#i_m_mafia_lover
#part_33
#sabiha_kh
৭ দিন পর ইমা ইসমাকে নিয়ে চলে গেলো আমেরিকা ।তারা আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে একটা ভাড়া বাসায় উঠে।।। ইমা ইসমা মিলে বাসাটা খুব সুন্দর করে সাজাই।
১ দিন পর,,,,,
সন্ধ্যাই ইমা ইসমা বারান্দায় বসে চা পান করছে গল্প করছে এবং নিউইয়র্ক এর সন্ধ্যার সৌন্দর্যময় পরিবেশ উপভক করছে।।।
ইমা – ইসমা কেমন লাগছে এখানে ??
ইসমা – ভালো লাগছে আম্মু।। তবে আমার ফ্রেন্ড দের একটু মিস করছি।।
ইমা – চিন্তা করো না।। এখানে তোমার ফ্রেন্ড হয়ে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।। কাল তোমাকে তোমার নতুন স্কুলে নিয়ে যাবো। আমি সব কথাবাত্রা বলে রেখেছি।।
ইসমা – আমি খুব এক্সাইটেড আম্মু ।। (হেসে )
ইমা – আ,,,, ইসমা চলো একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসি।। রাতের বেলা নিউইয়র্ক শহরটা দেখতে খুব সুন্দর লাগে।।
ইসমা – ও আম্মু মনের কথা বলেছো।। আমিও বলতে চাচ্ছিলাম একটু ঘুরে আসার কথা।। (হেসে)
ইমা – ok।। তাহলে আর দেরি কেনো চলো রেডি হয়ে নাও।।
ইসমা- Thank you আম্মু ।।।( ইসমা আনন্দিত সুরে ইমাকে জড়িয়ে ধরে বললো)
ইমা – হয়েছে হয়েছে । এখন চলো রেডি হবে।।।
ইসমা – ok চলো।।। (ইমা ইসমা রেডি হয়ে বের হলো)
তারা ঘুরে ঘুরে নিউইয়র্ক শহর টা দেখে এবং অনেক মজা করে।। ইমা ইসমা বসে আইসক্রিম খাচ্ছে।। হঠাৎ ইসমার চোখ পিছনে এক ফ্যামিলির দিকে যায় যেখানে রয়েছে বাবা মা আর মেয়ে।। ইসমা অবাক চোখে দেখতে থাকে দেখে বাবা তার মেয়েকে খুব আদর করে খাইয়ে দিচ্ছে।। আর মা মেয়েটার মুখ মুছে পরিষ্কার করে দিচ্ছে।। ইমা বিষয় টা খেয়াল করে। দেখে ইসমা মনটা ভার করে সেই ফ্যামিলিকে দেখছে।।। ইমা সামনে তাকালো দেখে এক জাগায় গরম গরম পপকর্ন বাজছে। ইমা ইসমার মন ঘুরাতে বললো – ইসমা !!! (ইসমা চমকে তার মায়ের দিকে তাকাই)
ইসমা – হম আম্মু বলো!!
