানিয়েছে উনি অনেক যত্ন নিয়ে বানিয়েছে।(আমি মনে মনে)

পিয়া দেখ জুয়েলারি গুলোও সুন্দর!(পিউ আপু)

হুম অনেক সুন্দর।(পিয়া)

তোমাদের জন্যও লেহেঙ্গা বানানো হয়েছে!আর এইগুলোর মধ্যে রয়েছে তা।(হিমেল সাহেব)

সত্যি আঙ্কেল।কোথায় দেখি!
বলেই পিয়া আর পিউ আপু খুশি হয়ে তাদের লেহেঙ্গা বাক্স খুললো।

তাদের হাসি মুখ যেনো আমার সহ্য হচ্ছিলো না।তাই আমি গিয়ে বেলকনিতে দাড়ালাম।
বেলকনিতে দাড়িয়ে রুমের ভিতর তাকিয়ে দেখছি বাবা কতো শখ করে নিজের মেয়ের বিয়ের জিনিস পত্র দেখাচ্ছে।উনার চোখে খুশির ঝলক।পিয়া,পিউ আপু পরি আন্টি সবাই কতো খুশি আমার জন্য।তবে আমি কি কোনো ভুল করছি বিয়েটা ভাঙার চেষ্টা করে?আমার কি বিয়েটা করে নেয়া উচিত!
পরেই চোখ বুজে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলাম
না না।এইসব সাময়িক সময়ের জন্য।এই খুশির জন্য আমি নিজের খুশি জলাঞ্জলি দিতে পারি না।আমি যা ভাবছি তাই করবো।
বিয়েটা আমি ভাঙবই।(আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে)


অন্যদিকে
আলিফ বেলকনিতে দাড়িয়ে দাড়িয়ে কফি খেতে খেতে,,,,
ওর জিনিস পত্র তো ও পেয়ে গেছে।এখনও কি বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে?যতই বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করো না কেনো হিয়া?এই বিয়ে তো হবেই!
।#Happily_Married🔥
#Part_5(#বিয়ে_স্পেশাল)💮
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


বিয়ের দিন
সবাই অনেক ব্যাস্ত একমাত্র আমি ছাড়া।কালকে গায়ে হলুদে এমন নাচ দিছি যা জন্য আজ কোমর ব্যাথা আর পা ব্যাথায় টনটন করছে।আমার বিয়েতে আমার নাচ দেখে সবাই অবাক হয়ে গেছে। অবশ্য নাচবো না কেনো?আজকে তো আমি এই বিয়ে ভাঙবো।তার সেলিব্রেট তো করতেই হবে।কাল রাত অনুষ্ঠানের পর যেই ভাবছি নাকে সরিষার তেল দিয়ে ঘুমাবো না তা না পিয়া সকাল সকাল নিজের নাকটা গলানোর জন্য চলে এসেছে।ওকে নাকি আব্বু বলছে আমাকে তৈরি করতে,,,

হিয়া উঠ না!(পিয়া আমাকে ঘুমের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে)

একটু ঘুমাতে তে না প্লিজ!(আমি বালিশ চাপা দিয়ে)

ভুলেও না। আটটা বাজে উঠে খেয়ে তারপর তৈরি হতে হবে তো।বর এসে পড়বে।(পিয়া টেনে তুললো)

আরে যখন ওই বর মহাশয় যখন আসে তখন ডাক দিস।উঠবো তখন।(আমি আবার বিছানায় শুয়ে পড়লাম)

হইছে তোর আবোল তাবোল বলা। যতো সব উঠ।(পিয়া)

সবাই আমার শত্রু।আমাকে একটু ঘুমাতেও দেয় না।
আমি ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।


চৌধুরী বাড়িতে
আমি তো ভাবতেই পারছি না।আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যে কিনা সব সময় বিয়েকে একটা মাথা ব্যাথা করা চ্যালেঞ্জ ভাবতো সে বিয়ে করতে যাচ্ছে।(পিয়াস দেয়ালে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে)

