Love with vampire পর্ব ৫+৬

#Love_with_vampire [৫]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

গুহা থেকে লোকটা বেড় হলো।আলোয় লোকটির মুখ দেখে অহনা প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো।অস্পষ্ট স্বরে বললো,

” না,এটা কিভাবে সম্ভব?এটা হতে পারে না।কে..কে তুমি? ”

তার সারা শরীর দৃশ্যমান হলো।সামনে যে দারিয়ে আছে সে একটি মেয়ে।মেয়েটি দেখতে হুবহু অহনার মতো।অহনা আবারো বললো

” কথা বলছো না কেন? কে তুমি? ”

সামনে অহনার রুপে দারিয়ে থাকা মেয়েটির সারা শরীর থেকে আলোর আভা বেড় হতে লাগলো।সে আভা এতোটাই প্রখর যে সহ্য করতে না পেরে অহনা হাত দিয়ে নিজের চোখ আড়াল করে রাখলো।

এখন আর সেই আলো চোখে লাগছে না।অহনা চোখ থেকে হালকা হাত সরালো।সামনে একটা বৃদ্ধ দারিয়ে আছে।অহনার সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।দৃষ্টি তীক্ষ্ণ করে বৃদ্ধ লোকটি বললো

” ভয় পেয়ো না। আমি তোমার ক্ষতি করবো না ”

” কে আপনি? এলটু আগে আমার রুপে যে ছিলো সে কোথায়? ”

” আমি এই দুনিয়ায় আটকে পড়া মেয়েদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।”

” মানে? ”

” ওই দানবটা এর আগেও অনেক মেয়ের সর্বনাশ করতে চেয়েছিলো।আমি হতে দেই নি।আমি থাকতে ও কারো ক্ষতি করতে পারবে না ”

” কার কথা বলছেন আপনি? কোন দানব? ”

” তুমি জানো না মা? কার কথা বলছি? ”

” আ..আপনি কি অনুভবের কথা বলছেন? ”

” হ্যা।তোমার আগেও ও অনেক মেয়েকে এই দুনিয়ায় নিয়ে এসেছিলো”

” কি বলছেন আপনি ? ”

” হ্যা মা।তুমি হয়তো জানোনা,যুবতী মেয়ের র’ক্ত পানে ওর শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায় ”

কথাটি শুনে অহনার বুকটা কেঁপে উঠলো অহনার।কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো

” অনুভব তাহলে ”

” হ্যা,ও মানুষ না।ও একটা ওয়েয়ারওয়াল্ফ ”

” ওয়েয়ারওয়াল্ফ ? মানে হায়েনাতে পরিণত হওয়া দানব প্রকৃতির কোনো পিশাচ? ”

” হ্যা। তবে সে এখন ভ্যাম্পেয়ারেও পরিণত হয়েছে ”

” ভ্যাম্পেয়ার? ”

” হ্যা।প্রতি ২০০ বছর পর পর যখন চাঁদের রেখা,সূর্যের রেখার সোজায় আসে তখন সেখান থেকে এই দুনিয়ায় একটা আলো পড়ে।সেই আলো পড়ার আগেই এই নেকড়ে দানবটা পৃথিবী থেকে কোনো না কোনো যুবতী মেয়ে খুজে নিয়ে আসে।আর যখন সেই চাঁদের আলো এই দুনিয়ায় পড়ে তখন সে নেকড়েতে পরিণত হয়।এবং যে যুবতীকে নিয়ে এসেছিলো সেই যুবতী মেয়ের শরীর থেকে রক্ত চুষে খায়।”

” তার মানে অনুভব আমায় এখানে নিয় এসেছে আমার রক্ত চুষে খেয়ে নিজের শক্তি বাড়াতে? ”

” হ্যা ” (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

” কিন্তু কাল রাতের চাঁদের আলোয় তো ও আমার রক্ত চুষে নেয় নি।”

” হ্যা নেয়নি কারন এখনো সেই সময় আসেনি।সেই সময় আসতে আর বেশি দেরি নেই।”

” তাহলে কাল রাতে চাঁদের আলো পড়তেই নেকড়েতে পরিণত হলো কিভাবে? ”

” ওয়েয়ারওয়াল্ফ রা চাঁদের আলো সহ্য করতে পারে না।এবং ওর ছদ্দবেশ নিয়ে থাকতে পছন্দ করে।ওদের শরীরে যদি চাঁদের স্নিগ্ধ আলো পড়ে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের আসল রুপে পরিণত হয়।চাঁদের আলো তাঁদের জন্য অভিশাপ ”

” আপনি এতোকিছু কিভাবে জানলেন? আর এই দুনিয়ায় কি আপনি ছাড়া আর কেউ নেই? ”

” আছে, সেটা হলো তুমি।এই দুনিয়াটা ওই পিশাচটার তৈরি।তবে এখন এখানে আমরা এই তিনজন ই আছি ”

” আপনার কোনো ক্ষতি করে না?!”