ইমা – ইসমা পপকর্ন খাবে?? ওই দেখো গরম গরম পপকর্ন বাজছে।।
ইসমা – ok খাওয়া যায়। (হেসে)
ইমা – ok তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।( ইমা উঠে গেলো)
ইসমা পিছনে ঘুরে তাকালো দেখে সেই মা মেয়ে বাবা উঠে চলে যাচ্ছে।। ইসমা একটা মলিন হাসি দিয়ে মনে মনে বললো –
ইসমা – আমারও ইচ্ছা হয় এমন বাবা মার আদর একসাথে পেতে।। বাবা কোথায় তুমি ?? আমার কথা কি তোমার মনে পড়ে না?? আমি তো তোমাকে খুব মিস করি বাবা।।
ইসমার চোখে পানি চলে আসে।। ইসমা দেখে তার মা আসছে।। ইসমা তারাতারি চোখের পানি মুছে ফেললো।।
ইমা – এই নাও আমার প্রিন্সেস।।। (হেসে)
ইসমা তার মায়ের হাত থেকে পপকর্নের প্যাকেট নিল। এবং মা মেয়ে বসে খেতে শুরু করে ।।
ইসমা খেতে খেতে হঠাৎ তার চোখ রাস্তার ওই পার বাস স্টপে দাড়িয়ে থাকা এক লোকের উপর পড়ে।। ইসমা লোকটার চেহারা পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছিল না অন্ধকারের জন্য। এমন সময় একটা মোটর বাইক সেই লোকটির সামনে দাড়ায়। মোটর বাইকের হেডলাইটের আলো যখন লোকটার চেহারায় পড়ে ইসমা বিস্ফোরিত চোখে তাকায়।। এবং উত্তেজিত সুরে বলে –
ইসমা- ইশান বাবা!!! মা বাবা চলে যাচ্ছে।
ইমা পিছনে ঘুরে তাকাই দেখে মোটর বাইকে দুজন ছেলে যাচ্ছে ।।।
ইমা ইসমার দিকে তাকাই দেখে ইসমা সেই মোটরবাইকের দিকে তাকিয়ে আছে।। ইমা ইসমার হাতের উপর হাত রেখে বলল –
ইমা – ইসমা ও তোমার বাবা না। তুমি ভুল দেখেছ ।।।
ইসমা – না মা আমি ভুল দেখিনি আমি স্পষ্ট বাবাকে দেখেছি।।
ইমা – আচ্ছা সত্যি করে বলো তো তুমি কি তোমার ইশান বাবার কথার ভাবছিলে??
ইসমা মাথা নিচু করে বললো – হম।।
ইমা – হম এই জন্যই । বাবা কে নিয়ে ভাবছিলে তাই হয়তো তোমার হ্যালুসুলেশন হয়েছে।। মনে হয়েছে ওটা তোমার বাবা ।। আচ্ছা আমার সোনা মেয়েটা মন খারাপ করো না।। এখন চলো আমরা বাড়িতে যায়।। (ইসমার কপালে চুমু দিয়ে বললো )
ইসমা – হম চলো।।।( মুখ ভার করে)
Time Skip
ইসমা নিজের বিছানায় শুয়ে সিলিংফ্যান এর দিকে তাকিয়ে মনে ভাবলো সে রাস্তার ওইপারে ইশান কে দেখেছে সেটা হ্যালুসুলেশন হয় কি ভাবে ।
ইসমা – না আমি ভুল দেখিনি ওটা বাবাই ছিল।।।
এমন সময় ইসমার রুমের দরজা খুলার শব্দ। ইসমা তারাতারি চোখ বন্ধ করে ।। ইমা রুমে এসে দেখে ইসমা ঘুমিয়ে আছে।। ইমা ইসমার কপালে চুমু দিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে চলে গেলো ।
পরের দিন সকালে,,,,
ইমা – ইসমা নাশতা রেডি চলে আসো।।
ইসমার আজ প্রথম দিন স্কুলে। ইসমা রেডি হয়ে এসে খাবার টেবিলে বসলো।।।
ইমা – নাও নাও নাশতা করে নাও । ( ইমা বাইরে তাকালো দেখে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে আছে।।। ) কি অবস্থা আজকে ওয়েদারের । আল্লাহ জানে ঝর উঠবে নাকি।।
ইসমা – আম্মু আমার খাওয়া হয়ে গেছে।।
ইমা – আমারও শেষ।। চলো তোমাকে স্কুলে দিয়ে আমি মেডিকেল কলেজে যাব।।।
ইসমা- ওকে চলো।
Time Skip
ইমা – hello sir,,,
Sir – mis Ima how are you ??
ইমা – I’m fine sir…( তারা ইংলিশে কথপোকথন আপনদের বুঝার জন্য বাংলায় লিখলাম ) এটা আমার মেয়ে ইসমা।।
স্যার – hello ইসমা।। কেমন আছ?? (মুচকি হেসে)
ইসমা – জী স্যার ভালো আছি। (হেসে)
স্যার – আজ তোমার স্কুলে প্রথম দিন। চলো আমি তোমাকে তোমার ক্লাসে নিয়ে যায়।।
ইমা – ok স্যার এখন তাহলে আমি আসি।।
স্যার – ok মিস ইমা ।। চিন্তা করবেন না।আমাদের স্কুলের স্যার ম্যাডামরা ছেলে মেয়েদের সাথে খুব সুন্দর বন্ধু সুলোব ব্যাবহার করে ।।
ইমা – thank you স্যার।।। ইসমা মামুনি শুনো এখন আমার যেতে হবে তুমি নিজের খেয়াল রাখবে । এবং মন দিয়ে পড়া সুনা করবে স্যার ম্যাডামদের কথা শুনবে ওকে??