কি বললো আমি বিয়েকে একটা চ্যালেঞ্জ ভাবতাম?(আলিফ বিছানায় আধ শোয়া অবস্থায়)

মানে?(পিয়াস রুমে ঢুকে)

আমি এখনও বিয়েটা একটা চ্যালেঞ্জই ভাবি।ওই মেয়ে হিয়া বিয়ে ভাঙতে চায়।যে কোনো মূল্য ও বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে।আর এটাই আমার চ্যালেঞ্জ মনে হচ্ছে।ও যতই বিয়ে ভাঙার প্ল্যান করছে ততই আমার বিয়ে করতে ইচ্ছে করছে।(আলিফ)

তারমানে ও তোকে রিজেক্ট করছে।তুই কে?তুই কেমন দেখতে?তোর কাছে কি আছে?এইসব কিছুই মেয়েটার কাছে কোনো ব্যাপার না।বরং ও বিয়ে করবে না এইটাই সবচেয়ে বড় কথা।(পিয়াস ইমপ্রেস হয়ে)

হুম।ও আমাকে দেখেও নি।(আলিফ)

ওয়াও।তুই তো অনেক লাকি।(পিয়াস আলিফের কাধে হাত রেখে)

এখানে লাকির কি আছে?(আলিফ অবাক হয়ে)

তোর কাছে আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে বিনা স্বার্থ নিয়ে আসে নি।সবাই তোর গুড লুকস আর স্ট্যাটাস এর জন্য এসেছে।এই প্রথম কোনো মেয়ে তোর স্ট্যাটাস এর পরোয়াও করেনি।আর তোকে না দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে।(পিয়াস হাসতে হাসতে)

আলিফ পিয়াসের কথায় চিন্তায় পড়ে গেলো।

সত্যি তো ওই মেয়ে আমাকে না দেখেই রিজেক্ট করে দিয়েছে।অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আমার বাবার স্ট্যাটাস দেখেই বিয়ের জন্য রাজি হয়ে যেত। কিন্তু এই মেয়ে যখন থেকে বিয়ের কথা উঠেছে তখন থেকেই প্রাণ পণ দিয়ে চেষ্টা করছে বিয়ে ভাঙার।এই মেয়ে সত্যিই খুব আজব।

আলিফের চিন্তায় বাঁধ পরে পিয়াসের কথায়,,
আমি জানি তুই মেয়েকে ভালবাসিস না।তুই শুধু ওই মেয়েকে বিয়ে করে জিততে চাস।ওই মেয়ের কাছে হারতে তোর ইগুতে লাগবে।তবে একটা কথা বলছি ওই মেয়ে কিন্তু আর পাঁচটা মেয়ের মত না।পড়ে দেখা যাবে ওই মেয়ের কাছ থেকে জিততে গিয়ে না আবার নিজের মন হেরে বসিস।কারণ ওই মেয়ে এমন তোকে সহজে ভালোবাসবে না তবে তুই ঠিকই মেয়ের ভালোবাসার মায়ায় পরে যাবি। যাই অনেক হলো কথা আমি বরং গিয়ে একটু আঙ্কেলকে হেল্প করি।
বলেই পিয়াস উঠেই চলে গেলো।

আলিফ সেখানেই বসে পিয়াসের কথা গুলো চিন্তা করতে লাগলো,,
আমি ভালোবাসবো ওই মেয়েকে ইম্পসিবল।ওই মেয়ে কখনও আমার টাইপের হতে পারবে না।আর এই বিয়ের চ্যালেঞ্জে আমিই জিতবো।(আলিফ মনে মনে)


এক ঘন্টা পর হিয়াদের বাড়িতে
আমি প্যান্ডেলে বসে বসে আরাম করে খিচুড়ি খাচ্ছি তখনই কোথা থেকে যেন বাবা চলে আসলো,,