” আমার গুহার চারিদিক মন্ত্রসিদ্ধ করে রেখেছি।এই মন্ত্রসিদ্ধ রেখা কখনোই সে অতিক্রম করতে পারবে না।ধরে নাও সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই আমাকে পাঠানো হয়েছে এই সকল পিশাচদের থেকে তোমার মতো মানুষদের বাঁচাতে।”

” পিশাচদের মতো মানে? ওর মতো কি আরো অনেকে আছে? ”

” হ্যা। ওর যেমন এই দুনিয়া,তেমনি আরো হাজার হাজার ওয়েয়ারওয়াল্ফ আছে,ভ্যাম্পেয়ার আছে,আবার দুটোর মিশ্রনে ওয়েয়ারওয়াল্ফ ভ্যাম্পেয়ার ও আছে।তাদের নিজেদের একটা করে দুনিয়া আছে।আমার মতো তাদের ওখানেও কেউ না কেউ আছে।যে এই অশুভ শক্তি থেকে প্রতিনিয়ত যুবতী মেয়েদের রক্ষা করছে ”

” আপনি এতোকিছু কিভাবে জানলেন? ”

” হাহাহাহা,আমরা সব জানি মা, সব জানি ”

” আমার আরেকটা প্রশ্ন আছে”

” প্রথমে অবিকল তোমার মতো দেখতে যে মেয়েকে দেখেছো সেটা আমি নিজেই ”

” আশ্চর্য আপনি কিভাবে জানলেন আমি এটা জিগ্যেস করবো?!”

” আমি সব জানি মা। আমি তেমার অপেক্ষায় ছিলাম।তবে তুমিই কি সেই রমনী নাকি সেই ভ্যাম্পেয়ারটা রুপ বদলে এসেছে সেটা পরিক্ষা করতে আমি নিজেকে ইচ্ছেরুপী বানিয়েছি।ইচ্ছেরুপী হলো যার দৃষ্টি আমার ওপর পড়বে সে তার নিজেকে আমার মধ্যে খুজে পাবে”

” এতে কি হবে? যদি সত্যিই ওই ভ্যাম্পেয়ারটা আসতো তাহলে কি হতো?

” তাহলে নিজের রুপের মতো অবিকল সামনে আরেকট রুপ দেখলে সে নিজের রুপে ফিরে যেতো।একই রুপে তারা দ্বিতীয় ব্যাক্তি সহ্য করতে পারে না”

অহনা নরম ঘাসের ওপর ধপ করে বসে পড়লো।এইসব বিষয় তার এই প্রথম শোনা।এগুলি যে সত্যি হতেও পারে এ বিষয় কখনো তার স্বপ্নেও আসেনি।অহনার খুব কান্না পেলো।নিজের বাবা মায়ের কাছে ফিরে যেতে খুব ইচ্ছে করছে।চিৎকার করে কান্না করতে পারলে নিজেকে হাল্কা মনে হতো।কিন্তু না, নিজেকে সামলে নিলো অহনা।মনে মনে দৃঢ় সংকল্প নিলো,যেভাবেই হোক,এখান থেকে ফিরে যেতেই হবে।তখন বৃদ্ধ লোকটা বললো

” তুমি অনেক ক্লান্ত মা,ভেতরে চলো।বিশ্রাম নেবে”

” আমার খুব ভয় করছে, যদি ওই ভ্যাম্পেয়ারটা চলে আসে এখানে তাহলে? ”

” এখন সে আসবে না। পনেরো দিন পর আসবে ”

” কেনো? পনেরো দিন পর কেন? ”

” পনপরো দিন পর যখন পূর্নিমা কেটে গিয়ে অমাবস্যা হবে তখন সে আসবে।পূর্নিমার সময় তারা লুকিয়ে থাকে গভীর অন্ধকারে,যেন তাদের শরীরে চাঁদের আলো না পড়ে ”