ইসমা – ok।। তুমি তো আমাকে নিতে আসবে না !!
ইমা – হম আসবো মামুনি।।(বলে ইসমার কপালে চুমু দিল)
স্যার – ইসমা চলো তোমার ক্লাসে নিয়ে যায়।।
ইসমা- চলুন স্যার।।।
স্যার ইসমাকে তার ক্লাসে নিয়ে গেলো।। ইমা বাইরে আসে দেখে ঝম ঝম করে বৃষ্টি হচ্ছে।।
ইমা – ওহ্ আল্লাহ আর কিছুক্ষণ পরে দিতে বৃষ্টি টা।। যায় হোক এর মধ্যেই এখন যেতে হবে।।
ইমা ব্যাগ থেকে ছাতা বের করে ।। এবং ছাতা খুলে বৃষ্টির মধ্যেই যেতে লাগে। ।। ইমা স্কুলের বাইরে এসে মোর ঘুরতেই হঠাৎ করো সাথে ধাক্কা লাগে।। ইমার হাত থেকে ছাতা পড়ে যায় এবং ইমার পা স্লিপ করে । ইমা পড়ে যেতে লাগলে কেও ইমার হাত টেনে ধরে।।। ইমা হতভম্ব হয়ে সামনে তাকাই । ইমা সামনের মানুষটাকে দেখে একদম স্তম্ভিত হয়ে যায়।।
চোখে গোল আকৃতির চিকন ফ্রেম এর সাদা কাচের গ্লাস। পড়নে সাদা শার্ট জিন্সের প্যান্ট।। পায়ে সাদা জুতা। হাতে কালো চেনের ঘড়ি ছাতা ধরে আছে তার মাথার উপর ।।আরেক হাত দিয়ে ইমার হাত ধরে আছে।।
ইমা – ইশান!!!! (মনে মনে)
ইমার বুকের ভিতর যেনো উথাল পাতাল হতে লাগে।।। ইমা নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।।।
ইমা তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল।।
– সরি মিস আমি দেখতে পায়নি । আসলে একটু জলদির মধ্যে আছি।।
ইমার কানে যেনো কোনো কোথায় যাচ্ছিল না।। অপলক ভাবে তাকিয়ে শুধু দেখছিল।।
ইমা – ইশান !!(কান্না ভরা সুরে)
ইমা ঈশানের কাছে আসে।। এবং দুই হাত দিয়ে ইশান বলে আলতো করে গালে হাত রাখে।।
ইশান একটু বিরক্তি নিয়ে বললো – কি করছেন আপনি?? আর আপনি আমার নাম জানলেন কি করে?? আমার তো আপনার সাথে এর আগে কখনো দেখা হয়েছে বলে আমার মনে হয়না।।
ইমা – ইশান আমি ইমা।। তুমি আমাকে চিনতে পারছো না!!! (ইশান ইমার হাত তার গাল থেকে সরিয়ে দিলো)
এমন সময় সামনে থেকে একটা ছেলে জোরে বলে উঠলো।
– এই ইশান ভিতরে চল আমার ক্লাস নেওয়ার টাইম হয়ে যাচ্ছে।। (ঈশানের বন্ধু রেন)
ইশান – তুই যা আমি আসছি।।
ইমা – ইশান তুমি সত্যি আমাকে চিনতে পারছো না??
ইশান – দেখুন ম্যাডাম আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।।। আমি আপনাকে চিনি না।। রাস্তা ছাড়ুন আমার ক্লাস নেওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছে।। (একটু বিরক্তি নিয়ে)
ইমা খুব অবাক হলো এবং আসতে করে সরে দাঁড়ালে ইশান চলে যায় । ।।
রেন – কে রে ওই মেয়েটা তোর গালে হাত দিল ব্যাপার কি ???
