#Marriage_With_Benefits
#Part_18
Writer::Sanjida Nahar Shaanj
.
.
আমাকে নিচে থেকে আমাকে আরিফ এসে রিসিভ করে নিয়ে গেলো।আমি কেবিনে ঢুকেই দেখি দাদু পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে।একদম আমার হাসব্যান্ড এর কপি।সরি আমার হাসবেন্ড উনার কার্বন কপি। যতই রেশারেশি থাকুক না কেন?উনারা ঠিকই একে অপরের ছায়া।
আমাকে পর্যবেক্ষণ হলো তোমার?(দাদু)
নাহ।দাদু ভাবছি আমার অনাগত সন্তান আপনার মত হবে নাকি আমার হাসব্যান্ড এর মতো। অবশ্য যার মতই হোক আমারই তো জ্বালা।(আমি টিটকারি করে)
হাসব্যান্ড!খুব ভালোবাসা আছে একজন আরেক জনের উপর।(দাদু)
থাকবে না।ভালোবেসে বিয়ে করেছি।ভালোবাসা উতলে পড়ছে আর কি?(আমি নেকামি করে)
অনেক হয়েছে ভালোবাসা।(দাদু রাগী গলায়)
আমি চুপ করে গেলাম।এখন আমার উনার কথা শুনতে হবে।তারপর পাল্টা জবাব দিতে হবে।
দাদু আবার বলতে শুরু করলো
আস্থা ইয়াসমিন।আসল মা বাবা অজানা।পালিত বাবা হসপিটালের একজন কর্মকর্তা যেই হসপিটাল থেকে তোমাকে এনেছিলো।পালিত বাবা ছাড়া বাসায় কেউই তোমাকে পছন্দ করেন না।কিছু দিন আগে বেরিয়ে এসেছো বাসা থেকে।আমার নাতির ঘাড়ে চাপলে কি করে?(দাদু তোতা পাখির মতো সব বললো)
আমি দাদুর দিকে তাকিয়ে ভাবছি,,
এরা শুধু দেখতে এক না। কাজকর্মও এদের এক।দাদু নাতির আর কোনো কাজ নেই শুধু আমার খোজ খবর নিবে। হায় আল্লাহ।
কি হলো?কি ভাবছো?আমার নাতির ঘাড়ে কেনো বসেছো?(দাদু)
আপনার দাদুর ঘাড় আমার খুব পছন্দের একটা জায়গা পুরো শরীরের মধ্যে থেকে(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)
পাশের রুমে আভি আর নিহাল বসা ছিলো।দাদু ওদের আস্থার আসল রূপ দেখানোর জন্য।আভি আর নিহালকে অন্য রুমে বসিয়ে রেখেছে।আভি কে মানা করছে যদি ওর ভালোবাসার উপর ভরসা থাকে তাহলে ও যেনো দাদুর প্ল্যান সম্পর্কে আস্থাকে কিছু না জানায়।আর আভিও ভেবেছে আস্থা কাজটা করতে পারবে কি না তা জানার এর থেকে ভালো আর কোনো সুযোগ নেই।তাই আভিও দেখতে চায় আস্থা কি করে দাদুর প্ল্যানের বারোটা বাজিয়ে দেয়। ক্যামেরা দিয়ে ওরা দেখছিলো দাদু আর আস্থার রুমে কি চলছিলো।আর সাথে কথা গুলো শুনছিল।যখনই আস্থা এই কথা বললো তখনই আভি ফিক করে হেসে দিলো।
নিহাল। ম্যাচটা জমেছে ভালো।(আভি হাসতে হাসতে)
তা আর যা বলেছিস!দাদু চিড়িয়াখানার যেমন বাঘ আস্থাও তেমন জঙ্গলের বাঘিনী।এখন খেলা হবে।শুধু চুপচাপ বিনোদন নে।(নিহাল)
আস্থা।তোমার উপর আমার পুরো আস্থা আছে।আমাকে নিরাশ করো না।(আভি মনে মনে)
.
.
কেবিনে
চুপ বেয়াদব মেয়ে। কার সামনে কি করে কথা বলতে হয় তুমি তাই জানো না?আমি তোমার দাদা শশুর হই।(দাদু রেগে)
আপনিই তো বললেন আপনি আমাকে মেনে নেন নি তাহলে আপনি আমার দাদা শশুর কি করে হোন?(আমি ভ্রু কুঁচকে)
এই মেয়ে আমাকে আমারই কথায় পেঁচিয়ে দিলো(দাদু মনে মনে)
কি হলো কিছু বলুন?(আমি তাড়া দিয়ে)
কি বলবে?মুখে সুপারি গেঁথে গেছে যে।এই প্রথম আরমান চৌধূরী কে কেউ চুপ করাতে পারলো।(আরিফ মনে মনে)
তুমি বেশি কথা বলছো?(দাদু)
এই বেশি কথা দিয়েই তো আপনার নাতি ফিদা হয়ে গেছে।(আমি নেকামি করে)
.
.