অহনা এবার বুঝতে পারলো কেন চাঁদের আলো পড়তেই অনুভব বলেছিলো সে এতো বড় ভুল কিভাবে করলো।সম্ভবত সে কাল রাতের পুর্নিমার কথা ভুলে গিয়েছিলো।

বৃদ্ধ লোকটির সাথে অহনা ভেতরে প্রবেশ করলো।সেখানে কিছু হাড়গোড় পড়ে আছে।সামনে চার কোনা একটা ব্যাধি,যেখানে আগুল জ্বলজ্বল করছে। অহনা সেখানকার মাটিতে বসলো।বৃদ্ধ লোকটা তার ঝুড়ি থেকে কিছু ফল অহনার দিকে এগিয়ে দিলো।অহনার কেন জানি হঠাৎ প্রবল খিদে পাচ্ছে। খিদেটা আবিষ্কার করেছে গুহায় ঢোকার সাথে সাথে।এতোকিছু না ভেবে সামনে রাখা ফলের ঝুড়ি থেকে কিছু ফল ভয় ভয় নিয়ে খাচ্ছে আর বৃদ্ধ লোকটির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে।

উনি এখন সম্ভবত ধ্যানে বসেছে।তার শরীর থেকে হাল্কা আলোর আভা বেরুচ্ছে।অহনা গুটিশুটি মেরে বসে আছে।বৃদ্ধ লোকটি ধ্যান ভঙ্গ করে চোখ খুললেন।অহনা মৃদু স্বরে বললো

” সাধু বাবা,আমার একটা কথা ছিলো ”

” বলো মা, কি জানতে চাও ”

” আমি এই দুনিয়ায় আসার পর এই প্রথম খিদে অনুভব করলাম কেন? এর আগে তো আমার খিদে অনুভব হয়নি ”

” এই সবই ওর মায়া,।এই গুহায় ওর তৈরি কোনো মায়া কাজ করে না।তাই তুমি ঢোকার সাথে সাথেই খিদে অনুভব হয়েছে।তোমায় ক্লান্ত লাগছে।তুমি বিশ্রাম করো।ভেতরে তোমার জন্য বিছানা করা আছে।আমায় ধ্যানে বসতে হবে।তোমার মুক্তির পথ খুজতে হবে”

অহনা সাধু বাবার সামনে মাথা ঝুঁকে ভেতরে চলে গেলো।লতা পাতা দিয়ে দোলনার মতো একটি বিছানা। সেখানে ফুল দিয়ে ভর্তি।এতেসুন্দর বিছানা সে আগে কখনো দেখেনি।এখন ওর খুব ঘুম পাচ্ছে। বওছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো অহনা।সঙ্গে সঙ্গে তার চোখ বেয়ে ঘুম চলে এলো।

হঠাৎ ঘুমের মাঝে অহনা একটা অস্ফুট স্বরে আওয়াজ করলো।সারা শরীর ছটফট করতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরেছে।
#Love_with_vampire [৬]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

হঠাৎ ঘুমের মাঝে অহনা একটা অস্ফুট স্বরে আওয়াজ করলো।সারা শরীর ছটফট করতে লাগলো।তার মনে হচ্ছে কেউ তার গলা টিপে ধরেছে।

অহনা আতঙ্কে বিছানা থেকে উঠে বসলো।দেখতে পেলো সামনে সেই বৃদ্ধ লোকটা একটা কুন্ডুলি নিয়ে দারিয়ে আছে।চোখ বন্ধ করে বিরবির করে কি যেন বলছে।অহনার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। মনে মনে ভালো এই লোকটা তার কোনো ক্ষতি করে ফেলবে না তো?।

বৃদ্ধ লোকটা চোখ খুললো।তার সারাশরীর কাঁপছে। অহনা ভয়ে ভয়ে বললো

” আপনি এখানে? ”

” হ্যা মা,তোমার মধ্যে সংজীবনী আত্মার প্রবেশ করার জন্য এসেছি ”

” সংজীবনী আত্মা মানে? কি বলছেন আপনি ? ”

” ভয়ের কিছু নেই মা,এই আত্মা তোমাকে ওই নেকড়ে দানবের থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করবে ”