ইশান – আরে বাদ দে তো।। চিনি না জানিনা আমাকে বলে আমি ইমা আমাকে চিনতে পারছো না।। জীবনে চোখে দেখলাম না তাকে বলে আবার চিনব!!! (একটু রাগ হয়ে)
ইমা মাটি থেকে ছাতা তুলল এবং মনে মনে বললো – আমি কোনো ভুল করলাম না তো।। নাহ্ এটা ইশান।। তার মানে গত কাল ইসমা ভুল দেখেনি সে ইশান কেই দেখেছে।।। কিন্তু ইশান আমাকে চিনতে পারলো না কেনো।। আর ইশান এইখানে আসলো কিভাবে??
ভাবতেই পিছন থেকে কেও বলে উঠলো – বৃষ্টি থেমে গেছে।।
ইমা পিছনে ঘুরে তাকালো দেখে আকাশ দাড়িয়ে আছে।।
ইমা – আকাশ !!! (অবাক হয়ে )
আকাশ – কেমন আছেন ম্যাডাম??
ইমা – ভালো কিন্তু এসব কি আকাশ?? তার মানে তুমি আমাদের মিথ্যা বলেছ।। তুমি এটা কি ভাবে করতে পাড়লে আকাশ?? (রাগান্বিত সুরে)কেনো করলে এমন ??? ( আকাশ একটা কোথাও বলেনা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে থাকে) তুমি জানো আমরা সবাই কতো টা ভেঙে পড়েছিলাম । আমাদের ইমোশনের সাথে কেন খেললে তুমি জবাব দাও??? আর হ্যা ঈশানের কি হয়েছে ?? ইশান আমাকে চিনতে পারলো না কেনো ??? আকাশ চুপ করে থেকো না প্লিজ বলো।। (একটু জোরে)
আকাশ – ম্যাডাম শান্ত হোন।। আমি যায় করেছি স্যারের ভালোর জন্য করেছি।।
ইমা – ভালোর জন্য!! কি ভালোর জন্য শুনি??
আকাশ – ম্যাডাম এখন আমি আপনাকে কিছু বলতে পারবো না।। আমার হাতে সময় কম এখন যেতে হবে আমাকে।। শুধু আপনাকে এটুকুই আমি জানাতে চাই সেটা হলো স্যারের পিছনের কোনো কথা মনে নেই । আর দয়া করে স্যারকে মনে করানোর চেষ্টা করবেন না।। স্যারের মাথায় যদি চাপ পড়ে স্যার হয়তো আর বাঁচবে না।।। আমি নিজেও স্যারের কাছ থেকে একটু দূরত্ব বজায় চলি।। আপনার ফোন নম্বর টা দিন আমি আপনাকে সময় বের করে কল করবো । আর আপনি যদি চান তাহলে সরাসরি দেখা করে সব কথা বলা যাবে ।
ইমা আকাশকে তার ফোন নাম্বার দিলো।। এবং বললো –
ইমা – আকাশ আমরা সরাসরি কথা বলবো সময় বের করে কল করে আমাকে বলো কোথায় বসে কথা বলতে চাও।।
আকাশ – ওকে ম্যাডাম।। আমি আসি।।।
আকাশ চলে গেলো।। ইমা ঈশানের কথা ভাবতে ভাবতে তার মেডিকেল কলেজে চলে গেল।।।
#i_m_mafia_lover
#part_34
#sabiha_kh
– hi আমি নিয়া।। ( ইসমার ক্লাসমেট ইসমার দিকে হাত বাড়িয়ে বললো)
ইসমা – hi….( হাত মিলিয়ে)
নিয়া – আমাদের স্কুলে তাহলে ২ জন বাংলাদেশি হলো ।
ইসমা – দুইজন মানে ?? আরো একজন আছে বুঝি?? (একটু অবাক হয়ে)
নিয়া – হম আছে ।। উনি হচ্ছেন আমাদের মিউজিক টিচার।।। স্যার খুব সুন্দর পিয়ানো বাজাই।। আজ অবশ্য স্যারের ক্লাস আছে।। জানো স্যার খুবই কিউট দেখতে । আমাদের সাথে খুব সুন্দর করে কথা বলে । তুমি গেলেই দেখতে পাবে।। (হেসে )
ইসমা – ok।। (মুচকি হেসে)
Time Skip
ইমা ক্লাস করছে ।। ইমার ক্লাসে কোনো কোন মন নেই ।। সে আকাশের বলা কথা গুলো নিয়ে ভাবছে। হঠাৎ ইমার ইসমার কথা মনে হলো –
ইমা – ইসমা ইশান কে দেখে যদি আবেগী হয়ে কান্নাকাটি করে!! ইশান তো ইসমাকে চিন্তে পারবে না।। আল্লাহ এখন কি হবে।?? না না আমার এখুনি ইসমার স্কুলে যেতে হবে।।। সব কিছু বিগড়ে যাওয়ার আগে আমাকে ওখানে পৌছাতে হবে।।
ইমার ক্লাসের স্যার চলে গেলে ইমা দ্রুত মেডিকেল কলেজ থেকে বের হয়ে ট্যাক্সি নিয়ে চলে গেল।।।।
এদিকে ইসমার ক্লাস শেষ হলে সবাই বের হয়ে চলে যেতে লাগে।।
ইসমা – নিয়া সব ক্লাস কি শেষ??