কিরে তুই এখানে বসে আছিস কেনো?(হিমেল সাহেব)

খাচ্ছি চোখে দেখো না।নাও তুমিও খাও।(আমি খেতে খেতে)

আমি খেয়েছি।কিন্তু রুমে বসে খেলে কি তোর কোনো সমস্যা?(হিমেল সাহেব)

রুমে বসে খেলে বিনোদন পাবো না।(আমি)

বিনোদন কোথায় পেলি তুই?(হিমেল)

এই যে সবাই মিলে কাজ করছে।কে কি করছে দেখছি এইটাই বিনোদন! জানো আব্বু নিজেকে রানী মনে হচ্ছে সবাই কাজ করছে আর আমি বসে বসে খাচ্ছি।(আমি) এক গাল হেসে

এইটাকে রানী বলে না।(হিমেল)

মানে?(আমি)

এইটাকে মালিক বলে।যে কিনা নিজে বসে থেকে সবাইকে কাজ করাচ্ছে। রানী হচ্ছে যে সবার কথা মন থেকে ভাবে,সবার খেয়াল রাখে,সবাইকে খুশি রাখে।এই জন্যই তো বাড়ির বউদের বাড়ির রাণী বলে।কারণ তারা সবার কথা মন থেকে ভাবে, সবার খেয়াল রাখে তাও আবার পরম যত্নে,সবাইকে খুশি রাখে।আর তাদের খুশিতেই তার খুশি।(হিমেল সাহেব)

তাহলে আমি তো ভুলেও রানী হতে চাই না।কারণ সবাইকে খুশি করার চেষ্টা আমি কোনো দিন করিও নি আর করবোও না।আর খেয়াল রাখা,,আমার খেয়ালই মানুষ রাখে আমি আবার রাখবো অন্য জনের খেয়াল।(আমি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে)

এখন বুঝবি না।কিন্তু পরে বুঝবি।আর এইসব তোর করতে হবে না।এইসব আপনাআপনি হয়ে যাবে।তুই বুঝতেও পারবি না যে তুই কখন আমার রাজকুমারী থেকে তাদের বাড়ির রানী হয়ে গেছিস।(হিমেল সাহেব)

তোমার রাজকুমারী?লাঠির ধরেই রাখো আর বলছো রাজকুমারী।(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

কারণ তুই কথা শুনিস না। এখনও শুনছিস না।(হিমেল সাহেব রেগে)

আবার কি করলাম?(আমি অবাক হয়ে)

যা গিয়ে তৈরি হ!(হিমেল সাহেব)

এখনও তো অনেক দেরি আছে।(আমি)

তুই যাবি না আমি লাঠি নিবো হাতে।(হিমেল সাহেব)

যাচ্ছি মিস্টার হিটলার।
বলেই হাত ধুয়ে সেখান থেকে চলে আসলাম।

প্লেট কে ঠিক জায়গায় রাখবে?(হিমেল সাহেব চিৎকার করে)

মালিক কাজ করে না।আর আমি রানী হওয়া থেকে মালিক হওয়াটাই ভালো মনে করি!(আমিও জোরে দৌড় দিয়ে)

একদিন তুই নিজে থেকেই রানী হবি।আমি জানি।(হিমেল সাহেব মুচকি হেসে)

চৌধুরী বাড়িতে
বাবা আমি কিন্তু প্রায় তৈরি।(আলিফ)

বাবা।মাত্র দশটা বাজে আমরা বারোটার দিকে বের হবে এতো আগে তৈরি হয়ে কি করবি?(রামিম সাহেব)

তোমাদের তাড়া দিয়ে তৈরি করতে হবে তো!(আলিফ)

এই ছেলে বিয়ে পাগল হয়ে গেছে।(আলেয়া বেগম)

ভাই আমাদের বলেছিস ঠিক আছে।আর কাউকে প্লিজ বলিস না।না হলে তোর যে রাগী ইমেজটা আছে ওইটা হাওয়া হয়ে যাবে।(আলিশা)