লোকটা হাতে থাকা কুন্ডুলি থেকে কয়েক ফোঁটা জল সামনে মাটিতে ফেললেন।সেখান কার মাটি থেকে আলোর আভা আসতে লাগলো।একটা আলোর বলয় ধিরে ধিরে বড় হতে লাগলো।তীব্র আলোর আভা অহনার চোখে পড়তেই হাত দিয়ে অহনা নিজের মুখমন্ডল ঢেকে নিলো।এরপর ধিরে ধিরে চোখ খুললো।

সামনে তাকাতেই দেখলো গুহার বাহিরে যে রমনীকে দেখেছিলো সে ভাসমান অবস্থায় আছে।অহনার দিকে তাকিয়ে রমনীর ঠোঁটে কিঞ্চিৎ হাসির প্রলেপ পড়লো।

” মা রে,এই হলো সেই আত্মা। যে তোমারে রক্ষা করবে ”

” কিন্তু এই আত্মা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে কিভাবে? আমার প্রচন্ড ভয় করছে ”

” আত্মাকে প্রবেশ করাতে তোমায় নিদ্রা যেতে হবে।তুমি এখন যলমন আছো,এই আত্মা শরীরে প্রবেশের পর ঠিক তেমনি থাকবে।শুধু তোমার বিপদের সময় এই শুভ আত্মা তোমায় রক্ষা করবে।তোমার সাথে থাকবে ”

” আমার অনেক ভয় করছে, ”

” মা, তেমন ব্যাথা অনুভূত হবে না। শুধু গলায় একটু চাপ পড়বে।আত্মার প্রবেশ নিশ্বাসের সাথে হবে।তাই গলায় একটু ব্যাথা পেতে পারো”

অহনার এই বৃদ্ধর কথা শোনা ছাড়া কোনো উপায় রইলো না।কিই বা করবে সে? এই মায়ার দুনিয়া থেকে বাঁচার জন্য হলেও এই বৃদ্ধর সকল কথা তাকে শুনতে হবে।

অহনা বিছানায় শুয়ে পড়লো। ভয়ে বুকটা ফেটে যাবে এমন মনে হচ্ছে। নিজের শরীরে আরেকটা আত্মার প্রবেশ ঘটতে চলেছে।বিষয়টা মোটেও স্বাভাবিক নয়।

বৃদ্ধ লোকটি কুন্ডলী থেকে হাতে জল নিলো।সেই জল অহনার শরীরে ছিটিয়ে দিতেই অহনা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।সেই রমনী বাতাসের মধ্যে মিলিয়ে গেলো।নিশ্বাসের সাথে প্রবেশ করলো অহনার শরীরে।অহনা ঘুমের ঘোরেই ব্যাথায় একটু নড়েচড়ে উঠলো।

_____________

আলোর তৈরি এই পাহাড়,পর্বতের সকল কৃত্রিম জীব ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে।নরম কোমল ঘাসগুলির শরীরে ভরে আছে রক্ত। চারিদিকে থমথমে পরিবেশ বিরাজমান। সূর্য অস্ত যাচ্ছে।দুটি পাহাড়ের মাঝ বরাবর ফাটল অংশের ভেতরে নেকড়ে জাতীয় একটি পশু গর্জন করছে।নেকড়ের মতো মুখ দিয়ে ঘন লালা পড়ছে।সারা শরীরে রক্ত,কাটা ছেঁড়ার দাগ।সূর্য অস্ত যেতেই চাঁদের আলো পড়লো সেই দুনিয়ায়। হিংস্র সেই পশুটি আরো হিংস্ররুপ ধারন করলো।ফাটল থেকে বেড় হয়ে পাহাড়ে দারালো।চাঁদের দিকে চেয়ে বিকট গর্জন করে উঠলো।গর্জনের শব্দে ফাটলে থাকা বাদুড়গুলি উড়ে গেলো দূর আকাশে।

_________

অহনার ঘুম ভাঙলো। বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে আবার শুয়ে পড়লো।তার সারা শরীর ব্যাথা হয়ে আছে।অনেক কষ্ট করে বিছানা থেকে নিজেকো সরিয়ে নিলো।বৃদ্ধ লোকটির কাছে যেতেই কেউ একজন বললো

” কোথায় যাচ্ছো অহনা ”