নিয়া- হম সব ক্লাস শেষ । তবে মিউজিক ক্লাস বাকি আছে ।। এখন মিউজিক ক্লাস শুরু হবে চলো যাই।।। (হেসে)
নিয়া ইসমাকে নিয়ে মিউজিক ক্লাসের দিকে যেতে লাগে।।। মিউজিক ক্লাসে আসার আগেই পিয়ানোর মিষ্টি সুর কানে ভেসে আসে ইসমার।। ইসমা নিয়ার দিকে তাকাই নিয়া মুচকি হেসে বলল –
নিয়া – স্যার সব সময় আমরা ক্লাসে ঢুকার আগেই পিয়ানো বাজতে শুরু করে ।।। বলতে পারো স্যার পিয়ানো বাজিয়ে আমাদের ক্লাসে আসতে বলে।। তারাতারি চলো এখন।।।( মুচকি হেসে)
ইসমা ক্লাসের সামনে এসে দাড়াতেই দেখে স্যার পিয়ানো বাজাচ্ছে এবং সব স্টুডেন্টরা মন দিয়ে পিয়ানোর সুর শুনছে।।। ইসমা স্যারের চেহারা তখনো দেখতে পায়নি।।
নিয়া ইসমার দিকে তাকাই দেখে ইসমা তাদের স্যারের দিকে তাকিয়ে আছে।।
নিয়া – কি হলো ইসমা?? ভিতরে চলো??।
বলতেই ইশান মাথা ঘুরিয়ে ইসমার দিকে তাকালো।। ইসমা ইশান কে দেখে হতবাক হয়ে গেলো।। ইসমার চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারল না। নিয়া এবং অন্যান্য সবাই ইসমাকে কাদতে দেখে রীতিমত অবাক হয়ে গেলো।। ইশান উঠে ইসমার কাছে আসে এবং হাঁটু ভেঙে বসে ইসমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো –
ইশান – তুমি কাদঁছো কেনো?? আমাকে কি ভয় পাচ্ছো?? দেখো আমাকে ভয় পেও না আমি একদম কাওকে বকা দেইনা। (মুচকি হেসে)
বলতেই ইসমা ইশান কে ঝাপটে ধরলো। এবং কান্না করতে করতে বলল –
ইসমা – বাবা,,,,,!!!( চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে বললো )
ইশান ইসমার মুখে বাবা ডাক শুনে অবাক হয়ে গেলো ।
ইসমা – তোমাকে খুব মনে পড়ছে বাবা।। কোথায় ছিলে তুমি?? এত দিন আসনি কেনো?? আমার কথা কি তোমার একদম মনে পড়েনি?? (কান্না সুরে)
ঈশানের বুকের ভিতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো ইসমার কথা শুনে।।। এমন সময় ইমা আসে দেখে ইসমা ইশান কে জড়িয়ে ধরে কাদঁছে। ।।
ইমা রুমের ভিতরে ঢুকে ইসমা বলে ডাক দেই।। ইসমা ইশান কে ছেড়ে কান্না ভরা চোখে ইমার দিকে তাকালো।। ইশান ও ইমার দিকে তাকালো।।
ইমা ইসমাকে ঈশানের কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে এসে বললো –
ইমা – sorry স্যার।। আমার মেয়ে আমার মতোই ভুল করে ফেলেছে চিন্তে।। কিছু মনে করবেন না ।