আরে আলিশা তোমার ভাইয়ার বিয়ে হাওয়া লেগেছে।এখন উনার আর কিছুর খবর নেই।তাই না দুলে রাজা।(পিয়াস মজা করে)

বেশি কথা বলছিস।আর এখন কেনো ওদের সাইড নিয়ে কথা বলছিস কেন?একটু আগে তুইই তো আমাকে বললি বরকে আগে তৈরি হতে হয় আর তুইই তো আমাকে তৈরি হতে সাহায্য করলি!(আলিফ রেগে)

কি করবো বল?তোকে কোনো দিন জব্দ করার কোনো সুযোগ পায়নি।আজ পেলাম তাই ছাড় দিতে ইচ্ছে করলো না। তো কেসা লাগা মেরা মাজাক।(পিয়াস হাসতে হাসতে)

বলছি।
বলেই আলিফ পিয়াসের পিছু ধাওয়া করলো।

ওদের দুষ্টামি দেখে সবাই হাসতে লাগলো।


হিয়াদের বাড়ি
পিউ মা!একটু পরেই বর যাত্রী চলে আসবে,,আর হিয়ামনি তৈরি হয়েছে!(হিমেল সাহেব)

আঙ্কেল আমি কিছুই জানি না।আমার তো এখন হাত পা ছড়িয়ে কাদতে ইচ্ছে করছে।(পিউ কাদো কাদো হয়ে)

কিন্তু কেনো মা?হিয়া চলে যাবে বলে।থাক মা কান্না করো না।(হিমেল সাহেব সান্তনা দিয়ে)

না আঙ্কেল।ওই জন্য তো বিদায়ের সময় কান্না করবো।এখন কান্না করলে বিদায়ে ওই অনুভূতিটা আসবে না।(পিউ অবাক হয়ে)

ও আচ্ছা।তাহলে কেনো কান্না করছো?(হিমেল সাহেব)

এই পর্যন্ত পার্লারের লোক হিয়াকে পাঁচ বার সাজিয়েছে।আর ও পাঁচ বারই সাজ ধুয়ে ফেলেছে।আপনি তো জানেনই বিয়ের সাজ দিতে কতক্ষন লাগে,কতো কষ্ট লাগে।(পিউ)

আমি কি জানবো মা বিয়ের সাজের কথা!(হিমেল সাহেব)

ও তাও তো ঠিক।আচ্ছা বাদ দিন।কিন্তু পার্লারের মেয়েদের এক একটার কান্না করার অবস্থা হয়ে গেছে।(পিউ)

কিন্তু ও এমন করছে কেনো?(হিমেল সাহেব)

এক বার বলছে সাজ অনেক ভারী হয়ে গেছে,একবার বলছে অনেক হালকা হয়ে গেছে,একবার বলছে লেহেঙ্গার সাথে মানায়নি,একবার বলছে জুয়েলারির সাথে মানায় নি।আঙ্কেল এখন কি করবো আমি?(পিউ)

আচ্ছা চলো আমি দেখছি।
বলেই হিমেল সাহেব আর পিউ হিয়ার রুমে গেলো।


হিয়ার রুমে
রুমে ঢুকেই হিমেল দেখলো পার্লার থেকে তিনজন লোক এসেছে আর এখন তাদের তিনজনই ফ্লোরে এক জন আরেকজনের কাধে হাত বসে আছে।দেখেই মনে হচ্ছে হিয়া তাদের অবস্থা নাজেহাল করে রেখেছে।আর উনি(হিয়া) নিশ্চিন্ত হয়ে লেহেঙ্গা পরে বিনা সাজ গয়নায় বেডে আসন পেতে বসে বসে ফোন টিপছে।

হিয়ামনি।(হিমেল সাহেব চিৎকার দিয়ে)

ওরে বাবা।(আমি বুকে থুথু দিয়ে)