অহনা আশেপাশে তাকালো।কিন্তু কাউকে দেখতে পেলো না।মনে মনে ভাবলো ” যে আত্মাকে শরীরে প্রবেশ করিয়েছে সেই কথা বলছে না তো?। বিষয়টা ভাবতেই অনহার কান্না পেয়ে গেলো।নরম গলায় বললো

” তুমি কি সেই আত্মা? ”

” হ্যা।তোমার মন খারাপ কেন? ”

” আমার মন খারাপ তুমি কিভাবে জানো? ”

” তোমার অনুভূতির সাথে মিশে আছি আমি ”

” হ্যা মন খারাপ।আর কেন মন খারাপ সেটাও তো তাহলে জানার কথা তোমার ”

” অনুভবের জন্য মন খারাপ হচ্ছে তোমার।দেখো সত্যিটা মেনে নাও।ভুলে যাও অনুভবকে। ”

” আমি ওকে ভুলতে পারবো না।যতোই হোক,সে আমার স্বামী।আচ্ছা উনাকে কি এই রুপ থেকে মুক্তি দেওয়া যাবে না? ”

” যাবে কি না সেটা আমি জানিনা।তবে এই বৃদ্ধ এর আগেও চেষ্টা করেছিলো কয়েকবার।কিন্তু পারেনি।তার কাছে হয়তো কোনো উপায় আছে, যেটার মাধ্যমে অনুভব এই রুপ থেকে মুক্তি পেলেও পেতে পারে।”

” সত্যি বলছো তুমি? ”

ভেতর থেকে আর কোনো উত্তর পেলো না অহনা।অনুভবের এই হিংস্র রুপ থেকে মুক্তির কথাটা অহনাকে অনেক আশ্বস্ত করলো।সে ছুটে গেলো সেই বৃদ্ধ লোকটির কাছে।দেখলো তিনি ব্যাধিতে কি কি যেনো ঢালছেন।এবং বিড়বিড় করে কিসব বলছে।অহনা দুরে গিয়ে বসে রইলো।আর মনে মনে অনুভবের সাথে কাটানো সেই দিনের কথাগুলি ভাবতে লাগলো।ভাবতে গেলে লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে অহনা।বৃদ্ধ লোকটি ব্যাধি থেকে উঠে দারালো।অহনা কল্পনার জগৎ থেকে বেড় হয়ে বৃদ্ধ লোকটির কাছে গেলো।

” শরীরের ব্যাথা কমেছে মা?

” জি ”

” আর কিছুদিন অপেক্ষা করো মা,এরপরেই তুমি ফেরত যেতে পারবে পৃথিবীতে।মুক্তি পাবে এই দুনিয়া থেকে ”

” আমার একটা বিষয় জানার ছিলো ”

” বলো ”

” অনুভবকে কি এই হিংস্র পশুর রুপ থেকে মুক্তি করা সম্ভব? ”

অহনার কথা শুনে বৃদ্ধ লোকটি মনে হলো একটু অবাব হয়েছেন।তিনি গম্ভীর স্বরে বললেন

” তুমি ওর মুক্তির কথা বলছো? ”

” জি,আমি চাই ও এই রুপ থেকে মুক্তি পাক। আমি ওকে স্বামী হিসেবে পেতে চাই, ”

” এমন একটা হিংস্র ভ্যাম্পেয়ারকে তুমি স্বাভাবিক করার কথা বলছো? ”

” হ্যা। আর যাই হোক,সে তো আমার স্বামী।আর আমি ওকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। এই রুপ থেকে মুক্তির কি কোনো পথ আছে? এর জন্য আমাকে যা করতে হবে আমি তাই করবো।”

” তুমি সত্যিই করবে? ”

” হ্যা করবো।এর জন্য যদি আমার জীবন বাজি রাখতে হয় তবুও আমি রাজি ”

” তবে আমি তোমায় বলবো।হয়তো সময় এসে গেছে সব কিছুর সমাপ্তির ”

” সমাপ্তির সময় হয়ে এসেছে মানে? ”

” হ্যা।সব কিছুর মুক্তি। এই মায়ার দুনিয়া,এই ভ্যাম্পেয়ার।এমন কি আমার নিজের ”

” আপনার নিজের বলতে ? ”

” আমার সৃষ্টি হয়েছিল এই মায়ার দুনিয়ার জন্য। যদি এই দুনিয়াই না থাকে তাহলে আমিও মুক্তি পাবো।এই মুক্তির প্রতিক্ষায় আছি। তার আগে তোমায় জানতে হবে অনুভব কিভাবে ভ্যাম্পেয়ারে পরিনত হলো ”