ইসমা ইমার দিকে তাকিয়ে বললো – আম্মু তুমি স্যার কেনো বলছো ওটা তো আমার বা ,,,,,, (বলতেই ইমা ইসমার মুখ চেপে ধরে।।)
ইমা – স্যার আমি ইসমাকে নিয়ে যাচ্ছি।। (ইশান কোনো কথা বললো না ইসমা ইমাকে শুধু অবাক হয়ে দেখছিল)
ইমা ইসমা কে নিয়ে দ্রুত ক্লাস থেকে বের হয়ে চলে গেলো।। ইশান দীর্ঘ একটা শ্বাস ছেড়ে চোখে হাত দিতেই দেখে চোখে পানি।।
ইশান মনে মনে বললো – এগুলো কি হচ্ছে আমার সাথে?? আমি কাদছি !!!আচ্ছা মেয়েটার কথা শুনে আমার বুকের মধ্যে এমন কেনো হলো??? (চিন্তিত হয়ে)
ভাবতেই স্টুডেন্টরা বলতে লাগে- স্যার ক্লাস করবেন না??
ইশান – হম করবো। চলো শুরু করা যাক।।
এদিকে ইমা ইসমাকে কে নিয়ে স্কুলের বাইরে আসতেই ইসমা ইমার হাত থেকে নিজের হাত ঝাটকা দিয়ে সরিয়ে নিয়ে রেগে বললো –
ইসমা- তোমার কি হয়েছে আম্মু?? এখনো কি তুমি বলবে আমি চোখে ভুল দেখেছি?? আম্মু কেনো বাবার কাছ থেকে আমাকে নিয়ে আসলে?? তুমি কি চাও না বাবা আমাদের সাথে থাকুক ??। (কান্না সুরে)
ইমা ইসমার চোখ মুছে দিয়ে বললো – ইসমা তুমি আমাকে ভুল বুঝছো ।। আসলে তোমার বাবার কিছু মনে নেই। তোমাকে আমাকে সবাইকে ভুলে গেছে।।।
ইসমা – মানে ?? আম্মু তুমি এগুলো কি বলছো?? (হতবাক চোখে তাকিয়ে)
ইমা – আমি সত্যি বলছি।। চলো বাড়িতে যায় তারপর তোমাকে সব বুঝিয়ে বলবো।।
ইমা টেক্সী ডাকলো এবং ইসমাকে নিয়ে বাড়িতে চলে গেলো।।
Time Skip
ইশান স্কুল থেকে বাসায় ফিরে নিজের রুমে এসে ধাপ করে বিছানায় বসলো।। ঈশানের মাথায় শুধু ইমা ইসমার বলা কথা গুলো ঘুরছিল।।
ইশান – আমার এমন কেনো হচ্ছে।। আমি কি ওদের চিনি?? যদি ওদের চিন্তামি তাহলে কেনো মনে পড়ছে না । ও আল্লাহ মাথা টা মনে হচ্ছে ছিঁড়ে পরবে।। (মাথা ধরে বললো)
এমন সময় ঈশানের ফোনে কল আসে। ইশান ফোন হাতে নিয়ে দেখে আকাশ।। ইশান ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো।।
ইশান – বলো আকাশ !!
আকাশ – কি করছো ভাইয়া??
ইশান – বসে আছি।। আচ্ছা শুনো তোমাকে আমার একটা কথা জিজ্ঞেস করার আছে।।
আকাশ – হম বলো ভাইয়া।।
ইশান – আচ্ছা বাংলাদেশে কি আমার কারো সাথে বিয়ে হয়েছিল।। মানে আমার স্ত্রী সন্তান ছিল???( সন্দেহ সুরে)
আকাশ বুঝতে পড়লো নিশ্চয় কিছু একটা হয়েছে।।
আকাশ – ভাইয়া হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলে যে??