রুমে
বাহ!আস্থা এমন অ্যাকটিং করবে আমি তো তা ভাবতেই পারি নি।(আভি মনে মনে)
.
.
কেবিনে
ফালতু কথা ছাড়ো কাজের কথায় আসা যাক।(দাদু গম্ভীর হয়ে)
আমি তো এতক্ষন কাজের কথাই বলছিলাম।কি করে আমাদের লাভ স্টোরি এগিয়েছে।(আমি নেকামি করে)
ওই মেয়ে চুপ।আর একটা কথা বললে খবর আছো।এখন বলো কতো টাকা চাও।(দাদু)
কিসের টাকা?নতুন বউয়ের মুখ দেখানোর টাকা?(আমি টিটকারি)
আরিফ ফিক করে হেসে দিলো।
দাদু আরিফের দিকে আবার রাগী লুক দিয়ে তাকালো।আরিফ চুপ হয়ে গেল।অন্যদিকে
আভি!আস্থা যা খেলছে না।আজ তোর দাদু তো আউট।(নিহাল হাসতে হাসতে)
আভিও আস্থার কথা শুনে হাসছে।
তোমাকে আমি মানি না।তোমার মুখ দেখার কোনো প্রশ্নই উঠে না আমার।(দাদু রেগে)
একটু আগেই তো বললেন আপনি আমার দাদা শশুর।আর এখন বলছেন আপনি আমাকে মানেন না?(আমি কথার প্যাচ ধরে)
তোমাকে তো আমি,,,
(দাদু কিছু বলতে যাবে তার আগেই আমি উনাকে থামিয়ে বললাম
ছাড়ুন তো।এখন বলুন কিসের টাকা?
আমার নাতির জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য কতো টাকা নিবে শুনি?(দাদু)
আপনি আমাকে টাকা দিবেন?(আমি অবাক হয়ে)
.
.
রুমে
এইরে আস্থা না আবার টাকা নিয়ে বসে ওর তো।কোনো ভরসা নেই।কিডন্যাপের দিনও অফার করতেই টাকা নিয়ে ছিলো।এখনও তো দাদু অফার করছে ও কিনা আবার টাকা নেয়?(আভি চিন্তিত হয়ে)
আভি চিন্তা করিস না।আস্থা টাকা নিবে না।আমার বিশ্বাস।(নিহাল ও টেনশন নিয়ে)
।
।
কেবিনে
কতো টাকা দিবেন আপনি?(আমি সন্দেহর দৃষ্টিতে)
যতো টাকা তুমি তোমার জীবনেও দেখোনি।এই নাও। পঞ্চাশ লাখ টাকা আছে।যদি চাও আরো দিবো।শর্ত একটাই আমার নাতিকে ছেড়ে চলে যেতে হবে।
বলেই দাদু আমাকে একটা চেক এগিয়ে দিলো।
আভি আর নিহাল পাশের রুমে বসে বসে ভাবছে আস্থা কি জবাব দেবে?
আমি হাত বাড়িয়ে চেক টা নিয়ে বললাম
আপনার নাতির মূল্য কি শুধু পঞ্চাশ লাখ টাকা?
তাহলে এই নাও।আরো পঞ্চাশ লাখ টাকা।(দাদু আরেকটা চেক এগিয়ে দিলো)
আমিও ওই চেক টা নিয়ে বললাম
থাক এইটাই যথেষ্ট।আমার আর টাকা লাগবে না।এক কোটি টাকা দিয়ে কতো কিছু করা যাবে তাই না?(আমি চেক এ হাত বুলাতে বুলাতে)
হুম।অনেক কিছু করতে পারবে?যা খুশি কিনতে পারবে।(দাদু বিজয়ের হাসি দিয়ে)
যা খুশি কিনতে পারবো?(আমি)
আভি দেখো তোমার ভালোবাসা আমি কি করে কিনে নিলাম?(দাদু মনে মনে)
।
।
রুমে
শিট।দেখছিস।আস্থা চেক গুলো নিয়ে নিলো।আমি জানতাম আস্থা একটা লোভী মেয়ে আর তা প্রমাণ হয়ে গেলো।আমার ওর উপর দিয়ে বিশ্বাস করাই ভুল হয়েছে। ও আমার ফিলিংস নিয়ে মজা করেছে।কি করে পারলো ও আমাকে ধোঁকা দিতে?আমি ওকে কতো ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছিলাম।কিন্তু ও টাকা দেখেই সব ভুলে গেছে।ওর কাছে টাকাই সব মানুষের মনের কোনো দান নাই।কি করে পারলো ও টাকা গুলো নিতে।আমি তো বলেছি ওর সব প্রয়োজন আমি দেখবো কিন্তু ও।একটা লোভী মেয়ে কোথাকার!আজ ওর এক দিন কি আমার এক দিন?(আভি রাগে)
আভি এভাবে রাগ করিস না।আগে পুরো ব্যাপারটা ভালো করে বুঝে নে।(নিহাল)
কি বুঝবো?যা বুঝার বুঝা হয়ে গেছে!