” পরিণত হলো মানে? অনুভব কি আগে মানুষ ছিলো? ”

” হ্যা ”

কথাটা শুনা মাত্র অহনার সাড়া শরীর শিউরে উঠলো।মনে হচ্ছে সে একটু হলেও আশা ফিরে পাচ্ছে।অহনা একটু জড়োসড়ো হয়ে বসলো।বৃদ্ধ লোকটি বলা শুরু করলো

” অনুভবের ভ্যাম্পেয়ার হওয়ার বিষয়টা তোমার জানা দরকার।সময়টা তখন শীতকাল। চারিদিকে কুয়াশায় ঘেরা।অনুভব এবং তার বন্ধুরা সিদ্ধান্ত নিলো তারা পাহাড়ে ক্যাম্পিং করবে।যেমন কথা তেমনি কাজ।চার বন্ধু মিলে বেড়িয়ে পড়লো পাহাড়ে ক্যাম্পিংয়ের উদ্দেশ্য। পাহাড়টা ছিলো অভিশপ্ত। সেখানে যারা যায় তারা বেশির ভাগ সময় ফিরে আসে না।

_______

সিহাবঃ দোস্ত এই পাহাড়ে না গেলে হয় না? এই পাহাড়ে গেলে নাকি কেউ আর ফিরে আসে না,

অনুভবঃ হাহাহাহা, রুপকথার গল্প বিশ্বাস করে বসে আছিস দেখছি তুই,চল আমার সাথে,কিচ্ছু হবে না।আর না হলো থাক আমি একাই যাবো

আশাঃ অনুভব আমি তোর সাথে যাবো

সিহাবঃ তুই তো যাবিই,অনুভব যদি এখন আগ্নেয়গিরিতে সাঁতার কাটতে চায় তাহলে সেখানেও তুই বলবি তুই ওর সাথে যাবি।

আশাঃ আমি তো তোদের মতে না যে বন্ধুকে একাই যেতে দিবো।

সিহাবঃ ইশশশ রে,বন্ধুর ওপর কত্তো কেয়ার করে।

সায়রাঃ উফফ চুপ করবি তোরা? এখানে এসেছিস কি ঝগড়ার জন্য?

সিহাবঃ আমার তো ঝগড়াগুলির তোর চোখে পড়ে আর কিছুতো চোখে পড়ে না

অনুভবঃ তোরা থাক ভাই,আমি একাই যাচ্ছি।ফাই প্যাচাল কর তোরা।সায়রা যাবি তুই

সায়রাঃ হ্যা চল।

অনুভব আর সায়রা কাঁধে ব্যাগ নিয়ে পাহাড়ের কাছে হাটতে লাগলো।আশা যেতেই সিহাব ওর হাত টেনে ধরে রইলো।আশা বিরক্ত স্বরে বললো

“কি হলো আবার? আটকাচ্ছিস কেন? ”

” দোস্ত সায়রা কবে বুঝবে আমি ওরে ভালোবাসি? ”

” সেই কথা এখন এখানপ বলার কি আছে? এখানপ এসছি একটা এডভেঞ্চারে, আবেগ নিয়ে পড়ে না থেকে ইনজয় করবি চল। অনুভবও তো আমায় তেমন পাত্তা দেয় না।তবে আমি জানি ও আমায় ভালোবাসে ”

” আমি বললাম আমার কষ্টের কথা,আর এখন উল্টে তুই শুরু করলি তাই না?

” আচ্ছা দোস্ত ভুল হইছে আমার,এখন চল, ওরা দেখ কতদূরে চলে গেছে ”

” তুই এখন কিছু একটা করবি কি না তাই বল ”

” আমি কি করবো? ”

” তুই অনুভবকে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাটবি,আমাদের পিছনে ফেলে।যাতে আমরা দু’জনই আলাদা থাকতে পারি। এই সুন্দর ওয়েদারে আমি ঠাস করে প্রপোজ করে ফেলবো।তারপর চড় থাপ্পড় কি খাই খাবো।”

” হাহাহাহা,আচ্ছা ঠিক আছে।তবে আমার কি মনে হয় দোস্ত জানিস? সায়রাও তোকে ভালোবাসে ”

চলবে?
চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here