ইশান – আজ খুব আজব একটা ঘটনা ঘটেছে আকাশ।। (ইশান আকাশ কে সব খুলে বললো ) আমি সত্যি খুব বাজে ফিল করছি আকাশ।। আমি অনেকখন থেকে চেষ্টা করছি মনে করার।। কিন্তু,,,,,,,
বলতেই আকাশ বললো – ভাইয়া তুমি অযথা এগুলো নিয়ে ভাবছো। দেখো অসুস্থ হয়ে পড়বে বলছি।। তুমি এগুলো নিয়ে ভেবো না প্লিজ।। এমন কিছুই না।।। হয়তো ওরা চিনতে ভুল করেছে।
ইশান – মা নাহয় ভুল করেছে । কিন্তু পিচ্ছি মেয়েটা ?? পিচ্ছি মেয়েটা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরলো তখন কেমন আজব একটা মায়া কাজ করছিলো ভিতরে।। জানো আকাশ পিচ্ছি মেয়েটার কথা শুনে আমার বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠছিলো আমার চোখ দিয়ে কখন যে পানি গড়িয়ে পড়ছে আমি বলতেই পারবো না ।
আকাশ – ভাইয়া দেখো তুমি এগুলো নিয়ে আর ভাববে না।। আচ্ছা শুনো আমি একটু ব্যাস্ত আছি তোমার সাথে পড়ে কথা বলছি।।
ইশান – ok ।।
আকাশ তারাতারি ফোন কেটে দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে চিন্তিত সুরে বলল –
আকাশ – ও আল্লাহ স্যারের যদি কিছু হয়ে যায়,,,!! আল্লাহ তুমি সাহায্য করো।। না না আমার ইমা ম্যাডামের সাথে কথা বলতে হবে।। আমি স্যারের কিছু হতে দিবো না ।। (আবেগী সুরে)
আকাশ ইমার নাম্বারে কল করলো ।।
এদিকে ইমা ইসমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পারাচ্ছে এমন সময় ফোন বেজে উঠে ।। ইমা ফোন হাতে নিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরলো।।
ইমা – hello ,,,
আকাশ – ম্যাডাম আমি আকাশ।। ম্যাডাম আপনার সাথে কথা বলতে চাই।। আপনি (,,,,,) জাগায় চলে আসেন আমি যাচ্ছি।।
ইমা – ok আকাশ আমি আসছি।।
ইমা ফোন কেটে দিয়ে ইসমার কাছ থেকে উঠে নিজের রুমে গিয়ে রেডি হয়ে বের হলো ।
Time Skip
ইমা চলে আসলো সেই জাগায়। দেখে আকাশ বসে আছে।। আকাশ ইমাকে দেখতে পেয়ে উঠে দাড়ায়।।
আকাশ – hello ম্যাডাম।।
ইমা – hello।।
আকাশ – বসুন ম্যাডাম।।( ইমা বসলো) ম্যাডাম আজ কিন্তু খুব খারাপ একটা কাজ হয়েছে।
ইমা – আমি জানি তুমি কিসের কথা বলছো ।। (মাথা নিচু করে বললো)
আকাশ – ম্যাডাম স্যারের মাথায় চাপ পড়ছে । প্লিজ ম্যাডাম এমন করবেন না ।। (হাত জোড় করে বললো )
ইমা – আসলে ইসমা তো এই বিষয়টা জানত না।। তবে চিন্তা করো না।। আমি ইসমাকে সব বুঝিয়ে বলেছি ।। ও আর এমন কিছু করবে না যাতে ঈশানের ক্ষতি হয়।।
আকাশ – thank you ম্যাডাম। ।( হাত জোড় আনন্দিত সুরে বললো)
ইমা – হম এখন তুমি সত্যি করে বলো তো কি জন্য ইশান সব ভুলে গেলো।।