বলেই আভি দরজা খুলে বেরিয়ে আস্থার কাছে যাবে তখনই আস্থা আবার বলে উঠলো।
এই নিন।এক কোটি পাঁচশো টাকা।(আমি দাদুকে চেক দুটো আর আমার ব্যাগ থেকে বের করে দেয়া একটা পাঁচশো টাকার নোট এগিয়ে দিলাম)
মানে?(দাদু)
মানে আমি এই এক কোটি পাঁচশো টাকা দিয়ে আপনার নাতিকে কিনে নিলাম।আজ থেকে আপনার নাতি আমার শুধু আমার।(আমি চেকটা দাদুর হাতে তুলে দিয়ে)
আমার নাতি কি কেনা বেচার জিনিস?(দাদু চিৎকার করে)
তাহলে আমার ভালোবাসার মানুষও কেনা বেচার জিনিস না।(আমি চিৎকার করে)
তোমার ভালোবাসা কিনতে কতো লাগবে শুনি?(দাদু রাগী গলায়)
আপনার নাতি বাজার পণ্য হতে পারে আমার ভালোবাসার মানুষ শুধু আমার পার্সোনাল।প্রাইভেট পণ্য।যা আমি আপনার মত বাজারে নিলাম করবো না।
বলেই আমি পিছন দিকে তাকালাম।তাকিয়ে দেখি আভি দাড়িয়ে আছে।
আমি আভিকে দেখে একটা মুচকি হাসি দিয়ে দৌড়ে ওর কাছে গেলাম।ওকে টেনে নিয়ে এসে দাদুর সামনে দাঁড় করালাম।
ওর টাই ধরে মাথাটা নিচে নামিয়ে ওর গালে একটা চুমু দিয়ে দিলাম।এই ঘটনাতে দাদু খুব শক খেয়েছে।
আভি জানো আজ এক কোটি পাঁচশো টাকা দিয়ে তোমাকে আমি তোমার দাদু থেকে কিনে নিয়েছি।তাই না দাদু?(আমি দাদুকে টিককারি মেরে)
ওই আমার টাকা ছিলো!(দাদু চিৎকার করে)
আপনিই তো বললেন আমি ওই টাকা দিয়ে যা খুশি কিনতে পারি তো আমি তাই কিনলাম।আমি আমার হাসব্যান্ডকে কিনে নিলাম।(আমি)
অন্যদিকে
আভি আস্থাকে ভুল বুঝেছে বলে খুব অনুতপ্ত অনুভব করছে।আমি কি ভেবেছিলাম এই মেয়ের ব্যাপারে আর ওর মাথায় কি চলছিলো?আমার উচিত ছিল ওর উপর বিশ্বাস করা।আমি কি করে ওর চোখের দিকে চোখ মেলাবো।ওর দিকে কোন মুখে তাকাবো।যদিও আস্থা কিছু শুনে নি তবুও তো আমি ওকে ছোটো করে কথা বলেছিলাম।এখন আমারই খুব খারাপ লাগছে।যা ওকে বলতে হবে আমি যতক্ষণ না কনফেস করছি ততক্ষণ আমার নিজেরই ভালো লাগবে না।(আভি মনে মনে)
।
।
আভি আর আমি গাড়িতে বসে আছি। আভি ড্রাইভ করছে আর আমি ওর পাশের ছিটে বসে আসি।এখন আমরা বাসায় যাবো।আভি কেনো জানি চুপ আজকে।ওর তো খুশি হওয়া উচিত।আজ খুব ভালো করেই জব্দ করলাম দাদুকে সেই ভালো লাগছে আমার।(আমি মনে মনে)
আভি আজ কেমন হলো আমার পারফরম্যান্স?(আমি এক্সসাইটেড হয়ে)
আভি চুপ করে গাড়ি চালাচ্ছে।
আভি(ধাক্কা দিয়ে)
হুম!কি হলো?(আভি)
আজ কি আমার পারফরমেন্স ভালো হয় নি?(আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
আস্থা।আমি অনেক দুঃখিত।(আভি গাড়ি থামিয়ে)
হাহ!(আমি অবাক হয়ে)
আভি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো
আই অ্যাম রিয়েলি সরি।আস্থা।
আমি অবাক যে সরি বলার জন্য আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে পারে সে আমাকে আজ সরি বলছে!কেসটা কি?(আমি মনে মনে অনেক অবাক হয়ে)
কি হলোটা কি?আপনি কেনো আমাকে সরি বলছেন?কি হয়েছে?আমি কি করছি?আপনি কি ভুল করছেন?আমি কিছুই তো জানি না।আর আপনি কেনো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন।আরে ছাড়েন।(আমি আভি কে ছাড়াতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লাম)
আভি আমাকে ছেড়ে আমাকে বললো ও আর দাদু কি প্ল্যান করছিলো!আভি পাশের রুমের ছিলো সব শুনছিল।
আমি চুপচাপ উনার কথা শুনছি।
।
।
চলবে,,,,