এইভাবে কেউ ভয় দেখায়?একটু হলেই ফোনটা হাত থেকে পরে যাচ্ছিল এমনি কান্নাকাটি করে কমদামি একটা ফোন পেয়েছি।(আমি)

তুই এখনও তৈরি হোস নি। এখনও ফাজলামির মধ্যে আছিস?(হিমেল সাহেব)

আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি তখনই
পিয়া কোথা থেকে যেনো দৌঁড়ে এসে বললো
বর চলে এসেছে।

দেখ বর চলে এসেছে।আর তুই এখনও তৈরি হোস নি।(হিমেল সাহেব)

আমি অন্যদিকে মুখ করে আছি।যেনো আমার কোনো এক্সাইটমেন্ট নেই।

বরই তো এসেছে।(আমি🙄)

তোকে তো,,,আপনাদের ওকে সাজাতে হবে না খালি গয়না পরিয়ে দিন।(হিমেল সাহেব পার্লারের লোকদের)

কেল্লায়?আমি সেজে ছবি তুলবো না?(আমি ঠোঁট ফুলিয়ে)

সেই চিন্তা থাকলে আপনি তৈরি হতেন।এখন কোনো কথা না।আমার যেনো আর এখানে আসতে না হয়।(হিমেল সাহেব)

হিটলার বাবা।(আমি)

পরেই পার্লারের লোকেরা আমাকে গয়না পরিয়ে দিতে লাগলো,,পিউ আপু আর পিয়া বরের গেট ধরতে গেলো।


কিছুক্ষণ
আমি রুমে বসে আছি তখনই পিয়া আসলো।

জানিস তোর বর না দেখতে হেব্বি সুন্দর।(পিয়া)

আমি জানার কোনো ইচ্ছে নেই।(আমি)

তুইও না।এখন তারা খাবার খাচ্ছে একটু পরেই বিয়ে পড়ানো হবে।(পিয়া)

হুম।(আমি)

কিছুক্ষণ পর

কি হলো?কখন থেকে দেখছি ফোনের সাথে যুদ্ধ করছিস।কি হয়েছে?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

আকাশকে ফোন করার চেষ্টা করছি। ও গায়ে হলুদের আগে থেকেই ফোন বন্ধ করে বলছে,,

ও আসলে আমার ব্যাক আপ প্ল্যানের কি হবে?(আমি মনে মনে)

এতো শান্ত লাগছে কেনো ওকে?নিশ্চয়ই কিছু প্ল্যান করছে।(পিয়া সন্দেহের দৃষ্টিতে মনে মনে)


এক ঘন্টা পর
এই এক ঘন্টা পুতুলের মতো স্টেজে বসে আছি।একের পর একজন এসে ছবি আর সেলফি তুলে যাচ্ছে।আমি কোনদিনই এতো ধৈর্য্যশীল ছিলাম না।আমার মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে।আমার বরকে অন্য জায়গাতে বসানো হয়েছে।আমাকে এখানে আনা হয়েছে ছবি তোলার জন্য।তারপর আবার রুমে চলে যাবো সেখানেই বিয়ে পরাবে।অন্যসময় হলে সব কিছু উল্টে পাল্টে চলে যেতাম কিন্তু এখন কিছুই করতে পারছি না।

পিয়া আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো।একটু চল।(আমি ফিস ফিস করে)

এখন?(পিয়া)

প্রকৃতির ডাক তোকে বলে আসবে তো।যাবি নাকি বল।(আমি রেগে)

হুম হুম।চল।(পিয়া)

পরেই আমি আর পিয়া ওয়াশরুমে চলে গেলাম।আমি ওয়াশরুমের ভিতরে ঢুকে বসে আছি। এখান থেকে আর সহজে বের হচ্ছি না।বের হলেই আপু একটা ছবি তুলি,একটা সেলফি তুলি বলে সবাই ঘিরে ধরবে।এর চেয়ে ভালো বিয়ের আগ পর্যন্ত এখানেই বসে থাকি।
পিয়া বাহিরেই দাড়িয়ে ছিলো।অনেকক্ষন হলো হিয়া ভিতরে গেছে। ও এতক্ষন দাড়িয়ে দাড়িয়ে হিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিল। তখনই পিউ এসে,,