আকাশ – ম্যাডাম দুই বছর আগে স্যার জহির স্যারের গাড়ি ইচ্ছা করে সেই ব্রীজ থেকে ফেলে দেই । আমি খুব খুশি হয়েছিলাম।। এই ভেবে যে এমন বাবা থাকার থেকে না থাকাটাই ভালো।।। যায় হোক আমি সেই সময় স্যারের কাছে যাচ্ছিলাম গাড়ি নিয়ে এমন সময় দেখি স্যার নিজের গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।। আমি জোরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম এবং চিৎকার করে স্যার কে বলছিলাম সামনে না এগিয়ে যেতে।। কিন্তু স্যার আমার কথা শুনেনি। আমার সামনেই স্যার গাড়িয়ে নিয়ে সেই ব্রীজ থেকে পড়ে গেলো।।। আমি কিচ্ছু করতে পারিনি।। তারপর আমি ঠিক করলাম আমি স্যার কে মরতে দিবো না।। যে ভাবেই হক বাঁচবো। আমি এবং আমার সাথে আমার যেই লোকজন ছিল তাদের মধ্যে দুইজন আমার সাথে পানিতে ঝাঁপ দিল আর দুই জন উপর থেকে দড়ি ফেলে দিয়েছিল ।।। পানিতে তখন স্রোত কম ছিল । তাই স্যারকে গাড়ি থেকে বের করতে খুব একটা কষ্ট হয় নি।। স্যার কে নিয়ে যখন পারে আসলাম তখন ভেবেছিলাম স্যার বোধয় আর নেই। স্যারের শ্বাস পড়ছিল না।। আমি একদম ভেঙে পড়েছিলাম।। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না । তখন আমারই একজন ছেলে স্যারের বুকে কান লাগিয়ে দেখল খুব ধীরে স্যারের হার্ডবিড চলছে।। ও আমাকে বলল স্যার বেচে আছে। আমি তখন একমিনিট ও দেরি না করে স্যারকে নিয়ে স্যারের পরিচিত ভিআইপি হসপিটালে নিয়ে গেলাম।। ওরা দেখে বললো আর কিছুক্ষণ পর নিয়ে আসলে হয়তো তারা আর কিছুই করতে পারতো না।।। স্যারের জ্ঞান বিকালের দিকে ফিরে।। স্যার সেই সময় সব কিছু ভুলে গিয়েছিল । স্যার তার পরিচিত ডাক্তার কেও চিন্তে পারেনি।। আমি তখনো কিছু জানতাম না।। ডাক্তার স্যারের ক্যাবিন থেকে বের হলে আমি বলি আমি ভিতরে যাবো। ডাক্তার আমাকে মানা করে এবং বলে স্যার উনাকে চিন্তে পারেনি।। ডাক্তার বললো তারা স্যারের কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে চাই।। তারপর তারা স্যারের পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ করে রিপোর্ট হাতে পেয়ে আমাকে ডাক্তার ডেকে পাঠাই।। আমি গেলে ডাক্তার আমকে জিজ্ঞেস করে –
অতীত,,,,
ডাক্তার – মিস্টার ইশান আগে বা রিসেন্টলি মনে বড় কোনো আঘাত পেয়েছে কি??
আকাশ – জী পেয়েছে।। গত কাল উনার সবচেয়ে কাছের একজন মানুষ উনার মনে আঘাত দিয়েছে। এর আগেও ৭ বছর আগে সেই মানুষটাই উনার মনে আঘাত দিয়েছে।। আর আজকে উনি উনার বাবার কাছ থেকে মনে আঘাত পেয়েছে।।
ডাক্তার – হম আসলে এই আঘাত গুলো উনার ব্রেইন নিতে পারেনি বিধায় উনি সব ভুলে গেছে।। উনার করো কথা মনে নেই।। উনার জীবনের সব কিছু উনার ব্রেইন থেকে ডিলেট হয়ে গেছে।।
আকাশ – এগুলো কি বলছেন ডাক্তার।। এখন কি হবে?? স্যারের কি স্মৃতি কখনো ফিরে আসবে না??? ( উত্তেজিত সুরে )
ডাক্তার – সেটা বলতে পারছিনা।। তবে একটা কথা মাথায় রাখবেন কোনো ভাবে উনাকে পুরনো স্মৃতির কথাগুলো বলে মনে করানোর চেষ্টা করবেন না। যদি মনে করানো চেষ্টা করেন হয়তো উনার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।। উনার ব্রেন স্ট্রোক হতে পারে।।
,,,,,,,,Continue,,,,,,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।।।।
,,,,,,, Continue,,,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।।।