এই ফুলের ঝুড়িটা রাখ।বেশি হয়েছে ফুল গুলো। স্টোর রুমে রেখে দিস।
বলেই ফুলের ঝুড়িটা দিয়ে চলে গেল।

পিয়া ফুলের ঝুড়ি নিয়ে দাড়িয়ে ছিলো তখনই একটা ছেলে দৌড়ে এসে পিয়ার সাথে ধাক্কা খেল।পিয়া ধাক্কা খেয়ে নিচে পরে যেতে লাগলো তখনই ছেলে ওকে কোমর চেপে জড়িয়ে ধরলো আর ফুল গুলো ওদের উপর পড়ল,,খুবই রোমান্টিক একটা পরিস্থিতি তৈরি হলো।তখনই রোমাঞ্চ এর বারোটা বাজাতে এন্ট্রি নিলো হিয়া,,
আমি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই দেখি বাহিরে পিয়া আর একটা ছেলে একে অপরকে ধরে আছে,, তাও আবার চোখে চোখ রেখে।এই রোমান্টিক দৃশ্য দেখে আমি ভ্রু কুঁচকে,,

লা লা লালা,,লা লা লালা।(আমি গাইতে গাইতে)

আমার কাক কণ্ঠের গান শুনে তারা একে অপরকে ছেড়ে দূরে সরে আসলো,,

আসলো এতো রোমান্টিক পরিস্থিতি ছিল গান না দিলে ভালো দেখায় না।তাই নিজে থেকে একটু ছোটো প্রয়াস করলাম।(আমি ভ্রু উচুঁ করে)

আপনি আসলে ভাবী তাই না?(ছেলেটা)

না আমি হিয়া।এখনও ভাবীর পদে আমার প্রমোশন হয়নি।(আমি)

ছেলেটা হেসে বললো
আমি পিয়াস।যেহেতু আপনার ভাবী পদে এখনও প্রমোশন হয়নি তাই আমি আপনাকে হিয়ামনি বলেই ডাকি।যদি মাইন্ড না করেন।

একমাত্র আমার বাবাই আমাকে হিয়া মনি বলে ডাকে। যাই হোক আপনি ডাকলেও সমস্যা নেই (আমি)

আমরা কথা বলছি তখনই কেউ একজন এসে বললো বিয়ের জন্য আমাকে ডাকা হচ্ছে,,
এসে পড়েছে বলি হওয়ার সময়।চল।
বলেই পিয়ার দিকে তাকাতেই দেখি ও লজ্জায় লাল হয়ে গেছে।

হইছে আর লজ্জা পেতে হবে না।বিয়ে হচ্ছে আমার লজ্জা পাচ্ছিস তুই।এমন চলতে থাকলে নিজের কাছে নিজেই নির্লজ্জ হবো।
বলেই পিয়াকে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করলাম।

সত্যি আলিফ।এইবার তুই নিজের মন হারবি।আমি শিওর।
বলেই পিয়াসও ওদের পিছু পিছু গেলো।


বিয়ের সময়
কাজী সাহেব কি যেনো হাবিজাবি বলে আমাকে বললো,,
বলো মা কবুল।(কাজী)

না বলবো না।(আমি)

আমার এমন হটাৎ উত্তরে উনি খুবই অবাক হয়ে গেল।উনি কেনো সেখানে থাকা সবাই অনেক অবাক হয়ে গেল।আমার বাবা তো মাথায় হাত দিয়ে বসেই পড়লেন।

কেনো মা?তুমি কি এই বিয়েতে রাজি না!(কাজী)

রাজি তো।তবে আমার কিছু শর্ত আছে।আমার বর মশাইকে আসতে বলুন তার সাথে আমার কথা আছে।(আমি)

এইমেয়ে আমার মান সম্মান যা আছে ডুবাবে।(হিমেল সাহেব মনে মনে)

হিমেল সাহেব হিয়াকে কিছু বলতে যাবে তখনই রামিম সাহেব উনাকে আটকিয়ে,,
আপনার আর আমাদের যা করার ছিলো করেছি।এখন আমাদের ছেলে মেয়েদের বুঝতে দেন।জীবনে অনেক সিদ্ধান্ত ওদের একসাথে নিতে হবে।সব সময় ওদের সিদ্ধান্ত এ আমি বা আপনি থাকবো না।(রামিম)

পরেই হিমেল সাহেব দাড়িয়ে গেলো।

আলিশা ভাইকে ডেকে আনো।(রামিম সাহেব)

আনতে হবে না আমি নিজেই চলে এসেছি।
বলেই আলিফ রুমে ঢুকলো।আর পিয়াস দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। ও গিয়েই আলিফকে ডেকে নিয়ে এসেছে।
পিয়াস দাড়িয়ে আছে আর ওর সামনেই পিয়া ভয়ে থরথর করে কাপছে।

তুমি কাপছ কেনো?(পিয়াস পিয়ার কানে ফিসফিস করে)

আপনি জানেন না।কিন্তু আমি জানি হিয়া নির্ঘাত কিছু করবে।কিন্তু এখন আমি কি করে এত বড় ধমাকা সামাল দিবো।(পিয়া তুতলিয়ে)

পিয়াস পিয়ার মাথায় হাত রেখে বলল,,
এখন নিজের কাজ থেকে বিরতি নাও।কারণ তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডকে সামাল দেয়ার জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ড চলে এসেছে।(পিয়ার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে)

পিয়া অবাক হয়ে পিয়াসের দিকে তাকিয়ে আছে।পরেই লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেললো।


আমি উনার কণ্ঠ শুনে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি একটা তাল গাছ সমান অতি সুদর্শন পুরুষ এসে দাড়ালো। চেহারাটা আমার চেনা চেনা লাগছে।কিন্তু কোথায় দেখেছি মনে পড়ছে না।

আমি এসে পড়েছি।কি কথা আছে তোমার বলো!(আলিফ মুচকি হাসি দিয়ে)

আপনি?(আমি অবাক হয়ে)

যাক।মনে আছে তাহলে আমার কথা।(আলিফ মনে মনে খুশি হয়ে)

আপনি কে?আমি তো বরকে ডেকেছি?(আমি ভ্রু কুঁচকে🧐)

আলিফ হিয়ার কথা শুনে নিরাশ হয়ে গেলো।
সবাই বলতো আমার এমন চেহারা যে একবার দেখে সে কখনও ভুলে না।আর এদিকে এই মেয়ে আমাকে চিনতেই পারছে না।(আলিফ নিরাশ হয়ে)

(((হিয়া কিন্তু আলিফকে ভালো করে দেখেনি।গাড়িতেও হিয়া আলিফকে আড় চোখে দেখেছে।তখনও আলিফ অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়েছিলো।তাই হিয়ার মনে করতে সমস্যা হচ্ছে। তবে মনে পড়ে যাবে– লেখিকা)))

পিয়াস আলিফের নিরাশ চেহারা দেখে খুব কষ্টে নিজের হাসি আটকাচ্ছে।

আমি চারপাশে তাকিয়ে দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।কেউ কেউ তো আমার কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।

পাবেল আংকেল বাবাকে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে,,,

এখন আমার মনে হচ্ছে কেউ যদি সিরিয়ালের ধুম তানানা,,ধুম তানানা মিউজিকটা বাজিয়ে দিতো। তা এই পরিস্থতিতে খুব ভালই লাগতো


চলবে,,,

চলবে,,,,
আগামী পর্বে বিয়ের ধামাকা!😘

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here